#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৩
প্রায় দুই ঘণ্টা পেরোনোর পর যখন প্রিয়ার রুম থেকে বের হচ্ছে না তখন ইফা ওর রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে নক করলো। প্রিয়া উঠে গিয়ে দরজা খুললে ইফা বলে,
“তোর মাথায় কী বুদ্ধি হবে না? ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে আছিস কেনো? সেই সাড়ে পাঁচটায় ঘরে ঢুকলি এখন সাতটার বেশি বাজে। উনারা তিনটার দিকে এলো তারপর তোকে রেডি করতেই কতো সময় চলে গেছে। জারিফের ভাবি, বোনকে এখানে আনব। ওরা তোর সাথে ভালো করে কথা বলার সুযোগই পেলো না। একটু কথা-টথা বল।”
প্রিয়া দরজা দিয়ে উুঁকি দিয়ে বলে,
“কই উনারা? আচ্ছা আজকে কি থাকবে?”
ইফা ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,
“ভাবি আর ফিহা এখানে আসতে চাইছে। উনারা তো চলে যাবেন ঘণ্টা খানেক পর। তবে তোর বর…!”
প্রিয়া গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে বলে,
“কি? সে কি?”
“সে থাকবে কী-না বলতে পারিনা। হিসেব মতে আজ তো তোদের বাসর!”
ইফার কথায় প্রিয়া হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকালো। জারিফ স্যার তার বর এটা মানতেই তার কেমন ভ্রম ভ্রম লাগছে। আবার নাকি বাসর! প্রিয়ার ভাবনার মাঝেই তামান্না ও ফিহা এসে হাজির। ফিহা প্রিয়ার হাত ধরে বলে,
“আজকে তোমাদের বাসায় থাকতে চেয়েছিলাম ভাবী। কিন্তু ভাইয়া না থাকলে তো আমারও থাকা হবে না। কী আর করা বলো।”
প্রিয়ার চোখ চকচক করে উঠলো। কন্ঠে উৎসুকতা প্রকাশ করে বলে উঠে,
“সত্যি! সত্যি আজ সে থাকবে না?”
ইফা প্রিয়াকে চোখ রাঙানি দিচ্ছে বেফাঁস কথা বলাতে। তামান্না হেসে উঠে বলে,
“তোমার কথা ভেবেই দেবর আমার কাজের বাহানা দিচ্ছে। তার নাকি ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে! আচ্ছা? বলো তো? কী এমন কাজ আছে? কাল তো ছুটি তার। সে কালকেও কাজটা করতে পারতো। তাই না?”
প্রিয়া হুট করে লাজুকলতার ন্যায় লাজরাঙা হলো। লোকটা কি তবে সত্যি তার কথা চিন্তা করে বাহানা দিচ্ছে? প্রিয়ার মুখশ্রীতে লাজরাঙা দেখে তামান্না ও ফিহা মিটমিট করে হাসছে। ফিহা বলে,
“তুমি যদি ভাইয়াকে বলো আজ থেকে যেতে তবে আমিও থাকব। আমার তো সহসা সুযোগ হবে না এখানে আসার। তাই না বলো?”
প্রিয়া দোটানায় পরে যায়। ফিহার কিউট ফেস দেখে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না আবার চাইছে না আজ জারিফ এখানে থাকুক। প্রিয়া বলে,
“উনার কাজ আছে আর আমি কিভাবে বলব বলো? আমি যে উনার স্টুডেন্ট তা তো জানোই। কেমন আনইজি লাগছে। তুমি থেকে যাও না। তোমার কথা আমি বলতে পারি।”
“দিবে না গো ভাবী। আম্মু ব*কবে। তবে সমস্যা নেই। তোমাকে যখন বউ করে নিয়ে যাবে তখন থাকব তোমার সাথে।”
প্রিয়া হাসে। ওরা আরও আড্ডা দেয়। ঘণ্টা খানেক পর রাতের খাবার খেয়ে জারিফরা চলে যায়। জারিফকে থাকতে বলার পরেও সে কাজের বাহানায় চলে যায়।
________
রাত দশটা বাজে। প্রিয়া কফি হাতে ব্যালকনিতে বসলো। রাহা ওরা ড্রয়িংরুমে কি যেনো করছে। প্রিয়া ওদের কাছ থেকে উঠে এসে এক একা বসে আছে। সেই প্রথমদিনের বাসের কাহিনী থেকে সবকিছু মনে পরছে। যেই লোকটার থেকে লুকাতে এতোকিছু করেছে আজ সে প্রিয়ার স্বামী। প্রিয়ার ঠোঁটের কোনে অজান্তেই হাসির রেখা ফুটে উঠে। প্রিয়া এক দৃষ্টিতে আকাশের চাঁদটার দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের ফিলিংস আজ নিজের কাছেই অজানা। মিশ্র অনুভূতি তার। দরজার খটখট শব্দে দরজা খুলে দেখে রাহা দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়া সাইড দিলে রাহা হাতের ফোনটা প্রিয়ার দিকে বাড়ায়। আচমকা স্ক্রিনে নজর দিয়ে জারিফকে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। জারিফ ল্যাপটপে কি যেনো করছে। কেউ একজন ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে জারিফের দিকে ধরে রেখেছে। জারিফের কানে হেডফোন। কাজ করছে নাকি মুভি দেখছে বোঝা দায়।
রাহা ফিসফিস করে বলল,
“এটা জায়ান ভাইয়া ফোন ধরে রেখেছে। ভাইয়া কি একটা কাজের বাহানায় জিজুর রুমে গেছিলো তারপর আবার আসবে বলে আমাদের ভিডিও কল করেছে। এসবের পেছোনে আসল হাত তামান্না ভাবি ও ফিহার। ওদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। তুমি যে জিজুর বিরহে একা একা রুম আটকে দুঃখ বিলাশ করছিলে তা আমার এটুকু হৃদয়ের সহ্য হচ্ছিলো না। তাই তো জিজুকে দেখানোর ব্যাবস্থা করলাম।”
প্রিয়া অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“আমি কখন বিরহে দুঃখ বিলাশ করছিলাম? এই তোর মা*থা ঠিক আছে? না গেছে?”
“আরে আমি বুঝি তো! আমাকে তোমার বাচ্চা মনে হয়? আমি আমার আপুর পছন্দ সব জানি।”
প্রিয়া রাহার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে কেটে দিলো। তারপর ওকে ভিতরে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় অতঃপর রাহাকে ধাওয়া করে বলে,
“তোর জন্য! শুধু তোর জন্য আমি এমন একটা পরিস্থিতে পরলাম। এখন আমি রবিবার স্যারের ক্লাস কী করে করব? উনার দিকে তাকানোটাই আমার জন্য দূরহ হয়ে গেছে। একবার বাসে তারপর ক্লাসে এখন বিয়ে।”
রাহার প্রিয়ার হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করে বলছে,
“দেখো আপু, এই ব্যাপারে আমি সত্যি কিছু জানতাম না। বিশ্বাস করো। তুমি যখন জানলে তখনই আমি জানলাম। সরি সরি। আর শোনো, প্রিয়ম ভাই জিজুকে বাসের কাহিনী জিজ্ঞেস করেছিল।”
প্রিয়া কথাটা শোনা মাত্রই থম মে*রে দাঁড়িয়ে গেলো। অবাক হয়ে বলে,
“মানে! তুই আবার কি করছিস? আমাকে বাঁশ না খাওয়ালে তোর হয় না?”
রাহা ইনোসেন্ট ফেস করে বলে,
“বিশ্বাস করো আপু, আমি বুঝিনি। বুঝলে বলতাম না। কিন্তু জিজু নাকি অনেক হেসেছে বাসের কাহিনী শুনে। তুমি যে প্রথমদিন ক্লাসে এই কারণে লুকিয়ে থাকতে তা সে বুঝে গেছে।”
প্রিয়া ধপাস করে বিছানায় বসে পরে নিজের কপাল চাঁ*পড়ে বলে,
“বিদায় পিতিবি!”
রাহা দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কা*টতে ইনোসেন্টের মতো তাকিয়ে আছে।
_________
জারিফ তার বড়ো ভাই আর ভাবীর কাণ্ডকারখানা বুঝে হাসছে। সে মুভি দেখছিল সেটা পজ করে তার ভাই-ভাবী লুকিয়ে যে ফিসফিস করে কি করছে তা বোঝার চেস্টা করছিল। যখন বুঝতে পারলো প্রিয়াদের বাড়িতে যোগাযোগ করছে আর ফোনটা নিশ্চয়ই প্রিয়ার কাছে নিয়ে গেছিলো। প্রিয়া ফোন কে*টে দেওয়াে পর জায়ান ভাইয়ার আফসোস সূচক শব্দে জারিফ শিউর হয়ে গেছে। এরপর জায়ান আর তামান্না দরজার কাছে দাঁড়িয়েই ফিসফিস করে এটা সেটা বলছে। জারিফ ডাক দিলো,
“ভাইয়া! স্পাইগিড়ি করা শেষ? তাহলে নিজের ঘরে যাও। আমি ঘুমাব।”
জায়ান জিহ্বায় কা*মড় দিয়ে সুরসুর করে কে*টে পরে। জায়ানের পিছু পিছু তামান্নাও। জারিফ উঠে দরজা লাগিয়ে দেয়। তারপর প্রিয়মের তখনকার বলা কথাগুলো ভাবতে থাকে। প্রিয়ম বলেছিল,
“আমার বোনের মধ্যে বাচ্চামিটা একটু বেশি। সে তোকে ভয় পায়। আর তুই হলি গম্ভীর্যতা পূর্ণ। দুটোর মধ্যে নিরবতা মনে হয় বেশিই থাকবে। মানিয়ে নিস হ্যাঁ!”
কথাটা মনে পরতেই জারিফ আলতো হাসলো। প্রিয়ার ক্যাম্পাসে করা কিছু দুষ্টুমিগুলো যা জারিফের নজরে পরেছে তা ভাবে। প্রিয়ার হুট করে গ্রাউন্ডের মাঝে গিয়ে বসে পরা তারপর বন্ধুদের সাথে খেলা। এসব ভেবেই হাসে। এক সপ্তাহ এসবই দেখেছে জারিফ। প্রিয়ার হাসিমাখা মুখ আর আজকের বাচ্চাদের মতো অসহায় মুখটা মনে পরতেই জারিফ স্বগোতক্তি করে,
“ছোট্ট বিড়ালছানা! ছটফটে তুমি সাথে ভীতু!”
জারিফ নিজেই হেসে শুয়ে পরে। আজ আর লেট নাইট জাগবে না।
চলবে ইনশাআল্লাহ্,
রাইটিং ব্লকে পরে গেছি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।