#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_37
দৃশ্য আর মাহাদ বসে আছে কাজীর সামনে।দৃশ্যর পুরো শরীর থর থর করে কাপছে।ভয় দৃশ্যর মনে যেকে বসেছে।বাবার হিংস্র রূপ বার বার ভেসে উঠছে।সামনের কাগজটা কেমন ঘোলাটে দেখাচ্ছে।একটু আগে তাকে এই কাগজে সাইন করতে বলেছে। মাহাদ দৃশ্যর হাতে হাত রেখে ভরসা দিলো।মেয়েটার মনে কি চলছে মাহাদ বুঝতে পারছে।দৃশ্য কাপা কাপা হাতে কলম ধরলো।একটা সাইন হয়তো তার পুরো জীবনকে বদলে দিবে।দিকনা বদলে।মাঝে মাঝে কিছু পরিপর্তন ভালোর জন্যই হয়।প্রিয় মানুষটা পাশে থাকলে সব কষ্ট সহ্য করা যায়।দৃশ্য কাগজে সাইন করলো।দু চোখ বেয়ে তার অশ্রু ঝরছে।আনন্দ,ভয়,সংশয় মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে।তারপর কবুল বলে তারা একটা পবিত্র সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে গেলো।দৃশ্যর কাছে সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে।তার ভালোবাসা আজ পূর্ণতা পেল।
তাদের বিয়ে সম্পন্ন হতে সবাই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল। প্রিয় বন্ধু তার প্রিয়তমাকে পেলে বোধয় বন্ধুরাই বেশি খুশি হয়।
আরিফের চোখ ভিজে উঠেছে।এই মুহূর্তে নিজেকে হালকা লাগছে।যে কাজ সে করতে পারেনি সেটা মাহাদ ঠিক করে দেখিয়েছে।নিজের ভালোবাসাকে চিরদিনের জন্য নিজের সাথে বেধে ফেলেছে।এই কাজটা ভুল নাকি সঠিক সেটা আরিফ জানে না।তবে দুজন মানুষ নিজের ভালোবাসাকে নিজের করে পেয়েছে এতেই তার শান্তি।তবে তার ভাই বিষয়টি কি ভাবে নেবে ভাববার বিষয়।
দৃশ্য আর মাহাদ মালা বদল করলো।রাফসান সব মোমেন্ট এর পিক তুলছে। মাহাদ দৃশ্যর কানে ফিসফিসিয়ে বললো
-“কনগ্রাচুলেশন মিসেস।আজ থেকে তুমি আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি।”
দৃশ্য কান্নার মাঝেই মুচকি হাসলো।কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।নাবিলা কাছে এসে কান্না করে দিলো।আর বললো
-“দৃশ্য আমার এতো খারাপ লাগছে কেনো?মনে হচ্ছে তুই পর হয়ে গেছিস।”
দৃশ্যও ভ্যা ভ্যা করে কেদে দিল।তানিম অবাক হয়ে বললো
-“এই বাচ্চা তুই কেমনে পালবি মাহাদ?”
রাফসান হেসে বললো
-“আরে একবার বাসর ঘরে গেলে দেখবি এই বাচ্চা আরেক বাচ্চা নিয়ে বেরুবে।”
জয় হেসে বললো
-“সব কিছুর ক্রেডিট কিন্তু মাহাদের থাকবে।”
মাহাদ বিরক্ত হয়ে বললো
-“মজা নিচ্ছিস?সময় আমারও আসবে।দেখে নিবো তোদের।”
তানিম বললো
-“ওই ব্যাটা এখন কি করবি?”
রাফসান বললো
-“দূরে কোথাও ঘুরে আস।বাসর প্লাস হানিমুন শেষ করে আয়।”
মাহাদ গম্ভীর হয়ে বললো
-“নারে বাসায় যাবো।বাবাকে জানাতে হবে।তাছাড়া দৃশ্যর বাসায় ওকে না পেয়ে আমার বাসায় ঝামেলা করবে।তাই বাবাকে আগেই সব জানাতে চাই।বাবা নিশ্চয়ই বিষয়টা বুজবে।”
আরিফ এসে বললো
-“চলো আজ আমার পক্ষ থেকে তোমাদের সবার ট্রিট।”
মাহাদ চিন্তিত হয়ে বললো
-“এইসব পড়ে হবে চাচু।আগে বাসায় জানাতে চাই।”
-“আরে বাসায় তো যাবোই।দেখ বাসায় একটু ড্রামা তো হবেই।তাই খেয়ে শক্তি করে নে।আর দৃশ্যকে দেখে মনে হয় কাল থেকে কিছুই খায়নি।”
-“ঠিক আছে।”
তানিম মুচকি হেসে ফিসফিসিয়ে বললো
-“আরে মামা খেয়ে নে।নাহলে রাতে শক্তি পাবি না।”
মাহাদ তানিমের পিঠে একটা কিল মেরে দিল।
তারা সকলেই একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে।সামনে অনেক খাবার।কিন্তু দৃশ্য কিছুই মুখে তুলছে না।ভয়ে তার শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। মাহাদ কাছে এসে বসলো।আর একটা প্লেটে খাবার তুলে দৃশ্যর মুখের সামনে নিয়ে বললো
-“বউ হা করো তো।”
মুহূর্তেই দৃশ্যর পুরো শরীর মৃদু কেপে উঠলো।বুকের ভেতর মনে হচ্ছে কেউ তবলা বাজাচ্ছে।বউ শব্দটার এতো শক্তি?একটা শব্দ এই কিশোরীর অন্তরকে নাড়িয়ে দিয়েছে।মুহূর্তেই দৃশ্যর চোখ বেয়ে আনন্দের অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।এতো সুখ তার কপালে সইবে তো?দৃশ্য খাবার মুখে পুরে নিলো। মাহাদ পরম যত্নে দৃশ্যকে খাওয়ালো।সবাই তাদের দেখে হাসছে।তৃপ্তির হাসি।
মাহাদ যত্ন নিতে জানেন। ভালবাসার যত্ন সম্পর্কে যত্ন সবকিছুতেই মাহাদ বেশ পটু। এমন একটা কেয়ারিং হাজবেন্ড সব মেয়েই আশা করে। মাহাদের কেয়ারিং ব্যবহারের জন্যই দৃশ্য তার প্রতি ভীষণ দুর্বল।ভাইয়া ছাড়া মাহাদই দ্বিতীয় পুরুষ যে তাকে এতো কেয়ার করে।
তাদের খাওয়া শেষ হলে মাহাদ জয়কে বললো মৌ,নাবিলা আর সায়মাকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে।তারা যাওয়ার আগে দৃশ্যর গলা ধরে মরা কান্না করলো।তানিম বিরক্ত হয়ে বললো
-“এতো কান্নার কি আছে?তোমাদের বান্ধুবি শশুর বাড়ি যাচ্ছে, যুদ্ধের ময়দানে না।”
নাবিলা নাক টেনে বললো
-“আপনি বুজবেন না।”
নাবিলা মনে মনে বলছে
‘ আজ বাসায় তার উপর থার্ড ডিগ্রি চলবে সেটা বুঝতে পারছে।তার বাবা চাচার ইগোতে আঘাত লেগেছে।নিশ্চয়ই ছেড়ে কথা বলবেননা?’
জয় চলে যেতেই মাহাদ চললো বাসার উদ্দেশ্যে।সেই কখন থেকে দৃশ্য কেঁদেই চলছে। মাহাদ এবার শক্ত গলায় বললো
-“আমি তোমাকে জোর করে বিয়ে করেছি?তাহলে এতো কাঁদতেছো কেন?”
দৃশ্য এবার হিচকি তুলে কাদতে কাদতে বললো
-“তুমি একটা খারাপ।বিয়ে করেই আমাকে ধমক দিতে শুরু করেছ।থাকবনা তোমার সাথে।”
মাহাদের ভীষণ হাসি পেলো।কিন্তু হাসলেই বিপদ।এই বাচ্চা তখন ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দিবে। মাহাদ দৃশ্যকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খেয়ে বললো
-“ধমক দেই নি তো বউ। তুমি কাঁদলে আমার কষ্ট হয় বুঝনা।তাই কান্না বন্ধ করো আর নিজেকে শক্ত করো। কারণ সামনে কি হতে চলছে আমি নিজেও জানিনা। যেটাই হোক আমার হাত কখনো ছাড়বে না।”
দৃশ্য মাহাদের বুকে মুখ গুজে রইলো। এর চাইতে নিরাপদ স্থান আর হতেই পারে না।
বিকেলের দিকে তারা বাসায় পৌঁছালো।কিন্তু ভেতর থেকে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ আসছে।চিন্তায় মাহাদের কপালে ভাঁজ পড়ল।দৃশ্য ভয়ে মাহাদের বহু চেপে দাড়ালো।
বাসায় ঢুকে আরিফ একটু অবাক হলো।এতো জলদি আশরাফ এই জায়গাতে পৌঁছে যাবে ভাবতে পারেনি। দুই পক্ষের মাঝে বেশ বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। সেখানে মাহাদের দুই মামাও আছে।আমজাদ রহমানের রাজনৈতিক কিছু উচু মহলের লোকও আছে।এটা নিশ্চয়ই মাহাদের মামার কাজ।দরজায় সবার চোখ পড়তেই মুহূর্তেই সব নিস্তব্ধ হয়ে গেল। যাদের নিয়ে এতো ঝামেলা চলছে তারা ঠিক কি কাজ করে ফিরেছে সেটা বুঝতে কারো সময় লাগলো না।দৃশ্যকে বউ সাজে দেখে ফাহিমের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।শেষ পর্যন্ত বোনটা এই কাজ করলো? নিশ্চই ওই মাহাদ তার বোনের ব্রেন ওয়াস করেছে।নাহলে তার পিচ্ছি বোনটা এমন কিছু করতেই পারে না।
নিজের পরিবারকে এই জায়গাতে দেখে দৃশ্যর ভয় বেড়ে গেলো।পুরো শরীরে কম্পন ধরে গেলো।সামনে ঘোর বিপদের আভাস পাচ্ছে।চোখে পড়লো বাবার রক্তিম চোখ জোড়া।যা তাকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিবে।
ফাহিম দৃশ্য আর মাহাদকে এই অবস্থায় দেখে রাগে ফেটে পরলো।দ্রুত কাছে এসে মাহাদের কলার চেপে ধরলো।আর চিৎকার করে বললো
-“জানোয়ারের বাচ্চা আমার বোনকে কোন সাহসে নিয়ে এসেছিস?তোর গেম আমি বুঝিনা ভেবেছিস?”
তানিম আর রাফসান জোর করে ফাহিমের হাত থেকে মাহাদ কে ছাড়ালো।দৃশ্য ভয়ে মাহাদের পিছনে লুকিয়ে পড়েছে।
মাহাদ শান্ত কন্ঠে বললো
-“দেখ ফাহিম তুই আমাকে ভুল বুঝছিস।আমি কোনো গেম খেলছি না।দৃশ্যকে আমি ভালোবাসি।সেটা তোর পরিবারকে বুঝাতেও চেয়েছি।কিন্তু তোরা বার বার আমাকে আর আমার পরিবারকে অপমান করে গেছিস।”
ফাহিম ক্ষিপ্ত হয়ে বললো
-“নাটক বন্ধ কর।নিজের চাচার সাথে মিলে আমার পরিবারের সুখ শান্তি নষ্ট করার প্ল্যান করেছিস।আমার বোকা বোনটার ব্রেন ওয়াশ করিয়েছিস।”
আরিফ নরম সুরে বললো
-“দেখো বাবা জীবন কোনো নাটক না। মাহাদ সত্যি তোমার বোনকে ভালোবাসে।সে কিন্তু চাইলেই প্রথমে এই কাজটা করতে পারতো।কিন্তু সে চেয়েছে পারিবারিক ভাবে এগুতে।সে যাই হোক। এখন আমাদের উচিৎ সব ভুলে নতুন করে শুরু করা।”
আশরাফ হুসাইন চিৎকার দিয়ে বললেন
-“কখনো না।আমি বলেছিনা এই বেয়াদবের বাচ্চা আমার মেয়েকে নিয়ে ভেগেছে?”
আনোয়ার হুসাইন রেগে বললো
-“কীরে আমজাদ এই তোর পোলার উপর বিশ্বাস?দেখলি তো আমাদের মেয়ে নিয়ে ভেগেছে।”
আমজাদ রহমান নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। মাহাদ এমন একটা কাজ করবে ভাবতেই পারেননি।
আশরাফ আর আনোয়ার অকথ্য ভাষায় আমজাদ রহমানকে গালি দিয়ে যাচ্ছেন।আখি রহমান পাশে দাড়িয়ে চোখের জল ফেলছেন।নিজের স্বামীর এতো অপমান তিনি কিছুতেই মানতে পারছে না।আরিফ বার বার তাদের বুঝিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু দৃশ্যর বাবা চাচা গালি গালাগ শুরু করেছে।নিজের ভাইকে আরিফ অনেক ভালোবাসে।তার ভাইতো কিছুই জানতো না।তবুও এতো অপমান সহ্য করছে।তার ভাইয়া নিতান্তই মাটির মানুষ।কাউকে কষ্ট দিয়ে কথা বলতেই পারেনা ।কিন্তু সে ভাইয়ের অপমান সহ্য করবে না। এবার রেগে বললো
-“ফালতু কথা একদম বলবেননা।আমরা সুন্দর ভাবে আপনাদের বাড়িতে মেয়ে চাইতে গেছিলাম।কিন্তু আপনাদের ফালতু ইগোর কারণে আমাদের অপমান করেছেন।অথচ এতে বাচ্চাগুলো কতটা কষ্ট পাচ্ছে সেটা খেয়াল করেননি।”
আশরাফ হুসাইন ক্ষিপ্ত হয়ে বললো
-“আমার মেয়ের বিষয়ে আমি বুজবো।তোদের মাথা ঘামাতে কে বলেছে?”
-“দৃশ্য আর এখন শুধু আপনার মেয়ে না।সে মাহাদের বউ।”
কথাটা যেন আশরাফ হোসেনের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিলো।তিনি চিৎকার করে বললেন
-“এই বিয়ে আমি মানিনা। আমার মেয়েকে জোর করে বিয়ে করে নিলেই আমি মানবো নাকি? অসভ্যের বাচ্চাগুলো আমার বাড়ির মেয়েদের পেছনে লেগেছিস। নিজে পারিস নি এখন ভাইয়ের ছেলেকে দিয়ে আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করতে পেছনে লেগেছিস?”
মাহাদ শান্ত সুরে বললো
-“প্লিজ আংকেল।বাবা আর চাচু কে কিছু বলবেন না।এটা সম্পূর্ণ আমাদের ডিসিশন।এতে তাদের কোনো দোষ নেই।”
আশরাফ হুসাইন রেগে বললো
-“তোর মতো বেয়াদব ছেলের কাছে এর চাইতে বেশি কিছু আশাই করা যায় না।”
শামসুন্নাহার বেগম তেতে উঠল।নিজের ছেলেদের অপমান তিনি কিছুতেই সইবে না।গলা ছেড়ে বললো
-“ওই জল্লাদের বাচ্চা।আমার পোলা আর নাতিরে কিছুই কবি না।আমার নাতির দোষ কি?নিজের মাইয়া সামলাইতে পারস না?তোর মাইয়া আমার নাতিরে রূপে ভুলাইছে।আমার নাতি তোর মাইয়ারে ভালা পায়।নাইলে তোর মতো ছোটলোকের বাড়িত থাইকা আমরা মাইয়া আনিনা।আমার পোলা তোর বইনের চাইছিলো।কিন্তু তুই এক জল্লাদের কাছে বোনরে বিয়া দিলি।কই সংসার করতে পারছে?তুই নিজে অমানুষ আর বোনরে ও আরেক অমানুষের হাতে তুইলা দিছস।আমার পোলা কি খারাপ রাখতো?মানিকে যেমন মানিক চিনে।অমানুষ তেমন অমানুষ চেনে।নিজে যেমন বউ পিডাস বইনরেও তেমন বেডার কাছে দিছস।
আরে তোর কীর্তি সবার জানা।মেয়র হওয়ার লাগি কয়েক বছর ধইরা ভদ্র সাজছোস।নাইলে তোর মতো জানোয়ারের আমার চিনা আছে।”
অপমানে আশরাফের পুরো শরীর রী রী করে উঠলো।রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।এই বুড়ির জায়গাতে অন্য কেউ থাকলে এতো ক্ষণে পরপারে পাঠিয়ে দিতো।
আনোয়ার হুসাইন প্রচন্ড রেগে বললো
-“আমজাদ তোর মাকে সামলা।তোরা যদি এতই ভালো হইতি তাইলে আমাদের বাড়ির মেয়েকে ভাগাইয়া আনতি না।তোদের নামে মামলা দিবো। কিডন্যাপের মামলা।মাইয়া দেখলে তোদের মাথা ঠিক থাকে না।আমরা বউ সামলাইতে জানি।বউয়ের আঁচলে বইসা থাকা তোদের কাজ।”
শামসুন্নাহার বেগম রেগে বললো
-“আরে ছাগলের বাচ্চারা।তোগো বাপ যেমন আছিলো তোরাও তেমন।তোর কীর্তি ও কম নাই।বউ পিডানো যদি সামলানো হয় তাইলে ঘরে ঘরে তোগো মতো কাপুরুষ থাকতো।মাইয়া মানুষের সম্মান কেমনে দিতে হয় তোরা জানবি কেমনে?”
আমজাদ রহমান নিজের মাকে থামলেন।আশরাফ হুসাইন প্রচন্ড রেগে দৃশ্যর সামনে যেয়ে এক থাপ্পর বসিয়ে দিলেন।দৃশ্য ধপ করে ফ্লোরে পড়ে গেলো গেলো।ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন
-“তোর মতো বেয়াদব মেয়েকে জন্ম দেওয়া আমার ভুল হইছে। ছোট বেলায় বিষ খাইয়ে মেরে ফেললে আজ এই দিন দেখতে হতো না।”
চোখের পলকে এমন কিছু হবে মাহাদ ভাবতেই পারেনি।সে দ্রুত দৃশ্যকে ধরে উঠালো।দৃশ্য গাল লাল হয়ে গেছে।চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে।
মাহাদের রাগ বেড়ে গেলো।এই লোকটা দৃশ্যকে সেদিনও নির্মম ভাবে আঘাত করেছে।আজ আবার করছে।মাহাদ গম্ভীর স্বরে বললো
-“আপনি আমার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতে পারেন না।আগে সে আপনার মেয়ে ছিলো।কিন্তু এখন সে আমার স্ত্রী।আমার স্ত্রীর গায়ে সামান্য তম আঘাত আমি সহ্য করবো না।বউ পিটানোর সভ্যাব আপনার থাকতে পারে,কিন্তু আমার নেই।”
এতো সময় ফাহিম নিজের বাবা সম্পর্কে এতো কিছু সহ্য করলেও এবার আর পারলো না।সে দ্রুত ছুটে এসে মাহাদকে মারতে শুরু করলো।তানিম আর জয় মিলেও কিছুতেই ছাড়তে পারছে না।রিজভী আর ওর বন্ধুরা ফাহিমকে থামাতে পারছে না।ফাহিমের মধ্যে যেনো অসীম শক্তি ভর করেছে।
দৃশ্য ফ্লোরে বসে চিৎকার করে কাদতে লাগলো।বুকটা তার ফেটে যাচ্ছে।কে ভুল কে সঠিক সেটা সে জানে না।শুধু জানে তার স্বামীর গায়ের আঘাত গুলি তার গায়ে কাঁটার মতো বিদছে।নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে।
আরিফ নিজেও কিছুতেই ফাহিমকে থামাতে পারছে না।আশরাফ যেনো মনে মনে খুশি হলো।সে কিছুতেই ছেলেকে থামাতে আসলো না।দৃশ্য দৌড়ে এসে ফাহিমকে থামাতে চেষ্টা করতে লাগলো।ভাইয়ের পায়ে ধরে কাদতে কাদতে বললো
-“ভাইয়া ছার ওকে।ও মরে যাবে।প্লিজ ভাইয়া।ওর কোনো দোষ নেই।”
ফাহিম ক্ষিপ্ত হয়ে দৃশ্যকে এক ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো। মাহাদকে ছেড়ে দৃশ্যকে মারতে লাগলো।আজ যেনো সে নিজের মধ্যে নেই।মাথায় শুধু এটাই আছে দৃশ্যর বোকামির জন্য বাবা চাচাকে এতো খারাপ কথা শুনতে হলো।তার বাবা কোনো দিন তার মায়ের গায়ে হাত তুলতেই পারে না।অথচ এই পরিবারের সবাই কেমন মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে।সে তার বাবাকে ভীষণ সম্মান করে।তার নামে বাজে কথা সে সহ্য করবে না।
মাহাদ এতো সময় ইচ্ছে করে ফাহিমের গায়ে হাত তুলেনি।এই ভাইকে দৃশ্য খুব ভালোবাসে।তার গায়ে হাত তুললে দৃশ্য কষ্ট পাবে।কিন্তু এখন সে এই ফাহিমকে কিছুতেই ছাড়বে না।তার সামনে তার স্ত্রীর গায়ে হাত তোলার শাস্তি সে পাবে।
মাহাদ রেগে ফাহিমকে দৃশ্যর কাছথেকে দূরে সরিয়ে মুখ বরাবর কয়েকটা ঘুসি মেরে বসলো।আর চিৎকার করে বললো
-“আমার দৃশ্যর গায়ে কোন সাহসে হাত তুলেছিস?এই হাত আজ আমি ভেঙে ফেলবো।তোরা বাপ ছেলে এক।মেয়েদের গায়ে হাত তুলে ক্ষমতা দেখাস?তোরা সব কাপুরুষের দল।”
রিজভী আর তার বন্ধুরা ফাহিমকে বাঁচাতে মাহাকে মারতে গেলে মাহাদের বন্ধুরা পাল্টা তাদের মারতে লাগলো।
মুহূর্তেই পরিবেশ ভীষণ গরম হয়ে গেলো।দুই পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেলো।কেউ যেনো হারতে রাজিনা।
দৃশ্য চিৎকার করে কাদঁছে।তার প্রিয় দুইজন মানুষ এইভাবে সংঘর্ষে মেতে উঠেছে।কাকে থামবে সে? এরা যে একে অপরকে শেষ করেই দম নিবে।পরিস্থিতি এতটা খারাপ হবে সে ভাবতেই পারেনি।
আমজাদ রহমান এই পরিস্থিতি দেখে কি করবেন ভেবে পাচ্ছে না।বুকের বেথা বাড়তে লাগলো।আখি রহমান কাদছেন।আর শামসুন্নাহার বেগম বিলাপ করছেন।এই পরিস্থিতি তাদের জীবনকে কোথায় নিয়ে যাবে?