মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:৪২
আঙ্কেল!!
রুদ্র….
জি আংকেল বলুন।
মেঘলা ফিরে এসেছে।
(ঠিক শুনল!!নাকি পুরোটাই ভ্রম!!)
ওপারে অপার নিস্তব্ধতা।।
মেঘলা সবে মুখ খুলতে গিয়েও থমকে গেল।রুদ্রকে সারপ্রাইজ দেওয়ার আগে নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেলো।হটাৎ করেই চিনচিনে ব্যাথাটা ভয়াবহ রূপ নিলো।সর্বাঙ্গের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেনো বাথারা ছড়িয়ে পড়ছে।মোচড়ে উঠছে দুর্বল শরীরটা।
“ওই নামটা আমি শুনতে চাই না।”
রুদ্রর এইটুকুই কথাই যথেষ্ট ছিল মেঘলার জন্য….
আমি ভুল শুনেছি।আমি ভুল শুনেছি।বিড়বিড় করলো।
মুবিন হাসান মেঘলার দিকে তাকিয়ে ক্ষীণ স্বরে বললেন,তোমার সামনে আর কখনোই মেঘলার নাম নিবনা।তুমি তো ওর জন্য অনেক করেছিলে তাই ভাবলাম জানাই ও ফিরে এসেছে আমাদের কাছে।কথাটুকু বলেই খট করে ফোনটা কেটে দিলেন।
মেঘলার সিজার এক্ষুনি হবে।
বাড়ি ফিরেই গুম হয়ে বসে আছে রুদ্র।
বাইরের নোংরা কাপড় গায়ে কুটকুট করছে।
লম্বা একটা শাওয়ার নেয়া দরকার।
অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে তবু উঠতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
রুদ্র বাড়ি ফিরে ঘরে ডুকল তারপর আর কোনো সারা শব্দও পাওয়া যাচ্ছে না।এত তাড়াতাড়ি তো বাড়ি ফিরে না আর অন্যদিন বাড়ি ফিরে মায়ের সব খবর নিয়ে ১০মিনিটে ফ্রেশ হয়ে খাবার দেও খাবার দেও করে মায়ের মাথা খারাপ করে ফেলে।অথচ আজ তার কোনো পাত্তা নেই??অফিসে কোনো সমস্যা হয়নি তো?রেহানা মাহমুদ চিন্তা করতে করতেই রুদ্রর ঘরে গেলেন।ওভাবে গুম হয়ে বসে থাকতে দেখে বুঝলেন কিছু একটা সমস্যা হয়েছে।বিড়াল পায়ে রুদ্রর পাশে বসলেন।
বাড়ি ফিরে একবারও মায়ের কাছে গেলি না যে আজ??
খুব টায়ার্ড লাগছে।
শরীর কি খারাপ??বলেই রুদ্রর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেখলেন।
মা শরীর ঠিক আছে।
কিছু কি হয়েছে??
কি হবে??
অফিসে কোনো সমস্যা??
না মা কোনো সমস্যা হয়নি।
ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে আয় আমি খাবার দিচ্ছি।
খাবো না ক্ষিধে নেই।
ক্ষিধে নেই!!!
বাইরে খেয়ে এসেছি।
মাকে মিথ্যা বলতেও শিখে গেছিস!
রুদ্র অসহায় মুখ করে মায়ের দিকে তাকালো তারপর আবার মাথা নিচু করে বসে রইল।
কি হয়েছে মাকে বল…
রুদ্র মাথা নিচু করে বললো,মেঘলা বাড়ি ফিরে এসেছে।
রেহানা মাহমুদ খুশি হয়ে বললেন এইটাতো সুসংবাদ।এতদিনে মেয়েটা বুঝলো কত বড় ভুল করেছে।আলহামদুলিল্লাহ।
সুসংবাদ??তোমার কি মনে হয় ও একা ফিরে এসেছে??ওর ঐ লম্পট বরকেও নিয়ে এসেছে।
তোকে কে বললো??
আঙ্কেল ফোন দিল।
কি বলেছে??
কি আর বলবে??বলছে মেঘলা ফিরে এসেছে।আমিও বলে দিছি আমি ওর নামও শুনতে চাই না।
এ আবার কেমন কথা??
আমি জানি না।আমি মেঘলার ওই লম্পট বরকে সহ্য করতে পারবো না।
একটা কথা জিজ্ঞেস করি ঠিক ঠিক উত্তর দিবি??
কি??
তুই কি মেঘলাকে ভালোবাসিস??
মায়ের কথায় কি ছিল রুদ্র জানে না।কিন্তু কোনো উত্তর দিতে পারলো না।মায়ের সামনে বসে থাকতেও খুব অস্বস্তি হচ্ছে।
মা আমাকে একটু একা থাকতে দিবে!
রেহানা মাহমুদ কিছু না বলে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন।
রুদ্র বুঝলো মা আরও কিছু বলতে চায় কিন্তু সেসব সে শুনতে চায় না।তার উত্তরও রুদ্রর কাছে নেই।
সময় অপচয় না করে রুদ্র ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো।
মেঘলার সি সেকশন এর সব কিছু রেডী।
মেঘলা ওর মায়ের থেকে বাবার থেকে ক্ষমা চেয়ে বিদায় নিল।
ওর বলার ভঙ্গিতে কেপে উঠছে মমতা হাসান এর বুকের ভিতরটা।মেয়েটা এমনভাবে বলছে কেনো???
তিনি নামাজের ঘরের দিকে ছুটে গেলেন।মেঘলার অপারেশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি নফল নামাজ আদায় করবেন।
সাবিবার হাত ধরে বললো,আপু তুমি তো আমার মেয়ের বড়মা।আমার কিছু হয়ে গেলে তুমি ওকে তোমার বুকে আগলে রাখবে কথা দেও!
একদম এইসব বলবি না তোর কিচ্ছু হবে না।
আপু আমি ভালোই বুঝতে পারছি আমার অবস্থা।তুমি কথা দেও প্লিজ আপু।
সাবিবা কাদতে কাদতেও শাসিয়ে বললো,এই এত কথা কিসের??বাবু কি তোর একার??তুই না বললেও মেয়ে আমার।তোকে কথা দিলাম আমাদের মেয়েকে আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে বুকে আগলে রাখব সাথে তোকেও।তুই মনে সাহস রাখ।কিছু হবে না আল্লাহ ভরসা।
এইবার আমি মরেও নিশ্চিন্ত আপু।
একদম বাজে কথা বলবি না।
মেঘলা হাসার চেষ্টা করল।আপু আরও একটা কাজ আছে তোমার।
আমি সব করবো।আগে তুই সুস্থ হয়ে ফিরে আয়।
আপু শোনো তো….
বল।
আমার টেবিলে একটা ডাইরি আছে।ওর মধ্যে একটা চিরকুট আছে।যদি কখনো রুদ্র আসে ওকে দিও।আর বলো মেঘলার জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল এমনকি সারাজীবন তাই ছিল।কিন্তু ওর চোখের ভাষায় শেষের দিনগুলোতে আমি আমার বন্ধুকে খুঁজে পাইনি।ওর আজকের শেষ কথাটায়ও ভেসে এসেছিল অভিমানী কোনো প্রেমিকের অজস্র অভিমান।তবে কি মেঘলা তার প্রিয় বন্ধুকে বহু আগেই হারিয়ে ফেলেছিল??
সাবিবা স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইলো।এই মেঘলাকে ও চিনে না।এতটা বড়ো কবে হয়ে গেল??পরিণত চিন্তা!!সাবিবা অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হুইল চেয়ারের দিকে।
অসম্ভব রূপবতী নারী মাতৃত্বের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।তবু তার মুখের লাবণ্য যেনো কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।চোখের দৃষ্টি যতটা তীক্ষ্ণ ততটাই পরিণত মুখভঙ্গি।অদ্ভুদ সুন্দর লাগছে মেঘলাকে।মেঘলা আকাশের মত মোটেই মলিন নয় বরং রুদ্র উজ্জ্বল আকাশের মত স্বচ্ছ আর তেজস্বী।
হঠাৎই সাবিবার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো,মেঘলা আকাশে তো রুদ্রই ভরসা।হ্যাঁ তো,মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা।
এমন একটা লিখা কোথাও দেখেছিল।কিন্তু মনে পরছেনা।কোথায়??কোথায় দেখেছিলাম??কিছুতেই মনে পড়ছেনা।না মনে আসছে না।
শাওয়ার এর নিচে দাড়াতেই এক পশলা ঠান্ডা পানি ঝুমঝুমিয়ে ভিজিয়ে দিল রুদ্রকে।সারাদিনের শরীরের সমস্ত ক্লান্তি পানির সাথে ধুয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু মনের ক্লান্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুণ।আজ বারবার খুব বেশি সেইদিনটার কথা মনে পড়ছে।সেই দিনটার জন্যই আজ এত অভিমান এত রাগ হয়।মেঘলাকে ঘিরে এক অদ্ভুদ অনুভূতি হয়।
মাঘের হার কাপানো শীতে কি দরকার ছিল ভিজার??না সেতো আর কারো কথা শুনে না।অবাধ্য অসভ্য বাদর মেয়ে।সেদিন যে কি হলো আমার…..মেঘলার মায়ায় পরে গেলাম।যত দিন যাচ্ছে ততই ওকে ঘিরে এক নিষিদ্ধ অনুভূতি হচ্ছে।মেঘলা যতই বাড়ি ফিরে আসুক সাথে তো ওর বরকে নিয়েই এসেছে।হয়তো আঙ্কেল সবটা মেনে নিয়েছে।তবে আমি কেনো মানতে পারছি না??কেনো অন্যের স্ত্রীকে ভালোবাসতে ইচ্ছা হয়!!কেনো মন প্রাণ হৃদয় জুড়ে মেঘলাময় শিহরণ হয়!!কেনো পাগলকারা ভালোবাসা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে আমায়!!মেঘলা তুই কি বলতে পারিস কেনো…কেনো তোকে ভালোবাসি???
শাওয়ারের পানির সাথে আজও লবণাক্ত পানির বিসর্জন হয়ে গেল।
আজকের রাতটা বড্ড বেশি নিস্তব্দ।নিকোষ কালো রাতের নিঃসঙ্গতা আজ যে দাবানলে রূপ নিয়েছে।রুদ্রর ভিতরটা পুড়িয়ে আজ ছারখার করে দিচ্ছে।যত চায় ভুলে যেতে ততই যেনো বারবার মনে পড়ে।দিনকে দিন অনুভূতিরা বাঁধন হারা হয়ে যাচ্ছে।বহুদিনের পুরনো গিটারটা তার আজ রাতের সঙ্গী।টুংটাং করে এলোমেলো সুর তুলার চেষ্টা করছে।তবু সে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।হঠাৎই করুণ সুর বেজে উঠলো গিটারের তার সাথে রুদ্রর গলায় ভেসে গেলো এক নিধারুন করুণ সুরের লোহমা।
কেন এই নিঃস্বঙ্গতা, কেন এই মৌনতা
আমাকে ঘিরে
কেউ না জানুক কার কারণে,
কেউ না জানুক কার স্মরণে
কোন পিছুটানে
তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে
জীবনের নিয়মে।
স্বপ্নগুলো অন্য কারো, ভূল গুলো আমারই
কান্নাগুলো থাক দুচোখে, কষ্ট আমারই
ভেবে নেব প্রেমালে আজ আঁধারি।
কেউ না জানুক কোন বিরহে
দিন চলে যায় আজ কিভাবে,
কোন পিছুটানে
তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে
জীবনের নিয়মে।
ইচ্ছেগুলো থাক হৃদয়ে, ব্যর্থতা আমারই
সুখ নাহোক অন্য কারো, দুঃখরা আমারই
ভুলে যাবো মন কেন আজ ফেরারী।
কেউ না জানুক কোন হতাশায়
দিন চলে যায় নীরবে হায়,
কোন পিছুটানে
তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে
জীবনের নিয়মে।
চলবে……
আগামী পর্বে থাকছে গল্পের নতুন চমক😌
গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকবেন,ধন্যবাদ❤️
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=169467331959466&id=140699218169611