আমার_একলা_আকাশ_তোমায়_জুড়ে #১০ম_পর্ব

0
339

#আমার_একলা_আকাশ_তোমায়_জুড়ে
#১০ম_পর্ব

অন্না অবাক নয়নে দেখতে লাগলো অর্জুনকে। অর্জুনদার চোখে মুখে চিন্তার গাঢ় ছাপ, এই চিন্তাটুকু কেবল ই অন্নার জন্য। অবাকের মাত্রা তখন আরোও গাঢ় হলো যখন সকলকে অবাক করে অন্নাকে কোলে তুলে নিলো অর্জুন। অন্না বিমূঢ় দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো শ্যাম মুখশ্রীর দিকে। মস্তিষ্ক কাজ করছে না, সম্পূর্ণরুপে যেনো নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। হৃদস্পন্দনের গতি বাড়লো নিমিষেই। ভেতরে এক অদ্ভুত শিহরণ হচ্ছে। অনুভূতিখানা লজ্জার রুপ নিলো যখন কয়েকজোড়া চোখ তাদের দিকে হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। সকলের মুখে বিস্ময়ের ছাপ। শুধু রবিন ভাই এবং কৃষ্ণা ঠোঁট চেপে হাসছে। বাকিদের মুখে হাসি নেই, শুধু বিস্ময় এবং কৌতুহল। পরিস্থিতি ধাতস্থ হতেই অন্নার গালে র’ক্ত জমলো, সারা দেহে লজ্জা ভর করলো। কিন্তু এতে অর্জুনের খুব একটা ভ্রুক্ষেপ হলো না। সকলের চাতক দৃষ্টি উপেক্ষা করে সে অন্নাকে বসালো একটি কাঠের বেঞ্চে। বা পাটা হাতে নিয়ে বললো,
“ব্যাথা করছে এখনো?”

অন্না কথা বলতে পারছে না। কথাগুলো যেনো গলার কাছে এসে দলা পাকিয়েছে। সকলের দৃষ্টিকে না দেখার ভান করে কোনোমতে বললো,
“একটু”
“আ’বু’দ্দা তুই? কোথায় মন ছিলো? আর শাড়ি পড়ে ধেই ধেই করার কি ছিলো? জামা পালটে আসতে পারলি না? এখন হলো তো? এখন আর নাচাই লাগবে না”

অর্জুন বিনাক্লান্তিতে বকাঝকা করেই যাচ্ছে অন্নাকে। অথচ তার হাত অন্নার পায়ে। ধীরে ধীরে আলতো হাতে ব্যাথা প্রশমনের জন্য টিপে দিচ্ছে। আবার মাঝে মাঝে শুধাচ্ছে,
“এখানে ব্যাথা করছে? কমেছে একটুও? ডাক্তারের কাছে যাবি? তোর গ’বে’ট দাদাটা কোন মুল্লুকে গেছে?”

অর্জুনের অস্থিরতা সবাই নির্বাক দর্শক হয়ে দেখছে। কিছু বলার সাহস হচ্ছে না। অন্নার মুখখানা রক্তিম হয়ে যাচ্ছে। সে মাথানত করেই বসে রয়েছে। লজ্জায় মুখ ও তুলতে পারছে না। এদিকে যুবসমাজে চোখাচোখি হচ্ছে, সামান্য কানাগোসাও হচ্ছে। বিদ্যুৎ ধীর কন্ঠে রবিন ভাইয়ের কানে কানে বললো,
“কি বুঝছো?”
“বুঝার কি আছে! যা হচ্ছে সব জলের মতো পরিষ্কার। দেবদাস অর্জুন ভায়া প্রেয়সীর ব্যাথায় কাতর হয়ে যাচ্ছে!”
“তবুও মুখে স্বীকার যায় না”
“এটাই তো মজা, মুখে না, অন্তরে হ্যা”

বলেই মুখ চেপে হাসলো তারা। হাসি থেমে গেলো দেবব্রতের আগমনে। বরফ নিয়ে এসেছে সে। সে আসতেই অর্জুন রাগান্বিত কন্ঠে বললো,
“বরফ আনতে কি হিমালয় গিয়েছিলি? এতো দেরি হলো কেনো?”
“ভাবটা এমন দিচ্ছিস যেনো বাপের বরফকল আছে, যাবো আর নিয়ে আসবো। এই ঠান্ডা আবহাওয়ায় বরফ পাওয়া কি এতো সহজ?”
“অফ যা, এতো কথা বলিস কেনো? আগে বরফ দে”

দেবব্রত কথা বাড়ালো না। অর্জুন তার হাত থেকে বরফ এবং কাপড়টা নিয়ে অন্নার পায়ে আলতো করে দিতে লাগলো। বরফ লাগতেই ব্যাথা যেনো বাড়লো, চোখ মুখ খিঁচে তা সহ্য করলো অন্না। অর্জুন তখন নরম গলায় বললো,
“একটু লাগবে, ঠিক হয়ে যাবে”

অন্নাও মাথা কাত করে তার কথাটা মেনে নিলো। তখন রবিন ভাই বলে উঠলেন,
“রহিম চাচাকে একবার দেখালে হয় না? উনি ভালো হাড়ের ডাক্তার। আল্লাহ না করুক, হাড় ভেঙ্গে টেঙ্গে গেলে? আমার চাচাতো ভাই দিলশাদের এমন হয়েছিলো। একটা সিড়ি মিস করে পড়ে গিয়েছিলো। প্রথমে টের পায় নি, পড়ে দেখা গেলো হাড়ে ফাটল ধরেছে। চান্স নেবার কি দরকার?”

রবিনের কথা শেষ হতেই অর্জুন বলে উঠলো,
“না না চান্স নেবার দরকার নেই। এমনেই মাথায় বুদ্ধির অভাব, পরে হাটতে না পারলে আরেক বিপদ হবে। ফেলু অন্না থেকে খোঁড়া অন্না হয়ে যাব। না, না, চান্স নেওয়া যাবে না।”

অর্জুনের কথায় দেবব্রত ও সায় দিলো। অন্না কিছুসময় হা করে তাকিয়ে রইলো অর্জুনের দিকে, সে এক দিকে যেমন তার ব্যাথায় বরফ দিচ্ছে অপরদিকে সমানে শানিত বাক্যে তাকে অপমান করেই যাচ্ছে। লোকটি এমন কেনো? এর মাঝে বিদ্যুৎ বললো,
“তোদের নামটা কেটে দিচ্ছি, তোরা বরং অন্নাকে বাড়ি নিয়ে যা”
“সেটাই ভালো”

অর্জুনের কথাটা শেষ হবার আগেই অন্না বলে উঠলো,
“নাম কেটো না। আমি নাচতে পারবো। আজ রাতেই ব্যাথা সেরে যাবে”
“তুমি কি জ্যোতিষী হইছো? তোঁতাপাখি বলে গেছে কানে কানে? কিভাবে জানিস ঠিক হবে কি না?”
“আরে আমার পা আমি জানবো না?”
“এতো যখন জানিস তাহলে পড়ে যাস কি করে? চোখ আর মন কোথায় থাকে? এখন আবার নাচবেন উনি। কোনো নাচানাচি হবে না। বাড়ি যাবি, খেয়ে দেয়ে ঘুম”
“অর্জুন দা”
“চুপ, প্যা পু বন্ধ”

অন্না মনখানা মিয়ে গেলো। সে চুপ করে বসে রইলো। অর্জুনের ভ্রুক্ষেপ হলো না। সে অন্নার পায়ে বরফ দিতে ব্যাস্ত। তখন দেবব্রত বললো,
“ওকে বকিস না, ইচ্ছে করে তো পড়ে নি। যদি অনুষ্ঠানের আগে পা সেরে যায় তাহলে না হয় একটু পারফর্ম করলো”

দেবব্রতের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো অর্জুন। তার মোটেই কথাটা পছন্দ হয় নি। একেই মেয়েটির পা টা ফুলে গেছে, আগামীকাল হতে হতে দেখা যাবে পা ঢোলের আকার নিয়েছে। অর্জুন তার কথা উপেক্ষা করে প্রতীককে বললো,
“প্রতীকদা এখন কি রহিম চাচাকে ডাকা যাবে। ওকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। তোমরা নাহয় তাকে একটু বাড়িতে নিয়ে আসো। ও তো দাঁড়াতেও পারছে না”

প্রতীক মাথা নাড়ালো। এদিকে কৃষ্ণার মুখে হাসি। দুর্বোধ্য সেই হাসি। সে যেনো কিছু একটা আন্দাজ করছে। হয়তো কোনো গল্পের শুভসূচনা_____

*****

অন্নার পা মচকেছে, ভালো করেই মচকেছে। রহিম চাচা বেডরেস্ট নিতে বলেছে। ফলে রবিন ভাই এর অন্না এবং অর্জুনের যুগলবন্দীর প্লানের উপর সমুদ্রের ঢেউ চলে গিয়েছে। তবে এতে রবিনভাই এর মাথাব্যাথা নেই। কারণ কোথাও না কোথাও তার পরিকল্পনা অনেকাংশে সফল। অর্জুনের প্রেমকাহিনীর আগুনটা বেশ ভালো করেই জ্বলেছে। অপরদিকে, অন্নার মনখানা খারাপ। সবাই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে শুধু সেই বাসায় বসে থাকবে, পুজোতেও সে বের হতে পারবে না। ব্যাপারটা মোটেই ভালো লাগছে না। ফলে শ্যামমুখখানা আরোও কালো হয়ে গেলো। কোনোমতে কিশোরী তার চোখের অশ্রু আটকে রেখেছে। যা কারোর চোখে না পড়লেও অর্জুনের দৃষ্টি এড়ালো না। সকলের দৃষ্টির আড়ালে সে অন্নার কাছে গেলো। তার খোঁপা করা মাথার চুলগুলো বা হাত দিয়ে এলোমেলো করে দিলো। অন্না অশ্রুসিক্ত চোখে তাকাতেই স্বর খাঁদে নিয়ে বললো,
“কষ্ট পাস না, পা ঠিক হবার উপলক্ষে আরেকবার অনুষ্ঠান করবো না হয়”
“কথা দিচ্ছো?”
“দিলাম”

বলেই স্মিত হাসলো অর্জুন। চমৎকার সেই হাসি। অন্না মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো অর্জুনের দিকে। তার হৃদস্পন্দন বাড়লো। হৃদয়ের কোনায় যে প্রণয় বীজটা রোপন করেছে তার বাড়ছে, ধীরে ধীরে। কেউ ঠিক ই বলেছে সুন্দর জিনিসগুলো ভয়ংকর। চরম ভয়ংকর। অন্না অর্জুনের প্রগাঢ় নয়নে নিজের সর্বনাশ দেখতে পেলো। এই সর্বনাশে পরম সুখ______

********

সকাল থেকেই অঝোর ধারায় বৃষ্টি। অক্লান্ত বর্ষণে ভিজে যাচ্ছে হিমুলেন। পানিও উঠেছে। ড্রেনের কাজ গত মাসেই হয়েছে। তবুও আজ পানি উঠেছে। থেকে থেকে মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে। অক্লান্ত গর্জন। অপরাহ্নের শেষ প্রহর। বিছানায় আধশোয়া ভাবে শুয়ে আছে অন্না। হাতে বই, “নৌকাডুবি”। বই টা নিয়ে তার প্রচুর কৌতুহল। বেশি কৌতুহল হেমনলিনীকে নিয়ে। তাই তো দেবব্রতকে দিয়ে কিনিয়েছে। যখন বলেছিলো তার এই বইখানা লাগবে, দেবব্রতের চোখ কপালে। অবাক কন্ঠে বললো,
“তুই বই পড়বি?”

অন্না ক্ষেপে উত্তর দিলো,
“কেনো আমি বই পড়তে পারি না?”
“শুনেছি অর্জুন নাকি তোকে পড়াচ্ছে, এখন সেটার চাক্ষুষ প্রমাণ পাচ্ছি। বইপোকাটার সাথে থাকতে থাকতে তুই ও সেটাই হচ্ছিস”

অন্না উত্তর দিলো না। শুধু বললো,
“কিনে দিবি কি না বল”
“যাহা মহারানীর আজ্ঞা, পেয়ে যাবি”

দেবব্রতের উছিলাতেই বইটা পাওয়া। কিন্তু বইটা পড়ে কষ্ট লাগছে। এতোটা কষ্ট পাবে বুঝতে পারে নি। ভালোবাসা গুলো বুঝি এমন ই অসহায়, প্রণয়ের মানুষের আঘাতগুলো বুঝি এতোটাই বেদনাদায়ক। অন্না হেমনলিনী নয়, তবুও রমেশের দেওয়া আঘাতগুলো যেনো সে অনুভব করছে। চোখ ভিজে আসছে বারংবার। তখন ই ঘরে উপস্থিত হলো দেবব্রত। বললো,
“চল”
“কোথায়?”
“অনুষ্ঠানে। শুরু হয়ে যাবে”
“ভালো লাগছে না”
“সে কি কথা! সবাই এতো কষ্ট করলো দেখবি না”
“কৃষ্ণা আসছে বুঝি?”

কৃষ্ণার কথাটা শুনতেই বিষম খেলো দেবব্রত। হালকা কেশে কড়া স্বরে বললো,
“কৃষ্ণা কি রে! বয়সে বড় তোর”
“বৌদি বলবো তাহলে?”
“বৌ…বৌ..বৌদি কেনো বলবি? পড়ে কি মাথাটাও মচকেছে?”
“জানি না, ইচ্ছে হলো। বাদ দে। চল, দেখি কি অনুষ্ঠান হচ্ছে যার জন্য এতো আগ্রহ তোর”

দেবব্রত কথা বাড়ালো না। বোন যে তার কিছুটা আন্দাজ করেছে বুঝতে বাকি নেই। কিন্তু সে তো জানে না তার বোন পুরো ঘটনাই জানে। অন্না মিটিমিটি হাসলো। দাদার লজ্জিত মুখখানা দেখতে মন্দ লাগছে না।

অনুষ্ঠান শুরু হলো ছটা নাগাদ। একে একে সবার মেধার প্রকাশ হলো। করতালির ঢেউ উঠলো। ঢেউ জোরালো হলো যখন স্টেজের অর্জুন উঠলো। অন্নার উত্তেজনা বাড়লো। অর্জুনদা গাইবে আশা করে নি। ভাগ্যিস এসেছে, নয়তো তার পারফরম্যান্সটা দেখা হতো না। অন্নার চোখে একরাশ আগ্রহ। সে জানে অর্জুনদা কতোটা সুন্দর গায়। তার কন্ঠের প্রেমে এই পাড়ার প্রতিটি কিশোরী হাবুডুবু খায়। অর্জুন সুর তুললো,
“আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে
শুধু তোমায় ভালোবেসে
আমার দিন গুলো সব রঙ চিনেছে তোমার কাছে এসে
শুধু তোমায় ভালোবেসে
তুমি চোখ মেললেই ফুল ফুটেছে আমার ছাদে এসে
ভোরের শিশির ঠোট ছুঁয়ে যায় তোমায় ভালোবেসে
আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে
শুধু তোমায় ভালোবেসে”

পরিবেশে যেনো অদ্ভুত প্রেমের লহর উঠলো। অন্নার কাজল কালো চোখে শুধু অর্জুনের প্রতিচ্ছবি। খরা জমিনে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে নামলো মনের আকাশের মেঘগুলো। ঠিক তখন ই তামিমা ধীর কন্ঠে বললো,
“অর্জুনদার চোখ তো তোর থেকে সরছেই না”

অন্না এতোসময় খেয়াল না করলেও তার এখন মনে হচ্ছে অর্জুনের চোখ যেনো তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তাদের মাঝে চোখাচোখি হলো কিন্তু কেউ দৃষ্টি সরালো না। এর মাঝে কখন গান শেষ হয়ে গেলো টের ও পেলো না অন্না। গান শেষ হবার পর ও মিনিট দুয়েক অর্জুন দাঁড়িয়েছিলো। তারপর সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েই নেমে পড়লো। সাথে রেখে গেলো কিশোরীর মনে হাজারো প্রশ্ন। গানটি কি তার জন্য ছিলো! নাকি এ কেবল ই মনের ভ্রান্ত ধারণা!

*****

পুজো শেষ হয়ে গেছে, দেবীর বিদায়ে কাঁদলো বহু চোখ। তবে মনকে আশ্বস্ত করলো এই বলে “আসছে বছর আবার এসো মা”। বিজয়া দশমীতে সিঁদুর খেলা হলো। কিশোরী অন্না তা দেখলো চোখ ভরে। দেবব্রত ধুনুচি নাচ ও করেছিলো। সবাই অর্জুনকে বলা স্বত্তেও সে নাচে নি। এক কোনায় দাঁড়িয়ে ছিলো। অন্নার চোখগুলো তাকেই দেখছিলো। বিজয়ার দিন কৃষ্ণা এসেছিলো। বাড়ির সকলের সাথে তার কথা হয়েছে। কিন্তু তা কেবল ই অর্জুনের বান্ধবীরুপে। অবন্তীকা দেবীর সাথে তার বেশ খাতির ও হয়েছে। ফলে দেবব্রত ঠিক করলো আজ রাতেই সে বিয়ের কথা পাড়বে। ভাসানের পর বাসায় ফিরেই সে অবন্তীকা দেবীরকে বললো,
“আমার কিছু কথা আছে”

নারায়ন বাবু এবং প্রদীপ বাবু আগ্রহ নিয়ে বসলো। রীতাদেবী হাত মুছতে মুছতে বললো,
“কি কথা দেব?”
“ছোট মা আমি বিয়ে করবো। আমি একজন কে খুব ভালোবাসি। আমি আর কলকাতা যাচ্ছি না। এখানেই থাকবো। আর যদি তোমরা আপত্তি করো তবে আমি তাকে বিয়ে করে বাড়ি আনবো”

দেবব্রতের কথাটা শেষ হবার আগেই তার গালে স’জো’রে চড় পড়লো। আর মানুষটি অন্য কেউ নয় বরং অবন্তীকা দেবী………

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here