#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৬৩ {বোনাস 💫}
আইরাত এই ভেবে পাচ্ছে না এখন যে হুট করেই গুলি কে আর কীভাবে চালালো। আর কেনোই বা চালালো। আইরাত তো তার জানা মতে এখন আর কারো সাথে ঝামেলা করে নি তাহলে এভাবে না বলে কয়েই গুলি। তবে হ্যাঁ এটা মানতেই হবে যে আজ আব্রাহাম থাকার ফলে আইরাত বেচে গেছে। আব্রাহাম যদি সময় মতো আইরাতের মাথার পেছনে হাত দিয়ে তাকে নিচে না নামিয়ে দিতো তাহলে বুলেট সোজা আইরাতের মাথার পেছনে গিয়ে লাগতো। এগুলো ভাবতে ভাবতেই আইরাত অফিসের ভেতরে চলে গেলো, যেতেই দেখে অয়ন…….
আইরাত;; ভাইয়া!!
অয়ন;; বউমনি এসেছো!
আইরাত;; আচ্ছা তুমি যাও নি কেনো। এড্রেস যে দিলাম তোমাকে।
অয়ন;; বউমনি আই এম সো সরি আসলে কাজের চাপে পরে গিয়েছিলাম তো অনেক বেশি তাই যেতে পারি নি সরি।
আইরাত;; আচ্ছা ইট’স ওকে।
অয়ন;; কি হয়েছে এতো রাগি রাগি লাগছে যে?
আইরাত;; মরতে মরতে বেচেছি আজ।
অয়ন;; মানে?
আইরাত;; জানি না, আমি আব্রাহাম কে নিয়ে বাইরে ছিলাম তখন হুট করেই গুলি চালানো হয়েছিলো ভাগ্যিস আব্রাহাম বাচিয়েছে আমায়। আরে অনেক শোরগোল ছিলো সেখানে আর আমি তো আব্রাহামের সাথে কথা বলছিলাম খেয়াল করি নি। কিন্তু ও আমায় বাচিয়ে নেয়।
অয়ন;; আসলেই কি আব্রাহাম আছে মানে কীভাবে সম্ভব এটা। অবিশ্বাস্য।
আইরাত;; এর জন্যই বলেছিলাম যে তুমি সেখানে যাও।
অয়ন;; আচ্ছা তো…….
রাশেদ;; ম্যাম?
আইরাত;; হ্যাঁ
রাশেদ;; খুব বেশিই খারাপ খবর আছে।
আইরাত;; কি হয়েছে আবার?
রাশেদ;; ম্যাম, আসলে রায়হান জেল থেকে পালিয়ে গিয়েছে।
আইরাত;; কিহ?
রাশেদ;; জ্বি ম্যাম।
আইরাত;; কি এগুলো? এরা কি ঘাস খেয়ে পুলিশ হয়েছে নাকি যত্তসব। এতো বড়ো একটা ক্রিমিনাল জেল থেকে উধাও হয়ে গেলো। পুলিশ অফিসার দের চোখ ফাকি দিয়ে। ইয়ার্কি হচ্ছে আমার সাথে। বলদ গুলা। জেলে কি ওরা বসে বসে লুডু খেলছিলো নাকি। এই সব কটা, সবকটা কে চাকরি থেকে বিদায় করো। রাশেদ! (গলা ফাটিয়ে)
রাশেদ;; জ জ্বি জ্বি ম্যাম।
আইরাত;; মানে ও কীভাবে পালালো সবাই কে ফাকি দিয়ে?
রাশেদ;; ম্যাম আসলে ঘটনা টা ঘটেছে বেশ কয়েক ঘন্টা আগে কিন্তু আপনি তো বাইরে আব্রাহাম স্যারের সাথে ছিলেন তাই বিরক্ত…….
আইরাত;; আমি পাগল হয়ে যাবো। (চিল্লিয়ে)
আইরাতের রাগে এই খবর টা যেনো আগুনে ঘি ঢালার মতো ছিলো। আইরাত চিল্লিয়ে তার কেবিনে চলে গেলো। মাথা প্রচুর গরম হয়ে আছে। আইরাতের যেতেই অয়ন রাশেদ কে বলে ওঠে……..
অয়ন;; আব্রাহাম….
রাশেদ;; যখন আমি দেখেছিলাম উনাকে আমার দুই রাত ভরা জ্বর ছিলো।
অয়ন;; তাহলে এতোদিন কোথাও ছিলো ও। আমাদের কাছে কেনো এলো না। পুলিশ রা যে এতো খোঁজ চালালো পেলো না কেনো?
রাশেদ;; প্রশ্ন তো অনেক আছে করার মতো কিন্তু জবাব একটারও নেই।
অয়ন;; আমি যাই।
রাশেদ;; জ্বি।
অন্যদিকে আব্রাহাম পাকাচ্ছে আরেক তালগোল। আসলে সে এই তালগোল টা ইচ্ছে করেই পাকাচ্ছে। কারণ হচ্ছে সে সব জেনে গেছে। অর্থাৎ সেইদিন রাতে যে লোকটাকে আব্রাহাম কে মারার জন্য পাঠানো হয়েছিলো সে যে আর কেউ না বরং আইরাত নিজেই পাঠিয়ে ছিলো তা আব্রাহাম জেনে গেছে। আব্রাহাম এটাও টের পেয়েছে যে আইরাত কেনো লোকটাকে পাঠিয়েছিলো। শুধু টেস্ট করার জন্য। তো আইরাত যেহেতু আব্রাহামের সাথে এমন করলো, আব্রাহামের একটা ছোট খাটো টেস্ট নিলো তাহলে আব্রাহাম তো আর এতো সহজে ছেড়ে দিতে পারে না তাই না। কিছু না কিছু একটা করতে তো হবেই। তাই আইরাতের মতো করে সেও একটা গোন্ডগোল পাকিয়েছে। শুধুই আইরাতের রিয়েকশন দেখার জন্য। ওইযে কথায় আছে না “যেমন কুকুর তেমন মুগুর” সেম তাই। আইরাত কে রিটার্ন গিফট দিতে হবে না। আব্রাহাম তার বাড়ি এমন ভাবে সাজাতে বলেছে যেনো দেখে মনে হয় বিয়ে বাড়ি। আরে হ্যাঁ বিয়েই। তবে মিছে মিছে। আর আব্রাহাম একজন পাবলিক ফিগার হওয়াতে তার শুধু নিঃশ্বাস ছাড়তেও তা ভাইরাল হয়ে যায় বা মিডিয়া জেনে যায়। তখন তো আব্রাহামের বিয়ের খবর অবশ্যই ব্রেকিং নিউজ হয়ে যাবে। আব্রাহাম আরামছে বসে বসে গান শুনছে।
।
।
আইরাত তার কেবিনে চোখ বন্ধ বসে আছে। রায়হান জেল থেকে পালিয়ে গিয়েছে। কি করে হলো এটা৷ রায়হান যে চুপ করে বসে থাকার মতো লোক না তা আইরাত জানে। কে জানে আবার কোন দন্ড বাধিয়ে দেয়। এখন যেনো আইরাত আর কোন কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না। আইরাত বসে ছিলো নিজের কেবিনে তখনই রাশেদ আসে।
রাশেদ;; ম্যাম আসবো?
আইরাত;; এসো।
রাশেদ;; ম্যাম তনয়ার সাথে আপনার প্রজেক্ট সাইন করার কথা ছিলো।
আইরাত;; কোথায় ও?
রাশেদ;; নিজের কেবিনে।
আইরাত;; আমি যাচ্ছি।
আইরাত সোজা চলে গেলো তনয়ার কাছে। রাশেদ বেশ বুঝতে পারছে যে একে তো নিজের ওপর এমন একটা জনমানব জায়গায় গুলি চলেছে, তার মধ্যে আবার এই রায়হানের জেল থেকে পালিয়ে যাওয়ার খবর। সব মিলিয়ে যেনো আইরাত খুব টেনশনে আছে। আইরাত তনয়ার কাছে গিয়ে দেখে তনয়ার মুখ টা কেমন গোমড়া।
আইরাত;; কিরে কি হয়েছে তোর?
তনয়া;; দিল টুট গায়া 🙂
আইরাত;; ছ্যাকা খাইছোস? কেডায় দিলো?
তনয়া;; কিছু না।
আইরাত;; শোন আমি তোকে আগে থেকেই বলে দিলাম ওকে প্লিজ মন খারাপ করিস না।
তনয়া;; হয়েছে কি?
আইরাত;; আমি এইবার তোর সাথে কোন প্রজেক্ট সাইন করতে পারবো না শুধু তোর সাথে না আমি এবার কোন প্রজেক্টই সাইন করতে পারবো না।
তনয়া;; আচ্ছা থাক বুঝতে পেরেছি।
আইরাত;; হ্যাঁ আমি অনেক টেনশনে আছি আর আমার বেশ কিছু কাজ আছে ব্যাক্তিগত তো…..
তনয়া;; আরে বেইবি ইট’স ওকে। বুঝেছি আমি।
আইরাত;; আচ্ছা এবার তুই বল যে তোর মন কেনো খারাপ?
তনয়া;; তুই খবর জানিস না?
আইরাত;; হাহ আর খবর। নিজের খবরেরই শেষ নেই আর খবর জেনে কি করবো।
তনয়া;; অর্নীলের বিয়ে।
আইরাত;; মানে?
তনয়া;; আরে মানে আব্রাহামের আর কি ওর তো বিয়ে হতে যাচ্ছে।
আইরাত;; গবর মাখা জুতার বারি না খাইতে চাইলে চুপ কর।
তনয়া;; বিশ্বাস করিস না আমায় তাই না। ওকে ওয়েট। এই দেখ
এই বলেই তনয়া গিয়ে টিভি অন করে দিলো। আর টিভি টা অন করতেই বাপরে বাপ এক একটা চ্যানেলে যেন জার্নালিস্ট রা ফাটা বাশের মতো গলায় একটা কথাই লাগাতার বলে যাচ্ছে “” অবশেষে, নিজের জীবনে আরেক জনের আগমন ঘটলো। নিজের লাইফ পার্টনার কে নিয়েই এলেন আব্রাহাম চৌধুরী অর্নীল। বিয়ে করছেন তিনি””। ব্যাস এই টুকু বলতেই তনয়া টিভি বন্ধ করে দিলো। টিভি অফ করাতে আইরাত যেনো কিছুটা চমকে উঠলো কেননা আইরাত এক ধ্যানে টিভির দিকে তকিয়ে ছিলো।
তনয়া;; কিরে বিশ্বাস হলো তো এবার?
আইরাত;; না।
তনয়া;; এহ??
আইরাত;; যেই বান্দা আগে থেকেই শাদি-শুদা সে আবার কি করে বিয়ে করবে বল।
তনয়া;; বুঝলাম না।
আইরাত;; বিয়ার খেতা পুরি। আমিও দেখমু বিয়া কেমনে হয়।
আইরাত নিজের জেকেটের ওপরের কিছু বোতাম ঢিলা করতে করতে দ্রুত পায়ে তনয়ার কেবিন থেকে বের হয়ে পরে। এদিকে তনয়া ঠোঁট উল্টিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আগা কোনটা মাথা কোনটা কিছুই বুঝতে পারছে না। আইরাত কে এভাবে বাতাসের গতিতে যেতে দেখে রাশেদ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।
আইরাত;; রাশেদ!
রাশেদ;; জ্বি
আইরাত;; দ্রুত অয়ন ভাইয়া কে বলো আমার কাছে আসতে দ্রুত।
রাশেদ;; বলছি।
রাশেদ অয়ন কে ইমারজেন্সি ফোন করে ডাকে৷ অয়ন তার ১০-১৫ মিনিট পরেই অফিসে এসে পরে। আইরাত কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আইরাত সোজা অয়নের হাত ধরে “ভাইয়া চলো” এটা বলেই গাড়িতে৷ আইরাত এতো জোরে ড্রাইভ করছে যে অয়ন কে তার সীট শক্ত ভাবে ধরে রাখতে হচ্ছে। আইরাত বেশ মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে যে এই রাস্তা টুকু যদি সে উড়ে যেতে পারতো তাহলে হয়তো তার ভালোই হতো।
অয়ন;; আইরাত বইন আমার কি হয়েছে বলবে তো। এতো জোরে জোরে ড্রাইভ করলে এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে। একটু আস্তে।
আইরাত;; এখন আস্তে ধীরে কাজ করার সময় নেই। আব্রাহাম অনেক বেশি বাড় বেড়ে গেছে। মানে এই ছেলে কে কিছু বলি না দেখে একদম মাথায় চড়ে বসেছে। শুনেছি প্রেমের মরা জলে ডুবে না কিন্তু একে আমি ডুবিয়েই ছাড়বো। নিজেও ডুববো আর ওকেও ডুবাবো।
অয়ন;; কথার কোন কিছু বুঝছি না। আর এখন কি আমরা আব্রাহামের কাছে যাচ্ছি?
আইরাত;; বিয়ে ভাঙতে যাচ্ছি। বহুত পুরানা এক্সপেরিয়েন্স আছে বিয়ে ভাঙার।
অয়ন;; কার বিয়ে, কিসের বিয়ে?
আইরাত;; আব্রাহামের বিয়ে।
অয়ন;; বিয়ে তো আব্রাহামের হয়ে গেছে, তাও তোমার সাথে।
আইরাত;; কত্তো বড়ো খচ্চর ঘরে বউ থাকতে আরেক বার বিয়ে করতে যাচ্ছে। নিকুচি করেছে ওর বিয়ের। একদম আজীবনের জন্য বিয়ের স্বাদ মিটিয়ে দিবো। চুল টেনে ছিড়ে দিবো আমি ওর।
অয়ন;; কুল কুল কুল কুল কুল।
আইরাত;; ধুর, আমি কুল ই আছি 😤।
অয়ন;; 🙂
আইরাত এমন বকর বকর করেই আব্রাহামের বাড়ির সামনে চলে গেলো। কিন্তু এখানে বাধে আরেক বিপত্তি। কেননা বাড়ির সামনে প্রায় অনেক গার্ড। আইরাত গাড়ির জানালা দিয়ে তার মাথা বের করে গার্ড দের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে….
আইরাত;; ওও চেলাপেলা যারাই আছো জলদি সামনে থেকে সরো।
গার্ড;; ম্যাম সরি আমরা সরতে পারবো না। স্যারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
আইরাত;; ওয়াও,,নিষেধাজ্ঞা রাইট।
গার্ড;; জ্বি ম্যাম স্যার আপনাকে ভেতরে যেতে দিতে মানা করেছে।
আইরাত;; পোলার তো দেখি মাথার চুল থেকে শুরু করে একদম পায়ের নখ অব্দি খালি কলিজা আর কলিজা। আমাকে না করেছে। আচ্ছা আমিও দেখবো কীভাবে না করে ও আমাকে।
আইরাত সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। অয়ন অবাক হয়ে আইরাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। মানে আজব গার্ড গুলো আইরাতকে ভেতরে যেতে মানা করলো আর আইরাত এতো ভালো কবে থেকে হলো যে বলা মাত্রই সোজা সেখান থেকে চলে এলো। মানে কি? আইরাত কিছু না বলেই গাড়ি নিয়ে তো এসে পরেছে। তবে এবার উলটো ঘুড়ে। অর্থাৎ গাড়ি নিয়ে ইউ টার্ন নিয়ে নিয়েছে। আর এতো জোরে মোড় ঘুড়িয়েছে যে অয়ন আবার সীট শক্ত করে চেপে ধরে। আইরাত কিছু না বলেই হাওয়ার গতিতে গাড়ি নিয়ে যায় আব্রাহামের বাড়ির মেইন গেটের দিকে। গাড়ি সাই সাই করে গেটের দিকে এগিয়ে আসছে। কেউ এই গাড়ির নিচে পরলে সেখানেই সোজা ইন্না-লিল্লাহ। গার্ড রা প্রথমে আইরাতের গাড়িকে আটকানোর চেষ্টা করে কিন্তু এটা গাড়ি নাকি কোন লাগাম ছাড়া ষাড় কে জানে। গাড়ির নিচে পরে যাওয়ার ভয়ে সকলেই গাড়ির সামনে থেকে বেশ দূরে সরে এসে পরে। আর আইরাত কানের পর্দা ফাটানোর মতো একটা বিকট শব্দে বাড়ির গেইট টা উড়িয়ে নিয়ে যায়। গেট পুরো ভেঙে ভেতরে ঢুকেছে। আব্রাহাম, রাত্রি আর তার মা লাবনী সবাই বাড়ির ভেতরেই বাকি দিনগুলোর মতো বসে ছিলো। কিসের বিয়ে কিছুই না তবে একটা ফ্যামিলি গেট-টুগেদার রেখেছিলো আর বাড়ি সাজিয়েছে। লাবনী আব্রাহাম কে বাড়ি সাজানোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে আব্রাহাম হেসে তা উড়িয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ বিয়ে ছাড়াই বিয়ের মতো সাজ। তারা শান্তিতে ভেতরে বসে ছিলো কিন্তু বাইরের এমন শব্দে তাদের মনে অশান্তি নামিয়ে দিলো।
আইরাত;; উফফফফফফ, দারুন ছিলো তো এটা। সেই মজা লাগলো। ভাইয়া তু…….
আইরাত পাশে তাকিয়ে দেখে অয়ন চোখ মুখ সব খিচে বন্ধ করে রেখেছে।
আইরাত;; ভাইয়া শেষ শেষ সব শেষ। জিন্দা আছো।
অয়ন ঘেমে গিয়েছে ভয়ে।
অয়ন;; আমি ক্যান আসছিলাম তোমার সাথে বউমনি। ছাইরা দেও মা কাইন্দা বাচি।
আইরাত;; তুমি ভেতরে যাবে?
অয়ন;; আসছি।
আইরাত;; আমি গেলাম।
আইরাত গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। ভেতরে গিয়ে দেখে বেশ কিছু মানুষ জন। একটা মেয়ে বসে আছে আর তার পাশেই আব্রাহাম। আইরাত বিনা বাক্যে সোজা আব্রাহামের কাছে চলে গেলো। আব্রাহাম ভাবেও নি যে আইরাত এইভাবে তার বাড়িতে এন্ট্রি করবে। আব্রাহাম বাকা চোখে তাকিয়ে দেখে আইরাতের বাম হাতে গান। আইরাত বাড়ির ভেতরে যখন আসে তখন আইরাত চিল্লিয়ে বলে ওঠে…
আইরাত;; এই বন্ধ করো এইসব আজাইরা বিয়ে টিয়ে। কোন কিছুই হবে না, কোন বিয়ে হবে না এখানে। সব বন্ধ।
আব্রাহাম;; ওওও গেট টাই ভেঙে দিলে।
আইরাত;; আপনাকেও ভেঙে দিতে দুই সেকেন্ড সময় লাগবে না আমার আব্রাহাম।
আব্রাহাম;; আর কতো ভাঙবে।
আইরাত;; বিয়ে করছেন আপনি?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ মন চাইলো তাই।
আইরাত;; আপনি বিয়ে কেনো করছেন? মানে কি এটা লোক দেখানোর জন্য নাকি শুধুই আমাকে দেখানোর জন্য কোনটা বলুন তো।
আব্রাহাম;; দুটোই। এবার যাও প্লিজ। আমি তোমাকে ইনভাইট করি নি সো বিন বুলাই মেহমান হয়ে এসো না।
আইরাত;; আমি কোন মেহমান না। যাজ্ঞে ছাড়ুন এখন আমি কথার প্যাচ খেলতে চাচ্ছি না। এই বিয়ে বন্ধ করুন।
আব্রাহাম;; আর যদি না করি তো।
আইরাত;; এখানে যে কটা মানুষ আছে সব মরবে। আর লাস্টে প্রথমে আপনাকে মারবো তারপর নিজে মরবো।
আব্রাহাম;; আমাকে মারার হুমকি দিচ্ছো। সাহস আছে?
আব্রাহামের কথায় আইরাত রাত্রির দিকে রিভলবার তাক করে ধরে। সবাই চিল্লিয়ে ওঠে।
আব্রাহাম;; For your kind information ও বউ না। বউ এখনো এখানে আসেই নি।
আইরাত;; মিথ্যা।
আব্রাহাম;; হুয়াট?
আইরাত;; হাহাহাহা, আমাকে কি😅। আমাকে কি পাগল মনে হয়। নাকি আমি মেয়ে দেখে আমাকে হালকার ওপরে নেন কোনটা বলুন তো।
আব্রাহাম;; প্রথম টা।
আইরাত;; এটা কোন বিয়েই না রাইট। এটা শুধু বিয়ের ঢং। কোন বিয়ে এখানে হচ্ছেই না।
আব্রাহাম;; কেনো আমার লাইফে ইন্টারফেয়ার করছো?
আইরাত;; মানুষ টাই যখন নিজের হয় তখন আর বলে কয়ে ইন্টারফেয়ার করতে হয় না।
আব্রাহাম;; আইরাত ত……..
আইরাত;; Attention everyone… এখানে কোন বিয়ে টিয়ে হচ্ছে না। আর সামনে এই যে এই ছেলেকে দেখছেন সবাই এই আমার জামাই, আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা, আমার সব। আমদের বিয়েও হয়েছে। আর এতো কিছু হবার পর কেউ কি করে আশা রাখে যে আব্রাহাম কে আমি আবারও বিয়ে করতে দিবো।
আব্রাহাম;; আইরাত সিন ক্রিয়েট করো না।
আইরাত;; যেই মেয়ে আপনার দিকে নজর দিবে আল্লাহ ওকে আমি কি যে করবো।
আব্রাহাম;; Can you please stop this nonsense?!
আইরাত;; বের হন সবাই এখান থেকে কোন বিয়ে টিয়ে হচ্ছে না। সবাই যার যার বাড়ি যান।
আইরাতের কথায় সবাই এক এক করে বাড়ি থেকে বের হয়ে পরে। আইরাত দেখে আব্রাহাম দুই হাত ভাজ করে মুখ শক্ত করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত তার দাত দিয়ে ঠোঁট গুলো চেপে হেসে ওঠে।
আইরাত;; হায়য়য়য়য়য়য়, আমার শরম লাগে তো জামাই এভাবে তাকাইলে।
আব্রাহাম;; তুমি আসলেই পাগল।
আইরাত;; পাগল ছাড়া দুনিয়া চলে না।
আব্রাহাম;; সব নাটক শেষ নাও হুয়াট?
আইরাত;; এখন আর কি কিছুই না। কাল সকালে টিভি চ্যানেলে বড়ো বড়ো অক্ষরে হ্যাড লাইন হবে ‘”ভেঙে গেলো আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী উপস সরি আব্রাহাম চৌধুরী অর্নীলের নাটক আই মিন বিয়ে”‘। আমি আসি আজ, থাকুন আমার জামাইজান। টাটা, লাপ্পিউ।
এই বলেই আইরাত তার পেছনে ঘুড়ে। দেখে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। চোখ গুলো তার বড়ো বড়ো হয়ে গেছে আব্রাহামকে দেখে। অপলকহীন ভাবে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে অয়ন। যেনো কোন ভুত দেখে ফেলেছে। আইরাত অয়নের কাছে এলেই অয়ন কি বলবে কি বলবে না তা হকচকিয়ে উঠে। আইরাত ক্ষীণ হাসে অয়ন কে দেখে। পরক্ষণে আহসানও আসে সেখানে।
আহসান;; আইরাত অনেক ঝামেলা হয়েছে এখন চলো এখান থেকে।
আইরাত;; তুমি কখন আসলে?
আহসান;; এসেছি এখন চলো।
আহসান আইরাতের হাত ধরে নিয়ে বাইরে এসে পরে।
তাদের চলে যেতেই আব্রাহাম দেখে রাত্রি তার দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম রাত্রি কে বা অন্য কাউকে এইসবের ব্যাপারে কিছুই বলে নি। তারা এইসব কিছুই জানে না। তাই হঠাৎ এমন একটা কান্ড হওয়াতে তারা সবাই অবাক।
রাত্রি;; আব্রাহাম ওই ম……….
আব্রাহাম;; রাত্রি প্লিজ, আমি এখন এইসব কোন কিছুর ব্যাপারেই কোন কথা বলতে চাচ্ছি না।
এই বলেই আব্রাহাম সিড়ি বেয়ে ওপরে তার ঘরে চলে যায়।
।
।
।
।
চলবে~~
(যারা বলছেন যে Shame on Abraham”s love, আব্রাহামের সবকিছু জানা সব চেক করা উচিত ছিলো তারা একটু অপেক্ষা করুন প্লিজ। আমি বলছি যে ফ্ল্যাসবেক এখনো বাকি আছে। আব্রাহাম খাদ থেকে কীভাবে বাচলো, দুই বছর কি করেছে সব জানা যাবে। আব্রাহাম তার যথা সাধ্য চেষ্টা করেছে। ও মাফিয়া, ওইটা ওর ক্যারেক্টার তো সহজে তো ব্যাপার ছাড়া যায় না তাই না। তাই বলছি সবাই একটু অপেক্ষা করুন সব রহস্য বের হয়ে আসবে ❤️)