#জিদ_অনুভূতির_অন্য_এক_স্তর
#পর্ব_৭
#লেখিকা: #Kaynat_Ash
কিন্তু সেইবার এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর ছুটি কাটাতে যখন আইজা আমানের শহরে গিয়েছিল, হঠাৎ-ই যেন তার হৃদয়ের আঁকা কোনো ষড়যন্ত্রের ছক অনুযায়ী, তার হৃদয় তাকে অজানা সেসব প্রশ্নের জবাব খুব সহজেই দিয়ে দেয়। যা তার মনে নতুন ঝড়ের সূচনা করে।
আমানের প্রতি যে অনুভূতিকে সে কেবলই বন্ধুত্ব ভেবেছিল, তা কেবলই বন্ধুত্ব নয়।
আমান যে তার ভালোবাসা। তবে সে কখনো বুঝে নি কেন, নিজের অনুভূতি সম্পর্কে এতটা অজ্ঞ ছিল সে কীভাবে? হয়ত সে নিজেই জানতে চায়নি কখনো।
তবে আজ কেন এমনটা হলো! কি হতো যদি এই অনুভূতির নামকরণ সে কখনো করতে না পারত।
এসবে তার পুরো পৃথিবীটাই যেন উলোট পালোট হয়ে যায়। সে তো কখনো কাউকে ভালোবাসতে চায় নি, এরপরও তার মনকে এমন একজনকেই কেন ভালোবাসতে হলো যে তার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কটিও রাখতে পারে নি ঠিকমত। অবাধ্য এই মনের যা করার ছিল তা-ই করেছে।
.
.
.
কিন্তু রাতকে রাত নির্ঘুম কাটিয়ে হাজারও চিন্তা ভাবনা করে অবশেষে আইজা স্থির করল, এসব ঝামেলা থেকে সে দূরে থাকবে। অনুভূতির নাম না জেনেও যে অনুভূতিকে সে হৃদয়ে মাটি চাপা দিতে পারে, একই অনুভূতির নাম জেনেও এমনটি সে করতেই পারবে।
এরপর থেকে সে নিজেও আমানকে একেবারে এড়িয়ে চলা শুরু করে। এতটা উপেক্ষা করে যা আগে কখনো করার ব্যাপারে সে হয়ত ভাবতেও পারে নি। এসব কিছু করার পেছনে তার বড় একটি উদ্দেশ্য, যাতে সে তাকে পুরোপুরি ভুলে যেতে পারে।
তবে আমানের কাছাকাছি থেকে কি তা সম্ভব? তখন সে স্থির করে নিজের মায়ের সাথে এই বিষয়ে কিছু কথা বলতে হবে তার।
.
.
.
এদিকে, মানুষের প্রকৃতি সেটা সত্যিই খুব জটিল। এতদিন আইজার বিরামহীন চেষ্টা আমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে নি কিন্তু তার করা অবহেলা আর উপেক্ষা ঠিকই সেই কাজটি খুব সুনিপুণভাবে সম্পন্ন করল।
আইজার বদলে যাওয়া ব্যবহারে আমান বেশ অনেকটা আগ্রহী হয়ে উঠে কেবল এটি জানার জন্য যে হঠাৎ আইজার আসলে হয়েছে-টা কি!
এই শহরে সে যতবার এসেছে আমানের বাসায় এসেই পড়ে থাকত কেবল। অথচ এইবার এসে, গত দু’দিন যাবত টানা সেখানে যায় নি।
.
.
.
একসময় আইজা তার মায়ের কাছে গিয়ে বলল ” মা, আমার মনে হয়, আমাদের নিজেদের বাসায় ফিরে যাওয়া উচিত। আমি নিজেও আর এখানে থাকতে চাই না।”
লায়লা অবাক হয়ে বললেন ” কি ব্যাপার, এমনিতে তো সবসময় এখানে আসার জন্য পাগল থাকতে, আর এখন জিজ্ঞেস করছ যে কবে ফিরে যাব? তোমার শরীর স্বাস্থ্য ভালো তো!”
লায়লার উপহাস উপেক্ষা করে আইজা বলল “মা, আমি সিরিয়াস, তুমিও সিরিয়াস হয়ে কথা বলো প্লিজ।”
এবার লায়লা বললেন “কেন, কি হয়েছে?! কেউ কিছু বলেছে নাকি তোমাকে? কি হয়েছে তোমার?!”
আইজা বিরক্ত হয়ে বলল ” কিছুই হয়নি আমার।
এছাড়া দুই দিন পর আমার রেজাল্ট দিবে। এখনও কোচিং শুরু করিনি, অথচ অন্য সবাই পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর পরই কোচিং এ ভর্তি হয়ে গিয়েছিল।
রেজাল্ট দেয়ার দু এক মাসের মধ্যেই সব জায়গায় এ্যাডমিশেন টেস্ট শুরু হয়ে যাবে। আর আমার বেস্ট কোন জায়গায় চান্স পেতে হবে। নাহলে আমার জীবন, ক্যারিয়ার শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে।”
লায়লা নিশ্চিত কন্ঠে বললেন “তুমি যথেষ্ট ভালো ছাত্রী, আইজা। সবসময় ফার্স্ট সেকেন্ড হয়ে থাকো, এরপরও এত চিন্তা করছ! চুপ করে এসে বসো আমার সাথে।
এছাড়া আমি আমানকে এখানে আসতে অনুরোধ করেছিলাম। তুমি আর তোমার বাবা শখ করে যে রিস্টওয়াচ তার জন্য কিনে নিয়ে এসেছিলে সাথে করে, তা এখনো আমার কাছেই পড়ে আছে।
সে যখন আসবে তাকে তার উপহারও দিয়ে দিব, আর সাথে এটাও বলব যে, আমার মেয়েটার বোধহয় কোন কারণে মনটা ভীষণ খারাপ। সুতরাং আমার পুতুল মেয়েটাকে যাতে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যায়!”
আইজা অধৈর্য গলায় কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলল “মা, তুমি কোন্ কথা থেকে কোথায় চলে যাচ্ছ। আমি তোমার সাথে এত সিরিয়াস টপিকে কথা বলছিলাম আর তুমি কিনা বেড়ানোর কথা শুরু করে দিয়েছ।
দেখো, মা। আমরা যদিও হায়ার মিডেল ক্লাস ফেমেলি, কিন্তু আমান আর তিথি, তাদের সবার বাবা; তারা সবাই অনেক বেশি ধনী।
তাদের এই এখতিয়ার আছে, নিজেদের জীবন যেভাবে খুশি সেভাবে অতিবাহিত করার। তাদের পায়ের নিচে পুরো পৃথিবী।
কিন্তু আমাদের মত মেয়েদের পরিশ্রম করে নিজের ভাগ্য নিজে গড়তে হয়। নিজের জীবন নিজেদের গোছাতে হয়।
পরিবারের দায় দায়িত্ব! দায়িত্ববোধের বিষয়টিও মাথায় রেখে চলতে হয়।
এত শৌখিনতা আর বিলাসীতা আমরা এ্যাফোর্ড করতে পারিনা। তো যেহেতু তাদের আর আমার মধ্যে এত অমিল, তাদের কাছাকাছি থাকার-ই বা কি প্রয়োজন।
পথই যদি ভিন্ন হয়, তাহলে একসাথে পথ চলা অসম্ভব।”
এরপর একটু থেমে দৃঢ় কন্ঠে বলল “এছাড়া এখন নিজের জীবনের উপর কেবল ফোকাস করতে চাই আমি। অপ্রয়োজনীয় সবকিছু নিজের জীবন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চাই। সস্তা কোন আবেগে জড়িয়ে জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করতে চাই না। এছাড়া আমার এসব আবেগ অনুভূতির মূল্য আমার কাছেই নেই, অন্য কারো কি থাকবে?”
কান্নারুদ্ধ কন্ঠে আইজার এসব কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে, অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে লায়লা বললেন “হঠাৎ এমন করে বলছ কেন, কি হয়েছে তোমার? দেখো, তুমি আমার সাথে তোমার মনের সব কথা শেয়ার করতে পারো।”
আইজা বলল “এখনই কিছু শেয়ার করতে চাই না। আগে বাড়ি ফিরে যাই, এরপর নাহয়।”
এরপর একটু থেমে বলল “অবশ্য ফিরে গিয়ে যদি তোমার সময় থাকে আমার কোনো কথা শুনার।”
এই বলে আইজা বাইরে বের হওয়ার জন্য দরজার কাছে পা বাড়াতেই দেখে আমান দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
চলবে…
{ গতকাল গল্প দেই নি কারণ প্রথম রোজা রেখে অনেক বেশি টায়ার্ড ছিলাম,তাই লিখতে পারি নি। এছাড়া এই পর্বও হয়ত খুব বেশি বড় হয়নি, সেজন্য দুঃখিত। }