শিমুল_ফুল #৩০,৩১

0
703

#শিমুল_ফুল
#৩০,৩১
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
৩০

নিধি ধাক্কা দিয়ে পলাশকে সরিয়ে দেয়।জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলে মাথায় হাত দিয়ে বললো,
“তোমাকে তো বিয়ে করবনা।”

পলাশ নিধির দিকে তাকিয়ে বললো,
“কেন?”

নিধি কথা বলেনা।পলাশকে ঠেলে বের করতে চায়।পলাশ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে নিধির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।নিধি শক্ত-সামর্থ্য পুরুষের শক্তির সাথে পেরে উঠেনা।তারপরেও চেষ্টা করে বললো,
“আমি এই পর্যন্ত অনেক কষ্ট করে এসেছি।”

“এসেছো।কিন্তু আমাকে বিয়ে করতে কি সমস্যা?”

নিধি পলাশের চোখের দিকে তাকায়।
“পলাশ আমার দিকে একবার তাকাও।আমাকে নিয়ে ভাবো তাহলে বুঝতে পারবে কি সমস্যা।”

“সব সমস্যা বুঝে নিবো।চলো আগে বিয়ে করি।”

নিধি তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
“এই সাহস তখন কই ছিলো?যখন পাগলের মতো কেঁদে বাড়ির কাজের মেয়ে হয়ে থাকার আকুল আবেদন করেছিলাম।তোমার আব্বার পা ধরে তোমাকে চেয়েছিলাম।তুমি তো নিশ্চুপ ছিলে।যখন আমাকে নিয়ে নাটক বানিয়ে তোমাকে শোনানো হলো তখনও তো তুমি আমাকে একবারো খুঁজতে যাও নি।”

পলাশ অসহায় চোখে নিধিকে দেখে,
“আব্বা বলেছিলো তোমার বিয়ে হয়ে গেছে।”

“সব মিথ্যা ছিলো।”

পলাশ তার আব্বাকে সবসময় ঘৃণা করে এসেছে আজকে এই ধ্রুব সত্য জানার পর থেকে আরো বেশী ঘৃণা করতে ইচ্ছে হচ্ছে।তারপরেও নিধিকে বললো,
“চলো বিয়ে করে ফেলি।বাকিটা আমি সামলে নেবো।”

“তুমি যে এখানে এসেছো তোমার আব্বা জানে?”

“আব্বাকে বলে সব করতে হবে?”

“হবে।আর না হলেও তুমি যাওয়ার পরে ঠিক তোমার আব্বার হুমকি ধামকি আমার কাছে চলে আসবে।”

“এমন কিছু হবেনা।”

নিধি পলাশকে দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে বললো,
“একজন সুদর্শন পুরুষের চেয়ে একজন আত্মনির্ভরশীল সুপুরুষ একটা মেয়ের বেধী কাম্য।যেটা তুমি না।”

পলাশ অবাক চোখে নিধির দিকে তাকিয়ে থাকে।নিধি আবার বলে,
“ভালোবাসতে সাহস লাগে যেটা তোমার নেই।তুমি প্রিয় মানুষকে আগলে রাখতে জানো না।”

“আগলে রাখতে জানি না?”

নিধি পলাশের চোখে তাকিয়ে বললো,
“না।”

“ভালোবাসো না?সত্যি করে বলবে।”

“না।”

পলাশের চোখ মূহুর্তেই ছলছল করে উঠে,পুরুষালী পুরু ঠোঁট কেঁপে ওঠে কিঞ্চিৎ।গভীর চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে নিধির ফোলা চোখের দিকে।ঠোঁট নেড়ে বললো,
“তাহলে আমাকে জড়িয়ে ধরলে কেনো?”

“এমনি।”

“আমার আদর পাগলের মতো নিলে কেনো?”

পলাশের ছলছল চোখের দিকে তাকিয়ে নিধির বুকটা কেঁপে ওঠে।
“এমনিই নিয়েছি।ভুল হয়ে গেছে।”

পলাশ বুকে হাত রেখে বললো,
“এসব বলোনা নিধি।বুকে খুব ব্যাথা হয়,মরে যাওয়ার ইচ্ছা জেগে উঠে।”

নিধি তেতে উঠে বললো,
“যখন তোমার আব্বা আমাকে আর আমার পরিবারকে এই গ্রাম থেকে বের করে দিয়েছিলো তখনও আমার বুকে ব্যাথা হয়েছিলো।তোমার আব্বার উপর কিছু করতে পারবে?যদি পারো তাহলে আমার সামনে আসবে এর আগে না।”

নিধি দরজা বন্ধ করে দেয়।পলাশ চুপ করে কিছুক্ষণ বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর দ্রুত পায়ে বাড়ির উদ্যেশ্যে যায়,আজকে তার আব্বার সাথে বোঝাপড়া হবে।তার জীবন থেকে কতোগুলো বছর চলে গেছে,এর দায় কার?সব প্রশ্নের উত্তর আজকে দিতেই হবে।
নিধি জানালার গ্রীল ধরে নিঃশব্দে কাঁদে।তার মনটা আর্তনাদ করে বলে,’আমার পলাশ ঠিক জয়ী হবে।’

পলাশের পেছনেই মন্টু ছিলো।এতোক্ষণ পলাশকে লুকিয়ে লক্ষ করছিলো।পলাশ চলে যাওয়ার পরে চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়ে নিধির কথা জানায়।

শিমুল রাত নয়টায় বাড়িতে আসে।এতোক্ষণ তিয়াসের সাথে ক্লাবে বসে ছিলো।বাড়িতে এসে শিমুল ঠান্ডা চোখে পুষ্পর দিকে পূর্ণদৃষ্টি দেয়।রুমে এসে বাহিরের কাপড় বদলে ফ্রেশ হয়ে নেয়।কিছুক্ষণ পরে গিয়ে খাবার খায়,খাওয়ার সময় পুষ্পকে আশেপাশে আশা করেছিলো কিন্তু পুষ্প ধারেকাছেও নেই।শিমুলের মেজাজ আবার গরম হয়।কোনদিকে না তাকিয়ে রুমে যায়।ফ্যান ফুল স্প্রিডে ছেড়ে দু’হাত মেলে বিছানায় শুয়ে পড়ে।চোখের তারা ফ্যানের পাখায় নিবদ্ধ।পুষ্পকে ভীষন মনে পড়ছে।অথচ গাধী মেয়ে রান্নাঘরেই দাঁড়িয়ে আছে,স্বামী যে রুমে একা একা পাখা ঘুরান্টি দেখে নিজেই ঘুরে যাবার পায়তারা করছে তার কথা ভুলেই গেছে বোধহয়।

শিমুলের চোখের তাকানো,অপ্রকাশিত কথা সবটাই সুক্ষ্ম চোখে পুষ্প লক্ষ করেছে।শিমুল আসার সাথে সাথেই রুমে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু পেশকারা বাধা দেয়,বলে রাতের খাবারের সময় হয়েছে খাবার রেডী করতে।পুষ্প মাথা নেড়ে টেবিলে খাবার রেডি করে।খাবার খাওয়ার সময় যখন পুষ্প শিমুলের কাছে আসতে চায় তখন তিনি বলেন,’তোমার শশুড় আছে বেলাজের মতো কেন যাইতেছো?’
পুষ্প সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকে এই বুঝি কেউ কিছু বলে ফেললো,এই বুঝি কেউ বকা দিলো।সবচেয়ে ভয় পায় পেশকারাকে উনি সুযোগ পেলেই পুষ্পকে চোখা কথা বলেন।সবাই খাবার খাওয়ার পরে যখন রুমে আসবে তখন শওকত হাওলাদার পুষ্পকে ডাকে।এই প্রথম শওকত হাওলাদারের সাথে পুষ্পর সরাসরি কথা।মাথা নিচু করে শশুড়ের কাছে আসে।শওকত হাওলাদার পুষ্পকে তীক্ষ্ণ চোখে লক্ষ করে।এই মেয়েটার জন্যই তার সব পরিকল্পনা উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে।ইচ্ছে করছে লাত্থি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিতে।গম্ভীর গলায় বললো,
“আদা চা করতে পারো?”

পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“জ্বী।”

“জলদি চা করে নিয়ে আসো।আর হ্যাঁ আমি প্রতিদিন রাতে আদা চা খাই,মনে রাখবে।”

পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“জ্বী।”

পুষ্প দ্রুত পায়ে রান্নাঘরে যায়।চা করে শওকত হাওলাদারের কাছে গিয়ে চা বাড়িয়ে দেয়।উনি চা না নিয়ে হাত পিছিয়ে নিলেই পুষ্পর হাত থেকে কাপ পিরিজ পরে ভেঙে যায়।শওকত হাওলাদার তেতে উঠে বললো,
“মূর্খ মেয়ে পরিবার থেকে কোন শিক্ষা দেয়নি নাকি?”

পুষ্প থমথম মুখে মাথা নিচু করে রাখে।পেশকারা ছুটে এসে আহা আহা করে উঠে।কতো সুন্দর কাপ পিরিজের সেট ছিলো।পুষ্পর মাথায় ধাক্কা দিয়ে বললো,
“একটা কাজও ঠিক মতো করতে পারেনা।খালি পোলাদের মাথা খাইতে পারে।”

শশুড়ের সামনে পেশকারার এমন কথায় পুষ্পর খুব অপমানবোধ হয়,লজ্জায় গলা রোধ হয়ে আসে।চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে।রাবেয়া রান্নাঘর থেকে ছুটে আসে।পুষ্পর অবস্থা দেখে বললো,
“আর বকা দিয়েন না আম্মা।বাচ্চা মানুষ বুঝে নাই।”

পেশকারা পুষ্পর গালে আঙুল দিয়ে খোঁচা দিয়ে বললো,
“কিসের বাচ্চা!ছেলে রোখাতে পারে,শিমুলের মতো ছেলের মাথা খেয়ে ফেলছে এইটা আবার বাচ্চা কিভাবে হয়?”

রাবেয়া একবার স্বামীর দিকে তাকায়।উনি বেশ আয়েশ করে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে।
“হয়েছে তো আম্মা একটা কাপই তো।আমি আবার কিনে নিবো।”

“একটা কাপ কি গোমতী নদী দিয়ে ভেসে ভেসে এসেছে?দুই দিনের মেয়ের জন্য আমার সাথে তর্ক করো?শওকত কিছু বলবিনা আব্বা?”

শওকত রাবেয়াকে ঘর কাঁপিয়ে ধমক দেয়।উনার ধমক শুনে পুষ্প ঠোঁট উল্টে নিঃশব্দে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।
“বেয়াদব মহিলা।আমার আম্মার উপরে কথা বললে পিঠের চামড়া খুলে ফেলবো।”

শিমুল প্রথম থেকেই দরজায় দাঁড়িয়ে সব পর্যবেক্ষণ করছিলো।তার আব্বার কথা শুনে গায়ের রক্ত জ্বলে উঠে।নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে এগিয়ে আসে।শওকত হাওলাদারের চেয়েও গলার স্বর কাঁপিয়ে ফুলিকে ডাকে।ফুলি আসলে বলে,
“সব পরিষ্কার কর।”

তারপর তার বুবুকে বলে,
“পুষ্প আমার বউ।আমার বউ আমার মাথা খাবে নাকি আমার বুক খাবে এটা আমি বুঝবো।তুমি একদম নাক গলাবে না।”

শিমুলের কথা শুনে পেশকারা কিছু বলেনা।শিমুল তেড়্যা চোখে পেশকারার দিকে তাকিয়ে থাকে পেশকারা আর শওকত হাওলাদার চলে যায়।পুষ্প শিমুলের গলার স্বর শুনে আরো গলে যায়।ঠোঁট উল্টে শিমুলকে দেখে রাবেয়া শিমুলকে ইশারা করে পুষ্পকে রুমে নিয়ে যেতে।শিমুল রুমে গেলে পুষ্পও সাথে সাথে রুমে যায়।
শিমুল রুমে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।শিমুল বুঝতে পারে তার আব্বা আর বুবু পুষ্পকে অপমান করতেই এসব করেছে।নিজের পরিবারের মানুষের এমন মন মানষিকতার পরিচয় পেয়ে শিমুল লজ্জিত।পুষ্প বিছানায় বসে।শিমুল ফ্লোরে বসে পুষ্পকে জড়িয়ে ধরে।
“সরি।”

শিমুলের দিকে তাকিয়ে পুষ্প হাসার চেষ্টা করে।
“কেন?”

“আমি তোমাকে খুব কষ্টের জায়গায় নিয়ে এসেছি।”

পুষ্প চুপ করে শিমুলকে দেখে।
“তাতে কি এখানে তো আমার শিমুল আছে,এইসব কষ্ট কিছুই না।”

শিমুল পুষ্পর হাটুতে মাথা রেখে বললো,
“আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“আরে ফ্যামিলিতে এসব হয়ই।আমি মানিয়ে নিবো সমস্যা নেই।”

শিমুল পুষ্পর মন খারাপের ভেলার ডুবুডুবু ভাব দেখে বললো,
“মন কি বেশী খারাপ?”

“না।”

“আচ্ছা মুখ ধুয়ে আসো।”

পুষ্প শিমুলের কথামতো মুখ ধুয়ে আসে।শিমুল পুষ্পর হাত ধরে ছাদে নিয়ে যায়।ছাদে গিয়ে দরজা আটকে পুষ্পকে কোলে নিয়ে নেয়।শিমুল হঠাৎ করে এমন কাজ করায় পুষ্প তার গলা আঁকড়ে ধরে।শিমুল পুষ্পকে নিয়ে হাটে।
“পুষ্প এটা আমার প্রিয় জায়গা।”

“তাই?”

“হ্যাঁ।”

“প্রিয় কেন?”

“কিছু কিছু জিনিস এমনিই প্রিয় হয়ে যায়।এদের প্রিয় হতে কোনো কারণ লাগেনা।”

“তাই?”

“হ্যাঁ।”

পুষ্প আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আজকে কি পূর্নিমা?”

শিমুলও চাঁদের দিকে তাকায়।গোলগাল চাঁদটা দেখে বললো,
“মনে হয়।”

পুষ্প মুগ্ধ চোখে চাঁদ দেখে।শিমুল মুগ্ধ চোখে তার নিজস্ব চাঁদ দেখে।কিছুক্ষণ এটা সেটা কথা বলে পুষ্পর মন ভালো করার চেষ্টা করে।পুষ্প খিলখিল করে হেসে উঠলে শিমুল হাসে।দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে পুষ্পকে ইশারা করে কোলে বসার জন্য।পুষ্প টুপ করে শিমুলের কোলে বসে বুকে মুখ লুকায়।দুজনে এতোকাছে থেকেও সারাদিন একটু কাছে আসতে পারেনি।পুষ্প শিমুলের বুকের ঘ্রান নেয়।এই বুকের শান্তির জন্য হলেও এইটুকু কষ্ট সয়ে নেয়া যায়।শিমুল পুষ্পর কপালে চুমু দিয়ে বলে,
“আমার অন্ধকার রাজ্যে পূর্নিমার চাঁদ হয়ে আসার জন্য তোকে ধন্যবাদ।আমি তোর কাছে এতো এতো কৃতজ্ঞ যে সারাজীবন নিজেকে উজার করে ভালোবাসলেও মন ভরবে না।”

পুষ্প আদুরে বিড়ালছানার মতো শিমুলের বুকে মিশে যায়।শিমুল মুচকি হাসে।মেয়েটা বুকে আসলে কি যে শান্তি লাগে!মনে হয় দুনিয়ার সব সুখ তার কাছে।পুষ্প চোখ তুলে তাকালে শিমুলের গভীর চোখের নেশায় মাখানো তিরতিরানো অনুভূতির পাগলা প্রলাপ স্পষ্ট দেখে।মুচকি হেসে শিমুলের গালে হাত ভুলায়।শিমুল চোখ বন্ধ করে নেয়।মেয়েটা তার জীবনে ভালোবাসা হয়ে এসেছে।বুকের গভীরে যায়গায় যায়গায় রঙের ছড়াছড়ি করে নেশা ধরিয়ে দিয়েছে।এখন থেকে তার প্রতিটা রাত যে উৎসবের আমেজে হইহই করেই কাটবে এটা বেশ বুঝতে পারছে।মাথা ঝুকিয়ে পুষ্পর কাছে গেলে পুষ্প বাধা দেয়।দুষ্টু গলায় ফিসফিস করে বললো,
“ছিহ্ চাঁদ দেখছে।”

শিমুল পুষ্পর গালে উষ্ণ ছোঁয়া দিয়ে বললো,
“দেখুক।”

শিমুলের চোখের নেশা গভীর হয় সাথে ভালোবাসার পরিমানও।
পুষ্প ছটফট করে বলে,
“এটা ছাদ!”

শিমুল হাসে।পূর্নিমার চাঁদকে সাক্ষী রেখে আরেক চাঁদের গায়ে ভালোবাসার কলঙ্ক লেপ্টে দিতে উদ্যত হয়।হাসি হাসি গলায় বলে,
“হোক।”

শিমুল বন্য হাওয়ায় পুষ্পকে ভাসাতে চায়।পুষ্প আধোচোখ মেলে তার পাগলকে দেখে।আসলে শিমুল পাগল।তার পাগল প্রেমিক।তাকে শূন্যে তুলে যে সর্বসুখে কাঁদাতে পারে এমন পাগল প্রেমিক।

চলবে……

#শিমুল_ফুল
#৩১
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

সবাই খেয়েদেয়ে যখন রুমে চলে যায় তখন পলাশ বাড়ি আসে।সন্ধ্যায় তার আব্বা বাড়িতে ছিলো না বিধায় কথা বলতে পারেনি।ফোন দিয়েছিলো কিন্তু ফোন রিসিভ করেনি।উপায় না পেয়ে ক্লাবে,চেয়ারম্যান অফিসে সব জায়গায় খুঁজেছে কোথাও না পেয়ে আবার বাড়িতে আসে।
শওকত হাওলাদার তখন বিছানায় বসে টিভিতে খবর দেখছে।পলাশ হন্তদন্ত হয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।ছেলের এমন কান্ডে রাবেয়া খুব অবাক হয়।শওকত হাওলাদার ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে থাকে,যেন উনি জানতেন পলাশ আসবে।পলাশ কাছে এসে বললো,
“আব্বা আপনি মি*থ্যা কেন বলেছিলেন?”

শওকত হাওলাদার অবাক হওয়ার বান ধরে বললো,
“কিসের মি*থ্যা?কিসের কথা বলছো?”

পলাশ নিজের রা*গ সংযত করে বললো,
“নিধির কথা।”

শওকত হাওলাদারের চোখে রা*গের আভাস ফুটে উঠে।
“তোমার কি মনে হয় আমি মি*থ্যা বলেছি?”

“নিধির বিয়ে হয়নি!আর আপনি বলেছিলেন নিধির বিয়ে হয়ে গেছে।”

শওকত হাওলাদার পলাশের চোখের দিকে তাকায়।সহজ গলায় বলে,
“তাতে কি হয়েছে?”

পলাশের শরীরের র**ক্ত টগবগিয়ে উঠে,
“কি হয়েছে তাই না?নিধিকে আমি ভালোবাসতাম।”

“ওটা আবেগ ছিলো।”

“আবেগ!আমার অবস্থা আপনার চোখে পড়ে না?অবশ্য আপনার মতো বাপের চোখে পড়ার কথাও না।”

অতিভদ্র ছেলের মুখে এমন কথা শুনে শওকত হাওলাদার হতভম্ব,
“মুখ সামলে কথা বলো।”

“মুখ সামলে কথা বলেছি,সম্মানও দিয়েছি কিন্তু আপনি সেসবের সুযোগ নিয়ে নিজের পরিচয় প্রকাশ করেছেন।আমার সম্মান দেয়ার কোনো দাম দেন নি।আমার জীবনটাকে ন*ষ্ট করে দিয়েছেন।আপনি যে আমার আব্বা এটা ভাবতে আমার ঘৃ*ণা লাগে।”

শওকত হাওলাদার বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়।চোখের বর্ণ র*ক্তিম হয়ে কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চায়।
“পলাশ!”

“পলাশ বলে ডাকবেন না।আজকে থেকে আপনার পলাশ বলে কোনো ছেলে নেই।”

শওকত হাওলাদার ক্ষু*দ্ধ চোখে রাবেয়ার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“রাবেয়া তোমার ছেলেকে সামলাও।”

রাবেয়া পলাশের এমন রূপ এই প্রথম দেখলো।পলাশ জন্মের পর থেকেই নদীর মতো শান্ত,রে*গে গেলেও চুপচাপ হজম করার ক্ষমতা প্রচুর।কিন্তু আজকে হঠাৎ রে*গে যাওয়ার কারনটা বুঝে উঠতে পারছেনা।অনেক বছর আগের নিধি নিয়ে এখন আবার কিসের আলোচনা সেটা ধরতে পারছেনা।তারপরেও পলাশের দিকে এগিয়ে যায়।হাতের বাহু ধরে টেনে বলে,
“কি হয়েছে আব্বা?মা’কে বলবি চল,আয় বাহিরে আয়।”

পলাশ মায়ের বাধন থেকে হাত ছাড়িয়ে বলে,
“কিছু হয় নি আম্মা।শুধু আমার জীবন থেকে সুখ নামক শব্দটা চলে গেছে।”

শওকত হাওলাদার নাক কুঁচকে বলেন,
“এই ছোটলোকের বাচ্চার জন্য তোর সুখ চলে গেছে?”

“আপনার চোখে সবাই ছোটলোক বড়োলোক শুধু আপনি।শিমুল বিয়ে করার সময়ও এগুলো বলেছেন।এগুলা বলে পরিচয় দিয়েছেন আপনি কতো বড় নিচু মনের মানুষ।”

“আমার মুখে মুখে তর্ক করিস!থা*প্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো।”

পলাশ দুই’কদম এগিয়ে যায়।নিজের গাল দেখিয়ে বলে,
“নেন থা*প্পড় দেন।তারপরেও আমি আমার পথেই থাকবো।”

পলাশের কথা শুনে শওকত হাওলাদার নিজেও কিছুটা অবাক।ছেলেটা এমন রা*গী বুঝাই যায় না।
“আচ্ছা কি চাস সেটা বল।”

“আপনাকে বলার কোনো প্রয়োজন মনে করছিনা।”

“আচ্ছা,যা ভালো হয় কর।আমি আর কিছু বলবনা।”

পলাশ তার আব্বার এরূপ উত্তর শুনে অবাক হয়।উনি তো এই কথা বলার মানুষ না।পলাশের হঠাৎ করেই মনে হলো তার আব্বা নিধির কথা জেনে যায়নি তো?অবশ্য এলাকার চেয়ারম্যান হয়ে এসব জানা কোনো বড়ো ব্যাপার না।পলাশ তার আম্মার দিকে ফিরে বললো,
“আম্মা বউ নিয়ে আসবো।”

রাবেয়া কিছু বলার আগে শওকত হাওলাদার হিসহিসিয়ে বলে,
“ওই মেয়েকে এই বাড়ির সিমানায় আনলে তোর আম্মাকে তা*লাক দিয়ে বের করে দিবো।মনে রাখিস।”

রাবেয়া পাথর হয়ে তার স্বামীকে দেখে।এতো বছরের সম্পর্ক কি এতোই ঠুনকো যে কথায় কথায় তা*লাকের নাম চলে আসে!উনার চোখ ছলছল করে উঠে।

পলাশ বলে,
“তাহলে আর এই বাড়িই আসবো না।বিয়ে করে বউ নিয়ে থাকবো।দেখি আপনি কি করেন।”

“বিয়ে করবি?”

“করবোই।”

“নিধির দে*হটা আ*স্ত পেলেই তো বিয়ে হবে যদি আস্ত না পাস তাহলে?”

পলাশের বুকটা কেঁ*পে ওঠে।
“মানে?”

শওকত হাওলাদার ঠোঁট বাকিয়ে হাসে।
“মানে কিছুনা।রাবেয়া রাত হয়েছে দরজা বন্ধ করো।”

“আব্বা নিধির কিছু হলে আমি আপনাকে জ্যান্ত কবর দেবো।ভুলে যাবেন না আমি আপনারই সন্তান,আপনার মতো নি*ষ্ঠুর আমিও হতে পারি।”

“যা যা।”

পলাশের বুদ্ধিমান মস্তিষ্ক তার আব্বার কথার ধরন বুঝতে বেশী সময় নেয় না।হন্তদন্ত পায়ে বেরিয়ে যায়।কাঁ*পা-কাঁ*পা হাতে বাইক স্ট্রাট করে আল্লাহর কাছে দোয়া করে,
“আল্লাহ আমার নিধির যেনো কিছু না হয়।একবার হারিয়ে আবার পেয়েছি।এবার হারাতে চাই না আল্লাহ,সহায় হও।”

পলাশ যখন নিধির বাসায় যায় তখন দেখে নিধির দরজা চাপানো।ধাক্কা দিয়ে খুলে নিধি নিধি বলে কয়েকবার ডাকে।কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে নিধির শোয়ার রুমের দিকে এগিয়ে যায়।ওখানে গিয়ে পলাশের ক*লিজা মু*চড়ে উঠে।নিধি!তার নিধির উপর আস্ত এক মানব।পুরুষালী ছোঁয়ায় নারীদেহ ছি*ন্নভি*ন্ন করতে ব্যস্ত।নিধি পা*গলের মতো ছ*ট*ফ*ট করছে,মুখ বা*ধা বিধায় উ আ ছাড়া আর কোনো কথা বের হচ্ছেনা।পলাশ ডুকড়ে কেঁ*দে উঠে,আল্লাহ এটাও দেখার ছিলো!এর চেয়ে মরণ ভালো ছিলো না?

ভোর সকাল পেশকারা শিমুলের দরজায় জোড়ে জোড়ে আ*ঘা*ত করে।কোনো সাড়া না পেয়ে গলা ছেড়ে ডাকে,
“শিমুল।শিমুল রে!তোর বউ কই? উঠাই দে।”

এই বলে আরো জোড়ে জোড়ে দরজা ধা*ক্কায়।
“এই মাইয়া উঠো না কেন?লাস-সরম কিছু নাই,মা বাপ কি শিখাইছে?এই জন্যই বড়ো ঘর থেকে মেতে আনা লাগে।এতো বেলা হলো এখনো ঘুমায়!যেন নবাবের মেয়ে ধরে আনছে।”

কাঠের দরজায় ধু*পধা*প শব্দ আর পেশকারার জোড়ে কথা শুনে শিমুল আর পুষ্প দুজনেরই ঘুম ভেঙে যায়।ঘন্টা দুয়েক আগেই দুজনে ঘুমিয়েছে।পুষ্পর সারাদিন আ*তংকে কাটলেও সারা রাত যায় স্বপ্নের মতো।শিমুল তার অদৃশ্য চাদরে নরম পাখিকে আঁকড়ে রাখে।পুষ্প শিমুলের সানিধ্যে এসে সব কষ্ট ভুলে যায়।তার মনে হয় এতো সুখে না জানি ম*র*ণ হয়ে যায়!

পেশকারা তখনও বলে,
“কি গো কথা কানে যায় না?সারাদিন জামাই বুকে নিয়া ঘুমাইতে হয়?”

পুষ্প তড়াক করে উঠে বসে।শিমুল হাত বাড়িয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে রাখে।
“খবর*দার উঠবে না।চুপচাপ শুয়ে থাকো।বুড়ি ক্যাট*ক্যাটিয়ে চলে যাবে।”

পুষ্প শিমুলের চুলে হাত রাখে।এখন দরজা না খুললে সারাদিন অশা*ন্তি করবে,পুষ্প চায়না ঘরে কোনো অশা*ন্তি হোক।মাথা নেড়ে বললো,
“শুনে আসি কি বলে।”

“আমি জানি গেলে আর আসবেনা।”

পুষ্প হাত দিয়ে শিমুলের কপালের এলোমেলো চুল সরিয়ে মাথা ঝুকিয়ে তার কপালে গভীর চুমু এঁকে বলে,
“আসবো।”

পেশকারার ডাক তখন লাগামছাড়া।অগ্যতা শিমুল পুষ্পকে ছেড়ে বালিশে মাথা রাখে।
পুষ্প বিছানা থেকে নেমে গায়ের কাপড় টেনেটুনে ঠিক করে দরজার দিকে এগিয়ে যায়।দরজা খুলার সাথে সাথেই পেশকারা চোখ পা*কিয়ে তাকায়।
“দরজা খুলতে এতোক্ষণ লাগে?”

পুষ্প পাশে দাঁড়ানো সুইটির দিকে তাকায়।সুইটি মুখ বেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“বুবু ঘুমিয়ে ছিলাম।”

শিমুল যেনো না শুনে এমন করে পেশকারা বললো,
“সারারাত জামাইর কাছে থাইকা মন ভরেনা?সকালেও থাকা লাগে?”

পুষ্প ল*জ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।পেশকারা পুষ্পর মাথায় ধা*ক্কা দিয়ে বলে,
“খেয়া জাল থেকে এক কেজী ছোট মাছ এনেছে।কেটে কুটে রাখবা।জলদি চলো।”

পুষ্প আমতা আমতা করে বললো,
“আচ্ছা আসছি।”

“আসছি কি হ্যাঁ?মাছ নরম হয়ে যাবে।তাড়াতাড়ি আসো।”

পুষ্প পেছন ফিরে শিমুলের দিকে তাকায়।
“আপনি যান,আমি আসছি।”

পেশকারা পুষ্পর হাত খাবলে ধরে।
“এখনি আসো।”

পুষ্প মুখ কাচুমাচু করে বলে,
“বুবু আমার গোছল বাকি?”

পেশকারা ঝটকা মেরে পুষ্পর হাত ছুড়ে ফেলে।
“ছিহ!ছিহ!তুমি অপবিত্র অবস্থায় আমার সামনে এসেছো কেন?”

পুষ্প মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।

“অ*স*ভ্য মাইয়া কোথাকার!এই অবস্থায় ঘরের যা ধরবা তাই অপবিত্র হয়ে যায় আর তুমি আমারেও ধরে ফেলেছো?বে*লাজ মাইয়া।মানুষকে দেখাও যে তোমার জামাই আছে?তাড়াতাড়ি বেরিয়ে।আসবা।”

তারপর চলে যেতে নিয়ে আবার ঘুরে পুষ্পর আপাদমস্তক দেখে বলে,
“ছিহ!ছিহ!এমন বউ ঘরে থাকলে ঘরে উন্নতি হয় না,অল*ক্ষী।”

পেশকারা চলে গেলে পুষ্প দরজা বন্ধ করে।শিমুল হাতের উপর মাথা রেখে তাকেই দেখছে।পুষ্প তাকিয়ে মলিন হাসে।তারপর দ্রুত পায়ে বাথরুমে ঢুকে যায়।বাথরুমে গিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে মুখে হাত চেপে ফুপিয়ে কেঁ*দে উঠে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here