#ইস্ক,১৫,১৬
#সাদিয়া
১৫
রেস্টুরেন্ট থেকে সবাই এক গাড়িতে বাসায় ফিরল। ঘড়িতে তখন ১০ বেজে ৪২ মিনিট। সবাই নিজের রুমে চলে গেল। ইয়াদ গাড়ি পার্কিং করে এসে দেখল তিতিল ঘরে নেই। নিশ্বাস ছেড়ে দিয়ে সে ঘর থেকে বের হলো।
ভেতরটা আজ স্বস্তি লাগছে। বহুদিন পর প্রশান্তির হাওয়ায় দুল খাচ্ছে হৃদয়। ওখানে থাকা সময় টা যেন কেটেছে তার তিতিল কেই দেখে।
ইয়াদ তিতিলের রুমে গিয়ে দেখে তিতিল তখন কানের দুল খুলছিল। গায়ে ওড়না ছিল না বলে ইয়াদ কে দেখে তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে গায়ে ওড়না জড়ালো। ইয়াদ ধীর পায়ে এগিয়ে গেল তিতিলের দিকে। শান্ত গলায় বলল,
“ও রুমে যাও।”
“….
“অন্য কিছুতে জোর না করলেও এটা নিয়ে জোর করতে বাধ্য।”
“….
“তিতিল আমি তোমাকে কিছু বলছি।”
আমতাআমতা করে তিতিল বলল,
“ওখানে থাকার কি আছে? আপনি..”
“আই হোপ তুমি ইয়াদের কোলে উঠতে চাইছো।”
“না।”
“সেটাই তো দেখতে পাচ্ছি।”
“মানে?”
“মানে স্পষ্ট।”
“যাবো।”
“তো যাও।”
“ড্রেসটা চেঞ্জ করে নেই আপনি যান।”
“ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করো।”
“না আপনি ঘর থেকে যান।”
“আমি চলে গেলে দরজা বন্ধ করবে। তারপর ড্রেস চেঞ্জ করবে। তারপর লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে ঘুমের ভান ধরবে?”
“….
“বেরিয়ে যাচ্ছি তবে আশা করব তিতিল এমনটা করবে না।”
ইয়াদ বের হয়ে যেতেই তিতিল দরজা বন্ধ করল। তারপর ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে গেল।
একটুপর এসে আয়নার সামনে দাঁড়াল। ইয়াদের কথা মনে পড়তেই ঠোঁট টিপে হাসল।
দরজা খুলে বের হতেই তিতিল দেখতে পায় ইয়াদ কে। তখন পর্যন্ত ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিল লোকটা। ঠোঁট উল্টে কিছু না বলে নিচে গেল সে। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতল টা নিয়ে উপরে গেল। ইয়াদ তখনো তার ঘরের সামনেই ছিল। তিতিল ধীর পায়ে একটু একটু করে নিজের ঘরের দিকে যেতে লাগল। কি করে লজ্জাশরম খেয়ে ইয়াদের ঘরে সে স্বেচ্ছায় যাবে? দরজার কাছে আসতেই নিজের জায়গা বহাল রেখে ইয়াদ তার হাত ধরল।। চোখ মুখে লোকটার গাম্ভীর্য ভাব। ইয়াদ চুপচাপ তিতিল কে টেনে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করল। গায়ের কোট টা খুলে বিছানার উপর ছুড়ে দিল। তিতিল তখনো মাথা নুয়ে দাঁড়িয়ে দিল। ইয়াদ দুই পা তার দিকে এগিয়ে যেতেই তিতিল এক পা পিছিয়ে গেল। ইয়াদ থেমে গেল না এগিয়ে গিয়ে। তিতিলের বাহু চেঁপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো এবার। তিতিল কি করবে বুঝতে পারছে না। একদম জমে যাচ্ছে সে। ইয়াদ তিতিলের গালের দুই পাশে কোমল করে হাত রেখে তার মুখ টা খানিক উপরে তুলল। ভ্রু উঁচু করে তিতিল তাকাল ইয়াদের দিক। ইয়াদ কিছুক্ষণ তিতিলের মুখের পানে তাকিয়ে রইল। ভেতরে ঝড়ো হওয়া বইছে তার। প্রবল আকাঙ্ক্ষা তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। উন্মাদের মতো চেয়ে আছে তিতিলের দিকে। তিতিলের চোখ মুখে লোকটার গরম নিশ্বাসের আঁচ এসে পড়াতে আরো জমে যাচ্ছে সে। নিজের কাছে নিজেকে বরফ পিন্ড লাগছে। কাঁপা ঠোঁট গুলি নিয়ে ইয়াদ বলল,
“আমাকে ক্ষমা করে দিও এত টা কষ্ট দেওয়ায়। সব কিছু সমসময় মনে রাখতে নেই। ভুল করেছি স্বীকার করছি। মাফও চেয়ে নিচ্ছি যার কাছে ভুল করেছি। যার স্পর্শে কেঁপে উঠো তাকে না হয় মাফ করে দিও।”
ইয়াদ মন্থরগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তিতিলের দিকে। তিতিলের দিকে ঝুঁকে গেছে পুরো। ঠোঁট ছুঁই ছুঁই অবস্থা। তিতিল চোখ বন্ধ করে খিচে রয়েছে। ইয়াদ খানিক হাসল। তার ঠোঁট গুলি পরম আদরে তিতিলের কপাল ছুঁয়ে দিয়ে বলল,
“ঘুমিয়ে যাও। অবশ্যই স্বপ্নে ইয়াদ কে চাই।”
ইয়াদ আর কথা বাড়াল না। ব্যালকুনিতে চলে গেল। তিতিল তখনো বরফ পিন্ডের মতো দাঁড়িয়ে আছে। সে পাথরের মতো জমে গেছে নাকি অনুভূতির সাগরে ভাসছে তা বুঝে উঠার সক্ষমতা নেই। তিতিল নিস্তেজ হাতে কপাল ছুঁয়ে দিল। প্রথম ঠোঁটের পরশের কথা মনে হতেই আবারো কেঁপে উঠল সে। শরীরের প্রতিটি লোম কাটা দিয়ে উঠেছে তার। ভেতরটাও কাঁপছে কেমন রুরু করে। ঘন ঘন নিশ্বাস নিল তিতিল। প্রথম অন্যরকম অনুভূতির দেখা। পরশ অনুভব করা। তিতিল নির্বাক হতভম্ব।
একটু পর ব্যালকুনি থেকে নিকোটিনের উদ্ভট গন্ধ নাকে এসে লাগল তিতিলের। দম বন্ধ করে দিচ্ছে সেটা। যেন গলা টিপে ধরেছে। বেশিরভাগ মেয়ের নিকোটিনে এলার্জি থাকে। তিতিলের শ্বাসকষ্ট হয় এতে। বিছানা থেকে উঠে ব্যালকুনিতে উঁকি দিতে রাগে এক হয়ে আসে মুখ। সাদা ইং করা শার্টে লোকটা ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেটে সুখটান দিতে ব্যস্ত। লোকটা কে একদম অন্যরকম লাগছিল দেখতে। সিগারেটের ধোঁয়া ফু দিয়ে উড়িয়ে দিতে লাগল অন্ধকার আকাশে।
হঠাৎ কাশির শব্দে ইয়াদ থতমত খেয়ে তাকাল পাশ ফিরে। তিতিল কে কাঁশতে দেখে হাত দিয়ে ধোঁয়া উড়াল। সিগারেট টা নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে মুখের ভেতরে রাখা ধোঁয়া ছেড়ে দিল।
রাগে লাল হয়ে তিতিল কড়া গলায় বলল,
“আমি আমার রুমে চলে যাবো।”
“আর ইউ ওকে তিতিল?”
ধোঁয়া হাত দিয়ে সরিয়ে এগিয়ে গেল ইয়াদ।
“একদম ছুঁবেন না আমায়” বলে তিতিল দুই পা পিছিয়ে গিয়ে কাশতে লাগল। ইয়াদ দ্রুত পায়ে টেবিল থেকে পানি নিয়ে মুখের সামনে ধরতেই তিতিল বসার জায়গা খুঁজল। তিতিল না চাইতেও ইয়াদ তার বাহু ধরে বিছানায় নিয়ে বসাল। তিতিল ডগডগ করে গ্লাসের পানিটা শেষ করে দম নিল। গলাটা এখনো খুশখুশ করছে তার।
“ঠিক আছো তিতিল?”
কপাল কুঁচকে বাহু থেকে হাত সরিয়ে নিল ইয়াদের।
“এলার্জি আছে তোমার? আমি জানতাম না বিশ্বাস করো। তা হলে খেতাম না।”
“ইচ্ছা করে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন তাই না?”
“মানে?”
“সবাই বিষ দিয়ে মারতে চায় আর আপনি সিগারেট দিয়ে করছিলেন।”
“হোয়াট?”
“দূরে সরে যান তো। গন্ধে আমার দম আটকে আসছে।”
ইয়াদ কথা মতো একটু দূরে গিয়ে বসল। বা হাতে বা কান ধরে বলল,
“সরি। আর কোনো দিন তোমার সামনে সিগারেট খাবো না। এতটা হাইপার হইও না প্লিজ।”
ইয়াদ তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেল। তিতিল টেবিলে গ্লাস রাখল। ইয়াদের কান ধরা মুখটা মনে হতেই ঠোঁট টিপে হাসি এলো তার।
—-
আযানের আওয়াজ কানে আসতেই সজাগ হলো তিতিল। কিন্তু আলসেমি তে উঠতে মন চাইছে না। এই সময়টা ঘুমের এত আরাম হয় তা বলে বুঝানো যাবে না। শয়তান হাত বুলিয়ে ঘুমিয়ে যেতে বলে কিনা!
চেষ্টায় তিতিল উঠে গেল। নামাজ পড়ে মোনাজাত ধরল সে। এই টাইমে ইয়াদের তেমন ঘুম না ভাঙ্গলেও এতটা কাছে কান্নার গুনগুনানো শব্দে চোখ ঢলে তাকাল। পাশ ফিরে দেখতে পেল তিতিল মোনাজাতে কান্না করছে। ইয়াদের শরীরে ঝাটকা বয়ে গেল। চোখ ঢলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল ওদিকে। তিতিল উঠতেই আবার চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। বিছানা ঘুছিয়ে তিতিল চুপচাপ বের হয়ে গেল। ইয়াদের দিনের শুরুটা আজ অন্য ভাবেই হলো। না জানি আজ আর কি কি হতে পারে।
চলবে♥
(আশা করব গঠনমূলক কমেন্ট করবেন।🧡💛)
#ইস্ক
#সাদিয়া
১৬
তিতিল রুমে গিয়ে দেখতে পেল লোকটা তখনো ঘুমাচ্ছে। তিতিল কফির মগটা নিচে রেখে গলা কাশল। ইয়াদের সাড়াশব্দ নেই। তিতিল আবার ডাকল,
“শুনছেন? আপনার কফি।”
কে শুনে কার কথা? বিড়বিড় করে বলল,
“হয়েছে তো মহাজ্বালা। আশ্চর্য!”
টেবিল থেকে পানি নিয়ে তিতিল ইয়াদের মুখে ছিটিয়ে দিতেই হকচকিয়ে উঠল সে। ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল পাগলের মতো। হাসি পাচ্ছে তিতিলের। নিজেকে সামলে বলল,
“এইযে এই দিকে। টেবিলে তাকান দেখুন আপনার কফি দেওয়া আছে।”
ইয়াদ চোখ কচলে তাকাল পাশ ফিরে। তিতিল তখন ঠোঁট টিপে হেসে টেবিলের উপর রাখল পানির গ্লাস টা। তারপর চুপচাপ চলে গেল। ইয়াদ এতক্ষণ ভ্যাবলার মতো চেয়ে ছিল। বিষয়টা বুঝতে পেরে বিড়বিড় করল।
“মেয়ে তো আচ্ছা ভারি শয়তান।”
—-
খাবার টেবিলে সবাই মাত্র খেতে বসেছে। তিতিল রান্না ঘরে ডাল ভোনায় ব্যস্ত। হয়েই এসেছে, শুধু নামাবে। ফরিদা আন্টি একে একে সব খারাব নিয়ে টেবিলে সাজিয়ে দিচ্ছে। ইনা আর রেহেলা বেগম বিড়বিড় করে কিছু বলছেন। হিমা ফোন টিপছে বসে। আর ইয়াদ পানি খাওয়ার জন্যে গ্লাসে মগ থেকে পানি নিজেই নিয়ে নিচ্ছিল। হঠাৎ কাঁচের গ্লাস টা ফ্লোরে পড়ে যেতেই শব্দ হয়। কাঁচের টুকরো ভেঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে। সবাই ওদিকে নজর দেয়। তিতিল রান্না ঘর থেকে উঁকি দিল শুধু।
“ও শীট” বলে ইয়াদ নিজেই কাঁচের টুকরো তুলতে গেলে মৃদু আর্তনাদ করে উঠল। হিমা ইনা রেহেলা বেগম উঠে দাঁড়ালেন। ইয়াদের ওমন আওয়াজ শুনে তিতিল রান্নাঘর থেকে পাখির মতো ছুটে এলো। ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল
“কি হয়েছে?”
“….
“ভাই কি হলো? হাত কেটে গেছে?”
ইয়াদ কিছু বলছে না। রেহেলা বেগম ভীত স্বরে বললেন,
“বাবা কি হলো তোর? দেখি।”
ইয়াদ নুয়া থেকে উঠতেই সবাই আতকে উঠল। ডান হাত রক্তে ভিজে গেছে। কলকল করে রক্ত গড়িয়ে নিচে পরছে। মুচড় দিয়ে উঠে তিতিলের বুক। সে হুট করে ইয়াদের হাত ধরতেই চোখের কোণায় পানি চলে আসে। ইয়াদ ব্যথার দিকে নজর না দিয়ে ঠোঁটে মৃদু হাসি তুলে বা হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে তিতিলের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
“কান্নার মতো কিছু হয়নি। সামান্যই!”
তিতিল কিছু বলতে পারল না লাল টকটকে রক্ত দেখে। রেহেলা বেগম বললেন,
“এটা সামান্য তোর কাছে?”
“…
“ভাই চল হসপিটালে নিয়ে যাই।”
“আরে আপু হসপিটাল যাওয়ার মতো কিছু হয়নি। সামান্য একটু ডেবে গেছে বলে রক্ত বের হচ্ছে। আর কাঁচ টা আমিই বের করে ফেলেছি। একটু ড্রেসিং করলেই হবে।”
“তিতিল তাড়াতাড়ি ফাস্টএইড বক্স টা নিয়ে এসো।”
তিতিল দৌড়ে গিয়ে বক্সটা এনে দিল ইনার হাতে। ইনা তাড়াতাড়ি ইয়াদ কে টেনে সোফায় নিয়ে গিয়ে বসাল। তিতিল ফরিদা আন্টি কে চুলা বন্ধ করে কাঁচের টুকরো গুলি সাবধানে পরিষ্কার করতে বলে ইয়াদের কাছে গেল। ভেতরে কষ্টের ফাটল ধরেছে তার। ইয়াদ তাকিয়ে তাকিয়ে তিতিল কে দেখছে। তিতিলকে এতটা অস্থির আর উদ্বিগ্ন দেখে মুচকি হাসছে সে। মনে আনন্দের হওয়া বইছে।
“আপু ভালো করে দেখো কাঁচের কণা ভেতরে আছে কিনা।”
তিতিল কথা শেষ করে তাকালো ইয়াদের দিকে। ইয়াদ তখন তার দিকে তাকিয়ে ছিল হাস্যোজ্জ্বল মুখে। তিতিলের কষ্টে আরেক ফুটা পানি গড়িয়ে পড়ল। ইয়াদ চোখ সরিয়ে নিয়েছে সেই পানির থেকে।
“মেডিসিন নিতে হবে।”
“ইনা বেশি কেটেছে?”
“না ক্ষতটা একটু গভীর মা। কিন্তু মেডিসিন নিতে হবে।”
হিমা বলল,
“কি দরকার ছিল ভাইয়া তোমার পরিষ্কার করার?”
“আরে এটা একটা এক্সসিডেন্ট। ডোন্ট ওরি। তেমন কিছু হয় নি আমার মা ওরকম মুখ করে আছো কেন?”
“….
রেহেলা বেগম কিছু বললেন না চোখ টলমল করছে পানিতে।
ইনা বলল,
“ভাই আয় ভাত খেয়ে নিয়ে ঔষধ খাবি। আমি ড্রাইভার কে বলে ঔষধ আনাচ্ছি।”
ইয়াদ মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“মা খেতে পারব না হাতে। খায়িয়ে দিবে আমাকে?”
উনি তিতিলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“তিতিল যা আমার ছেলে কে ভাত খায়িয়ে দিয়ে ঔষধ দিস।”
তিতিল তাকাল শাশুড়ির দিকে। তিনি তার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে আছেন। তিতিল কিছু বলল না।
“বাদ দাও রাতে খেয়ে নিব” বলে ইয়াদ চলে গেল উপরে। কারণ সে জানে আর যাই হোক তিতিল তাকে খাওয়াতে আসবে না। তিতিল চোখের পানি মুছে চলে গেল ওখান থেকে।
ইনা ভ্রু উঁচু করে তাকাল মায়ের দিকে। রেহেলা বেগমের মুখ চিন্তিত। তিনি মনে মনে ভাবছেন
“আমি চাইছি তোদের দুজন কে এক করতে। তুই ভুল করেছিস কিন্তু এবার যেন তোর দ্বারা আর ভুল না হয় ইয়াদ। তিতিলের মতো মেয়ে তুই পাবি না। কিন্তু আল্লাহ জানে তিতিলের ভাগ্যে কি আছে।”
—-
এক হাতে ইয়াদ ল্যাপটপে কাজ করছিল। আগে না বুঝলেও ব্যথার টনটনে অনুভব এখন করতে পারছে। ল্যাপটপ রেখে মুখের ভাব বিকৃত করল সে।
হঠাৎ তিতিল কে খাবার নিয়ে আসতে দেখে আবার ল্যাপটপ টা কোলে তুলে নিল। গম্ভীর গলায় বলল,
“খাবার কেন আনলে?”
“….
“আমাকে খায়িয়ে দেওয়ার কেউ নেই। নিয়ে যাও এসব।”
কপট রাগ দেখিয়ে তিতিল বলল,
“ভাব না দেখিয়ে বসুন ঠিক করে।”
বাচ্চাদের মতো হয়ে গিয়েছে ইয়াদের মুখ। তিতিল কঠিন মুখে খাবার ধরল ইয়াদের মুখে। ইয়াদ কে নির্লিপ্ত দেখে তিতিল এবার ঝারি দিল।
“হা করুন।”
ইয়াদ কথা মতো হা করল। তিতিল যেন দক্ষ ভালোবাসার হাতে ইয়াদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। ইয়াদ খাওয়ার সবটা সময় তার দিকে চেয়ে ছিল। এতে ইতস্তত বোধ করলেও তিতিল এড়িয়ে গিয়েছে তা। ড্রাইভার কে দিয়ে ইনার আনানো ঔষধ টা ট্রে থেকে নিয়ে মুখে তুলে দিল ইয়াদের। ইয়াদ খেয়ে নিতেই তিতিল কোল থেকে ল্যাপটপ টা সরিয়ে দিল। কড়া গলায় বলল,
“ঘুমানোর চেষ্টা করুন। কাজ বিকেলে করবেন।”
বলে তিতিল চলে গেল খাবার ট্রে নিয়ে। ইয়াদ তখন তিতিলে মত্ত।
—-
রাতে খাবার সময়ও সবাই কে খায়িয়ে দিয়ে তিতিল খাবার নিয়ে ইয়াদের রুমে গেল। ইয়াদ তখন ব্যালকুনিতে কারো সাথে ফোনে কথা বলছিল। তিতিল কে আসতে দেখে বলল,
“তোকে আমি পরে ফোন করব রাখছি।” বলে ইয়াদ ঘরে এলো। তিতিল কে বলল,
“খুব খিদে পেয়েছে।”
সে প্রত্যুত্তর দিল না। ইয়াদ বিছানার উপর গিয়ে বসল। তিতিল চুপচাপ খাবার ট্রে টেবিলের উপর রেখে মুখের সামনে খাবার ধরল ইয়াদের। অনেকক্ষণ নীরবতা বিরাজ করে ঘরে। হঠাৎ ইয়াদ বলল,
“তুমি খেয়েছো?”
“….
“তিতিল।”
“খাবার মুখে এত কথা বলতে নেই। খেয়ে নিন।”
তিতিল মুখের সামনে লোকমা ধরলে ইয়াদ হাত দিয়ে তা আটকায়। জিজ্ঞেস করে
“আমার প্রশ্নের জবাব দাও।”
“আপনি খেয়ে নিন। পরে খেয়ে নিব আমি।”
“আজ না হয় এক সাথে খেলে।”
“….
“কি হলো?”
“হা করুন তো।”
“ব্যান্ডেজ খুলতে হবে তিতিল?”
“এটা করবেন কি জন্যে?”
“নয়তো নিজের মুখে ভাত দাও।”
“বাড়াবাড়ি না করে খেয়ে নিন তো।”
ইয়াদ তিতিলের হাত সরিয়ে দিয়ে বা হাতে ব্যান্ডেজ খুলতে চেষ্টা করল। তিতিল তাকে আটকে বলল,
“করছেন টা কি?”
ইয়াদ জবাব দিল না। তিতিলের হাতের লোকমাটা তার হাত দিয়েই তিতিলের মুখে তুলে দিল। মাথা নিচু করে আনল সে।
“বাকি খাবার টা শেষ করবে নাকি?”
চুপচাপ তিতিল আবার ইয়াদ কে খায়িয়ে দিতে লাগল। মাঝে মাঝে ইয়াদ তিতিলের হাত দিয়েই তার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে।
“শুনেছিলাম এক পাতে ভাত খেলে নাকি স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা বাড়ে? আর এটা তো হাদিসেও আছে তাই না?”
বুক ধক করে উঠে তিতিলের। শুকনো ঢোক গিলে সে। মাথা নুয়ে রেখেছে।
“তুমি তো জানো এসব নিয়ে। নামাজ পড়ো পাঁচ ওয়াক্ত।”
“….
তিতিল কে যেতে দেখে ইয়াদ বলল,
“বলে গেলে না?”
“হুম।”
ইয়াদ মুচকি হাসল। তিতিল দরজার কাছে যেতেই ইনা কে দেখতে পেল। ইনা একবার তিতিলের দিকে তাকাল আবার হাসি মাখা ইয়াদের দিকে। ভ্রু উঁচু করে ইয়াদ কে ডাকল,
“ভাই?”
“আপু? এদিকে এসো।”
“এখন কেমন আছে হাত?”
“এই তো। সামান্য একটু ব্যথা।”
ইনা পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখল তিতিল চলে গেছে সে ইয়াদের পাশে বসল।
“তিতিল ঔষধ দিয়েছে?”
“হুম।”
“মেয়েটা বড্ডা দায়িত্বশীল।”
ইয়াদ কিছু না বললেও তার মুখে আনমনে হাসি। ইনা তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল সেই হাসির দিকে। মানে বুঝার চেষ্টা করল।
তারপর দুই ভাই বোন মিলে অনেকক্ষণ ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করে ইনা এবার উঠল দাঁড়াল। যেতে গিয়েও আবার ফিরল।
“কিছু বলবে আপু?”
“ভাই আসলে..”
ইনা কিছু বলতে যেয়েও চুপ করে গেল।
“কিছু না” বলে মুচকি হেসে ভাইয়ের গাল স্পর্শ করে চলে গেল রুম থেকে।
একটু পর হাতে একটা গ্লাস নিয়ে এলো তিতিল।
“এই দুধ টা খেয়ে নিন।”
ইয়াদ ল্যাপটপ রেখে তাকাল তার দিকে।
“কি হলো? নিন।”
“আমি কি বাচ্চা?”
“কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নিন তো আশ্চর্য।”
ইয়াদ দুধের গ্লাস টা নিয়ে দুধ টুকু খেয়ে বলল,
“কিসের দুধ ছিল?”
তিতিল কি জবাব দিবে বুঝে উঠতে পারছে না।
“আরে জিজ্ঞেস করছিলাম গরুর না ছাগলের?”
“আপনার মাথা।”
তিতিল কে দেখে বুঝা গেল সে রেগে গেছে। মুচকি হেসে ইয়াদ বিছানা ছেড়ে উঠে বলল,
“শুয়ে পরো।”
“আজ আপনি বিছানায় থাকেন আমি না হয় আমার ঘরে..”
“চুপচাপ এখানে শুও।”
“তাহলে আমি সোফায় থাকি আপনি বিছানায় শুয়ে পড়ুন।”
“মেয়ে বাড়তি কথা বলতে বলিনি। বিছানায় শুতে বলেছি মাত্র।”
“আপনার হাতে যদি..”
“সুহহহ” করে আওয়াজ তুলে ইয়াদ ঠোঁটে আঙ্গুল রাখল নিজের। তারপর ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় গিয়ে বসল। ঠোঁট উল্টে তিতিলও বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।
চলবে♥