মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:৪
মমতা হাসান কোনোভাবেই রেহানা মাহমুদকে না খাইয়ে যেতে দিবেন না।সাথে মেঘলা পায়ে ব্যাথায় ককিয়ে উঠছে তবুও রেহানা মাহমুদ কে না খেয়ে যেতে দিবেনা।তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই তিনি রাতের খাবার মেঘলাদের বাড়িতেই খেলেন।রুদ্রও চুপ করে মায়ের পাশে বসে খেয়ে নিল।কিছুটা অপরাধ বোধ হচ্ছে।ও কি জানতো হসপিটালে যাওয়া লাগবে আর এত দেরি হবে তাহলেতো ও মাকে বলেই যেত।যদিও তখন এত কিছু মাথায় ছিল না।তবে মা যতটা রেগে থাকার কথা ততটা রেগে নেই বুঝা যাচ্ছে।
মেঘলাদের বাড়ি থেকে যখন বের হয়েছে তখন মোটামুটি ১১টা বেজে গেছে।রাস্তায় রুদ্র বার কয়েক বলতে চেয়েছে মা আমার ভুল হয়ে গেছে আর কখনো দেরি করবো না।কিন্তু রেহানা মাহমুদ ওর কোনো কথাই শুনলেন না।বাসায় ডুকার সাথে সাথেই রুদ্র মায়ের হাত জড়িয়ে বলল,মা sorry রাগ করে থেকেও না তুমি।আমার ভুল হয়ে গেছে।আমার হসপিটালে যাওয়া ঠিক হয়নি এমন আর হবে না।এবার রেহানা মাহমুদ মুখ খুললেন,একদম ঠিক কাজ করেছিস তুই।আমার ছেলের মত কাজ করেছিস।রুদ্রও ফিক করে হেসে বলল,তারমানে তুমি রাগ করনি?রাগ করিনি যে তা না।রুদ্রর মুখের হাসিটা মিলিয়ে যাচ্ছিল তখনই রেহানা মাহমুদ বলল,প্রথমে রাগ হয়েছিল পরে যখন জানলাম পুরোটা তখন সব রাগ পানি হয়ে গেছে।রুদ্রও আবার ফিক করে হেসে উঠলো।রুদ্রকে বুকে টেনে তিনি বললেন,আমি জানি তো আমার ছেলেটা অন্যদের মতো বাজে কাজে সময় নষ্ট করার ছেলে না।তবে এরপর থেকে কোথাও যাওয়ার আগে একবার মাকে জানিয়ে যাবি,টেনশন হয়তো আমার নাকি?এইরকম আর কক্ষণো হবে না মা।ঠিক আছে এখন হাতমুখ ধুয়ে শুয়ে পর।আজ আর পড়াশুনো করতে হবে না।ঠিক আছে,তুমিও শুয়ে পড়ো মা।রেহানা মাহমুদ আলতো হেসে ছেলের মাথার চুল হাত দিয়ে এলোমেলো করে দিয়ে বললেন,আমার বাচ্চাটা।পরীক্ষাটা শেষ হলেই এইবার তোকে একটা মোবাইল কিনে দিবো,মনে মনে রেহানা মাহমুদ বললেন।
দেখতে দেখতে ওদের এক্সামের দিন চলে এলো।এরমধ্যে মেঘলা আর রুদ্রর খুব একটা কথা হয়নি।রুদ্র পড়াশুনায় ব্যস্ত ছিল তবে মেঘলার খোঁজ নিয়েছে।ওর পা এখন প্রায় ঠিক বললেই চলে।শুধু খুব জোরে বা দৌড়ানোর চেষ্টা করলেই ব্যাথায় ককিয়ে ওঠে।তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে মেঘলাকে একটু বেশিই প্রানউচ্ছল লাগছে।পরীক্ষা নিয়ে ওর যেনো কোনো টেনশন নেই।খুব ভালো প্রিপারশন থাকলেও বোধ হয় এতটা নিশ্চিন্ত থাকা যায় না।এই কয়েকদিন ঘরে বসে মনে হয় খুব পড়াশুনা করেছে।এইসবই ভাবছিল মেঘলার দিকে তাকিয়ে রুদ্র।তুরীর শব্দে রুদ্রের ভাবনায় ছেদ পড়ল।মেঘলার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল।
তোর কি হয়েছে বল তো?
কি হবে?
কয়েকদিন থেকে দেখছি কেমন যেন ভ্যাবলার মত তাকিয়ে থাকিস।
কি?
হ্যাঁ,কি দেখিস আমার দিকে ভ্যাবলার মত তাকিয়ে?তোকে দেখবো আমি!(শব্দ করে হেসে উঠল)
একদম হাসবি না আমি স্পষ্ট দেখছি বুঝলি আমি চোখ খুলেই থাকি।
ঐ তো পেত্নীর মত চেহারা তোর আর তোকে দেখবো!(আবার হাসতে শুরু করলো)(রেগে যাচ্ছে)একদম রাগবি না।
ঠিক আছে আজকে আর ঝগড়া না।সময় হয়ে গেছে হলে ঢুকতে হবে।
হ্যাঁ,চল।
(গল্প করতে করতে ভিতরে যাচ্ছে)
একটা কথা বলত মেঘলা।
কি বল।
তোর কি হয়েছে?
কি হবে?
আমার কাছে লুকাস না।আমি বুঝতে পারছি কিছু একটা হয়েছে।
তুই একটু বেশিই বুঝিস।
মোটেই বেশি না ঠিক বুঝছি।
কি বুঝছিস?
প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই হাসি খুশি মনে হচ্ছে তোকে।
আমার দুঃখী দুঃখী মুখ দেখতে ভালো লাগে বুঝি তোর?এই দেখ করলাম(দুঃখী দুঃখী মুখ করলো)
একদম কথা ঘুরবি না।
তুই আমাকে জেরা করবি নাকি হলের ভেতর যাবি ঘণ্টা পড়ছে শুনিস না?
তোর কি হয়েছে জেনেই ছাড়বো।
বলেই হনহন করে চলে গেল রুদ্র।মেঘলা সেদিকে তাকিয়ে হাসলো।এই ছেলেটার থেকে কিছু লুকানো যায় না ঠিক বুঝে যায়।মেঘলাও ওর হলের দিকে গেলো।
এক্সাম শেষ এ দুইজনের দেখা হলেও এই ব্যাপারে কথা বলতে পারলো না।কারণ সাথে মেঘলার বাবা ছিল।এইভাবেই চলছিলো দিন গুলো।মেঘলাকে এই ব্যাপারে কিছু বললেই এড়িয়ে যায়।রুদ্রও আর জোর করলো না।এক্সাম শেষ হলে সময় নিয়ে কথা বলা যাবে।আর ও যতটা জটিল ভাবছে তেমন জটিল কিছু হয়তো হয়নি।একটু বেশিই ভাবছে মেঘলাকে নিয়ে।বরাবরই ভাবে তবে ইদানিং যেনো একটু বেশিই ভাবে।কেনো বুঝে পায় না রুদ্র।
অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটি এলো।মেঘলা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।হ্যাঁ,আজ ওদের এক্সাম শেষ হলো।এতদিন যেনো একটু স্বস্তি পেল মেঘলা।আজ আর মুবিন হাসান ওদের সাথে যাবেন না।আজ ওরা সব বন্ধুবান্ধব মিলে খাওয়াদাওয়া করবে আড্ডা দিবে।ওদের মাঝে থেকে উনি কি করবেন?তাছাড়া রুদ্র আছে ঠিক মেঘলাকে বাসায় পৌঁছে দিবে তাই আর টেনশন এর কিছু নেই উনি চলে গেলেন।
মেয়ে মানুষ মানেই ফুচকা খেতেই হবে।মেঘলা অন্যদের থেকে একটু এগিয়ে তাই ওর এক দুই প্লেট ফুচকা খেলে হয় না।গপাপপ চার থেকে পাঁচ প্লেট ফুচকা খেয়ে নিব আর তার ফলস্বরূপ সারাদিন গ্যাসট্রিক এর ব্যাথায় কষ্ট পাবে।তবু সে খাবে।আজ তার ব্যতিক্রম হলো না।রুদ্র শুধু অবাক হয়ে ওর খাওয়ার দিকে তাকিয়ে দেখছে আর ভাবছে যে মেয়ে কোনোদিন চার লোকমার উপর পাঁচ লোকমা ভাত খেতে পারে না সে কি করে এতগুলো ফুচকা খেয়ে??মেঘলার খাওয়ার মাঝে একবার রুদ্রর দিকে চোখ গেল।ছেলেটা দিন দিন কেমন যেন হেবলা হয়ে যাচ্ছে।এখনো কেমন করে তাকিয়ে আছে যেনো জীবনে ওকে দেখেনি।মেঘলা রুদ্রকে তাড়া দিলো।কিরে তুই কি দেখছ?এখনো এক প্লেট শেষ করতে পারলি না?আমার তো চার প্লেট খাওয়া শেষ।রুদ্র দ্রুত চোখ ফিরিয়ে বলল,আর খেতে পারছি না বলেই যেই প্লেটটা রাখতে যাবে অমনি খপ করে মেঘলা ওর হাত থেকে নিয়ে বলল,এই জিনিস কেউ নষ্ট করে?আল্লাহ পাপ দিবো তোরে।তুই না পারলে আমি আছি না?বলেই রুদ্রর প্লেট থেকে খেতে শুরু করলো।রুদ্র এবার সত্যিই হেবলার মত মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে।মেঘলা তা লক্ষ করে বলল,এমনে তাকাইয়া থাকিস না নজর লাগবো।
রুদ্র হাসলো।কিছু বললো না।
কালকে বিকালে একবার বাসায় আসিস।
কেন?
কেন মানে?
না মানে বিশেষ দরকার?
দরকার না থাকলে বুঝি আসা যাবে না?
যাবে না কেন?
তাইলে?
আমি কালকে সকালে গ্রামে যাবো কিছু কাজ আছে।
সেটা আগে বলবি তো?
বলার সময় কই দিলি?
আচ্ছা ছাড় তাহলে আজকে বিকালে আয়।তোর সাথে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
গুরুত্বপূর্ণ?
হুমম..
তাহলে এখনই বল।
না সবার সামনে বলা যাবে না।বলেই ফিক করে হাসতে লাগলো।
রুদ্রর কাছে সে হাসি বড় রহস্যময় মনে হতে লাগলো।
চলবে……..
(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।)