#শিমুল_ফুল
#৩৮,৩৯
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
৩৮
সাপ্তাহ খানেক হয় সুইটি ঢাকা থেকে এসেছে।সেবার শিমুলের ত্যাড়া কথায় মা মেয়ে চলে গিয়েছিলো।পেশকারা নাতনীকে নিয়ে পুষ্পকে জব্দ করার উপায় খুঁজে।পুষ্প কলেজে যাওয়ার পরে পেশকারা আর সুইটি পুষ্পর রুমে যায়।তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখে পুষ্পকে শিমুল কি এনে দেয়।ওয়ারড্রোবে তিন রকমের বিস্কুট,চানাচুর,চকলেট আরো হাবিজাবি খাবার জিনিস পায়।এসব দেখে তো পেশকারার গায়ে আ/গুন জ্ব/লে উঠে,বউকে লুকিয়ে খাবার এনে খাওয়ায়!পেশকারা রা/গে গজগজ করতে করতে অপেক্ষা করে পুষ্প কলেজ থেকে বাড়ি আসার।কি তা/বিজ করলো যে শিমুল এমন হয়ে গেলো?যেনো পুতুল!
পুষ্প বাড়ি আসে।একা নয় শিমুলও সাথে আসে।ড্রয়িংরুমে নিজের রাত্রিসঙ্গি খাবাবের ডিবিগুলো দেখে থমকে দাঁড়ায়।মাথা ঘুরিয়ে শিমুলের দিকে তাকায়।শিমুলের স্থির চাহনী ডিবিগুলোর উপরে।এগুলো তো ওয়্যারড্রোবে থাকার কথা এখানে কেনো?বিয়ের পরেই সে খেয়াল করে রাত্রে পুষ্পর ক্ষুধা লাগে।শরীরের টানে পবিত্র মিলনের কারনেই কিনা মেয়েটার ক্ষুধা লেগে যায়,উশখুশ করে,ছটফট করে খালি পানি খায়।শুধু পুষ্পরই না শিমুলেরও একি অবস্থা।তাই এগুলা কিনে এনে রেখেছে,পুষ্প গভীর রাতেই বসে বসে এগুলো খায়।বউটা যেহেতু তার,যত্নটাও তো তাকেই নিতে হবে!কিন্তু পেশকারার সামনে এগুলো কিভাবে এলো?শিমুল কিছু বলার আগেই পেশকারা রাবেয়াকে ডাকে।রাবেয়া এসে এগুলো দেখে বিরক্ত হয়।এগুলো কি তার জানা আছে,পুষ্প বিস্কুট নেয়ার জন্য এই ডিবিগুলো নিয়েছিলো।বিরক্তভরা চোখে পেশকারাকে দেখে।পেশকারা বলে,
“এগুলো কি দেখেছো?তোমার পোলা বউকে লুকাইয়া খাওয়ায়।”
রাবেয়ার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য পেশকারা তাকিয়ে থাকে।রাবেয়া গলা ঝেড়ে বললো,
“আম্মা আমিই এনে দিয়েছিলাম।”
শিমুল বললো,
“আমার আর পুষ্পর ব্যাপারে তোমার আর তোমার নাতনীর এতো ইন্টারেস্ট কেন?কি সমস্যা?”
“তুই লুকাইয়া কেন খাবার আনিস?”
শিমুল তার আম্মার দিকে তাকায়।তারপর রয়েসয়ে বললো,
“আমার বউয়ের রাতে খেতে ইচ্ছা করে তাই এনেছি।কিন্তু তুমি আমার রুমে কেন ঢুকেছো?কি মতলব!”
পেশকারা থমথম খেয়ে যায়।তারপরও গম্ভীর গলায় বললো,
“এমনি ঢুকেছি।আর তুই বহুত সেয়ানা হয়ে গেছিস,রাতের খাবার খাওয়ার পরে আবার কিসের ক্ষুধা?বাপের বাড়িতে খাইতে পায়নি তো তাই এমন নাদানিপানা করে।”
রাবেয়া সরে পড়ে।এই মহিলার উপরে সে বিরক্ত।সবাইকে তার মতো চালাতে চায়,আগের কালে পেরেছে কিন্তু এখনের ছেলে মেয়ে স্বাধীনচেতা নিজের জীবনে অন্যকারো হস্তক্ষেপ পছন্দ না।রাবেয়া চলে গেলে শিমুল এগিয়ে যায় পেশকারার কাছে গিয়ে বলে,
“রাতে কিসের ক্ষুধা লাগে বুঝনা?ক্ষুধার কাজ করে তাই ক্ষুধা লাগে।কেন দাদার সাথে তুমি কিছু করো না?নাকি আমার সাথে করার ইচ্ছা?ইচ্ছা থাকলে বলো আমিও তোমাকে রাতে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেই।”
পেশকারা আগুন চোখে শিমুলকে দেখে।সুইটি দৌড়ে চলে যায়।শিমুল পেশকারার গালে হাত ভুলিয়ে বললো,
“খাবে বিস্কুট?খেলে রুমে আসো,ক্ষুধা লাগিয়ে দেই!”
পেশকারা অগ্নিচোখে পুষ্পকে দেখে চলে যায়।পুষ্প মুচকি হেসে ডিবিগুলো হাতে নিয়ে রুমে যায়।শিমুলটা এতো লাগামছাড়া কথা বলে!যেমন বুবু তেমনি নাতী।
পলাশ আর নিধির জীবন খুবই সুন্দর করে যাচ্ছে।দুজনের মিষ্টি খুনসুটি,একসাথে রান্না সব মিলিয়ে সুখী পরিবার।দুজনে একসাথে রান্না করে খাবার খায় একসাথে কলেজে যায়।নিধি পলাশের খুব ছোট ছোট ব্যাপারগুলো খেয়াল রাখে তেমনি পলাশ।মাঝে মাঝে নিধি রাতে ফুপিয়ে উঠে।পলাশ ব্যস্ত হয়ে জানতে চায়,
“কি হয়েছে।”
“আব্বা আম্মাকে মনে পড়ছে।”
পলাশ ভরসার হাত বাড়িয়ে দেয়।শক্ত করে বুকে জড়িয়ে বুঝায় আমি আছি আল্লাহ চাইলে থাকবো ভয় পেওনা।
মুখে বলে,
“কেঁদো না।”
পলাশের সান্ত্বনা শুনে নিধি চুপ করে।ফিসফিস করে বলে,
“তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না পলাশ।”
“ছাড়বো না।তুমি ঘুমাও।”
“ভালোবাসি।”
“আমিও।”
পরিবার ছেড়ে এই কপোত-কপোতীরা নিজেদের ছোট্ট সংসার সাজিয়ে নিয়েছে।যেখানে সুখের ছড়াছড়ি।আজকাল নিধির মনে হয় এখন ম/রে গেলেও শান্তি।
শুক্রবার।চেয়ারম্যান বাড়িতে গরুর মাংস রান্না হচ্ছে।রাবেয়া নিজ হাতে রান্না করে।বারোটার আগেই রান্না শেষ হয়।শাশুড়ীর অগোচরে একটা বক্সে এক বক্স মাংস তরকারী আলাদা করে ফ্রিজে রেখে দেয়।উনার মনের ভাব শিমুলকে দিয়ে পলাশের বাসায় পাঠাবেন।তিনমাস হতে চললো পলাশের খাওয়া দেখা হয় না যদিও নিধি পলাশের খুব ভালো যত্ন নেয় কিন্তু মা তো মনটা পু/ড়ে।এরমাঝে ডাক্তারের নাম করে এক বিকালে পুষ্পকে বগলদাবা করে পলাশের বাসায় গিয়েছিলেন।নিধি যে কি খুশী হয়েছিলো তা একমাত্র আল্লাহ জানে।পাগল মেয়ে পারেনা রাবেয়াকে কোলে নিয়ে ফেলে একটু পরে পরে কেমন বাচ্চার মতো চুমু খেয়ে মিষ্টি করে হাসে।পুষ্প যে তার ছাত্রী সে কথা ভুলে দুই জা হাসিখুশি তে সময় কাটিয়েছে।রাবেয়া দুই বউয়ের মিল দেখে খুব খুশী।রাবেয়ার মনে হয় শাশুড়ী যদি ভালো হয় তাহলে বউ ভালো হতে বাধ্য।কারণ মেয়েটা তো বাবার ঘরে মাত্র মেয়ে ছিলো উড়ার জন্য পাখা ছিলো এই পারিবারিক চাপ তো সে আগে পায়নি কিন্তু শাশুড়ী তো মেয়ে থেকে বউ হয়েছে শাশুড়ীর সাথে সংসারে থেকেছে তারপর নিজে শাশুড়ী হয়েছে।তাহলে কে বেশী অভিজ্ঞ?অবশ্যই শাশুড়ী।শাশুড়ী বউকে আপন করে নিলেই তো মেয়েটা নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে,আদর দিয়ে বুঝালে,শিখালে,দেখিয়ে দিলে মেয়েটা সব পারবে।একসময় নিজের মেয়ের চেয়েও আপন ওই পরের বাড়ির মেয়েটাই হবে,পরিবারের রীতিমতো নিজেকে তৈরি করে খাঁটিসোনায় পরিণত হবে।কিন্তু শাশুড়ী তা না করে যদি রা;গ দেখায়,কথায় কথায় খোটা দেয়,অপ/মান করে কথা বলে,বউকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে,তার শাশুড়ী যেমন তাকে কষ্ট দিয়েছে সেই প্রতিশোধ নিতে চায়,পরের বউয়ের তুলনা দেয় তাহলে কিভাবে মেয়েটা শশুড় বাড়িতে খুশী থাকবে?কিভাবে শাশুড়ীকে নিজের মায়ের মতো মানবে?মুখে না বলুক মনে যেই কষ্টের পাহাড় জমে তা সারাজীবন থেকে যায় হয়তো কখনো প্রকাশ করা যায় না কিন্তু এই কষ্টটা সারাজীবন খোঁচায়,জ্বা/লায়।যেমনটা পেশকারার প্রতি রাবেয়ার।রাবেয়া পেশকারাকে আম্মা বলে কিন্তু মনের কষ্ট কি কমেছে?কমেনি হয়তো সারাজীবন চাইলেও কমানো সম্ভব না।রাবেয়া তার বউদের সাথে এমন করবে না তার মেয়ে নেই এই দুটো তার মেয়ে।এসব ভাবতে ভাবতে রাবেয়ার চোখে পানি আসে।আহা!যৌবনের সবটা সময় শাশুড়ীকে ভ/য় পেয়েই কাটিয়ে দিলো,নিজের ইচ্ছামতো কিছুই করা হয়নি,বুকচিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
দুপুরে খাওয়ার টেবিলে সবাই খেতে বসেছে।রাবেয়া নামায পড়ছে বিধায় আসতে একটু সময় লাগছে।পুষ্প আর ফুলি সব টেবিলে নিয়ে আসে।শিমুলের পাশের চেয়ার খালি পুষ্প মুচকি হাসে।আজকে পাশে বসতে বলবে এটা নিশ্চিত।সবাই খাওয়া শুরু করলে শিমুল চেয়ারে বসতে বলে,পুষ্প বসে।শিমুলের প্লেটে গরুর মাংস তুলে দেয় এই কয়েকমাসের সংসারে পুষ্প বুঝে গেছে শিমুল গরুর মাংস অনেক পছন্দ করে,যেদিন গরুর মাংস রান্না হয় শিমুল একপ্লেট ভাত বেশী খায়।শিমুল খেতে খেতে পুষ্পকে ভাত নিতে ইশারা করে।পুষ্প ভাত নেয় এখন কি নিবে বুঝে উঠতে পারেনা।তার প্লেটের দিকে পেশকারা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকে,এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকলে গলা দিয়ে ভাত নামে না।সে আড়চোখে তার শাশুড়ীকে খুঁজে রাবেয়া মাত্র এসে চেয়ার টেনে বসেছে।সবসময় রাবেয়া পুষ্পকে সব দিয়ে দেয় পেশকারার ভ/য়ে যে পুষ্প ঠিকঠাক খাবার প্লেটে নেয় না এটা রাবেয়া জানে তাইতো নিজ উদ্যোগে বউকে এটা সেটা তুলে দেয়।আজকে পুষ্প কি করবে বুঝতে পারেনা।লবন দিয়ে ভাত মাখিয়ে জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালে তারপর ঢকঢক করে পানি খায়।সুইটির প্লেটে একগাদা মাংস দিয়ে বললো,
“খা বইন।”
শিমুল পুষ্পর প্লেটের দিকে তাকিয়ে বললো,
“কি হলো?মাংস নাও।”
পুষ্প কিছু বলার আগে পেশকারা বাসি তরকারীর বাটি এগিয়ে বললো,
“বাসি তরকারী আগে খেয়ে শেষ করুক।কতোখানি তরকারি ফালাবে নাকি?”
শিমুল গম্ভীর গলায় বললো,
“বাসি তরকারী রাতে খাবে।এখন মাংস নাও।”
পুষ্প কি করবে বুঝে না।সে কিছু বুঝে উঠার আগেই পেশকারা নিজ হাতে বাসি তরকারীর অর্ধেক পুষ্পর প্লেটে দিয়ে বললো,
“জামাইর বাড়িতে এসে নতুন নতুন তরকারী খাওয়ার অভ্যাস প্লাটাও।আগে পুরাতনগুলো শেষ করতে হবে,এটাই নিয়ম।”
না চাইতেও পুষ্পর চোখে পানি চলে আসে।এমন না সে বাসী তরকারি খায় না কিন্তু আজকে সবার সামনে এমন ব্যবহারে পুষ্পর ঠোঁট মৃদু কেঁপে চোখে পানি টলটল করে উঠে।এই ভগ্নদশা শিমুলের সামনে আনতে চায় না।তাই নিজেকে লুকাতে বাসী টমেটো তরকারী দিয়ে এক লোকমা ভাত মুখে দেয়।শিমুল পুষ্পর মতিগতি সবটাই লক্ষ করে,তার খাওয়া থেমে যায়,বারবার বুউয়ের নত মুখের দিকে তাকাচ্ছে।পেশকারা থেমে নেই নিজ গলায় কড়কড়িয়ে বললো,
“আমাদের কালে আমাদের শাশুড়ী যা দিতো তাই চুপচাপ খেতাম। এখনের বউদের মতো লজ্জাহীন ছিলাম না এখনের বউয়েরা তো শশুড় মানে না শাশুড়ী মানে না একসাথে খেতে বসে যায় তাও জামাইর সাথে কি বেলাজ লজ্জাহীনের যুগ আসলো।”
থেমে পুষ্পকে বললো,
“খাও না কেন?নাকি গরুর মাংস দেখে বাসি পেটে ঢুকে না!বাপের বাড়িতে কি এর চেয়ে ভালো খেতে নাকি?কোন বাড়ি থেকে এসেছো জানা আছে।যত্তঢং।”
পুষ্পর চোখ দিয়ে ভাতের প্লেটে টপটপ পানি পড়ে।মাথা নিচু করেও পুষ্প বুঝতে পারছে সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে।সবার সামনে এগুলা বলাতে লজ্জায় তার ইচ্ছে করছে ম/রে যেতে।খেতে বসে এতো অপ/মান!রাবেয়া ছেলের চোখের ক্রো/ধ ঠিক বুঝে গেলো ব্যস্ত গলায় বললো,
“আম্মা থামেন তো।যার যেটা ইচ্ছা খাক।”
পেশকারা খেকিয়ে বললো,
“কেনো বাসি তরকারী কি খা/রাপ নাকি?তোমরা যেভাবে ননীর পুতুলের মতো তোলামেশা করো মনে হয় খুকী।এতো খুঁকী হলে জামাইর…”
পেশকারার কথা শেষ হবার আগেই শিমুল তার কাচের প্লেট সশব্দে ফ্লোরে ছুড়ে মারে।ঝনঝন করে প্লেট টুকরো টুকরো হয়ে যায় ভাত মাংস এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। সে চেয়ার ঢেলে উঠে দাঁড়ায়।শিমুলের এমন কাজে সবাই হতভম্ব।পুষ্প মুখে এটো হাত চেপে ধরে।শিমুল ফোসফোস করে পুষ্পর দিকে হাত উঁচিয়ে বললো,
“এটা কি কুত্তা ধরে এনেছি?হ্যাঁ!হাতে বিস্কুট নিয়ে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই নাচাবে।তোমরা ওর সাথে কি করো আমি দেখিনা?পাগল পেয়েছো?”
রাবেয়া ছেলেকে মানাতে চাইলে শিমুল শুনে না।পেশকারাও থামে না।পুষ্প উনাকে দেখে ভাবে একটা মহিলা কতোটা নি/লজ্জ আর বেহায়া হলে সবসময় পুষ্পর পিছনেই লেগে থাকে।পেশকারা বললো,
“তুই এভাবে কথা বলতেছিস কেন?মহিলাদের কথায় কান কম দে বউরে শা/সনে রাখ।”
শিমুল দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো,
“তুমি আমাকে এসব শিখাবে?আগে নিজে শিখো কিভাবে মানুষকে মূল্য দিতে হয়।বে/য়াদব মহিলা।”
পেশকারা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে পুষ্পর প্লেটে মাংসের বাটি ঢেলে দেয়।উনার কাজে পুষ্প হতভম্ব হয়ে যায়।গালে স্পষ্ট পানির রেখা।
“খা।ইচ্ছামতো খা।তোর জামাই তো পাগল হয়ে গেলো।সবগুলো মাংস খেয়ে উঠবি।খা।”
পুষ্প অবাক হয়ে শিমুলের দিকে তাকায়।শিমুলের চোখ তখন অ/গ্নি/বর্ণ ধারন করেছে।সে রাবেয়ার দিকে ফিরে বললো,
“মা এই মহিলারে থামতে বলো।”
রাবেয়া নিজেও হতভম্ব।
“আম্মা এগুলো কি করছেন?মাথা ঠিক আছে।”
শিমুল পা দিয়ে চেয়ারে লা/থি মে/রে চেয়ার উল্টে ফেলে হনহনিয়ে রুমে চলে যায়।শিমুল না খেয়ে চলে যাওয়াতে পুষ্পর আরো কষ্ট হয়।প্লেটের মাংসের দিকে ঝাপসা চোখে তাকায়।এই মাংস নিয়ে এতো কাহীনি!হঠাৎ করেই পুষ্পের তার আম্মাকে মনে পড়ে যায় মাংসের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে কাঁদে।লজ্জায় মাথাটা নিচু করে রেখেছে,বুকে ব্যথা হচ্ছে।তার সাথে আর কেউ এমন ব্যবহার করেনি।পুষ্প উঠে দাঁড়ায়।পেশকারা সেদিকে তাকিয়ে বললো,
“না খেয়ে উঠলি যে!জনমের মাংস খা।”
শওকত হাওলাদারের মনে হলো এটা একটু বেশীই হয়ে যাচ্ছে।পেশকারার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আম্মা চুপ করেন না।কি শুরু করলেন।”
পুষ্প মাথা নিচু করেই রুমে চলে যায়।ইশ!এর থেকে ম/রণ ভালো না?
শিমুল পুষ্পর দিকে তাকায়।পুষ্পর হাত ধরে বললো,
“তোকে আমি সুখী করতে পারছিনা পুষ্প।আমি সরি রে।”
পুষ্প শিমুলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।বুকে মাথা রেখে বললো,
“তোমাকে পেয়েই আমি খুব সুখী।তুমি এসব কথায় কান দিও না তো।পরিবারে এমন একটু হয়ই।”
শিমুল কাতর চোখে তাকিয়ে থাকে।পুষ্প ঝামেলা পছন্দ করে না এটা শিমুল জানে,তাইতো শিমুলকে ঝামেলা থেকে বাঁচাতে চায়,চুপচাপ সব সয়ে নিতে চায়।দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুষ্পর মাথায় চুমু দেয়।পুষ্প নিঃশব্দে কাঁদে।তার আম্মাকে মনে পড়ছে বিয়ের আগে তার আম্মা রান্না হলেই খাবার খেতে ঘ্যানঘ্যান করতো আর এখন….
চলবে….
#শিমুল_ফুল
#৩৯
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
পুষ্প মিজান শেখের আদরের মেয়ে।প্রেম করে বিয়ে করেছে বিধায় মেয়ের প্রতি একটা চাপা রাগ আছে।কিন্তু রাগ কতোক্ষন রাখবে?শিমুল যখন আব্বা আম্মা বলে ডাকে তখন মনে অজানা খুশীর রেশ দোলা দেয়।শিমুলকে যতটা উগ্র ভেবেছিলো ততটা নয়। পুষ্পকে দেখেই বুঝা যায় শিমুলের সাথে পুষ্প কতোটা সুখী।পুষ্পর সবদিকেই শিমুল খেয়াল রাখে।মিজান আর রোকসানা ঠিক করে পুষ্পকে দেখতে যাবে।
বুধবার সকালে রাবেয়া বাথরুমে আছাড় খেয়ে পড়ে কোমড়ে ব্যাথা পায়।মিজান শেখ আর রোকসানা এই উছিলায় চেয়ারম্যান বাড়িতে আসে।রাবেয়া বিছানা থেকে উঠতে পারে না।শওকত হাওলাদার শিমুলকে জরুরী এক কাজে থানায় পাঠায়।পুষ্পর নিজেকে খুব অসহায় লাগে।তার আব্বা আম্মা আসবে কি রান্না করবে বুঝতে পারে না।ফুলি পুষ্পর ছটফটানি দেখে বললো,
“ভাবি আফনে খালি খালি চিন্তা করতাছেন ফ্রিজে খাসি আর গরুর মাংস আছে।একটা নামাইয়া রানলেই তো হয়।”
পুষ্প আমতা আমতা করে বললো,
“কেউ যদি কিছু বলে?”
ফুলি হাত নেড়ে বললো,
“কিতা কইবো আবার?মেমান আইলে ভালা কিচু রান্ধন বারন লাগে না!আফনে খালি ভয় ফান।আমি হইলে দেখতেন তুইল্লা কচু ছুইল্লা দিতাম।”
পুষ্প হাসে।সেদিনের পর থেকে পুষ্প সুইটি আর পেশকারাকে গম্ভীর গলায় প্রতিবাদ করে।বেশী লাই দিয়েছে বলেই এরা মাথায় বসে কাঠাল খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।তবে প্রতিবাদ না বলে এটাকে নরম কথা বললেই চলে,পুষ্পর এমন তর্ক করে অভ্যাস নেই কিন্তু এদের ব্যবহার দেখলে মনে হয় ঝগড়া না করে এই বাড়িতে টিকে থাকা সম্ভব না।
পুষ্প এভাবে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফুলি হাতে ধরে বললো,
“ভাবি দশটা বাইজা জাইতাছে কহন রান্না বসামু?কি রানবো এইটা কন।”
পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“আম্মাকে জিজ্ঞাসা করে আসি কি রান্না করবো।”
শওকত হাওলাদার ড্রয়িংরুম থেকে পুষ্পর কথা শুনে বললো,
“সেদিন না ব্রয়লার মুরগী আনলাম।মুরগী,মাছ আর সাদা ভাত রান্না করো।তোমার শাশুড়ী ঘুমাচ্ছে এখন ডাক দেয়ার দরকার নেই।”
পুষ্প শশুড়ের উপরে আর কথা বলার সাহস পায় না।গরুর মাংস,খাসির মাংস উপেক্ষা করে ব্রয়লার মুরগী রান্না করে।পুষ্পর চোখ ছলছল করে উঠে তার আব্বা ব্রয়লার মুরগী পছন্দ করেনা পুষ্পর ইচ্ছা করছিলো গরুর মাংস রাধতে,কিন্তু পুষ্প অসহায়।তার বুকটা টনটন করে উঠে কি মেয়ে হলো মা বাবা আসবে একটু মন মতো রান্না করতে পারে না।হ্যাঁ এটা ঠিক তার আব্বা আম্মা বাড়িতে ভালো মন্দ খায়,তার আব্বার তো হোটেলই আছে কিন্তু তার বাড়িতে আসবে একটু ভালো কিছু রান্না করতে না পারলে কিভাবে হয়?চেয়ারম্যান বাড়ির মনমতো যদি শিমুল বিয়ে করতো তাহলে কি মেয়ের বাবার বাড়ির লোককে এভাবে আপ্যায়ন করা হতো?হয়তো না।পুষ্প তো প্রেম করে বিয়ে করেছে তাই তার সবকিছুতেই অবহেলা।নিঃশব্দে পুষ্পর চোখের পানি পড়ে।তার চোখগুলো আজকাল বেহায়া হয়ে গেছে,বিয়ের পর থেকে চোখ থেকে পানি গড়ায় বেশি।চুপচাপ পুষ্প রান্না শেষ করে।ফুলি গজগজ করে বললো,
“খালা ছাড়া এই বাড়ির সবডি খানে খারাফ।”
বারোটা নাগাদ মিজান শেখ আর রোকসানা চেয়ারম্যান বাড়িতে আসে।তিনপদের মিষ্টি,চার রকমের ফল,বিস্কুট চানাচুর নিয়ে আসে।পেশকারা এইগুলোর দিকে এমনভাবে তাকালো মনে হলো গরুর পায়খানা নিয়ে এসেছে।রোকসানা মেয়েকে দেখে খুব খুশী।বাড়ির চারদিকে আভিজাত্যর ছোঁয়া ফুটে আছে।প্রথমে রাবেয়ার সাথে গিয়ে রুমে দেখা করে উনারা ড্রয়িংরুমে বসে।পুষ্প আশা করেছিলো শিমুল দুপুরে আসবে কিন্তু ফোন করে যখন জানতে পারলো শিমুলের আসতে আরো দেরী হবে তখন তার ভগ্ন মন আরো মুচরে গেলো।শিমুল কাছে থাকলে তার সাহস লাগে কোনো কিছুতেই চিন্তা হয় না।দুপুরে খাওয়ার সময় হলে সবাই একসাথে খেতে বসে।মুরগী মাংস দেখে রাবেয়া অবাক হয়ে পুষ্পর দিকে তাকায়।পুষ্প তার শাশুড়ীর মুখের কথা চোখের দৃষ্টিতে বুঝে নেয়।ছলছল চোখে সবাইকে ভাত বেড়ে দেয়।মিজান আর রোকসানা কোন কথা না বলে চুপচাপ ভাত খায়।পুষ্প তার আব্বা আম্মার খাওয়া দেখে চোখের পানি আটকাতে পারে না,তরকারি আনার বাহানায় রান্নাঘরে গিয়ে চোখ মুছে।খাওয়া-দাওয়ার পরে সবাই ড্রয়িংরুমে বসে সবাই অনেকক্ষণ কথা বলে।পাশের বাড়ির এক মেয়ে নাকি পালিয়ে গেছে এই প্রসঙ্গ আসাতে পেশকারা মুখ অন্ধকার করে বললো,
“আজকালকার মেয়েরা এতো অ/সভ্য মা বাপের বার চায়না নিজেই নিজের নাগর জুটিয়ে নেয়।”
পুষ্প যেহেতু প্রেম করেই বিয়েটা করেছে তাই স্বাভাবিক ভাবেই এই কথাটা পুষ্পর গায়ে লাগে।অন্যসময় হলে এতোটা খা/রাপ লাগতো না কিন্তু বাবা মায়ের সামনে বলাতে খা/রাপ লাগলো,আড়চোখে তার আম্মার দিকে তাকায়।অতিথির সামনে এমন কথায় রাবেয়া বিব্রত হয় তাই কথা ঘুরিয়ে নিতে বললো,
“আম্মা এখনের যুগ পাল্টিয়ে গিয়েছে।যুগ এখন এই তালেই চলে।”
পেশকারা যেনো আজ প্রতিজ্ঞা করেছে পুষ্পর বাবা মাকে অপ/মান করবেই।তাইতো কাঠকাঠ গলায় বললো,
“আরে বউ যুগের কথা বাদ দাও।আসল কথা হইতাছে বাপ মাই এগুলারে পোলার পিছনে লাগিয়ে দেয়।বলে কি মেয়ে সামলাতে পারে না কথা শুনে না।আমি বলি এমন মা বাপেরে জুতায় গু লাগিয়ে থাপ/ড়ানো দরকার।”
পুষ্প থ/ম/থ/ম খেয়ে তার আব্বা আম্মার দিকে তাকায়।দুজনের মুখই গম্ভীর হয়ে গেছে।পেশকারার কথায় যে ক/ষ্ট পেয়েছে এটা স্পষ্ট।শওকত হাওলাদার যেন তার মায়ের কথা সঙ্গ দিতেও বললো,
“ছোট ছোট মেয়েরা যে এসব কি বুঝে আল্লাই যানে।”
রাবেয়া বেয়াই বেয়ানের দিকে তাকিয়ে তাদের মনের অবস্থা কিছুটা টের পায়।এই প্রসঙ্গ বদলাতে বললো,
“আচ্ছা এদব বাদ দেন তো।মিজান ভাই বলেন হোটেলের কি অবস্থা?”
মিজানের মনে তখন পাহাড় সমান ক/ষ্ট ভীড় জমিয়েছে।কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললো,
“চলছে আপা ভালোই।”
কথায় কথায় আরেক প্রসঙ্গ আসে।মেম্বারের বোনের বিয়ে হয়েছে।মেম্বার নাকি শিমুলের সাথেই বিয়ে দিতে চেয়েছিলো।কোনো চাওয়া পাওয়া ছিলো না কিন্তু উনারা মেয়েকে কতোকিছু দিয়েছে।মজিব হাওলাদার ঠেস দিয়ে বললো,
“আজকাল চেয়ে নিলে তো চাওয়া জিনিসই পায় আর কোন দাবী না থাকলে আরো বেশী দেয়।”
মিজান শেখ সব শুনে কিছু না বললে কেমন দেখায়!তাই কথায় তাল মিলাতে বললো,
“হ্যাঁ!তা ঠিক।”
পেশকারা মাথা নেড়ে বললো,
“আজকালে মেয়ের বাপেরা তো ফাঁ/দ পেতে থাকে কোনমতে মেয়ে বিদায় দিতে পারলেই হলো।সব আনিচ আনিচ।মাগনা মেয়ে দিতে পারলেই বাঁচে।”
তখনি শিমুল আসে।শিমুলকে দেখে কথায় ভাটা পড়ে শিমুলের মুখ থমথমে গম্ভীর কেউ জানতেই পারলো না তাদের কথা প্রথম থেকেই শিমুলের কানে গেছে।সব কথা শুনেই তো মুখ গম্ভীর।আলতো হেসে শশুড় শাশুড়ীকে ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করে।শিমুল আসার পরে মিজান আর রোকসানা উঠে দাঁড়ায়।রোকসানা পুষ্পকে জড়িয়ে ধরে কেঁ/দে দেয়।মায়ের কা/ন্না দেখে পুষ্প নিজেও কেঁ/দে দেয়।তার মায়ের কা/ন্নার কারণ পুষ্পর অজানা নয়।উনারা চলে গেলে শিমুল খেতে বসে।পুষ্প আজকে চুপ থাকে না মা বাবাকে করা অপ/মান বুকে দগদগে করে জ্ব/লছে।শিমুল রুমে গেলে পুষ্প তাকে সব বলে।কখনো না/লিশ না করা পুষ্প আজকে মা বাবার করা অ/পমান মানতে পারে না শিমুলকে বলতে বলতে কেঁ/দে দেয়।পরিবারের মানুষের এমন ব্যবহারে শিমুল স্তব্ধ।বিয়ের পরেরদিন থেকে উনারা যা করছে অন্য ছেলে হলে এতোদিন কেয়ামত করে ফেলতো কিন্তু শিমুল চুপ আছে কারণ হলো তার মা।সে কিছু করলে বা বললেই সব দোষ গিয়ে চাপবে তার মায়ের উপর।কিন্তু সবাই সহ্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে।উনারা হয়তো ভুলে গিয়েছে লেবু বেশী চিপলে তীতা হয়ে যায়।ঘটনাটা এখানে থামলেও পারতো তা হয়নি।সন্ধ্যায় পুষ্পর গায়ের সাথে লেগে সুইটির হাত থেকে মোবাইল ফোন পরে গ্লাস ভে/ঙে গেছে।সুইটি রেগে এক থা/প্পড়ে পুষ্পর নরম গালে তার পাঁচ আঙুলের দাগ বসিয়ে দিয়েছে।ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটেছে যে পুষ্প কিছু বুঝে উঠতে পারেনি।যখন বুঝলো তখন সেও সুইটির গালে থা/প্পড় দিয়ে দেয়।সুইটি গলা ছেড়ে চি/ৎকার করে কাঁ/দে।মজিব,শওকত হাওলাদার পেশকারা রাবেয়া সবাই ছুটে আসে।শিমুল এগিয়ে আসে না সে তার দরজায় দাঁড়িয়ে ব্যাপারটা দেখে।সুইটি ইনিয়ে বিনিয়ে পুষ্পকে দোষী বানায় সে নিজেও যে থা/প্পড় দিয়েছে এটা ভুলেও বলে না।বাবা মাকে অপমান করার কারনে এমনিতেই পুষ্পর মন খারাপ এখন সুইটির মিথ্যে অপমানে শরীর রি রি করে উঠে।ক্ষিপ্ত গলায় বললো,
“আপনি মিথ্যে বলেন কেনো?আপনি আগে আমাকে থা/প্পড় দেননি?”
পেশকারা তেড়ে এসে বললো,
“ও থা/প্পড় দিলে কি তোমাকেও থা/প্পড় দিতে হবে?”
“কেন দিবো না?আমি তো কোনো অন্যায় করিনি উনি আমাকে মা/রলেন কেনো?”
“আমার নাতনীর নানীর বাড়ি যা ইচ্ছে করবে।তুই ফকিন্নি!মাথা পেতে সব মেনে নিবি।বেশী কথা বললে আমিও থা/প্পড় দেবো।”
পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“আসেন থা/প্পড় দেন।আমারো হাত আছে আমিও দেবো।বিয়ের পর থেকে কম জ্বা/লাচ্ছেন না।শয়/তান মহিলা।”
পেশকারা স্বামীর মুখের দিকে তাকায়।মজিব হাওলাদার তেড়ে এসে বললো,
“ছোটলোকের বাচ্চা!মুখে মুখে ত/র্ক করিস কেন?”
বাবা নিয়ে কথা বলাতে পুষ্পর চোখ বেয়ে টপটপ পানি পড়ে।কান্নাভেজা গলায় বললো,
“কথায় কথায় বাবা মা টানেন কেন?দোষ করলে আমি করেছি আমার আব্বা আম্মা কি করেছে?যা বলার আমাকে বলবেন।”
মজিব হাওলাদার পুষ্পর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
“তুই আমারে কথা শিখাবি?”
পুষ্প চুপ করে থাকে।রাবেয়া পরিস্থিতি সামলাতে চায় কিন্তু পরিস্থিতি তখন অন্য ধারায় চলে গেছে।শিমুল শান্ত চোখে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।যেন ঝড় আসার পূর্ব মূহুর্ত।মজিব হাওলাদার বললো,
“সুইটির পা ধরে ক্ষমা চা।”
পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“আমি কোনো অন্যায় করিনি।জীবনেও ক্ষমা চাইবো না।”
মজিব হাওলাদার তার বলিষ্ঠ থাবা দিয়ে পুষ্পর চুল টেনে ধরে।পুষ্প ব্য/থায় ককিয়ে উঠলে শিমুল এসে ছাড়ায়।তার হাত পা কাঁপছে।শক্ত করে মজিব হাওলাদারের হাত ধরে উচ্চস্বরে বললো,
“তোমার হাতটা ভে/ঙে দেই?আমার বউয়ের গায়ে হাত তুলার সাহস কই পাও?”
পেশকারা বললো,
“তোর বউ কি করেছে সেটা আগে শোন।”
শিমুলের চোখ রা/গে লাল হয়ে যায়।
“আমি সব দেখেছি।”
তারপর মজিব হাওলাদারের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার বউ ক্ষমা চাইবেনা কি করবে?”
মজিব কটকট করে বললো,
“ক্ষমা চাইতেই হবে।”
সুইটিকে দেখিয়ে শিমুল বললো,
“এর মতো খারা/প মেয়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।”
রাবেয়া আর পেশকারা দুজনকে দুদিকে টেনে নিলেন।শিমুল বললো,
“আজকে আমার শশুড় শাশুড়ীকে এগুলা বলার মানে কি?”
পেশকারা হাহাকার করে বললো,
“অহ!কালনা/গিনী জামাইর কানে লাগিয়ে দিয়েছে?”
শিমুল চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
“আমি নিজের কানে শুনেছি।আচ্ছা প্রেম করলে কি মেয়েটা একা প্রেম করতে পারে ছেলেটা করে না?ছেলেটার সম্মতি ছাড়া কি প্রেম হয়?তাহলে মেয়ের মা বাবাই কেন কথা শুনবে?ছেলের বাবা মাও তো এই কথাগুলো শুনার যোগ্য।মেয়ের বাবা মাকে যদি জুতায় গু ভরিয়ে থাপড়ানো হয় তাহলে ছেলের বাবা মাকেও থাপড়াতে হবে।তাইনা আব্বা?”
শওকত হাওলাদার বললো,
“আমাদের মতো পরিবারে মেয়ে দিতে পেরেছে এটাই তো অনেক।”
“তাই বলে আপনারা এভাবে অপমান করবেন?ঘরে গরুর মাংস থাকার পরেও কেন রান্না করা হয়নি?আমি প্রেম করে বিয়ে করেছি বলে?”
শওকত হাওলাদার বললো,
“ছোটলোকদের এরচেয়ে ভালো খাবার গলা দিয়ে নামবে না।”
পুষ্প বললো,
“বারবার আমার আব্বাকে ছোটলোক কেন বলেন?”
শিমুল পুষ্পকে থামিয়ে বললো,
“এমনিতেই তো মাঝে মাঝে গরুর মাংস খাসির মাংস রান্না হয় আজকে কেনো হলোনা?সোজা উত্তর দেন।”
শওকত হাওলাদার চোখ পাকিয়ে বললো,
“নিজের টাকায় শশুড়কে ভালো মন্দ খাওয়া।আমার টাকায় তো বউ নিয়ে খাস এখন তোর শশুড় বাড়ির লোকলেও খাওয়াবো নাকি?”
টাকার খোটা দেওয়াতে শিমুল স্তব্ধ হয়ে যায়।
“আমাকে খোটা দিচ্ছেন?”
“হ্যাঁ দিচ্ছি।এক টাকা ইনকামের মুরোদ নেই তার আবার বড়ো বড়ো কথা।”
“আমি আপনার রাজনৈতিক সব কাজ করি তাই আপনি আমাকে টাকা দেন।মাগনা তো টাকা নেইনা।”
শওকত হাওলাদারের গলার স্বর আরো বেড়ে যায়।
“বিয়ে মনে হয় তুই একাই করেছিস আর কেউ করেনা।বিয়ে করে নাটক শুরু করেছে।বউ পড়ায়,শুশুড় শাশুড়ীকে ভালো খাবার খাওয়ানোর আদেশ দেয়,ঘরের মানুষকে যা ইচ্ছা তাই বলিস।এসব করতে হলে আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা।আমার বাড়িতে তোর আর তোর বউয়ের মতো অস/ভ্যের জায়গা নেই।”
শিমুল স্তব্ধ হয়ে যায়।
“বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার তাড়া দিচ্ছেন?কি বলছেন ভেবে বলছেন তো?”
“এতো ভাবার কিছু নেই।তোর মতো কু/লাঙ্গার না থাকলে বা/ল ছিড়ানো যাবে।”
এককথায় দুই কথায় মজিব আর শওকতের সাথে শিমুলের তুমুল ঝ/গড়া হয়।রাবেয়া ছাড়া সবাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলে।মজিব হাওলাদার বললো,
“বউ পালার মুরোদ থাকলে তো বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যেতে সাহস করবে।সেই হে/ডাম আছে নাকি?খালি চিল্লা/ইতেই পারে।”
শিমুল অবাক গলায় বললো,
“আমি বউ পালতে পারবো না?”
“কু/ত্তার মতো ঘুরলেও এক কেজী চালের টাকা বের করতে পারবি না।আজাইরা খাস তো খবর নাই,গায়ে তেল নিজের টাকায় মাখ।”
ঝগড়ার এক পর্যায়ে শিমুল পুষ্পকে নিয়ে রুমে ঢুকে।কিছুক্ষনের মাঝেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে পুষ্পর হাত ধরে বেরিয়ে যায়।রাবেয়া আহা/জারি করে উঠে শিমুল আর পুষ্প উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।শিমুল কিছু না বলে ঢাকার বাসে উঠে।সে নাকি বউ পালতে পারবে না!এতো অপমান!নিজের পরিবারের কাছে থেকে এতো অপমান!শিমুল এতো কমদামী!থাকলো না অ/মানুষের এই বাড়িতে।
চলবে……