তিমিরে_ফোটা_গোলাপ পর্ব–৭৫

0
567

#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব–৭৫
Writer তানিয়া শেখ

গাল ফুলিয়ে বসে আছে ইসাবেলা। আসার পর থেকে চুপচাপ। অনেকক্ষণ খেয়াল করে নিকোলাস বলেই ফেললো,

“সত্যি করে বলোতো কী হয়েছে তোমার? আসার পর থেকে গুম মেরে বসে আছো। কথা বললে জবাব দিচ্ছো না ঠিকমতো। সমস্যা কী?”

ইসাবেলা মুখ খুলতে নিকোলাস শাসিয়ে বলল,

“খবরদার যদি বলেছো কিছু না, বেলা।”

ইসাবেলা একদৃষ্টে ওকে দেখে। তারপর উঠে দাঁড়ায়। বলে,

“আমার ভালো লাগছে না। বাড়ি যাব।”

“বেলা।”

“আমি বাড়ি যাব নিকোলাস।” চেঁচিয়ে ওঠে আচমকা। নিকোলাস ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। ইসাবেলা রেগে আছে। সেদিন রাতে দেখা করেনি বলে কি এই রাগ? হাত বাড়িয়ে ওর হাতটা ধরতে গেলে পিছিয়ে যায় ইসাবেলা।

“তুমি নিয়ে যাবে না? ঠিক আছে। লাগবে না তোমাকে। একাই বাড়ি ফিরব।” বলেই উলটো দিকে হাঁটা ধরে। মধ্য রাত। চাঁদ পূর্ণ কিরণ ঢালছে। ইসাবেলা নেমে গেল হাঁটু সমান বরফ পড়া রাস্তায়। নিকোলাস হতবুদ্ধি হয়ে ওকে দেখল। তারপর উঠে ছুটে এলো ওর সামনে।

“বেলা।”

থামাতে চাইল। কিন্তু থামল না ইসাবেলা। পাশ কাটিয়ে যেতে নিকোলাস ওর হাত টেনে ধরে। দ্বিধান্বিত হয়ে বলল,

“কেন এমন করছো? করেছিটা কী আমি?”

“কিছুই করোনি। সমস্যাটা এখানেই।” হাত ঝাড়া মেরে বলল ইসাবেলা। নিকোলাস বলল,

“মানে?”

“হুয়াই ডোন্ট ইউ জাস্ট ফাক মি, হুঁ?”

চিৎকার করে ওর বুকের শার্ট খামচে ধরে। নিকোলাস বজ্রাহতের ন্যায় চেয়ে রইল। কী বলেছে বুঝতে পেরে দুহাতে মুখ চেপে ধরে ইসাবেলা। লজ্জিত হয়ে পিছিয়ে যায় কয়েক কদম।

“আমি ওভাবে বলতে চাইনি। হা! ঈশ্বর!”

ইসাবেলা ঘুরে ভোঁ দৌড় দিলো। বেশিদূর যেতে পারে না দৌড়ে। নিকোলাস ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মুখের ভাব বোঝা মুশকিল। ইসাবেলা চোখ নামিয়ে নেয়। নিকোলাস নিশ্চয়ই ওকে এখন কামোন্মাদিনী ভাবছে। আচরণ তো তেমনই করেছে। লজ্জায় ভূগর্ভে বিলীন হতে ইচ্ছে করছে। নিকোলাস ওকে ছুঁয়ে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করে না, বিয়ের কথা তোলে না। আর কতদিন এভাবে চলবে? এমন সম্পর্কের কোনো ভবিষ্যৎ আছে? সময়ের সাথে নিকোলাস হয়তো ওর প্রতিও আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ভগ্নহৃদয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু ভালো। ও নিশ্চয়ই নিকোলাসের মনমতো হতে পারেনি। নয়তো কাছে আসতে আগ্রহ দেখায় না কেন? অতীত ঘাটে। নিকোলাস কী কোনোদিন ওকে পেতে আগ্রহ দেখায়নি? ভাসা ভাসা মনে পড়ে একটু। বোধহয় দেখিয়েছিল। ওই তো একটু! তারপর? ইসাবেলা ভার্জিন হয়ে মরতে চায় না। লোকে ওর কফিনে দাঁড়িয়ে হাসবে। সে দৃশ্য কল্পনা করতে শিউরে ওঠে।
বয়সই বা কত! আঠারো বছরের আবেগে ভেসে নিজের মনমতো যা ইচ্ছে ভেবে নেয়। ঠিক, বেঠিকের পরোয়া না করে জেদ করে। সামনের পক্ষকে বুঝতে চায় না তখন। তারপর ভেতরে ভেতরে মান করে, কাঁদে। অস্থিরতায় কী করবে দিশা পায় না।

“বেলা!” নিকোলাস ওর দু-কাঁধের ওপর হাত রাখল।

“আমি জাস্ট, জাস্ট__”

নিকোলাস জড়িয়ে ধরে বুকের মাঝে৷ মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

“হুশ। কিছু বলতে হবে না।”

দুজনের কেউ ই আর কথা বলল না। ইসাবেলা বড়ো কষ্টে কান্না লুকাল। আজকাল কি ও ছিচকাঁদুনে হয়ে যাচ্ছে? মনে মনে ভাবল।

ইসাবেলাকে বড়ো বাঁচা বাঁচিয়ে সেদিন নিকোলাস ওই প্রসঙ্গ নিয়ে কোনো কথা বলল না। যে যার গৃহে ফিরে গেল ভোরের আগে। ফেরার পূর্বে যথারীতি আবার দেখা করার প্রতিজ্ঞা করল নিকোলাস। ভীষণ অন্যরকম দেখাচ্ছিল ওকে।

পুরোটাদিন প্রচন্ড অস্থিরতায় কেটেছে ইসাবেলার। নিকোলাসের ভেতর কী চলছে জানতে ইচ্ছে করছে ওর। তখনকার নীরবতা খুব ভাবাচ্ছে। লজ্জা শরম ভেঙে ওমন একটা কথা বলে ফেললো, অথচ নিকোলাস চুপ করে রইল। কিছুই কি বলার ছিল না? আবার ভাবল, কিছু বলেনি এই ভালো। ও আর কোনোদিন এই ব্যাপারে কথা বলবে না। মরে গেলেও না। প্রয়োজনে আমৃত্যু ভার্জিন থাকবে। শেষ কথাটা ভাবতে ফের বুক ভার হয়ে ওঠে। নিকোলাস কি সত্যি ওকে চায় না?

“ইসাবেল, কী করছো তুমি?”

তাতিয়ানা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল। ইসাবেলা দাঁত কামড়ে বলল,

“সং সেজে নৃত্য করছি, করবে?”

“আরে বাপরে! মেজাজ দেখছি সপ্তমে চড়ে আছে মহারাণীর। তা রাগটা হলো কী কারণে শুনি?”

ইসাবেলা মুখ ভার করে নিরুত্তর বসে আছে। তাতিয়ানা পাশে বসে বলল,

“বলবে না? ওমা! কেঁদে দেবে না কি?”

ইসাবেলা সজোরে দু’দিকে মাথা নাড়ায়। তাতিয়ানা জোর গলায় বলে,

“আমি স্পষ্ট তোমার চোখ ছলছল দেখছি। কেউ কিছু বলেছে? আমাকে বলো, তার পিন্ডি চটকে দেবো।”

ইসাবেলা ফিক করে হেসে দিতে চোখ বড়ো বড়ো করে তাতিয়ানা। বলে,

“আবার হাসছো? চোখে জল ঠোঁটে হাসি! মাঝেমাঝে তোমাকে আমার উইয়ার্ড মনে হয়। কিছুটা কনফিউজিংও। নিজেকে বদলাও নাহলে কোনো পুরুষ তোমার দিকে আকৃষ্ট হবে না। পুরুষদের জীবনে এমনিতেই বহুত প্যারা। তোমার মতো কনফিউজিং মেয়েলোক হ্যান্ডেল করার সময় কই তাদের।”

“খুব পুরুষ বিশেষজ্ঞ হয়েছো, না?”

তাতিয়ানা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। মুখটা কাছে এনে বলল,

“পুরুষ বিশেষজ্ঞ কি না জানি না। তবে বেশ অভিজ্ঞ বলতে পারো।”

তাতিয়ানা অজান্তেই ইসাবেলার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে দিলো। রাগে মুখ লাল হয়ে উঠল ইসাবেলার। মেকি হাসি দিয়ে বলল,

“তাতিয়ানা।”

“হুম?”

“দূর হয়ে যাও আমার চোখের সামনে থেকে। এক্ষুনি।”

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here