#জিদ_অনুভূতির_অন্য_এক_স্তর
#পর্ব_৮
#লেখিকা: #Kaynat_Ash
এই বলে আইজা বাইরে বের হওয়ার জন্য দরজার কাছে পা বাড়াতেই দেখে আমান দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
আইজা কিছু না বলে তাকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল।
.
.
.
তাদের বাসা থেকে কিছুটা দূরে একটা দীঘি আছে, আইজা সেই দীঘির পাড়ে গিয়ে বসে রইল, দীঘির শান্ত পানি দেখে বিক্ষিপ্ত মনটাকে যদি শান্ত করা যায়! যে পানি এতটা শান্ত, সময় এলে সেটাও সুনামিতে রুপান্তরিত হয়! ভাবতেই অবাক লাগে আইজার। তার শান্ত মনটাও এত অস্থিতিশীল আজ, যা কয়েকদিন আগ পর্যন্তও কত শান্ত ছিল! এই ভালোবাসা শব্দটাই তার জীবনটা কেমন ধ্বংস করে দিচ্ছে।
এমন অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে সে টেরই পায়নি তার পাশে এসে কখন কে বসেছে। হঠাৎ পাশে চোখ পড়তেই সে কিছুটা চমকে উঠল।
তার পাশে আমান বসে আছে। তার দৃষ্টি সামনের দিকে, ঠোঁটে মুচকি হাসি লেগে আছে।
আমানের এমন হাসি মুখ দেখে আইজার মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছে। সে এত কষ্টের মধ্যে আছে, আর আমানের মনে কত সুখ।
সে নিজেও কিছুই না বলে সামনের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে রইল। অল্পক্ষণ দুজনই নিশ্চুপ বসে রইল এভাবে।
তখন আইজার মনে হল, যদিও তার এত তাড়াতাড়ি ফিরে যাওয়ার কোন উদ্দেশ্য ছিল না, তবে আমানের সাথে এভাবে বসে থাকার কি মানে! এরচে বরং তার উঠা উচিত।
যে ভাবা সেই কাজ। আইজা নিজে উঠে দাঁড়িয়ে, নিজের ব্যাগও মাটির উপর থেকে তুলে নিল।
তখন আমান বলল “কোথায় যাচ্ছ?!”
আইজা বলল “এখানে থাকতে আসি নি আমি। যে ফিরে যাচ্ছি দেখে এত বিস্ময় হচ্ছে তোমার।”
আমান বলল “বসো। জরুরি কথা ছিল তোমার সাথে।”
আমানের কন্ঠে এমন কিছু ছিল যা অমান্য করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। যেখানে আমানের বাবা মা পর্যন্ত তার রাগকে ভয় পায়, সেই তুলনায় আইজা তো কিছুই না।
আইজা বসে রইল বেশ কিছুক্ষণ হলো, অথচ এখনো আমান টু শব্দটি করে নি।
অবশেষে থাকতে না পেরে আইজা বলল “তুমি হয়ত বলেছিলে যে আমার সাথে তোমার কোন কথা ছিল। কিছু বলবেও, নাকি আমাকে এভাবেই বসিয়ে রাখবে। এমনিতেই।”
ঠোঁটে মুচকি হাসি টেনেই আমান বলল “তবে তোমার কাছে ভালোবাসার অনুভূতিকে সস্তা আবেগ মনে হয়?!”
হঠাৎ এমন প্রশ্নে বেশ অনেকটাই চমকে গেল আইজা। কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না। তবু কোন মতে বলল “কোন্ ভালবাসা, কিসের ভালোবাসার কথা বলছ! তুমি আসলে কি বলতে চাইছ, কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।”
আমান মাথা হালকা দুলিয়ে এরপর বলল “এতদিন না বুঝেই কিছু বুঝো নি, আর আজ সব বুঝেও না বোঝার ভান করছ!”
আইজা খুবই অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে গেল। সে ঠিক কি বলবে, এটাও বুঝতে পারছিল না।
সে দাঁড়িয়ে পড়ল। এরপর বলল “আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে, আমান। মা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
আমানও উঠে দাঁড়াল, এরপর হুঙ্কার দিয়ে বলল “যতক্ষণ না আমাদের কথা শেষ হচ্ছে তুমি কোথাও যাবে না।”
আইজা খুবই ভয় পেল ঠিকই কিন্তু তার প্রচুর অভিমানও হচ্ছে। নিজের কান্না কোনরকম নিয়ন্ত্রণ করে সে বলল “তুমি ঠিক কি বলতে চাইছ, এটাই যে আমি তোমাকে ভালোবাসি? তুমি তো আমার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কটিও ঠিকভাবে রক্ষা করতে পারো নি। আর ভাবছ যে তোমার মত একজনকে আমি ভালোবেসে ফেলব? কি আছে তোমার মধ্যে যে তোমাকে আমি ভালোবাসব?”
আমান উপহাসের হাসি ঠোঁটে ছড়িয়ে বলল “তুমি ভালোভাবেই জানো, যে কেন প্রতিটি মেয়ে আমার প্রেমে পড়ে যায়! আর কেনই বা আমার সামনে পেছনে ঘুরে বেড়ায় সবসময়।
এদের মধ্যে থেকে দু একজনের জন্য তো তুমি ঠিকমত কথা বলারও সুযোগ পেতে না আমার সাথে!
তবে কথা হচ্ছে, তাদের সবাইকে আমি জিজ্ঞেস করতে যাই না যে তাদের মনে আমার প্রতি কি অনুভূতি রয়েছে, যেমনটি তোমার থেকে জানতে এসেছি।”
আইজা অল্পক্ষণ আমানের দিকে তাকিয়ে রইল। এরপর বলল “আমান! কি সমস্যা তোমার? আমার অনুভূতি নিয়ে ঠাট্টা করতেই তোমার এখানে আসা, স্পষ্ট অক্ষরে বলে দিলেই পারো।
তবে আমারও একটা কথা স্পষ্টভাবে শুনে নাও, হয়ত ভালোবাসি তোমাকে, তবে আমার নিজেরও কোন আগ্রহ নেই এই ভালোবাসার প্রতি। এই ভালোবাসা শুরু না হতেই এর ইতি আমি টেনে দিয়েছি।”
আমান বলল “যে ভালোবাসার ইতি এই পর্যন্ত আমি টানতে পারি নি, সেই ভালোবাসার ইতি তোমাকে টানতে দিব, এটা কি করে ভাবলে তুমি?!”
আইজা যেন স্তম্ভিত হয়ে গেল এই কথা শুনে। শুনেও যেন বিশ্বাস করতে পারল না সে, কোনমতে বলল “তুমি কি কাউকে ভালোবাসতে? কাকে ভালোবাসো তুমি?”
আমান বলল “এমন একজনকে যে আমার ভালোবাসাকে কেবল বন্ধুত্ব ভেবেছে। আর সেই ভালোবাসাকে কখনো ভালবাসা হিসেবে চিনতেও পারে নি। অথচ তার এই ভালোবাসা চিনতে আমার দুই মুহূর্তও লাগে নি। দেখো আমার ভালোবাসা কি, আর তোমারটা কি?!”
আইজা আমানের কথা শুনে হতবাক হয়ে গেল। সে বলল “যদি এমনই ছিল, তবে আমার সাথে এত খারাপ আচরণ করতে কেন, আমার বন্ধুত্বকে কেন প্রত্যাখ্যান করেছিলে?”
আমান বলল “এখনো সেই বন্ধুত্ব আমি প্রত্যাখ্যান করি। যাকে আমি ভালোবাসি, সে আমাকে কেবলই বন্ধু ভাববে, আর তার অনুভূতি যাতে হার্ট না হয় সেজন্য আমিও তার বন্ধু হওয়ার অভিনয় করে যাব, এতটা উদারও না আমান শেখ।
তুমি আমার অনুভূতি বুঝো নি। আমিও তোমাকে ছেড়ে দিয়েছিলাম।
এভাবেও ব্যাপারটা এমনও নয় যে তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারতাম না।”
আইজা কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। সে বলল “তুমি কখনো জানাও নি কেন যে আমাকে ভালোবাসতে?”
এরপর একটু থেমে বলল “যাই হোক, আমাকে ছাড়াও যেহেতু বাঁচতে পারবে, তবে তো ভালোই। আমিও তোমাকে ছাড়া মারা যাব না নিশ্চয়ই। এভাবেও আমাদের দুজনের পথও ভিন্ন, আর লাইফস্টাইলও। সুতরাং একে অপরকে ভুলে যাওয়া-ই আমাদের উচিত হবে।”
এই বলে আইজা চলে যেতে নিলে আমান তার কব্জি বরাবর এত শক্ত করে ধরে যে তার মনে হয়েছিল, তার হাঁড় নির্ঘাত ভেঙে গিয়েছে, নাহলে এতটা ব্যথা নিশ্চয়ই পেত না সে।
চলবে…
{ আমার গল্পের একটা জিনিস আমার বেশ মজা লাগে।যেমন গল্পের চরিত্রকে গালি দেয়া হয় ঠিকই, কিন্তু প্রথমদিকে একজনকে,আর শেষের দিকে ঠিক বিপরীত জনকে।
এছাড়া তাদের অতীতের কাহিনী শুরু হওয়ার ঠিক আগের একটি লাইন এমন ছিল, যে
“এই কাহিনী তো কেবল তার ছিল, শুধুই তার। এর সাথে এতজন, এতকিছু কেন যুক্ত হলো!” এখানে সে বলতে আইজাই ছিল তা বুঝলেও হয়তো ধরতে পারেন নি। জ্বী, আইজা হিরোইন হোক বা ভিলেন এই গল্পে পুরোটা কাহিনী তার।এর সাথে আমান, তিথি যুক্ত হয়েছে কেবল। আর তিথি গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র হলেও গল্পের সেকেন্ড হাফে গিয়ে সবাই তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানবেন। তবে আমি এইটুকু আপনাদের বলতে পারি, এই গল্পটা আপনাদের জন্য গল্প পড়ার জগতে নতুন এক experience যোগ করতে যাচ্ছে। গল্পে টুইস্ট এন্ড টার্ন দিতে আমি পছন্দ করি। সুতরাং যারা এই বিষয়টি মানিয়ে নিতে পারবেন, বাকি গল্পটা কেবল তাদেরকেই পড়ার জন্য অনুরোধ করা হল,অন্যরা চাইলে স্কিপ করতে পারেন।। ধন্যবাদ।। }