#একটুখানি_সুখ
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৪
মোহ বাড়িতে ফিরেছে প্রায় অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছে। দুপুরের খাবারটাও না খেয়ে দরজা বন্ধ করে বসে আছে সে। মিসেস. নিরা বারবার দরজায় কড়া নাড়লেও সাড়াশব্দ দেয়নি মোহ। এবার চিন্তা হচ্ছে উনার। উনি জানেন মোহ উল্টাপাল্টা কিছু করবার মেয়ে নয়। তবুও বড্ড চিন্তা হচ্ছে মেয়েটার জন্য। সবেমাত্র খাবারের প্লেট নিয়ে আবারও মোহের রুমের দিকে যাচ্ছেন মিসেস. নিরা। এমন সময় ফোনের রিংটোন শুনে থামলেন উনি। সিঁড়ি থেকে নেমে টেবিলে প্লেট রেখে ধরলেন নিজের ফোনটা। ফোনটা রিসিভ করা মাত্র ওপাশ থেকে কর্কশ গলা ভেসে এলো।
“আপনার বাড়ির মেয়ে একটা অপয়া, অলক্ষ্মী। শুধু তাই নয় দুশ্চরিত্রাও। ছিহ! এমন মেয়েকে এখনো ঘরে রেখেছেন আবার আমাদের ছেলের সাথে বিয়েও দিতে এসেছিলেন? লজ্জা করে না?”
বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন মিসেস. নিরা। এটা তো পাত্রের মায়ের কন্ঠ। বুঝতে বাকি রইল না এসব উল্টাপাল্টা খবর উনারাও পেয়েছেন। নিজেকে সামলে নিয়ে কোমল সুরে বলেন,
“দেখুন আপনারা ভুল ভাবছেন। মোহ মোটেও এমন মেয়ে নয়। ওর নামে নিশ্চয় কোনো বদনাম ছড়ানো হয়েছে। মোহের বাবা একজন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট ছিলেন। সেজন্য ওদের শত্রুর কোনো অভাব নেই। আর স্বচ্ছ ছেলেটা ওর কাজিন হয়। আর কেউ এমন সময় ছবি তুলে ফেলেছে যে তখন পরিস্থিতিটাই এমন ছিল।”
“এমন সব মেয়ের পরিবারই বলে। সব মেয়ের পরিবারই তো চায় নিজের মেয়ের দোষ ঢেকে অন্যের পরিবারে গছিয়ে দিতে। যখন ওর কাজিনের সাথে এতোই ঘনিষ্ঠতা তখন ওখানে বিয়ে দিয়ে দিলেই তো পারেন। শুধু শুধু কেন আমার ছেলের ঘাড়ে ওমন মেয়েকে দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন? আপনার মেয়ের জন্য আজ আমার ছেলে আইসিও তে।”
হতবিহ্বল হয়ে যান মিসেস. নিরা। অস্থিরতার সঙ্গে বলেন,
“মানে কি হয়েছে আদিলের? আর যা হয়েছে তাতে আমার মেয়ের দোষ কোথায়?”
“সব তো আপনার বাড়ির মেয়ের জন্যই হলো। নয়ত এমনভাবে আমার ছেলেটা আহত হতো না। আপনার মেয়ের সাথে সম্মন্ধ হওয়ার পরই আমার ছেলেটার এই অবস্থা হয়ে গেল। কারণ ওই মেয়েটা যে অলক্ষ্মী।”
“মুখ সামলে কথা বলবেন। এতে আমার মোহের কোনো দোষ নেই।”
ওপাশ থেকে তাচ্ছিল্যের সুর ভেসে আসে আর বলে,
“এমন মেয়ের জন্য তর্কাতর্কি করছেন? শেষে আপনার নামও ডুবিয়ে ছাড়বে। আর ওই মেয়ের বিয়েও হবে না বলে দিলাম। যত্তসব!”
মিসেস. নিরা হকচকিয়ে গেলেন। এখন এই বিয়ে ভেঙে গেলে তো সত্যিই বদনাম হয়ে যাবে। কিছু বলার আগেই কেউ ফোনটা মিসেস. নিরার হাত থেকে নিয়ে নেয়। খানিকটা চমকে পিছু ফিরতেই ভার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মোহকে দেখতে পান উনি। মোহ কানে ফোন ধরে শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
“আপনার মতো কিছু মানুষদের জন্য এখনো সমাজ পাল্টায়নি। আজ আপনার ছেলে আহত হয়েছে বলে আপনি আমাকে দায় করছেন। আমি কি আপনার ছেলেকে গিয়ে মেরে রেখে এসেছি? আর বড় কথা এটা, আপনার ছেলেকে বিয়ে করার কোনো আগ্রহ আমার নেই। বাকি রইল আমায় কে বিয়ে করবে সেটা নিয়ে কথা? আমাকে বিয়ে করার একজন রয়েছে। যাকে আমিও বিয়ে করতে চাই। যাকে আমি ভালোবাসি। আপনার মতো লোকদের হাতেপায়ে ধরে আপনাদের ছেলেকে বিয়ে করতে বয়ে গেছে আমার।”
ওপরপাশ থেকে বেশ ক্রুদ্ধ হলেন আদিলের মা। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে উঠলেন,
“বাহ! ভদ্রতার ছিটেফোঁটাও তো দেখি নেই। সাহসের সীমা নেই। তোমার মতো মেয়েকে কে বিয়ে করবে? এসব জানতে পারলে তোমার তীরও ডুববে ওই তীরও ডুববে। ভাগ্যিস তোমার মতো মেয়ের সাথে বিয়ের হওয়ার আগেই বিয়েটা নাকচ করলাম। অপয়া মেয়ে কোথাকার!”
ফোনটা কেটে গেল। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ফোনটা মিসেস. নিরার দিকে এগিয়ে দিল মোহ। মিসেস. নিরা সেটা ছোঁ মেরে নিয়ে ধমকে বলে উঠলেন,
“তোর মাথা ঠিক আছে না গেছে? আদিলের বাবা কতোবড় ব্যবসায়ী জানিস? উনি যদি তোর নামের দুর্নাম ছড়িয়েন দেন তাহলে তোকে কে বিয়ে করবে?”
মোহ মাত্রাতিরিক্ত বিরক্ত হয় এবার। চোখ বন্ধ করে চোখমুখ জড়িয়ে বলে,
“করতে হবেনা কাউকে বিয়ে। একজন করলেই হবে। সারাদিন এমন ভাবে বিয়ে বিয়ে করছো যে আমায় তাড়াতে পারলে বাঁচো তুমি মিমি। কয়েকদিনে বেশ পাল্টে গেছো তুমি। এতোই যদি তাড়ানোর চিন্তা থাকে তাহলে এক কাজ করো আমায় বলো আমি বাড়ি থেকে চলে যাই। এসব কথা আর ভালো লাগছে না আমার।”
“তুই কি কাউকে ভালোবাসিস? বললি যে ফোনে কাউকে তুই বিয়ে করতে চাস?”
থতমত খেয়ে তাকায় মোহ। সে আয়মানের কথা বলার জন্য প্রস্তুত ছিল না। চেয়েছিল সময় নিয়ে বলতে। হয়ত রাগের চোটে মুখ ফস্কে বলে ফেলেছে। মাথা নুইয়ে নেয় মোহ। মিসেস. নিরা আচমকা বলে ওঠে,
“কে সেই ছেলেটা? সে কি কোনোভাবে স্বচ্ছ?”
মাথা তৎক্ষনাৎ উঠিয়ে তাকায় মোহ। বেশ কড়াকড়িভাবে ভাবে জবাব দেয়,
“স্বচ্ছ ছাড়া কি অন্যকেউ হতে পারে না? কি তখন থেকে স্বচ্ছ স্বচ্ছ করছো? আমার নামে ফেক নিউজটা বের হবার পর দেখছি তুমিও উল্টাপাল্টা ভেবে ফেলছো আমাদের নামে।”
“একটা কথা বলি শোন! রাগ করিস না। মন এমন একটা জিনিস যার অস্তিত্ব বৈজ্ঞানিকভাবে নেই। কিন্তু আমরা অনেকসময় বলি মন থেকে ভালোবাসি, মন থেকে করি ইত্যাদি ইত্যাদি। মন এমন একটা জিনিস যার অস্তিত্ব না থাকা সত্ত্বেও মন দিয়ে আমরা অনুভব করি। মনের ধারণা যেকোনো সময় পাল্টাতে পারে। একটি মানুষের মন যে কখন কি জিনিস চেয়ে বসে সেটা একটা মানুষও বেশ পরে জানতে পারে। একটা পবিত্র সম্পর্ক হলো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। এই সম্পর্কটা যদি ভুলবশতও জুড়ে যায় তাহলেও কিন্তু একসময় না একসময় কোথাও একটা গিয়ে মানুষ একে ওপরের প্রতি দুর্বল হয়েই পড়ে। যেমন আমার কথায় ধরে নে। তোর আঙ্কেলকে আমি চিনতামও না। হঠাৎ করেই বাবা কোথা থেকে যেন একটা লম্বাটে মানুষ পাত্র হিসেবে আমার পাশে বসিয়ে দিলেন। আমার বয়স তখন ১৬ বছর। বিবাহিত জীবন মানে কিছুই বুঝতাম না। সেদিনই বিয়ে পড়িয়ে দিল বাবা। অনেক কান্নাকাটি করেছিলাম। ভেবেছিলাম কি করে থাকব পরিবার ছাড়া অচেনা লোকটার সাথে? কিন্তু হঠাৎ করেই মানুষটাকে খুব ভালো লাগতে শুরু করল। তার প্রতি অঢেল বিশ্বাস জমতে লাগল। তারপর কি মনে হতো জানিস? এই মানুষটা যদি আমার পাশে থাকে তাহলে জীবনের সবদিনই আমার কাছে আনন্দময় হয়ে উঠবে। আমার জীবন রঙিন হবার মূল কারণ হবে এই মানুষটাই। তুই কাউকে যদি পছন্দ করেও থাকিস। তোদের সম্পর্ক মোটেও জোরালো নয়। তোর নামে এতোকিছু বদনাম করা হয়েছে। এসব শুনে তোর পছন্দের মানুষটা কি তোকে মেনে নিতে পারবে?”
মোহ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। অতঃপর বলে,
“হ্যাঁ। আমার বিশ্বাস আছে। সেও আমায় বিশ্বাস করে।”
“করলেই ভালো। এতটুকুই বলার ছিল তোকে। এখন খেয়ে নে।”
প্লেট হাতে নিয়ে নিজহাতে মোহকে খাইয়ে দিতে থাকেন মিসেস. নিরা। মোহ অন্যমনস্ক হয়ে খেয়ে যাচ্ছে। তার মাথায় মিসেস. নিরার বলা কথাগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে। খাওয়া শেষ করে ঘরে আসে মোহ। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ফোনের আচমকা শব্দে ধড়ফড়িয়ে লাফিয়ে উঠে বসে পড়ে সে। হাতে ফোন নিতেই অচেনা নম্বর দেখে চোখমুখ কুঁচকে আসে তার। এটা কার নম্বর? রিংটোন বাজতে বাজতে থেমে গেল হঠাৎ। কল কেটে গেছে। কল কাটতেই মোহের নজরে এলো এই নম্বরে প্রায় দশবার কল এসেছে। চোখ ছানাবড়া হতেই আবারও কল এলো একই নম্বরে। চোখ সরু করে বেশ দ্বন্দ্ব নিয়ে কল রিসিভ করে কানের কাছে ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ বেশ জোর গলায় বলে উঠল,
“বাহিরে এসো। কাম ফাস্ট।”
স্বচ্ছের কন্ঠ শুনে মেজাজটা আবারও বিগড়ে গেল মোহের। বিস্ময়ের সুরে বলল,
“আপনি আমার নম্বর কোথা থেকে পেলেন?”
“যেখান থেকেই পাই। তোমার নম্বর পাওয়া কি এতো কঠিন? তোমার নম্বর এতো মূল্যবান জিনিস না যে সিন্দুকে তালা মেরে রেখে দেওয়া ছিল। এখন এসব কথা কম বলে নিচে এসো আমি অপেক্ষা করছি।”
“আমি কেন যাব? তাও আবার আপনার সাথে? কখনো না।”
জেদ ধরে বলে মোহ। লোকটা তাকে এমনভাবে নিচে যেতে বলছে যেন মোহ তার বিয়ে করা বউ। মোহ বিড়বিড় করে বলে,
“উনি বলবেন আর আমাকে যেতে হবে! মামার বাড়ির আবদার।”
“কেন যেন ভুলে গেছে তার পাগলের প্রলাপ করার ভিডিও আমার কাছে আছে।”
“তো? অলরেডি তো বদনাম হয়েই গেছি। এটাও যদিও ভাইরাল হয় তাহলে না হয় পাগলের উপাধি পাব! আর কি হবে?”
তবুও স্বচ্ছ দমে না। বেশ সিরিয়াস হলো এবার। মেয়েটা একদমই এক কথায় রাজি হবার মেয়ে না। গাম্ভীর্যের সঙ্গে বলে,
“লাস্ট বার বলছি নিচে এসো। এক মিনিট সময়। নয়ত তোমায় কোলে উঠিয়ে নিয়ে আসব।”
এবার মোহের রাগ তুঙ্গে উঠে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আপনি…আপনি একটা…”
“আর মাত্র ৫৫ সেকেন্ড আছে তোমার হাতে। টাইম ইজ গয়িং।”
বলেই ফোনটা কেটে গেল। মোহ যদি পারত ইচ্ছেমতো ফোনের ঢুকে পিটিয়ে সোজা করত। মোহ সিদ্ধান্ত নিল সে যাবেই না। এমন নেশাখোর লোকের সাথে যাওয়ার কোনো মানে হয়? না একদম না। সে যাবেই না।
চলবে…
[বি.দ্র. আজকের মতো ছোট পর্ব কোনোদিন দিইনি আমি। আর পর্বটাও খাপছাড়া। এরজন্য দুঃখিত। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। যারা বলছেন গল্পে আগন্তুক আর তার ছোট ভাই কোথায় গেল? ওদের যখন গল্পে এনেছি তাদেরও দেখানো হবে। ধৈর্য ধরুন। আর গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার কোনো ভিত্তি নেই।]
লেখিকার গল্পের গ্রুপ : আনিশার গল্পআলয় (সাবির পাঠকমহল)🤍