মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা উম্মে হাবিবা তনু পার্ট:২৪

0
388

মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:২৪

মেঘলার হাত পা কাপছে।
সাবিবা টলমলে পায়ে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে।কপাল বেয়ে রক্ত পড়ছে।গাল লাল হয়ে আছে।উস্কোখুস্কো চুল। টলছে যেনো এক্ষুনি পড়ে যাবে।
মেঘলা কোনরকমে সাবিবাকে ধরে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো।
ভিতরে ঢুকে বড় একটা ধাক্কা খেল।
সীমান্ত হাত চেপে ধরে ফ্লোরে বসে আছে।হাত থেকে রক্ত পড়ছে।
বুঝতে বাকি নেই এইখানে কি হচ্ছে।
মেঘলা সাবিবাকে খাটে বসিয়ে দিল।তারপর ছুটে নিজের ঘরের দিকে গেলো।ফার্স্ট এইড বক্স খুঁজতে লাগলো।এই ঘরেই বক্সটা দেখেছিল।অনেক খুজে তবে পেল।সামনেই ছিল।কিন্তু মাথা ঠিক না থাকায় এত খুঁজতে হলো।
ভালো করে সাবিবার কপাল পরিষ্কার করে দিলো।অদক্ষ হাতে কোনো রকম ব্যান্ডেজ করে দিল।তারপর একটা নাপা এক্সট্রা খাইয়ে জোর করে শুইয়ে দিল।

এতক্ষণে সীমান্তর দিকে তাকালো।
এক মনে ভাবছে হাতটা দেখবে।আরেক মনে ভাবছে না যাবে না।
আসলে ওর মনে ঘৃনা জন্ম নিলেও কোথাও গিয়ে একটা মায়া কাজ করে।হয়তো ভালোবাসে বলে।
হয়তো বিবেকের কারণে এখন হাতটা ব্যান্ডেজ করে দিতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতির জন্য পারছে না। দোনোমনায় ভুগছে।
সীমান্ত করুণ চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
খুব কষ্ট হচ্ছে।বিবেক জিতে গেলো।মায়াও বটে।হয়তো ক্ষানিক ভালোবাসাও আছে।
এগিয়ে গিয়ে সীমান্তর হাত ধরলো।ক্ষতটা দেখে নিয়ে ও ওর কাজ করলো।একবারও সীমান্তর দিকে তাকালো না।
সীমান্ত অনেক কিছু বলছে,বুঝাতে চাইছে।
বুঝাতে চাইছে ভাই বোনে এমন হয়ই।আজকে রাগারাগি হইছে কালকে ঠিক হয়ে যাবে।তুমি এইসব নিয়ে ভেবো না।
অনেকরকমভাবে বুঝাতে চাইছে ওরা ভাই বোন।
মেঘলা একটা শব্দও করলো না।
সাবিবা সব শুনছে আর চোখের পানি ফেলছে।
একটা মানুষ কি করে এত নিচে নামতে পারে।
মেঘলা বা সাবিবা কারোরই কোনো ধারণা নাই।এই লোকটাকে না দেখলে হয়তো জানতোও এমন জানোয়ার মানুষও হয়।

সীমান্ত তখনো বলেই চলেছে।
মেঘলা ব্যান্ডেজ হয়ে যেতেই উঠে দাঁড়ালো।
সীমান্ত কিছুটা আশাহত হলো।মেঘলা ওর কথা উপেক্ষা করছে।মানতে পারছে না কিছুতেই।সীমান্তও উঠে দাঁড়ালো।মেঘলার হাতটা ধরলো,
মেঘলা ঘরে চলো।
হাতটা ছাড়িয়ে নিল।কিন্তু মুখে কিছু বলল না।
তুমি আমার কথা কি শুনতে পাচ্ছ??ঘরে চলো।
মেঘলা এইবার ঘুরে দাঁড়ালো।একদম সীমান্তর মুখোমুখি দাড়িয়ে ওর চোখ বরাবর তাকালো।
সীমান্ত যেনো সে চোখের দৃষ্টিতে কিছুটা ঘাবড়ে গেল।এক কদম পিছিয়ে দাড়ালো।দুর্বল গলায় শুধু বললো,
ঘরে চলো,সব বলছি…
কি বলবে??
এমন স্ট্রেট জবাব আশা করেনি।আরও একটু ঘাবড়ে গেল।
চুপ হয়ে গেলে যে??কি বলবে??
আ…আ…আ..জ..জ..ক..ক….
তোতলাচ্ছ কেন??ওহ আচ্ছা তুমি আজকের ঘটনাটা আমাকে বলতে চাইছো??
হু..ম…
আমি তো আজকের ঘটনা জানতে চাই নাই।চাইবও না।
সীমান্ত স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।এ হয়তো ভাবছে সত্যি ভাইবোনের ঝগড়া…মুখে একটা বিকৃত হাসি ফুটে উঠল।
ঠিক আছে জান।তোমাকে কিছু শুনতে হবে না ঘরে চলো জান।বলেই মেঘলার হাতটা ধরে সামনের দিকে হাঁটতে নিল।
এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চিৎকার করে উঠল,
আমার গায়ে যদি ঐ নোংরা হাত দিয়ে আর একবার স্পর্শ করিস তাহলে তোর হাত আমি কেটে ফেলবো।
সাবিবা বসা থেকে দাড়িয়ে পড়ল।কিছু মুহূর্ত পর উঠে এসে মেঘলাকে থামাতে চাইছে।কিন্তু মেঘলা ওকে উপেক্ষা করে একইরকমভাবে দাড়িয়ে আছে।
সীমান্ত স্তম্ভিত হয়ে দাড়িয়ে পড়লো।এমন কিছু মোটেই আশা করেনি।চোখে মুখে শঙ্কা ফুটে উঠেছে।কাপা কাপা গলায় বলল,কি বলছো এইসব??
কি বলছি??তাই না??এখনো তো কিছু বলিনি…
আমি কিছু বুঝতে পারছি না….
আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি..

সাবিবা ওকে থামাতে চাইছে।কি পাগলামি শুরু করলি??যা ঘরে যা।
আপু আমাকে তুমি থামাতে পারবে না।তুমি চুপ করে এইখানে বসো।বলেই বিছানায় বসিয়ে দিল।
সাবিবা তখনও চেষ্টা করছে থামাতে।কিন্তু না মেঘলা ওর কোনো কথাই শুনছে না।অঝোরে কাদঁছে।কাদা ছাড়া যে ওর আর কিছু করার নেই।
মেঘলার দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে সীমান্তর দিকে।
সে দৃষ্টি সীমান্তকে ভৎসো করে দিচ্ছে যেনো।ঠিকভাবে দাড়াতেও পারছে না।
এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন?কি হলো তোমার?এমন কেনো করছ তুমি??
আমি করছি নাকি তুই??
মেঘলা বাড়াবাড়ি করছো কিন্তু…তুই তোকারি করছো আমাকে।আমি তো তোমার স্বামী….
এইটাই আমার জীবনের বড় ভুল..তুই আমার স্বামী!!
কি বলতে চাইছো??
কেনো খেললি আমার জীবন নিয়ে??আমার অনুভূতি নিয়ে??আমার আবেগ নিয়ে??আমার ভালোবাসা নিয়ে??কেনো??বল….
কি যাতা বলছো তুমি??আমি কেনো এইসব নিয়ে খেলবো??
কেনো খেলবি???যে কারণে আপুকে নিয়ে খেললি।ঠিক সে কারণে আমার সাথেও।কিন্তু সেই কারণটা কি??
আমি কিছু বুঝতে পারছি না।আমি ওকে নিয়ে কেনো খেলবো??তোমাকে নিয়েই বা কেনো খেলবো??
তার উত্তর তুই দিবি….
দেখো মেঘলা তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।
আমার কোনো ভুল হচ্ছে না।
হচ্ছে,মেঘলা শোনো প্লিজ জান…
একদম আমাকে জান বলবি না,আমার নামও মুখে আনবি না।
ঠিক আছে কিন্তু তুমি আমার কথাটা তো শুনো।
হ্যাঁ,শুনতেই চাচ্ছি বলল।
থমথমে মুখে চুপ করে রইলো কিছুক্ষণ।মেঘলার দৃষ্টি বারবার ভৎস করে দিচ্ছে।কি বলবে গুছিয়ে নিতে পারছে না।
শেষ বলা??জানি তোর মত ছোটলোকের বলার কিছু থাকতে পারে না।ঘরে বউ থাকতে কি করে অন্য কাউকে…..কথা শেষ না করে চোখ বন্ধ করে নিল।গলা ধরে আসছে।
ঘরে বউ থাকতে মানে??কি বলছো??
কি বলছি??সাবিবার দিকে ইঙ্গিত করে বলল,আপু কে??তোর বউ….
তোমার মাথাটা গেছে..তুমি ভুলে গেছ ও আমার ছোট বোন…
ঠাসসসসসস……লজ্জা করে না বউকে বোন বলতে??তোর মত নিচ চরিত্রহীনকে আমি ভালোবাসছিলাম ভাবলেই ঘৃনা হয়।দিনের পর দিন ঠকিয়ে গেলি??কি ভাবছিস??সত্যিটা কেউ জানতে পারবে না??
গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে সীমান্ত।
তোর জন্য সব ছেড়ে চলে আসলাম..আর তুই এত বড় প্রতারক???তোকে আমি জেলের ভাত খাওয়াবো।
……….
তোর জন্য আমি আমার মা বাবাকে হারালাম।তোর জন্য আমি তাদের কষ্ট দিলাম।তোর জন্য সবাইকে ভুল বুঝলাম।তোর জন্য আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে ভুল বুঝলাম।রুদ্রর গায়েও হাত তুললাম।তোর জন্য…..
খুব জ্বলছে??খুব??ওই ছেলের কথা খুব মনে পড়ছে??আমাকে দিয়ে হয়না তোর??এখন রুদ্রকেও লাগবে??
ছি তুই এত নিচ!!!
হ্যাঁ,আমি নীচ।আমি চরিত্রহীন।আমি খারাপ।কিন্তু তোকে আমি আমার খারাপ রূপটা একবারের জন্যও দেখাইনি।এখনো সময় আছে আমাকে বাধ্য করিস না খারাপটা তোর সামনে আনতে সহ্য করতে পারবি না।
তোর মত অমানুষ এর কোনো রূপই আমি দেখতে চাই না।তোর ছায়াও যেনো আমাদের দুইবোনের উপর না পরে।
সীমান্ত হাসলো।খুব হিংস্রভাবে হাসলো।তোদের দুইজনের এইবার কি হয় দেখ…
বলে আর একমুহুর্ত সেখানে দাড়ায় না।
মেঘলা নিজের জায়গায় অটল হয়ে দাড়িয়ে আছে।
সাবিবা অঝোরে কাদঁছে।কতবড় ভুল যে আজ করলো মেঘলা….ওর সাথে ঘটে যাওয়া অতীতের পুনরাবৃত্তি না হয় মেঘলার সাথে!
কিছুক্ষণ পর মেইনডোর খুলার শব্দ পেলো।পরক্ষণেই বাইরে থেকে গেট লক করার আওয়াজ পেলো।
বুঝতে বাকি নেই আর সীমান্ত এই শেষরাতে ওদেরকে ভিতরে বন্দী করে রেখে বেরিয়ে গেলো।

চলবে……………

(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে এবং গল্প তত সুন্দর হবে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here