মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 ইভা রহমান Part-56

0
1551

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

ইভা রহমান
Part-56

শ্রাবণকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে হিয়া ক্লান্ত,,তার মনের সাথে সাথে আজ মাথা টাও বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে,,মনে হচ্ছে কেউ তার মাথাটাকে শক্ত কিছু দিয়ে চেপে ধরে আছে,,ঠিক ভূল কোনো কিছুর হিসাব সে এখন মেলাতে পারছে না,,হিয়া একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে বিছানায় শুইয়ে যায়,শরীর টা আবার গুলাচ্ছে তার,বমি টাও গলার কাছে এসে বসে আছে যেনো কি করে গলা হতে বের হতে হয় সে জানে না,

এদিকে শ্রাবণের আর এ-ই একা বাড়িতে কিছুতেই মন টিকছে না,,তার এখুনি,এ-ই মুহুর্তে ভালো ভাইয়াকে চাই,,হিয়া যে আজ বললো উজান ফিরবে কিন্তু উজান কোথায় ফিরলো,,রাগে দুঃখে বাচ্চাটা বারবার হিয়ার কানের কাছে এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে ভালো ভাইয়াকে ফোন দে,ভালো ভাইয়া কে ফোন দিয়ে আসতে বল,শ্রাবণের এ-ই জিদ টা হিয়ার শরীর নিতে পারছে না,,কানের কাছে অসহ্য লাগতে আরম্ভ করছে শ্রাবণের এই এক কথা,,কেনো শ্রাবণ বুঝতে চাইছে না উজান আর ফিরবে না,,একটা পর্যায় শ্রাবণের জীদ অত্যাধিক হারে বাড়ার সাথে সাথেই হিয়ার মাথা গেলো পুরো বিগড়ে,,বিছানা থেকে উঠে হিয়া শ্রাবণকে এমন এক ঝারি দিয়ে বসলো যে বাচ্চা টা পুরো চিৎকার করে কেঁদে উঠলো,,

হিয়াঃ বারবার এক কথা কেনো বলছো কানের কাছে আমার,তোমার ভালো ভাইয়া আসবে না আর,,উনি আর চান না আমাদের,,বুঝতে পারছো তুমি,,ভালো ভাইয়া আর আসবে না,,আমরা আবার একা হ’য়ে গেছি,,

হিয়ার রাগান্বিত চাহনি দেখে শ্রাবণ ভয়ে আরো কেঁদে দেয়,,

শ্রাবণঃ তুই এখন আমাকে একটুও ভালোবাসিস না,তুই বাজে একটা,তুই খুব খারাপ আমাকে এখন খালি বকা দিস,,ভালো ভাইয়া আসলে আমি সব বলে দেবো,,ভালো ভাইয়া কখনো আমাকে বকে না,,আমাকে খুব আদর করে

হিয়াঃ তোমার ভালো ভাইয়া আসবে না,,কথা বুঝো না তুমি,,উনি আর আসবে না,,উনি চলে গেছেন,,

শ্রাবণঃ চলে গেছে!কেনো গেছে?ভাইয়া আমাকে কথা দিছে সে আসবে,,,,ভাইয়া আসবে না__সত্যি আসবে না??

হিয়াঃ না আসবে না,,এ-ই বাড়িতে এখন থেকে আমরা একা থাকবো,,কেউ নেই আমাদের আমরা একা,,বুঝতে পারছো তুমি আমরা একা,,আমাদের কেউ কখনো ছিলো না আর থাকবেও না,,

শ্রাবণঃ ভালো ভাইয়া পঁচা,,আমাকে কথা দিয়ে আসলো না,আমি আর কথা বলবো না কারো সাথে,,সবাই আমাকে মিথ্যা বলে,,সবাই খুব খারাপ,,কেউ শ্রাবণকে ভালোবাসে না,,কেউ না,,
কাঁদতে কাঁদতে শ্রাবণ দৌড়ে ছুটে আসে এদিকের রুমে,,তার ছোট্ট মনে এখন অনেক হাহাকার জমা হচ্ছে,,তার মনের কষ্ট টা বোঝার কেউ নেই এই মুহুর্তে কেউ নেই!!

!
!
!

সন্ধ্যা পাড় হয়ে তখন ঘড়িতে ৭টার একটু কাছাকাছি,,কিছুক্ষণ আগে সন্ধি তার মা’র সাথে দেখা করে হিয়ার বাড়িতে এসেছে,,সন্ধি আসার দশ পনেরো মিনিট পর্যন্ত সে হিয়ার সাথে টুকিটাকি কথা গুলো সেরে নিচ্ছিলো,,তখন পর্যন্তও হিয়ার শরীর টা ভালো ছিলো তবে দেখে বোঝা যাচ্ছে হিয়া হয়তো আর বেশিক্ষণ এ-ই ভালোটা থাকতে পারবে না,,আর সেটাই হয়ে আসলো,,হিয়া বমি করার এক পর্যায়ে সেন্স হারিয়ে বাথরুমেই লুটে পড়লো,,সেই সকালে একটা বিস্কুট খেয়ে বেড়িয়েছিলো সে,,বাড়িতে ফিরে যে দুপুরের খাবার টা খাবে তা-ও সে খায় নি,,সন্ধি ওর এক কাজিনকে ডেকে হিয়াকে নিয়ে আসে পাশেই একটা হসপিটালে যেখানে শ্রাবণ শেষ বার ভর্তি হয়েছিলো,,ডক্টর হিয়ার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে হিয়াকে স্যালাইন আর তার সাথে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে আপাতত ঘুমিয়ে রাখে তার আগে অবশ্য নার্স কিছু টেস্টের জন্য হিয়ার ইউরিন আর ব্লাড কালেক্ট করে নিয়ে যায়,,

নার্সঃ উনি কি ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করেন না,নার্ভ দেখে তো খুবই উইক লাগছে ওনাকে,,

সন্ধিঃ না মানে,,করে কিন্তু বেশ কিছু দিন থেকে

নার্সঃ দেখুন রিপোর্ট না আসা অবধি তো কিছু বলা যাচ্ছে না,,রাতের দিকে ডক্টর আবার রাউন্ড দিতে আসবে আশা করছি রিপোর্টো ততোক্ষণে এসে যাবে,,ওনাকে এখন ঘুমোতে দিন,,ওনার বিশ্রামের প্রয়োজন,,

সন্ধি মাথা নাড়ালে নার্স টা হিয়ার স্যালাইন লাইন টা আরেক বার চেক করে নিয়ে বেড়িয়ে আসে,,সন্ধি পাশের বেড টায় গিয়ে শ্রাবণ সহ বসে যায়,,হিয়ার এ-ই অবস্থা কিছুতেই তার সহ্য হচ্ছে না,,সকাল অবধি তো হিয়া কতো স্ট্রং ছিলো এখন এ-ই এতোটুকু সময়ে কি হয়ে গেলো হিয়ার,,সময় গুলো দেখতে দেখতে পেড়িয়ে তখন রাত সাড়ে এগারোটার কাছাকাছি,,হিয়া সেই তিন সাড়ে তিন ঘন্টা ধরে ঘুমিয়ে আছে,,হয়তো কিছুক্ষণ পর উঠে যাবে,,

সন্ধিঃ শ্রাবণ,,খুব ক্ষিদে পাইছে না তোমার,,আচ্ছা চলো আমরা ক্যান্টিন থেকে কিছু খেয়ে আসি,,আসার সময় দেখি বুবুর রিপোর্ট গুলো পাওয়া যায় কি না,,যাবা?

শ্রাবণঃ বুবু একা থাকবে?

সন্ধিঃ না সোনা একা থাকবে না,,আমি একজন নার্সকে বলে দিচ্ছি সে এসে হিয়াকে দেখে রাখবে,,

শ্রাবণঃ ঠিক আছে,,বুবু কখন ঘুম থেকে উঠবে?

সন্ধিঃ বুবুর তো শরীর খারাপ খুব তাই সে একটু পর উঠবে,,আসো তুমি,,

সন্ধি হিয়ার পাশে একজন নার্সকে থুইয়ে শ্রাবণকে নিয়ে ক্যান্টিনের দিকে আসে,,এই ক্যান্টিন থেকে শুরু করে পুরো হসপিটাল এখন অনেকটাই নীরব,,রাতের জন্য মানুষের আনাগোনা খুব একটা নেই,,থমথমে পরিবেশ,,

এদিকে সন্ধি যখন শ্রাবণকে খাইয়ে দিতে ব্যস্ত ছিলো ঠিক সে সময় সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে উজান আসে হিয়ার কাছে,,হিয়ার পাশে এসে বসতেই ভিতরটা ছিঁড়ে আসতে শুরু করে তার,,খুব ইচ্ছে করে কলিজা টার ভেতরে যদি হিয়াকে ডুবিয়ে নিয়ে রাখা যেতো এ-ই মুহুর্তে,,উজান হিয়ার মাথায় হাত বুলে দিয়ে হিয়ার যে-ই হাতে ক্যানুলা পড়া নেই সেটা খুব শক্ত করে চেপে ধরে,,উজানের গাল বেয়ে টপটপ করে পানি এসে জমা হয় হিয়ার হাতের ভাঁজে,,

উজানঃ এ-ই পিচ্চি কি হ্যা এখনি এরকম দূর্বল হয়ে গেলে চলবে,,তুমি না কতো সাহসী হিয়া আমার,কতো স্ট্রং,তোমাকে যে একা বাঁচতে হবে তুমি বুঝো না,সেদিন খুব খারাপ আচরণ করেছি না আমি তোমার সাথে,খুব বাজে কথা বলেছি না আমি তোমাকে,তুমি আমাকে ঘেন্না করো তো এখন?তোমাকে যে আমায় অনেক ঘেন্না করতে হবে অনেক,আমি সারা জীবন ছায়া হয়ে তোমার পাশে পাশে হাঁটবো,তোমাকে দূর থেকে দেখবো,কিন্তু সত্যি টা সামনে আসলে যে আমি তোমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তোমার চোখে চোখ রাখতে পারবো না হিয়া,,কখনোই পারবো না,না তুমি পারবে তোমার বাবা-মার মৃত্যুর সাথে যে জড়িত তাকে কখনো ক্ষমা করে তার সাথে এক-ই ছাঁদের নিচে থাকতে!!

উজান আর কিছু বলতে পারে না তার আগেই হিয়ার ঘুম টা পাতলা হ’য়ে আসে,,হিয়া একটু নড়েচড়ে চোখ মেলতেই ঝাপসা চোখে একটা অবয়বের দেখা পায়,,চোখের আবছা ভাব টা পরিষ্কার হবার সাথে সাথে সেই অবয়ব টাও কোথাও যেনো মিলিয়ে যায় মুহুর্তে,,হিয়া চোখ মেলে এক হাতে ভর করে উঠে বসে,,হিয়ার মনে হতে থাকে এ-ই রুমে কেউ তো একজন এসেছিলো,,আর সেই কেউ টা অন্য কেউ না সেটা হচ্ছে উজান!!

হিয়াঃ আমি জানি এতোক্ষণ আপনি আমার পাশে বসেছিলেন,,আমি কিছু ভূল দেখিনি উজান,,আমার বিশ্বাস ঠিক থাকলে ঔ অবয়ব টা আপনারই ছিলো!!

ভাবনার মাঝে হিয়া ওর হাতের দিকে তাকাতে খেয়াল করে ওর হাতটা ভিজে আছে,,আর পানির আঁকাবাকা গঠন দেখেই বুঝা যাচ্ছে এটা কারো চোখের পানি,,হিয়া ওর হাত টা নিজের ঠোঁটের কাছে এনে সেই পানি গুলোতে নিজের ঠোঁটের পরশ ছুঁইয়ে দেয়,,সে জানে এ-ই পানি টা কার চোখের!!!!

হিয়াঃ মেঘের আড়ালে কখনো রোদকে লুকোচুরি করতে দেখেছেন আপনি!ছোটতে এ-ই মেঘ-রোদের লুকোচুরিটা দেখতে আমার খুব ভালো লাগতো,,সূর্য টা একবার মেঘে ঢাকা পড়তো তো কখনো মেঘের অভাবে লুকোনোর জায়গা খুঁজে মরতো,,আজ সেরকমই লুকোচুরি খেলেছেন আপনি আমার সাথে!!প্রথম প্রথম তো আমি আপনার সাথে লুকোচুরি খেলতাম,না বলে হারিয়ে যেতাম,দূরে কোথাও পাড়ি জমাতাম,,কিন্তু আজ!আজ আপনি মেঘের আড়ালে রোদের মতো কেনো এ-ই লুকোচুরি টা আমার সাথে খেলছেন উজান কেনো!!___আমি জানি আপনি এতোক্ষণ আমার পাশে বসেছিলেন আমার হাত ধরে কাঁদছিলেন!কেনো কাঁদছিলেন?প্রতিশোধ যা নেবার তা তো নিয়েই নিচ্ছেন তাহলে!আমার প্রশ্নের উত্তর চাই উজান,অনেক প্রশ্নের উওর আমার জানা বাকি,আর এগুলো আমি কালকের মধ্যেই আপনার থেকে নিয়ে ছাড়বো,,কালকের মধ্যেই,,

!
!
!
পরেরদিনঃ

হিয়ার কথা অনুযায়ী সন্ধির থেকে এটা উজানের কাছে জানানো হয় যে শ্রাবণ খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছে বাড়িতে আর হিয়া টিউশন পড়াতে গুনগুনদের বাড়িতে আছে,,এখন সন্ধি একা শ্রাবণকে নিয়ে কি করবে সে বুঝে উঠতে পারছে না,,এদিকে উজান নিজেও এখন এই খবরটা পাবার পর কি করবে বুঝতে পারে না,,শ্রাবণের অসুস্থতা মানে তো এ-ই সেই ছোট খাটো অসুখ না আর উজান সেটা খুব ভালো করেই তা জানে,,না এ-ই মুহুর্তে কিছুতেই রিস্ক নেওয়া ঠিক হবে না,,যে-ই ভাবা সেই কাজ,,উজান কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে এক ছুটে চলে আসে বাড়িতে,,আর এসেই শ্রাবণ শ্রাবণ বলে ডাকতে শুরু করতেই সন্ধি দরজা খুলে দেয়,উজান তড়িঘড়ি করে রুমে ঢুকে শ্রাবণ কোথায় খুঁজতে শুরু করে,,

উজানঃ শ্রাবণ কোথায় সন্ধি,,আমি এ্যাম্বুলেন্স বলে দিছি ওরা আসছে,,আমাকে হিয়া আসার আগে আগে বাচ্চা টাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে,,কি হলো কি তুই দাঁড়িয়ে কি দেখছিস,, আমায় বল শ্রাবণ কোথায়?

এবার আর সন্ধি নিজেকে আটকে রাখতে পারে না উজানের কথা শেষ হওয়া মাএই বসিয়ে দেয় উজানের গালে একটা থাপ্পড়,,তার আজ উজানকে দেখে বড্ড ঘৃণা লাগছে,,মনে হচ্ছে একটা নোংরা মানুষের সামনে সে দাঁড়িয়ে আছে এই মুহুর্তে,,

সন্ধিঃ নাটক করিস,,খুব অভিনয় শিখে গেছিস না,,কা পুরুষ একটা,,

উজানঃ সন্ধি তুই,,শ্রাবণ কোথায়?

সন্ধিঃ শ্রাবণের কিচ্ছু হয়নি,,শ্রাবণ সুস্থ আছে,,

উজানঃ তুই আমাকে মিথ্যা বলে ডেকে আনলি!

সন্ধিঃ আনলাম,,তুই আনতে বাধ্য করলি,,,,,, ছিঃ আমার তো আজ ভাবতেই ঘেন্না লাগছে একটা সময় তোকে আমরা নিজেদের আইডল মনে করতাম,,সেদিন তুই হিয়ার সাথে যে-ই আচরণ টা করেছিস,হিয়াকে যতো বড় বড় কথা বলেছিস আজ যদি তুষার আমার সাথে সেরকম আচরণ করতো না আমি ঠিক সেই মুহুর্তেই তুষারকে Divorce দিয়ে দিতাম,,

উজানঃ সন্ধি আমি,,

সন্ধিঃ আমি কি উজান,,আমি কি__তুই কি করে হিয়ার মতো একটা মেয়েকে ঠকালি__তোর কি বিবেক বলতে কিচ্ছু নেই,,তুই কবে থেকে এরকম জানোয়ার হয়ে গেলি,,এটা কোনো সুস্থ মানুষের আচরণ বলে তো আমার মনে হয় না উজান,,তুই কি অসুস্থ!

উজানঃ সন্ধি আমাকে কিছু বলতে দে,,

সন্ধিঃ কি বলবি তুই উজান,,কিছু বলার মতো মুখ আছে তোর,,একটা মেয়েকে বিয়ে করে দেড়টা বছর তার সাথে সংসার করে এখন তুই এসে তাকে বলছিস শুধু রিভেঞ্জ নিতে না-কি তুই,,,,,এ-ই শয়তান বল কি এমন কারন যেটা তোকে এরকম অমানুষ বানিয়ে দিছে,,কি এমন কারণ যার জন্য তোকে হিয়ার মতো একটা মেয়ের সাথে এরকম হায়ানার মতো ব্যবহার করতে হচ্ছে,,বল না উজান চুপ করে থাকবি না,,

উজানঃ আমি হেল্পলেস সন্ধি,,আমার কিছু করার নেই,,হিয়া সারাজীবন আমাকে ঘৃণা করুক আমি সহ্য করতে পারবো কিন্তু,,

সন্ধিঃ কিন্তু কি উজান,,বল আমাকে,,চুপ করে থাকবি না উজান,,আজকে তোকে সব বলতে হবে বল আমাকে,,উজান কথা বল,,তোর থেকে উওর না নিয়ে আমি আজ তোকে ছাড়বো না,,তোকে উওর দিতে হবে আর সেটা এক্ষুনি এ-ই মুহুর্তে,,বল না উজান চুপ করে থাকবি না,,

সন্ধির এ-ই জোড়াজুড়ি উজান নিতে পারে না,,কানের কাছে সেই একই প্রশ্ন বারবার উজানের পোড়াক্ষত টাকে আরো বাড়িয়ে দিতে থাকে,,একটা পর্যায় উজান সন্ধির উপর চিৎকার করে উঠে,,সে আর পারছে না,,

উজানঃ চুপ কর সন্ধি চুপ কর,,,সন্ধি আমি হিয়ার চোখে ওর বাবা-মার খুনি হয়ে সারাজীবন থাকতে পারবো না!!____হিয়া আমাকে ঠকবাজ ভেবে সারাজীবন পাড় করে দিক কিন্তু ও আমাকে খুনি হিসাবে দেখুক আমি সেটা কখনোই সহ্য করতে পারবো না!!

উজানের কথায় সন্ধি পুরো থ বনে যায়,,একটা ধাক্কা এসে লাগতে থাকে তার নিজেরই বুকে,,

সন্ধিঃ খু-ন,বাবা-মা,কি বলছিস তুই এসব?

উজানঃ তুই যা শুনছিস আমি তাই বলছি,,হিয়ার বাবা-মায়ের যেই গাড়িতে এক্সিডেন্ট হয়েছিলো সেই গাড়িটা আমাদের ছিলো,,আর সেখানে ছিলো আমার মা আর বাবা দুজনেই!!

সন্ধিঃ উজান!(অস্ফুটে)না তোর কোথাও ভূল হচ্ছে,,দেখ এটা কোনো সিনেমা না যে সব এরকম কাকতালীয় ভাবে মিলে যাবে,,আর আঙ্কেল আন্টি কেনো এসবে আসতে যাবে!!আমার কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না,,তুই আমাকে পরিষ্কার করে সব বল,,

উজানঃ আমি তোকে কিছু বলার মতো অবস্থাতে নেই সন্ধি,,আর তোকে এটা বললেও তুই হিয়াকে বলে দিবি আমি জানি,,আমি চাই না হিয়া এই সত্যি টা জানুক___হিয়া হয়তো আমাকে ঠকবাজ মনে করে নিজেকে সামলে নিতে পারবে কিন্তু হত্যাকারী হিসাবে না,,,আর আমি হিয়ার চোখে কখনোই চোখ রেখে তাকাতে পারবো না,,

সন্ধিঃ না উজান,,তাই বলে এরকম লুকিয়ে পালিয়ে চলা এটা কেমন আচরণ,,

উজানঃ জানিস সন্ধি এ মাসের শেষের দিকে হিয়ার বাবা মায়ের মৃত্যবার্ষিকি আছে,,সেদিন যখন আমি ক্লাস থেকে ফিরে বাড়িতে আসলাম,এসে কি দেখলাম জানিস,দেখি হিয়া ওর জমানো মাটির ব্যাংক টা ভেঙে দিছে,,আমি অবাক হ’য়ে হিয়ার পাশে গিয়ে ফ্লোরে বসে পড়ি তারপর,,

🍁
উজানঃ বাহ বা আমার হিয়া পিচ্চি আজকে তার ব্যাংক ভাঙ্গলো ব্যাপার কি শুনি,,

উজান দুম করে হিয়ার টাকা গুলো হতে একটা ১০০টাকার কচকচে নোট তুলে নেয়,তাই দেখে হিয়া টপাটপ বাকি টাকা গুলো ওর কোমড়ের কাছে জড়ো করে লুকিয়ে ধরে,,

হিয়াঃ এ-ই আমার টাকায় হাত দিবেন না,,দিন বলছি,,এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না,,

উজানঃ আরে ১০০টাকাই তো নিয়েছি,,এরকম কিপ্টামি কেনো করা হচ্ছে শুনি,,দেও দেখি,,

হিয়াঃ আমি কিন্তু রাগ করবো এবার,,প্লিজ উজান,,

উজান হিয়াকে টাকা না দিয়ে বরং হিয়ার কোলের ঔ টাকা গুলোর উপর মাথা রেখে শুইয়ে পড়ে,,

হিয়াঃ এটা কি হলো,,ক্লাস থেকে ফিরে কি হাতমুখ টাও ধুয়ে নিতে হয় সেটাও খেয়াল নেই আপনার,,

উজানঃ যাচ্ছি রে বাবা,,,,বলো না টাকা গুলো কি করবা,,

হিয়াঃ সামনের মাসে বাবা-মার বছরকি উজান,,আমি ঔ দিন আমার জমানো টাকা দিয়ে মাদ্রাসা বা কোনো অনাথ আশ্রমে এতিম কিছু বাচ্চাদের সাহায্য করতে চেষ্টা করি,,কিছু না পেলে ওদেরকে এক বেলা ভালো কিছু খাইয়ে দেই,,তাই এখন দেখছি আমার ব্যাংকে মোট কতো জমছে!

উজানঃ আচ্ছা তাহলে মা আর বাবা-র বছর কির জন্য এ-ই ব্যাংক ভাঙ্গা,,,,হিয়া একটা কথা বলি,,

হিয়াঃ বলুন?

উজানঃ এবার বাবা-মার জন্য যদি আমি অনাথ আশ্রমে এতিম বাচ্চা কাচ্চাদের খাওয়ানোর দায়িত্ব টা নেই তুমি কি খুব রাগ করবা?

হিয়াঃ উজান আপনি(অস্ফুটে)

উজানঃ প্লিজ হিয়াপাখি প্লিজ প্লিজ প্লিজ এটুকু আমাকে করতে দেও,,তুমি তো প্রতি বছর করো এবার না হয় আমি করলাম___প্লিজজজজ,,

হিয়াঃ না থাক এমনিতেও শ্রাবণের চিকিৎসাতে আপনি কতো খরচ করলেন সেবার,,আবার এখন এসব!___এবার টা আমি করি সামনের বছর টা আপনি করে নিয়েন ঠিক আছে,,

উজানঃ না আমি এ বছরের টাই করবো এ বছরের টাই করবো করবো,,

হিয়াঃ আরে আস্তে,,আপনি কি শ্রাবণ,,যে সবসময় এরকম বাচ্চাদের মতো জিদ করেন,,ভার্সিটিতে তো খুব টিচার-গিরি দেখান বাড়িতে আসলে সব ফুড়ুৎ হ’য়ে যায় আপনার তাই না,,,,আচ্ছা ঠিক আছে এবারের টা আপনি করুন,,এমনিতেও আমার কিছু টাকা শর্ট সামনের বছর অনেক হলে তখন বড় করে বাচ্চাদের খাওয়াবো,,

হিয়া উজানকে পারমিশন দিয়েছি উজানের এ-ই খুশি এখন দেখে কে,,উজান খুশি হয়ে হিয়ার কোলে মুখ লুকিয়ে হিয়ার পেটের মধ্যে অনেক গুলো চুমু দিতে শুরু করে,,আর হিয়া উজানকে থামাতে থামাতে হাতে টাকা গুলো নিয়ে শুরু করে তার হিসাব,,কিছুক্ষণ বাদে উজান হিয়ার পেট থেকে মুখ তুলে হিয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে,,

উজানঃ একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

হিয়াঃ হুম করুন,,

উজানঃ মা আর বাবাকে খুব মিস করো তাই না??

হিয়াঃ হুমমমম,,খুব মিস করি তা না,,অনেকটা সময় হ’য়ে গেছে পরিস্থিতি আমাকে সব মেনে নিতে শিখিয়েছে তাই মিস টা কতো টা করি জানি না,,তবে ওদের অভাববোধ টা খুব হয়______আজকে যদি তারা থাকতো,দেখতো,,আমি ছুটিতে আপনাকে নিয়ে বাড়ি যেতাম আপনি জামাই আদর পেতেন,,সবকিছু অন্য রকম হতো তখন,,

বলতে বলতে হিয়ার চোখে পানি এসে যায় ,হিয়া চোখের কানিটা আলতো করে মুছে হেঁসে দেয়,,

হিয়াঃ অবশ্য শ্রাবণ তখন আমাদের সাথে থাকতো না,ও তে বাড়িতে মা বাবা-র সাথে থাকতো,,এ দিক টা একটু কষ্টের হতো আপনার জন্য,আপনার তো ইদানীং আবার আমি ছাড়াও এখন চলবে কিন্তু শ্রাবণকে তো কিছুতেই নড়চড় করা যাবে না আপনার থেকে,,,,,,,আমদের যাদের মা বাবা নেই,আমরা যারা অনাথ তাদের মনের কষ্ট টা না আমরা ভাষায় বলে প্রকাশ করতে পারবো না,,প্রকাশ করলেও আপনারা সেটা অনুভব করতে পারবেন না,,এটাই সত্য!

উজানঃ হুম,,যদি তারা ফিরে আসতো খুব ভালো হতো তাই না,,আমিও একটু জামাই আদর পেতাম,,

হিয়াঃ যারা চলে যায় তারা তো ফিরে আসে না উজান,,শুধু কল্পনা গুলোতে আমরা তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারি!!

হিয়া চুপ হয়ে উজানের মাথার চুল গুলো বিলি কাটতে থাকে,,আর উজান অপলক তাকিয়ে থাকে হিয়ার দিকে,,

হিয়াঃ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবো না আমি,,যারা আমার বাবা-মাকে সেদিন গাড়ি চাপা দিয়েছিলো,সেই মানুষ গুলোকে আমি বড্ড ঘেন্না করি,,তারা তো গাড়ি চাপা দিয়ে চলে গিয়েছিলো কিন্তু একটা বার ভাবেনি সেই মানুষ দুটোর সাথে যারা জড়িয়ে আছে তাদের পরিণতি টা ঠিক কি হবে এখন,,ক্ষমতাও ছিলো না যে ওদের নামে একটা থানায় মামলা করবো,,এতোটাই অক্ষম আর নিরুপায় ছিলাম আমি,,,,,,,,তারা আমার শৈশব আমার কৈশোর সব কেঁড়ে নিছে,,শ্রাবণ কাঁদলে তো তাও আমি ছিলাম ওকে থামানোর জন্য কিন্তু,কিন্তু আমার চোখের পানি টা মোছার জন্য আমি কারো হাত পাই নি উজান,,কাঁদছি,একা একা খুব কাঁদছি,,কাঁদতে কাঁদতে একটা সময় চোখের সব পানি শুকিয়ে গেছে,,ধাক্কা খেতে খেতে আমি আমার অস্তিত্ব টাই হারিয়ে ফেলেছিলাম,,যে সময় আমার স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করার কথা ছিলো খেলাধুলা করার কথা ছিলো সেসময় আমি কোলের বাচ্চা টার ন্যাপি পরিষ্কার করছি,চাচির সেই বাড়ি ভর্তি গেস্টদের জন্য চা বানাতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে ফেলছি,,কেনো যে বেঁচে ছিলাম এ-তো দিন জানি না আমি কিচ্ছু জানি না!!

হিয়া আর বলতে পারে না গলা ধরে আসে তার,,গাল বেয়ে টপটপ পানি পড়ে ভিজিয়ে দেয় উজানের পুরো মুখ,,উজান তো এমনিতেও কাঁদছে,,হিয়ার কষ্ট গুলো তো সে নিজেও অনুভব করছে,,উজান হিয়ার হাত দুটো শক্ত করে ধরে হিয়ার মাথা টা নিজের মুখের সাথে ঠুকে দেয়,,হিয়ার চুল এসে আছড়ে পরে উজানের ভেজা গালে,,মুহুর্তে সেগুলো ভিজে লেপ্টে যায় পুরো মুখে,,

উজানঃ আমিও তাদের কখনো ক্ষমা করবো না যারা আমার হিয়াকে এতোটা কষ্ট দিছে,,কখনো ক্ষমা করবো না,,,,আরে কাঁদে না হিয়া,,চুপ__এখন তো আমি আছি আর কোনো কষ্ট আমি তোমার হতে দেবো না,,তুমি সারাজীবন এভাবে আমার পাশে থাকো আমি আর কোনো কষ্ট তোমার হতে দেবো না,,একটুও না,,

🍁

উজানঃ এখন তুই আমায় বল না সন্ধি আমি কি হিসাবে হিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়াতাম ওর হাসবেন্ড না ওর বাবা মার খুনি হিসাবে!!কোনটা?

সন্ধিঃ তুই খুনি না,,তুই ঐসময় ঔ গাড়িতে উপস্থিত ছিলি না,,না ঔ ঘটনাতে,,

উজানঃ আমিও ছিলাম,,যদি আমি সেসময় বাবাকে ফোন না করতাম তাহলেই হয়তো এক্সিডেন্ট টা হতো না,,

সন্ধিঃ ওটা কাকতালীয়,,দেখ উজান আমি জানি না সেদিন গাড়িতে কি এমন হয়েছিলো কিন্তু এটা এক্সিডেন্ট এটাকে খুন বলে না,,খুন বলে তুই এখন যেটা করছিস সেটাকে,,

উজানঃ বলে খুন,,খুন বলে এটাকে,আমি হিয়ার স্বপ্ন গুলোকে খুন করছি ওর ছোট বেলাটাকে খুন করছি,ওর শৈশব টাকে বিষাদ বানিয়ে দিছি,,এতোটা কষ্ট ও ডিজার্ভ করতো না,,ওতো ছিলো ফড়িং এর মতো চঞ্চল আমি ওর পায়ে শিকল পড়িয়ে দিছি,,আমি খারাপ,,উজান খারাপ,,উজান খুব খারাপ,,শ্রাবণের ভালো ভাইয়া একটা খুনি,,সে শ্রাবণের ক্ষিদার কারন,ক্ষিদার জ্বালায় কান্নার কারণ, সে শ্রাবণের কোল খালি করার কারণ,,সে শ্রাবণের সব কেড়ে নিয়ে তছনছ করে দিছে,,সে শ্রাবণের ভালো ভাইয়া না,,সে তো খারাপ জঘন্য একটা মানুষ,,

উজান নিজের চুল খামচে ধরে,,গায়ের শার্টটা খিঁচে ধরে,এ-ই শরীর এ-ই মন এই সময় এই পরিস্থিতি যেনো কিচ্ছু তার ভালো লাগছে না কিচ্ছু না,,

সন্ধিঃ উজান উজান শান্ত হ,, দেখ,,যা হয়েছে সব টা তোর অজান্তে,,এখানে তোর কোনো দোষ নেই,,নিজের বাবা-মার কাজের জন্য তুই হিয়াকে কষ্ট দিচ্ছিস শ্রাবণকে কাঁদাচ্ছিস,,এটা ঠিক না__তুই অন্যায় করছিস,,,,শোন এদিকে বস আয়,,দেখ আমার দিকে,,তুই হিয়ার সাথে কথা বল আমি জানি হিয়া তোকে কতো বিশ্বাস করে,,জানিস সেদিন নীলিমার সাথে তোকে ও বাইকে দেখেছিলো কিন্তু ও একটা বারের জন্য তোকে সন্দেহ করে নি,,ও তো তোকে বিশ্বাস করে,,,তুই আমার কথা শোন আমি হিয়াকে ডাকছি তোরা বসে কথা বল,,

উজানঃ না তুই হিয়াকে ডাকবি না,,আমি চাই হিয়া আমাকে ঘৃণা করুক কিন্তু ওর বাবা-মার হত্যাকারি হিসাবে জানুক সেটা চাই না,,

উজান এ-ই কথা গুলো কেমন একটা শ্বাস টেনে টেনে বলতে থাকে,,

সন্ধিঃ তুই এরকম কেনো করছিস,,তুই তুই ঠিক আছিস উজান,,তোর কি শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে,,বুকে ব্যাথা দিচ্ছে,,এই এ-ই ছেলে কথা বল,,

উজানঃ সন্ধি আমি সারাজীবন চেয়ে এসেছিলাম হিয়া আমাকে সম্মানের চোখে দেখুক আমাকে অপরাধীর চোখে না,,খুব ঘেন্না করতে হবে হিয়াকে আমায়,,খুব খুব

কথা গুলো বলেই উজান পেছন ফিরে রুম থেকে বের হতে যাবে তখনি দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা হিয়ার দিকে তাকাতেই তার চোখ আঁটকে যায়,,হিয়ারো ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে আছে তার মা,,

উজানঃ হিয়া!!,,তুই যে বললি হিয়া বাড়িতে নেই,,(কাঁপা কন্ঠে)

সন্ধিঃ হিয়া আমাকে মিথ্যাে বলতে বলেছিলো,,তাই আমি,,

উজান এগিয়ে এসে হিয়াকে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই বাসবি এসে সবার সামনে দাঁড়িয়ে যায়,,

বাসবিঃ অনেক হয়েছে,,আমি চাই না এই ভুল বোঝাবুঝির মাঝে আর কিছু নষ্ট হোক,,হিয়ারো সত্যি টা জানা দরকার,,

সন্ধিঃ কিসের সত্যি আন্টি!আর দেখুন ন উজান তখন থেকে কিসব একটা,

বাসবি সন্ধিকে থামিয়ে দিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে,,

বাসবিঃসেদিন গাড়িতে শুধু আমি আর তোর বাবা ছিলাম না,,তোর মেজো চাচ্চুও ছিলো,,গাড়িটা মূলত উনি ড্রাইভ করছিলো,,তার পাশে বসে ছিলাম আমি,,পেছনে তোর বাবা মিনাক্ষী আর তার হাসবেন্ড আহির ভাই,,

উজানঃ মিনাক্ষী টা ঠিক কে মা?বাবা যাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে!!

বাসবিঃ হ্যা ঔ সেই মিনাক্ষী,,তোরা কেউ মিনাক্ষী আর আহির ভাইকে চিনতি না,,সেদিন অনুষ্ঠান হতে ফেরার পথে যখন আমরা গল্প করতে করতে ফিরছিলাম তখন হঠাৎই গল্পের মাঝে তোর বাবা-র ফোনে তোর ফোন আসে,,তুই কি যেনো একটা বলতে আমাকে ফোন টা ধরিয়ে দিতে বলিস,,আমি ফোন টা নিতে হাত বাড়াবো কিন্তু সেটা আমার হাত থেকে পড়ে গিয়ে তোর চাচ্চুর পায়ে কাছে থামে,,আমি ফোন টা তুলতে নিচে হেলি আর ঠিক তখনই আমি একটা ধাক্কা খাই,,ধাক্কা টা ঠিক তোর মেজো চাচ্চুর কারণে আসে উনি গাড়িটা সাইড করতে গিয়ে,,আর আমি সোজা পড়ে যা-ই নিচে,আর তখনি উনি হাতের ব্যালেন্স আর ব্রেক দুটোই হারিয়ে________ওসময় টা ঠিক কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না,,আমি চেয়েছিলাম নামতে কিন্তু তোর মেজো চাচ্চু মিনাক্ষী এরা কেউ রাজি হয় নি,,আমি নিরুপায় ছিলাম কারণ কেউ আমার কথা শুনতো না,,,,,সবাই যার যার মতো বাড়ি আসলাম,,ভয়ে ঘেন্নার অপরাধ বোধে আমার সারা শরীর কাঁপতে শুরু করলো,,আমি ঠিক করলাম আমি হিয়ার কাছে যাবো কিন্তু কেউ রাজি হলো না,,বিশেষ করে তোর মেজো চাচ্চু ভয়ে আমাকে যা নয় তাই বলে অপমান করলো,,এক সপ্তাহ ওভাবেই ভয়ে পাড় করে দিলাম,,হিয়ার বাড়ির পক্ষ থেকেও কোনো অভিযোগ আসলো না,,আয়নার নিজের দিকে তাকাতেও সংকোচ বোধ জন্মাতে লাগলো,,তাই একদিন আর থাকতে না পেরে আমি সব খোঁজ নিলাম জানলাম যারা মারা গেছে তাদের দুটো বাচ্চা ছিলো হিয়া আর শ্রাবণ,,আমি সব ডিটেইলস নিয়ে হিয়ার বাড়িতে গেলাম গিয়ে শুনলাম হিয়া এখন ওর চাচ্চুর বাড়িতে থাকে,,আমি কিছু না ভেবে পৌছালাম হিয়ার চাচ্চুর বাড়িতে,,ওখানে গিয়ে আমার পরিচয় হয় সালেহার সাথে,,সে হিয়ার চাচ্চুর বাড়িতে থাকতো,,তারপর ঔ যা হয়,,নিজের অপরাধ টাকে কমিয়ে আনতে আমি সালেহাকে বললাম আমি ঔ দুই বাচ্চার দায়িত্ব নিতে চাই কিন্তু সেটা কাউকে না জানিয়ে,,সালেহাকে আমি ভালো মনে করেছিলাম কিন্তু শেষে গিয়ে জানলাম আমি হিয়ার জন্য প্রত্যেকমাসে যে-ই টাকা টা পাঠিয়ে দিতাম সে সেটা হিয়াকে দিতো না,,সে আমাকে মিথ্যা বলতো,,আমি সরল মনে হিয়ার সাথে ওর ভাব দেখে কথা গুলো বিশ্বাসো করে নিতাম,,,নিজের অপরাধ টাকে কমাতে আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু তার ফল আমি পাই নি,,সালেহা আমাকে ঠকিয়েছে,,________একটা ঝড় সামলে যখন আমি কিছুটা নিজেকে আগের জীবনে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করতে থাকলাম ঠিক তার কয়েকমাস পর শুরু হলো আরো এক নতুন ঝড়,,,,তোর মেজো চাচ্চু সব গুটিয়ে চলে গেলো কানাডা,,মনের মাঝে পাপ থাকলে যা হয়,__আমি আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি সবার দিকে চেয়ে শুধু মুখ বুজে সবটা সহ্য করে যাচ্ছিলাম,,এদিকে একদিন খবর আসলো আহির ভাই স্টোক করে ইন্তেকাল করেছেন,,বিষয়টা অনেক দুঃখজনক ছিলো কারণ উনি কিছুটা আমার সাথে সহমত পোষণ করেছিলেন একটা পর্যায়,,এ-রপর শুরু হয় মিনাক্ষীর যন্ত্রণা,,পাগল বানিয়ে ছাড়ে আমাকে আর তোর বাবাকে__সে হুমকি দেয় যদি তোর বাবা ওকে বিয়ে না করে ওর ছেলে মেয়ের ভরনপোষণ না দেয় তাহলে সে পুলিশকে গিয়ে এটা বলবে যে তোর বাবা-ই হিয়া বাবা-মার এক্সিডেন্টের জন্য দায়ী,,আমি তখন বুঝতে পারছিলাম না আমি কি করবো,মিনাক্ষীর আচরণ পুরো অবাক করার মতো ছিলো,,সে পারতো না এমন কিছু নেই,,সে চাইলে কিন্তু তোর মেজো চাচ্চুকে ব্লাকমেইল করে তাকে বিয়ে করতে পারতো কিন্তু সেটা সে না করে তোর বাবাকে টার্গেট করলো কারণ তোর বাবার স্বয়সম্পতি ,,তোর মেজো চাচ্চুর যে ওতো নেই,,,একটা সময় আমিও স্বার্থপর হয়ে গেলাম তোর বাবা জেলে গেলে তোদের চার ভাই বোনকে নিয়ে আমি একা কি করতাম,,একটা সময় বাধ্য হয়ে তোর বাবা____কি থেকে ঘটনা কোথায় গিয়ে দাঁড়ালো তার হিসাব আমি মেলাতে পারছিলাম না,,একটা সময় মনে হচ্ছিলো গলায় দড়ি দিয়ে তোদের সবাইকে নিয়ে মরে যাই,,পারি নি আমি,,তোদেরকে মারতে পারিনি,,,,,,,যেদিন হিয়া প্রথম আমার বাড়িতে ফিরলো আমি তখনি সালেহার থেকে,,,,,,তারপর যেদিন তোর বউ হিসাবে আমি হিয়াকে দেখি সেদিন আমি যতোটা ভয় পেয়েছিলাম ঠিক তোতোটাই খুশি হয়েছিলাম কারণ আমার ভূল টা হয়তো সৃষ্টিকর্তা তোর মাধ্যমে শুধরে নিতে চাচ্ছেন,,আমি হিয়াকে আর শ্রাবণকে সব দিয়ে ভালো রাখতে চেয়েছিলাম আমি চাইনি ঘটনা টা কখনো সামনে আসুক,,কিন্তু সেদিন তুই রংপুর গিয়ে আমার সাথে সালেহার যে কথা গুলো শুনলি এরপর আমি কি করে_____কাল যখন সন্ধি আমাকে ফোন করে হিয়ার অসুস্থতার কথা আর হিয়ার সাথে তোর এ-ই খারাপ ব্যবহারের কথা জানালো তখন আমি আর বাড়িতে বসে থাকতে পারলাম না,,আমার মনে হচ্ছিলো এটাই হয়তো ঠিক সময় সবাইকে সবটা জানানোর,,

বাসবি একটা দম ফেলে হিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়,,বাসবির চোখেমুখে অপরাধ বোধের চিহ্ন স্পষ্ট,,

বাসবিঃ এতে উজানের কোনো দোষ নেই হিয়া,,আমার ছেলে জানতো না তুমি,,তোমার যদি মনে হয় তুমি আমাকে শাস্তি দেবা তার বাবাকে শাস্তি দেবা তাহলে তুমি দেও,,আমি মাথা পেতে তোমার শাস্তি গ্রহন করবো,,কিন্তু আমার ছেলে টাকে তুমি ফিরিয়ে দিও না ও তোমাকে মন থেকে ভালোবেসে গ্রহন করেছিলো!!

এই মুহুর্তে বাসবির কোনো কথা হিয়ার মাথাতে ঢুকছে না,,হিয়ার সারা শরীর কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে,হিয়া কাউকে আর কিছু না বলতে দিয়ে দৌড়ে এদিকের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়,,রুমে এসেই হিয়া ওর বইয়ের ভাঁজে রাখা মা বাবা-র ছবি টা হাতে নিয়ে বিছানার এক কানিতে বসে যায়,,

হিয়ার মাথার সব নিউরন এ-ই মুহুর্তে কাজ করা থেমে দিচ্ছি,যেনো শ্বাস টাও সে নিচ্ছি কি নিচ্ছে না তার জানা নেই,শরীর কাঁপছে,লোমকূপ গুলো ভয় দাঁড়িয়ে যাবার জায়গায় সংকুচিত হয়ে গায়ের সাথে মিশে যাচ্ছে,,সেই পুরোনো রক্তমাখা স্মৃতি এসে ভীড় করছে তার চোখের সামনে,,সেই রক্তাক্ত দেহ,,সেই আহাজারি আজ সব কেমন আবার ভয়ার্ত রুপে ধরা দিচ্ছে হিয়ার কাছে,,

হিয়াঃ আচ্ছা মা,আমি যদি আজ তাদেরকে ক্ষমা করে দেই তাহলে কি তোমাদের সাথে অন্যায় করা হবে,তোমরা এটা ভাববা না তো হিয়া তার দুদিনের সুখের জন্য নিজের মা বাবা-র সাথে যে-ই অন্যায় টা করেছে তাকে ক্ষমা করে দিলো,,উজানের কি দোষ এতে!কিন্তু ওনার সাথে সংসার করতে হলে তো আমাকে ওনার বাবা মা’কেও ক্ষমা করতে হবে,,কিন্তু ওরা যে আমাকে তোমাদের থেকে কেঁড়ে নিছে আমি কি করে,,,,,কিন্তু উজান তো সব টা না জেনেই আমাকে,,,,,আমার পেটে যে অনাগত সন্তান আসছে মা,,আজ যদি উজানকে আমি ক্ষমা না করি তাহলে সেই বাচ্চা টা কখনো বড় হয়ে আমাকে প্রশ্ন করবে না তো যে আমি নিজের বাবা-মার সাথে ন্যায় করতে গিয়ে তাকে তার বাবা-মার আসল ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেছি!!__আমি কি করবো মা,তুমি একটু বাবা-র সাথে কথা বলে আমাকে ঠিক করে দেও না আমার এখন এ-ই মুহুর্তে কি করা উচিৎ,,মা জানো উজান না এ-ই কারণে আমার সাথে এতোদিন খারাপ ব্যবহার করে এসেছে সে জানতো যে আমি তোমাদের মৃত্যুের জন্য যারা দায়ই তাদেরকে কতোটা ঘেন্না করি,,তাই তো উনি আমার সাথে চোখ মেলানোর ভয়ে,,কিন্তু উজানের দোষ কোথায় এতে মা,,আজ তোমাদের সাথে ন্যায় করলে আমাকে হয়তো আমার বাচ্চা টা কোনো একদিন প্রশ্ন তুলবে,,আমার ওনার প্রতি বিশ্বাস টা আমাকে প্রশ্ন তুলবে,,আমার ভালোবাসা আমাকে দেখিয়ে দেবে সেটা মিথ্যা ছিলো এতোদিন,,আর আজ যদি আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দেই তোমরা আমাকে তোমাদের কাঠগড়াতে দাঁড় করাবা না তো কখনো!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here