#বৃষ্টির_রাতে
#রূবাইবা_মেহউইশ
(১৯)
তাসিনের যাওয়ার সময় একেকবার একেকজন মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবে এটাই যেন বাঁধা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে মীর পরিবারে। গতবার তুহিন ফুলিয়েছিল তাকে সাজেক যাওয়ার অনুমতি নিয়ে দেয়নি মায়ের কাছ থেকে তার আগেরবার মা ফুলিয়েছিল মায়ের বানানো পিঠা সে খেয়ে যায়নি। এবার মাইশা মুখ ফুলিয়েছে তুহিনকে গাড়ির চাবি দিল অথচ তাকে গাড়িতে চড়ে স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি বলে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। তাসিন প্রস্তুত রওনা দেওয়ার জন্য কিন্তু পটল পেছনে পড়ে আছে বাস স্ট্যান্ডে সে যাবে। তুহিনও তাল মেলাচ্ছে সে গাড়ি করে পৌঁছে দেবে ভাইকে কিন্তু তাসিন এই রাতে চাচ্ছে না তাদের নিতে। অটোতে করে বাসস্ট্যান্ড নেমে বাসে চড়বে এইটুকুর জন্য কেন এদের নেওয়া! কিন্তু কথা শোনার মানুষ নয় দুটোর একটাও। বাবাও বললেন, “যাইতে চাইতাছে যাইতে দে। গাড়ি তো নিয়া যাইতাছে ফিরা আইবো জলদিই।”
বাধ্য হয়েই সেও রাজী হলো। ড্রাইভিং সিটে তুহিন তার পাশে তাসিন আর পেছনে বসেছে পটল। তাসিন প্রথমেই খুব বেশি কিছু নিচ্ছে না সাথে করে। আপাতত বেশ কিছু কাপড়চোপড় আর টুকটাক প্রয়োজনীয় জিনিস। থাকা খাওয়ার চিন্তাও নেই সে কারণেই প্রায় অনেক চিন্তা থেকে মুক্তি। কিন্তু সে নিজের অতি প্রয়োজনীয় বলতে ইলেকট্রিকের কেটলি আর ছোট একটা ফ্ল্যাক্স নিয়েছে। ইদানীং প্রচুর মাথাব্যথা হয় সাথে চোখেরও ব্যথা। তাই চা, কফি খাওয়ার জন্যই এগুলো নেওয়া। বাড়ি থেকে বের হওয়ার দশ মিনিটের মধ্যেই তারা বাসস্ট্যান্ডে পৌছে গেলে তাসিন বাসে উঠেই তুহিনদের পাঠিয়ে দিলো। বাস ছাড়তে এখনো আধঘন্টা বাকি। এতোটা সময় বাসে বসে থাকার কোন মানে হয় না ভেবে তাসিন আশেপাশে দেখলো। রাস্তার পাশেই অনেকগুলো দোকান তার মধ্যে চায়ের দোকানও আছে কয়েকটা। সবগুলো দোকানের দিকে তাকিয়ে সবচেয়ে ছোট আর শূন্যপ্রায় দোকানটায় গিয়ে দাঁড়ালো। মধ্যবয়সী দোকানদার বিরসমুখে বসে পান চিবুচ্ছে। বাসস্ট্যান্ডে আলো ভালোই আছে আজ অথচ মনে পড়ে মাত্র মাস দুই আগেই পহেলা বৈশাখের ঝড়ের রাতে ঠিক এখানটায় ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার আর এখান থেকে একটু সামনেই ছিল তার গাড়ি। পাশেই ছিল পটল আর সে ঝড়বৃষ্টি থেকে গা বাঁচিয়ে বসেছিল গাড়ির ভেতর। এরপরই আচমকা চোখে পড়লো মাঝরাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে একটা মেয়ে। মাঝরাস্তায় কেউ হাঁটে কেন ভাবতে ভাবতেই সে বেরিয়েছিল আর তখনি কানে এলো মেয়েটা ফোন তুলল, কানে ধরলো আর এমন কয়েকটা কথা বলল, যা শুনে এক মুহূর্তের জন্য তাসিনের মনে হয়েছিল মেয়েটা হয় সুইসাইড করবে না হয় বয়ফ্রেন্ড এর সাথে পালাবে। তারপরই কেমন বোকার মত কাজটা করে বসলো সে। মেয়েটাকে জোর করে মেয়ের বাড়ি পৌঁছে দিল! ভাবতেই এখন হাসি পায় খুব। চা শেষ করে কিছু সময় খোলা আকাশটার দিকে তাকিয়ে রইলো তাসিন। দেখলো নিষ্কলুষ মায়াময় আকাশের প্রজ্জ্বলিত নক্ষত্রদের আর গা ভাসালো খোলা হাওয়ায়। বাস ছাড়ার সময় হলে সে বাসে উঠলো৷ ড্রাইভার ততক্ষণে বাস স্টার্ট করেছে অথচ তাসিন তখনও নিজের সিটে বসেনি। বাস ভর্তি মানুষ আর তাতে শুধু মাত্র একটা সিট খালি রয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো সে যখন এলো তখন বাসে তার পাশের সিটটি খালি ছিলো। হয়ত তখনো সকল যাত্রী এসে পৌঁছায়নি কিন্তু এখন ঢুকতেই সে ঝটকা খেল। পুরো বাস ভর্তি আর যে সিটটি খালি তার পাশের সিটে একটা মেয়ে বসে আছে। বাসের বাতি জ্বালানো তবুও মেয়েটির মুখ দেখা যাচ্ছে না৷ জানালার দিকে মুখ করে আছে আর মাথায় ওড়না দেওয়ায় মুখটা প্রায় ঢাকা। চলন্ত বাসে দাঁড়িয়ে থাকার কোন মানেই হয় না ভেবে ইতস্ততার সাথেই বসে পড়লো তাসিন। মেয়েটা কি টের পায়নি তার পাশে কেউ একজন বসেছে! পেলে নিশ্চয়ই কোনরকম একটা প্রতিক্রিয়া বোঝা যেত।বড় বাস সিটগুলোও প্রশস্ত তবুও পাশাপাশি দুজন যাত্রীর গায়ে গা লাগবে না এমনটাও নয়। তাসিন মোটামুটি রকম চেষ্টা করছে গা বাঁচিয়ে বসার। জার্নিটা কিছুটা বড় তাই আপাতত হেলান দিয়ে চোখ বুঁজে রইলো তাসিন। মধ্যরাতে বাস একবার ফিলিং স্টেশনে থামলে যাত্রীরা মাত্র কয়েকজন নেমেছিল। তাসিনের ঘুম ভাঙলেও সে নামেনি। ঘাড় ফিরিয়ে একবার পাশের মেয়েটিকেও দেখেছে, না মেয়েটি তখনো বেঘোরে ঘুমুচ্ছিলো। আশ্চর্যজনক লাগলেও সে আর সেদিকে তেমন খেয়াল দেয়নি। ভোরের আগেই বাস এসে পৌছুঁলো ঢাকায়। তাসিনের ঘুম ভাঙলো যাত্রীদের কথাবার্তার আওয়াজে। ঘাড় তার মেয়েটির দিকেই ফেরানো ছিলো বলে চোখ খুলতেই দেখতে পেল মেয়েটিকে এবং তখনি তার মনে হলো হৃৎপিণ্ডটা ছলাৎ করে একবার লাফিয়ে উঠলো। ভোরের শিরশিরানি বাতাসে হঠাৎ করেই তার প্রচণ্ড শীত শীত লাগলো। জৈষ্ঠ্যমাসের শেষে দিকে কি এমন শীত লাগে! না চাইতেও চোখ দুটো অপলক মেয়েটির দিকেই তাকিয়ে রইলো অথচ চোখ দুটোকে তার একটুও বিশ্বাস হচ্ছে না। অনেকেই তো বলে স্বপ্ন না সত্যি তা জানার জন্য গায়ে চিমটি কাটলেই হয়! সেও কি একবার চিমটি কেটে দেখবে! ইশ, কি ছেলেমানুষী ভাবনা ভাবতেই ঠোঁট প্রশস্ত হয়ে গেল তাসিনের। সকল ভাবনা চিন্তা উবে গেল বাসের কন্ডাক্টরের খেঁক মেরে ওঠা আওয়াজে, “আফনেরা কি বাসেই থাকবেন বইলা ঠিক করছেন?”
মাইকের মত লাউড স্পিকারে সুপ্রভার গাঢ় ঘুম ঝড়ের বেগে উড়ে গেল। সে চোখ খুলে একবার কন্ডাক্টর আরেকবার পাশে বসা মানুষটাকে দেখল। বোধকরি, তখনি সুপ্রভার স্বপ্নে ভাসার মত ঘুমটা ভয়ে চোখের ত্রিসীমানা ছেড়ে পালিয়ে গেল। বাস গন্তব্যে পৌঁছে গেছে সেটাও বুঝতে পারছিলো না সে আকস্মিক পরিস্থিতিতে। তাসিন খেয়াল করেছে সুপ্রভার মুখের বিষ্ময়তা তাই একটুখানি হেসে বলল, “অবাক পরে হইয়ো এখন বাস থেকে নামতে হবে যাত্রী সকল নেমে গেছে।” তাসিন হাসছেই এখনও আর সুপ্রভাও বোকার মত সেদিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। দুজনেই যখন বাস থেকে নামে পূব আকাশে তখন লালচে আভা। সূর্য উঠি উঠি করেও যেন আলসেমি করছে। তাসিনই পুনরায় কথা বলল, “আজও একা এসেছো?”
সুপ্রভা জবাব না দিয়ে নিজের হ্যান্ড ব্যাগটায় হাত ঢুকিয়ে কিছু খুঁজছে৷ নাহ ফোনটা তার ব্যাগে নেই। তারমানে সে রাগের বশে সেটা বাড়িতেই ফেলে এসেছে। তাসিনের কথার জবাবে শুধু ছোট করে বলল, “হুম।”
এত এত অবাক হওয়ার পরও জবাবে শুধু ‘হুম’ বলল মেয়েটা তাহলে কি কোন কারণে সে চিন্তিত আছে! ভোরের শিরশিরানি এখন আর অনুভূত হচ্ছে না তাসিনের। সে এদিক ওদিক তাকালো আপাতত রিকশার খোঁজে কিন্তু এই ভোরে রিকশা তো একটাও চোখে পড়ছে না তার ওপর তার গন্তব্য এখান থেকে আরো মিনিট বিশেকের দূরত্বে। সুপ্রভার হাবভাব বুঝতে না পেরে সে আর তাকে ঘাঁটাতে চাইলো না। রাস্তার মোড়েই চায়ের দোকানের ঝাপ খোলা হচ্ছে দেখতেই সেদিকে পা বাড়ালো সে। যেতে যেতে একবার বলল, “এখন রিকশা, অটো কিছু পাওয়া যাবে না চাইলে দোকানের ওদিকটায় বসতে পারো।”
তাসিন পাশ থেকে সরে যেতেই সুপ্রভার বুঝি খেয়াল হলো কিছু। অপ্রস্তুত হয়ে সে তাসিনের পিছু দোকানের দিকেই ছুটলো৷ মাথাটা একদম নিরেট হয়ে আছে রাত থেকে। মায়ের সাথে হওয়া ঝগড়া বড্ড পোড়াচ্ছে তাকে আর তাইতো ঘুম থেকে জাগতেই যখন খেয়াল হলো সে রাতে কিভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে তখনই অস্থির হয়ে পড়লো মনটা। নিজেই নিজেকে খু”ন করতে ইচ্ছে হচ্ছে তার এখন। মা না হয় দু চার কথা বলেছে মা’ই তো! কাল সন্ধ্যার পর সুপ্রভা মেজদার কাছে বায়না করেছিলো নতুন ভাবীর বাড়িতে যাবে৷ তার তো সময় কম হোস্টেলে ফিরে যাবে দুদিনের মধ্যে তাই আজ রাত করেই সে একবার দেখে আসবে৷ কিন্তু এই নিয়ে তুমুল আপত্তি তুললেন মরিময় শিকদার। এখনো বিয়ে হয়নি সেই কবে আংটিবদল হয়েছিলো তারপর সম্পর্কটা বহুদিন স্থিতিশীল পড়ে আছে। দু পক্ষই খুব একটা আমোদে আচরণের মধ্যে নেই তাই এভাবে সেখানে যাওয়াটা ঠিক হবে না। ভালো করে কথাবার্তা বলে একটা দেখাদেখি ফাইনাল আয়োজন না হওয়া অব্দি যাবে না কেউ সেখানে৷ কিন্তু সুপ্রভা সে কথা শুনতে চাইলো না। তার এক কথা, আমি যাব আর ভাবিকে দেখে দশ মিনিটেই ফিরে আসবো। কিন্তু মায়েরও এক কথা, এসব বাড়াবাড়ি ব্যাপার তাই কোনমতেই এলাউ করলেন না উল্টো রেগে চার-পাঁচ কথা শোনালেন। সে কথাগুলোর মাঝে কিছু কথা এমনও ছিলো, “বেয়াদব মেয়ে একা হোস্টেলে থাকতে থাকতে লাজ-লজ্জাহীন হয়ে গেছে। কিছু ছোটলোকের মত বেয়াড়া আচরণ দিতে চায় সব জায়গায়ই।”
কথার আঘাতটা প্রচণ্ডরকম লেগেছিলো সুপ্রভার তার চেয়েও বেশি লেগেছে মায়ের চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। সে ছোট থেকেই দেখে আসছে মায়ের এই দৃষ্টি কেবল তার করা কোন ভুলেই এমন অথচ ভাইদের ক্ষেত্রে কখনো ধমকেও দুটো কথা বলেন না৷ বাড়ির সবচেয়ে ছোট সদস্য সে আর সেই হিসেবে তার অবস্থান হওয়ার কথা ছিলো বাড়ির সবার চেয়ে আদুরে। অন্তত অন্য আর দশটা পরিবারে এমনই চোখে পড়ে কিন্তু তাদের বাড়িতে একমাত্র তার বেলাতেই ভিন্ন৷ ছোটখাটো ভুলেও মায়ের চোখের বাণ বিশাল কোন অপরাধ বলে প্রমাণ করে কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের উত্তর সে কিছুতেই মেলাতে পারে না। এই সকল কথা ভাবতে ভাবতেই চোখ দুটো বুঁজে নিলো সুপ্রভা আর তার চোখের কার্নিশ ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়লো দু ফোঁটা অশ্রুজল। এই দু ফোঁটা অশ্রুজলই গড়াতে গড়াতে আকর্ষণ করলো সুপ্রভার ডান দিকে থাকা তাসিনকে। সে টং দোকানের সামনে থাকা খালি বেঞ্চটাতে বসতে গিয়ে সুপ্রভাকে ডাকতে উদ্যত হচ্ছিলো তখনই দেখলো গাল বেয়ে পড়া জলটুকু। ডাকতে গিয়েও সে থেমে গেল। মনে মনে আওড়ালো, “তুফানের বদলে আজ কি বর্ষণ হবে!”
অস্বস্তি হচ্ছে কি বলবে ভেবে না পেয়ে তাসিন পাশে এসে চুপচাপ দাঁড়ালো। পূব দিকের আকাশ এবার পুরোপুরি লালচে হয়ে উঠেছে একটু একটু করে। সূর্যটা ঝলমলিয়ে উঠার প্রস্তুতিতেই ধরনীকে সতেজ করে দিচ্ছে। এই সতেজতা এখন আর ছুঁলো না তাসিনকে৷ নিজের পাশে কেউ একজন এসে দাঁড়িয়েছে অনুভব করতেই চোখ মেলে তাকালো সুপ্রভা। নিজের খুব কাছাকাছি তাসিনকে দেখে কিছুটা ভড়কে গেলেও সামলে নিলো নিজেকে৷
“কেমন আছেন?” আচমকা প্রশ্ন করে বসলো সুপ্রভা। খুব সম্ভব নিজের অপ্রস্তুত ভাবটা কাটাতেই প্রশ্ন করেছে। তাসিন কেমন বিষ্মিত নজরে কয়েক সেকেন্ড সুপ্রভাকে দেখে নিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল, “ভালো। তুমি ঠিক আছো?”
“হ্যাঁ!” জবাবটা এমন যেন সে নিজেই জানে না ভালো আছে কি নেই। তাসিন আবার গিয়ে বসলো বেঞ্চটাতে আর দোকানিকে জিজ্ঞেস করলো, “মামা এই এলাকায় রিকশা আসবে কখন?”
সুপ্রভাও ধীর পায়ে এগিয়ে গেল বেঞ্চটার সামনে। তাসিনের থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে সেও বসে পড়লো। দোকানি জবাব দেওয়ার আগেই সুপ্রভা বলল, “আগের বার ছয়টার পরপরই রিকশা পাওয়া গিয়েছিলো।”
দোকানিও বলল, ছয়টা সাতটা তো বাজবেই৷ তাসিন সুপ্রভার কথাটা নিয়ে ভাবল, আগেরবার বলতে কি মেয়েটা তার সাথে চট্টগ্রাম থেকে আসার কথাটা বলল! তার ভাবনার জাল ছিঁড়ে সুপ্রভা বলে উঠলো, “রাতে আপনি কখন উঠেছেন বাসে?”
“বাস ছাড়ার আগ মুহূর্তে।”
“ওহ, সেজন্যই দেখিনি৷ আমি বাসে উঠে বোধহয় দশ মিনিটের মাঝেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই পাশে কে বসেছে দেখেনি।” একদম প্রাণোচ্ছল তরুণীর মত বলে গেল সুপ্রভা। কে বলবে একটু আগেই এই মেয়েটির চোখে ছিলো অশ্রুফোঁটা! তাসিন সত্যিই খুব বিষ্মিত হলো। কিন্তু জবাবে বলল, “হতে পারে। কিন্তু আমি এসেছিলাম তোমারও আগে। বাস ছাড়তে লেট হবে বলে ব্যাগ নিয়েই বাইরে খোলা আকাশের নিচে বসেছিলাম৷ বাস ছাড়ার আগ মুহূর্তে উঠে দেখলাম আমি যে সিটে উঠেছিলাম সেই সিট এক তরুণীর দখলে। তখনও তোমার মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো না। মধ্যরাতে বাস বিরতিতে থামলে প্রথম খেয়াল করি তোমায়। তখন তোমার মুখটা দেখে অবাক হয়েছিলাম খুব কিন্তু তা প্রকাশ করার জন্য তোমাকে জাগ্রত পাইনি। আর এখন দেখে মনে তুমি কোন সমস্যায় আছো।”
“আরেহ নাহ্, আমি ঠিক আছি আসলে… একটু মাথাটা ব্যথা করছে।” কথাটা থেমে থেমে বলল সুপ্রভা। তার মুখের রঙটা বড্ড ফ্যাকাশে লাগছে দেখতে। তাসিন বুঝতে পারছে সুপ্রভা সত্যিটা বলতে অস্বস্তি বোধ করছে তাই হয়ত মিথ্যে বলল। তবে এটা অস্বাভাবিকও নয়। তাদের পরিচয়ের ধরণ আর পরপর যে ক’বার কথা হয়েছে, পাশাপাশি চলা হয়েছে এটুকুতে নিশ্চয়ই এতোটাও ফ্রী হয়নি যার জন্য সে নিজের ভেতরে কোন কথা শেয়ার করতে পারে। সুপ্রভার হঠাৎ করেই মনে পড়লো তাসিন চট্টগ্রামে থাকে। সে এবার জিজ্ঞেস করলো, “তা আপনি ঢাকায় এলেন যে! বেড়াতে এসেছেন?”
“একরকম বেড়াতেই এসেছি ছ’মাসের জন্য।” কথাটা বলতে বলতেই মুচকি হাসলো তাসিন।
“কিহ! মানে কি?”
“মানে হলো চাকরিতে পদোন্নতি যোগ অফিস বদল হয়েছে। চট্টগ্রামের অফিস থেকেই ঢাকার ব্রাঞ্চে পাঠিয়েছে ছ’মাসের জন্য।”
“ছ’মাস ঢাকায়!” খুব একটা স্পষ্ট করে উচ্চারণ করেনি সুপ্রভা। একটু আগের মন খারাপ ভাবটা তার এখন আর নেই সে কথায় মজে গেল তাসিনের সাথে। মিনিট দশের মধ্যেই প্রথম রিকশাটা চোখে পড়লো তাসিনের৷ সে রিকশা ডেকে সুপ্রভাকে বলল, “এটা তে চলে যাও।”
“আপনি যাবেন না?”
“আমার উল্টোপথ তারওপর অফিসের একজন নির্দিষ্ট স্থানে থাকার কথা কিন্তু লোকটা ফোন ধরছে না। ফোন না ধরা অব্দি যেতে চাচ্ছি না সময়টা এখানে বসেই কাটিয়ে নেবো আপাতত। তুমি চলে যাও আর সাবধানে যেও।” সুপ্রভা অল্প হেসে রিকশায় উঠলো কেমন যেন হঠাৎ ধরা গলায় বলল, “ভালো থাকবেন।”
“তুমিও।” তাসিনও হাসি বিনিময় করেই জবাব দিলো। রিকশা চলতে শুরু করলো সামনে। একটুখানি এগিয়ে যেতেই সুপ্রভা হঠাৎ পেছনে ঘুরে তাসিনের দিকে তাকালো। তাসিনও খেয়াল করে ভাবলো হয়তো কিছু বলবে মেয়েটা কিন্তু না কিছুই বলেনি। চোখদুটোতে কোন কথার ছাপ ছিলো না বোধহয়।
চলবে
(কিছুদিন অসুস্থ থাকার পর পরই কেমন রাইটিং ব্লকে পড়লাম। ইচ্ছে থাকলেও লেখায় মন বসাতে পারছিলাম না কিছুতেই। দীর্ঘদিন অপেক্ষা করানোর জন্য সত্যিই আমি দুঃখিত। এবার ইনশাআল্লাহ নিয়মিত দিবো। কেমন আছেন সবাই)