😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒
Part-36
সন্ধির মুখ থেকে হিয়ার এরকম অবস্থার কথা শুনে উজান পুরো নিশ্চুপ হয়ে গেলো,,নিশ্চুপ না হয়ে উপায়ই বা কি আছে আর ওর,,কি বলবে কি করবে কিছুই তো এখন আর তার জানা নেই,,তার মাথা কাজ করছে না ব্যাথার চোটে শরীর চলছে না তবু সে একবার হিয়ার কেবিন তো আরেকবার শ্রাবণের কেবিনের দিকে পায়চারি করছে,,মনের মধ্যে এক অন্য রকম ভয় কাজ করছে তার,,যদি সত্যি সত্যি তার জন্য হিয়াকে বা শ্রাবণকে হারাতে হয় তখন সে কি করবে,,পারবে না তো নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না তো নিজেকে ক্ষমা করে এদের যেকোনো একজন কে ছাড়া বাঁচতে!!
!
!
!
ওটি শেষ হয় প্রায় ঘন্টা ৬/৭এক পর,,হিয়া তখনো ওর কেবিনে ঘুমে আছে,,ইনজেকশনের রেশ রাত অবধি থাকবে বলে সিস্টার এসে বলে গিয়েছিলো,,
ডক্টরঃ ওটি সাকসেসফুল কিন্তু ৭২ঘন্টার আগে ঠিক করে কিছুই বলা যাচ্ছে না,এ-ই তিনদিন এ যদি বাচ্চাটার ঞ্জান না ফিরে তাহলে হয়তো সে সারাজীবনের জন্য কোমায় চলে যেতে পারে,,বাট আমরা আশা রাখছি এরকম খারাপ কিছু না হবার সম্ভাবনাই বেশি,,আপনারা প্রে করেন আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি এখন বাকিটা সৃষ্টিকর্তার হাতে!!____পেশেন্ট কে কেবিনে শীফট করা হচ্ছে ঘন্টা দুই এক পর আপনারা দেখে আসতে পারবেন,,আসছি
ডক্টর রা সবাই চলে যেতে উজান পাথরের মতো শক্ত হয়ে পাশে থাকা চেয়ার টায় দুম করে বসে পড়ে,,সত্যি কি এ-তো টা কষ্ট পাবার কথা ছিলো শ্রাবণের,,সত্যি কি এইটুকু বাচ্চা ছেলে টার সাথে সৃষ্টিকর্তার এরকম বিচার না করলেই হতো না,,উজান আর কিছু ভাবতে পারে না,,শরীর মন সব ছেড়ে দিতে থাকে যদি সত্যি সত্যি এই তিনদিনের মধ্যে শ্রাবণের ঞ্জান না ফিরে তাহলে সে কি জবাব দেবে হিয়াকে,,আর হিয়া যদি এই সত্য টা মেনে নিতে না পেরে আবার এ্যাটাক করে নিজের কিছু করে বসে তখন,,উজান সত্যি এবার আর কিছু ভাবতে পারে,,গা গট গট করে কাঁপতে থাকে,,চোখ দিয়ে না চাইতেও জল পড়তে থাকে টপটপ,,কেমন একটা করতে শুরু করে সে,,উজানের এরকম অবস্থা দেখে সবাই ভয়ে উজানকে ধরতেই উজান সন্ধির পেটে দিকে মাথা রেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে,,সবাই এখন কি দিয়ে উজানকে শান্ত করবে তাই বুঝে উঠতে পারে না,,
সন্ধিঃ চুপ কর উজাননন,,এখন এভাবে কান্নাকাটি করার সময় না,,আমাদের এখন শক্ত থেকে পরিস্থিতি টার মোকাবেলা করতে হবে,,আমি আছি তুষার আছে ঝিনুক আছে আমরা সবাই আছি তোর পাশে হিয়ার পাশে,,দেখবি সব ভালো হবে,,
উজানঃ আমি হিয়ার মুখোমুখি কি করে হবে সন্ধি,,কি করে ওকে গিয়ে বলবো যে তিনদিনের মধ্যে যদি শ্রাবণের জ্ঞান না আসে তাহলে সে
উজান আর বলতে পারে না আবার সন্ধিকে চেপে ধরে কান্না শুরু করে দেয়
সন্ধিঃ চুপ চুপ চুপপপপ,,,আর কাঁদে না,,দেখ তুই এরকম করে কাঁদলে তো হিয়া ভয় পাবে আরো,,তুই কি চাস হিয়া আবার ভয় পেয়ে কিছু করে বসুক
তুষারঃ আর তোর কি মনে হয় সৃষ্টিকর্তা এ-তোই নির্দয়,এ-তোই মায়া দয়াহীন যে এই অনাথ নিষ্পাপ বাচ্চা টার সাথে এতো বড় অন্যায় করবে,,প্লিজ নিজেকে কন্ট্রোল কর
উজানঃ আমি হিয়াকে বলতে পারবো না সন্ধি যে ডক্টর শ্রাবণকে
সন্ধিঃ আচ্ছা আচ্ছা চুপ,,তোকে বলতে হবে না আমি হিয়াকে বুঝিয়ে বলবো,,হিয়াকে এই কথা গুলো বলার দায়িত্ব আমার ঠিক আছে,,এখন তুই একটু শান্ত হ,,দেখ তোর শরীরের অবস্থা টাও তো বেশি ভালো না এরকম করলে তো তুই ও ভেঙে যাবি,,আর এরকম করে কাঁদে না সোনা,,চুপ কর না চুপ
!
!
!
হিয়াকে বোঝানোর এক বিরাট দায়িত্ব কাঁধে আসে সন্ধির,,বড় বোন হিসাবে সে দায়িত্ব টাকে সাবলীল হাতে পালন করতে কোনো কমতি রাখে না সন্ধি,,সেন্স ফিরে সবটাই মেনে নেয় হিয়া যা ঘটার তা ঘটে গেছে এখন যা ঘটবে সেটাকে ওকে সামাল দিতে হবে,,৭২ঘন্টা পর কি হবে হিয়া জানে না কিন্তু এই ৭২ঘন্টাতে যদি শ্রাবণের সুস্থ হবার এক শতাংশ ও সম্ভাবনা থাকে তাহলে সে সেই মনোবল নিয়েই সবটা সহ্য করতে রাজি_______শ্রাবণকে কেবিনে শীফট করার পর সবাই এক এক করে শ্রাবণকে দেখে যায়,,ডক্টর পেশেন্ট এর কাছে এতো ভীড় এলাও না করায় সন্ধি, ঝিনুক তুষার আর বাকি সবাইকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় যদিও ঝিনুক হিয়াকে ছেড়ে কোথাও যেতে চায় না কিন্তু সন্ধির এক প্রকার অনুরোধে যেতে বাধ্য হয়,,
!
!
!
আজ প্রায় দুদিনের কাছাকাছি হয়ে আসছে শ্রাবণের অপারেশন হবার,,কিন্তু এই দুদিনে শ্রাবণের মাঝে কোনো রেসপন্স করতে দেখা যায় নি,,মাথা টা পুরো সাদা ব্যান্ডেজ দিয়ে মোড়ানো,,পেটের কাছে সেলাই যা কাপড়ের আড়ালে ঢেকে আছে,,হাত পা অক্ষত থাকলেও বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকানোর সাহস কারো হয়ে উঠছে না,,মলিন মুখ টা আজ দুদিন যাবৎ চোখ বন্ধ করে আছে,,হাতে ক্যানুলা লাগিয়ে চলছে এখনো আরেক ব্যাগ রক্ত দেবার কাজ,,খাবারের জন্য নাকের মধ্যে পাইপ লাগানো রাখা,,অপবিত্র জিনিস নির্গত হতে নিচে ঝুলছে ক্যাথেটার_____এই দুদিন থেকে হিয়া বসে আছে শ্রাবণের মাথার কাছের টুল টার উপরে,,চোখে নেই ঘুম না আছে শরীরে কোনো ক্লান্তি,,সাথে নেই মুখে কোনো বাক্য না কোনো শব্দ,,আছে শুধু মন জুড়ে এক রাশ আত্ম নাদ আর ভয়,,কপাল জুড়ে এক ভয়ানক চিন্তা-প্রিয় ভাইটাকে আবার বুকে আগলে নিয়ে বাঁচার আশা____এই দুদিন উজান সন্ধি ঝিনুক তুষার সাব্বির সবাই যে যেভাবে পেরেছে হিয়ার সাথে কথা বলতে চেষ্টা করেছে কিন্তু হিয়া কারো সাথে কোনো কথা বলেনি,,সবাই যা যা বলেছে তা শুধু কান দিয়ে শুনে গিয়েছে,,এমনকি ডক্টর এসে এসে শ্রাবণকে দেখে যাবার সময় উজানকে যা বলেছে তা শুনতেও সে প্রয়োজন বোধ করেনি,,এক দৃষ্টিতে অপলক তাকিয়ে আছে তার এই ভাই টার দিকে,,উজান এসে এসে পুরো সময় টা হিয়ার পাশে বসে হিয়াকে বুকে আগলে ছিলো কিন্তু এই দুদিন হিয়ার সাথে তার কোনো প্রকারের কোনো কথা হয়নি,,একটা টু শব্দ অবধি না,,এই দুদিনে হিয়া যে ভেঙে গিয়ে উজানের শার্টের কলার চিপে কান্না করেছে এমনটাও না,,সে তো পুরো শক্তপোক্ত একটা পাথরে পরিণত হয়েছে যেনো!!
!
!
!
আজ শ্রাবণকে দেখতে তার চাচ্চু রংপুর থেকে ছুটে আসে,,হিয়া তখন উজানের বুকে মাথা রেখে রোজকার মতো পাথরের মতো বসে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে ছিলো,,চাচ্চুর কন্ঠে টুকটুকি ডাক শুনতেই হিয়া চোখ তুলে সামনে তাকাতেই দেখে ওর চাচ্চু দাঁড়িয়ে আছে,,উজান উঠে দাঁড়িয়ে ওনাকে ভেতরে আসতে বলে,,চাচ্চু আলতো পায়ে হেঁটে এসে শ্রাবণের কাছে গিয়ে শ্রাবণের মুখে আলতো করে হাত ছুঁইয়ে দিতে চোখ দিয়ে পানি বের করে ফেলে,,এদিকে এসে হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই হিয়া দুদিন পর আবার সেই কান্নায় ভেঙে পড়ে,,হিয়ার কান্নার সাথে এবার অঝোরে কাঁদতে থাকে উজান চাচ্চু দুজনই,,চাচ্চু হিয়াকে শান্ত করতে চেষ্টা করে,,উজান হিয়ার মাথায় হাত রাখে কিন্তু কিছুতেই হিয়া চুপ করে না
চাচ্চুঃ চুপ মা,,চুপ___তুই এভাবে ভেঙে পড়লে যে চলবে না মা তোকে তো-তোকে তো শক্ত থাকতে হবে,,তুই এরকম করে হাল ছাড়লে বাচ্চা টার কি হবে মা
হিয়াঃ আমি আর পারছি না চাচ্চু,,এতো পরীক্ষা আমার আর সহ্য হচ্ছে না,,সৃষ্টিকর্তা তো আমার সব কেঁড়ে নিয়ে আমাকে পুরো নিঃস্ব করে দিয়েছিলো পুরো অনাথ বানিয়ে দিয়েছিলো সব কেঁড়ে নিয়েও কি ওনার শান্তি মিটেনি কেনো আজ আমার বাচ্চা টার সাথে এরকম হলো চাচ্চু কেনো??
চাচ্চুঃ চুপ না মা,,এভাবে কাঁদতে থাকলে তো তোর শরীর পরে যাবে টুকটুকি,,,এই দেখ আমি কিন্তু রাগ হচ্ছি,,আর কাঁদবি না বল
হিয়াঃ তুমি বলো না চাচ্চু শ্রাবণ উঠবে তো আবার,,উঠে আবার আমার কোলে আসবে তো,,ও চাচ্চু বলো নাআআ
চাচ্চুঃ উঠবে মা উঠবে,,উঠতে যে ওকে হবেই!!তোর জন্য ওকে উঠতে হবে রে মা শুধু তোর জন্য,,
চাচ্চু হিয়াকে বোঝাতে থাকলেও হিয়া যেনো আবার অবুঝ হয়ে উঠে,,চাচ্চু হিয়ার এই কান্না সহ্য করতে পারে না,,প্রায় ঘন্টাখানেকের মতো চাচ্চু হিয়ার সাথে থাকে ওদিকে বাড়িতে কাজ থাকায় ওনাকে আবার সেই ৮ঘন্টা জার্নি করে এখন রংপুর পৌঁছাতে হবে তাই উনি আর বেশি সময় হিয়াকে দিতে পারছে না
চাচ্চুঃ আমি আসবো টুকটুকি মা,,কাল আমি আবার আসবো,,আজ খবর টা শোনার পর আমি না জানিয়ে দোকান গুলো সব খোলা রেখে চলে এসেছি তুই তো জানিস মা আমি না থাকলে ওদিকে
হিয়াঃ তুমি তুমি কাল আসবে তো বলো আমাকে
চাচ্চুঃ আসবো মা,,এই এই টাকা গুলো তোর কাছে রাখ এতে ঔ লাখ ৪এর মতো কিছু আছে,,আমি আমি তোর বন্ধু দের কাছে শুনে যাচ্ছি আর কতো খরচ লাগবে আমি কাল বাকিটা একসাথে করে নিয়ে আসবো ঠিক আছে
হিয়াঃ ৪লাখ টা-কা!!কিন্তু এ-তো টাকা তুমি কোথায় পেলে চাচি চাচি জানে তুমি,,না না আমি কি করে তোমার এই টাকা
চাচ্চুঃ আমার এতে বেশিকিছু নেই মা,,এগুলো সব তোর দাদুর টাকা,,উনি শ্রাবণের কথা শুনে নিজে থেকে আমাকে দিয়ে বললো তোর হাতে দিতে
হিয়াঃ দাদু বলেছে!!
চাচ্চুঃ হ্যা রে মা,,দেখলি তো বাবা যেই রাগে ভাইয়াকে আর তোর মা’কে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো আজ সেই ভাইয়ার ছেলে গিয়ে কেমন তোর দাদুকে নরম করে দিলো,,তুই চিন্তা করিস না মা আমাদের শ্রাবণের কিচ্ছু হবে না আমাদের শ্রাবণ তো একদম ভালো ছেলে ওর কিছু হতে পারে বল
হিয়াঃ তুমি এখুনি যাবে আর একটু থাকো না কিছুক্ষণ
চাচ্চুঃ সময় নেই মা,,আমি আসবো কাল ঠিক সকালের গাড়িতে চলে আসবো__এ কে তোর বন্ধু??
উজানঃ (এগিয়ে এসে)জ্বী আঙ্কেল আমি হিয়ার বন্ধু
চাচ্চুঃ ওকে একটু দেখে রেখো বাবা,,শুনলাম দুদিন থেকে না খেয়ে আছে ওকে একটু কিছু খাওয়ানোর ব্যবস্থা করো
উজানঃ আমরা অনেক চেষ্টা করছি আঙ্কেল হিয়া কথা শুনছে না
চাচ্চুঃ তবু চেষ্টা করো বাবা একটু,,আমি আজ আসছি কাল আমি ঠিক আসবো,,ততোক্ষণে ওকে একটু দেখে রেখো__কে আছে বাহিরে ওদেরকে একটু বলো না আমাকে রিসিপশনে বিল কাউন্টারে নিয়ে যেতে
উজানঃ আঙ্কেল সব বিল দেওয়া হয়েছে শুধু আজকের টা এখনো হয়নি,,মানে আমরা কেউ সময় পাইনি তাই জন্য
চাচ্চুঃ আজকের বিল টা আমাকে দিতে দেও বাবা,,এই টুকু করতে দেও দয়া করে নাহলে যে সারাজীবন ভাইয়া আর ভাবীর কাছে আমাকে অপরাধী হয়ে থাকতে হবে এমনিতেও নিজেদের অপরাধের তো কোনো কমতি নেই আমাদের
উজান মাথা নাড়িয়ে সম্মতিসূচক হুম বলে বাহির থেকে তুষারকে ডেকে বলে চাচ্চুকে রিসিপশনে নিয়ে যেতে,,চাচ্চু যাবার আগে হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে হিয়াকে উজানের হাতে তুলে দেয়,,উজান হিয়াকে ওর বুকে জড়িয়ে ধরে হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে হিয়াকে শান্ত করতে চেষ্টা করে
উজানঃ চুপপ,,হিয়া___আর কাঁদে না,,দেখি তাকাও আমার দিকে,,এই মেয়ে আর কাঁদে না তো
হিয়াঃ আজ তো দুদিন হয়ে আসছে উজান আর কখন আমার বাচ্চা টা চোখ খুলে আমার দিকে তাকাবে,,আর কখন উজান আর কখন??
উজানঃ তাকাবে হিয়াপাখি আমাদের শ্রাবণ আমাদের দিকে তাকাবে,,তুমি একটু ধর্য্য ধরো,,ও তো সারাদিন খেলে তাই জন্য খুব ক্লান্ত হয়ে ঘুমে আছে ক্লান্তি টা কমলে দেখবা আবার উঠে বলবে বুবু আমাকে ভালো ভাইয়ার কাছে নিয়ে যাবি না আজ,,ঔ বুবু ঔ
হিয়াঃ আপনি সত্যি বলছেন তো,,শ্রাবণ শ্রাবণ উঠে আবার আমাকে বুবুনি বলে ডাকবে,,আবার আমাকে বুবু বুবু বলে ডেকে আমার কোলে আসবে,,বলবে বুবু খিদে পাইছে তো তাড়াতাড়ি ভাত দে,,বুবু বিকেলের আযান দিছে তো এবার আমি খেলতে যাই,,তারপর তারপর বলবে বুবু আজকে স্কুলে এটা হইছে ওটা হইছে,,বলবে শ্রাবণ আমাকে,,ও উজান বলুন না বলবে তো
হিয়ার প্রশ্নের উত্তরে উজান শুধু হিয়াকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে যায় কারণ হিয়ার এই প্রশ্ন গুলোর ঠিক কি উওর দেওয়া যায় উজানের এই মুহুর্তে জানা নেই,,উজান মনে পাথর চাপা দিয়ে অনেক কষ্টে নিজের চোখের জল গুলো লুকিয়ে হিয়াকে উওর দিয়ে যাচ্ছিলো,,
উজানঃ হুম সব বলবে শ্রাবণ,,সব,,দেখি তুমি এখন একটু এ-ই খাবার টা খাও তো
হিয়াঃ না আগে শ্রাবণ উঠবে তারপর আমরা একসাথে খাবো
উজানঃ কেনো কথা শুনো না তুমি আমার
হিয়াঃ না আমি শুনি তো আপনার সব কথা,আগে শ্রাবণ উঠুক তারপর আমরা খাবো ঠিক আছে
উজান হিয়াকে কিছুতেই খাবারের জন্য কনভেন্স করতে পারে না,,শুরু হয় আবার সেই হিয়ার সব বোকা বোকা কথা,,উজান হিয়ার এই মানসিক অস্থিরতা নিতে পারে না,,ওদিকে আবার তুষার ডাকতে শুরু করে চাচ্চু চলে যাচ্ছে কথা বলার জন্য,,উজান সন্ধির হাতে হিয়াকে তুলে দিয়ে তুষার সহ চাচ্চুকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আবার ফিরে আসে,,কিন্তু কেবিনে ঢুকতেই সে দেখে হিয়া আবার সন্ধির বুকে মুখ রেখে অঝোরে কাঁদছে খুব কাঁদছে,,উজান হিয়ার এই কান্না নিতে পারে না,,সব কিছুর জন্য ওর নিজেকে দায়ী মনে হতে থাকে,,এতোটা অসহায় এতোটা হেল্পলেস ওর কখনো এর আগে ফিল হয়নি,,উজান ভেতরে ঢুকবার সাহস যোগাতে পারে না,,বাহিরে রাখা চেয়ার গুলোতে বসে পড়ে,,
উজানঃ হ্যা মা বলো
বাসবিঃ কি হয়েছে বাবা তোর,,তুই সত্যি করে বল তো তুই ওখানে ঠিক আছিস তো?দুদিন ধরে কিসের জন্য এতো টাকা লাগছে তোর,,ওদিকে কোনো বিপদআপদ হয়নি তো না আবার??
বাসবির প্রশ্নের উওরে উজান ঘটনা সব খুলে বলে,,আর বলতে গিয়েই কেঁদে উঠে
উজানঃ কালকের মধ্যে যদি বাচ্চা টার জ্ঞান না ফিরে তাহলে ওকে আর,,
বাসবিঃ এতো কিছু হয়ে গেলো তুই আমাকে একটা বারো জানানোর প্রয়োজন অবধি মনে করলি না,,আমি আসি একবার তোর বাবাকে নিয়ে ঢাকা আজ??
উজানঃ না মা,,হিয়ার মানসিক অবস্থা এখনো ভালো না,,যদি তোমাদেরকে আমার দরকার হয় আমি ডেকে নেবো নিজে থেকে,,আপাতত বাড়িতে কিছু বলার প্রয়োজন নেই
বাসবিঃ আচ্ছা ঠিক আছে তুই কিন্তু সাবধানে থাকিস,, আর ডক্টর রা কি বললো আমাকে জানাস,,হিয়ার খেয়াল রাখিস
উজান হুম বলে ফোন রেখে দিতেই তুষার এসে উজানের পাশে বসে
তুষারঃ এ-ই ব্যাগ টা শ্রাবণের আমার কাছে ছিলো,,ধর___হিয়াকে সময় আর পরিস্থিতি বুঝে দিয়ে দিস___আমি একটু বাড়ি থেকে আসছি,,এই যাবো আর আসবো
উজানঃ আচ্ছা তাড়াতাড়ি আসিস
তুষারঃ হিয়ার জন্য কিছু খাবার আনবো,,মা বললো?
উজানঃ কালকের খাবার গুলোই তো পড়ে আছে খাচ্ছে কোথায় আর ও
তুষারঃ আচ্ছা দেখ কি করবি,,কিছু আনতে হলে ফোন দিস আমি আসার সময় নিয়ে আসবো
উজানঃ হুম
তুষার উঠে চলে যায়,,উজান তখনো ঔ চেয়ারে বসে কেবিনে যাওয়ার সাহস ওর হচ্ছে না,,শ্রাবণের ব্যাগ টা কোলের কাছে নিয়ে সেটাকে সে নাড়াচাড়া করছে,হঠাৎই ব্যাগ টা নাড়াচাড়া করতে করতে উজান ওর মনের অজান্তেই ব্যাগের চেইন টা খুলে শ্রাবণের বই খাতা গুলো ঘাটতে শুরু করে,,আর ঘাটতে ঘাটতে এক পর্যায়ে শ্রাবণের ড্রয়িং খাতা টা হাতে আসতে উজান সব রেখে ওটাকে খুলে,,আর খুলতেই বিভিন্ন ড্রয়িং এর মাঝে ওর চোখ আঁটকে যায় একটা পৃষ্ঠায়,,যেখান শ্রাবণ তার ভালো ভাইয়া তার বুবু আর তাদের মাঝে নিজের একটা ছবি এঁকে সেখানে বড় বড় করে লিখে দিয়েছে এটা আমার ভালো ভাইয়া এটা আমি আর এটা আমার বুবুনি❤️___ছবিটার দিকে আঙ্গুল দিয়ে হাত ছুঁইয়ে দিতেই উজানের কলিজাটা শূন্য হয়ে আসে,,সব কিছু কেমন জানি একটা দম বন্ধের মতো লাগতে শুরু করে তার,,শুধু ছবি না শ্রাবণ ছবির নিচে অনেক কিছু লিখে রাখছে যেগুলো পড়েই উজান এবার নিজের যে একটু শক্তি বাকি ছিলো সেটাও হারিয়ে বসে,,শ্রাবণের লেখা গুলো এরকম ছিলো যে ভালো ভাইয়া তার বাবা আর হিয়া বুবুনি হচ্ছে তার মা,,আমার ভালো ভাইয়া আর বুবুনি হচ্ছে সবার সেরা,,আল্লাহ আমি তোমাকে আমার সব চকলেট দিয়ে দেবো তাও তুমি আমার ভাইয়া আর বুবুকে ভালো রেখো,,আমি আর বুবুনি যেনো সারাজীবন ভালো ভাইয়ার সাথে থাকতে পারি,,আমার ভালো ভাইয়া আমাকে খুব আদর করে ঠিক বুবুর মতো!!
কথা গুলো পড়ে উজান আর থাকতে পারে না,,আশেপাশে কে আছে না আছে লক্ষ্য না করেই সে খাতা টা জড়িয়ে কেঁদে ফেলে,,অঝোরে কাঁদতে থাকে,,দেওয়ালের ওপাশে হিয়া সন্ধিকে জড়িয়ে কাঁদছে আর দেওয়ালের এপাশে উজান কাঁদছে শ্রাবণের ব্যাগটাকে জড়িয়ে,,তাদের মনের আজ একটাই চাওয়া যে করে হোক তাদের বাচ্চা টা যেনো আবার আগের মতো সুস্থ হয়ে যায়,,আবার আগের মতো তাদের কোল জুড়ে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয়!!