#কনফিউশন পর্ব ৫
#লেখকঃ_মৌরি_মরিয়ম
রাতে ঘুমানোর সময় তিরা বললো,
“আরু সাহিল ভাইয়া আমাদের সাথে এমন করছে কেন বল তো।”
“কেমন করছে?”
“এইযে প্রতি উইকেন্ডে বৌয়ের কাছে চলে যাচ্ছে। এতবড় বাড়িতে আমাদের দুই বোনের একা বুঝি ভয় করে না?”
“দুজন মানুষ একা কীভাবে হয়? ওর বৌ প্রেগন্যান্ট। তার কাছে ও যাবে না? বাচ্চার প্রতি সব দায়িত্ব কি শুধুই মায়ের?”
“তাহলে ভাবী গেলো কেন?”
“ভাবীর দেখাশোনা করার কেউ এবাড়িতে নেই বলেই ভাবী ওবাড়িতে গেছে। আমাদের পক্ষে কি সম্ভব সবসময় ভাবীর খেয়াল রাখা?”
“আমাদের বুঝি ভয় করেনা?”
“আমার করেনা।”
“আমার করে।”
আরশি মুখ টিপে হেসে বললো,
“তোর ভয় কী? তোর কালা চণ্ডীদাস তো আছেই।”
তিরা এবার ক্ষেপে গিয়ে বললো,
“তুই কী রেসিস্ট রে আরশি! এভাবে একটা মানুষকে কালো বলে অপমান করছিস!”
“অপমান কেন করব? কালোকে কালো বললে বুঝি অপমান হয়ে যায়?”
“হুহ। ওর চোখ দেখেছিস? আর ওর ঠোঁট? আর ওর হাসি?”
“ওমা পরপুরুষের এতদিকে তাকাবো কেন? আমি ছেলেদের চোখের দিকে তাকাই না। শুধু চোখ কেন ছেলেদের স্পেসিফিক কিছুই আমি দেখিনা তোর মত।”
“জানি জানি দেখলে তো এতদিনে একটা জুটে যেত।”
“আমি জোটাতে চাইনা।”
“হুহ পান্তাভাত একটা। শোন কাব্যর সবকিছু রাজপুত্রের মত। শুধু রঙটাই একটু কালো।”
আরশি হেসে শুয়ে পড়লো। তিরা অনলাইনে ঢুকলো। কাব্যকে যদি একটু পাওয়া যায়। যেভাবেই হোক ফোন নাম্বার নিয়ে নিতে হবে। ছেলেটা অনলাইনে একদম আসেনা।
কাব্য অন্ধকারে বাগানে হাঁটছিলো, অন্ধকার কেন যেন ওর খুব ভালো লাগে। অন্ধকারের একটা নিজস্ব ভাষা আছে, সেই ভাষাটা পড়তে ইচ্ছে করে। আচমকা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ভেতরে যেতে যেতে ভিজেই যাবে মনে হচ্ছে হঠাৎ উপর থেকে আসা শব্দ শুনে তাকালো কাব্য। আরশি জানালা লাগাচ্ছে। আরশিকে দেখলেই কেন ভেতরটা ওলট পালট লাগে? কাব্য অন্ধকারে তাই কাব্যকে দেখতে পেলো না আরশি। কিন্তু কাব্য আরশিকে দেখলো। মন ভরে দেখলো। এই মনই পুরোপুরি তাকে আরশির দিকে ঠেলছে। কিন্তু কাব্যর মস্তিষ্কের সাহস হচ্ছেনা সেদিকে আগাতে। কাব্যর কি এই বাসাটা ছেড়ে দেয়া উচিৎ?
বৃষ্টির ছাটা এসে ঘর ভিজিয়ে দিয়েছে। জানালা লাগিয়ে আরশি ঘরের পানিটুকু মুছে ফেললো। নাহয় কখন দেখা যাবে তিরা এই পানির মধ্যে পা পিছলে পড়ে যাবে। আরশি হাত ধুয়ে যখন ঘরে ঢুকলো তিরা আচমকা হাসতে হাসতে বিছানা থেকে মেঝেতে পড়ে গেলো। আরশি দৌড়ে এসে তিরাকে ওঠাতে ওঠাতে বললো,
“আরে কীভাবে পড়ে গেলি তিরা? ব্যাথা পেয়েছিস কোথাও?”
তিরা হাসছে তো হাসছেই কোনো কথা বলতে পারছে না। আরশি এটুকু বুঝতে পারলো যে ব্যাথা পায়নি। ব্যাথা পেলে এভাবে হাসতো না। তিরাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো,
“ধুর পাগলের মতো শুধু হাসছেই। তুই হাসতে থাক, আমি ঘুমোলাম।”
তিরা এবার বহুকষ্টে হাসি থামিয়ে বললো,
“এই না না। দেখ কাব্য ফেসবুকে কী স্ট্যাটাস দিয়েছে। ওর স্ট্যাটাস দেখে হাসতে হাসতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।”
আরশি ওড়নায় হাত মুছে মোবাইলটা নিয়ে দেখলো কাব্য স্ট্যাটাস দিয়েছে,
“আপনারা সবাই স্ত্রীগমন করুন, আবহাওয়া ভালো আছে।
শুভ বৃহস্পতিবার!”
আরশি স্ট্যাটাস টা দেখে মোবাইলটা বিছানার উপর ফেলে বললো,
“ছি! অসভ্য! একটা মানুষ কীভাবে পাবলিক প্লেসে এসব কথা বলে? কে কী করবে না করবে সেটা কি ওনাকে জিজ্ঞেস করে করতে হবে?”
“ধুর আরু তুই শুধু শুধু নেগেটিভলি নিচ্ছিস৷ কাব্য তো ফান করে এই পোস্ট টা দিয়েছে।”
“কচুর ফান। শোন তুই আগেরটাকে রিজেক্ট করেছিলি না এক মাস প্রেমের মাথায় রুমডেটে ডেকেছিল বলে? এই অসভ্য ছেলে প্রেমের এক সপ্তাহের মধ্যে রুমে ডাকবে। মিলিয়ে নিস।”
“ধ্যাত কী বলছিস এসব!”
“চুপ থাকবি প্লিজ আম্মা? আমি এখন ঘুমুবো। তোর এই কাব্যগান বন্ধ কর।”
বিছানায় শুয়ে এদিক ওদিক করেও ঘুম আসছিল না আরশির। প্রচন্ড বিরক্ত লাগছিল। একটা মানুষ এতটা অসভ্য হয় কী করে?”
চলবে…