মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 ইভা রহমান Part-60

4
1507

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

ইভা রহমান
Part-60

🌻🦋অন্তিমপর্ব🦋🌻

প্রায় তিন বছর পর,,এ-ই তিন বছরে জীবনের নিয়মগুলো যেমন পাল্টেছে তেমনি ঘড়ির চাকার দূততার সাথে পাল্টেছে উজান হিয়ার জীবন,,দায়িত্ব গুলো যেনো আগের চাইতে বেশি হয়ে কাঁধে ভার জমিয়েছে,,তারা নিজেও সেই দায়িত্বগুলো,কর্তব্যগুলো সুনিপুণ হাতে সামলাতে শিখে গিয়েছে,,উজানরা সন্ধিসহ পাঁচ বন্ধু মিলে যে প্রজেক্টের সূচনা করেছিলো সেই বাড়ির কাজ এখন পুরোপুরি শেষের পথে,,বাড়ির নাম রাখা হয়েছে ভালোবাসার বাড়ি,,এ-ই ভালোবাসা বাড়ির গ্রাউন্ডফ্লোরের উপর তলায় থাকে হিয়া উজান তাদের পাশের ফ্ল্যাট টা তুষার আর সন্ধির জন্য বরাদ্দ রাখা,,এদের উপরে সাব্বির ঝিনুক,,তার পাশে রুপম আর তার সদ্য বিয়া করে ঘরে আনা ওয়াইফ,,আর তাদের উপরের পুরোটা রাখা হয় ফারিহাদের জন্য,,সেদিন হিয়ারা ঢাকা ছেড়ে আসার সময় যখন ফারিহার মা বলেছিলো তারাও উজানের এই প্রজেক্টে ইনভেস্ট করতে চায় সেই সূএে তাদের জন্য এ-ই ব্যবস্থা,,যদি কখনো ফারিহার বাবা ট্রান্সফার হ’য়ে রংপুরে আসার সুযোগ পায় তারা তখন পারমানেন্ট এখানেই এসে থাকবে,,

উজান হিয়া চাইলে রংপুরে ওদের নিজেদের বাড়িতে থাকতে পারতো কিন্তু সে বাড়িতে জায়গা ঠিক হয়ে উঠছিলো না,,শ্রাবণের জন্য আলাদা রুম,,হিয়ান বড় হচ্ছে তার রুম,তার উপর উজানের ছোট যে বিহান সেও বিয়ে করে বউ নিয়ে আসায় উজান আর ঝামেলাতে জড়াতে চাই নি,,তবে এই বাড়ির সাথে তাদের বাড়ির দূরত্ব হেঁটে যেতে চাইলে দশমিনিট আর রিক্সায় বড় জোড় পাঁচ মিনিট,,উজানের মা আর বাবা তো রাতে ওদের বাড়িতে থাকলেও দিনের পুরোটাই এ-ই বাড়িতে এসে হিয়ান আর শ্রাবণের সাথে থেকে যায়,,এদিকে ঝিনুকেরো কোল জুড়ে গত মাসে এসেছে এক ছোট্ট ছেলে বাচ্চা,,সন্ধিও এই বছরের প্রথম দিকে কনসিভ করেছে,তার এতোদিনের মনের সুপ্ত কষ্ট,মা হওয়ায় সুপ্ত আকাঙ্খা তার এতোদিন বাদে পূর্ণ হতে যাচ্ছে,,রুপম অবশ্য চাইছে কিছুদিন বিয়ের এই আমেজ টা উপভোগ করতে পরে ওসব বাবু নিয়ে চিন্তা করা যাবে,,এ-ই তো সব মিলিয়ে ভালোবাসার বাড়ি পুরো ভালোবাসায় মাখোমাখো হয়ে থাকে প্রত্যেকটা মুহুর্ত!!

হিয়া নিজের কথা রেখেছে সে বলেছিলো সে উজানের থেকে এক পয়সা বেশি হলেও রোজগার করে দেখিয়ে দিবি আর আজ তাই হচ্ছে,এখানে এসে উজান যে-ই বেসরকারি নামকরা হাইস্কুলের টিচার হয়ে জয়েন করেছে হিয়া সেই স্কুলেরই কলেজ সেকশনের কেমিস্ট্রি ম্যাডাম হিসাবে যোগ দিয়েছে,,উজানের বেতন যেখানে ৩৫সেখানে সংসারে হিয়ার ইনভেস্ট পুরো ৫০,,ব্যাপারটা অদ্ভুত না!একজন ভার্সিটি থেকে আসা টিচার কি করে হাই স্কুলের টিচার হলো আর হিয়া এসেই কলেজের টিচার,,কি জানি সেদিন নিয়োগ পরীক্ষায় হয়তো উজান ইচ্ছে করেই কিছু লিখেনি!!

তবে উজানের এতে কোনো আক্ষেপ নেই সে তো এ-ই বাচ্চা ছেলে-মেয়ে গুলোর ক্লাস নিতেই মহাখুশি,,কারণ স্কুল লেভেলের যেই মজা সেটা কি আর হিয়া ফিল করতে পারবে হু,

এদিকে আমাদের আদরের হিয়ান সবে প্লে থেকে নার্সারিতে উঠেছে সে আর শ্রাবণ একই সাথে হিয়াদের এ-ই স্কুলে পড়ে মানে সে নার্সারিতে আর শ্রাবণ ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে,,কখনো হিয়ান ক্লাস শেষ করে তার দাদুভাই বা দাদিমনির সাথে বাড়ি ফিরে আসে তো কখনো উজানের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে দেখতে থাকে তারা বাবা কি করে বড়আপু দের ক্লাস নেয়,,স্যারের মেয়ে হিসাবে হিয়ানকে সবাই খুব আদর করে,,তবে আফসোস এতো হ্যান্ডসাম স্যার টা কি না ম্যারিড!!হিয়াকেও এদিকে কলেজের ছেলেমেয়েগুলো ম্যাম হিসাবে বড্ড সম্মান করে,,আর হিয়ানকে চকলেট চিপস কিনে কিনে দেয়,,

শ্রাবণ,,তার কথা তো না বললেই গল্পের ইতি টানা টা বড়ই কষ্টের হয়ে দাঁড়াবে,,ছোট বেলায় যতোটা কিউট ছিলো বড় হওয়াতে কিউটনেস টা হালকা কমে আসলেও চেহারাতে এসেছে একটা অন্যরকম গাম্ভীর্য,,উজানের মতোই লম্বা তারউপর সেই ড্যাশিং পার্সোনালিটি,,কলেজের ঔ ব্লুপ্যান্ট,নীল শার্ট কালো সু,,ঝুলানো আইডি কার্ড হাতে কালো ঘড়িতে যখন নিজেকে তৈরি করে দেখতে সত্যি অদ্ভুত সুন্দর লাগে,,মাঝেমধ্যে তো আবার যখন উজানের বাইক টা পার্ক করতে কলেজের মাঠ দিয়ে এ্যান্টি নেয় ভাইরে ভাই কলেজ সেকশন তো বাদই দিলাম স্কুলের মেয়ে গুলোরো মনের মধ্যে চিনচিন ব্যাথা তুলে দেয় সে,,স্কুলে তো কমই ছিলো কলেজে উঠার পর কম মেয়ের সে প্রপোজাল পাই নি এমন,,তবে উজান আর হিয়ার জন্য কলেজে খুব একটা বাদরামি করার সাহস সে মনে আনতে পারে নি,,তার অন্যান্য ফ্রেন্ডরা দেওয়াল টপকে টাউন হলে আড্ডা জমাতে গেলেও সে এ-ই সাহস কোনোদিন মনে আনতে পারে নি,,আর সাহস থাকলেও সে এই কাজ কখনোই করতো না কারণ সে জানে এ-ই ক্লাস না করে কলেজ থেকে পালিয়ে যাবার কথা হেড টিচারের কানে পৌঁছালে তার যতোটো না পানিশমেন্ট হবে তার চাইতে বেশি অসম্মান হবে এখানে শিক্ষকতা করা তার বুবু আর ভালো ভাইয়ার,,,,,,এ-তো সতো সুন্দরী মেয়ে গুলো তার আশেপাশে থাকলেও সে কখনো প্রয়োজন ছাড়া তাদের দিকে চোখ তুলে দেখে নি,,তার কোনো সেই অনুভূতিই কাজ করে নি,,তার মন তো পড়ে আছে অদূরে সেই ছোট্ট ফারিহার কাছে,,ফারিহার সেই জায়গা থেকে সে যে এখনো বের হতে পারে নি,,বরং ফায়সালের সাথে কথা বলার সময় ফারিহার নিত্যনতুন খবর তার মনকে ভরিয়ে দিয়েছে রোজরোজ,কখনো ভিডিও কলে হুট করে ফারিহা যখন দুম করে এসে বলে শ্রাবণ ভাইয়া, একটা অন্য রকম ধাক্কা এসে লাগে শ্রাবণের বুকে,,বয়স বাড়ায় সাথে সাথে শ্রাবণ বুঝতে শিখেছে ভালোবাসা কি হয়তো সমানে আরো শেখা বাকি তার,,কিন্তু সে এটুকু বুঝে গেছে তার শুধু তার ফারিহাকে চাই,অনেক অনেক চাই,,মাএারিক্ত পরিমাণে চাই!!

🍁

টিচার্স মিটিং শেষে হন্তদন্ত হয়ে হিয়া গেটের দিকে হেঁটে আসছে,,উজানের মিটিং হিয়ার আগেই শেষ হয়ে এখন সে বাহিরে বসে আর সব স্যারদের সাথে চা খেতে খেতে হিয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলো,,হিয়াকে আসতে দেখেই উজান সব স্যারদের থেকে বিদায় নিয়ে ওর বাইক টা স্টার্ট দিতেই হিয়া দৌড়ে এসে উজানের পেছনে বসে গেলো,হাতে তার এক গাদা পরীক্ষার খাতা,,হিয়া না পারছে ওর কাঁধের ব্যাগ টা সামলাতে না পারছে খাতা গুলো,,উজান বাইক স্টার্ট দিলেও হিয়ার নড়াচড়া যেনো কিছুতেই কমছে না,,

হিয়াঃ দেড়ি হ’য়ে গেলো না আমার আসতে,,সরি সরি,,

উজানঃ আস্তে,,আর আমি একটা জিনিস বুঝি না সব খাতা কি স্যাররা তোমাকেই কাটতে দেয়,,সেই এক সপ্তাহ ধরে খাতা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করা দেখছি,,একবারে সব খাতা নিয়ে এক রাতে বসে সব দেখে দিলেই তো হয়,

হিয়াঃ হ্যা আমার যেনো খুব সময় আপনার মতো,,সারাদিনে দুটো বাচ্চার পেছনে ছুটতে গিয়ে রাতে পুরো কাহিল হয়ে ঘুম ধরে যায় আমার,,,,,,দেখি তাড়াতাড়ি নিন তো ওদিকে আবার ফারিহা-রা আজকে একবারে চলে আসছে,আমি ফারিহার মা’কে বলেছি আজকে দুপুর-রাত আমাদের এখানে খেতে,,শুধু শুধু এসে রান্না করার কি দরকার,,

উজানঃ যাক তাও যে ভালো আঙ্কেলের ট্রান্সফার টা হ’য়ে গেলো বলো,শ্রাবণ টাও খুব খুশি জানো,যবে থেকে শুনেছে ফয়সাল রা একবারে চলে আসছে ওর চোখে মুখে একটা আলাদা আনন্দ কাজ করছে আমি দেখলাম,,

হিয়াঃ হুম আমিও খেয়াল করেছি,,ফয়সালই তো ওর সবকিছু ছিলো একটা সময় তাই না বলুন,,যাগ সবাই মিলে এখন একসাথে থাকবো ওতেই আমি খুব খুশি,,

!
!

আজ শ্রাবণ কলেজে যায় নি,,সকাল থেকে অপেক্ষা করছে কখন ফারিহারা আসবে,,তার যে আর মন সইছে না,সে একবার রুমে যাচ্ছে একবার ব্যালকুনিতে পায়চারি করছে,,তো কখনো বারবার এসে আয়নায় নিজেকে দেখছে,কেমন এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার,সেই তিন বছর থেকে সে ফারিহার বাবা-র ট্রান্সফারের জন্য দোয়া করছিলো,,কেনো তার বাবার ট্রান্সফার টা হতে গিয়েও হচ্ছে না খুব রাগ হতো তখন শ্রাবণের,,তার প্রতি মোনাজাতে সেই একই প্রার্থনা ছিলো ফারিহা পিচ্চি তাড়াতাড়ি চলে আয় প্লিজ,,আমি তোর অপেক্ষায় আজো আছি,,

একটা বড় কালো রঙের হায়েজ এসে থামলো বাড়ির নিচে বড় গেটটার কাছে,,তার কিছুসময় পর সরু রাস্তা বেয়ে পেছনে আসলো দুটো বড় ট্রাক যাতে অনেক অনেক মাল পএ দিয়ে ভরা,,গাড়ির হর্নের শব্দে ঘড়ির দিক থেকে চোখ নামিয়ে দৌড়ে ব্যালকুনিতে আসলো শ্রাবণ,,গাড়ি থেকে প্রথমে নামলো ড্রাইভার আঙ্কেল তারপর ফারিহার মা, ফয়সালদের গাড়িটা আপাতত রাস্তায় জ্যামে আঁটকে আছে তাই এখনো তারা এসে পৌছে নি,,,,সবাইকে নামতে দেখে দম টা বুঝি এ-ই আঁটকে যায় যায় শ্রাবণের,,কোথায় তুই ফারিহা,,নাম না জলদি,,

ফারিহা নামলো গাড়ি থেকে,,তার চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে খুবই ক্লান্ত,,নামতেও যেনো চাইছে না তার পা দুটো,অনেক কষ্টে গাড়ি থেকে নেমে তার মায়ের হাতে নিজের ভার দিয়ে ঘুমো ঘুমো চোখটা হালকা কচলে নিয়ে একটা হাই তুললো সে,,সেই হাইয়ের ধাক্কা টা এসে লাগলো শ্রাবণের বুকে,,ফারিহা চোখ তুলে উপর তলার ব্যালকুনির দিকে তাকাতেই তার চোখ আঁটকে গেলো শ্রাবণের চোখের দিকে,,দু’টো চোখ এ-ই মুহুর্তে নিজেদের সব দিয়ে একে অপরকে দেখায় ব্যস্ত যেনো,,শ্রাবণের পুরো শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে যাচ্ছে এমন,ফারিহা একটা দম ফেললো,,মলিন সেই মুখ দিয়ে একটা বড় করে হাসি টেনে শ্রাবণ ভাইয়া বলে চিৎকার করতেই শ্রাবণের ঘোর কাটলো,,এক অন্যরকম অনুভূতি একটা শান্তির বাতাসের দোল এসে তার সমস্ত শরীরকে নাড়িয়ে দিলো,,

ফারিহাঃ শ্রাবণ ভাইয়াআআআআ,,আমরা এসে গিয়েছি,,আমাদের ঘরে তুলবে না,,নামো নামো নামো নিচে নামো,,হিয়া আপু কোথায়??হিয়ান বুড়ি কোথায়?দাঁড়াও আমি আসছি উপরে,,

চিৎকার করে করে কথা গুলো বলে ফারিহা এক ছুটে ভেতরে এসে দৌড় দিয়ে সিড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করলো,,শ্রাবণো এক ছুটে তড়িৎ গতিতে ছুটে নামতে থাকলো নিচে,,দুজনে এসে মাঝ সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে গেলো,,দুজনে জোড়ে জোড়ে শ্বাস টানছে কতোদিনের অপেক্ষার অবসান হলো আজ!!ফারিহার সব ক্লান্তি যেনো শ্রাবণকে দেখে এক লহমায় ছুটে গেলো,,শ্রাবণের তো মন বলছে তার পিচ্চি টাকে এ-ই মুহুর্তে জড়িয়ে ধরে সে বলুক এটা তোর আসার সময় হলো কতো বছর ধরে আমি তোর জন্য অপেক্ষা করছি হেবলি,,কি হতো আরেকটু তাড়াতাড়ি আসলে,খুব ভালো লাগে না এ-ই শ্রাবণ ভাইয়াটাকে জ্বালাতে তোর,,কিন্তু শ্রাবণ তার কিছুই করলো না,,নিজেকে সংযত করে নিয়ে ফারিহার মুখে শুধু ওর হাত টা বুলিয়ে দিলো,,শ্রাবণের চোখ টলটল করছে পানিতে এই বুঝি পলক পড়তেই গড়িয়ে পড়বে মহামূল্যবান কিছু,,

ফারিহাঃ শ্রাবণ ভাইয়া তুমি কি কাঁদছিলে,,আমরা এসেছি তুমি খুশি হও নি,,আমরা কি চলে যাবো,,হিয়ান কোথায় আমি ওকে কোলে নেবো,,প্লিজ আমাকে ওর কাছে নিয়ে যাও না,,

শ্রাবণঃ যাবোই তো,,তার আগে একটা কথা বল তোর কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই তো?

শ্রাবণের প্রশ্নে ফারিহা পুরো থ হ’য়ে যায় ,এতোদিন পর দেখায় একি প্রশ্ন করছে শ্রাবণ ওকে,,

ফারিহাঃ are you gone mad শ্রাবণ ভাইয়া,,আমি এখন কেবল এ্যাইটে পড়ি আমার বয়ফ্রেন্ড কি করে থাকবে,,তবা তবা কাটো,,,,আমার বয়ফ্রেন্ডের ব তো দূরে থাক আমার ছেলে বন্ধু থাকলেও ফয়সালের বাচ্চা যা করে না কোনো ছেলেই আমার দিকে তাকার সাহস পায় না,,এমন খারাপ ফয়সাল টা,,

ফারিহার কথায় একটা বড় শান্তির শ্বাস ছাড়লো শ্রাবণ,,যাক যে ভয় টা এতোদিন ওকে তাড়া করে বেড়িয়েছিলো সেটা এখন থেকে আর তার থাকবে না,,

শ্রাবণঃ যাক ফয়সাল মোটাটাকে যে-ই কাজ টা দিয়েছি ঠিকঠাক করেছে তাহলে,,

ফারিহাঃ কি বিড়বিড় করছো শ্রাবণ ভাইয়া?

শ্রাবণঃ কিছু না,,তোরা এখন এ্যাইট নাইনের মেয়ে গুলো যে পাকা বাপরে বাপ এক এক জনের তো আবার দশ বারোটা বয়ফ্রেন্ড থাকে ঔ জন্য জিজ্ঞেস করলাম আরকি,,হিয়ান উপরে আছে আয় আমার সাথে,,

ফারিহাঃ থাক আমি একাই চিনে যেতে পারবো,,ফয়সাল আসবে তুমি বরং নিচে গিয়ে তোমার কলিজার বন্ধুকে ওয়েলকাম করো,,হু

ফারিহা শ্রাবণকে ধাক্কা দিয়ে উপরে উঠতে থাকে আর বলতে থাকে

ফারিহাঃ সত্যি তুমি একটা পাগল শ্রাবণ ভাইয়া এতোদিন বাদে কেউ দেখা হলে জিজ্ঞেস করে কেমন আছিস আর তুমি কি প্রশ্ন করলে আমার বয়ফ্রেন্ড আছে কি না,,মাথাটাথা সত্যি গেছে তোমার,,

বলতে বলতে ফারিহা উপরে উঠে যায়,,শ্রাবণ ওর মাথায় একটা হাত রেখে একটা হাসি টানে,,

শ্রাবণঃ তোর জন্যেই তো পাগল ফারি পাগলি,,খুব খুব পাগল খুববববব,,

!
!
শ্রাবণের এই মনের আনন্দ এখন আর দেখে কে,,সে তো পেয়ে গেলো তার ফারিহাকে
,,এরপর শুরু এক নতুন প্রেমের অধ্যায়,,ফারিহার মা ফারিহা আর ফয়সালকে ভর্তি করিয়ে দেয় হিয়াদেরই কলেজে,,সেই শুরু হয় আবার শ্রাবণের ফারিহার সাথে মারামারি কাটাকাটি,,দিন গুলো চলতে থাকে জীবনের নিয়ম অনুযায়ীই,,শুরু হয় আরেক টা পথের,,
!
!
আজ কলেজ থেকে ফিরে এসে শ্রাবণের মেজাজ গেছে পুরো বিগড়ে,,সে টাই টা এক টানে খুলে শার্টের সব গুলে বোতাম খুলে সিঁড়ির নিচে গত বিশ মিনিট ধরে বসে আছে,,এমনিতে এই কাঠ ফাটা রোদ,পিঠ আর বুক দিয়ে তার টুপটাপ ঘাম ঝরে পুরো শার্ট ভিজে আছে,কোথায় ফারিহা আজ!প্রত্যেকদিন একসাথে ফিরে আজকে কি তার,ঔ বান্ধবীদের সাথে না আসলে চলতো না,,এতো সাহস ওর,,

মাথার পোনিটেইল টা হাত দিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছে ফারিহা,,শ্রাবণকে সিঁড়িতে বসে থাকতে দেখে ফারিহা একটু ভয় পেলেও পর মুহুর্তে একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে শ্রাবণকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই শ্রাবণ হাত দিয়ে ফারিহার ব্যাগের ফিতে টা টেনে ফারিহাকে থামিয়ে দিলো,,

ফারিহাঃ কি চাই শ্রাবণ ভাইয়া তোমার!

উজান উঠে দাঁড়িয়ে ফারিহাকে দেওয়ালে হালকা ঠেলে দিয়ে নিজের একটা হাত রাখে দেওয়ালের ভাঁজে,,

ফারিহাঃ ইসস কত্তো ঘেমে গেছো তুমি শ্রাবণ ভাইয়া,,এ-ই গরমে কেনো যে এই সিঁড়ি তে বসে আছো কে জানে,,দেখি আসো তো এদিকে,,

ফারিহা ওর হাতে থাকা টিস্যু টা দিয়ে শ্রাবণের কপাল মুছে দেয়,,সে পুরোপুরি না বুঝলেও এটা খুব ভালো করে জানে তার শ্রাবণ ভাইয়া তার জন্য কত্তো পাগল!!

শ্রাবণঃ বলেছিলাম না টিফিন পিরিয়ডে নিচে নামবি না,,কিসের জন্য নামছিলি নিচে আমি কিন্তু ছয় তলার উপর থেকে দাঁড়িয়ে থেকে সব দেখছি,,

ফারিহাঃ আমার পানি শেষ হ’য়ে গিয়েছিলো তাই নেমেছিলাম শ্রাবণ ভাইয়া,,

শ্রাবণঃ কতো পানি লাগে তোর,,এ-তো বড় বোতলেও হয় না,,আর শুধু কি পানি আনতে গিয়েছিলি আমি তো তোকে ক্যান্টিনেও যাওয়া দেখছি,,

ফারিহাঃ হ্যা আমার কি খিদে পায় না ঔ জন্য তো আমি ক্যান্টিনে গিয়েছিলাম,,আমি কি টিফিন টাইমে একটু খাবোও না তোমার জন্য,,এমনিতে আম্মু আজকে আমার ডিম পরোটা না দিয়ে অফিস চলে গেছে,,কি খিদে পাইছিলো আমার জানো তুমি,,আর তুমি বলছো আমি খাবো না,,

শ্রাবণঃ সরি সরি আমি কি তা বলেছি একবারো যে তুই খাবি না,,তোর খিদে পেলে অবশ্যই খাবি দরকার পড়লে আমাকে পুরো গিলে খাবি,,

ফারিহাঃ কি!😒

ফারিহা ভূ কুঁচকে কি বলতেই শ্রাবণ আমতা আমতা শুরু করে,,

শ্রাবণঃ না মানে আমাকে কেনো খাবি,,আমি বলছিলাম যে খিদে পাইছে খাবি কিন্তু তার জন্য ঔ ভিড়ের মাঝে ক্যান্টিনে যাবার কি দরকার আমাকে একটু এসে বললেই তো আমি কিনে নিয়ে এসে দিতাম,,

ফারিহাঃ ঠিক আছে কাল থেকে বলবো,,

শ্রাবণঃ শোন এখন বাড়ি গিয়ে খেয়ে দেয়ে একদম একটা ঘুম দিবি,,আজকে আমি বিকালে হিয়ানকে নিয়ে মেলায় যাবো তোর ভাইও যাবে,,আর আমাদের সাথে তুই ও যাবি,,বুঝছিস আমি কি বললাম,,

ফারিহাঃ আমি আবার মেলায় যাবো!!ইসস শ্রাবণ ভাইয়া তুমি কত্তো ভালো ঔ ফয়সাল টাকে বললেও তো আমাকে নিয়ে যায় না,,ফালতু একটা,,ঘোড়ার ডিম একটা,,

শ্রাবণঃ হুম,,আর শোন এ-ই নে তোর তিনদিনের চকলেট,,সব গুলো আবার একবারে শেষ করিস না,,এমনিতেও তোর দাঁতের যা ছিড়ি,,এরপর সব দাঁত পোকায় খেয়ে তুই ফোকলা হ’য়ে গেলে তো আমার মুশকিল!

ফারিহাঃ আমি ফোকলা হ’য়ে গেলে তোমার কি শ্রাবণ ভাইয়া??

শ্রাবণঃ কিছু না,,যা,,

ফারিহা শ্রাবণের চুল গুলো হালকা করে নেড়ে দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই শ্রাবণ আবার ডাক দেয়,,

শ্রাবণঃ এ-ই শোন,,

ফারিহাঃ আবার কি শ্রাবণ ভাইয়া,,

শ্রাবণঃ ভাইয়া ভাইয়া ভাইয়া,,তোর কি প্রতি বাক্যের শেষে শ্রাবণের সাথে ভাইয়াটা না যোগ করলে পেটের ভাত হজম হয় না,,বেয়াদব একটা,,,,শোন মেলাতে যাবি ঠিকই সাজবিও সুন্দর করে,,এই লম্বা চুল গুলো সব খুলে দিবি,চোখে হালকা কাজল দিবি,কপালে একটা কালো টিপ দিবি কিন্তু

ফারিহাঃ কিন্তু কি শ্রাবণ ভাইয়া?

শ্রাবণঃ ভূলেও ঠোঁটে ঔ রঙ টঙ মাখবি না,,অসহ্যকর একটা জিনিস,,

ফারিহাঃ আমার ঠোঁট আমি যা খুশি দেবো,,তোমাকে বলে দেবো,,হু

ফারিহা শ্রাবণকে একটা ভেংচি কেটে উপরে চলে যায়,শ্রাবণ একটা মুচকি হেঁসে দিয়ে উজান আর হিয়ার জন্য একটা সারপ্রাইজ আনতে নিচে নেমে আসে,,

!
!

শ্রাবণ চলে যাবার কিছুক্ষন পর হিয়া বাড়িতে ফিরে,,আজ হিয়া কলেজ থেকে ফেরার পথে ঝিনুক সহ একটু মার্কেটের দিকে বেড়িয়েছিলো,,কেনাকাটা করে ঝিনুক আবার হিয়াকে নিয়ে আসে ফুলের দোকান গুলোর ওখানে,,কাল না-কি সাব্বিরের কোন ভাইয়ের বিয়ের দাওয়াত আছে ঝিনুক নাকি শাড়ি পরে মাথায় জারা লাগিয়ে ঔ অনুষ্ঠানে যাবে,,ঝিনুকের সাথে ফুল কিনতে এসে হিয়ারো অনেক কয়েকটা ফুল পছন্দ হ’য়ে যায় কিন্তু সব ফুল থুইয়ে হিয়ার চোখ আঁটকে যায় সূর্যমুখী ফুলের তাক টার দিকে,,সূর্যমুখী ফুল গুলো যেনো সূর্যের বদলে হিয়ার দিকে তাকিয়েই হি করে হাসি দিচ্ছে,,কি মনে হতে হিয়া একটা সূর্যমুখী ফুল কিনে নিয়ে ঝিনুক সহ বাড়িতে ফিরে,,

এদিকে উজান আবার স্কুল শেষ করে বাড়িতে এসেই বাবা মেয়ে তে ইচ্ছে মতো এতোক্ষণ খেলছিলো,,হিয়া এলে উজান গেট খুলে দিয়ে হিয়ার মুখে একটা চুমু এঁকে দেয়,,হিয়া উজানের মুখে সূর্যমুখী ফুল টা দিয়ে একটা বারি মারে,,

হিয়াঃ কি হচ্ছে কি শ্রাবণ বাড়িতে নেই?

উজানঃ না ওকে আমি একটা কাজে পাঠিয়েছি,,কিছু জিনিস আনতে,,

হিয়াঃ তা আপনার মেয়ে নিশ্চয়ই বাড়িতে আছে,,তাঁকে তো অন্তত একটু দেখেশুনে তারপর আদর করুন,,

উজানঃ ও এখন মন দিয়ে খেলা করছে দেখবে না,,দেখি এটা কি আনছো,,কোথায় পেলে এটা?

হিয়াঃ ঝিনুকের সাথে ফুল কিনতে গিয়েছিলাম,পছন্দ হয়েছে তাই নিয়ে আসলাম,,সুন্দর না ফুল টা দেখুন,,

উজানঃ হু সুন্দর অনেক,,

হিয়াঃ হিয়ান কি দুপুরে খেয়েছে আপনার কাছে,না আমি আগে ওকে খাওয়াবো এখন?

উজানঃ আপনার অর্ধেক কাজ আমি করে দিয়েছি ম্যাডাম,,আপনার মেয়েকে গোসল করিয়ে দিয়ে ঠিক মতো খাইয়ে একদম সুন্দর বাবু করে সাজিয়ে দিয়েছি,,গিয়ে দেখুন,,

হিয়াঃ(একটা দম ফেলে) আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না কতো বড় উপকার করেছেন আপনি আমার উজান,,এ-ই মেয়েকে খাওয়াতে গেলে তো আমার পুরো নাজেহাল অবস্থা হ’য়ে যায়,,যাগ এ-ই ফুলটা গিয়ে মাথার কাছের ঔ নতুন ভ্যাচ টায় একটু সাজিয়ে দিন কেমন,,আমি ততোক্ষণে টপ করে গোসল টা করে আসি,,

উজানঃ ঠিক আছে যা-ও,,

উজান হিয়ার হাত থেকে ফুল টা নিয়ে বেডের পাশের ঔ টেবিল টায় রাখা নতুন ফুলদানিটাতে গিয়ে সাজিয়ে দেয়,,হিয়া হিয়ানকে এসে একটা টাইট হামি দিয়ে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গোসলে যায়,,হিয়া বের হতে হতে উজান আবার সব তারকারি গরম করে এনে টেবিলে সাজিয়ে দেয় কারণ সে হিয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলো এতোক্ষণ,কখন হিয়া আসবে কখন তারা দুজন একসাথে খাবে,,তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বের হয় হিয়া,,দু’জনে মিলে এরই মধ্যে খাবার টাও খেয়ে নিয়ে বিশ্রাম করতে রুমে আসতেই শ্রাবণ গেটে নক করে,,উজান গিয়ে গেট খুলে দিলো শ্রাবণ তিনটে বড় বড় প্যাকেট নিয়ে রুমে ঢুকে,,

হিয়াঃ এগুলো কি শ্রাবণ তোর হাতে?

শ্রাবণঃ দুটো ভালো ভাইয়ার জিনিস আর একটা আমার,,তোদের জন্য সারপ্রাইজ,,ফ্রেবরুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তোদের বিবাহ বার্ষিকি চলে গেলো কিন্তু আমি তো স্পেশাল কিছুই তোদের গিফট করতে পারলাম না,,তাই ২৫তারিখ তোর জন্মদিন উপলক্ষে এটা আমার তরফ থেকে তোর আর ভালো ভাইয়ার জন্য,,

উজানঃ যা আমিও তো তোর বুবুর জন্য এগুলো গিফট নিয়ে এসেছিলাম,,তুই আজ দিয়ে দিলে আমিই বা বাকি থাকি কেনো?

গিফটের কথা শুনে হিয়া পুরো খুশিতে লাফিয়ে উঠে,,উজান আর শ্রাবণের গিফট মানেই তো অন্যকিছু তার কাছে,,

হিয়াঃ দিন না দিন না দিন না গিফট গুলো,,প্লিজ উজান ধরুন আজ আমার বার্থডে আজ দিয়ে দিন,,এই তিন চারদিন আমি মোটেও ধর্য্য ধরতে পারবো না, প্লিজজজ

উজানঃ দিচ্ছি দিচ্ছি,,উফফ দাঁড়াও ঠিক হ’য়ে,,

হিয়া হিয়ানকে কোলে নিয়ে সোজা হ’য়ে দাঁড়িয়ে যায়,,

হিয়াঃ বাবা আজ আমাদের জন্য গিফট আনছে মা কি যে ভালো লাগছে আমার,,

হিয়ানঃ তাড়াতাড়ি খোল না শ্রাববন,,আমি দেখবো তাও দেড়ি করছে,,

শ্রাবণঃ এ-ই মুখ বন্ধ করে বেশি কথা বলা ওফ কর,,দেখছিস না গিটু দেওয়া কি শক্ত করে,,

উজান প্রথমে ওর দু’টো গিফট খুলে হিয়ার হাতে দেয়,,গিফট দুটো হলো বাঁধাই করা দুটো জিনিস,, একটা হলো উজান আর হিয়ার সেই অঙ্গীকারনামা যেটা উজান সেবার দু টুকরো করে দিয়েছিলো আর একটা হলো শ্রাবণের ছোট বেলায় আঁকা সেই ছবি টা যেটা আজো উজান যত্ন করে রেখে দিয়েছিলো,তার সাথে শ্রাবণের লেখা ঔ কথা গুলো,,

কাবিননামা টা দু টুকরো থাকার পরো উজান কিভাবে যেনো আবার ওটাকে জোড়া লাগিয়ে একদম একবারের জন্য বাঁধাই করে রেখে দেয়,আর সাথে শ্রাবণের ঔ ছবি টা,,জিনিস দুটো হাতে নিয়েই হিয়া চুপ হয়ে যায়,,উজান নিজেও জানে না উজান হিয়াকে এ-ই মুহুর্তে ঠিক কতোটা দামি জিনিস গিফট হিসাবে দিয়েছে,,এ-ই জিনিস দুটো যে হিয়ার কাছে কতো মূল্যবাদ এটা একমাএ হিয়াই বলতে পারবে,,হিয়ার চোখ দিয়ে পানি না পড়লেও হিয়ার চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে চোখ টা তার ভরে গেছে পানিতে হালকা,,এদিকে শ্রাবণো ভাবতে পারে নি তার সেই ছোটবেলায় করা আর্ট টা উজান এখনো এতো যত্ন করে রেখে দিয়েছিলো,,সবার মনে এ-ই মুহুর্তে এতো আনন্দ বিরাজ করছে যে বলা মুশকিল,,কিন্তু কিন্তু কিন্তু হিয়ানের যে মেজাজ গেলো এখন পুরাই বিগড়ে এই ছবিতে তো হিয়া উজান আর শ্রাবণ আছে কিন্তু সে কোথায় হু,,রাগে হিয়ান সবার দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে উঠে তার রাগের চাহনি দেখে সবাই ভয় পেয়ে যায়,,

হিয়ানঃ আমার ছবি কোথায় এখানে,,বাবাআআআআ,,শ্রাববববববনননন,,,মাআআআআ,,আমি কোথায় এখানে,,

শ্রাবণঃ চুপ চুপ চুপ,,সবাইকে ডেকে আনবি না-কি এখন,,,এটা তুই যখন হোস নি আমি তখন এঁকেছিলাম পাগলি,,

হিয়ানঃ কেনো তুই আমাকে আঁকিসনি তখনন,,তুই জানতি না আমি আম্মুর পেটে আসবো,,

শ্রাবণঃ না রে পাগলি আমি তো নিজে ছোট ছিলাম তখন, আমি কেমন করে বুঝবো যে তুই আসবি,,আচ্ছা আচ্ছা এখন আবার কান্না শুরু করে দিস না,,আমি যেটা গিফট আনছি ওটা দেখ তো আগে

হিয়ানঃ তা না দেখিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার মুখ দেখচিস কি তুই,,

হিয়াঃ আহ হিয়ান মামা হয় না শ্রাবণ,,বলছি না মামার সাথে তুই তুই করে কথা বলবা না,,আর নাম ধরে ডাকো কিসের জন্য এখনো,,

হিয়ানঃ ঔ তো শ্রাববন,,শ্রাববন শ্রাববন শ্রাবববন

শ্রাবণ হিয়ানের চুল টেনে দিয়ে ওর আনা গিফট টা বের করে,,শ্রাবণো একটা জিনিস বাঁধাই করতে দিয়েছিলো,একটা ছবি,ছবি টা ওদের চারজনের হাতের প্রথমে উজানের হাত তারপর হিয়ার তারপর শ্রাবণের তারপর সবার উপরে হিয়ানের,,এ-ই ফ্রেম টা যতোটা না হিয়ার পছন্দ হয়েছে তার চাইতে বেশি পছন্দ হয়েছে উজানের,,উজান শ্রাবণকে বুকে জড়িয়ে পিঠ থাপড়ে দেয়,,এটারই তো দরকার ছিলো তার,,উজান ঔ তিনটে ফ্রেম নিয়ে গিয়ে ওদের বিছানার উপর দেওয়াল টায় টাঙিয়ে দেয় যদিও ঔ দেওয়ালে ওদের চারজনের আরো অনেক ছবি আছে কিন্তু এগুলো যেনো যে-ই একটু কমতি ছিলো সেটাকে পুরো শেষ করে দিলো,,হুম এখন একদম পারফেক্ট লাগছে রুম টাকে,,

হিয়ানঃ এটা বাবার হাত,এটা আম্মুর হাত,এটা শাববনের হাত আর সবার উপরে ওটা আমার হাত,,হে হে,,

শ্রাবণঃ খুশি তুই এখন,,নে এখন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে আমরা একটু পর মেলায় ঘুরতে যাবো,কুইক

হিয়ানঃ আমরা আবার আজকে মেলায় যাবো,,আমার মামা টা কি ভালোওওও,,

শ্রাবণঃ ওওও এমনি সময় শ্রাবণ শ্রাবণ আর এখন ঘুরতে নিয়ে যাবো সেই কথা শুনে মামা,,শেয়ানা কি তোর মেয়ে একটা বুবু,,

হিয়াঃ তা তুই রোজ কতোবার মেলাতে যাস,,এটাই কিন্তু লাস্ট আমি যেনো আর না শুনি,,

উজানঃ যেতে চাচ্ছে যখন যাক না,,নে ধর এটা রাখ,,ওদিক দিয়ে হিয়ানকে চিড়িয়াখানা টাও ঘুরে নিয়ে তারপর বাড়ি ফিরবি,,তাড়াহুড়োর কিছু নেই সন্ধ্যার আগে আগে ফিরলে হবে,,ঠিক আছে,,

শ্রাবণঃ বললেই তো হয় ভালো ভাইয়া যে তুমি বুবুর সাথে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে চাও,,আমি কি বুঝি না,দেও😏

শ্রাবণ উজানের হাত থেকে ছো মেরে ৫০০টাকায় জায়গায় ১০০০হাজার টাকার নোট টা গপ করো নিয়ে ওর রুমে রেডি হতে চলে যায়,,এদিকে শ্রাবণের কথা শুনে উজান হেঁসে দেয় আর কেউ না বুঝুক শ্রাবণটা তার মনের কথা কি করে জানি ঠিক বুঝে যায়,,

হিয়া হিয়ানকে একটা হলুদ ফ্রোক পড়ে দিয়ে দুই ঝুটি করে একদম সুন্দর বাবু সাজিয়ে তৈরি করে দেয়,শ্রাবণ ওর নীল জিংক্সের সাথে একটা কালো শার্ট পড়ে,,শার্টের হাতা গুলো সুন্দর করেই ফ্লোড করা সাথে বুকের আবার দুটো বোতাম ইচ্ছে করেই খুলে রাখা,,চুল গুলো সুন্দর মতো আছড়ে শ্রাবণ যে-ই ওর ফোন আর ওয়ালেট টা তুলে রুম থেকে বের হতে যাবে ওমনি ফারিহা এসে কলিংবেল বাজাতে শুরু করে,,শ্রাবণ গিয়ে দরজা খুলে দিতেই থ বনে যায়,,আজ ফারিহাও কালো পড়েছে তবে কামিজ নয় শাড়ি,,কালো শাড়ি হাত ভর্তি কালো চুড়ি কপালে কালো টিপ আর শ্রাবণকে জ্বালানোর জন্য ইচ্ছে করে ডিপ শেডের লিপিস্টিক,,শ্রাবণের চোখ আঁটকে থাকে ফারিহার উপর,,ফারিহার খোলা চুল থেকে কিছু উড়ন্ত চুল এসে জমা হচ্ছে ফারিহার মুখে ফারিহা আবার সেই উড়ন্ত চুল গুলো আলতো হাতে তার কানের পাশে গুঁজে দিচ্ছে,,কি যে মায়াবী লাগছে ছোট্ট ফারিহাকে আজ!!একটা যেনো মায়াপুরি থেকে আসা কোনো এক মায়াবতী,,🖤

ফারিহাঃ শ্রাবণ ভাইয়া, ফয়সাল ভাইয়া আমাকে বললো সে নাকি মেলার মাঠের বাহিরে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে আর তোমাকে বললো তুমি যেনো আমাকে আর হিয়ানকে নিয়ে তাড়াতাড়ি ওখানে গিয়ে পৌছাও,,কি হলো ভাইয়া শুনছো,,শ্রাবণ ভাইয়া,,ভাইয়া!!

ফারিহা শ্রাবণের চোখের সামনে আঙ্গুল তুলে তুড়ি মারতেই শ্রাবণের হুঁশ কাটে,,

শ্রাবণঃ আম আম আমার হ’য়ে গেছে,,বুবু,,বুবু হলো হিয়ানের?ফারিহা অপেক্ষা করছে,,

হিয়াঃ আসছি আসছি,,এ-ই তো আমার মেয়ে টা তৈরি,,দেখি ফারি পরী টা কোথায়,,ওমা ফারিহা,, আজকে শাড়ি পড়ছো তুমি,,খুবই মিষ্টি লাগছে,,

হিয়ানঃ ধন্যবাদ হিয়া আপু,,আম্মু শাড়ি গুচ্ছাছিলো তো আমি ওখান থেকে একটা শাড়ি নিয়ে টপ করে পড়ে ফেললাম,,ভালো করেছি না বলো,,

হিয়াঃ খুব ভালো করেছো,,দেখে মনে হচ্ছে কলেজে পড়া কোনো স্টুডেন্ট,,কেউ বলবে না তুমি এ্যাইটে পড়ছো,,এ-ই যে ভাই আমার নিয়ে তো যাচ্ছিস,তা আজ হিয়ানের পাশাপাশি ফারিহাকেও চোখেচোখে রাখবি যা সুন্দর লাগছে কেউ না আবার তুলে নিয়ে যায়,,

শ্রাবণঃ হু হু হুম,,আসছি বুবু,,থাক

শ্রাবণ হিয়ার থেকে বিদায় নিয়েই ফারিহা আর হিয়ান সহ নিচে নামতে থাকে,,শ্রাবণ এখনো ফারিহার একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলো,,ঘোর টা কেটে যেতেই শ্রাবণ কি মনে করে সিঁড়ির মাঝপথে দাঁড়িয়ে যায়,,এক হাতে ফারিহার হাত ধরে টেনে ফারিহাকে দেওয়ালের সাথে ঠেসে ধরে,,শ্রাবণের এ-ই কাজে ফারিহা তো অবাক সাথে অবাক হিয়ান নিজেও,,কি হলো কেস টা তার মামা এখন আবার ফারিহা আপুকে মারবে নাকি ওরে বাবা রে,,

শ্রাবণঃ ঠোঁটে লিপিস্টিক দিতে বারণ করেছিলাম তোকে তারপরো কেনো দিয়েছিস!

ফারিহাঃ আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই দিয়েছি কোনো সমস্যা তোমার,,

ফারিহার কথায় শ্রাবণ এবার রেগে গিয়ে ওর এক হাত রাখে ফারিহার গালে,,মুহুর্তে ফারিহার অন্তর্আত্মা বেড়িয়ে পড়ার উপক্রম,,শ্রাবণ ওর বুড়ো আঙ্গুল ফারিহার ঠোঁটে জোরে করে স্লাইড করে মুছে দেয় ফারিহার লিপিস্টিক ,,

শ্রাবণঃ ছোট আছিস ছোটর মতো থাকবি,একদম বড় হবার চেষ্টা করবি না,,এরপর আমার অবাধ্য হলেই দুই গালে এমন থাপ্পড় দেবো চকলেট খাবার জন্য আর মুখের ম ও খুঁজে পাবি না তখন,ইডিয়ট

!
!

এদিকে শ্রাবণরা চলে যেতেই উজান সব লাইট টাইট ওফ করে এসে হিয়াকে জাপ্টে ধরে,, ইসস আজ প্রায় এক সপ্তাহ বাদে বাড়ি এরকম আবার ফাঁকা আজ তাকে আর পায় কে,,সব কিছু বদলালেও উজানের হিয়ার প্রতি এ-ই বাচ্চাদের মতো জিদ করে আদর চাওয়া টাকে হিয়া কিছুতেই কমাতে পারলো না,,

উজান হিয়াকে জড়িয়ে ধরে গুনগুন করে গান গাইতে শুরু করে,আর হিয়া চেষ্টা করে উজানের থেকে নিজেকে ছাড়াতে,,

🍁

হিয়াঃ উজাননননন,,প্লিজ না,,কি করছেন আপনি ছাড়ুন,,

উজানঃ ছাড়ার জন্য ধরেছি নাকি,,এখন তো হবে অন্য কিছু,,

হিয়াঃ না উজান দেখুন আমার অনেক কাজ আছে,,আর আপনি কি হ্যা বয়স হ’য়ে বুড়ো হয়ে যাবেন আর কিছুদিন পর এখনো এসব অসভ্যতামি যায় না না,,

উজানঃ হোয়াট বুড়ো,,এখনো তিন চারটা বাচ্চার বাবা-ই হলাম না আর তুমি বলছো আমি বুড়ো হ’য়ে গেলাম!!

হিয়াঃ ইসস আপনার মুখ টাকে না আমি সুই আর সুতা দিয়ে সেলাই করে দেবো এবার,কিচ্ছু মুখে আঁটকায় না,,দেখি ছাড়ুন তো অসভ্য একটা,,

উজানঃ কিইইই!!ছাড়া যাবে না তো এখন,, আমার বাচ্চা দুটো আসা অবধি একটু আদর করবো প্লিজজজ হিয়াপাখি প্লিজ প্লিজ প্লিজ,,

হিয়াঃ মাবূদদ রক্ষা করো আমাকে,,একটুতো লেহাজ করুন,,বাচ্চাদের মতো বায়না কেনো করছেন আপনি,,এখন না রাতে,,

উজানঃ এক্ষুনি মানে এক্ষুনি,,

হিয়াঃ না মানে না,,

হিয়া উজানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বিছানার উপর রাখা জামা টা নিয়ে গুছাতে ধরে,,আর ওমনি উজান এসে হিয়াকে আবার পেছন থেকে গপ করে ধরে হিয়ার কাঁধে মাথা রেখে মুখ ঘষতে থাকে,,

হিয়াঃ আ হা,,আপনার মেয়ে স্কুলে পড়ে এখন উজান,,আর আপনার জিদ তো জেনো,,,,কেনো খুব না প্রথম প্রথম বলেছিলেন আমাকে না-কি আপনি ভালোবাসেন না,আমার মতো পেত্নী শাঁকচুন্নি কে না-কি ভালোবাসা যায় না,আপনার যে বউ হবে সে হবে এ-ই পৃথিবীর সবচাইতে মিষ্টি মেয়ে,,এখন কি হলো হুম,,ঔ ঘুরেফিরে আমাকেই বিয়ে করতে হলো তো,,

উজানঃ ঔ তো ভালোবাসি না ভালবাসি না বলে বলে তো নিজের বাচ্চার মা’ই বানিয়ে দিলাম দেখো,,

হিয়াঃ হুম তা তো দেখতেই পাচ্ছি,,

উজানঃ তা এবার আরেকটা বাবু যদি,,(শাড়ির ফাঁকে হিয়ার পেটে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে)

হিয়াঃ এখন না হিয়ান আরেকটু বড় হোক তারপর,,

উজানঃ না আমার এক্ষুনি আরেকটা ছোট হিয়ান চাই মানে এক্ষুনি চাই,,বুঝছো তুমি,,এ-ই হিয়াপাখি ওদিকে দেখো একটু,,

হিয়াঃ কোন দিকে?

উজানঃ ঔ যে ওদিকে,,তোমার নিয়ে আসা sunflower টার দিকে,,

উজানের ইশারায় হিয়া সূর্যমুখী ফুলটার দিকে তাকাতেই দেখে একটা প্রজাপতি এসে ঠিক সূর্যমুখী ফুলটার মাঝে বসে মধু খাচ্ছে,,

হিয়াঃ হুম দেখলাম,,

উজানঃ ভালো করে খেয়াল করো ওখানে একটা প্রজাপতি এসে বসেছে,,

হিয়াঃ হুম তাও দেখতে পাচ্ছি,,

উজানঃ দেখে কি বুঝছো,,সেটা বলো,

হিয়াঃ বোঝার কি আছে এখানে উজান,আমি sunflower টা নিয়ে এসেছি আর ব্যালকুনি থেকে একটা প্রজাপতি এসে ফুলটা দেখে ওর গায়ে বসে গেছে,,এই তো

উজানঃ(হিয়ার মাথায় একটা গাট্টা মেরে) বুদ্ধু একটা,,ভালো করে দেখো প্রজাপতি টা তার Sunflower এর গায়ে বসে কিরকম ফুলটার থেকে তার সব মধু শুষে নিচ্ছে,,!!

হিয়াঃ মানে!আপনি কি বোঝাতে চাইছেন একটু পরিষ্কার করে বলুন তো,,

উজানঃ ধরে নেও ঔ sunflower টা আমি আর ঔ প্রজাপতি টা তুমি,,এখন তোমার এ-ই ঠোঁটে আমি আমার সর্বস্ব আদর ঢেলে দিলে কেমন হয় ব্যাপার টা!!

হিয়াঃ কিসের মধ্যে কি,,অসভ্য মানে,,একটা যা তা আপনি,,পাগল একটা,,

প্রজাপতি টা যেমন তার Sunflower থেকে তার সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে ওমনি করে উজানো তার হিয়ার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবে দিয়ে নিজের পাওনা গুলো পূরণ করে নিচ্ছি,,ওদিকে এক হুট তলা রিক্সায় ফারিহাকে নিয়ে পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি বাতাস গায়ে মাখতে থাকে শ্রাবণ,,এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে তার, ইসস ফারিহা শাড়ি পড়বে জানলে সেও তার কালো পাঞ্জাবি টা পড়তো কি ভালো হতো তখন,,আজ শ্রাবণের শিহরণ গিয়ে লাগছে ফারিহার মাঝেও,এ এক অন্য অনুভূতি,,আর হিয়ান পিচ্চি তার মামার কোলে চেপে হাতে থাকা চিপস টা নিয়ে খাচ্ছে আর তার টুকুর টুকুর চোখ দিয়ে সে উপভোগ করছে বাহিরের এই ব্যস্ত শহর,,ব্যস্ত প্রকৃতি,, দু’জোড়া লাভ বার্ড আজ পরিপূর্ণ,,এ-ই পরিপূর্ণতা অনেক পবিএ অনেক শান্তির!!

সমাপ্ত
_____________________🌻🦋_______________________

কোন গল্পের ইতি টানতে এতোটা কষ্ট হয়নি যতোটা আজ এই গল্প শেষ করতে হচ্ছে,,আমার লেখায় অনেক জায়গায় বানানের হয়তো অনেক ভূল ছিলো লেখা ছিলো অপরিপক্ক,,তবুও এ-ই #উজান_হিয়া আপনাদের মনে কতোটা জায়গা করে নিয়েছে একটু সময় করে রিভিউ দিয়ে আপনাদের ভালো মন্দ মন্তব্য জাহির করবেন,,এ-ই গল্পের জন্য আশানুরূপ সারা পেয়েছি যদি শেষ হবার পরো রেসপন্স টা আগের মতোই থাকে তাহলে কথা দিচ্ছি সময় সুযোগ বুঝে এই গল্পের দ্বিতীয় অধ্যায় নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে,,দোয়া করবেন,,#উজানহিয়ার এই পুরো জার্নি টা কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না কিন্তু❤️🥰

4 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here