প্রেম ঘোর #পর্ব_৫৩_৫৪ 💜💜

0
1444

#প্রেম ঘোর
#পর্ব_৫৩_৫৪
💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹

সন্ধ্যাবেলা………
সাদাদের বাসার সবাই মাগরিবের নামাযের পর এক সাথে ড্রয়িল রোমে বসে আছে।
উদ্দেশ্য:সবাই মিলে একসাথে চটপটি খাবে।
রিদিও এসেছে,যদিও প্রথমে আসতে চায় নি তারপর কি জানি কি ভেবে এসেছে।
“ভাবী,আর কত ওয়েট করাবে আমাদের……আমার যে পেটে কুটকুট করছে……”(প্রাপ্তি)
“আম্মু তালাতালি কলো…..”(অরূপ)
রান্নাঘর থেকে রাফসা এই পর্যন্ত অনেক বার চিল্লিয়ে বলেছে সব কয়টাকে একটু ওয়েট করতে।কিন্তু কে শোনে কার কথা………
প্রাপ্তি আর অরূপের চিৎকারে ড্রয়িং রোমে বসে থাকাই মুসকিল………..
তাই সাদাদের মা ঘটনা সমলে নিতে প্রাপ্তিকে বললো,
“দাঁড়া সবার জন্য আনতে একটু সময় লাগবে……”
“আচ্ছা,তোমরা বসো আমি দেখছি কতদূর হলো……”(রিদি)
রিদি মাঝে মাঝে মন ভালো থাকলে রাফসার সাথে টুকটাক কাজ করে আর কি।তাই আজও এরকম একটা খুশির মুহুর্তে হয়তো মনে হয়েছে একটু হেল্প করুক রাফসাকে তাই বসা থেকে উঠে রান্না ঘরে চলে যায়।
.
“ভাবী,হয়ে গেছে??”(রিদি)
“হ্যাঁ গো…..এখন শুধু বাটিগুলো সাজাবো…..”
“ও…… দাও আমি তুলে দিচ্ছি……..”
“দাঁড়াও….দিচ্ছি….দুটো ট্রে তে করে নিতে হবে সবার জন্য ই তো….তুমি এসেছো ভালোই হয়েছে….দুজনে দুটো নিতে পারবো…….”(সেল্ফ থেকে বাটি বের করতে গিয়ে কথা গুলো বলছে রাফসা)
“আল্লাহ্……”
“কি হলো??”
“বাটি তো সবগুলো ধুয়া লাগবে মনে হচ্ছে……..তুমি দাঁড়াও আমি এগুলো একটু ধুয়ে নিয়ে আসি…এইগুলো ততখন চিৎকার করতে থাকুক…কিছু তো করার নেই……”
“ঐ যে সার্ভেন্ট টা ওনি কোথায়??”
বাড়ির সব ছোটরা হালিমা কে খালা বলে ডাকলেও এই রিদি ডাকে না।ওর কাছে নাকি সার্ভেন্ট সার্ভেন্ট ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।
“খালার শরীর টা একটু খারাপ গো….তাই আমি জোর করে শুইয়ে রেখে এসেছি….আসতে চেয়েছিলো এখানে জোর করতে হয়েছে অনেক…..
“ও….তাহলে আমি হেল্প করবো??”
“না না তোমার করতে হবে না…..আমি একাই পারবো…..”
রাফসা বেশ কয়েকটা বাটি নিয়ে রান্বাঘরের পাশে বেসিং টা তে চলে গেলো,
রান্নাঘরের বেসিং টা একটু বাইরের দিকে…..তাই সেখান থেকে রান্না ঘরে কি হচ্ছে ঠিক দেখা যায় না…..
রিদি রাফসার সামনে দিয়েই রাফসা কে বলে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে…..আবার পর মুহুর্তেই রান্নাঘরে ডুকে পড়ে যেটা রাফসার নজরে আসে নি………
!
রিদি কিছক্ষণ পর রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এমন ভাবে রাফসার কাছে আসে রাফসা ভেবেছে রিদি ড্রয়িং রোম থেকেই এসেছে।
“ও…..তুমি!এই তো ধুয়া শেষ….তুমি এই বাটিগুলো নিয়ে যাও…..আমি এগুলো নিয়ে আসছি…..”
রিদি চটপটিয়ে বলে ফেললো,
“ও সিউর……”
…………রিদি আর রাফসা বেশ কয়েকটা বাটিতে করে চটপটি নিয়ে দুটো ট্রে হাতে নিয়ে ড্রয়িং রোমে ডুকলো।
প্রাপ্তি আর অরূপ সেই দৃশ্য দেখে অনেক জোরে একটা আনন্দ চিৎকার করে………
“আরে আস্তে মা মনি…..”(প্রাপ্তির বাবা)
“আপু….আমাকে আগে দাও….. “(প্রাপ্তি)
“সবাই পাবে প্রাপ্তি….চুপ করে বসো তুমি……”(প্রাপ্তির মা)
প্রাপ্তি আর কিছু বললো না,আর কিছু বলে যে ওর মা বকা দিবে তাই।
রাফসা প্রথমে ওর শশুড়,শাশুড়ি,কাকা শশুড়,কাকি শাশুড়িকে দিয়ে নৌশিন,সাদাদ আর শরীফ চাচা(সার্ভেন্ট)কে চটপটির বাটি গুলো বেশ সুন্দর করে পরিবেশন করলো।
আর রিদি অরূপ আর প্রাপ্তিকে দিয়ে নিজের টা নিয়ে বসলো প্রাপ্তির পাশে,
রাফসার বাটি টাও রিদি ই পরিবেশন করলো।
সবাই খুব মজা করেই খাচ্ছে।বিশেষ করে নৌশিন!!নৌশিন এগুলো খেতে বেশি ভালোবাসে তাই রাফসা ওর বাটিতে সবার চেয়ে বেশি করে দিয়েছে।প্রাপ্তির বাটিতেও নৌশিনের সম পরিমাণ চটপটি দেওয়া আছে,কারণ প্রাপ্তিও নৌশিনের মতো এসব খাবার বেশি পচ্ছন্দ করে।
…………….
সবার খাওয়া প্রায় শেষ…..শুধু অরূপ আর নৌশিনের বাটিতে এখন বেশ খানিক টা আছে…..
সবাই খেয়ে রাফসার খুব প্রশংসা করছে………..
“আম্মু আমি আলো খাবো….”
রাফসা চোখ বড় করে বললো,
“কি…..????”
“আল একটু দাও…..”
“না……এগুলো এতে খেতে হয় না……”
“আল একটু…..”
“চুপ…..চুপচাপ যে টুকু আছে সেটুকু শেষ করো……”
সবার সামনে অরূপ যেন ওর মাকে দেখে একটু কম ভয় পায়……….
“প্লিজ আম্মু…….”
রাফসা কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রাপ্তির বাবা বলে ফেললো,
“আহ্….বড় বউ মা….দাও না আর একটু…..একদিন ই তো একটু বেশি খেলে কিছু হবে না…..তা ছাড়া এটা তো বাসায় বানানো…..দাও দাও দাদুভাই কে আরও একটু এনে দাও……”
রাফসা আর না করতে পারলো না…..যতই কাকা শশুড় একবার বলে দিলো তার পরেও তো আর ছেলেকে বারণ করা যায় না,তাই কি আর করার রান্না ঘর থেকে অন্য একটা বাটিতে করে আবারও চটপটি নিয়ে আসতে হলো ছেলের জন্য।তবে বেশি না অল্পই এনেছে….ডাক্তার মানুষ তো!!ছেলের স্বাস্থ্যের দিকে নজর টা স্বাভাবিক ভাবেই একটু বেশি……….।
……….
“আহ….ভাবী….সত্যিই জোশ ছিলো…..আমার কাছে তো বাড়িতে বানানো চটপটি একদম ভালো লাগতো না……বাট তোমার বানানো টা জাস্ট ওয়াও…..আমি তো এখম প্রায় সময় ই তোমার হাতের চটপটি খাবো……..”(নৌশিন)
“হ্যাঁ……আমি জানি তো তোমার আন্টির হাতের চটপটি কেন ভালো লাগতো না!আন্টি তোমার মন মতো ঝাল দিতো না,পরিমাপে ঠিক দিতো….
আর ফুল বাটি চটপটি একদিনও দিতো হাফ বাটি দিতো…..তার উপর আবার ডিম সিদ্ধ দিয়ে দিতো তাই আপনার ভালো লাগতো না…….”(রাফসা)
উপস্থিত সবাই রাফসার কথা শোনে হাঁসতে লাগলো……………..
“ভাবী!!!!…….”
“আচ্ছা,আচ্ছা…..কেউ আর হেঁসো না আমার নৌশিন মা একটু কম খায় বলে তোমরা এমন করে হাঁসবে না কি??”(সাদাদের বাবা)
“হা সব কিছু কম খায়….শুধু ঝাল টা বেশি…..”(রাফসা)
“আমার ভালো লাগে আমি কি ক….ক….র……..”
নৌশিন বাক্য টা শেষ করতে পারলো না তার আগেই জোরে জোরে কাশতে শুরু করলো…..
“কি হলো???”(সাদাদ)
“পানি দাও…..পানি দাও ওকে……”(প্রাপ্তির বাবা)
রাফসা নৌশিনকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো,
নৌশিন পানি টা খেয়ে নিয়েও খকখক করে কেশে চলেছে আর বার বার গলা চুলকাচ্ছে………….
“এই তোর গলা এমন লাল হচ্ছে কেন????”
নৌশিন কিছু বলতে পারছে না কাশির জন্য…..একদিকে কাশতেছে আর অন্য দিকে মাথার কাপড় টা ফেলে দিয়ে দুহাতে গলা আর ঘাড় চুলকাচ্ছে………..
“নৌশিন???”(সাদাদ)
নৌশিন কারও কথার কোনো উত্তর দিতে পারছে না……..গলায় লাল লাল ছাপ পড়ে গেছে একদম………..
নৌশিন হাতও চুলকাতে শুরু করেছে…….হাতেও লাল লাল ছাপ ভেসে উঠেছে এতক্ষণে…….
রাফসার আর বুঝতে বাকী রইলো না যে এগুলো এর্লাজি……….নৌশিন সহ সবাই এতক্ষণে বুঝে গেছে……….
“কি আজব….এক মুহুর্তে এতো এর্লাজি কি করে হয়ে গেলো……..”(সাদাদের মা)
“দেখি দেখি…..সাদাদ সর….”(সাদাদের মা)
সাদাদ নৌশিনের পাশ থেকে উঠে দাঁড়ালে ওর মা নৌশিনের পাশে বসে………
নৌশিনের কাশি কিছুতেই থামছে না……গলা আরও বেশি লাল হয়ে আসছে….
নৌশিনের শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে এবার………….
সাদাদ নৌশিনের কাছে গিয়ে বলছে,
“কি কষ্ট হচ্ছে বলো আমায়……নৌশিন???”
সাদাদের চোখ দিয়ে মনে হয় এক্ষণি পানি বের হয়ে যাবে……..সাদাদের মা নৌশিনের পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলছে,
“মা….ও মা……কষ্ট হচ্ছে বেশি…..মা এই তো তোমার ভাবী রোমে গেছে ঔষধ আনতে…….কমে যাবে মা……”
“আল্লাহ্….ওর তো শ্বাস কষ্ট হচ্ছে মনে হয়…….”(রিদি)
নৌশিন কাশতে কাশতেই মাথা নাড়িয়ে সবাইকে বুঝালো যে ওর দম নিতে কষ্ট হচ্ছে…………
“সাদাদ ওকে তাড়াতাড়ি রোমে নে…….”(রাফসা)
সাদাদ এক মুহুর্ত দেরি না করে নৌশিনকে কোলে তুলে নিয়ে এরকম দৌড়ে উপরে নিয়ে গেলো।
এই দৃশ্য দেখে রিদির চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে…………..
সাদাদ নৌশিনকে নিয়ে বেডে না শুইয়ে দিয়ে ওর বুকে হেলান দিয়ে বসিয়ে রাখলো………নৌশন শুধু কাশছে আর হাত,গলা সমানে চুলকে যাচ্ছে…..
চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে……….
বাসার সবাই সাদাদের রোমে এসে ভীর করেছে এমন কি রিদিও………….
আর অরূপ কখন থেকে শুধু নৌশিনের মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে এবার আর দেখতে পারলো না জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।।।।
অরূপের বাবা কোলে তুলে নেয় ছেলেকে………
“বাবু কাঁদে না……ঠিক হয়ে যাবে নতুন বউ….তোমার আম্মু ঔষধ দিচ্ছে তো…..”
অরূপ কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“কি হয়েছে নতুন বউ য়েল….”
“একটু শরীর খারাপ…..ঠিক হয়ে যাবে এখনি…….”(অরূপের বাবা)
“নৌশিন……এই নৌশিন……একটু জান….ঠিক হয়ে যাবে এই ঔষধ টা একটু খেয়ে নাও……”
সাদাদের গলাটাও কেমন ভেঙে আসছে…………
“নৌশিন বোন দেখি একটু হা কর……এটা খেলে কমে যাবে………”
নৌশিনের খুব কষ্ট হচ্ছে।ওর এর্লাজি হয় মাঝে মাঝে কিন্তু আজ প্রথম এতো টা কষ্ট হচ্ছে।আর ওর বাবার বাড়িতে থাকা কালীন এগুলো খুব কম দেখা দিতো।।।।লাস্ট কবে যে এর্লাজি হয়েছিলো সেটা ভার্সিটির র্যাগ ডে তে অনেক ক্ষণ রোদে থাকার কারণে………আজ অনেক দিন পর হলো কিন্তু এমন কষ্ট হয় নি কোনো দিন…..
নৌশিনের মা তো মেয়ে কে এর্লাজি হবে এমন কিছু খাওয়ানো তো দূরের কথা ধরতে পর্যন্ত দিতো না…..
তাহলে?আজ.??হঠাৎ কি করে এতোটা কষ্ট হচ্ছ??
নৌশিনকে অনেক কষ্ট করে ঔষধ টা খাইয়ে দিলো সাদাদ…..এই মেয়ে আবার ঔষধ বেশি একটা খেতে চায় না…..কিন্তু এই মুহুর্তে যে কষ্ট হচ্ছে সেটা কমানোর জন্য দুটো টেবলেট অনেক কষ্টে খেয়ে নিলো……….এখন নৌশিনকে সাদাদ নিজের বুকেই আধ শোয়া অবস্থায় রেখে দিয়েছে…….কাশি টা একটু কমে আসছে………..
“ইশশশ……সারা টা শরীর কেমন গোটা গোটা হয়ে গেছে গো…….”(প্রাপ্তির মা)
“হ্যাঁ…..নৌশিন তোর আগে এমন হয়েছিলো কোনো দিন…..”
মাথা নাড়িয়ে না জানালো নৌশিন……..
“আমি তো একবার ভার্সিটিতে দেখলাম ওর এর্লাজি হতে……না জেনে চিংড়ির কিছু একটা খেয়ে ফেলেছিলো…….আর আরেক বারও দেখলাম সেটা এক বছরেরও কম হবে দেখেছি যার্গ ডে তে….সে দু দিন শুধু শরীরে এর্লাজির গুটি দেখেছিলাম…. বাট কাশি,শ্বাস কষ্ট তার পর এতটা লাল তো হয় নি…..হ্যাঁ যে দিন চিংড়ি খেয়েছিলো ঐ দিন একটু বেশি লাল গুটি দেখা গেছিলো….কিন্তু ও খেয়েছিলো অল্প….তাতেই অনেক খারাপ লাগছিলো ওর……কিন্তু আজকের মতো না……”
কিছুসময় পর………….
নৌশিনের কাশি কমে গেছে এতক্ষণে সাদাদের বুকেই শুয়ে ছিলো…….সবার সামনেই সাদাদকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কাঁদতে শুরু করলো মেয়েটা…….আসলে যখন কষ্ট হয় না তখন কাছের মানুষকে পাশে পেলে মনে হয় জড়িয়ে ধরে কাঁদলে বুঝি কষ্ট টা লাঘব হবে!!
নৌশিনেরও ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছ………..
সাদাদও সবার সামনেই জড়িয়ে ধরলো নৌশিনকে……..
“আরে পাগলী কাঁদছো কেন??”
নৌশিন কেঁদেই চলেছে……
“কাঁদিস না বোন….এমনিই শ্বাসে প্রবলেম হচ্ছিলো এখনও তেমন একটা কমে নি……কাঁদলে আরও বাড়বে…….”
“কেঁদো না প্লিজ……..কষ্ট হবে আরও……”
নৌশিন সাদাদকে এখনও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে…….কান্না করে যাচ্ছে…সাদাদ আর কিছু বললো না সে ও নৌশিনকে একি ভাবে নিজের বুকে আগলে রাখলো নৌশিনের শরীর টা কেমন গরম হয়ে আসছে।বেশি এর্লাজি উঠে গেছে তো তাই আর কি…….
“আমি একটা জিনিস ই বুজলাম না…..এটা হলো কি করে…..এমনি এমনি তো এটা হওয়ার কথা না……”(রাফসা)
“চটপটিতে এর্লাজি জাতীয় কিছু দাও নি তো??”
“না মা…..আমি এর্লাজি হয় এমন কিচ্ছু দিই নি…..ওর যাতে কোনো প্রবলেম না হয় সে জন্য কোনো ফ্লেভারও দেই নি……”
“তাহলে??হঠাৎ করে এমন হবে কেন??”(প্রাপ্তির বাবা)
“আমিও তো বুজতে পারছি না………”(রাফসা)
“ভাবীর আবার হিটে এর্লাজি হয় না তো??ড্রয়িং রোমে তো ওরেন্জ ফ্লেভারের হিট স্প্রে করা ছিলো……….”
“হ্যাঁ…..তাও হতে পারে…..”(রাফসা)
“না না সেটা কি করে হয়…..আমি তো আমাদের রোমে এটাই ইউজ করি…..ঐ তো দেখলাম নৌশিনও রোমে দিচ্ছিলো……..(সাদাদ নৌশিনের কোনো সারা শব্দ না পেয়ে নৌশিনকে আস্তে করে ডাকলো….”নৌশিন…..”
নৌশিন কোনো সারা দিলো না…….বেচারী কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে….
“ঘুমিয়ে গেছে তাই না??”(রাফসা)
“হ্যাঁ তাই তো মনে হচ্ছে……”
“শুইয়ে দে ওকে…..”
“হ্যাঁ…..ভাবী, দিচ্ছি…….”
সাদাদ নৌশিনকে ঠিক করপ শুইয়ে দিলো……
মেয়েটার সারা শরীর একদম গুটি গুটি হয়ে গেছে,যে দিকে বেশি চুলকেছিলো সেগুলো পুরো কালো কালো হয়ে গেছে……
অরূপ ওর বাবার কোল থেকে নেমে সরাসরি নৌশিনের বিছানায় উঠে ওর পাশে শুয়ে পড়লো….
শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নৌশিনকে……….
“বাবু,কি করছো??এসো আমার কাছে…..নতুন বউয়ের অসুখ তো…..”
“না আমি নতুন বউয়ের সাথে থাকবো……”
“হ্যাঁ থেকো…..এখন তো তুমি ঘুমাবে না…..আর একটু পরে এসো…….ততক্ষণ নতুন বউ একটু রেস্ট করুক…..তুমি তো দেখলে নতুন বউয়ের কতটা কষ্ট হচ্ছিলো……”
“তাহলে আমি কিন্তু আজ নতুন বউয়েল সাথে ঘুমাবো পলে…..তুমি আব্বুল সাথে থাকবে……”
“আচ্ছা,আব্বু….তুমি এখন উঠে এসো……”
অরূপ ঘুমন্ত নৌশিনের কপালে আর গালে চুমু একে দিয়ে উঠে আসে…
রাফসা ছেলে কে কোলে নিয়ে বলে,
“ও একটু ঘুমাক……ডাকাডাকির দরকার নেই……..পরে উঠলে কিছু একটা খাইয়ে আবার ঔষধ খাওয়াতে হবে……কি অবস্থা হয়েছে শরীর টার…….”
একে একে সবাই রোম থেকে বেরিয়ে গেলো…..
নৌশিন ঘুমাচ্ছে……
সাদাদ নৌশিনের মুখের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে,মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,মনে মনে ভাবতে লাগলো,
“কেন হলো এমনটা???একটু চিংড়ি খাওয়াতে ওর একবার এরকম গুটি হয়েছিলো কিন্তু কাশি আর শ্বাস কষ্ট তো হয় নি…..তার মানে কি আজ বেশি কিছু!!।।।।না না ভাবী তো বললো তেমন কিছু দেই নি…..তাহলে???”
হঠাৎ নৌশিনের ফোন বেজে উঠায় সাদাদের ভাবনায় ছেদ পড়ে……
সাদাদ ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে তাহ্না ফোন করেছে,
সাদাদ ফোন টা রিসিভ করে হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে তাহ্না বলছে,
“কি রে,বর পেয়ে ফ্রেন্ডসদের একদম ভুলে গেছিস তাই না???”
“তোর সাথে তো কোনো দিন কথা বলবো না আর….শয়তানী একটা…..কত বার কল করেছি তুই জানিস??ফোন অফ ছিলো কেন???ও বুঝেছি আমরা যাতে ফোন করে ডির্স্টাব করতে না পারি তাই অফ করে…….”
“আরে আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিবে???”
“আরে????আপনি কে???আমার বন্ধুর ফোন আপনি কেন ধরেছেন???আমার বন্ধু কোথায়???”
“হেয়য়য়য়……সাদাদ বলছি……”
তাহ্না জিহ্বায় একটা কামড় বসিয়ে বললো,
“ওওওও সরি সরি ভাইয়া…..আমি প্রথমে ভেবেছিলাম নৌশিন….তার পর ভয়েস শোনে ভাবলাম কে না কে!!আসলে ফোনে আপনার সাথে কোনো দিন কথা বলি নি তো তাই বুজতে পারে নি…….আপনি রাগ করেন নি তো??কিছু মনে করবেন না প্লিজ…..”
“আরে না….ব্যাপার না….”
“আচ্ছা…..কেমন আছেন??”
“ভালো….তুমি??”
“আমি তো সব সময় ই ভালো…..নৌশিন কোথায়?”
“ও একটু অসুস্থ হয়ে তাই ঘুমাচ্ছে……”
“কি বলেন???কি হয়েছে ওর????আবার প্রডিমনেশিয়ার প্রব হলো নাকি???”
“না এবার সেটা না….আজ হঠাৎ করে এর্লাজিতে সারা শরীর একদম নাজেহাল অবস্থা…..পুরো শরীর কেমন গুটি গুটি হয়ে গেছে…..আর বিশেষ করে গলায় খুব বেশি….গলায় লাল কালো কেমন গুটি হয়েছে চুলকেছে ইচ্ছে মতো তাই কালো হয়ে গেছে জাগায় জাগায়…..এতোটাই খারাপ অবস্থা কাঁশি আর শ্বাসকষ্টও হয়েছিলো……”
“আল্লাহ্…..কি বলেন ভাইয়া……”
“হ্যাঁ…..”
“এখম কেমন আছে??”
“এখনও পুরো পুরো কমে নি….ঔষধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে……”
“ও…..আচ্ছা….তাহলে ঘুমাক ও…..”
“আচ্ছা….ও ঠিক হলে কল ব্যাক করে নিবে….আমি বলে দিবো……”
“ওকে ভাইয়া…..রাখছি তাহলে…..আসসালামু আলাইকুম…..”
“হ্যাঁ…..ওয়ালাইকুম আসসালাম………”
প্রায় দশটার দিকে…..নৌশিন তখনো ঘুমাচ্ছে আসলে এর্লাজির যে ঔষধ গুলো খাওয়া হয় এতে ঘুম আসলে একটু বেশিই হয়…..আর নৌশিনের যা অবস্থা হয়েছিলো তাই রাফসা বেশি পাওয়ারের ঔষধ দিয়েছিলো ওকে………..
সাদাদ নৌশিনের পাশেই আধশোয়া হয়ে এক হাত নৌশিনের উপর দিয়ে অন্য হাতে একটা ফাইল চেক করছিলো…….এমন সময় রাফসা খাবার নিয়ে ঘরে ডুকে……….
“এখনো ঘুমাচ্ছে??”
“হ্যাঁ……”
“ইশশশ…..কি অবস্থা……আমার মাথাতেই ডুকছে না কি করে হলো এটা…….”
“আচ্ছা….তোমাকে রান্নায় কেউ হেল্প করেছিলো???”
“না…..তবে হ্যাঁ….রিদি সার্ভে হেল্প করেছিলো……”
সাদাদ মনে মনে বললো, “তারমানে আমি যা ভাবছি তাই!!এটা হলে আমি রিদিকে আজ শেষ করে দিবো…….”
সাদাদের চোখে মুখে রাগের ছাপ……
“কি রে কি ভাবছিস??”
“না কিছু না…..”
“তোর সাথে আমার একটু কথা বলার ছিলো….”
“বলো…..”
“না এখন না পরে সময় করে বলবো….তুই এক কাজ কর….নৌশিনকে ডেকে খাবার টা খাইয়ে দে….আর তুইও খেয়ে নে…
খাওয়ার পর ওকে এই ঔষধ টা খাইয়ে দিস…..”
“আচ্ছা….”
“অরূপ কি ঘুমাচ্ছে??”
“হ্যাঁ…এখানে আসার জন্য বায়না করছিলো তোর ভাইয়া বুজিয়ে সুজিয়ে ওখানেই ঘুম পাড়িয়ে দিলো….”
“ওকে…..গুড নাইট…..”
“গুড নাইট………”
রাফসা চলে যাওয়ার পর সাদাদ নৌশিনকে সজাগ করিয়ে জোর করে একটু খাবার খাইয়ে দিলো……..
নৌশিন খেতে চাইছিলো না তবু সাদাদের জোড়াজোড়ি অল্প একটু খেতেই হলো…..
সাদাদ নৌশিনকে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে,ওযু করে আসলো….. নৌশিনের কাহিল অবস্থা….চোখ মুখ কেমন ফুলে আছে…….বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে………
“তুমি একটু শুয়ে থাকো….আমি নামায টা পড়ে নিই…..”
গলাটাও কেমন ভেঙে গেছে….ঠিক মতো কথা আসছে না গলা দিয়ে….তবুও অনেক কষ্ট করে বললো,
“আমিও নামায পড়বো…..”
সাদাদ কিছু বললো না….নৌশিনকে কোলে তুলপ নিয়ে ওয়াশরোম থেকে ওযু করিয়ে এনে,
দু জনে একসাথে নামাজটা সেরে নিলো……..
নৌশিন বসে বসেই নামায টা সেরেছে……সাদাদ জায়নামায থেকেও নৌশিনকে কোলে করে বিছানায় নিয়ে যায়।
নৌশিন আবারও বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে….
“জান,এখন কেমন লাগছে??”
“হুম ভালো….”
“শুয়ে পড়ো….”
“একটু পড়ে শুই…..এতক্ষণ তো ঘুমালাম ই…..”
“ওকে….যেমন তোমার ইচ্ছা…..”
সাদাদ নৌশিনকে নিজের বুকে হেলান দিয়ে বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে……….
“আমার গলার সর টা ভেঙে গেছে তাই না??”
“গলার স্বরে কি আসে যায়….তুমি সুস্থ হলেই আমার চলবে……”
“খাবে না তুমি???”
“না ক্ষিদে নেই…..”
“মিথ্যা কেন বলছো??”
“রিয়েলি…..তখন ফাস্ট ফুড খেলাম তো।।।তাই পেট ফুল ই আছে…..”
“আমিও কিন্তু খেয়েছিলাম……আর এখন ভাতও খাইলাম…..”
“আচ্ছা….পরে খেয়ে নিবো…..”
“পরে আর কখম খাবে….দশটার বেশি বাজে….আমি খাইয়ে দিই??”
“হুম???”
“হ্যাঁ….তুমি তো প্রায় ই আমাকে খাইয়ে দাও…..আজও তো দিলে…..এখন আমি দিই…..”
“থাক আমি খেয়ে নিবো জান…..আজ তোমার কষ্ট হবে……”
“আমি ইল তাই তুমি আমার হাতে খেতে চাইছো না….তাই না??”
সাদাদ নৌশিনকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে শক্ত জড়িয়ে নিলো।
“জান,একদম না…..তোমার হাতে খেতে পেলে আমার কতটা ভালো লাগবে তুমি ভাবতেও পারবে না!আমার তো শোনেই আনন্দ লাগছিলো,তুমার কষ্ট হবে তো আজ তাই বললাম…..”
নৌশিন নিজেকে ছাড়িয়ে,সাদাদের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকলো কিছুটা সময়,
তারপর নিজেই হাত বাড়িয়ে টেবিল থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে নিলো।
ভাত মাখতে গিয়ে বলছে,
“আমার কোনো কষ্ট হবে না,আমি এখন ঠিক আছি…..”
“………”
“কই হা করো……”
দরজা টা খুলা সাদাদের রোমের……সাদাদ খাচ্ছে….নৌশিন খুব যত্ন সহকারে সাদাদকে খাইয়ে দিচ্ছে……….সাদাদ নৌশিনের মন ভালো করার জন্য একটু আধটু দুষ্টুমিও করছে নৌশিনের সাথে যেন নৌশিন হাঁসে……..
“ওহ…..আর এক বার কামড় দিলে আমি কিন্তু খাওয়াবো না……”
“না জান…..তোমার হাতে কামড় দিলে খাবার টা স্পেশাল হয়ে যায় তাই তো……”
হঠাৎ সাদাদ কারও ছায়া দেখতে পেলো,সাদাদ মনে হয় আন্দাজ করতে পারছে ছায়াটা কার।
কোনো ভ্রুক্ষেপ করলো না সাদাদ,সে চায় না তৃতীয় কোনো ব্যক্তির জন্য ওর আর নৌশিনের ভালোবাসার কোনো কমতি হোক।খাওয়া শেষ,নৌশিন পানিও খাইয়ে দিলো সাদাদকে…..নিজে হাত ধুয়ে যাবে,সাদাদ ধুতে দিলো না….হাত টা টেনে নিয়ে আঙুলে লেগে থাকা খাবারগুলো চেটে খেয়ে নিচ্ছে।নৌশিনের সারা শরীরে একটা শিহরণ বয়ে যাচ্ছে……..পা দিয়ে বিছানার চাদর আকড়ে ধরেছে……সাদাদ এমন ভাবে আঙুলে লেহন দিচ্ছে মনে হয় প্রিয় কোনো খাবার বহু দিন পর সামনে পেয়েছে।নৌশিন হাত টা সরিয়ে নিতে চাইলে সাদাদ আস্তে করে একটা কামড় বসিয়ে দিলো………..
“ওও…..সাদাদ!!!”
হাতটা ছেড়ে দিলো সাদাদ….মিটমিট করে হাসছে সে……..
“হাঁসা হচ্ছে তাই না??”
“ব্যাথা পেয়েছো??”
“তো??”
“ওকে….. “বলেই হাত টা আবার টেনে নিয়ে গভীর ভাবে কয়েকটা চুমু খেলো।
“হয়েছে জান??ব্যাথ্যা কমেছে??”
নৌশিন মিষ্টি একটা হাঁসি দিয়ে সাদাদের বুকে মুখ লুকিয়ে বললো,”হুম”।
“ইউ নো না??তোমার সাদাদ ব্যাথা দিতে পারে আবার ভালোও করতে পারে……”
“ধ্যাত…….”
নৌশিন সাদাদকে ছেড়ে,হাতটা ধুয়ে নিলো….প্লেট টা টেবিলের উপর রয়ে গেলো……….সাদাদের সেই ছায়াটার কথা আর মনে নেই,হঠাৎ করে আবার মনে হওয়ায় দরজার দিকে তাঁকালে আর নজরে আসে নি ছায়াটা……….
দরজা লক করে এসে সাদাদ নৌশিনকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে নিলো একদম।
“উম উম…..”
“কি?? ”
“এভাবে কেউ ধরে,দম বন্ধ আসছিলো আমার…….”
“ওহ…..তাহলে আমার বুকেই আয়…..”
নৌশিন কি দেরী করে নাকি!!সাথে সাথে সাদাদের বুকে হাজির……সাদাদ আবারও শক্ত করেই জড়িয়ে নিলো নৌশিনকে,
নৌশিন আর কিছু বললো না সাদাদের বুকে চুমু দিয়ে সেও আকড়ে নিলো।
এমন একটা ঘুম দিলো দুজনে এক ঘুমে…………
ফযরের আযান!………..!
বারাবরের মতো আজও নামায দিয়েই শুরু হয় সাদাদ আর নৌশিনের জীবনের আরও একটা নতুন সকাল💜💜💜💜পুরো গল্পের লিংক
https://www.facebook.com/groups/2837664109643809/permalink/2935151703228382/

!
#প্রেমঘোর#৫৪#
💜💜

আজ সকালে নৌশিনকে আর পড়তে বলি সাদাদ।শরীর টা নেথিয়ে গেছে মেয়েটার।নামায পড়ে আবার শুয়েছে নৌশিন….ঘুমায় নি অবশ্য।পাশে বসে সাদাদ কাজ করছে………….।
“উঠছো কেন??”
“আর শুয়ে থাকতে ভালো লাগছে না”
“দেখি……”বলে সাদাদ নৌশিনকে নিজের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলো।
হালকা করে জড়িয়ে ধরে বললো,
“এখনও চুলকাচ্ছো??খারাপ লাগছে তাই না??”
“নাহ্…..একটু একটু চুলকাচ্ছে আর কি…..”
“কমে যাবে ইনশাল্লাহ্…….”
“হুম…..”
“আচ্ছা,তুমি একটু বসো….আমি আসছি….”
“কোথায় যাবে??”
“বসো….আমি যাবো আর আসবো….”
সাদাদ নৌশিনকে ছেড়ে রোমের বাইরে চলে গেলো,
কিছুক্ষণ পর এক বাটি সুপ নিয়ে রোমে প্রবেশ করার সাথে সাথেই নৌশিন বলে উঠে,
“আমি কিন্তু কিছু খাবো না….”
সাদাদ হেঁসে ফেলে।
পাশে বসে বলছে,
“আমি আমার জানটার জন্য নিজের হাতে বানিয়ে আনলাম,এখন সে যদি আমার কষ্টের কোনো দাম না দেয় তাহলে তো আমার মতো হতভাগা আর কেউ নেই……..”
“ইমোশনাল ব্যাল্কম্যাল করা হচ্ছে,তাই না??”
মুঁচকি হেঁসে সাদাদ বলে,
“দেখি হা করো……”
নৌশিন আর কথা বড়ালো না,আসলেই তো সাদাদ এতো সকালে ওর কাজ রেখে কত কষ্ট করে ওর জন্য স্যুপ করলো,সেটা না খেলে নৌশিনেরও যে ভালো লাগবে না।
নৌশিন সাদাদের হাতে থেকে বাটি টা নিয়ে সাদাদকেও এক চামচ স্যুপ খাইয়ে দিলো।
এভাবে শেয়ার করেই এক বাটি স্যুপ শেষ করলো দুজনে।সাদাদ জানতো নৌশিন পুরোটা কখনো খাবে না,তাতে কি!কিছুটা তো খেলো এতেই শান্তি!
“এখন চুপচাপ,এখানে বসবে…….”
নৌশিন হাঁসি মুখ নিয়ে বললো,
“হুম…”
সাদাদ আবারও কাজে লেগে যায়……..
কিছুক্ষণ পর নৌশিন সাদাদের উরুর উপর মাথা রাখে।বুজতে পারে সাদাদ নৌশিনের আবারও ঘুম পাচ্ছে,তাই ভালো করে নিজের কোলে মাথা দিয়ে শুইয়ে রেখে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে……….
মুহুর্তের মাঝেই নৌশিন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যায়।সাদাদ নৌশিনের উপর দিয়েই হাত চালিয়ে কাজ করতে থাকে,কিন্তু নৌশিনের এতে কোনো ডির্স্টাব হচ্ছে না।কেন না সাদাদ নৌশিনের ডির্স্টাব হবে এমন কিছুই করছে না,
এমনভাবে কাজ করছে নৌশিনের গায়ে এক ফুটা হাতও লাগলো না।
নয়টার দিকে সাদাদ নৌশিনকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ফোন টা হাতে নিলো।
রিদির সাথে কথা বলা দরকার।এটা ভেবে বারান্দায় গিয়ে রিদিকে একটা কল করলো,সাদাদ খুব দরকার ছাড়া রিদির রোমে কখনও যায় না।
মেয়েটা সব জেনেও হুটহাট জড়িয়ে ধরে এটা সাদাদের একদম ভালো লাগে না।
তাছাড়া এমন যুবতী একটা মেয়ে জামা কাপড়ের ঠিক নেই….মেয়েটা ইচ্ছে করেই সাদাদের সামনে আরও বেশি শরীর দেখিয়ে বেড়ায়।আর এটা সাদাদ খুব ভালো ভাবেই বুজতে পারে।তাই আগে যাও একটু সহ্য হতো এখন সাদাদ এই ‘রিদি’ মানুষ তো দূরের কথা নামটাকেও পচ্ছন্দ করে না।
কল করছে সাদাদ কিন্তু ওপাশ থেকে ফোন টা বন্ধ দেখাচ্ছে।
“কি ব্যাপার ওর ফোন বন্ধ??ওর ফোন তো সব সময় ই চালু থাকে…..”
সাদাদ রিদির খোঁজ করার জন্য রোম থেকে বেরিয়ে,রিদির রোমের দিকে যায়।ওর সাথে কথা বলা টা জরুরি।কেউ না কেউ তো কালকের কাজ টা করেছে।তা না হলে তো নৌশিন হঠাৎ এতোটা অসুস্থ হয়ে পড়তো না।
সাদাদ রিদির রোমের সামনে গিয়ে দেখলো দরজা বাইরে থেকে লক করা।
“তারমানে কি??রিদি রোমে নেই??অফিস চলে গেলো না তো??”
পেছন থেকে প্রাপ্তির ডাকে ধ্যান ভাঙে সাদাদের,
“ভাইয়া,কি বিরবির করছো একা একা??”
“ও তুই,রিদি কোথায় রে….”
“কোথায় মানে??তুমি জানো না??”
“না কি জানবো?”
“বলো কি,বাসার সবাই জানে আর তুমি জানো না??”
“কি বলবি তো নাকি??”
“আপু তো কাল রাতে জাপান চলে গেছে….”
“জাপান???”
“হ্যাঁ,অফিসের একটা কাজের জন্য কালই যেতে হয়েছে….কাল বিকেলই ফিক্সড হয়েছে নাকি….তো মাকে বলছিলো তখন শোনলাম আর কি…..”
রিদির কাজ ভালো হওয়ায় ওকে মাঝে মাঝে দেশের বাইরেও যেতে হয়।তাই এখানে সাদাদ খুব একটা অবাক হলো না।আর অবাক হওয়ারও কিছু নেই রিদি নিজের কাজকে খুব ভালোবাসে।শুধু জেদ টাই যা একটু বেশি।
“ওকে,যা……”
“হুম….”
প্রাপ্তি সিরি দিয়ে নামছে,এমন সময় সাদাদ আবার পিছু ডাকে,
“এদিকে আয়……”
প্রাপ্তি আবার উপরে উঠে সাদাদের কাছে যায়,
“কি ভাইয়া??”
সাদাদ প্রাপ্তির পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিলো।প্রাপ্তি শাড়ি পড়েছে।
বেশ লাগছে মেয়েটাকে।তবুও সাদাদ কড়া ভাষায় বললো,
“কোথায় যাচ্ছিস?”
প্রাপ্তির তো সাদাদের চাহনী দেখেই ভয় করছে….তবুও বুকে অনেক সাহস এনে উত্তর দিলো,
“ভাইয়া…..আজ না আমার এক ফেন্ডের বোনের বিয়ে….”
“তো??”
প্রাপ্তির গলা শুকিয়ে আসছে।ওর মা পারমিশন দিয়েছে যাওয়ার জন্য এখন যদি সাদাদ না দেয় তাহলে বেচারী আর যেতে পারবে না।তখন মা কে বললেও লাভ হবে না।
“আসলে স ব বন্ধু রা….. ”
“সব বন্ধুরা যাবে তাই তো??”
প্রাপ্তি মাথা নিচু করে বললো,
“হুম…..”
“তা আজকে কি বিয়ে???”
মাথা নাড়িয়ে না করলো প্রাপ্তি…..
“তাহলে??”
“গায়ে হলুদ….”
“এই জন্য হলুদ শাড়ি???”
“হুম…..”
“গাড়ি নিয়ে যাও……”
প্রাপ্তির মনে লাড্ডু ফুটলো,ও তো ভেবেছিলো সাদাদ ওকে যেতেই দিবো না।
“সত্যি???”
“তো হেঁটে যাবি??”
“না না তা না…….তবে সবাই এক সাথে গেলে…..”
“তার মানে বাই এনি চান্স তুই রিক্সসা চড়তে চাচ্ছিস তো???”
এই রে সাদাদ ধরে ফেলেছে।সাদাদ রিক্সসা খুব একটা পচ্ছন্দ করে না।আর মেয়েরা যে শাড়ি পড়ে হোট না উঠিয়ে রাস্তায় বের হয় এটা আরও খারাপ লাগে…..তবে সাথে কেউ থাকলে সেটা অন্য কথা,
একা যাওয়া টা ভালো লাগে না সাদাদের……
আর সে মানুষ টা যদি নিজের বোন হয় তাহলে তো ওভার প্রটেকশন দিতেই হবে।তারউপর বোন আবার চরম পর্যায়ের সুন্দরী।প্রাপ্তি মন টা খারাপ করে রেখেছে দেখে সাদাদ বলছে,
“বাবার গাড়ি বলে দিচ্ছি আমি,সেটাতে করে সবাই চলে যেও…..”
“ভাইয়া??আসলেই??জেঠুর গাড়ি নিয়ে যাবো??”
“হ্যাঁ তা না হলে তোর মুটি মুটি বন্ধুরা ধরবে না ছোট গাড়িতে…..আর তুইও তো দিন দিন হাতি হচ্ছিস……”
“ভাইয়া!!!এটা কিন্তু ঠিক না,আজ একটু বেশি খাই বলে……হুম….”
“হুপপপপ…..পিচ্চি…..”
“তুমি পিচ্চি তোমার বউ পিচ্চি…….”
“তবে রে……”
প্রাপ্তি এক দৌঁড়ে নিচে……
হাঁসতে থাকে সাদাদ……..
প্রাপ্তি নিচে নেমে সাদাদকে ভেঙিয়ে বাড়ির বাইরে চলে যায়।সাদাদ ড্রাইভারকে ফোন করে বললো,
“চাচা,প্রাপ্তিকে বাবার গাড়ি টা করে নিয়ে যান…..কোথায় কোথায় যাবে নিয়ে যান…..কোনো সমস্যা হলে সাথে সাথে আমাকে ফোন করে জানাবেন……ওর আশে পশেই থাকবেন সবসময়….আর সন্ধ্যার আগে বাসায় নিয়ে আসবেন…….”
ওপাশ থেকে,
“আচ্ছা বাবা……তয় বড় সাহেব??”
“বাবাকে আমি ড্রপ করে দিবো……”
“আচ্ছা……”
“ওকে…..”
সাদাদ কল শেষ করে রোমে চলে যায়।নৌশিনকে ডেকে তুলে ফ্রেস করিয়ে দিলো।নিচে নেমে দুজনে সবার সাথে সকালের খাবার টাও খেয়ে নিলো।
নৌশিন সুস্থ এখন।শুধু শরীরে একটু একটু গুটি গুটি আছে….তেমন চুলকাচ্ছেও না।
সাদাদ নৌশিনকে বলে বরাবরের মতো একটা মিষ্টি চুমু দিলো নৌশিনের কপালে।তারপর ই বেরিয়ে পড়লো অফিসের উদ্দশ্যে।
সাদাদ চলে গেলো,
আর নৌশিন বই নিয়ে পড়তে বসে যায়।
আজ নৌশিনের ফোন থাকায় সাদাদ কিছু সময় পরপর নৌশিনের খোঁজ খবর নিয়েছে।অসুস্থ ছিলো মেয়েটা তাই আরও বেশিই খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে।
নৌশিন এর ফাঁকে ওর বন্ধুদের সাথেও যোগাযোগ করে নিয়েছে।
ভালো লাগে নৌশিনের এসব।ছোট্ট ছোট্ট একটু ফোন,এসএমএস এগুলো যেন ভালোবাসার মার্ধুয টা অনেক গুণ বাড়িয়ে তুলে।
ব্যস্ত তো সবাই।এই ব্যস্ততার মাঝে ভালোবাসার মানুষের জন্য একটু সময় ইচ্ছে হলেই সবাই বের করতে পারে।
তবেই তো ভালোবাসা টা বৃত্তির মতো বৃদ্ধি পেয়ে যায়।আর সব সময় তো ব্যস্ততার মাঝে সময় দেওয়া হয়েও উঠে অপর জনকে সেটাও মানিয়ে নিতে হয়,শুধু হাই হ্যালো কম হলেই যে ভালোবাসা কমে গেছে এমন কোনো কথা নেই।শক্তির যেমন কোনো ধঃস নেই আছে শুধু রূপান্তর ঠিক তেমনি প্রকৃত ভালোবাসারও যে কোনো ধঃস নেই।
দু দিন পর………..
নৌশিন একদম ফিট……
আজ শুক্রবার হওয়ায় সাদাদ অফিস যায় নি।
আজও নৌশিন রান্না করছে।
“কি গো ছোট বউ মা কি রান্না করছো??”
“এই তো কাকি,আমি চিকেন করবো একটু…..ডাল করে ফেলেছি…..”
“ও মা……কি সুন্দর গন্ধ আসছে ডাল থেকে,তাই না বড় বৌ মা??”
“হ্যাঁ কাকি,ঠিক বলেছেন…..”
“তা তুমি ডাল খাবে তো???”
“আসলে,আমি না ডালে ধনে পাতা দিয়েছি……”
“সে কি,তুমি যেহেতু ধনে পাতা খাবে না দিলে কেন??”
“আসলে কাকি আমি তো ধনে পাতা খুব খুব লাইক করি তাই দিয়েছি!!!হি হি হি…..”
“আচ্ছা!দুষ্টু মেয়ে আমাকে বোকা বানানো হচ্ছিলো…..”
“কাকি!!!……লাভ ইউ না??”
“ওরে……লাভ ইউ টু মা…..দেখো মা সাবধানে রান্না করো…..”
“আচ্ছা….”
“কাকি যাও তো তুমি,নৌশিন আর আমি এদিক টা দেখছি…..সারা দিন টুকটাক কিছু করতেই হবে তোমার তাই না??”
“তোমরা কি আমাকে বুড়ি বানাতে চাচ্ছো?যে কাজ করতে দিচ্ছো না??”
পেছন থেকে প্রাপ্তি এসে ওর মায়ের পাশে দাঁড়ালো,
“মা তুমি কি নিজেকে এখনও ইয়াং মনে করো??”
“আল্লাহ্…..মা কে তুই বুড়ি বলছিস??”
“সরি সরি….রাগ করে না মা……তুমি জানো আমার সব বন্ধুরা কত প্রশংসা করে তোমার…..তুমি নাকি আমার চেয়ে ইয়াং……হা হা হা….”
“তবে রে মেয়ে……”
নৌশিন আর রাফসা মা মেয়ের কান্ডে হাঁসতে হাঁসতে শেষ।
……………..
“আহ্…..কি মিষ্টি সুভাষ……আমাকে আবার রান্না ঘরে টেনে আনলো…..”
“পিউমনি ঐ টা সুভাষ না সুবাস….সুভাষ তো নেতাজি……হি হি হি…..”
“এই পাকা ছেলে তোর চেয়ে আমি কম জানি??আমি ঠিক জানি যে ঐ টা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু…….আমার তো খাবারের গ্রাণে মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছিলো একটা বলতে আরকেটা…….”
“ছিঃ।।।।।ছুচো…..কত বল মেয়ে……”
“বড় ভাবী!!!!!!!!!!”
“অরূপ পিউমনি কে এমন বলতে নেই বাবা….”(নৌশিন)
“পিউমনি তো খালি খেতে চায়…..সব নিয়ে বসে থাকে….কিন্তু সব তো খেতে পারে না……তাই তো বললাম….”
“এই তোর কি রে…..”
“ওওওওলওওওওওওললওওলললললওও………”
“হা হা হা হা হা…….”(নৌশিন)
“ভাবী,তুমি হাঁসছো??কি বেয়াদপ ছেলে ফুপুর সাথে ভেঙাচ্ছে……দাঁড়া তোর মাকে ডাকছি…..বড়……..”
প্রাপ্তি অরূপেট মাকে ডাকার আগেই অরূপ প্রাপ্তির জামা ধরে ফেলায় আর ডাকতে পারলো না।
অরূপ এখনও প্রাপ্তির জামা ধরে রেখেছে,
“ছাড় এখন জামা টেনে ধরেছিস কেন??”
“আল বলবো না,তুমি খুব ভালো…..তোমাকে আমি কিটকাট দিবো….বলো না আম্মুকে……”
“প্রাপ্তি,কি করছো তুমি???”
“তুমি দেখেছো,আমাকে ঘুষ দিতে চাইছে ও……”
“আমি ঘুষ কোথায় দিতে চেয়েছি??নতুন বউ আমি তো বলেছি,কিটকাট দিবো……তাই না??”
প্রাপ্তি আর নৌশিন দুজনেই হেঁসে একাকার অবস্থা।
“দেখেছো ও ঘুষ ই বুঝে না……”
“ঘুষ কি নতুন বউ??”
প্রাপ্তি অরূপকে নিজের ঘাড়ে তুলে বললো,
“তোর বুঝতে হবে না ঘুষ কি……”
“তুমি আম্মুকে বলবে না তো??”
“না বলবো না……”
“কিটকাট দিতে হবে তোমায়??আমাল কাছে তো দুটো কিটকাট আছে,আমি খাবো যে…..”
“ঐ তোর কিটকাট লাগবে না আমার,আমি চিকেন খাবো এখন,ভাবী,আমাকে দাও একটা…… ”
“আচ্ছা,দাঁড়াও…..আমি বাটিতে তুলে দিচ্ছি তোমাদের……”
“নতুন বউ,আমাকেও দিবে???”
“হ্যাঁ আব্বু….খাবে না তুমি???”
“খাবো তো…..আম্মু যদি বকে??”
“বকবে না সোনা……”
“তাহলে দুটো দিবে….হ্যাঁ??”
“আচ্ছা আব্বু……দিবো…..”
!
“এই নাও….তোমরা খেয়ে দেখো…….”
“ওয়াও…….খেয়ে কি দেখবো ভাবী,গন্ধেই তো পেট ভরে যাচ্ছে আমার….”
“এ্যা…..নতুন বউ পিউমনি একাই তো শেষ কলে দিবে…..”
“না বাবু,তোমাকেও দিবে…..”
“হা কর….খাইয়ে দিই……”
.
“উমমমমম……খুব মজা নতুন বউ…….”
“আহ…..আসলেই সুপার ভাবী…….ওয়াও……”
“হয়েছে হয়েছে…….অরূপ বাবু তুমি নামায পড়তে যাবে না??”
“যাবো যাবো….আমি তো ফ্লাই ডে নামাযে যাই…..আজও যাবো….”
“গুড বয়….তুমি জানো ফ্রাইডে তে কিসের নামায পড়া হয়??”
“জানি তো….জু’মা এর নামায…..”
“এই তো হয়েছে….তাহলে তাড়াতাড়ি উপরে যাও…..তোমার আম্মু গোসল করানোর জন্য অনেক আগে ডেকে গেছে,এখন না গেলে বকুনি দিবে……”
“উমমমমম……….”
“কি ভাবছিস রে অরূপ…..”(প্রাপ্তি)
“ভাবছি…..নতুন বউয়েল কাছে গোসল কলনো….নতুন বউ আমাকে গোসল দিয়ে দিবে??”
“তাই??তুমি আমার কাছে গোসল করবে..??”
“হ্যাঁ,হ্যাঁ…..কলবো কলবো…..”
“ওলে বাবু,তাহলে চলো গোসল করিয়ে দিই তোমাকে…..”
“ইয়াহু ইয়াহু……….ইয়াহু……”
“দুষ্টু বাবু একটা……”বলে নৌশিন অরূপ করে কোলে তুলে নিলো।
পেছন ফিরে প্রাপ্তিকে বললো,
“বোনো একটু ভাবীকে এদিক টা দেখতে বলো,আর খালাকে বলো সব গুছিয়ে রাখতে…..”
“ওকে ওকে সব বলবো তুমি যাও……..”
……………
নৌশিন রোমে গিয়ে দেখে সাদাদ এখনও ঘুমাচ্ছে।
অরূপকে রোমে নিয়ে কোল থেকে নামাতেই সে বারান্দায় গিয়ে দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে…..”অরূপ আস্তে সোনা,ব্যাথা পাবে তো….”
অরূপ শোনলে তো,একবার গ্রিলে ধরে উপরে উঠেছে তো আরেকবার লাফ দিয়ে সোফার উপর পড়ছে….
বাচ্চা মানুষ যা করে আর কি☺☺☺
নৌশিন অরূপকে রেখে সাদাদকে ডাকতে এলো!সে ও তো নামাযে যাবে……..
“সাদাদ,শোনছো??নামাযে যাবে না???সাদাদ…..”
গায়ে হাত দিয়ে ডাকায় সাদাদ নড়েচড়ে উঠলো কিন্তু চোখ মেলে তাঁকালো না……….
“সাদাদ….কি হলো…উঠো…..সাওয়ার কখন নিবে আর নামাযেই বা কখন যাবে???উঠো না….”
“উমমম….পরে….”(ঘুমের মধ্যেই…..)
“ওফফফ……উঠো বলছি…কিসের পরে……উঠো না…..”
সাদাদ নৌশিনের হাত টা নিজের বুকে চেঁপে ধরে টান দিয়ে নৌশিনকে ওর বুকে ফেলে দিলো……..
“আআ….কি হচ্ছে কি???”
“কেন???কি আবার হবে??”
“জেগে ছিলে তুমি তাই না??”
“উমহু….ঘুমিয়েছিলাম বাট আমার প্রাণ পাখির ডাকে ঘুম টা ভেঙে গেলো…..”
“তাহলে উঠছিলে না কেন??”
“জানটা ডাকছিলো তো তাই ভালো লাগছিলো….”
“ঢং….উঠো তো…..”
“উমমমমম……”
“সাদাদ কি করছো ছাড়ো…..অরূপ বারান্দায়…..”
“থাকুক…..একটু রোমান্স তো করবোই আমি……..” সাদাদ নৌশিনের কোনো কথা না শোনে….দু হাতে নৌশিনের কমড় জড়িয়ে ধরে নৌশিনের ঠোঁটের দিকে ঠোঁট এগিয়ে নিচ্ছে….
নৌশিন ছাড়ানোর চেষ্ঠা করেও ছাড়াতে পারছে না……..
“সাদাদ অরূপ আসবে….ছাড়ো না প্লিজ….”
নৌশিনেরর কন্ঠটা কেমন জানি ভারী হয়ে এসেছে!বোধহয় সাদাদের মতো ওর ও নেশায় পেয়েছে!!সাদাদ নৌশিনের ভারী কন্ঠে আরও মাতাল হয়ে গেছে,
দু জোড়া ঠোটের দূরত্ব প্রায় ঘুচে এসেছে…..এমন সময়,
বারান্দা থেকে অরূপ চিল্লিয়ে বলে উঠলো,
“নতুন বউ……গোসল করবো না???”
“নতুন বউ……..ও নতুন বউ..!।।।।।।নতুন বউ…..আমি নামবো……আসো……পলে যাবো কিন্তু অনেক উপলে উঠে গেছি….লাফ দিলে ব্যাথা পাবো…..নতুন বউ…..ও নতুন বউ……….”
চেঁচিয়েই যাচ্ছে…..থামার নাম নেই☺☺☺☺
এতো জোরে চিল্লাতে পারে এই অরূপ টা!!!ঘোর কেটে যায় সাদাদের…….নৌশিন সাদাদের থেকে নিজেকে এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে হেঁসে দিয়ে বারান্দায় চলে যায়………..সাদাদ বিরক্ত নিয়ে বলে,
“ধুর……আজাইরা……”
নৌশিন অরূপকে গ্রিল থেকে নামিয়ে ওয়াশরোমে ডুকে…….
সাদাদ বেড ছেড়ে,টাওয়াল হাতে নিয়ে ওয়াশরোমে ডুকে পড়লো………
“এই তুই এখানে কেন???”
অরূপ বাথটবে লাফাচ্ছে আর বলছে,
“গোসল কলি দেখো না??”
“বাবু….আস্তে…..দেখি এদিকে আসো…..”
“এই কাছে আয় বুড়ো……”
অরূপ কাছে এসেও…..পানি হাতে নিয়ে খেলছে…….
“এরজন্য এসেছিস??তোর মা এই ফাজলামির জন্য মাইর দেয় তাই আমার বউয়ের কাছে এসেছিস??”
“তোমাল বউ???”
“তো??”
“আমাল নতুন বউ এটা……তোমাল কেউ না…..”
“হুপপপপপ……..”
“হুপপপপপপ……”
“কি সাহস দেখেছো??আমাকে ধমক দেয়……”
“অরূপ!!!!।।।।।”
“সলি….কাকিমনি আল বলবো না……”
“কাকিমনি!!!”
“আম্মু বলছে তুমি আমাল কাকিমনি….চাচ্চুর বউ যে তাই……..কিন্তু আমি তোমাকে কাকিমনি বলবো ই না……”
“আচ্ছা বাবু….তোমার যা ইচ্ছা ডেকো……দেখি এখন তো বডি ওয়াশ করতে হবে তাই না……..নড়বে না একদম……”
….”ওলে মা ওলে মা…….কি ঠান্ডা…..ইইইই……..”
“হুপ বেডা….গরমের দিন বলে ঠান্ডা…..তারাতারি কর…..আমি সাওয়ার নিবো…….”
“আহ্ সাদাদ…..দাঁড়াও না……হয়ে গেছে ওর…..”
“হ্যাঁ তাই তো দেখছি…….”
“দেখি বাবু….এসো এসো…..”
“ওওওওও…কি ঠান্ডা লাগে আমাল……”
“এই তো আর লাগবে না মুছিয়ে দিচ্ছি তো পানি……”
“আমাকে বল কলে টাওয়েল পলিয়ে দাও…..”
“টাওয়েল পড়িয়ে দিবো??”
“হ্যাঁ….এই রোমে তো আমার পেন্ট নেই….তুমি আমাকে বল কলে টাওয়েল পলিয়ে দাও….আমি ছুটে আম্মুল কাছে যাবো আর পান্জাবি পলবো……”
“ওরে বাবা….পান্জাবি পড়ে নামাযে যাবে!”
“হ্যাঁ…..”
“আলে আলে এভাবে টাওয়েল পলায়???”
“তাহলে???”
“আব্বু যেভাবে পলে সেভাবে পলাও….”
“হ্যাঁ??কি ভাবে পড়ে তোমার আব্বু???”
অরূপ নৌশনের হাত থেকে টাওয়েল টা নিয়ে বড়দের মতো কমড়ে পেঁচিয়ে নিলো………
“এভাবে বুজলে???”
“ওরে পাঁজি…..তুমি তো আসলেই বড় হয় গেছো….”
“হুম…তো…..আমি তো আম্মুকে বলছি আমিও আল একটু বল হয়ে গেলে চাচ্চুল মতো বিয়ে কলবো….”
“হি হি হি হি……তাই নাকি??”
“ঐ যাবি তুই……করিস বিয়ে…..আমার মেয়ে হোক তোকে দিয়ে দিবো…..যা এখন…রেডি হয়ে আসবি একদম…….”
অরূপ অবাক হয়ে বলে,
“তোমাল মেয়ে????
সাদাদ নৌশিনকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে,পেটে হাত দিয়ে বললো,
“এই যে তোর নতুন বউ আছে না??”
“হুম….”(বিঙ্ দের মতো মাথা নাড়িয়ে)
“তোর নতুন বউয়ের পেটে….একটা ছোট্ট বাবু হবে….মেয়ে বাবু….সেটা বড় হলে তোর সাথে বিয়ে দিবো……”
নৌশিন সাদাদেরর কথা শোনে অবাক।কি বলছে ও….অবশ্য লজ্জাও লাগছে খুব কথাটা শোনে……মনে মনে ভাবছে,…ইশশশশ কবে সেই দিন আসবে?যখন সত্যি সত্যি ওর পেটে একটা বাচ্চা বেড়ে উঠবে!!কবে কাউকে অরূপের মতো গোসল করিয়ে দিবে!
ভাবতেই একটা অজানা সুখ ভীর করেছে নৌশিনের মনে!!!!!
“ও নতুন বউ…..”
“হ্যাঁ??”
“কখন থেকে ডাকছি??”
“ও….কি বাবু??”
“তোর নতুন বউ বাবু মেয়েটার কথা ভাবছিলো রে……”
নৌশিন সাদাদের পেটে কুনুই মেরে বললো,
“ধ্যাত কি সব বলো!!……ছাড়ো…..”
সাদাদ ছাড়লো না…..নৌশিনের পিঠ নিজের বুকের সাথে আরও মিশিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো………..
“দেখি বাবা আসো…..যাও এখন পান্জাবি পড়ে আসো……”
অরূপ “ওকে”বলেই টাওয়েল পেঁচানো অবস্থায় ওর মায়ের রোমে চলে যায়।
……….
“কি হলো??ছাড়ো….গোসল করে নাও……”
“না……”
“সাদাদ!!!নামাযে যাবে না তুমি??সাড়ে বারোটার বেশি বাজে…..একটা দশে তো জামাত….কখন গোসল করবে আর কখন??আর নামাযেই বা যাবে কখন??”
“সে জন্যই তো বলছি….অরূপকে যেভাবে গোসল করিয়ে দিলে আমাকেও দাও…….আমিও ভালো ছেলের মতো রেডি হয়ে নিবো……”
“সাদাদ তুমি বাচ্চা নাকি যে অরূপের মতো গোসল করাতে হবে তোমায়……”
“বাচ্চা না তবে বাচ্চার বাবা তো হবো একদিন…….”
নৌশিন সাদাদের হাতের উপর হাত রেখে বললো,
“সত্যি??কবে বাবা হতে চাও তুমি??আমি কিন্তু মা হতে চাই খুব তাড়াতাড়ি….”
সাদাদ নৌশিনের ঘাড়ে মুখ গুজে বললো,
“হবে সোনা….খুব তাড়াতাড়িই তোমার সাদাদ বাবা হবে……”
“সত্যি তো???”
সাদাদ নৌশিনের ঘাড়ে গভীর ভাবে একটা চুমু দিয়ে বলবো,
“হ্যাঁ লজ্জাবতী……..”
“এই শোনো না…..”
“হুম??…..”
“আমার না অরূপের মতো একটা ছেলে চাই……আমার ভাবীরও একটা ছেলে হবে……আমিও চাই…..”
“কি বলো??ভাবীরও ছেলে হবে???ভাবী কবে প্রেগনেন্ট হলো??”
“ভাবীর তো আট মাস রানিং…..কাল ডক্টরের কাছে গিয়েছিলো….চেক আপের পর ডক্টর নাকি বলেছে ছেলে হবে….”
“ও তাই তো বিয়ের মাঝখানে ভাবী কেমন ঢিলে ঢিলা সাজ দিয়েছিলো….দেখে তো বুঝায় যায় নি প্রেগনেন্ট ওনি….তবে তোমাদের বাসায় গিয়ে একটু খটকা লেগেছিলো আমার……”
“হ্যাঁ….ভাবীকে দেখে কেন জানি বুঝা যায় না ওনি প্রেগনেন্ট….পেটও তেমনি ফুলে নি……..ভালো করে খেয়াল করলে বুঝা যায় আর কি!!!আমিও মা হবো সাদাদ প্লিজ……”
“বললাম তো হবে……”
“আমি কিন্তু সেমিস্টারের পর আর কোনো কথা শোনবো না…….”
“পাগলী,তুমি জানো ভাবীর বিয়ের তিন বছর পর সাদাদ পেটে এসেছিলো….আর তোমার ভাবীর প্রথম বাচ্চাও তো বিয়ের তিন বছর পর হয়েছিলো……আর এখন কার টা তারও তিন বছর পর…..তার মানে তোমার ভাবী বিয়ের ছয় বছর পর মা ডাক শুনবে……সে বাচ্চা টা যদি সময় মতো ভালো ভাবে হতো তবে তবুও বিয়ের তিন বছর পর মা ডাক শুনতো তিনি…….”
নৌশিন অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
“কি তুমি কি আমাকে ছয় বছর পরে মা ডাক শোনাবে??”
“এখন তোমার বাইশ,আরও ছয় বছর পর তো আটাশ হবে….বর্তমানে প্রায় সব মেয়েই পড়ালেখা শেষ করে পঁচিশ/ছাব্বিশ ইয়ারসে বিয়ে করে আর দু,তিন বছর পর বেবি নেই….তো কি হলো সবার সাতাশ আটাশে বেবি হলো কি না??”
“ইইইই….এটা কিন্তু আমাকে বলো নি তুমি…..তুমি না একটু আগে অরূপকে বললে ওর সাথে আমাদের বিয়ে দিবে….ওর তো সামনের ‘জুন’ এই পাঁচ বছর হবে এখন যদি আমার একটা ইস্যু আসে সেটা তো হতে আরও নয় মাস লাগবে তো??সে তো এমনি অরূপের ছয় বছরের ছোট হয়ে যাবে….আর তুমি কি না বলছো আরও ছয় বছর পর!!তারমানে সে অরূপের বারো-তেরো বছরের ছোট হবে…….”
সাদাদ নৌশিনকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাঁসতে হাঁসতে বলছে,
“তুমি কি এখনি তোমার ছেলে মেয়ের বিয়ে নিয়ে ভাবছো??”
“হ্যাঁ আমি ভাবছি….তুমিই রাজি হচ্ছো না…..দেখেছো অরূপ কি সুন্দর করে কোলে আসে আমার….আমার একটা বেবি হলে সারাদিন অরূপের সাথে খেলবে…আমাকে আম্মু বলে ডাকবে…….”
“ডাকবে তো…..আর আদরও করবে……তখন তো তুমি আমায় ছেড়ে সারা দিন বেবি দেরই সময় দিবে……আমার কি হবে??”
“কি তুমি??হিংসে করছো??”
“তা তো একটু হচ্ছেই…..আমার এতো কিউটি বউটার আদর থেকে বঞ্চিত হতে হবে…..”
“সাদাদ!কখনোই না…..আমি তোমায় সব সময় এরকম ই ভালোবেসে যাবো…..তুমি ভাবো….কেউ আমাদের মাঝে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে থাকবে….কেউ নরম তুলতুলে দুটি হাত দিয়ে তোমার গালে হাতে দিবে…..’আব্বু’ বলে ডাকবে তোমায়…..তুমি যখন কা…….”
“প্লিজ জান আর বলো না,আমার না এগুলো শোনে এখনি বাবা হতে ইচ্ছে করছে……..আরও বললে……”
“আমি রাজি……..প্লিজ…..”
“কিহ্??”
“তুমি আমার দিক টা ভাবছো না কেন??তুমি জানো আমি তোমার কথা বাসায় কত আগে বলেছিলাম…..”
“হুম রিলেশন হওয়ার দু মাস পরেই……সবার আগে তোমার রাগী ভাই টাকে…..তারপর তোমার ভাইয়া আমার সাথে দেখা করে তোমার বাবাকে….এন্ড পরে তোমার মা,ভাবীও জানতে পারে….”
“কেন জানিয়েছিলাম এতো আগে??”
“কেন??”
“কারণ আমি চাইতাম ওরা আমাকে তাড়াতাড়ি তোমার সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়….আর আমি তাড়াতাড়ি মা হতে পারি…..”
“হা হা হা হা হা………..”
“সাদাদ!তুমি হাসছো???…..দেখি ছাড়ো আমায়….তোমার সাথে রাগ করবো আমি??”
“কি??হা হা হা হা…..রাগ করবে???হা হা হা হা……দাঁড়াও আগে এ এ কটু হেঁসে নিই………”
“সাদাদ!!!……”(করুণ স্বরে)
“ওকে ওকে…..আর হাঁসবো না…..”
“হয়েছে ছাড়ো এখন……তোমায় নিয়ে ফেমেলি প্লেনিং করলে সেটা যে কবে সাকছেস হবে একমাত্র আল্লাহ্ ই জানে…….”
“হবে হবে……একটু সময়ের তো ব্যাপার…..”
“ইশশশ…..যখন চা বানাবে ওনি….বললো একটু সময়ের ব্যাপার!!বাচ্চা এটা চা নয়…..”
“আচ্ছা,যাও তোমার কথাই মানলাম….আমি তোমার সেমিস্টারের পর বাবা হওয়ার চিন্তা ভাবনা করবো….যদিও এখনি আমার এটা ভেবে খুশি লাগছে যে,’আমার এই পিচ্চি বউটার কোলে একটা ছোট্ট বাবু ওয়া ওয়া করবে’……”
নৌশিনের ভারী লজ্জা লাগছে!ইশশশ,বাচ্চা!!
“এখন ছাড়ো….গোসল করে নাও….অরূপ এতক্ষণে নিশ্চয় রেডি হয়ে গেছে…….”
“তুমি করিয়ে দাও না…… ”
নৌশিন সাদাদের দিকে ঘুরে সাদাদের চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললো,
“আহা রে……তার জন্য একটু র্ধৈয্য ধরতে হবে…..তোমাকে যখন বাবা ডাকার মানুষ আসবে তখন তাকে আর তোমাকে একসাথে গোসল করিয়ে দিবো…..”
কথাটা বলেই নৌশিন মিষ্টি একটা হাঁসি দিয়ে ওয়াশরোমে থেকে ছুটে এলো।
সাদাদ ওয়াশরোম থেকেই নৌশিনকে শোনানোর জন্য বলছে,
“আমি ওয়েটিং এ রেখেছি বলে,আমাকেও ওয়েটিং রাখলে তো!!খবর আছে তোমার……..”
নৌশিনও আলমারি থেকে সাদাদের পান্জাবি বের করতে করতে একরকম চেঁচিয়েই জবাব দিলো,
“সেটা দেখা যাবে….যখন আমার খবর আসবে আমি নিজে তোমায় মিষ্টি বানিয়ে খাওয়াবো……”
সাদাদ সাওয়ার ঝেড়ে দিয়েছে এতক্ষণে,তবে নৌশিনের কথাটা ওর কানে ঠিক পৌঁছেছে……………….
!

চলবে…..
পুরো গল্পের লিংক
https://www.facebook.com/groups/2837664109643809/permalink/2935151703228382/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here