তবু মনে রেখো (১০ পর্ব)
.
সাবিনা বেগম রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। মহসিন সাহেব বারান্দা থেকে ডাকলেন,
– ‘কই আসো, সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে তো।’
– ‘আসছি তুমি বের হও।’
ইমাকে সামনে পেয়ে সাবিনা বেগম ওর কপালে চুমু দিয়ে বিদায় নিলেন। মহসিন সাহেব তাকে উঠানে দেখে পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সাবিনা বেগম কাছাকাছি গিয়ে স্বামীকে না বলে আর থাকতে পারলেন না। ভেতরের আনন্দ যেন চোখে মুখে উপচে পড়ছে।
– ‘জানো ওদের রুমে গিয়ে কি দেখলাম?’
মহসিন সাহেব আনমনে জবাব দিলেন,
– ‘কি?’
– ‘দু’জন কি সুন্দর একই বিছানায় বসে লুডু খেলছে।’
– ‘বাহ, ভালো তো।’
– ‘ভালো তো হবেই। দেখছো? আমি বলেছিলাম না, এমনি এমনি কিছুই হয় না। চেষ্টা করতে হয়। আমার কথা তো শুনো না।’
মহসিন সাহেব বিল থেকে চোখ সরিয়ে এনে বললেন,
– ‘তোমার কথা শুনি না? মিথ্যে অপবাদ না দিয়ে আজ বাড়িতে গিয়ে লিস্ট করবে তো কি কি না শুনে থেকেছি৷ দেখবে কিছুই খুঁজে পাবে না৷ তোমার কথা না শুনে বাসাকে নরক বানাবো না-কি।’
সাবিনা বেগম হাসলেন। এভাবে গল্প করতে করতে তারা বাড়ির রাস্তার কাছাকাছি চলে এসেছেন। হঠাৎ মহসিন সাহেব অনেক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন,
– ‘ওই যে একটা ছেলে যাচ্ছে। ও আমাদের রাস্তা দিয়েই বের হলো মনে হচ্ছে না?’
– ‘হ্যাঁ আমিও তো তাই দেখছি। কে চিনেছো?’
– ‘এলাকার তো মনে হয় না৷ চারদিকে তাকাচ্ছে, উঁকিঝুঁকি মারছে।’
– ‘কাছাকাছি গেলে জিজ্ঞেস করো কি চায়।’
কিন্তু তারা আর সে সুযোগ পেলেন না। ছেলেটি তাদের দেখে কিংবা এমনিতেই দ্রুত চলে গেল। দু’জন খানিক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে চারদিকে তাকালেন। ছেলেটিকে আর আশেপাশে দেখা গেল না।
– ‘চলে যাই, কোনো মেহমান হতে পারে। রাস্তা না চিনে হয়তো এসেছিল।’
সাবিনা বেগমের সন্দেহ তবুও গেল না। বাড়িতে যেতে যেতে বারবার পিছু ফিরে তাকালেন। উঠানে এসে দেখেন মজিদা মেইন গেইটের সিঁড়িতে বসে আছে। সাবিনা তাকে দেখে বললেন,
– ‘কিরে তুই কখন এলি।’
– ‘একটু আগে আইছি চাচি। গেইট বন্ধ দেইখা বইসা রইছি।’
– ‘তোর মায়ের এখন কি অবস্থা।’
– ‘ভালাই, কিন্তু চাচি রাস্তায় একটা পোলারে দেখছো তোমরা। আমি আসার সময় রাস্তা থেকে এদিকে উঁকি-ঝুঁকি মারছিল।’
সাবিনা বেগম তাকে ধরে বললেন,
– ‘তারপর?’
মহসিন সাহেব থামিয়ে বললেন,
– ‘আগে তালা খুলে ভেতরে আসো জানা যাবে।’
সাবিনা বেগম তালা খুলে দিলেন। মহসিন সাহেব টেনে গেইট খুলে ভেতরে গেলেন। সাবিনা বেগম বারান্দায় পা দিয়েই বললেন,
– ‘তারপর তুই জিজ্ঞেস করলি না এখানে কি?’
মজিদা রুমে ঢুকে বললো,
‘আমি জিগাইবার আগে আমার দিকে ভালো কইরা তাকিয়ে উলটা আমারে কয় আপনি এ বাড়িতে যাচ্ছেন নাকি? আমি বললাম, হ্যাঁ, আপনি কে, এইখানে কি চান?
উত্তর না দিয়ে আবার আমারে জিগাইল আপনি এ বাড়ির কে হন?
আমি কইলাম কাজ করি।
তারপর বললো, এটা পুষ্পিতাদের বাড়ি না? আমি কইলাম হ্যাঁ ওদেরই তো বাড়ি।
তারপর কয় আমি ওর বন্ধু হইল, প্লিজ পুষ্পিতাকে একটু ডেকে দিন।
আমি কইলাম, তারে কই পামু হে তো শ্বশুরবাড়ি। আর আপনে কে পরিচয় দেন? এত আপনের জাননের কি দরকার?
পোলায় আর কথা বললো না। বোবা হইয়া গেল যেন। তারপর কিছু না বলে রাস্তা থাইকা চইলা গেল।’
মহসিন সাহেব একটা সিগারেট ধরিয়ে বিছানায় বসলেন। স্বামীর শান্তশিষ্ট ভাব দেখে সাবিনা বেগমের গা জ্বলে যাচ্ছে৷
– ‘আরে তুমি বসে আছো কেন? কোথাকার ছেলে আইসা এতকিছু জিজ্ঞেস কইরা চইলা যাচ্ছে।’
মহসিন সাহেব সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে বললেন,
– ‘আশ্চর্য আমি কি এখন ছেলের পিছনে গিয়ে দৌড়াইতে হবে না-কি?’
– ‘এত বড়ো একটা ঘটনা ঘটে গেল তুমি এইভাবে বসে থাকবে তাহলে?’
– ‘এই চুপ, মুখ বন্ধ রাখ তোর৷ এতো বড়ো কাণ্ড, এতো কাণ্ড৷ একটা কিছু হইলেই পাগল হয়ে যায়।’
সাবিনা বেগম সোফায় গিয়ে মুখ ঢেকে বসে পড়লেন। মহসিন সাহেব খানিক ভেবে মোবাইল বের কল দিলেন হায়দার সাহেবকে। ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই তিনি বললেন,
– ‘হ্যালো হায়দার।’
– ‘হ্যাঁ খান ভাই, কি হয়েছে? বাড়িতে চলে গেছো?’
– ‘হ্যাঁ বাড়িতে চলে এসেছি। কল দিয়েছি অন্য দরকারে।’
– ‘বলো।’
– ‘আমি তোমাদের বাড়ি থেকে আসার সময় একটা ছেলেকে দেখলাম আমাদের বাড়ির রাস্তায়। দেখে চিনতে পারিনি। মজিদাকেও না-কি রাস্তায় পেয়ে পুষ্পিতার কথা জিজ্ঞেস করছে।’
– ‘তাই না-কি, কে হতে পারে?’
– ‘বুঝতে পারছি না। ওই ছেলে তো পুষ্পিতাকে খোঁজার কথা না।’
– ‘হ্যাঁ, ওই ছেলে উল্টো খুঁজতে আসবে কেন।’
– ‘ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না।’
– ‘মোবাইল বন্ধ থাকায় অন্য কোনো ফ্রেন্ড এসেছে হয়তো।’
– ‘তুমি এক কাজ করো হায়দার। বাজারে তোমার পরিচিত কেউ থাকলে বলো ওই রাস্তায় খেয়াল রাখতে।’
হায়দার সাহেব খানিক ভেবে বললেন,
– ‘ছেলেটা দেখতে কিরকম। পরনে কি ছিল?’
মহসিন সাহেব বিস্তারিত বললেন। সবকিছু শুনে হায়দার সাহেব বললেন,
– ‘ফোন রাখো দেখছি আমি। আর এগুলো ইমাদ বা পুষ্পিতা মা’কে জানানোর দরকার নেই। কাজের মেয়েকেও বলে দাও।’
– ‘হ্যাঁ, ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছো।’
মহসিন সাহেব কল কেটে বললেন,
– ‘মজিদা এইসব কথা কাউকে বইল না। পুষ্পিতাও যেন না জানে।’
– ‘আস্তাগফিরল্লাহ, আমি কেন এই কথা লোকজনরে কইতে যাইমু। আমারে কি পা*গলা কু*ত্তা কা*মড়াইছেনি। এই কথা যদি মজিদার মুখ থেকে বাইর হয় আমি যেন ঠা’ডা পইড়া ম’রি..।’
মহসিন সাহেব ধমক দিয়ে বললেন,
– ‘এই থাম, তোরে এতো কসম কাটতে কি আমি কইছি? যা সামনে থেকে।’
সাবিনা বেগম কপাল থেকে হাত সরিরে বললেন,
– ‘এগুলো কি লোকজন জানবে না মনে করছো? ছেলেটা তো লোকজনকে জিজ্ঞেস কইরা কইরাই এখানে আসছে।’
– ‘তো এখন কি হইছে। তোর জন্য কি কবর খুঁড়ে ফেলতে হবে না-কি? আর বাঁচবি বলে তো মনে হচ্ছে না।’
– ‘তুই-তুকারি করবা না। আমি মরলেই তো দুনিয়া শান্তি। এতো বড়ো কাণ্ড হয়ে গেল সিগারেট টানতেছো বসে বসে।’
মহসিন সাহেব স্মিথ হেঁসে অস্ফুটে বললেন, ‘পা*গলের ঘরের পা*গল হার্ট অ্যা*টাক করবো।’
তারপর সিগারেট শেষ টান দিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে বললেন,
– ‘সাবিনা কাণ্ডটা কত বড়ো হাত দিয়ে একটু দেখাও তো।’
সাবিনা বেগম ক্রোধান্বিত গলায় বললেন,
– ‘ঢং করতেছো তাই না? এতকিছু হয়ে যাচ্ছে তোমার ঢং থামে না। আমারে পাগল মনে হয় তোমার? আমার লগে তামাশা করো।’
মহসিন সাহেব ততক্ষণে বাইরে চলে এলেন। পেছনের সবজি বাগানটা দেখা হয়নি আজ।
রাতের খাবার শেষে ইমাদ রুমে এসে বিছানায় শুয়ে আছে। পুষ্পিতার সঙ্গে লুডু খেলায় বিকেলে হেরে গিয়েছিল সে। পুরো খেলাতেই বিশেষ কোনো কথা হয়নি। কি বলবে কিছুই খুঁজে পাচ্ছিল না। সম্পর্কটা সহজ করেও আনতে পারছে না৷
আচ্ছা কোনো রোমান্টিক নাটক কি দেখবে ওকে নিয়ে? খানিক পরই পুষ্পিতা এসে রুমে ঢুকে। তাকে বিছানায় দেখে আমতা-আমতা করে বললো,
– ‘আমি না হয় আজ নিচে থাকি?’
– ‘না না, বিছানায়ই আসো। মাঝখানে বালিশ রাখলেই হবে।’
পুষ্পিতা মাঝখানে একটা বালিশ রেখে শুয়ে গেল। ইমাদ খানিক্ষণ পর আমতা-আমতা করে বললো,
– ‘নাটক দেখো তুমি?’
– ‘তা তো দেখি মাঝেমধ্যে।’
– ‘এখন দেখবে?’
– ‘না ভালো লাগছে না।’
ইমাদ পুনরায় কি বলবে ভেবে না পেয়ে ফেইসবুকে নিউজফিড স্ক্রল করছে৷ খানিক পর বললো,
– ‘পুষ্পিতা বাইরে যাবে, আজ চাঁদনী রাত।’
– ‘না তুমি যাও, আমার ভালো লাগছে না।’
ইমাদ ওর দিকে তাকায়। পাশ ফিরে শুয়ে আছে। চুল খোঁপা করা। নগ্ন ঘাড় দেখা যাচ্ছে। পরনে গোলাপি একটা ড্রেস৷ এক হাত মাথার নিচে আরেক হাত লম্বা করে কোমরে। তার ভীষণ ইচ্ছা করছে একবার ছুঁয়ে দেখতে। কোনো মেয়েকে আজও তার সেভাবে ছোঁয়া হয়নি৷ প্রেম করা হয়নি। কিন্তু কোন ছুতোয় ওকে স্পর্শ করবে সে? ইমাদ আস্তে করে মাঝের বালিশটা সরিয়ে ওর কাছাকাছি গিয়ে ভয়ে কাঁপতে থাকা আনাড়ি হাতটি পুষ্পিতার কপালে রেখে বললো,
– ‘জ্বর হয়নি তো আবার।’
পুষ্পিতা আঁতকে উঠে পাশ ফিরিয়ে বললো,
– ‘হঠাৎ করে আমার জ্বর আসবে কেন?’
ইমাদটা হাতটা সরিয়ে বললো,
– ‘না মানে বাইরে যেতে চাচ্ছ না তাই আরকি জিজ্ঞেস করলাম।’
পুষ্পিতা উঠে বসে ওড়না ঠিক করে বললো,
– ‘এমনিই।’
– ‘তাহলে চলো যাই। অনেক ভালো লাগবে।’
পুষ্পিতা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। ইমাদ বিছানা থেকে নেমে বললো,
– ‘আসো।’
পুষ্পিতা বাইরে এসে সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গেল। বাড়ি-ঘর, উঠান, পুকুরঘাট সবকিছু যেন চাঁদের আলোয় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ইমাদ ঘাটে গিয়ে বললো,
– ‘বসো।’
পুষ্পিতা বসে আকাশের দিকে তাকায়। চাঁদ যেন তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। ইমাদ পুকুরে পানিতে পা দিয়ে নাড়তে নাড়তে বললো,
– ‘তুমি সাঁতার শিখলে না কেন?’
পুষ্পিতা মুচকি হেঁসে বললো,
– ‘ছোটবেলায় ভয় পাইতাম, এখন লজ্জা পাই।’
ইমাদ মুচকি হেঁসে বললো,
– ‘লজ্জা কেন পাবে?’
– ‘মানুষ কি বলবে এতো বড়ো মাইয়া সাঁতার শিখে।’
– ‘তাহলে রাতে শিখতে পারো। এইযে চাঁদনি রাত। দিনের মতো আলো।’
পুষ্পিতা ফিক করে হেঁসে বললো,
– ‘রাতে ভয় লাগবে।’
– ‘ভয় লাগার কি এইযে দিনের মতো আলো।’
– ‘সূর্যের আলো স্বাভাবিক, চাঁদের আলো রহস্যময়। তাছাড়া এখন পুকুরে নেমে সাঁতার কাটলে প্রচুর শব্দ হবে।’
ইমাদ মাথা নেড়ে বললো,
– ‘তা ঠিক, আচ্ছা এখন বিলে গেলে কেমন হয়?’
– ‘খুবই বাজে, কারণ কাল বেড়াতে যেতে হবে৷ তাই এখন ঘুমানো দরকার।’
– ‘ও হ্যাঁ, তাহলে চলে যাবে?’
‘বসি আরও কিছুক্ষণ’ তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো ‘আচ্ছা তুমি না-কি ভালো গান গাও।’
ইমাদ লজ্জা পেয়ে বললো,
– ‘এই কথা কে বলছে?’
– ‘যেই বলুক, সত্য কি-না বলো।’
– ‘ওই একটু-আধটু৷ তবে এই তথ্য ইমাই দিয়েছে। ওকে ধরবো।’
– ‘ধরাধরি বাদ দাও। পারলে গাও শুনি।’
– ‘কিযে বলো। আমি সেরকমও গাইতে পারি না যে তোমাকে শুনাবো।’
– ‘যেরকমই হোক শুনতে চাই।’
– ‘কোথায়? এখানে?’
– ‘হ্যাঁ, কত সুন্দর পরিবেশ।’
– ‘কিন্তু লোকজন শুনবে।’
– ‘এখানে এসে বসে আস্তে আস্তে গাইলে শুনবে না কেউ।’
ইমাদ ভাবলো ওর সঙ্গে মেশার এটাও একটা ভালো দিক৷ সে পুষ্পিতার একেবারে কাছাকাছি এসে বসলো, তারপর গুনগুন করে লতা মঙ্গেশকরের গান ধরলো,
“প্রেম একবারই এসেছিলো নীরবে
আমারই এ দুয়ার প্রান্তে
সে তো হায় মৃদু পায়…….
আজ কাছে তারে এত আমি ডাকি গো
সে যে মরীচিকা হয়ে দেয় ফাঁকি গো
আজ কাছে তারে এত আমি ডাকি গো
সে যে মরীচিকা হয়ে দেয় ফাঁকি গো
ভাগ্যে যে আছে লেখা হায় রে
তারে চিরদিনই হবে জানি মানতে….।”
পুষ্পিতা অবাক হয়ে বললো,
– ‘বাহ অনেক সুন্দর গাও তো, এতো সুন্দর গাইতে পারবে ভাবতেই পারিনি।’
ইমাদ মুচকি হেঁসে বললো,
– ‘চলো এখন যাই।’
দু’জন পুনরায় ঘরে ফিরে এলো। ইমাদ বিছানায় গিয়ে মাঝের বালিশটা আলগোছে সরিয়ে নিল। পুষ্পিতা লক্ষ্য করে বললো,
– ‘কি হলো সরিয়ে ফেললে যে?’
ইমাদ লজ্জা পেয়ে ওর দিকে না তাকিয়ে বললো,
– ‘এমনিই।’
– ‘আমার শরীরে স্পর্শ লাগলে তো সমস্যা। একটা চ’রিত্রহীন মেয়ে।’
– ‘কি বলো তুমি এসব?’
– ‘কেন তুমিই তো প্রথম রাতেই বলেছিলে যে মেয়ে মা-বাবার মান-সম্মান বুঝে না তার জন্য ইমাদের মন গলবে না।’
– ‘দেখো পুষ্পিতা, এই কথার মানে ভিন্ন। তাছাড়া মা-বাবার মান-সম্মান না বুঝতে পারার সঙ্গে চরিত্রের কি সম্পর্ক! এটা তোমার ভুল ছিল। বোকামি ছিল। তোমার পরিবারও বকা দিতে পারে এরজন্য। আমি মোটেও তোমাকে খারাপ চরিত্রহীন মনে করি না৷ করলে বিয়ে করতাম না।’
পুষ্পিতার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি। ইমাদের এতো দ্রুত পালটে যাওয়ার কারণ সে জানে। পুনরায় বললো,
– ‘সবাই খারাপ ভাবলে তুমি ভাবো না কেন শুনি?’
ইমাদ মুখ কালো করে বললো,
– ‘দেখো পুষ্পিতা, আমি পড়ালেখাও তেমন করিনি। নাইনে উঠে বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম। তাই গুছিয়ে বলতে পারবো না। তবে আমার কাছে মনে হয় তুমি মানুষ চিনতে ভুল করেছিলে, একজন প্র’তারককে বিশ্বাস করেছিলে। তুমি বড়োজোর একজন বোকা, কিন্তু খারাপ নয়। যে প্র’তারণা করলো, বিশ্বাস ভঙ্গ করলো অ’পরাধী তো সে। আমাদের সমাজটাই উলটো। দেখবে যে মেয়েকে ধ’র্ষণ করা হয় সে আ’ত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। আর যে ধ’র্ষণ করে সে দিব্যি ঘুরে বেড়ায়৷ ধ’র্ষণ মানেই কারও ইচ্ছার বিরুদ্ধে জো’র করে কাজটা করা। এখানে এই ধ’র্ষিতার কিইবা দোষ? সে কেন সুন্দর একটা জীবন পায় না।’
– ‘হোয়াট! আমি ধ’র্ষিত হয়েছি কে বললো?’
– ‘আরে আমি সেটা বুঝাতে চাইনি। মানে তোমার সঙ্গে যা হয়েছে৷ সেটার জন্য তোমার কোনো দোষ নেই৷ ধ’র্ষণের কথা শুধু উদাহরণ।’
পুষ্পিতা হা-হা-হা করে হেঁসে উঠলো। এসব নীতিবাক্য এতদিন কোথায় ছিল? পুষ্পিতার এখন সবকিছুতে কেমন হাসি পায়। ঘে’ন্নাও লাগে। মানুষ এমন কেন? পুষ্পিতার মুখে একদলা থুতু জমে গেল। বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে এলো সে। পুষ্পিতা নিজের ঘে’ন্না প্রকাশ না করে ওর পাশে এসে বললো,
– ‘বাহ সবাই যদি তোমার মতো ভাবতো। তুমি আসলেই অন্যরকম মানুষ।’
ইমাদ বিভ্রান্ত হয়ে পুষ্পিতার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে৷ একটু আগে সে কি এমন হাসির কথা বলেছে?
__চলবে__
লেখা: জবরুল ইসলাম