বেলাদোনা (১৭)

0
243

#বেলাদোনা (১৭)
#ফাতেমা_তুজ

এল এর সাথে টুকটাক কথা শেষ করে ল্যাব থেকে বের হলো ইথান। গবেষনার জন্য বেলার চুল ই রয়েছে। এর বাইরে আর কিছুই নেই ওর কাছে। এমন কি হেবা সমস্ত কাপড় ও পুরিয়ে ফেলেছেন। অত্যন্ত চালাকির সাথে সব টা করেছেন যাতে সব টা এড়িয়ে চলা যায়। ইথান বেশ চিন্তিত। যখন তখন কল আসতে পারে। কোনো রকম প্রমাণ ছাড়া কি করে যাবে? এতো বড় দায়িত্ব টা কে আরেকটু জোরালো ভাবে দেখা উচিত ছিলো। এমন টাই মনে হচ্ছে এখন। তবে বেলার খোঁজ চলছে। আশা করা যায় খুব শ্রীঘই বেলার অবস্থান পাওয়া যাবে। রবার্ট এসে ইথানের পাশে দাঁড়িয়েছে অনেকক্ষণ। হাতে তাঁর মোটা ফাইল। সেটাই দেখছিলো।
” ইথান, আমার মনে হয় না ফাইল গুলো তে তেমন কিছু পাওয়া যাবে। হেবা এতো সহজে প্রমাণ দিবেন না। ”

” হেলা করো না রবার্ট। ছোট ছোট জিনিস ও বড় হয়ে কাজ করে। ”

” হু সেটাই। ”

রবার্ট আবারো কাজে ব্যস্ত হলো। ইথান ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে বেলার পরিচয়ের নীল রঙা ডায়েরী তে। মারিয়া বলেছেন বেলার যখন দেড় বছর তখন থেকে বেলা কে মানুষ করছেন হেবা। এর মানে দাঁড়ায় বেলার মা বাবা মারা গিয়েছেন আঠারো বছর পূর্বে। আর ওনারা ভিন্ন জাতি। খুব সম্ভবত আরবের কোনো এক দেশে। বেলা যে ধর্মে মুসলিম সেটা ও বলেছেন মারিয়া। এমন কি কাল স্বীকার ও করেছেন হেবা। সব টা সহজ হয়ে ও যেন কঠিন লাগছে। রবার্ট সব গুলো ফাইল চেইক করে জানালো–
” বেকারির সব ফাইল এগুলো। তাছাড়া বিশেষ কিছু নেই এতে। ”

” আচ্ছা। শোনো রবার্ট এখনি যাবে এল এর কাছে। আর অন্য কিছু তথ্য খুঁজে পেয়েছে কি না সেটা আমায় ইনফর্ম করবে। ”

” ওকে। ”

” আর একটা কথা কাল আমি দেখা করতে যাচ্ছি। ”

” কিন্তু ইথান, আমরা তো। ”

কথার মাঝে থামিয়ে দেয় ইথান। চোখে মুখে কাঠিন্য ফুঁটিয়ে বলে–
” আমায় আরো কিছু জানতে হবে। আমি পুরো নিশ্চিত ভাবে বলছি স্যার আমাদের থেকে কিছু লুকিয়েছেন। ”

” কিন্তু সেটা কি ইথান? ”

” এটাই জানতে হবে আমায়। তুমি এখনি বেরিয়ে পরো। এল এর সাথে সারাক্ষণ থাকবে আজ থেকে। ”

” আচ্ছা। ”

পাজেল মিলাতে থাকে ইথান। খুব করে বলছে ওর মন এই সব কিছুর পেছনে আরো কিছু রয়েছে। কিন্তু কি রয়েছে সেটাই জানার বিষয়। না হলে সবাই কেন বেলা কে মারতে না চেয়ে পরিপূর্ণ অবস্থা তে চায়। বেলার কাছে কি এমন রয়েছে? ইথান একটু থামলো। মাথার চুল গুলো মুষ্টিবদ্ধ করলো। ভুল হয়ে গেছে একটা। জ্যাকি কে মারা উচিত হয় নি। জ্যাকি নিশ্চয়ই এমন কিছু জানতো যাঁর ফলে কৌশলে ওকে মারা হলো। রাগ হচ্ছে এবার। টেবিলে লাথি মারতেই সেটা উল্টে পরলো কয়েক হাত দূরে। সেদিন জ্যাকি বেলা কে ইথানের আসল চেহারা জানাতে নয় বরং বেলা কে তুলে নিতে গিয়েছিলো। কিন্তু বেলা কে তুলে নিয়ে জ্যাকির কি লাভ হতো? এতো এতো প্রশ্নে পাগলের মতো লাগছে। রহস্যের উপর একজন নয় বহু জনের রহস্য রয়েছে!

এক ঝাঁক পাখির কলরব আর আলোর লুকোচুরি খেলায় ঘুম ভাঙলো বেলার। চোখ খুলতেই এক চিলতে হাসি ফুটলো অধরে। পরিবেশ টা এতো টা মোহনীয় লাগছে যে ওর ইচ্ছে করছে এক দৃষ্টি তে জীবন পার করে দিতে। জানালার পর্দার আড়ালে থেকে নদীর সতেজ, টলমলে পানি চিকচিক করছে। বড্ড লোভ হলো ওর। মাথায় স্কাফ জড়িয়ে বেরিয়ে এলো বাহিরে। নদীর পাড়ে এসে ওকি ঝুঁকি দিল তবে নামার জন্য সাহস নেই অন্তরে।
” পানি তে নামবে নাকি? ”

” উহু এমনি তেই সুন্দর লাগছে। ”

শাফায়াত পাশে এসে দাঁড়ালো। কত গুলো দিন কেটে গেছে। বেলার সাথে অন্য রকম সম্পর্ক। যেন বহু বছরের পরিচিত। বেলা নিজে ও মিশে গেছে সকলের সাথে। শুধু মাত্র জুলফিকার সাহেব এর সাথে তেমন কথা বার্তা হয় না। স্মিথের সাথে দিন রাত আলোচনায় বসেন ভদ্রলোক। বেলা খুব ই মনঃকষ্ট নিয়ে বসে থাকে। হেবা আর বোন এলিজার জন্য বুক ভারী হয় প্রায়। বাসা থেকে লিমা ডেকে চলেছেন। শাফায়াত বলল–
” এখানে নাস্তা করবে বেলা? ”

” কিন্তু কি করে? ”

” আমি মাদুর নিয়ে আসছি। ছোট একটা আড্ডা দিতে দিতে নাস্তা করবো। ”

” গুড আইডিয়া। ”

” তুমি বসো আমি আসছি এখনি। ”

শাফায়াত চলে যেতেই বেলা আরেকটু নিচে নামলো। পাকা করা সিঁড়ি তে পানি গুলো ঝলমল করছে। বেলার ইচ্ছে করছে পা মেলে দিয়েই চোখ বন্ধ করতে। তবে হঠাৎ ই মন খারাপ হলো। একদিন কলেজ শেষে ইথানের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে নদী তে হেটেছিলো সে। অনেক টাই ভিজে গিয়েছিলো সেদিন। ইথানের গগনবিদারী হাসি তে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে ছিলো বেলা। কে জানতো ঐ হাসির ভেতরে লুকিয়ে আছে ছদ্দবেশী!

পঁচিশ বছর পুরনো একটি বিল্ডিং এর কাছে এসে থমকে গেছে ইথান। ভালো লাগছে না ভেতর টা। তবে মনের কোনে জমানো হাজার খানেক প্রশ্ন ওকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। রুদ্ধশ্বাস গুলো লুকিয়ে ব্যস্ত পায়ে ভেতরে প্রবেশ করলো ইথান। চার পাশ থেকে আসছে ক্যামিকেল এর তীব্র গন্ধ! রুমালে নাক চেপে এগিয়ে গেল কয়েক পা। ষাট বছর বয়সী এক লোক ক্যামিকেল নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। তাঁর চারপাশে নেই একটি মানুষ অব্দি। ইথানের উপস্থিতি অনুভব করলেন তিনি। পেছনে না তাকিয়েন বললেন
” ওয়েটিং রুমে বসো। ”

” জী স্যার। ”

নজর বুলিয়ে পাশের ঘরে বসলো ইথান। এসি নেই দেখে কপালে ঘামের সৃষ্টি হয়। তবু ও মুখে নেই বিরক্তির রেশ। মিনিট পনেরো পর আসলেন ভদ্রলোক। গাঁয়ে মোটা কাপড়ের হুডি! সার্বক্ষণিক হুডি তে আগলে রাখেন নিজের পাতলা দেহ কে। ইথান শুধালো না কেন এই গরমে হুডি গাঁয়ে। কারণ সে জানে প্রফেসর আলবার্ট বোল্ড ক্যামিকেল নিয়ে থাকেন সব সময়। যেখানে এসি থেকে ঠান্ডা হাওয়া নয় রীতিমতো বরফ ঝরে।
” বেলার কোনো রকম প্রমাণ পেয়েছো? ”

” দুঃখিত প্রফেসর। ”

” তাহলে কেন এসেছো? ”

” আমার কিছু প্রশ্ন রয়েছে। ”

” বলো। ”

” বেলা কে কেন চাই আপনার? কি এমন রয়েছে তাঁর মাঝে। তা ও কোনো রকম ক্ষতি না করে। ”

” এতো জেনে তুমি কি করবে ইথান? তোমার সাথে আমার যা ডিল হয়েছে সেটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকো। ”

” বাট প্রফেসর– ”

” বাড়ি যাও। আর দ্রুত বেলা কে খোঁজার চেষ্টা করো। এবার আমার প্রুফ চাই ই চাই। ”

ইথান হতাশ ভঙ্গিমায় উঠে দাঁড়ালো। প্রফেসর বোল্ড ভাঙা পা নিয়ে ধীরে ধীরে চলছে। লোক টা এক সাগর রহস্য নিয়ে গঠিত।

হেবা কে খুব ই স্বাভাবিক দেখাচ্ছে। কতো সুন্দর করে সব সামলাচ্ছেন। এমন কি ড্যানির সাথে যে ডিল করার কথা ছিলো সেটা ও করা হয়েছে। মারিয়া খুব ই অবাক হোন এসব দেখে। ইথানের মায়ের সাথে ডিল করা কতো টা উচিত? মাঝে মাঝে ওনার মন বলে বেলার সাথে কিছু হচ্ছে। পরক্ষণেই বিচলিত মন কে শাসন করেন তিনি। বেলার জন্য হেবার করা ত্যাগ গুলো কে অস্বীকার করার উপায় নেই। শুধু মাত্র বেলা কে সুস্থ জীবন দেওয়ার জন্য নিজে সন্তান গ্রহন করেন নি হেবা। বেলা যখন বড় হলো তখন এলিজা কে গ্রহন করেন। সে হিসেবে হেবা কে সন্দেহ করা মানে পাপ! আচমকাই আহ করে চেঁচিয়ে উঠলো মারিয়া। হাতে গরম পানি পরেছে। হেবা বাহির থেকে ছুটে এলেন। বিরক্তি ঠেলে বললেন–
” উফ মারিয়া তুমি কি ভাবনায় পরেছো বলো তো। মন দিয়ে কাজ তো করো। ”

” দুঃখিত। গত কয়েকদিন ধরে শরীর টা ভালো যাচ্ছিলো না। বার বার অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছি।”

” ও আচ্ছা। এখন এতো ভেবো না। ক্যাথির কি অবস্থা? ”

” এখন ঠিক ঠাক। তবে সেসব মাথা থেকে বের করতেই পারছে না। ”

” চিন্তা করো না। ইশ্বর রক্ষা করেছে ওকে। আসলে আমরা সবাই ভুক্তভোগী। ইথান ছেলেটা এমন করবে তা কে জানতো? এখন সবাই সেসব বাদ দিয়ে কাজ করি চলো। ”

মারিয়া মৃদু হাসলো। হেবা বলল–
” আমি মেডিসিন দিচ্ছি তোমায়। ”

” একটা কথা বলবো হেবা? ”

” হ্যাঁ নিশ্চয়ই। ”

” বেলা কে মারতে কেন চায় ওরা? ”

” সেটা তো আমি ও জানি না মারিয়া। তবে আমার মনে হয় প্রপার্টিজ এর জন্য। ”

” প্রপার্টিজ? ”

” হু। বেলার বাবা আব্দুল্লাহ বেশ ধনী লোক ছিলেন। হয়তো তাঁর সম্পদের কোনো অংশ রয়ে গেছে। যাঁর জন্য বেলা কে মারতে চায় ওরা। ”

” কিন্তু এতে ওদের কি লাভ? ”

” সেটা তো আমি ও জানি না মারিয়া। ”

হেবা ময়দা মাখতে নিলেন। মারিয়া ও চুপ হয়ে রইলো। দুজনেই কয়েক মিনিট পর সমস্ত টা ভুলে কাজে গভীর মনোযোগ দিলো। মারিয়া বিশেষ দরকারে একটু আগে ছুটি চাইলো। হেবা প্রশ্ন না করে ছুটি দিয়ে দিলো। এমনি তে ও মারিয়া বেকারির জন্য প্রচুর করেছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here