#হৃদমাঝারে পর্ব-১০
#দেবারতি_ধাড়া
আয়ান বাসন্তীদেবীকে বলে ঘর থেকে বেরিয়ে পাশের ঘরে গিয়ে গায়েত্রীদেবী, অমলেন্দুবাবু আর ঘটকমশাইকে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। ওখান থেকে বেরিয়েই অনবরত জিয়াকে কল করেই চললো আয়ান। কিন্তু জিয়া বহুদিন পর কলকাতায় ফিরে ওর বন্ধুদের ফোন পেয়ে তাদের সাথে পার্টিতে গিয়ে নাচ গান করতে এতোটাই ব্যস্ত ছিলো, যে ফোনের যান্ত্রিক শব্দ ওর কানে গিয়ে পৌঁছালো না। ফোনটা বাজতে বাজতে চার্জ শেষ হয়ে গিয়ে একসময় বন্ধও হয়ে গেলো। প্রায় কুড়ি-পঁচিশবার ফোনের রিং হওয়ার পরে যখন কোনো এক সুমধুর নারীকন্ঠ জিয়ার ফোনটা সুইচ অফ বলতে শুরু করলো, তখন একটা ট্যাক্সি ডেকে তাতে উঠে নিজের বাড়ি ফিরলো আয়ান। বাড়ির সামনে ট্যাক্সি থেকে নেমে আয়ানকে হতাশ হয়ে বাড়িতে ঢুকতে দেখে রিমলি বললো,
-কীরে দাদা! তুই এক্ষুণি চলে এলি? এই তো কিছুক্ষণ আগেই তোরা ওখানে পৌঁছলি, আর এর মধ্যেই বাড়ি চলে এলি? আর তুই যে একা ফিরলি? মা কোথায়? ওই দাদা? কিছু বলছিস না কেন তুই? দাদা…
রিমলি আয়ানকে জিজ্ঞেস করতে করতে ওর পিছন পিছন বাড়ির ভিতরে এগিয়ে এলো। কিন্তু ওর প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজাটা সশব্দে বন্ধ করে দিলো আয়ান। আয়ান মাকে ছাড়া একা বাড়ি ফেরাতে আর আয়ানের কাছ থেকে কোনো উত্তর না পাওয়াতে খুব অবাক হয়ে গেলো রিমলি।
আয়ান ওখান থেকে ওইভাবে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যাওয়ায় গায়েত্রীদেবী এবং অমলেন্দুবাবু খুব অবাক হলেন। ওনাদের মুখ গুলো কেমন যেন থমথমে হয়ে গেলো মুহূর্তের মধ্যেই। বাসন্তীদেবীও ভীষণ অবাক হলেন আয়ানের এমন ব্যবহারের ফলে। তবে উনি আয়ানের ওভাবে বেরিয়ে যাওয়ার কোনো কারণই খুঁজে পেলেন না। সেদিন বাড়িতে ছবি দেখে যে আয়ানের মেয়েটিকে বেশ পছন্দ হয়েছিলো, আর সেই কারণেই যে আজ সামনাসামনি বিয়ের কথা বলতে এসেছিলো, সেটা তো বাসন্তীদেবী ভালোই বুঝেছিলেন। কিন্তু এখন হঠাৎ কী এমন হলো, যে আয়ান এভাবে বেরিয়ে গেলো, তার কারণ বাসন্তীদেবীর অজানা। উনি মনে মনে ভাবলেন, “তাহলে কী আরুশিকে সামনে থেকে দেখে বাবানের ভালো লাগেনি? কিন্তু ভালো না লাগার তো কোনো কারণ নেই! সামনে থেকে তো আরুশি আরও অনেক বেশি সুন্দর। তাহলে কী হলো বাবানের? ওদের মধ্যে কী এমন কথা হলো? কি জানি বাবা! আজকালকার সব ছেলেমেয়ে, কী যে হয় ওদের মধ্যে কী জানি! না না, এসব তো আমার ভুল ধারণাও হতে পারে। হয়তো সত্যি সত্যিই বাবানের এমন কোনো জরুরী কাজ পড়ে গেছে, যার জন্য ওকে এভাবে বেরিয়ে যেতে হলো। কিংবা সত্যিই আরুশির সাথে কথা বলতে গিয়ে বাবান লজ্জা পেয়ে গেজে। না থাক, আমি আর ওসব উল্টোপাল্টা কিছু ভাববো না।” এসব ভাবনা চিন্তা করার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে বাসন্তীদেবী গায়েত্রীদেবী এবং অমলেন্দুবাবুকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-আপনারা দয়া করে কিছু মনে করবেন না! আসলে আমি তো আগেই আপনাদের বলেছিলাম, আমার ছেলেটা খুব লাজুক। মেয়েদের সাথে ও ঠিকমতো কথাও বলতে পারে না। আর আমরা ওভাবে আরুশি আর বাবানকে একা রেখে চলে আসাতে হয়তো খুব লজ্জা পেয়ে গেছে ও! তাই কাজের অজুহাতে পালিয়েছে এখান থেকে। তবে আমি কিন্তু এক্ষুণি যাচ্ছি না! আমি আপনাদের মতামত শুনে, আপনারা এই বিয়েতে রাজী থাকলে একেবারে বিয়ের দিন ঠিক করে, তবেই এখান থেকে ফিরবো.. জানেনই তো আমার ছেলেটা বেশিদিন কলকাতায় থাকবে না। ওর কলেজ খুলে গেলে খুব অসুবিধা হয়ে যাবে!
বাসন্তীদেবীর কথায় একটু আশ্বস্ত হলেন ওনারা। এবার যেন ওনাদের মুখের থমথমে ভাবটা কেটে গিয়ে ওনাদের ঠোঁটের কোণে একটু হাসির লেশ দেখা গেলো। অমলেন্দুবাবু বললেন,
-না না আমরা কিছু মনে করিনি.. আর আমাদের এই বিয়েতে মত আছেন। আপনি বসুন দিদি। আমরা বরং এবার পঞ্জিকাটা বের করে বিয়ের দিনটা ঠিক করেই ফেলি। কী বলো গায়েত্রী?
-হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমি একদম ঠিক বলেছো। এই বিয়েতে আমারও মত আছে। দাঁড়াও আমি পঞ্জিকাটা এক্ষুণি নিয়ে আসছি!
দরজার বাইরে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো আরুশি। মণি আর পাপানের মুখে হাসি দেখে আরুশির ঠোঁটের কোণেও মিষ্টি একটু হাসি দেখা গেলো। আয়ানকে দেখে আর ওর সাথে কথা বলে বেশ ভালোই লেগেছে ওর। প্রথমে একটু হতাশ হলেও এখন ও মনে মনে ভাবলো যে, সত্যিই হয়তো আয়ান লজ্জা পেয়েই এখান থেকে পালিয়েছে। ভালোলাগায় আরুশির মনটা আনন্দে ভরে উঠলো। বিয়ের কথা শুনলে হয়তো সব মেয়ের মনেই একটু আনন্দের উদ্রেক হয়। আরুশিরও তার ব্যতিক্রম হলো না। গায়েত্রীদেবী পঞ্জিকা নেওয়ার জন্য ঠাকুর ঘরে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বেরোনোর কারণে, আরুশি আর ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। ঘরে গিয়েই প্রতিদিনকার মতো নিজের ডায়েরিটাতে লিপিবদ্ধ করতে লাগলো আজ সারাদিনের সুখ-দুঃখের সমস্ত মুহূর্ত গুলোকে…
সবাই মিলে কথা বলে এবং পঞ্জিকা দেখে ঠিক করা হলো এই মাসের শুরুতেই যে বিয়ের তারিখটা রয়েছে, সেই দিনই আয়ান আর আরুশির বিয়েটা সুসম্পন্ন হবে। আর দু-একদিনের মধ্যেই ওনারা আশীর্বাদটাও সেরে ফেলতে চান। সমস্ত কথাবার্তা শেষ করে যখন বাসন্তীদেবী বাড়ি ফিরলেন, তখন রিমলির মুখে শুনলেন যে, আয়ান সেই ফেরা থেকে ঘরের মধ্যে দরজা বন্ধ করে বসে রয়েছে। রিমলির কোনো প্রশ্নেরও উত্তর দেয়নি ও। রিমলির মুখ থেকে এসব শোনার পরেই বাসন্তীদেবী আয়ানের ঘরের দরজা ধাক্কা দিতে শুরু করলেন।
-ওই বাবান? কী হয়েছে তোর? তুই দরজা বন্ধ করে রেখেছিস কেন?! দরজাটা খোল বাবান! তুই তখন ওখান থেকে ওভাবে চলে এলি, এখন আবার ঘরের দরজা বন্ধ করে রেখেছিস! কী হয়েছে তোর? দরজাটা খোল বাবা…
বাসন্তীদেবীর গলার আওয়াজ পেয়ে ঘরের দরজা খুলে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো আয়ান। বেরিয়ে আসতেই বাসন্তীদেবী বললেন,
-এই মাসের প্রথম যে বিয়ের দিনটা আছে, আমি সেদিনই তোদের বিয়ের ঠিক…
কথার মাঝেই বাসন্তীদেবীকে থামিয়ে দিয়ে আয়ান বললো,
-আমি এই বিয়েটা করতে পারবো না মা। তুমি ওনাদের ফোন করে জানিয়ে দাও!
-মানে? এসব কী বলছিস তুই বাবান? তোর কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি? বিয়ে করবি না মানেটা কী? আমি যে ওনাদের কথা দিয়ে এলাম…
-আমি আর কোনো কথা বলতে চাই না মা। তুমি প্লিজ এটা নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন কোরো না আমায়!
-কিন্তু তুই যে ছবি দেখে…
আবারও ঘরের ভিতরে ঢুকে ওনার মুখের ওপর ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিলো আয়ান। বাসন্তীদেবী দরজা ধাক্কা দিতে দিতে বললেন,
-ওই বাবান! কী হলো তোর? কেন বিয়ে করবি না তুই? বলনা রে আমায়.. বাবান…
বেশ কিছুক্ষণ ধরে দরজা ধাক্কা দিয়েও আয়ান দরজা না খোলায়, গায়েত্রীদেবীদের দেওয়া কথার খেলাপ হওয়ার ভয়ে কেঁদেই ফেললেন বাসন্তীদেবী। ওনাকে কাঁদতে দেখে রিমলি এগিয়ে এসে বাসন্তীদেবীর দুই কাঁধে হাত দিয়ে ধরে ওনাকে তুলে ঘরে নিয়ে গেলো। তারপর ওনার চোখের জল মুছে দিয়ে বললো,
-তুমি কেঁদো না মা.. দাদার সাথে নাহয় আমি কথা বলবো। দাদা কী কারণে এমন করছে সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি না… তুমি একদম চিন্তা কোরো না। আমি দেখছি কী করা যায়! তুমি প্লিজ আর কেঁদো না মা!
-আমি এখন কী করবো রিমলি? আমি তো ওনাদেরকে কথা দিয়ে, বিয়ের দিন পর্যন্ত ঠিক করে ফেললাম! আর এখন যদি তোর দাদা বিয়ে করবে না বলে, তাহলে আমি কী করবো রে? আমি ওনাদের কী বলবো? আমাকে কোনো দিন এতো ছোটো কারোর কাছে হতে হয়নি। এই অপমান আমি সহ্য করতে পারবো না রে…
-বললাম তো মা, আমি কথা বলবো দাদার সাথে। দাদা ঠিক বিয়ে করতে রাজী হবে দেখো.. আমি রাজী করাবো দাদাকে। তুমি তাড়াতাড়ি শাড়ি চেঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে নেবে চলো মা…
বন্ধুদের সাথে পার্টি করে পিসির বাড়ি ফিরতে বেশ অনেকটা রাত হয়ে গেলো জিয়ার। আজ ও পিসির বাড়িতেই থাকবে। জিয়াকে ফোনে না পেয়ে তখনও শিয়া, মানে আরুশি জিয়ার সাথে ডিনার করার জন্য অপেক্ষা করে বসেছিলো। পিসির বাড়িতে ঢুকেই আগে ফোনটা চার্জে বসালো জিয়া। তারপর ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে খাবার টেবিলে এসে বসলো। শিয়া আর পিমণিকে খাবার নিয়ে বসে থাকতে দেখে জিয়া বললো,
-তুই এখনো ডিনার না করে আমার জন্য বসে আছিস কেন দিদিয়া? পিমণি তুমিও খাওনি কেন?
-তুই এখানে থাকলে তোকে ছাড়া তোর দিদিয়া একা কবে খেয়ে নিয়েছে জিয়া? তুই কী বন্ধুদের সাথে ওখানেই ডিনার করে ফিরেছিস নাকি?
-না পিমণি! আমি তো জানি আমার দিদিয়া ঠিক আমার জন্য খাবারের থালা নিয়ে বসে আছে। আমি কী করে বাইরে থেকে খেয়ে ফিরি বলোতো? পিমণি? তুমি তাড়াতাড়ি খাবার সার্ভ করো প্লিজ! ভীষণ জোরে খিদে পেয়ে গেছে গো আমার.. এই দিদিয়া তোরও তো নিশ্চয়ই খুব খিদে পেয়ে গেছে? সরি রে! আসলে এতোদিন পর বন্ধু গুলোর সাথে দেখা হলো তো, তাই ওরা কিছুতেই আমাকে আসতে দিচ্ছিলো না রে। অ্যাম রিয়েলি এক্সট্রিমলি সরি দিদিয়া! আমি জানি, আমি আজকের মতো একটা শুভ দিনে তোর সাথে না থাকতে পারায় তুই খুব কষ্ট পেয়েছিস। কিন্তু বিশ্বাস কর দিদিয়া, ওরা আমাকে ছাড়তেই চাইছিলো না! ওই দিদিয়া…
-আমি রাগ করিনি জিয়া.. তুই একদম এসব নিয়ে ভাবিস না। আজ মণি তোর ফেভারিট চিকেন রেজালা বানিয়েছে। খাবি তো?
-ওহ রিয়েলি?! খাবো না মানে? উফ্! আই জাস্ট লাভ ইট! থ্যাঙ্ক ইউ পিমণি… দাও দাও তাড়াতাড়ি খেতে দাও!
-হ্যাঁ এই তো দিচ্ছি.. এই নে…
গায়েত্রীদেবী খাবারের প্লেট গুলো এগিয়ে দিলেন জিয়া আর শিয়ার দিকে। কিন্তু ওনাকে খেতে না বসে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিয়া বললো,
-ও পিমণি? তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন? তুমিও বসে পড়ো আমাদের সাথে! আর কখন বসবে?
-আহা তোরা খেয়ে নে না! তোদের খাওয়া হয়ে গেলে, তারপর নাহয় আমি বসবো…
-না না পিমণি, তুমিও বসে পড়ো আমাদের সাথেই। আমরা তিনজন একসাথেই খাবো..
-হ্যাঁ মণি, জিয়া ঠিকই বলেছে। তুমিও বসে পড়ো। অনেক রাত হয়ে গেছে…
-আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে, আমিও বসছি।
গায়েত্রীদেবীও একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লেন খাওয়ার টেবিলের সামনে। তারপর উনিও নিজের খাবার বেড়ে নিয়ে খেতে শুরু করলেন। খেতে খেতে জিয়া বললো,
-যা! আমি তো জিজ্ঞেস করতেই ভুলে গেছি। এই দিদিয়া! তোর হবু বরকে কেমন দেখলি রে? তোর পছন্দ হলো? আমি তো থাকতেই পারলাম না। তাই দেখতেও পেলাম না, আর কথাও বলতে পারলাম না!
জিয়ার কথা শুনে শিয়া লজ্জায় কিছু না বলতে পেরে চুপ করেই রইলো। কোনো উত্তর না পেয়ে জিয়া আবারও বললো,
-ওই দিদিয়া! বলনা রে? কেমন লাগলো তোর হবু বরকে? আর কী কী কথা হলো তোদের মধ্যে?! এতো লজ্জা পাওয়ার কী আছে আমার কাছে?
পাশ থেকে গায়েত্রীদেবী বললেন,
-আঃ জিয়া! দেখছিস না? তোর দিদিয়া লজ্জা পাচ্ছে। জানিসই তো তোর দিদিয়া কতোটা লাজুক! তোর হবু জামাইবাবুও খুব লাজুক রে। লজ্জায় বেশিক্ষণ থাকতে না পেরে তো পালিয়েই গেলো এখান থেকে! তারপর ওর মা সব কথাবার্তা বলে অনেকটা পরে বাড়ি ফিরেছেন।
-সেকী! জিজুও লাজুক নাকি? তাহলে তো ব্যাপারটা ঠিক জমবেই না! এতো লাজুক হলে তো তোদের বিয়ের পর আমি মিমি হতে হতে মাসিমা হয়ে যাবো রে দিদিয়া!
-জিয়া! তুই কী কোনোদিনও বড়ো হবি না? আমি যে এখানে বসে আছি, সেটা কী মনে নেই নাকি তোর? আমি তো তোর পিসি হই নাকি?
-তাতে কী হয়েছে গো? আমি কী এমন বলেছি? ও পিমণি, জিজু কী করে গো?
-তোর হবু জামাইবাবু প্রফেসর রে জিয়া। তবে এখানকার নয়, শিলিগুড়ির একটা কলেজের। ভালোই হবে, তোর দিদিয়া বিয়ের পর যখন শিলিগুড়িতে চলে যাবে, তখন তোর কাছাকাছি থাকবে।
-বাহ! দারুণ তো.. এই দিদিয়া, সত্যি সত্যি তুই শিলিগুড়িতে চলে যাবি? কী মজা হবে রে..
তখন হঠাৎ করেই জিয়ার মনে হলো, “কলেজের প্রফেসর? আবার শিলিগুড়ির! আর তার বাড়িও নাকি কলকাতাতেই। আমার প্রফেসর বাবু নয়তো?!” সঙ্গে সঙ্গে জিয়া জিজ্ঞেস করলো,
-এই দিদিয়া! তোর হবু বরের নাম কী রে?
শিয়া ভেবেছিলো যখন ওরা আলাদাভাবে কথা বলতে শুরু করেছিলো, তখনই আয়ানের নামটা জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু আয়ান ওভাবে চলে যাওয়াতে আর নাম জিজ্ঞেস করার সুযোগ হয়নি। তবে দরজার আড়াল থেকে যখন সবার কথোপকথন শুনছিলো, তখন বাসন্তীদেবীর মুখে “বাবান” নামটা অনেকবার শুনে এটা বুঝেছে যে, আয়ানের ডাকনাম বাবান। শিয়ার কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে জিয়া আবার জিজ্ঞেস করলো,
-ওই দিদিয়া? বললি না তো! তোর হবু বরের নাম কী?
-আমি জানি না জিয়া..
-সেকী! তুই তোর হবু বরের নামটাই জানিস না? ও পিমণি তুমি তো নিশ্চয়ই জানো। কী নাম গো জিজুর?
-হ্যাঁ ওই তো, তোর হবু জামাইবাবুর নাম আয়ান, আয়ান রায় চৌধুরী।
নামটা শুনেই ভীষণভাবে চমকে উঠলো জিয়া। একেবারে চুপ করে গেলো ও। খাওয়াও থামিয়ে দিলো। জিয়াকে হঠাৎ করে চুপ করে থাকতে দেখে শিয়া বললো,
-এই জিয়া, তুই খাচ্ছিস না কেন? খা ঠিক করে…
-হ্যাঁ হ্যাঁ এই তো খাচ্ছি। তুইও খা দিদিয়া.. পিমণি? রান্না গুলো কিন্তু হেব্বি হয়েছে… তোমার হাতে একটা চুমু খেতে ইচ্ছে করছে আমার!
তাড়াতাড়ি করে খাওয়া শেষ করে জিয়া চেয়ার থেকে উঠে হাত ধুয়ে ঘরে শুতে চলে গেলো। জিয়া পিসির বাড়িতে এলে রাতে ওর আরুশির সাথেই ঘুমায়। আরুশির ডাকনাম শিয়া। খাওয়ার শেষে শিয়া আর গায়েত্রীদেবী প্লেট গুলো তুলে টেবিলটা ভালো করে পরিষ্কার করে রান্নাঘরে বাসন মাজতে গেলেন। জিয়া শিয়ার ঘরে ঢুকেই ফোনটা চার্জ থেকে খুলে এনে সুইচ অন করে আয়ানকে কল করে শুভেচ্ছা জানাবে ভেবে ওর নাম্বারটা ডায়াল করতে যাচ্ছিলো। ঠিক তখনই জিয়া দেখলো বিছানার এক কোণে একটা ডায়েরি পড়ে আছে। ডায়েরির পাতা গুলো উল্টেপাল্টে দেখে আর লেখা গুলোয় চোখ বুলিয়ে জিয়ার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো কয়েক ফোঁটা নোনতা জল। ও আর তখন ফোনটা অন করে আয়ানের নাম্বারটা ডায়াল করতে পারলো না। তখনই শিয়াকে ঘরে ঢুকতে দেখে চোখের জল লুকানোর জন্য চোখ থেকে চশমাটা খুলে জলটা মুছে নিলো। আর শিয়ার অলক্ষ্যেই ডায়েরিটা বিছানার একপাশে রেখে দিলো। ঘরে ঢুকে জিয়াকে এখনো না ঘুমিয়ে বসে থাকতে দেখে শিয়া তাড়াতাড়ি করে গিয়ে বিছানা থেকে ওর ডায়েরিটা তুলে নিয়ে আলমারির মধ্যে ঢুকিয়ে রেখে দিলো। তারপর ঘরের দরজাটা বন্ধ করতে করতে বললো,
-কীরে জিয়া? তুই এখনও ঘুমাসনি? নে নে শুয়ে পড় তাড়াতাড়ি!
ক্রমশ…