#জিদ_অনুভূতির_অন্য_এক_স্তর
#পর্ব_২০
#লেখিকা : #Kaynat_Ash
আইজা এসে তার পাশে দাঁড়াতেই সে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো “খুব ভালো লাগছিল আনিসের পাশে বসে জার্নি করতে, নয়?”
আইজা বলল “হ্যাঁ, ঠিক ততটাই, যতটা তোমার তিথির পাশে বসে লাগছিল।”
এবার সে আইজার দিকে ফিরে রেগে তার এত হাতের কব্জি খুব শক্ত করে ধরে বলল “তিথিকে মাঝখান দিয়ে টানতে হবে না। এছাড়া আমি তার সাথে কথা তো বলছিলাম-ই, তোমাকে কে বলেছিল, মাঝখান দিয়ে কথা বলতে? তুমি মাঝখানে না পড়লে তাকে আমি সামনের সিট থেকে বের করে পেছনের সিটে যেতে বাধ্য করতাম। কিন্তু তোমার হয়ত এটা ভালো লাগত না তখন।”
আইজা নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতেই বলল “আমান! তোমার কারণে কবে যেন আমার হাতের হাঁড় ভাঙবে নির্ঘাত, আর আমার হাতটাও অকেজো হবে। এরপর বিকলাঙ্গ মেয়ের সাথে বিয়ে তো নিশ্চয়ই করবে না। মনে হয়, তোমার ভাগ্যে তিথিই লেখা আছে।”
আমান আইজার হাত ছেড়ে দেয়। আর আইজা নিজের হাত দেখতে লাগল। এরপর রাগি চোখে আমানের দিকে তাকিয়ে বলল “তোমাকে ভালোবাসি দেখে তোমার এসব আচরণও সহ্য করি। তোমার উচিত নিজেকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করা। হয়ত তোমার জন্য সহজ হবে না, অন্তত চেষ্টা তো করতেই পারো। এতে ভালো তোমারই হবে।
এছাড়া আংকেল ঠিকই বলেছিলেন, তোমার এই রাগের কারনে তোমার কবে যেন অপূরণীয় কোন ক্ষতি হয়ে যায়! এখনই নিজের এই রাগের উপর নিয়ন্ত্রণ করতে শেখো।”
আমান রেগে বলল “আমি যেরকম, সবসময় তেমনই থাকব। আমাকে পরিবর্তনের চেষ্টা করার ব্যাপারে চিন্তাও করতে যেও না কখনো। এখানে কোনো মুভি চলছে না যে হিরোইনের কথায় হিরো পরিবর্তন হয়ে যাবে। প্রয়োজনে আমাদের সম্পর্ক শেষ হবে, এরপরও অন্য কিছু নয়।
আর তুমি! যাও এখন এখান থেকে। এই মুহূর্তে আর একটা কথা বলতে চাই না তোমার সাথে।”
আইজা বলল ” সম্পর্ক শেষ করার বিষয়টিও এত সহজেই বলে ফেলতে পারলে! ঠিক আছে, যেদিন সত্যিই এই সম্পর্ক শেষ করতে চাইবে, জানিয়ে দিও। বাঁধা দিবো না আমি।
এছাড়া সারারাত ফোন আর মেসেজ করে তুমিই আমাকে বলেছিলে যেন তোমার সাথে এই টাইমে এখানে এসে দেখা করি। আমিও নিজের ঘুম ছেড়ে এসেছি, আর এখন নিজের রাগ ঝাড়া যখন শেষ, চলে যেতে বলছ!”
আমান বলল “রাগ ঝাড়তে যদি শুরু করি, সুস্থ সবল এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে না। এতক্ষণে অন্য জগতের বাসিন্দা হয়ে যেতে।”
আইজা আর কথা না বাড়িয়ে নিচে চলে গেল। আমান দূরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল রেলিং এ হাত রেখে।
.
.
.
পরে অবশ্য আমান আর আইজার মাঝে সব ঠিক হয়ে যায়। তাদের মাঝে সব ঠিকঠাক চলছিল।
ইতিমধ্যে লায়লা আর ফারুকও চলে আসেন এই শহরে দুই তিনদিনের মধ্যে, এবং আমানের বাসায় এসে উপস্থিত হন।
রেহানা, রায়হানের সাথে দেখাও করে যাবে, আবার আইজাকেও সাথে নিয়ে যাবে। তারা সবাই একত্রে বসে কথা বলছিলেন।
এমন সময় আমান সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় লায়লা আমানকে দেখতে পেয়ে বললেন “আরে আমান, কেমন আছো তুমি? অনেকদিন পর দেখা হলো তোমার সাথে।”
আমান বলল ” ভালো। এছাড়া আপনারা কবে এসেছেন?”
লায়লা বললেন “আজই। ভাবলাম, তোমার বাবা মায়ের সাথেও দেখা করে যাই। আর আইজাকেও সাথে নিয়ে যাই। এমনিতে আমরা কিছুদিন আছি এই শহরে। শুনলাম, পরীর বিয়ে ঠিক হয়েছে। বিয়ে এ্যাটেন্ড করেই ফেরার পরিকল্পনা।”
এরপর একটু হেসে বললেন “রেহানা ভাবী, ছেলের জন্যও মেয়ে দেখা শুরু করুন। গ্রেজুয়েশেন তো শেষ করল। এমন তো নয় যে তার চাকরি খোঁজার ব্যাপার স্যাপার আছে। রায়হান ভাইয়ের এত বড় কোম্পানি, ইন্ডাস্ট্রিজ, সব তো সে-ই তো দেখাশোনা করবে, সবই তো তার।
সুতরাং দেরি না করে এবার পুত্র বধুও নিয়ে আসুন।”
আমান আইজার দিকে তাকালো। আইজা কাচুমাচু করে বসে তার মায়ের বোকামো কথাবার্তা শুনতে লাগলো। বড়দের মাঝে সে আর কি-ই বা বলবে!
রেহানা মুখে হাসি ছড়িয়ে বললেন “আমারও খুব শখ দ্রুত, এমন কোন মেয়েকে আমার পুত্র বধু করে এই বাড়িতে নিয়ে আসার, যে সবদিক দিয়ে বেস্ট। লাখে একজন হবে আমার পুত্র বধু, আর হবেই বা না কেন, আমার ছেলে তো কোটিতে একজন। যাই হোক, এখন এমন একটি মেয়েকে পুত্র বধু করে নিয়ে আসতে পারলে আমি একেবারে নিশ্চিন্ত হয়ে যেতাম।
যে আমার ছেলেকে একেবারে সামলে নেবে। তখন ছেলের দায়িত্ব তার হাতে দিয়ে আমি অবসর গ্রহণ করতে পারতাম!”
এই কথা শুনে আমান বলল “আমার কোন ইচ্ছা নেই এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করার। সুতরাং এসব ফালতু কথা বলে আমার আর নিজের সময় নষ্ট করার কোন অর্থ নেই।
এছাড়া মেয়ে আমার পছন্দ করা আছে। যখন বিয়ে করতে হবে আমি নিজে এসে বলব। এবং বিয়ে তখনই করব যখন আমার ইচ্ছা হবে।”
রেহানা হেসে বললেন “গত কয়েক বছর ধরেই এই কথা শুনছি, মেয়ে পছন্দ করা আছে, তবে এই পর্যন্ত নাম জানতে পারলাম না।
যাই হোক, লায়লা ভাবী, আপনি নিজের কানে শুনলেন তো আমার ছেলের জবাব। এই বিষয়ে আর কিছু না-ই বা বললাম।
এছাড়া ভাবী, আইজারও কিন্তু গ্রেজুয়েশেন কমপ্লিট। তার ব্যাপারে কি ভাবলেন, বিয়ে দিবেন নাকি এখন? নাকি আরো অপেক্ষা করবেন?”
লায়লা বললেন “আমি আর ফারুক এই নিয়ে কয়েক দফা কথা বলেছি এই বিষয়ে।
আমার মেয়েটার জন্যও ছেলে দেখছি। আমার এক কলিগ মেহের সে-ও তার ছেলের জন্য মেয়ে খুঁজছে। সেদিন মাকে পিক করতে অফিসেও এসেছিল। সত্যি বলতে, তাকে দেখে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। যেমনটা শুনেছিলাম তেমনটাই সে; নম্র ভদ্র, মার্জিত, শিক্ষিত। ভালো চাকরিও করছে।
মেহেরের সাথে এই বিষয়ে কথাও বলেছিলাম আমি। এখন যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে; ছেলে আর মেয়ে একে অপরকে পছন্দ করে, যদি কথা এগোয়। তবে আমার মেয়ের এ্যানগেইজমেন্টের খবরও খুব দ্রুতই পাবেন আপনারা সবাই।”
আইজা তার মায়ের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ল, তার অজান্তেই তার মা তার বিয়ের কথাবার্তা চালাচ্ছে, প্রথমত তাকে জানানোর প্রয়োজন বোধও করে নি। আর দ্বিতীয়ত তাকে জানানোর আগে অন্য সবার কাছে তা সুন্দর করে ফলাও করে বলছে। বিশেষ করে, আমানের সামনে। আমান তো তাকে খুন করে ফেলবে একেবারে। ভয়ে সে আমানের দিকে তাকাতেও পারছে না।
চলবে…