মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 ইভা রহমান Part-52

0
929

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

ইভা রহমান

Part-52

জীবনের রঙীন পাতার ভাঁজে কখনো এসে আচমকাই দেখা মিলে কিছু কালো অধ্যায়ের,,অধ্যায় টা যেমন হয় অন্ধকারে বিলীন তেমনি সেই কালো গহব্বরের গভীরতা এতোটাই প্রকট হয়ে যায় যে সেই খাদ থেকে উঠা আসা যেমনি সময়ের অপেক্ষা রাখে তেমনি সেখানে থাকে দূর্গম পথের মতো কিছু বিষাদ অনুভূতির তিক্ততা,,

উজান হিয়ার রঙীন জীবনের এ-ই মুহুর্তে এসে এরকমই কিছু তিক্ততার বেড়া জালে তাদের আটকা পড়তে হবে এটা তারা কল্পনাতেও আনতে পারি নি,,তাদের হাসিখুশি বন্ধুত্বের সম্পর্কে এভাবে একটা বিষাদময় প্রাচীর এসে জায়গা করে নিবে এটা তাদের কাছে ছিলো সত্যি অকল্পনীয়,,যার শুরু টা হয় ঝিনুক আর সাব্বিরের এ-ই কয়েকদিনে গড়া ওঠা একটা মিষ্টি সম্পর্কের বিচ্ছেদের মধ্যে দিয়ে,,

সেদিন সাব্বির যখন ঝিনুককে আলাদা করে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলো তখন সাব্বির কিছুটা সময় ক্যাম্পাসের পেছনে যেই লেক টা আছে তার পাশে বসে ঝিনুক সহ একটা সুন্দর পড়ন্ত বিকেলের পুরাটা উপভোগ করতে ব্যস্ত ছিলো,,যদিও তখনো কেউ মুখে স্বীকার করে নি তারা একে অপরকে ঠিক কতোটা ভালোবাসে,,সাব্বির গত পরশু তার সেই মনের অব্যাক্ত কথা টাই বলতে ঝিনুককে তার বাসার পেছনে যে-ই রেস্টুরেন্ট টা ছিলো ওখানে ডেকে পাঠায়,,সে ঠিক করে আজ সে ঝিনুককে নিজের মনের কথা টা বলবে,,ঝিনুকো আজ একটা নীল শাড়িতে নিজেকে সাজিয়ে নিয়ে রওনা দেয় সেই পথে আর সাব্বিরকে বলে হলুদ কোনো পাঞ্জাবি পড়ে আসতে,তার নাকি আজ নিজেকে রুপা রুপা ফিল হচ্ছে আর সাব্বিরকে তার হিমু💙💛কিন্তু ঔ যে ভাগ্য সব সময় আমরা যা চাই যা ভাবি তা হয় কোথায়,,সাব্বির ঝিনুককে কিছু বলার আগেই সেখানে এসে জড়ো হয় ঝিনুকের বড় ভাই সহ বড় দুলাভাই,,আর শুরু হয় তাদের নির্মম তান্ডব,,যেই তান্ডবে যেই ঝড়ে রেস্টুরেন্টের সব কিছু তো তছনছ হয়ই সাথে সাব্বিরকে তারা মেরে এমনই অবস্থা করে দেয় যে সাব্বিরের বাঁচা মরা পুরোটাই এখন নির্ভর করছে সৃষ্টিকর্তার উপর,,
!
!
ওটির বাহিরে সবাই একটা শূন্য বুকে দাঁড়িয়ে আছে,,কি থেকে কি হ’য়ে গেলো কারো কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না,,সাব্বিরকে যে করে হোক বাঁচিয়ে ফেরাতে হবে এটাই এখন মুখ্য তাদের কাছে,,হিয়ার বুকে মাথা রেখে চুপ হয়ে আছে উজান,,কথা কি করে বলতে হয় যেনো সে জানে না,,

হিয়াঃ সব ঠিক হ’য়ে যাবে,,আপনি প্লিজ একটু কথা বলুন আমার সাথে,,এভাবে চুপ করে থাকবেন না,,উজানন

উজানঃ ঝিনুক কি ফোন তুলছে না হিয়া?

হিয়াঃ আমি তো চেষ্টা করে যাচ্ছি তখন থেকে কিন্তু ওর সব নাম্বার বন্ধ বলছে,,আপনি প্লিজ এখন একটু স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করুন,,ভাইয়ার কিচ্ছু হবে না আমি বলছি তো,,

উজান একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে হিয়ার বুক থেকে মুখ তুলে ওটির বাহিরে পায়চারি করতে শুরু করে,,সবার মনে শুধু এখন একটাই প্রার্থনা সাব্বিরের সুস্থতা,,ওটি শেষে সাব্বিরকে ডক্টর সারিয়ে তুলে ঠিকই কিন্তু এদিকে একরাতের মধ্যে ঝিনুকের বিয়ে ব্যাপারটা যেনো মেনে নিতে অনেক বেগ পেতে হয় হিয়াকে,,ঝিনুক দুপুরের মাঝামাঝি সময়ে হিয়াকে ফোন করে একবার ওর বাড়িতে আসতে বলে,,হিয়া কোনো বিলম্ব না করে সেই মুহুর্তে উজানকে নিয়ে ঝিনুকদের বাড়িতে আসে আর এসে যা দেখতে পারে তা যেনো হিয়ার চোখ বিশ্বাস করতে পারে না,,বধু বেশে বসে আছে ঝিনুক,,বিয়েটাও হয়ে গেছে তার,,এরপর কি হবে হিয়ার জানা নেই,,হিয়া অস্থির,চোখেমুখে এক অন্য রকম ভয় কাজ করছে,,কি বলতে কি বলবে সব কথা যেনো দলা পাকা হয়ে তীরের মতো গেথে যাচ্ছে তার গলার কাছে ,,

হিয়াঃ কি হয়েছে তোর,,তুই আমাকে এভাবে কেনো ডাকলি,,আর তোর বিয়ে হয়েছে মানে,কিসের বিয়ে,,তুই তুই এরকম বউ সেজে কেনো বসে আছিস ঝিনুক,,কথা বল

ঝিনুকঃ আমার কিছু করার ছিলো না হিয়া,,আমি বাধ্য হয়ে__ওসব ছাড় সাব্বির ভাইয়া এখন কেমন আছে,,উনি উনি ঠিক আছে তো,,ভাইয়ারা তো ওনাকে মেরে মেরে,,আমি শুনলাম তোরা ওনাকে নিয়ে হাসপাতলে,,উনি এখন ঠিক আছে তো কি বললো ডক্টর,,

উজানঃ সাব্বির এখন কিরকম আছে সেটা বড় বিষয় না ঝিনুক,,তুমি এটা কি করলে সেটা বলো আমাকে,,তুমি কি করে সাব্বিরকে রেখে__না না ঝিনুক এটা তুমি ঠিক করো নি__কি সমস্যা তোমার বলো আমাদের আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে কথা বলবো তোমার প্যারেন্টসের সাথে,,বলো আমাকে

ঝিনুকঃ এখন আর কথা বলে কোনো লাভ নেই ভাইয়া,যা শেষ হবার তা শেষ হ’য়ে গেছে,,আমাকে আপনারা ক্ষমা করে দিবেন

হিয়াঃ ক্ষমা করে দেবো মানে,এখানে ক্ষমার প্রশ্ন কোথায় থেকে আসছে,,ঝিনুক এদিকে দেখ,,আমার দিকে তাকা__কি হয়েছে তোর এভাবে তুই হুট করে কেনো বিয়ে করি নিলি কেউ কি তোকে জোর করে,,

ঝিনুকঃ এ-ই বিয়ে টার সাথে অনেকের অনেক কিছু জড়িয়ে আছে হিয়া,এ-ই বিয়ে টা না করলে বড় আপুর সংসার টা,,

হিয়াঃ এখানে বড় আপু কোথায় থেকে আসলো তোর বিয়ের সাথে ওনার কি সাধ,,,,আমি এতো কিছু বুঝতে চাই না ঝিনুক,,আমি তো জানি তুই সাব্বির ভাইয়াকে কতো টা ভালোবাসিস তুই ভাইয়া ছাড়া কি করে অন্য একজনকে

ঝিনুকঃ আমি ভাইয়াকে কখনো কোনো কথা দেই নি হিয়া যে আমি ওনাকে রেখে,,তুই এই চিঠি টা ওনার হাতে দিবে দিয়ে বললি আমি ওনাকে সব ভূলে নতুন করে ওনার জীবনটা সাজিয়ে নিতে বলেছি,,

হিয়াঃ চাইলে নতুন করে সব শুরু করা যায় না ঝিনুক,তুই তো ওনাকে ভালোবাসতি,,

ঝিনুকঃওটাকে ভালোবাসা বলে না হিয়া,,

হিয়াঃ ভালোবাসা বলে না তো কি বলে,,বোঝা আমাকে,,না তুই এ-ই কথা গুলো মন থেকে বলছিস না আমি জানি,,আমি আমি কি গিয়ে কথা বলবো তোর মা’র সাথে বল আমাকে

উজানঃ ঝিনুক এভাবে সব শেষ হতে পারে না,,সাব্বির তোমাকে কাল ভালোবাসি কথাটা বলতেই কিন্তু

ঝিনুকঃ জানি না ভাইয়া কাল সাব্বির ভাইয়া কেনো আমাকে ডেকেছিলেন,,আপনি ভাইয়াকে বলবেন যদি কখনো সম্ভব হয় আমাকে ক্ষমা করে দিতে,,ওনার সাথে কাটানো এ-ই কিছুদিনের মুহুর্ত গুলো আমি হয়তো কখনো ভূলতে পারবো না,ওগুলো থাক আমার মনে জড়িয়ে কিন্তু আমার সাথে জড়াতে গিয়ে উনি আজ জীবন মরন নিয়ে লড়ছে কাল যদি(বলতে বলতে ঝিনুক এবার অঝোরে কেঁদে ফেলে) ,,,আপনারা ওনাকে ভালো থাকতে বলবেন,,আমি হয়তো কখনো ওনার যোগ্য ছিলাম না,,

হিয়াঃ না ঝিনুক এটা হতে পারে না,,তুই এ-ই বিয়ে করে সুখী হবি না আমি তোকে বলছি,,

ঝিনুকঃ সবসময় সুখী হবার জন্যেই কি আমরা সম্পর্ক তৈরি করি হিয়া,,কখনো অন্যের সুখের জন্য আমাদেরকে___বাদ দে ওরা হয়তো আমাকে নিয়ে কানাডা শীফট করবে আমার বাকি পড়াশোনা হয়তো আমাকে বাহিরে গিয়েই

হিয়াঃ কানাডা শীফট করবে মানে!!না ঝিনুক তুই আমাকে রেখে কোথাও যাবি না,,আমি আমি তোকে ছাড়া কি করে থাকবো,তুই না থাকলে ভার্সিটিতে আমার মন বসবে বলে তোর মনে হয়,,ঝিনুক তোকে আমি হারাতে পারবো না,,প্লিজ আমাকে আর পরীক্ষার মধ্যে তুই ফেলে দিস না,,

ঝিনুকঃ আমাকে ক্ষমা করে দিস হিয়া,আমি নিরুপায়,,

হিয়াঃ উজান আপনি ওকে একটু বুঝান না ও কেনো,,না ঝিনুক তুই আমাদের রেখে,,ও উজান আপনি ওকে কিছু বলুন না,,

উজান হিয়াকে শান্ত করে ঝিনুককে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঝিনুকের বড় ভাইয়ারা এসে যা নয় তাই বলে হিয়া আর উজানকে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়,,হিয়া ঝিনুকের মা’র হাত পা পর্যন্ত ধরে বলে তার মেয়ে এই বিয়েতে সুখী হবে না কিন্তু তারা সবাই হিয়া আর উজানের কথা শুনতে নারাজ,,ঝিনুকো হিয়ার এ-ই অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজেও বলে দেয় হিয়া তুই চলে যা,,কিন্তু হিয়ার মন কিছুতেই ঝিনুককে ছেড়ে আসতে চাইছে না,,চাইবেই বা কি করে যে মানুষ টা নিজের সব দিয়ে হিয়াকে সবসময় আগলে আগলে রেখেছিলো আর আজ তার এতো বড় বিপদে হিয়া কি না,,হিয়াকে সামলানো উজানের পক্ষে কঠিন হ’য়ে যায়,,হিয়ার নিজের কাছে নিজেকে ছোট লাগতে শুরু করে,,ঝিনুকের জন্য কিছু করতে না পাবার কষ্ট যেনো তার ভেতর টাকে পুরো মোছড়ে শেষ করে দিচ্ছে,,

হিয়াঃ আমি ঝিনুকের কাছে যাবো উজান,,আমার কিছু ভালো লাগছে না,আপনি আমাকে নিয়ে যান না ওর কাছে

উজানঃ হিয়াআ এরকম করে না পিচ্চি,,,ঝিনুকের তো বিয়ে হ’য়ে গেছে এখন আমরা চাইলেও আর,,

হিয়াঃ ঝিনুক নিজের ইচ্ছেয় বিয়ে টা করে নি উজান,,আপনি শুনলেন না ও কি বললো ও বাধ্য হয়ে,,ঝিনুক ভালো নেই উজান,,আপনি আমাকে ওর কাছে নিয়ে যান,,যান না নিয়ে,,

উজানঃ ঝিনুক না আসতে চাইলে আমি তো ওকে জোর করতে পারি না হিয়া,,আর তুমি দেখলে না ওরা কিভাবে আমাদের বের করে দিলো,আমরা আবার গিয়ে কিছু বলতে চাইলে উনাদের সব রাগ ঝিনুকের উপর গিয়ে পড়বে তুমি কি চাও যে ওরা ঝিনুককে,,,,

হিয়াঃ আমি কি ঝিনুকের জন্য কিচ্ছু করতে পারবো না উজান,কিচ্ছু না

উজানঃতোমার যেটুকু করার তুমি তো করলে এরপর আর তুমি কি করে,,আমি শুধু ভাবছি আমি কি করে এ-ই কথাটা সাব্বিরকে গিয়ে বলবো যে ঝিনুক বিয়ে করে,,

হিয়াঃ এ-ই বিয়েতে ঝিনুক কখনো সুখী হতে পারবে না উজান,,না পারবে সাব্বির ভাইয়া ঝিনুককে ভূলতে,,,,এমনটা তো হবার ছিলো না উজান,,তাহলে আজ এমনটা কেনো হলো উজান কেনো,সব কিছুর জন্য আমার নিজেকে দায়ই মনে হচ্ছে,,মনে হচ্ছে আমার জন্য আজ

উজানঃ নাআ হিয়া,,তোমার কোনো দোষ নেই,,সব কিছু তো আমাদের হাতে নেই নাআআ,,চুপ করো না তুমি একটু,,

উজান আর কিছু বলতে পারে না,,গলা ধরে আসে তার,,হিয়াকে শান্ত করে উজান হিয়াকে নিয়ে হসপিটালে ফিরে আসে,,কিন্তু এরপর!

!
!

আজ প্রায় এক মাস পর,,সাব্বির এখন পুরোপুরি সুস্থ নাহলেও অনেকটা সুস্থ,,তবে মনের ক্ষত টা এখনো তার সেরে উঠতে পারে নি,,সারবেই বা কি করে সে তো ঝিনুককে সত্যি সত্যি তার মনের পুরোটা দিয়ে নিজের করতে চেয়েছিলো,,সাব্বির ঝিনুকের দেওয়া ধাক্কা টা সহ্য করতে পারে না সে ঠিক করে সে এসব কিছু থেকে বের হতে দেশে নয় বরং বাহিরে গিয়ে কিছুটা সময় কাটাবে,,উজান বা কারোরই সাব্বিরকে আটকানোর মতো মানসিকতা ছিলো না,,না সাব্বির তাদের আঁটকানো টা শুনতো,,এ-ই এক মাসে হিয়া অনেক কয়েকবার ঝিনুকের সাথে যোগাযোগ করতে তার বাড়িতে যায় কিন্তু প্রতিবারই তাকে সেখান থেকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়,,

বাড়ির ছাঁদঃ

তুষারঃ তুই কি আমাদের ছেড়ে সত্যি সত্যি বার্লিনে যাচ্ছিস তাহলে,,

সাব্বিরঃ তোরা সবাই এরকম করছিস যেনো আমি একবারে চলে যাচ্ছি,দুটা বছররেরই তো ব্যাপার,এসে যাবো

তুষারঃ হুম,,ওখানে গিয়ে আবার যোগাযোগ টা রাখতে ভূলে যাস না,,

সাব্বিরঃ না রে বাবা,,তোদের সাথে কথা না বলে কি আমি থাকতে পারবো বল তো,,রোজ স্কাইপে কথা হবে দেখা হবে,আর কি চাই,

সন্ধিঃ সামনাসামনি কথা বলা আর স্কাইপে বসে(তাচ্ছিল্যের সুরে),,,যাগ ছাড় ওসব,,তোরা বস আমি একটু নিচ থেকে ওয়াশরুম হয়ে আসছি___হিয়া চাবিটা

হিয়াঃ এ-ই নিন আপু,,

উজানঃ সন্ধি যাচ্ছিস যখন আমার ফোন টা নিয়ে গিয়ে চার্জে দিয়ে দে না,,

সন্ধিঃ দে,,আর কিছু লাগবে তোদের?

উজানঃ না,,ঔ রুপম কি বললো কখন আসবে?

সন্ধিঃ বললো তো দশ মিনিটের মধ্যে আসছে,,এখনো যে কেনো এলো না,,আচ্ছা তোরা বস আমি এসে ওকে নাহয় আরেকবার ফোন দিচ্ছি,,

উজানঃ না থাক আমি সাব্বিরের ফোন থেকে ট্রাই করি,,

সন্ধি হিয়ার থেকে চাবি আর উজানের থেকে ফোন টা নিয়ে নিচে আসে,,লক খুলে ভেতরে এসে প্রথমে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে যায়,,ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হতে যাবে ওমনি তার খেয়ালে আসে ফোনে চার্জ দেবার কথা,,সন্ধি গেট টা খোলা রেখেই টপ করে উজানের ফোন টা নিয়ে,উজানের রুমে এসে রুমের লাইট টা ওন করে,ফোন টা চার্জে দিবে বিধায় তার চার্জার খুঁজতে শুরু করে কিন্তু এ-ই চার্জার যে এখন কোথায় কে জানে,,

সন্ধিঃ আআ এখন এদের চার্জার কোথায় থাকে আমি কি করে জানবো,,আমারই ভূল,,ফোন টা নেবার সময় শুনে আসলে এ-ই ঝামেলায় পড়তে হতো না,,কোথায় খুঁজি এখন!

সন্ধি সব ড্রয়ার খুঁজে বেড সাইডের ড্রায়র থেকে চার্জার টা বের করে ফোন টা চার্জে দিয়ে বের হতে যাবে ওমনি রুপম এসে দাঁড়িয়ে যায় সন্ধির সামনে,,

সন্ধিঃ ও মা তুই এসে গেলি,,আমি তোকেই ফোন করতাম,,চল উপরে যা-ই,আজ সবাই ছাঁদের উপরে বসে আড্ডা দিচ্ছে,,আয়

সন্ধি বের হতে যাবে ওমনি রুপম সন্ধির এক হাত টেনে সন্ধিকে নিজের কাছে দাঁড় করিয়ে দেয়,,রুপমের চাহনি টা আজ ঠিক অন্যরকম লাগছে,সন্ধির কাছে রুপমের এ-ই চাহনি টা কেমন অপরিচিত লাগতে শুরু করে,,মুহুর্তে কেমন একটা ভয় এসে গ্রাস করতে থাকে সন্ধিকে,,

সন্ধিঃ কি হলো তুই এভাবে আমার হাত ধরলি কেনো,,কিছু বলবি?

রুপম কিছু না বলে সন্ধিকে নিজের আরো কাছে টেনে সন্ধির গালে আসা চুল গুলো সন্ধির কানের পাশে গুঁজে দেয়,,

সন্ধিঃ রুপম কি করছিস এসব,,দেখ কেউ এসে যাবে,আমাকে ছেড়ে দে,,

রুপমঃ তোকে ধরেও বা আমি কোথায় রাখতে পেরেছি সন্ধি,,

সন্ধিঃ রুপম(অস্ফুটে)__তুই এরকম বিহেভ কেনো করছিস,,রুপম তুই কি নেশা করছিস__এ-ই রুপম তুই তুই মদ খাইছিস?

রুপমঃ খাইছি আরো খাবো,,তোর কি,,,,,আমাকে ভালোবাসলে তোর কি খুব ক্ষতি হতো সন্ধি,,কেনো ভালোবাসলি না তুই আমাকে,,বল না কিসের জন্য তুই আমাকে রেখে তুষারকে,,

সন্ধিঃ রুপম দেখ,,এ-ই নিয়ে তো আমাদের সব কথা আগেও হয়ে গেছে তাই না বল,,তুই তো তুই তো নিজে থেকে সব মেনে নিয়েছিলি,তুই তো নিজে বলেছিলি যে তুই আর আমাকে,,

রুপমঃ সবসময় সব কিছু এ-ই আমাকেই কেনো মেনে নিতে হয় সন্ধি,আমি গরীব বলে,,তোদের মতো কোনো হাই স্ট্যাটাসের পরিবার থেকে আমি বিলং করি না বলে,,

সন্ধিঃ কিসব বলছিস তুই রুপম,,দেখ তুই আমাকে ভালোবাসিস সেটা জানার আগেই আমি তুষারের সাথে কামিটমেন্টে গিয়েছিলাম,,আমি আর তুষার তো আগে থেকেই

সন্ধিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রুপম সন্ধির উপর রাগে ঝারি নিয়ে উঠে,,সন্ধি ভয়ে পেছাতে গিয়ে বেডের কানিতে বাঁধা পেয়ে রুপম সহ বিছানার একপাশে পড়ে যায়,,সন্ধির রুপমকে দেখে এ-ই মুহুর্তে ভীষণ ভয় করছে,,সন্ধির হাত পা কাঁপছে,,চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই তার জল ঝরছে,,

রুপমঃ তুষার,তুষার তুষার কি আছে তুষারের যে তুই সারাক্ষণ তুষার তুষার করিস,,আমি যে সারাটাক্ষন তোদের সাথে থাকি তুই কি একবারো আমাকে দেখতে পারিস না সন্ধি

সন্ধিঃ রুপম আমার খুব ভয় করছে প্লিজ আমাকে যেতে দে,,তোর কি হয়েছে আজ তুই এরকম কেনো করছিস?

রুপমঃ আমি তোকে তুষারের মতো গাড়িতে করে নিয়ে বের হতে পারতাম না বলে,দামি রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়াতে পারতাম না বলে তুই আমাকে রেখে তুষারকে চুজ করেছিলি তাই না সন্ধি,,

সন্ধিঃ না রুপম তুই আমাকে ভুল ভাবছিস,,আমি কখনো এসব ভেবে তোকে,,প্লিজ আমাকে যেতে দে আমার তোকে দেখে আজ ভীষণ ভয় করছে রুপম,,ছাড় না রুপম আমাকে

বলতে বলতে সন্ধি ভয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে,,রুপমকে ধাক্কা দিয়ে উঠতে যাবে ওমনি রুপম সন্ধির হাত ধরে টান দিলে সন্ধির জামার একসাইড ছিঁড়ে আসে,,দু’জনেই এ-ই মুহুর্তে ভীষণ রকমের অবাক হ’য়ে যায়,,সন্ধি ভয়ে আরো কেঁদে উঠে,,রুপম সন্ধির থেকে মুখ ফিরে এপাশে দাঁড়িয়ে যায়,সে তো সন্ধির সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো সন্ধির কোনো অসম্মান করতে না,,রুপম নিজেও বুঝতে পারছে না তার কি হচ্ছে,,এদিকে সন্ধি দৌড়ে রুম থেকে বের হতে যাবে ওমনি সে গিয়ে ধাক্কা খায় তুষারের বুকে,,সন্ধির আসতে দেড়ি হচ্ছিল দেখে তুষার সন্ধিকে ডাকতে তখন নিচেই আসছিলো,,,তুষার সন্ধির মুখ দেখেই বুঝতে পারে নিশ্চয় ভেতরের রুমে কিছু একটা হয়েছে নাহলে তো সন্ধি এভাবে কান্না করার মেয়ে না,,তুষার ভালো করে খেয়াল করলে দেখতে পারে সন্ধির জামার এক পাশ ছিঁড়ে আছে,,তা দেখে তুষারের পুরো শরীরে যেনো রাগের বহ্নি শিখা দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে,,তুষার সন্ধিকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগে সন্ধি কাঁদতে কাঁদতে যখনি মুখ দিয়ে রুপমের নাম উচ্চারণ করে তুষার যেনো পুরো থ বনে যায়,এ-ই জঘন্য কাজ রুপম কি করে,,এদিকে রুপম সন্ধিকে সরি বলতে রুম থেকে বের হতেই তুষারের চোখ পড়ে রুপমের উপর,,রুপম কি রকম নেশা করে ঢুলছে,,তুষার আর নিজের মধ্যে থাকতে পারে না রাগের চোটে সন্ধিকে ছুঁড়ে দিয়ে রুপমের শার্টের কলার গিয়ে চিপে ধরে তিন চারটা ইচ্ছে মতো ঘুষি বসিয়ে দেয় রুপমের মুখে,,শুরু হয় দুই বন্ধুর মাঝে তৈরি হওয়া দেওয়ালের প্রথম গাঁথুনি,,সন্ধি কি করবে বুঝতে পারে না,,এরা দু’জন তো দু’জনকে মারতে মারতে শেষ করে দিবে আজ,,সন্ধি দু’জনকে থামাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়,,কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের ফোন থেকে সাব্বিরের নাম্বারে ফোন করতেই কেঁদে উঠে,,সন্ধির গলা শুনে সাব্বিরের বুঝতে বাকি থাকে না নিচে নিশ্চয় কোনো বড় ধরনের কিছু একটা হ’য়েছে,,সাব্বির এক ছুটে দৌড়ে নিচে আসে,,সাথে আসে উজান নিজেও,,হিয়া সব রেখে শ্রাবণকে নিয়ে নিচে নামতেই নিচের এ-ই ভয়াবহ ঝড়ের তান্ডবতা দেখে কেঁপে ওঠে,,সাব্বির গিয়ে রুপমকে আটকাতে শুরু করে আর উজান এসে তুষারকে,,হিয়া এসে সন্ধিকে জড়িয়ে ধরতেই সন্ধি হিয়া সহ নিচে ফ্লোরে বসে অঝোরে কেঁদে উঠে,,

সাব্বিরঃ পাগল হয়ে গেছিস তোরা,,মাথা কি পুরোই গেছে তোদের,,

উজানঃ কি এমন হয়েছে যে তোদের এভাবে একে অন্যের গায়ে হাত তুলে,,ছিঃ___হিয়া শ্রাবণকে নিয়ে অন্য রুমে যাও___কি হলো হিয়া কথা কানে যায় নি তোমার,,কি বললাম আমি,,যাও,,(উঁচু কন্ঠে)

হিয়াঃ আ আমি যাচ-ছি,,কিন্তু আপু

উজানঃ তুমি যা-ও,শ্রাবণ ভয় পাচ্ছে,,সন্ধিকে দেখতে হবে না আমি আছি ওর জন্য,,(গম্ভীর ভাবে)

উজানের রাগ দেখে হিয়া আর কিছু বলার সাহস পায় না,,শ্রাবণকে নিয়ে অন্য রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়,,এদিকে উজান এক গ্লাস পানি এনে সন্ধির দিকে বাড়িয়ে দিতেই সন্ধি ভয়ে উজানকে জাপ্টে ধরে আবার অঝোরে কাঁদতে শুরু করে,,

তুষারঃ তুই জানিস রুপম সন্ধির সাথে

রুপমঃ আমি কিছু করি নি সন্ধির সাথে,,

তুষারঃ একদম মিথ্যে বলবি না রুপম,আমি নিজ চোখে দেখেছি,,তুই

রুপমঃ তুই দেখার কে,,আমি সন্ধিকে ভালোবেসেছিলাম আমি ওর সাথে আলাদা কথা বলতেই পারি,,

সাব্বিরঃ(রুপমকে ঝাঁকি দিয়ে) মাথা ঠিক আছে তোর রুপম,,কিছুদিন পর তুষারের সাথে সন্ধির বিয়ে হবে আর এখন তুই কিনা আগের কথা তুলে,,

উজানঃ রুপম তুই নেশা করছিস,,এই ছেলে তুই তুই মদ খাইছিস?

রুপমঃ খবরদার আমাকে আর কোনো সিমপ্যাথি দেখাবি না,,খেয়েছি আমি মদ কি করবি তোরা,,

সাব্বিরঃ এসব কি ধরনের আচরণ রুপম,,কি এমন হয়েছে যে তোকে মদ খেয়ে,,আমাদের খুলে না বললে আমরা কি করে,,

রুপমঃ তোদেরকে কাউকে কিচ্ছু করতে হবে না,,আমি ঠিক আছি,,

সাব্বিরঃ দেখ রুপম আমরা তো তোকে সবমসময় সাহায্য করতে চেষ্টা করেছি বল,,আমি না পারলেও উজান তোকে সবসময় কোনো না কোনো ভাবে,,

রুপমঃ ভিক্ষা দিয়েছিস তো,,জানি তো আমাকে দান করেছিস তোরা,,

উজানঃ রুপম,,জাস্ট স্টপ,,কি করে এটা বলতে পারলি যে আমরা তোকে দান করে কিছু দিয়েছি,,আমাদের হেল্প টাকে তোর,,

সন্ধিঃ বাদ দে উজান,,রুপম এখন নিজের মধ্যে নেই,ওকে ছেড়ে দে,,

তুষারঃ তোমার সাথে এ-তো কিছু করার পরো তুমি ওকে ছাড়তে বলছো সন্ধি,,

সন্ধিঃ হ্যা বলছি,,কারণ আমরা তো জানি রুপম কিরকম ও আমার সাথে কিছু করে নি তুষার,,ও এখন ওর নিজের মধ্যে নেই,,প্লিজ আমি চাই না তোরা এ বিষয় টাকে আর টেনে হিঁচড়ে বড় কর,,এমনিতেও সাব্বির চলে যাচ্ছে আমি চাই না এ-ই সম্পর্ক টা আর কোনোভাবে ভেঙ্গে যাক,,তোরা বুঝতে পারছিস আমি কি বলতে চাইছি___সাব্বির রুপমকে বাড়ি নিয়ে যা,,কি হলো,আমার কথা কানে যায় নি তোর,যা এখান থেকে,,

সাব্বির রুপমকে ধরতে গেলে রুপম সাব্বিরকে সরে দিয়ে নিজে নিচে নেমে আসে,,উজান সাব্বিরকে বলে রুপমের পিছে পিছে নামতে,,আর সাব্বির তাই করে,এদিকে সন্ধিকে হালকা সামলে নিয়ে তুষার তার কিছুক্ষণ বাদে সন্ধিকে নিয়ে বাড়ি ড্রপ করে দিয়ে আসে,,সবাই চলে যেতে হিয়া শ্রাবণকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে,,আর শ্রাবণকে শিখিয়ে দেয় এখন ভালো ভাইয়াকে কোনো বিরক্ত না করতে উনি অনেক রেগে আছেন,,শ্রাবণ তাই চুপচাপ নিজের বই নিয়ে পড়তে বসে যায়,,হিয়া এসে উজানকে কি বলবে বুঝতে পারে না,,উজানকে কিছুক্ষণ নিজের মতো থাকতে দিয়ে হিয়া রাতের রান্নার জন্য রান্নাঘরে গিয়ে বাকি কাজ গুলো সেরে নিতে থাকে,,

!
!

আজ প্রায় এক মাস পর,,গত মাসের শেষের সপ্তাহে সাব্বির বার্লিনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় জার্মানিতে,তার কিছুদিন পর সাতক্ষীরাতে তুষারের সরকারি টা কনফার্ম হবার সাথে তার জয়নিং লেটার আসে আর তাতে লেখা থাকে আগামী দুদিনের মধ্যে অফিস জয়েন করতে,,সেই তড়িঘড়ি করে তুষারো রওনা হয় সাতক্ষীরার পথে,,এদিকে শুধু থেকে যায় উজান সন্ধি আর রুপম,,সেদিনের ঘটনার পর রুপম একটা বারের জন্য এদের কারো মুখোমুখি হয়নি,,শুধু সাব্বিরকে বিদায় দিতে তার সাথে মাঝরাতে এসে দেখা করে যায় এ-ই যা,,
!
!
আজ রুপমের এক ভাইয়ের হাতে রুপম কিছু জিনিস আর খামে একটা চিঠি ভরিয়ে উজানের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়,,উজান তখন বাড়িতে ছিলো না,জিনিস টা হিয়া কালেক্ট করে,,আর সেগুলো খুব যত্ন করে উজানের রুমে রেখে দেয় উজান আসলে দিবে দেখে,,রাতের দিকে উজান আসে,,হিয়া ভূলে যায় সেগুলো তখন দেবার কথা,,রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে উজান ব্যালকুনিতে আসে,হিয়া শ্রাবণকে ঘুম পাড়িয়ে এ ঘরে আসতে খেয়াল করে সেই জিনিস গুলো উজানকে দেবার কথা,,হিয়া জিনিস গুলো উজানের কাছে নিয়ে যায়,,উজান জিনিস দুটো নিয়ে পাশের টুল টায় বসে গিয়ে সেগুলো নিজের কোলে ভাঁজ করে রাখে,,ওখান থেকে সর্বপ্রথম তার চোখ যায় সেই খামের উপর,,উজাম জিনিস দুটো রেখে ঔ খাম টা খোলায় ব্যস্ত হয়,,চিঠি টা নিজের হাতে নিয়ে হিয়ার হাতে খাম টা গুঁজে দেয়,,

🍁
সেদিন আমি নেশা করে সন্ধির সাথে যা করেছি তার হয়তো কোনো ক্ষমা হয় না,আর আজ সন্ধির সামনে দাঁড়িয়ে যে আমি সেই ক্ষমা টা চাইবো সেই মুখো হয়তো আমার এখন নেই,আমি সেদিন নিজের মধ্যে ছিলাম না উজান,যদি থাকতাম তাহলে এ-ই অন্যায় টা করার আগে হয়তো নিজেকে শেষ করে দিতাম,,তুই সাব্বির তুষার সন্ধি সবসময় আমার সাপোর্ট সিস্টেম হয়ে আমার পাশে ছিলি,ভার্সিটি লাইফের এই ছয়টা বছরের একটা দিনো এমন আসে নি যে আমি তোদের থেকে কিছু সাহায্য না নিয়ে নিজের লাইফ টা সারভাইভ করেছি,তোদের কাছে ঋণের কোনো কমতি নেই বরং সেগুলো সুদে আসলে এতোটাই বেড়ে যাচ্ছে যে সেই পাহাড় সমান ঋণ গুলো শোধ করার যোগ্যতা হয়তো আমার কখনো হয়ে উঠবে না,,

তোদেরকে বলা হয় নি এ মাসের প্রথম সপ্তাহের বুধবার বাবা আমাদের তিন ভাইবোনকে রেখে ইন্তেকাল করেছেন,আর বাবার মৃত্যুর পর নিজেদের বাড়ি টাকেও আমরা নিজের বলে উঠতে পারছিলাম না,,বাড়িতে জমিজমা নিয়ে চলছিলো দরকষাকষি,,আমি মানসিক ভাবে অনেকটা ভেঙে আছি,বাড়িতে একটা অবিবাহিত বোন আছে যার বিয়ের জন্য পাএ জুটছে না আর জুটলেও যে বিয়েটা দেবো সেই ক্ষমতাও আমার নেই,,তারপর ছোট ভাই সবে ক্লাস নাইনের গন্ডি পেড়িয়ে টেনে উঠলো তাকে যে একটু ভালো টিচার দিয়ে পড়াবো সেই সামর্থ্য টুকু আমার আজ হচ্ছে না,,জীবনের এক নির্মম কলহের মাঝে জড়িয়ে আছি আমি,,ভেবেছিলাম সব ঠিক হবে কিন্তু যা হচ্ছে তা যেনো সবকিছুকে আরো তছনছ করে রাখছে,,

আমি জানি আমার এ-ই সমস্যা গুলোর কথা আমি তোদের বললে তোরা এক লহমায় সব সমস্যার সমাধান খুঁজে আমার হাতে এনে দিতি,,কিন্তু আমি চাই না তোরা আর আমাকে সাহায্য কর,,আমি নিজের দায়িত্ব গুলো এবার একটু নিজেই বহন করতে চাইছি,,নিজের পিঠের মেরুদণ্ড টা কারো সাহায্য ছাড়া সোজা করতে চাইছি,তোরা আমাকে কেউ ভুল বুঝিস না,,আমার একটু সময় দরকার,,

আমি রংপুর ফিরে যাচ্ছি উজান,জবের জন্য বসে থাকলে তো এদিকে চলবে না,রংপুর ফিরে বাবা-র ফার্মেসি টা ধরবো,ওটাকে নিয়ে যা করা যায় তাই করবো,

তুই সবসময় চেয়ে এসেছিলি আমাদের সম্পর্কটা যেনো না ভাঙ্গে কিন্তু আজ দেখ সবাই আমরা কিরকম,,বাস্তবতা আমাদের সব স্বপ্ন গুলোকে পরিস্থিতির চাপে পিশে একদম মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়,আমরা চাইলেও সেই কাঁটাতারের বেড়াজাল থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারি না,,তোদের থেকে দূরে থাকবো মানে এ-ই না যে তোদের ভূলে যাবো,তোরা তো আমার রক্তে মিশে আছিস,দেখবি আমাদের বন্ধুত্ব টা যদি সৎ আর পবিত্র থাকে তাহলে আবার আমরা সবাই একদিন কোনো পড়ন্ত বিকেলে সূর্য ডোবার আগে টিএসসির মোড়ের সেই বটতলায় জড়ো হবো,বা ক্যাম্পাসের মাঠে গোল হয়ে বসে রমজান মামার থেকে বুট আর বাদাম কিনে কাড়াকাড়ি করে খাবো,,ততোদিন না হয় একটু অপেক্ষা হোক,,দেখি না সময় আমাদের সবার ধর্য্যের কতোটা পরীক্ষা নিতে পারে!!

চিঠির শেষ শব্দ টুকু শেষ করে উজান,,সাতটা মহাসমুদ্রের যতো জলরাশি আছে আজ সব এক হ’য়ে ঝরে পড়ছে তার দুচোখ বেয়ে,সেই লোনাজল গিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে হাতে থাকা চিঠিটার প্রত্যেকটা শব্দকে,,উজান কাঁদছে খুব কাঁদছে,উজানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হিয়ার মাঝেও সেই কান্নার ছোঁয়া গিয়ে লাগছে,,হিয়াও কাঁদছে কিন্তু আজ যেনো হিয়ার সাথে কান্নার প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছে উজান,,তাকে যেনো আজ হিয়ার চাইতেও বেশি কাঁদতে হবে,,তাই সে কাঁদছে গলা ছেড়ে কাঁদছে,,

একটা বীভৎস চিৎকারে সে কাঁদতে কাঁদতে মুখ লুকালো হিয়ার বুকের নিচে পেটের মাঝে,,হিয়া কাঁপা কাঁপা হাত দুটো রাখলো উজানের মাথায়,,উজানকে শান্তনা দেবার ভাষা হিয়ার জানা নেই,,আজ হিয়া হার মেনে নিয়ে উজানকে কাঁদতে দিচ্ছে,কাঁদুক উজান যতো পারে কাঁদুক,কাঁদলে না-কি মনের কষ্ট গুলো ধাপে ধাপে কমে আসে তাহলে আজ তাই হোক,,

উজানঃ আমি কি এতোটাই খারাপ হিয়া,কেউ আজ আমার সাথে থাকতে চাইছে না,কেউ না,প্রথমে ঝিনুক তারপর সাব্বির আর আজ রুপম,,তুষারো তো জবের জন্য পা রাখলো সেই বহুদূর,,কিছুদিন পর সন্ধিও তুষারকে বিয়ে করে আমাকে রেখে চলে যাবে,,তারপর তো আমি একা হ’য়ে যাবো হিয়া,খুব একা,

হিয়াঃ সবাই ফিরে আসবে,,কতোদিন আর দূরে গিয়ে থাকতে পারবে বলুন আমাকে,

উজানঃ কেউ ফিরে আসবে না হিয়া কেউ আসবে না,,তুমি আমাকে মিথ্যে শান্তনা দিও না হিয়া,,আমি জানি ওরা কেউ ফিরে আসবে না,সবাই শুধু নিজেদের নিয়ে ভাবছে কেউ তো আমার কথা ভাবছেই না,সবাই সেলফিশ,,সবাই সবাই সবাই

হিয়াঃ না উজান কেউ সেলফিশ না,,সবাই পরিস্থিতির স্বীকার এ-ই যা

উজানঃ এ-ই ঢাকা লাইফের ছয় সাতটা বছর একটা দিনো হয়নি যে আমি ওদের রেখে,ওদের ছাড়া আমার একটা নিশ্বাস এ-ই শহরে ফেলেছি,, ওরা ছাড়া আমি কি করে বাকিটা জীবন,,ওরা আমার অক্সিজেন ছিলো হিয়া,ওদের ছাড়া আমার দম বন্ধ লাগতো,,তুমি জানো হিয়া তুমি তুমি জানো এ-ই বড় বিছানাটায় আমরা চার বন্ধু সবসময় এসে থাকতাম,সারারাত জেগে কার্ড খেলতাম লুডু খেলতাম,সিগারেট খেতাম,কতো কতো মজা করতাম,,তাহলে আজ কেনো ওরা আমাকে রেখে হারিয়ে গেলো হিয়া,,কেনোওওওওও

বলতে বলতে উজান নিজের চুল খামচে ধরে গলা ছেড়ে চিৎকার করে উঠে,,মনে হচ্ছে তার রক্তাক্ত কলিজাটায় কেউ লবন মিশিয়ে দিচ্ছে প্রত্যেকদিন,হিয়া উজানকে আটকাতে পারে না,হিয়া উজানকে নিজের বুকে আঁটকে নিয়ে নিজেও কান্নায় ভেঙে পড়ে,,দুজনে কাঁদছে,,খুব কাঁদছে,ব্যালকুনিতে আসা রাতের মিষ্টি বাতাসো তাদের কান্নায় আজ ভারী হয়ে যাচ্ছে,,রাতের গভীরতা এক বিশাল কালো গহ্বরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে যেনো,বিস্কুট ফুলের গাছের ঔ গোলাপি ফুলটাও সেই ভারী আর কালো বাতাসে টুপ করে যেনো নিচে ঝরে পড়লো,,হিয়া জানে না উজানকে শান্তনা দেবার ভাষা কি,সে তো নিজেও কিছুদিন আগে তার সবচাইতে কাছের বান্ধবী নিজের বোনতুল্য ঝিনুককে হারিয়ে অনেকটা নিঃস্ব হ’য়ে গেছে,,কতো জায়গায় খুঁজে নি হিয়া ঝিনুককে,,ঝিনুকের পরিবার তো একদিন দারোয়ান দিয়েও হিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো শুধু তার অপরাধ ছিলো সে কেনো ঝিনুকের ঠিকানা চাইতে বারবার ও বাড়িতে যায়,,আজ ঝিনুক না থাকলে হিয়ার পক্ষে কি সম্ভব ছিলো উজানকে এ-তো সহজে পাওয়া,,কোনোদিন কি সম্ভব ছিলো এ-ই সব বন্ধুদের রেখে নিজেদের জীবন টা রঙীন করে গড়ে তোলা,,,বাস্তবতা এ-তো নির্মম কেনো এতো কঠিন কেনো এতো টা পাষাণ কেনো!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here