মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:১১
রুমের ভিতর দম বন্ধ হয়ে আসছে।কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না রুদ্র এমনটা করতে পারে।কি করে পারলো এমন কাজটা করতে??আমিতো ওকে নিজের সবচেয়ে ভালো বন্ধু ভাবি।ও তো আমার বেস্টফ্রেন্ড তাহলে কেনো??আর আব্বু আম্মুও ওর সাথে মিলে সিদ্ধান্ত নিবে কেনো?আমার কথার কোনো গুরুত্ব নেই?রুদ্র যা বলবে তাই করবে?কেউ আমাকে ভালোবাসে না।সীমান্ত ঠিকই বলছে রুদ্র চায় সবার চোখে আমাকে জিরো বানাতে আর নিজে হিরো হয়ে থাকতে।আমিতো কল্পনাও করতে পারি না রুদ্র আমার আব্বু আম্মুর ব্রেইন ওয়াশ করছে।ছি!রুদ্র তুই কি করে পারলি এমনটা?কি করে?মেঘলা ফোন দুইটার দিকে তাকিয়ে কাদঁছে।সত্যিই গতকাল আব্বু আম্মু দুইজনই রুদ্রর সাথে কথা বলেছে।অনেকক্ষণ ধরেই কথা বলেছে।এইটুকু সময়ের ভিতর ভালোই একটা কারণ দাড়া করিয়ে দিয়েছে রুদ্র।আর আব্বুও আমাকে তাই বললো!!ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদঁছে মেঘলা।কারো পায়ের শব্দ পেতেই ফোনগুলো রেখে চোখ মুছে বের হয়ে যাওয়ার সময় মায়ের মুখোমুখি হয়ে গেল।মমতা হাসান এইসময় উনাদের রুমে মেঘলাকে দেখে স্বাভাবিকভাবেই জানতে চাইলেন,
কিছু বলবি?
না,বলেই চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
পিছন থেকে মমতা হাসান আবার বললেন,তাহলে এই রুমে এলি….
এই রুমেও কি আসা বারণ আমার?ঠিক আছে আমি আর আসবো না।বলেই হনহন করে হেঁটে চলে গেল।
আমি সে কথা কখন বললাম……মমতা হাসান বোকার মতো চেয়ে আছেন সেদিকে।
শুক্রবার আজ।সকাল থেকেই ছটফট করছে কখন মোবাইল কিনতে যাবে।কিন্তু কারো কোন হেলদোলই নেই।মেঘলা ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখে বাবা পেপার পড়ছেন।মেঘলা পাশে গিয়ে বসলো।মুবিন হাসান এক ঝলক সেদিকে তাকিয়ে পেপার পড়ায় মনোযোগ দিলেন।মেঘলা অধৈর্য্য হয়ে নিজেই বলতে শুরু করল।
আব্বু আমরা কখন বের হবো?
বিকেলের দিকে।
ঠিক আছে আমি রেডি হয়ে থাকবো।
মুবিন হাসান কিছু বললেন না।
মেঘলা খুশি মনে চলে গেল।
মমতা হাসান কিছু বলছেন না।তিনি স্বামীর উপর খুবই বিরক্ত।কোথায় মেয়েকে বুঝাবে তা না মেয়েকে নিয়ে এখন ডেং ডেং করে যাবে ফোন কিনতে।একবেলার খাবার জোগাড় করতে জান যায় আর সে মেয়ের সব আবদার মেনে নিচ্ছে।কিছু বলতেও পারছে না।বললেই এখন দুচারটে কড়া কথা শুনিয়ে দিবে আবার পুরো ব্যাপারটা হজমও করতে পারছেন না।তাই দাতে দাত চেপে সহ্য করছেন।
হ্যালো…
…..
কে বলছেন??
…….
কথা বলছেন না কেনো?
…….
হ্যালো!!কে আপনি??
তোমার জান গো আমি।
আমার কোন জান?
কোন জান মানে?এই তোমার কয়টা জান??
আমার জান যে কয়টাই হোক আপনি কে সেটা বলেন।
মেঘলা এবার নাক টেনে টেনে কান্না শুরু করলো।তুমি আমাকে চিনতে পারছো না!!তোমার জান তো আমি জানতাম একটাই আর সেটা আমি।এখন এইসব কি বলছ??
এতক্ষণে সীমান্ত বুঝতে পারলো এইটা মেঘলা।এতরাতে মেঘলা কি করে ওকে ফোন করছে?সত্যিই কি ফোন কিনে দিল নাকি?সে যাই হোক আমি আমার মত কাজ করি।
মেঘলা ওপাশ থেকে সাড়া না পেয়ে ফোনটা কেটে দিলো।
খুব কান্না পাচ্ছে মেঘলার।কিসব বলছে ও!!এইসবও শুনার ছিল??ও আমাকে চিনতে পারলো না?পরক্ষণেই ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠলো।ফোনের দিকে এক পলক তাকিয়ে অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিলো।কি বললো এইসব ও?এর পর আমি ওর ফোন রিসিভ করবো?কখনোই না।ফোনটা সাইলেন্ট করে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।কিন্তু বেশিক্ষণ শুয়ে থাকতে পারলো না।চোখ মুছে বসলো।তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলে এখনো বেজেই চলেছে।রিসিভ করে ফোনটা কানে ঠেকালো।
জান sorry…
কি জন্য?
তোমার সাথে মজা করলাম তাই sorry.
মজা!!
হুম মজাই তো।কিন্তু তুমিতো বুঝো না।
তুমিতো আমাকেই চিনোই নাই তাহলে মজা কেমনে করলা?
আরে আমার জানটা এত বোকা না কি বলবো!!
কিহহহহহ….
তা নয়তো কি?আমি আমার জানটাকে চিনব না?ভাবলে কি করে?
তার মানে তুমি আমাকে চিনতে পারছো?
হুম না চিনলে অচেনা একটা মেয়ের সাথে কেনো মজা করতে যাবো?আমি কি সেরকম ছেলে?বলো?
সত্যি বলছো?
সত্যি সত্যি তিন সত্যি জান।এইবার চোখ মুছে হাসত।
তুমি জানলে কি করে আমি কাদছিলাম?
আমার জান কাদবে আর আমি টের পাব না ভাব কি করে?
মেঘলা হাসলো।বুকের উপর থেকে বড় একটা পাথর সরলো যেনো।
শুরু হলো মেঘলা আর সীমান্তের রাত জেগে প্রেমালাপ।সবাই ঘুমানোর পর থেকে শুরু করে একদম ফজরের আজান পর্যন্ত চলে এই প্রেমালাপ।
মেঘলার দিন কাটে এখন সীমান্তকে নিয়ে।কখনো ফোনে কথা বলে তো কখনো টেক্সট করে।আর সপ্তাহে তিনদিন ওদের দেখা হয়।তবে মাঝেমাঝেই রাতে সীমান্তর ফোন অফ থাকে।অবশ্য পরদিন সকালে টেক্সট করে বলে সারাদিন অনেক কাজ ছিল ফোনে চার্জ দিতে পারেনি।তাই রাতে চার্জে লাগিয়ে নিজেও একটু ঘুমিয়ে নেয়।সারাদিনের ক্লান্তিতে একটু তো ঘুম দরকার।মেঘলাও খুশি মনে মেনে নেয়।ঠিকইতো ওর তো একটু ঘুম দরকার।সারাদিন কত কাজ থাকে তারপর রাত জেগে কথা বলে।আমিতো দিনে ঘুমানোর সময় পাই ওতো তাও পায় না।তবে রাতে যেদিন কথা হয় না সেদিন খুব খারাপ লাগে।ঘুম আসতেই চায় না মেঘলার।যেনো নেশা হয়ে গেছে রাত জেগে সীমান্তর সাথে কথা বলার।
রুদ্র খুব ব্যস্ত দিন কাটছে।পারিবারিক ঝামেলাগুলো খুব বেশি সমালোচনামূলক।একজন বলে এইটা তো অন্যজন আরেকটা।একজনের কথা শুনলে অন্যজন ক্ষেপে যায়।খুব বেশি অস্বস্তিকর।রেহানা মাহমুদ খুব বুদ্ধি করে সবদিক সামলানোর চেষ্টা করছেন আর তার সব কাজে ঢাল হয়ে আছে রুদ্র।স্বামীর শেষ স্মৃতি এই বাড়িটা বেহাত হতে দিবেন না তিনি।কিন্তু আত্মীয়দের কথা উনারা এইখানে থাকে না তাহলে বাড়ি রেখে কি হবে?এইসব নিয়ে ঝামেলা।তবে শুভাকাঙ্ক্ষীরও অভাব নেই।বিভিন্ন উরো খবর নিয়ে আসেন তারা।রেহানা মাহমুদ হাসি মুখে তাদের কিছু কথার জবাবও দিয়ে দেন।রুদ্রও মাকে দেখে দেখে সেসব আয়ত্ত করে নিচ্ছে।এইসব ব্যাপারে আলোচনা করার মতো এই মুহূর্তে কেউ নেই।থাকবে কি করে আত্মীয়রা ওদের বিপক্ষে।একমাত্র মুবিন হাসান এর সাথে ফোনে টুকটাক আলোচনা করেন রেহানা মাহমুদ।সেই সূত্রেই অনেকক্ষণ ধরে ফোন কথা বলা হয় রুদ্রর ফোন থেকে।ঐদিকের ঝামেলা মিটলেই রুদ্ররা ফিরে আসবে।তবে এই কয়েকদিনে একবারও মেঘলার সাথে রুদ্রর কথা হয়নি।রুদ্র কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু মেঘলা বলেনি।মেঘলা ফোন কিনেছে শুনে মুবিন হাসান এর থেকে ওর নাম্বার নিয়ে কল করেছে কিন্তু মেঘলা রিসিভ করেনি।এত এত টেনশনের মাঝেও মেঘলার চিন্তা মাথা থেকে যায়ইনা রুদ্রর।যাবে কি করে মেঘলা যে মেয়ে কি থেকে কি করে বসে কোনো ঠিক আছে নাকি ওর।এত অবুঝ একটু চোখের আড়াল হলেই ভয় হয় না জানি কি করে বসে।তার থেকেও বেশি ভয় হয় ওর এই ছেলেমানুষীর সুযোগ না আবার কেউ নেয়।
চলবে………
(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে এবং গল্প তত সুন্দর হবে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)