গ্রীষ্মের রৌদ্রদগ্ধ দুপুর। চপিং বোর্ডে লেবু কাটছে মুশরাফা। ভ্যাপসা গরমে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এই মুহুর্তে বরফ মেশানো লেবু শরবত দিয়ে গলা না ভেজালেই নয়। রান্নাঘরের মেঝেতে বসে বটিতে দক্ষ হাতে মুরগী কাটছেন ফরিদা পারভীন। কাটার মাঝে বাইরে তাকালেন। রৌদ্রজ্বল আকাশটা হঠাৎ-ই মেঘে ঢেকে কালো হয়ে গেছে। তিনি মুশরাফার উদ্দেশ্যে বললেন,
‘রাফা, যা তো ছাদ থেকে কাপড় নিয়ে আয়।’
ফরিদা পারভীনের কোমল ডাক কর্ণকুহরে পৌঁছতেই মুশরাফা থেমে গেল। ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ছাদে ব্যাচলর ছেলেগুলো আছে। আমি কিভাবে যাব?’
ফরিদা পারভীন মুরগীর বুকের মাংস কাটছেন। হাত রক্তে মাখামাখি হয়ে আছে। রক্তাক্ত হাতে মাংস কাটার মাঝে বললেন,
‘ সকালে আমি কাপড় মেলতে যাওয়ার সময় সবাইকে অফিসের জন্য বেরিয়ে যেতে দেখেছি। অফিস থেকে সন্ধ্যায় ফিরে ওরা। এখন কাউকে পাবিনা তুই। নিশ্চিন্তে যা।’
মুশরাফা ফের প্রশ্ন করল,
‘তুমি নিশ্চিত, ওরা নেই?’
‘নিশ্চিত না হলে তোকে পাঠাতাম? বাতাস শুরু হয়েছে। যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে। এবার যা মা। দেরি করিস না।’ অনুরোধ ঝরে গেল ফরিদা পারভীনের স্বর থেকে।
মুশরাফা রান্নাঘরের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল। বাতাসে চারদিক উড়িয়ে নিয়ে যাবার উপক্রম। একটু আগেই না কড়া রোদ ছিল! সূর্য্যের তীব্র তাপে ঝলসে যাচ্ছিল। ক্ষণিকেই আকাশ কুসুম আবহাওয়া বদলে গেল! আশ্চর্য! প্রকৃতি পরখ করে রুমের দিকে এগুলো। ফরিদা পারভীনের নিশ্চয়তায় বড়ো একটা ওড়না গায়ে চাপিয়ে ছুটল ছাদের দিকে।
উপর তলায় ছাদ। ছাদের সিড়িরুমের পাশ থেকে ‘এল’ আকারে চিলকোঠা ঘর। সেই ঘরটা বরাদ্দ ব্যাচলরদের জন্য। মুশরাফা ছাদের ঘরের দরজায় গিয়ে ভেতরে উঁকি দিল। ভেতরে কোন ব্যাচেলর ছেলে আছে কি না যাচাই করা দরকার। সামান্য মুখ বের করে পুরো ছাদে চোখ বুলাল। নাহ, কারো উপস্থিতি নেই। তারপর চোখ রাখল চিলকোঠা ঘরে। সদর দরজায় তালা ঝুলানো। ও হাফ ছাড়ল। যাক, কেউ নেই। নিশ্চিন্ত মনে ছাদে পা রাখল। তীব্রবেগে বাতাসের বহর এসে ধাক্কা খেল ওর সাথে। মুখ, মাথা ওড়নায় আবৃত ছিল। মাথা থেকে সরে গেল ওড়না। রূপের ঝলকানি দিয়ে উঠল চারপাশে।
অস্বস্তিতে ছেয়ে গেল সারামুখ। বিরক্তির ভাজ পড়ল কপালে। মুশরাফা তড়িৎ ওড়না ঠিক করল। দ্রুততার সাথে দড়িতে মেলে দেয়া কাপড় নিতে লাগল। এক হাতে ওড়না সামলাল, আরেক হাতে কাপড় নিল। বাতাস ওকে ভালোই নাস্তানাবুদ করেছে ওকে। কাপড় নেয়া শেষে এক মুহুর্ত দেরি করল না, ছাদ থেকে নেমে গেল।
.
মুশরাফা ছাদ থেকে নেমে যেতেই চিলকোঠার ছাদ থেকে চাপা গুঞ্জন ভেসে এলো। চিলকোঠার ছাদের বুকে ঘামটি মেরে বসে আছে দুই যুবক। দুজনার বিস্ময় মাখা চাহনি ছাদের দরজার দিকে। গ্রীষ্মের ঝড়ো হওয়ায় গা এলিয়ে আসা অপরূপার যাওয়ার পানে চেয়ে এক যুবক চঞ্চল গলায় জিজ্ঞেস করল,
‘মেয়েটা সুন্দর তো! কে রে?’
কৌতুহলে ভরা স্বর কর্ণকুহরে পৌঁছতেই পাশে বসা যুবকটি নড়েচড়ে বসল। তার চোখ মুখ ফ্যাকাসে। পরনে অফিসিয়াল ফর্মাল ড্রেসাপ। দূর্বল হাতে টাইয়ের নাট ঢিলে করল। রেলিংয়ে মাথা ঠেকিয়ে তাকাল বন্ধুর দিকে। ক্লান্ত স্বরে অনুরোধ মিশিয়ে বলল,
‘ জাওয়াদ, ভাই আমার, দোহাই লাগে আমাকে আর বিপদে ফেলিস না! মাথা থেকে কু’চিন্তা ঝেড়ে ফেল। ‘
বন্ধুর কথায় জাওয়াদ নামের যুবকটি ভ্রু কুঁচকাল,
‘ আমি শুধু সুন্দর বলেছি, এতে বিপদের কী আছে অনিক? আশ্চর্য!’
অনিকের স্বরটা এবার কিছুটা কঠিন হলো,
‘ কোনো মেয়েকে তোর সুন্দর বলা মানেই বিপদ সঙ্কেত। যেন তেন সঙ্কেত নয়, তান্ডব চালালো নয় নম্বর বিপদ সঙ্কেত। যে সঙ্কেত এসেছিল তুই সাবিলাকে সুন্দর বলার পর। আর অন্তত সেই সঙ্কেত ডাকিস না!’
জাওয়াদের আঙুলের ভাজে শোভা পাচ্ছে নিকোটিন। নিকোটিন ঠোঁটে চেপে ‘সাবিলা’ নামটা আওড়াল। ‘সাবিলা’ নামের মেয়েটাকে জাওয়াদের মস্তিষ্ক তৎক্ষনাৎ সনাক্ত করতে পারল না। ভাবুক হয়ে প্রশ্ন করল,
‘কোন সাবিলার কথা বলতেছিস? ‘
অনিক কটাক্ষের স্বরে বলল,
‘ আমার আগের বাড়িওয়ালার মেয়ে সাবিলা শবনম।
যাকে প্রথম দেখায় তুই সুন্দর বলেছিলি। মাস দুয়েক ঘড়ির কাটার মতো যার চারপাশে ঘুরঘুর করে তোর পাঁচ নাম্বার প্রেমিকার স্থান দিলি।
মাস পার্কে বসে বাদাম খেয়ে আবার ব্রেকাপ ও করে ফেললি। ব্রেকাপের পর যে মেয়ে বাপ্পারাজের ফিমেল ভার্সন হয়ে মাতালের খাতায় নাম লেখাল। সাবিলার বাবা মেয়ের এহেন অবস্থা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে তোকে খুঁজে বেড়াতে লাগল। তুই তো হাওয়া মিঠাইয়ের মতো নিমিষেই উধাও। তোকে পেল না, তোর বন্ধু পরিচয়ে আমাকে পেল কাছে। কথা দিয়ে পিঠের চাল তুলে বাসা থেকে বিদায় করল। শুধু আমাকে নয়, আমার সাথে থাকা ব্যাচলর সব ছেলেকে বের করল। উপরিলাভ হিসেবে সবাই বস্তায় বস্তায় অপমান করল আমায়। এবার মনে পড়ছে কিছু! ‘
অনিকের কথায় জাওয়াদ খানিক ভাবল। পরপরই ওর চোয়াল শক্ত হলো। আধখাওয়া সিগারেট ছুড়ে ফেলল ছাদের অন্যদিকে। রাগে গমগম করে কিছুটা উচ্চৈঃস্বরে বলল,
‘ ওই সাইকোর নাম নিবি না আমার সামনে। আমার জীবনটাকে নরক বানিয়ে দিয়েছিল ওই মেয়ে। ছাব্বিশ বছরে তাগড়া যুবককে বাবু বাবু বলে মুখের ফেনা তুলে ফেলতো। আমার মা ছোটো বেলায় আমায় বাবু ডাকতো। ওই মেয়ে যেভাবে ডাকতো, মনে হতো যেন মা তার ছেলেকে ডাকছে। কর্মজীবী আমিটাকে দেখতে বাবুর মতো লাগে! বাবুর দাঁড়ি গোঁফ থাকে? সাইকো। কত করে নিষেধ করলাম, শুনল না। উলটো বায়না ধরল, তাকে ও বাবুনি ডাকতে হবে। সে কি কান্নাকাটি, রাগারাগি। কথাটথা বন্ধ। দাঁতে দাঁত চেপে শুধুমাত্র সম্পর্ক টেকানোর দায়ে ডেকেছি বাবুনি। আর কেমন তোতলিয়ে কথা বলতো, শুনলেই গা ঘিনঘিন করতো। ভাই, ভালো ভাবে বললেও আমি উত্তর দিচ্ছি তো না কি! নিব্বি সাজার কী কাজ! এই মেয়ের পাগলামি সহ্য করতে করতে আমিই আধপাগল হয়ে গিয়েছি! ‘
থামল জাওয়াদ। অনিকের চোখে মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল। সে ইতঃপূর্বে এসব কথা জানতো না। সাবিলার কথা উঠলেই জাওয়াদ রেগে যেত বিধায় অনিক জিজ্ঞেস করতো না। হাটে হাড়ি ভাঙল আজ। অনিক ঠোঁট চেপে হাসছে। আগ্রহী গলায় বলল,
‘তারপর?’
জাওয়াদ হিসহিসিয়ে বলল,
“আর জানিস? কী সব আবদার করে বসতো? রাত তিনটায় ফোন দিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে বলতো, বাবু ঘুমাচ্ছো! রাত তিনটায় ঘুমাব না তো হা-ডু-ডু খেলব? শান্তির ঘুমটাও কেড়ে নিয়েছে এই মেয়ে।
একশোবার বলে বলে আমাকে দিয়ে জিনিস কেনাতো। তারপর ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে ক্যাপশন দিতো, সারপ্রাইজ গিফট ফ্রম বাবু। বাবুরে পাগলে কামড়াইছে তোরে এসব আজাইরা উপহার দিতে।
তারপর আবার কিস ডে, হাগ, প্রমিস ডে কত কী পালন করা লাগবে।
টেডি ডে তে বলল, আমার জন্য টেডি আনো। টেডি কিনতে গেলাম। দোকানদার জিজ্ঞেস করল, ‘কার জন্য নিবেন?’ আমি বললাম, ‘আমার বাবুনির জন্য।’ দোকানদার একটা টেডি দেখিয়ে বলল, ‘এটা নিন আপনার মেয়ের পছন্দ হবে।’ দোকানদারের কথা শুনে আমার মনে হলো, আমি সত্যিই আমার মেয়ের জন্য গিফট নিতে গিয়েছি। বাবা বাবা ফিলিংস হচ্ছিলি। প্রেমিক প্রেমিক ফিলিংস হলো না একবারও। সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নাহ, প্রেমজীবনে এই বাবা ফিলিংস আর কন্টিনিউ করা যাবে না। ইতি টানতে হবে। ‘
অনিকের চেপে রাখা হাসিটা এবার উপচে পড়ল। হো হো করে হেসে ফেলল। কিছুক্ষণ হাসি থামাতে পারল না। ওর হাসি দেখে জাওয়াদের স্বর তীক্ষ্ণ হলো,
‘ আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল এই নিব্বির সাথে প্রেম করে। কোন রকম জান নিয়ে পালিয়েছি। এখনো এই মেয়ের কথা ভাবলে আত্মা কাঁপে। কী ভয়ানক বাবুময় দিন ছিল! প্রেম কথাটা শুনলেই এখন গা শিউরে উঠে। আমার প্রেম জীবনের সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা ছিল এই প্রেম। কোন শত্রু ও এমন মেয়ের পাল্লায় না পড়ুক। আমার এই করুণ কাহিনি শুনে তুই আমাকে জড়িয়ে ধরে মেয়েয়ালি কান্না জুড়ে দেয়ার পরিবর্তে হাসছিস! তুই বেটা বন্ধু নামে কলঙ্ক।’
অনিকের হাসি তখনো থামে নি। হাসতে হাসতে বলল,
‘রিলেশন কন্টিনিউ করতি, আমারও একটা বাবুময় প্রেম কাহিনি দেখার সুযোগ হতো। চরম ভুল করে ফেললি!’
জাওয়াদ ফিরতি সিগারেট ধরাল। টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে বলল,
‘ওই রিলেশন কন্টিনিউ করলে, এখন আমি পাগলাগারদে থাকতাম। বিড়বিড় করে তোতলে বলতাম, বাবুনি, তেমন আতু? আমাল বাবুনী তি তরে! কী সাংঘাতিক অবস্থা হতো! আল্লাহ বাঁচাইছে। এই উপলক্ষে মসজিদে জিলাপি বিতরণ করা উচিত।’
অনিক হাসি থামল। জ্বরটা একশো দুই। এই অগ্নিস্পর্শী শরীর দুলিয়ে হাসতে গিয়ে ক্লান্তের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে। ওট্টোহাসি থামালেও ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি লেগে আছে। সেই হাসিতে মজা মিশিয়ে বলল,
‘ এত বাজে অভিজ্ঞতার পর ও তুই কিভাবে প্রেম করার কথা মাথায় আনছিস? মানুষ দেখে শিখে আর ঠেকে শিখে। তোর ঠেকে শেখা উচিত। প্রেম পিরিতি থেকে দূরে থাক। এই মেয়ে যে বাবুময় হবে না তার নিশ্চয়তা কী! ‘
মুশরাফার প্রসঙ্গ আসতেই জাওয়াদের চোয়ালের কঠিন্যতা নমনীয়তায় রূপ নিল। স্বর নরম হলো, উৎফুল্লতায় চেয়ে গেল,
‘ মেয়েটাকে দেখতে ম্যাচিয়ুর আর লাজুক মনে হয়েছে। এমন মেয়েদের প্রেম বাবুময় হয়না। তুই বল, মেয়েটা কে?’
অনিক চোখ রাঙাল,
‘ ঘটনা আর রিপিট করিস না ভাই! অনেক কষ্টে এই বাসা জোগাড় করেছি। ব্যাচলরদের কেউ ভাড়া দিতে চায়না। কয়েক এলাকায় কোন বাসা নেই। বাড়িওয়ালা বলে দিয়েছে, মেয়ালি ব্যাপার হলে সোজা পুলিশে দিবে। তুই অন্য বাড়িওয়ালার মেয়েকে গিয়ে সুন্দর বল। আমাকে রেহাই দে ভাই। এমন জানলে আমি জ্বর নিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতাম, তাও তোকে বাসায় ডাকতাম না। ‘
জাওয়াদ বিরক্তিতে গা ভাসিয়ে বলল,
‘তুই ব্যাটা অকৃতজ্ঞ। জ্বর নিয়ে অফিসে গেলি। গর্ভবতী মহিলাদের মতো মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার দশা তোর। আমি দেখে সন্দেহ না করে বাসায় নিয়ে এসেছি। ওষুধ খাইয়ে, ছাদে বসিয়ে খোলা হাওয়ায় শরীর মনটাকে সতেজ করতেছি। আমার মতো বন্ধু গুগলে সার্চ দিয়েও পাবি না। এমন বন্ধুর জন্য একটা ইনফরমেশন বের হয়না তোর মুখ থেকে। তুই ব্যাটা মীরজাফর।’
জাওয়াদের কথায় অনিক ঝগড়াটে স্বরে বলল,
‘এই তেতো মুখে গালি আসছে না। নয়তো একটা ভয়ানক গালি দিতাম তোরে। আমার জীবনটাকে শূলে চড়িয়ে আবার মহৎ সাজছিস ! অকৃতজ্ঞ বলছিস আমায়! তোর এই সাবিলা কাবিলাজনক ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী আমি। তারপর ও যে তোর সাথে বন্ধুত্ব রাখে তার মতো বন্ধু তুই পুরো দেশে পুলিশ ফোর্স লাগিয়ে ও খুঁজে পাবিনা। আবার আমাকে বলছিস মীরজাফর। তুই শালা বিভীষণ। আমারে পাগলে পায়নাই যে আমি তোরে এই মেয়ের ঠিকানা দিব। তোদের প্রেমের পিওন হবো।’
জাওয়াদ হেসে বলল,
‘প্রেমের পিওন না হলে বিয়ের ঘটক হ। প্রেমে রিস্ক আছে, বিয়েতে রিস্ক নাই। উপরিলাভ, উকিল বাবা হিসেবে প্রতি ইদে আড়ংয়ের পাঞ্জাবি পায়জামা পাবি। ‘
জাওয়াদের অফারে গা মাড়াল না অনিক। মাছি তাড়ানোর মত বলল,
‘ আমি স্যান্ডো গেঞ্জি পরে জীবন কাটিয়ে দিব। তাও তোর ওই পাঞ্জাবি নিব না। পাঞ্জাবির লোভে ঘটকালি করলাম, দেখা গেল বাবুময় বউয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তুই ডিভোর্স দিলি। তারপর বাড়িওয়ালা আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে বলুক, এই সেই ছেলে যে আড়ংয়ের পাঞ্জাবির লোভে বিয়ের ঘটকালি করেছিল। এর এমন অবস্থা করুন যাতে পাঞ্জাবি পরার অবস্থায় না থাকে। দরকার নেই ভাই, আমি এমনিতেই শান্তিতে আছি।’
জাওয়াদ বন্ধুকে বার কয়েক জিজ্ঞেস করল, অনিক কিছুতেই মুখ খুলল না। আদতে সে জানে না মুশরাফার পরিচয়। মুশরাফাকে জাওয়াদের মতো সেও আজই প্রথম দেখেছে।
.
দিনটা ছিল শুক্রবার। জাওয়াদ সকাল সকাল বন্ধুর বাসায় এসে হাজির। অনিক তখন ঘুমে বিভোর। জাওয়াদ কপালে হাত দিয়ে দেখল জ্বর আছে কি-না। নাহ, নেই। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে। বিশাল বন্ধুসমাজের মাঝে অনিক জাওয়াদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। স্কুল লাইফের বন্ধু তারা। স্কুল কলেজ একসাথে পাড়ি দিলেও ভার্সিটি লাইফে এসে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তারা। অনিক তীক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মেধাবী ছেলে। পড়ালেখায় ভীষণ সিরিয়াস। কঠোর পরিশ্রম আর মেধাশক্তির বলে পাব্লিকে টিকে গেছে।
অন্যদিকে জাওয়াদ নিকোটিনের ধোঁয়ার সাথে জীবনটাকে ও হেলায় উড়িয়ে দেয়া লোক। কোন কিছুতে সিরিয়াস নয় সে। গার্লফ্রেন্ড, বন্ধবান্ধব, আড্ডা, ঘুরাঘুরি এসবই তার নিত্যকাজ। পড়ালেখার সাথে তার সম্পর্ক একবারে সাপে নেউলে। পরিবারের চাপে পড়ালেখা করতে হবে বলে করেছে, নয়তো কবেই ছেড়ে দিতো। পাব্লিকের জন্য চেষ্টা না করে প্রাইভেটে গিয়ে ভর্তি হয়েছে সে। ভার্সিটি লাইফে দুই বন্ধু আলাদা হয়ে গেলেও বন্ধুত্বের গাঢ়তা কমে নি। সপ্তাহের একটা দিন ঠিকই দুই বন্ধু নিজেদের জন্য রাখতো। ভার্সিটি লাইফ শেষে তারা কর্মজীবনে পা রেখেছে। অনিক ব্যাংকে কর্মরত আছে। আর জাওয়াদ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে। কর্মসূত্রে দুজনে একই শহরে আছে। দূরত্ব কমে গিয়ে আবার দুই বন্ধু এক হয়েছে। সুখে দুঃখে একে অপরের পাশে থাকে। জাওয়াদ জানে এই বন্ধুটা তাকে অনেক ভালোবাসে। যত যাই বলুক, মেয়েটার খোঁজ ও ঠিকই দিবে। আপাতত ভাব জমিয়ে রাখতে হবে, নয়তো এই ছেলে মুখ খুলবে না।
জাওয়াদ অনিককে ডেকে বলল,
‘ উঠ, আমরা বেরুব।’
অনিক ঘুমজড়ানো স্বরে জিজ্ঞেস করল,
‘কই যাবি?’
‘ বাইক নিয়ে এসেছি, লং ড্রাইভে যাব। চল।’
‘ আমায় আর কত জ্বালাবি? এবার বিয়ে করে বউকে জ্বালা। আমায় মুক্তি দে। বউ নিয়ে রোমান্টিক ড্রাইভে যা।’ কপালে বিরক্তির ভাজ টেনে বলল অনিক।
জাওয়াদ মকাপে ছকা মেরে বলল,
‘ মেয়েটার ঠিকানা দিয়ে রোমান্টিক ড্রাইভে যাওয়ার সুযোগ করে দে। তাহলে আর জ্বালাব না তোকে।’
তড়িৎ উঠে বসল অনিক। ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়িয়ে বলল,
‘পাঁচ মিনিট সময় দে, ফ্রেশ হয়ে আসছি। মেয়েঘটিত ব্যাপার টানিস না ভাই। এবার এই বাসা হারালে ফুটপাতে ঘুমাতে হবে। দয়া কর আমার উপর! আমি তোকে এলাকার বাকি সব বাড়িওয়ালার মেয়ের ঠিকানা দিব। তুই ওদের সুন্দর বলিস। তাও এই মেয়ের কথা ভুলে যা। ‘
অনিক ওয়াশরুমে ডুকে পড়ল। জাওয়াদ ওর উদ্দেশ্যে বলল,
‘লাভ এট ফার্স্টসাইট হয়ে গেছে ওই মেয়ের উপর। এখন বাকি বাড়িওয়ালার মেয়ের ঠিকানা দিয়ে এই ঘা সারবে না। এই মেয়েকেই লাগবে। ‘
দুই বন্ধু বেরুলো ঘুরাঘুরির উদ্দেশ্যের। সিড়ি দিয়ে নামার সময় একটা চমৎকার হয়ে গেল। মুশরাফার সাথে দেখা হয়ে গেল জাওয়াদের।
চলবে….?
#স্বর্ণাভ_সুখানুভূতি
~ আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা
পর্ব-১