তিমিরে_ফোটা_গোলাপ পর্ব—৭৯

0
608

#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব—৭৯
Writer তানিয়া শেখ

ভীষণ ব্যথাভরা একটা মেয়েলি গোঙানির আওয়াজ আবছা অন্ধকার ঘরের চার দেওয়ালে দাপাদাপি করে থেমে গেল। এখন কেবল হিংস্র চাপা গর্জন শোনা যাচ্ছে। শিকার ধরার পর হায়েনার গলা দিয়ে যে পৈশাচিক শব্দ বের হয় এ তেমনই।

আপাদমস্তক কালো আলখেল্লা পরিহিত একজন লোক বন্ধ দরজার কাছে এসে সেই শব্দ শুনে থমকে গেলেন। তাঁর ভয় থাকার কথা নয়। ভয় মানুষের থাকে। তিনি মানুষ নন। তবুও দুজনকে তাঁর ভীষণ ভয়। একজন এই বন্ধ দরজার অপরপ্রান্তে। হিংস্র জানোয়ারের ন্যায় গজরাচ্ছে। একসময় লোকে তাঁকে বলত বিকারগস্ত, নিষ্ঠুর। ওরা একে দেখলে কী বলবে? মনে মনে হাসলেন। তাঁর মতো বিকারগস্ত লোক যাকে ভয় পায় তার বর্ণনা মুখে বলে কী শেষ হবে? দরজায় টোকা দিতে গিয়ে হাতটা জমে যায় পাথরের মতো। ভেতরের গর্জন ক্রমশ হিংস্র হচ্ছে। এসময় যাওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু দেখা করা খুব জরুরি। সেখানে দাঁড়িয়ে দোনোমোনো করতে লাগলেন।

“তুমি এখানে কী করছো?” চমকে তাকালেন পেছনে। সামনে দাঁড়ানো লোকটার মুখ কড়িডোরের আঁধারে জড়িয়ে আছে। কিন্তু গলাটা চেনা। এগিয়ে গেলেন লোকটার দিকে। মুখ তুললেন। স্বার্থোদ্বারের প্রয়োজনে মাথা নিচু করতে হয়। অপছন্দের জনদের সাথে মিষ্টি করে বলতে হয় কথা। এসবে তিনি পূর্ব অভিজ্ঞ। অপ্রস্তুত হেসে বললেন,

“ড্যামিয়ানের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। জরুরি কথা ছিল।”

“এখন দেখা হবে না। এই সময় ও কারো সঙ্গে দেখা করে না।” নিরস গলায় জবাব দিয়েই ঘুরে দাঁড়ায়,

“ভালো চাও তো চলে যাও, রিচার্ড।”

“কথাগুলো জরুরি।” পেছন পেছন এলেন তিনি। লোকটা বলল,

“আমাকে বলতে পারো।”

“তোমাকে?”

“হ্যাঁ, আমাকে।”

“থাক। আমি বরং পরেই আসব।”

দাঁড়িয়ে গেলেন। এদের একটাকেও বিশ্বাস করেন না। তবুও জোর করে বিশ্বাসটাকে স্থির রাখতে হচ্ছে। সবই একমাত্র ওই সিংহাসনের জন্য। ড্যামিয়ান ওঁকে কথা দিয়েছে নিকোলাসের সিংহাসন দখল করতে সাহায্য করবে। কথার বরখেলাপ হলে সহজে ছেড়ে দেবেন না তিনি। আর ধোঁকা দেওয়ার সাহস করলে দেখে নেবেন। বোকা ভেবেছে!

“হুঁ!”
ক্ষুব্ধ মনে পাশের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে গেলেন রিচার্ড।

ভেতরে দাঁড়ানো লোকটার চোয়াল শক্ত হলো। কিন্তু ফিরল না। হনহন করে হেঁটে যেতে লাগল। ওকে হেয় করার উচিত শাস্তি একদিন এই পিশাচটাকে ও দেবে। লোভ, ক্ষমতা মানুষকে অন্ধই করে না, বোকাও বানিয়ে ছাড়ে। লোকে বলে শত্রুর শত্রুকে বন্ধু বানাও। এই পিশাচ তাই করেছে। জানে না, লোকের সব কথা শুনতে নেই। বিদ্রুপের হাসি খেলে গেল ওর ঠোঁটের কোণে।

“রজার!”

ভেতরে পরিচিত গলায় একজন ডেকে উঠল। পাশের জানালা খুলতে কক্ষের হ্যাজাকের আলো ওর মুখের ওপর পড়ে। অশুভ প্রেতমূর্তির মুখের মতো দেখাচ্ছে রজারের মুখ।

আজ রাতে বিয়ে। ইসাবেলার মনের ভেতর বেশ অস্থিরতা কাজ করছে। নিকোলাসের স্ত্রী হবে। প্রেমিকা হওয়া আর স্ত্রী হওয়াতে পার্থক্য আছে। ইসাবেলা এবার একই সাথে ওর প্রেমিকা ও সহধর্মিণী। সহধর্মিণী! কেমন যেন সুখ সুখ অনুভব করে। বুকের ভেতরে প্রসন্ন এক ঢেউ খেলে যায়। ওদের বিয়েটা হয়তো পুরোপুরি সামাজিকতা ও ধর্মীয় নিয়ম মানবে না তবুও তো তা বিয়েই।
এই সময় আপনজনেরা পাশে থাকে। কত কী বলে -বুঝিয়ে নববধূর অস্থিতিশীল মন ভুলায়। ইসাবেলার দুর্ভাগ্য ওর পাশে আপনজন থাকলেও মন ভুলানোর জন্য কেউ নেই। কীভাবে থাকবে? ওদের তো ধারণাই নেই আজ ইসাবেলার বিয়ে। দিনভর ইসাবেলা একা একা থাকার চেষ্টা করেছে। বাবা-মা, ভাইবোনের সান্নিধ্যে এলে কান্না পায় ওর। অপরাধবোধ তীব্র হয়। সত্য সূর্যের ন্যায়। একদিন ভাস্বর ঠিক হবে। সেদিন ওদের মুখোমুখি হবে কীভাবে ইসাবেলা? সারাটাদিন চোখের জল আড়াল করে কেটেছে ওর। অথচ, আজ ওর বড়ো আনন্দের দিন। কিন্তু এই আনন্দে এত বিষাদ কেন?

ওর মন খারাপ যে কেউ খেয়াল করেনি তা নয়। আন্না মেরিও, ওলেগ, তাতিয়ানা ও মাতভেই ঠিকই দেখেছে তাদের প্রিয় বেলার বিষণ্ণ মুখ। কথা বলতে চেয়েছে ওরা। ইসাবেলা বরাবরের মতোই এড়িয়ে গেছে। অপ্রয়োজনীয় হাসি হেসে সকলের চোখে ধুলো দিয়েছে। কিন্তু মা’কে পুরোপুরি ধোঁকা দিতে সফল হয়নি। আন্না মেরিও গত কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছেন ও যেন একটু বেশিই চুপচাপ হয়ে আছে। আজ কাছে ডেকে কথা বলতে চাইলে আসছি বলে সেই যে রুমে গেল আর এলো না। তিনি ভাবলেন মনটা বুঝি আজ ওর কোনো কারণে খুব খারাপ। একা থাক কিছুক্ষণ। পরে গিয়ে কথা বলবেন। তাছাড়া তিনি ইদানীং অন্য একটা ব্যাপার নিয়ে খুব ভাবছেন। রেইনি মেয়েটা তাশার বেবিসিটার হওয়ার পর থেকে তাশার রোগটা ভালো হয়ে গেছে। আগের মতো সুস্থ দেখাচ্ছে ওকে। বাড়ির সবাই খুশি। কিন্তু আন্না মেরিওর চোখে ধরা পড়েছে রেইনির পরিবর্তন। মেয়েটাকে তিনি পছন্দ করেন এমন নয়। এই অপছন্দের কারণ ওর দাদি। বাবার বিশ্বস্ত, ঘনিষ্ঠ ভৃত্যাটিকে তিনি আগাগোড়াই বক্র চোখে দেখেছেন। তার আপনজনদের বেলাতেও দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে না। কিন্তু রেইনিকে অপছন্দ করার দাবিটা কেন যেন শক্ত নয়। মেয়েটার মুখখানি মায়াভরা। ওই মুখে তাকালে মায়া করতে ইচ্ছে হয়। তিনি অবশ্য সে ইচ্ছেটাকে প্রশ্রয় দেন না। তবুও মেয়েটার শূন্য দৃষ্টি তাঁকে আজকাল ভাবায়। তাশা যত সুস্থ হচ্ছে রেইনিকে ততই যেন রোগা দেখাচ্ছে। চোখদুটো আগের মতো জীবন্ত নয়। নির্জীব হচ্ছে দিনকে দিন। তাশার সাথে হাসলেও ওর হাসি প্রানবন্ত নয়। রেইনির এই পরিবর্তন একা তিনি নন মাতভেইও লক্ষ্য করেছে। বেশ চিন্তিত ও। আন্না মেরিও অবশ্য ওকে অভয় দিয়েছেন। বলেছেন, এই বয়সে একটু আকটু ওমন অসুখ হয়। ওষুধ খেলে সেরে যাবে। মাতভেই যে তাঁর কথাতে নিশ্চিন্ত হয়নি সেটা ওর মুখ দেখেই বুঝেছেন। আন্না মেরিও ভাবছেন রেইনির ব্যাপারটা নিয়ে বাবার সাথে কথা বলবেন। তাছাড়া মাতভেই আর তাতিয়ানার বিয়ের দিন-তারিখও তো ঠিক করা দরকার। ইসাবেলার জন্য পাত্র দেখা নিয়েও আলাপ করবেন। কত দায়িত্ব তাঁর! এত কিছুর মাঝে মেয়ের মন খারাপের কারণ জানার কথাটা বেমালুম ভুলে গেলেন আন্না মেরিও।

চলবে,,,,

ইলাস্টিকের মতো শুধু বাড়ছেই পর্ব। কী এক্টা অবস্থা! যা হোক, খুব বেশি হলেও আর দশ পর্ব। তারপরেই শেষ The End। এই ক’দিন বিরতি একটু বেশি পড়ে গেলে সহ্য করে নেওয়ার অনুরোধ রইল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here