#প্রেম_তুমি
ফাবিহা নওশীন
পর্ব-২৪
বিরস আর ফ্যাকাসে মুখে হল থেকে দর্শন বের হচ্ছে। গায়ে কলেজের ড্রেস। হাতে সাদা রঙের একটা ফাইল। ফাইলে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। আজ সপ্তম পরীক্ষা পদার্থ বিজ্ঞান শেষ হলো। পরীক্ষা খুবই জঘন্য হয়েছে। এতটা জঘন্য পরীক্ষা পুরো ছাত্রজীবনে দেয়নি। যদি সবার পরীক্ষা খারাপ হত তাহলে মানা যেত বিষয়টা। প্রশ্নপত্র হার্ড হয়েছে ভেবে নিজেকে স্বান্তনা দিতে পারত কিন্তু এখন কি বলে নিজেকে স্বান্তনা দিবে। কি করে নিজেকে বুঝাবে বুঝে উঠতে পারছে না। খুব বিশ্রী ফিলিং হচ্ছে। এমন একটা সময়ে এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে যেখানে শুধু টপ করতে হবে। কিন্তু সাতটা পরীক্ষায় তিনটা সাবজেক্ট খারাপ হয়েছে। সামনে এইচএসসি। ফুল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এখন সব পরীক্ষা ইজিলি দেওয়ার কথা। দর্শনের এইচএসসি পরীক্ষা চোখের সামনে ভাসছে। এমন যদি এইচএসসিতে হয় ভাবতেই পিলে চমকে উঠছে। নিজেকে ধাতস্থ করে মুখের এক্সপ্রেশন পাল্টিয়ে অর্ষার সাথে দেখা করতে গেল।
অর্ষা ওকে দেখা মাত্রই হাসোজ্জল মুখে জিজ্ঞেস করল,
“পরীক্ষা কেমন হয়েছে?”
দর্শনের বুকটা ধুক করে উঠল। মনে পড়ে গেল জঘন্য পরীক্ষার কথা। তবুও নিজেকে সামলে নিল। ফ্যাকাসে মুখটা যথাসম্ভব হাসি হাসি করার চেষ্টা করছে। কিন্তু মনে হচ্ছে ব্যর্থ হচ্ছে। অর্ষার মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে গেল।
উৎকন্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ভালো হয়নি?”
দর্শন অর্ষার দিকে চেয়ে বলল,
“আমার পরীক্ষা আবার খারাপ হয়? আমি কে ভুলে গেছো?”
“না, তোমার মুখটা কেমন দেখাচ্ছে।”
দর্শন কপালের ঘাম মুছে আকাশের তেজস্বী সূর্যের দিকে চেয়ে বলল,
“কত গরম দেখেছো? তাই ক্লান্ত লাগছে। একটু পানি খাওয়া দরকার।”
অর্ষা ওর কথা শুনে ব্যাগ থেকে দ্রুত পানির বোতল বের করে ছিপি খোলে বোতল বাড়িয়ে দিল। দর্শন ঢকঢক করে পুরো বোতল সাবাড় করল। পানি খাওয়ার সময় ঠোঁট বেয়ে পানি পড়েছে। অর্ষা একটা টিসু বের করে দিল ব্যাগ থেকে। আলিশা বাসায় যাওয়ার জন্য ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসের সামনে দিয়ে যেতেই ওদের দু’জনকে দেখল। আজকাল ওদের এক সাথে দেখলে গায়ে আগুন জ্বলে যায়। এখনো তেমন লাগছে। শরীর জ্বলে যাচ্ছে।
দর্শন মুখ মুছে অর্ষার দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বলল,
“ধন্যবাদ! তুমি থাকো, আমি যাই। আগামীকাল পরীক্ষা আছে। পড়তে হবে।”
অর্ষা মাথা নাড়িয়ে সায় দিল। দর্শন হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে লাগল আজ গিয়ে খুব ভালো করে প্রিপারেশন নিতে হবে। আগামীকালের পরীক্ষা ফার্স্ট ক্লাস হওয়া চাই। ও নিজের বেস্টটা দিবে। আর কোন পরীক্ষা খারাপ হওয়া যাবে না। বাবা-মা কত আশা,স্বপ্ন নিয়ে বসে আছে। তাদের নিরাশ করা যাবে না।
……
অর্ষা দর্শনের জন্য অপেক্ষা করছে। মাত্র তো আর কয়েকটা দিন তারপর দর্শন আর কলেজে আসবে না। আগের মতো দেখা হবে না। নতুন কোন ইন্সটিটিউটে জয়েন করবে। সেখানে কত বন্ধু হবে। দর্শন এখানে আর আসার সময় পাবে না। ওদের দেখা হবে কোন রেস্টুরেন্ট অথবা পার্কে। তখনই আলিশা ওর সামনে এল। আলিশাকে দেখে অর্ষা চমকে যাওয়ার পাশাপাশি ভ্রু কুঁচকে তাকাল। হঠাৎ কেন ওর কাছে এসেছে? আর কি বলতে এল?
অর্ষার ভাবনায় ছেদ ধরিয়ে বলল,
“তুমি কী জানো, তোমার জন্য দর্শনের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে?”
অর্ষা নাক কুঁচকে বলল,
“তাতে তোমার কী? তোমার ভবিষ্যৎ তো ঠিক আছে। কোটিপতির মেয়ে। কোটিপতি বিয়ে করে স্যাটেল হয়ে যাবে।”
“শাট আপ! সব বিষয় ফানি লাগে তোমার? তোমার মতো ফালতু একটা মেয়ের চক্করে পরে সব শেষ করছে।”
“আমার চক্করে? আমি কোন চক্কর চালাই না। ভালোবাসি। দুজন দুজনকে ভালোবাসি।”
“এটা ভালোবাসা? এসব তোমার নাটক। চক্কর চালাচ্ছো।”
“তাহলে তুমিও চক্কর চালাও। চক্কর চালিয়ে দর্শনের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করে দেও। অসভ্য মেয়ে। দর্শনের থেকে চোখই সরছে না তোমার।”
“না সরছে না। কারণ আমি ওর উপযুক্ত তুমি নও। তোমার কী যোগ্যতা আছে? রুপে-গুনে, অর্থ-বিত্ত, নাম-খ্যাতিতে আমার নখের যোগ্যও না তুমি।”
“তোমার তো বেশ যোগ্যতা আছে। রুপ বেয়ে বেয়ে পড়ছে। একদম ডানাকাটা পরী। তাহলে তোমার কপালে কেউ জুটছে না কেন? আমার বয়ফ্রেন্ডের পেছনে পড়ে আছো কেন?”
“কারণ ও আমার। ও শুধুই আমার। তোমার চোখের সামনে ওর হাত ধরে ঘুরব, ডেটে যাব, চুমু খাব, ফেসবুকে পিক আপলোড দেব। তখন চেয়ে চেয়ে শুধু দেখবি। দর্শনের ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছিস, তোর জন্য ওর পড়াশোনায় ক্ষতি হয়েছে। তোর জন্য ওর পরীক্ষা বাজে হচ্ছে। তুই গার্লফ্রেন্ড হিসেবে অযোগ্য ও ব্যর্থ।”
অর্ষার পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না। দর্শনকে নিয়ে এসব বলছে? সহ্য হচ্ছে না ওর। হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ঠাটিয়ে দিল একটা চড়। আলিশা হতবাক হয়ে চেয়ে রইল। এতগুলো মানুষের সামনে এভাবে মারবে ভাবতেও পারেনি।
রাগে ফুসফুস করতে করতে বলল,
“তোর চোখ আমি গেলে দেব। নির্লজ্জ, বেহায়া। দর্শনকে চুমু খাবি? তোকে আমি বিষ খাওয়াব।”
আলিশা গালে হাত দিয়ে চারদিকে তাকাল। দু-এক জন চেয়ে আছে ওর দিকে। অপমানে, ক্ষোভে চোখ লাল হয়ে গেছে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“হাও ডেয়ার ইউ? আমাকে থাপ্পড় মারলি? এর ফল কি হতে পারে জানিস?”
অর্ষা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
“যা খুশি কর। তোকে আমি ভয় পাই?”
আলিশার গাল বেয়ে এক ফোঁটা উষ্ণ পানি পড়ল।
“এইবার পাবি। দেখ, আমি তোর কি হাল করি। তুই এসে আমার পায়ে পড়বি।”
….
আজ কেমিস্ট্রি প্রথম পত্র পরীক্ষা ছিল। আজও পরীক্ষা ভালো হয়নি। দর্শনের মুডটাই নষ্ট হয়ে গেল। আটটা পরীক্ষার মধ্যে চারটাই খারাপ হলো। মুড অফ করে বারান্দায় বসে আছে। অর্ষার সাথে দেখা করতে যায়নি। কেন জানি মনে হচ্ছে এই প্রেম ভালোবাসায় জড়িয়ে ধ্বংস হয়ে গেল। কিছুই ভালো লাগছে না। রুশান আর অর্পা ওর দিকে দৌড়ে আসছে। দর্শন ওদের দেখে কোন রিয়েক্ট করল না।
রুশান হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
“দোস্ত, অর্ষা তো ঝামেলা পাকিয়ে ফেলেছে।”
এমনি পরীক্ষা ভালো হয়নি। এর মধ্যে অর্ষা আবার কি করল।
দর্শন বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল।
“কী করেছে ও?”
“আলিশাকে সবার সামনে থাপ্পড় মেরেছে। ও তো কেঁদে-কেটে বাবাকে কল দিয়েছে। সবাইকে বলছে অর্ষাকে কলেজ থেকে বিদায় না করে, ওর লাইফ হেল না করে ছাড়বে না। ওর পড়াশোনা নষ্ট করে দেবে।”
দর্শনের বেশ রাগ লাগছে। যাই হয়ে থাক না কেন, বয়সে বড় একটা মেয়ের গায়ে হাত তুলে কী করে? এখন প্রিন্সিপাল ডাকবে, গার্জিয়ান আসবে, পানিশমেন্ট দেবে জঘন্য ব্যাপার স্যাপার। এখন যদি ওকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করে? তাহলে ওর স্টাডি ক্যারিয়ার শেষ। দর্শন রেগেমেগে অর্ষার কাছে যাচ্ছে। এ মেয়ে আর কত জ্বালাবে?
আগাম একটা করে বেশি পর্ব পড়তে চাইলে আমাকে এক্ষনি ফ্লো করুন ✊🖐️
চলবে….