#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#পর্বসংখ্যা_০৭.
#ফাবিয়াহ্_মমো.
মেহনূরের কোমর থেকে গলগল করে রক্ত বেরুচ্ছে! কাঁচা হলুদ রঙের শাড়িটা রক্তের কারনে ভিজে যাচ্ছে! ওর কোমরে হাত দিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছে মাহতিম। হতভম্ব দৃষ্টিতে নির্বাক হয়ে মেহনূরের ব্যথাগ্রস্থ মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মেহনূরের চোখ থেকে ঝরঝর করে অশ্রু গড়িয়ে নিচে পরছে। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় নিচের ঠোঁট কামড়ে ফুপিয়ে কাঁদছে ও। মাহতিম ওর কোমর থেকে ধীরে ধীরে হাত সরিয়ে ফেললো। চোখের সামনে রক্ত মাখা হাতটার দিকে একপলক দৃষ্টি দিতেই তৎক্ষণাৎ বুকটা মোচড়ে আসে ওর। শরীর যেনো অদ্ভুত ভাবে শিরশির করে উঠলো। নিজের ভেতরে যে ঝড়টা ফের শুরু হয়েছে সেটা বুঝতে দিলোনা একটুও। চোখদুটো নির্বাক হয়ে গেলেও দৃষ্টি শুধু ক্ষত জায়গাটার দিকে স্থির ছিলো। কাঠ-কাঠ গলায় ঢোক গিলে কাঁচা হলুদ রঙের শাড়িটা পেটের কাছ থেকে সরিয়ে কাধে তুলে দিলো মাহতিম। হঠাৎ পেটের উপর থেকে শাড়ির আবরণ উঠে গেলে চমকে যায় মেহনূর। অশ্রুতে টলটল করা চোখদুটো তখন আতঙ্কগ্রস্তে লিপ্ত। জোরে-জোরে অনবরত নিশ্বাস নিতেই নির্বোধের মতো আবার পালাতে গেলো। কিন্তু গাধার মতো আবারও পিছাতে গিয়ে একই জায়গায় একইভাবে তারকাটা ঢুকে বিদ্ধ হলো কোমর। ক্ষত জায়গায় হাত চেপে ‘ বুবু ‘ বলে চিৎকার দিতেই দুইঠোঁট শক্ত করে কুঁচকে ফেললো মেহনূর। এমন কান্ডে আশ্চর্য হতে গিয়ে প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে গেছে মাহতিম! বিস্ফোরণ চাহনিতে কয়েক সেকেন্ড ওভাবেই তাকিয়ে থাকলে চেঁচিয়ে এক ধমক লাগায়। ধুকপুক-ধুকপুক করছে এমন আকস্মিক কান্ডের জন্য! কি করলো ও? কেনো আবার পালাতে চেয়েছিলো? কি জন্য একাজ করলো? কি প্রয়োজন ছিলো? মাহতিম গমগম মুখে ট্রাউজারের বাম পকেট থেকে রুমাল বের করলো। দ্রুত নিজের রক্তমাখা হাতটা রুমালে মুছতেই হঠাৎ ওর দৃষ্টি মেহনূরের পেছনে থাকা পুরোনো শেল্ফটার দিকে আঁটকালো। কাঠটা ঘুণে খাওয়ার জন্য একটা তারকাটা বের হয়ে গেছে, মেহনূর যখন ভয় পেয়ে পিছাতে গেলো, তখনই কোমরের ডানপাশে ওই তারাকাটা ঢুকে গভীরভাবে কেটে যায়। মেহনূরের অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছিলো। মাহতিম এগুতে গেলেই মেহনূর ভয়ে ছটফট করে পিছানোর জন্য চেষ্টা করে, কিন্তু ব্যথার জন্য একপা ঠিকমতো ফেলতে পারেনা সে। একপর্যায়ে মাহতিম আর সহ্য করতে না পেরে মেহনূরের হাতটা ধরে নিজের দিকে টান মারে। আকস্মিক এমন কান্ড দেখে মেহনূর ব্যালেন্স বিগড়ে ফেলে, কিন্তু তখনই ওর দুহাটুর নিচে একহাত এবং ঘাড়ের নিচে অন্যহাত ঢুকিয়ে একেবারে কোলে তুলে ফেলে মাহতিম। মেহনূরের মাথাটা মাহতিমের বুকে এসে ঠেকলে ছাড় পাওয়ার জন্য মেহনূর ছুটাছুটি করতে থাকে। কিন্তু আর পালাবার পথ থাকেনা মেহনূরের জন্য। একদিকে শক্ত বাহুর মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলেছে মাহতিম, অন্যদিকে কোমরের কাছে বীভৎস যন্ত্রণায় শরীর যেনো নিংড়ে আসছে ওর। জ্বরের দূর্বলতা, ক্ষত জায়গার যন্ত্রণা, প্রচণ্ড ভয়ের প্রবলতায় চারপাশ যেনো অন্ধকার দেখছে মেহনূর। মাহতিমের বামহাতের পেশিতে মাথা ছেড়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে ও। মাহতিম ওই অবস্থা দেখে আর দেরি না করে দ্রুত নিজে রুমে নিয়ে আসলো। বাড়িতে কেউ ছিলোনা তখন, সবাই আম-কাঠালের জাকজমক দেখতে পনের মিনিটের দূরত্বে একটা গ্রাম্য-বাগানে গিয়েছিলো। মাহতিম বড় বড় পা ফেলে তাড়াতাড়ি বিছানায় এনে লম্বা করে শুইয়ে দিলো। রক্তের কারনে মেহনূরের হাটু পযর্ন্ত লম্বাটে হয়ে ভিজে গিয়েছিলো। মাহতিম ওইমূহুর্তে হাতের কাছে কোনো ফার্স্ট-এড-বক্স না পেয়ে নিজের লাগেজ থেকে হেক্সিসল বের করলো। কোনো তুলা জোগাড় করতে না পেরে লাগেজের পকেট থেকে এক্সট্রা রুমাল বের করলো। রুমালটায় হেক্সিসল ঢেলে মেহনূরের কাছে এসে বিছানায় উঠে বসলো। আবারও শাড়ি উঠাতে হাত বাড়ালে মেহনূর কান্নারত অবস্থায় শক্ত কন্ঠে বললো,
– বুবুকে ডাকুন। আপনি এই কাজ করবেন না। বুবু কলপাড়েই আছে। বুবুকে ছাড়া আমি কারো কাছে ওই ঔষুধ লাগাবো না। বুবুকে ডাকুন প্লিজ।
মেহনূর কান্নায় আছড়ে পরলেও সংযত গলায় আকুতি-মিনতি করছিলো। মাহতিম চুপ করে ভাবছিলো, এখন যদি শানাজকে ডাকতে যায়, তাহলে উটকো ঝামেলার পাশাপাশি একশো একটা জবাবদিহিও করতে হবে। এদিকে রক্তের কারনে বিছানাও রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছে। মাহতিম সবটা চিন্তা করতেই ভ্রুঁ কুঁচকে ক্রুদ্ধসুরে বললো,
– তোমার কাছ থেকে পারমিশন নেওয়াটা প্রয়োজন মনে করিনা। এখানে তোমার পেট দেখে লুচ্চামি করার জন্য বসিনি। জায়গাটা ডিপলি কেটেছে দেখেই বাধ্য হয়ে রক্ত মুছতে এসেছি। বেশি বাড়াবাড়ি করলে কালরাতে কি কি করেছো সব যেয়ে নানার কাছে ভাইরাল করে দেবো। মুখে তালা লাগাও।
মাহতিমের ক্যাটক্যাট জবাব শুনে আর কথা বলতে পারলোনা মেহনূর। আশ্চর্য হয়ে মাহতিমের দিকে তাকিয়ে রইলো। কালরাতে জ্বরের ঘোরে কি করেছিলো? কি করার কথা মাহতিম ইঙ্গিত দিয়ে বুঝাচ্ছে? এই অসভ্য লোক তাহলে সুযোগ লুফে কিছু করে গেছে? মাথাটা যেনো ভোঁ ভোঁ করে ঘুরছে কথাটা শুনে। মেহনূর হতভম্ব হয়ে চুপসে গেলে আর বসে না থেকে চট করে পেটের উপর থেকে শাড়ি সরিয়ে ফেলে মাহতিম। লাল ব্লাউজ এবং পেডিকোটের জন্য পেটের তেমন অংশ তখন দেখা না গেলেও রক্ত মুছার জন্য ডানপাশের কিছু জায়গা উন্মুক্ত করলো মাহতিম। ব্লাউজ কিছুটা উপরে এবং পেডিকোটটা কিছুটা নিচে নামিয়ে রুমাল দিয়ে অতি সাবধানে ক্ষতটা মুছতে লাগলো। মাহতিমের আলতো হাতের পরশে দাঁতে দাঁত লাগিয়ে শক্ত হয়ে রইলো মেহনূর। ক্ষতটা জ্বলার পাশাপাশি সমস্ত শরীরে যেনো সুঁইয়ের মতো কাটা ফুটছিলো। বরফের মতো হিমভাব অনুভূত হচ্ছিলো প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে। চোখের বন্ধ করে খিচ মেরে ব্যথা সহ্য করার যুদ্ধ করছিলো সে। অনেকক্ষন টাইম নিয়ে মাহতিম রক্ত-সহ ক্ষত সাফ করে ফেলে। চার ইন্ঞ্চির মতো লম্বাভাবে কেটেছে জায়গাটা, ফুলে একদম লাল হয়ে উঠেছে। রুমালটা রক্তে শেষ হলেও মাহতিমের হাতে ভালোই রক্ত লেগেছে। ক্ষত থেকে দৃষ্টি তুলে মেহনূরের মুখের দিকে তাকায় মাহতিম, দুচোখের কার্নিশ থেকে এখনো টপটপ করে অশ্রু পরছে ওর। মাহতিমের ইচ্ছে করলো মুখটা ধরে চোখদুটো মুছে দিতে, কিন্তু মনের উপর পাথর ফেলে দৃষ্টি সরিয়ে সেখান থেকে উঠে পরে। নীতির রুম থেকে চটপট গজ কাপড় এনে আবার মেহনূরের কাছে এসে বসে। এসব কাজের মধ্যে একবারের জন্যও মাহতিমের দিকে তাকায় না মেহনূর, চোখ বন্ধ করে সেইযে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে, শেষপর্যন্ত আর ওর দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকায়নি। ব্যান্ডেজের কাপড় নিয়ে প্রচণ্ড ইতস্তত বোধ করছে মাহতিম, ব্যান্ডেজ পেঁচাতে গেলে সত্যিই পেটের চারপাশে হাত লাগার সম্ভাবনা আছে। এমতাবস্থায় মেহনূরের দিকে শান্ত দৃষ্টি ফেলে সরল কন্ঠে বললো মাহতিম,
– এই মূহুর্তে ব্যান্ডেজ না করলে তোমার ইনফেকশন হবে। কি করবো আমি? তুমিতো অন্য জায়গায় টাচ করতে দিবেনা। তুমি কি চাও আমি শানাজকে ডেকে তোমার বোকামির জন্য কৈফিয়ত দেই? শানাজ সম্ভবত গোসলে ঢুকে গেছে। বাকি রইলো তোমার দুইবোন। দুজনের মধ্যে সাবার মেবি ব্লাড ফোবিয়া আছে। নিজের কাটা আঙ্গুলটা পযর্ন্ত শানাজকে দিয়ে ব্যান্ডেজ করিয়েছে। বাট সুরাইয়াকে আমি ডাকতে পারবো না, সরি। তুমি চাইলে অপেক্ষা করতে পারো। কিন্তু এতে তোমারই ক্ষতি হবে। যতক্ষণ বাতাস লাগবে, ততক্ষণ ওই ক্ষতটা জ্বলতে থাকবে। কি করবো আমি? আমাকে ব্যান্ডেজ করতে দিবে নাকি ওভাবেই ব্যথা নিয়ে কাঁদতে থাকবে?
মাহতিমের সোজাসাপ্টা উত্তর শুনে চোখ খুলে মুখ ফিরিয়ে তাকায় মেহনূর। কান্নায় চোখদুটো ফুলে লাল হয়ে আছে ওর। মাহতিম সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে ছোট্ট একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
– আমাকে দেখে ওরকম রিয়েকশন দেয়ার প্রয়োজন ছিলোনা। আমি নিশ্চয়ই তোমাদের বাড়িতে অতিথি হয়ে নোংরামি করতাম না। কিন্তু তুমি আজ যা করলে এতে নিজেরই ক্ষতি করলে। এখন বলো আমার কি করা উচিত? ব্যান্ডেজ করতে দিবে? নাকি করানোর জন্য মানুষ ডাকবো?
মাহতিমের কথা শুনে মেহনূর আবার চোখ বন্ধ করলো। জোরে একটা নিশ্বাস নিয়ে সেটা ধীরে-ধীরে ছেড়ে দিলো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে শক্ত কন্ঠে বললো,
– রাতে যেহেতু সব কাহিনী ঘটিয়েই ফেলেছেন, সেখানে এমন ঢং করার মানে কি? আপনিতো আমার কোনো কিছুই দেখা বাদ রাখেননি। এখন তাহলে বুজরুকি তামাশা করছেন কিজন্য?
মাহতিম ওর কথার ধরন শুনে সরু চোখে তাকালো। মেহনূরের স্টাইলেই শক্ত ভঙ্গিতে জবাব দিলো,
– ওহ্ তাই? তাহলে ইনডাইরেক্ট আমাকে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে?
মাহতিম প্রশ্ন ছুড়ে আর পাল্টা উত্তরের জন্য অপেক্ষা করলোনা। ব্যান্ডেজ নিয়ে খুব সাবধানে ক্ষতের মুখে কাপড় চাপা দিতে লাগলো। নিজের চোখ ও মনকে শক্ত রাখার জন্য কঠোর অবস্থা ধারন করলো। কাজ শেষে ফ্লোরে পা রেখে মেহনূরকে কোলে তুলে নিলো। আশেপাশে সবদিক চেক দিয়ে দ্রুত মেহনূরের রুমের দিকে পা চালাতে লাগলো মাহতিম। ওকে রুমে এনে ওর বিছানার আস্তে করে শুইয়ে দিলো। যাওয়ার জন্য পা ঘুরিয়ে চলে যেতেই হঠাৎ পা থমকে মাথা ঘুরিয়ে মেহনূরের দিকে তাকিয়ে বললো,
– কাল রাতে কিছুই হয়নি। হলে নিজেই টের পেতে। আমি শুধু চেক করতে এসেছিলাম জ্বরের টেম্পেরেচার কেমন। দ্যাটস ইট, এর বেশি আমি কিছুই করিনি। আশা করবো, মিস-আন্ডারস্টেন্ডিংটা দূর হবে। আর ব্লাউজ যেভাবে বড় পরো, আমি কেন, শানাজও তোমার পেট দেখতে পাবেনা। আমি ওই ক্ষতটা ছাড়া আর কিছু দেখিনি। ট্রায় টু লেস ইউর ইগো, ইট ডাজেন্ট ম্যাচ ফর ইউর এ্যাজ।
মাহতিম যেভাবে ঠান্ডা মেজাজে রুমে এসেছিলো, সেভাবেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। শুধু মেহনূরের দৃষ্টি যেনো শূন্য দরজার দিকে স্থির হয়ে রইলো। কিছুক্ষন পর জানালার বাইরে দৃষ্টি দিয়ে নীলাভ আকাশের তেজঃপূর্ণ সূর্যটা দেখতে লাগলো মেহনূর। এই লোকটার মতো এতো অসভ্য জাতের পুরুষ মেহনূর আর দেখেনি। নিজেই অভদ্রের মতো রুমে ঢুকে অনুমতি না নিয়ে জ্বর দেখতে আসে, আবার সভ্যশিষ্টের মতো নিজেকে বেটার পার্সোনালিটির জেন্টেলম্যান বলে দাবি করে। কেমন বদমাশ ধরনের লোক হলে এমন দুমুখো কথা বলে? ভবিষ্যতে কেউ দুমুখো মানুষের কথা তুললে এটার জন্য মাহতিম আনসারী যেনো জলন্ত প্রমাণ হবে!
.
রুমে এসে হাফ ছেড়ে বাঁচলো মাহতিম। কিন্তু হাতদুটো পরিস্কার করা দরকার। কলপাড়ে এখন মেয়েরা আছে, সেখানে গিয়ে যদি হাত ধুতে যায় সবাই মেহনূরের ব্যাপারটার সাথে কানেক্ট করে দিবে। রিস্ক নেওয়ার মানেই হয়না। রক্ত শুকিয়ে গেছে এখন, আর ভেজা ভাব নেই হাতে। মাহতিম বিছানার উপর থেকে ফোন নিয়ে সৌভিককে কল দেয়। কিছুটা শক্ত ভঙ্গিতে তীব্র উৎকন্ঠায় বলে উঠে,
– তুই কোথায় আছিস? বাজারে না বাইরে?
সৌভিক পেয়ারায় এক কামড় দিতে যেয়ে থেমে গেলো। কিছুটা কৌতুহল হয়ে সন্দেহজনক কন্ঠে বললো,
– তোর গলার টোন এমন শোনাচ্ছে কেন? কিছু হয়েছে?
মাহতিম খানিকটা উদ্বিগ্ন হয়ে গেলেও নিজেকে যথাযথভাবে সংযত করে স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
– আমার ভয়েস টোন কি তোর গানের মতো লাগে? এটা কেমন প্রশ্ন সৌভিক? তুই কি এখন ক্ল্যারিফিকেশন চাইবি না আন্সারটা ফটাফট দিবি?
সৌভিক কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। তবুও শান্ত ভঙ্গিতে জবাব দিলো,
– দোস্ত বাড়ির পেছনে আছি। পেয়ারা গাছের নিচে। খাবি একটা? নিয়ে আসি? লবণ মরিচ দিয়ে হেব্বি টেষ্ট লাগছে! পুরাই টাটকা ফিলিং!
মাহতিম ওর কথা শুনে প্রচণ্ড ক্ষেপে গিয়ে চেঁচিয়ে বললো,
– ফিলিংয়ের বাচ্চা, তোর ফিলিংয়ের টুট টুট করতে জাস্ট দুইমিনিটের ব্যাপার। আজাইরা প্যাচাল না পেরে আমার জন্য এক মগ পানি নিয়ে আয়। তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা কর।
সৌভিক প্রথমে কথার মানে বুঝলোনা। পরক্ষনে কি যেনো ভেবে দুপাটির দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বললো,
– পেট মোচড় মারছে বললেই পারতা মিয়া। বুঝছি তো মেয়েরা গোসল করতে গেছে দেখে চিপা জায়গায় কাজ সারতে চাইছো। থাক ফিকার নট, আমি এক্কেবারে দুই মগের ব্যবস্থা করে কলাপাতা আনতেছি।
মাহতিম রেগেমেগে বারুদ হয়ে কিছু অশ্রাব্য ভাষা উচ্চারণ করবে ওমনেই সিয়ামের কন্ঠস্বর শুনতে পেলো। ফোনটা সম্ভবত লাউড স্পিকারে ছিলো, তাই সিয়ামও প্রশ্ন ছুঁড়ে বললো,
– কলাপাতা দিয়ে কাজ করতে পারবি? সমস্যা হবেনা?
মাহতিম আর ধৈর্য্য রাখতে পারলো না। এক ধমক দিয়ে দুটোকে গালিগালাজ করতেই সৌভিক হাসতে-হাসতে বললো,
– আচ্ছা আচ্ছা থাম ভাই। পানি আনতেছি, চিন্তা করিসনা আনতেছি। তুই নিচে আয়, আমি নীতিকে দিয়ে পানি আনতে পাঠাইতেছি।
সৌভিকের কথা শেষ হতেই টুট টুট শব্দ হতে লাগলো। কান থেকে ফোন নামিয়ে দেখলো মাহতিম ফোন কেটে দিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে মাহতিম চলে আসতেই সবার দৃষ্টি ওর হাতের দিকে আটকে যায়। দুই হাত লালবর্ণে রাঙা এবং ডার্ক ব্লু রঙের টিশার্টটা পেটের কাছে কালচে হয়ে শুকিয়ে আছে। নীতি বিষ্ময়সূচকে চক্ষুতারা বিশাল বড় করে মগ হাতেই প্রশ্ন করলো,
– ভাই তোমার হাতে এগুলো কি? ব্লাড নাকি?
মাহতিম একপলক নীতির দিকে তাকিয়ে হাতে পানির ঢালার জন্য ইশারা দেয়। নীতি সৎবিৎ ফিরে পেলেও আহাম্মকের মতো তাকিয়ে থাকে। মগের পানিতে দুইহাত ধুয়ে নীতির ওড়না টেনে হাত মুছতেই মাহতিম স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,
– কাহিনীর ব্যাপারে এখন প্রশ্ন করতে আসবিনা। পরে জিজ্ঞেস করিস। এখন কথা বলতে ইচ্ছা করছেনা। মা আসলে বলবি কাল ভোরের দিকে চলে যাচ্ছি।
কথা শেষ হতেই পা ঘুরিয়ে চলে যায় মাহতিম। একটুও পিছু ফিরে তিনটা কৌতুহল দৃষ্টির জন্য দাড়ালো না। নীতি খালি মগটা নিয়ে দাড়িয়ে থাকতেই অন্যমনষ্ক ভঙ্গিতে বললো,
– ঘাপলা আছে সৌভিক ভাই। মাহতিম ভাইয়ার ব্যাপারে বিরাট ঘাপলা আছে।
মাহতিমের যাওয়ার পানে দৃষ্টি রেখে সিয়ামও কৌতুহল গলায় বলে উঠে,
– হাতের রক্তগুলা সোজা মনে হইলো না। তৌফরে খবর দেওয়া লাগবো। ওই রক্ত —
সিয়ামের কথায় দাড়ি বসিয়ে এবার সৌভিক বলে উঠলো,
– হাতে রক্ত লাগছে ভালো কথা, টিশার্টে কিভাবে লাগলো? আপাতত আর কাউকে এ ব্যাপারে বলিস না। তৌফ আসলে শুধু তৌফকে কথাটা বলিস। প্রীতি বা ফারিনকে এব্যাপারে ভুলেও বলবিনা।
বিকেলের সময়টায় ঠান্ডা মূহুর্ত ধারন করেছে প্রকৃতি। সূর্য এখন তেজ হারিয়ে পশ্চিম আকাশে হেলে পরেছে। পাখিরা এখন মুক্ত আকাশে উদাস ভঙ্গিতে উড়ে বেড়াচ্ছে। গ্রামের বাতাস যেনো দেহমন জুড়িয়ে দিচ্ছে। মনকে করে দিচ্ছে আরো প্রশান্তমনা। গ্রামের সতেজ ভূমির গন্ধে মনের গ্লানি দূর হয়ে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে বাতাসের শোঁ শোঁ ধ্বনিতে চারপাশ সম্মোহন হয়ে উঠছে। মেহনূর সারাটা দুপুর পেরিয়ে বিকেলে এসে কিছুটা আরামবোধ করছে। কোমরের যন্ত্রণাটা অনেকখানি কমে গেছে। বাড়িতে সবাই জেনে গেছে মেহনূরের কোমর কাটার ঘটনা। কিন্তু তাও সবাই জেনেছে মিথ্যা বানোয়াট কথা। শানাজ এসেই যখন ব্যান্ডেজ দেখে চিৎকার দিয়ে উঠলো, তখনই বাড়ির সবকয়টা মানুষ এসে চিৎকারের কারন জানতে চাইলো। মেহনূর তখন সবার কাছে মাহতিমের ঘটনা কোনোভাবেই বলতে পারলোনা। ওই অভদ্র লোকটার অসভ্যতার কথা বলতে গিয়ে বিবেকে বাঁধলো ওর। জীবনে প্রথমবারের মতো মেহনূর মিথ্যা হিসেবে বললো রান্নাঘরে যে দরজা আছে, সেই দরজার ছিটকিনি দিয়ে ভুলবশত কেটে গেছে। এরপর থেকেই বিছানায় শুয়ে আছে মেহনূর। গোসল করতে পারেনি দেখে কলপাড় থেকে হাতমুখ ধোয়ার জন্য সাহস করে বিছানা থেকে উঠে। ফ্লোরে দুইপা রেখে দাঁড়াতে গেলে হঠাৎ ব্যথাটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে ওর। চোখ কুঁচকে সাথে-সাথে বিছানায় বসে পরে মেহনূর। একা উঠার সাহস না পেয়ে সাবাকে ডাক দিলে তৎক্ষণাৎ সাবা এসে নিচে নিয়ে যায়। সিড়ি দিয়ে নেমে আঙিনার কাছে আসতেই সুরাইয়ার মা শেফালী হঠাৎ কটাক্ষ করে বলেন,
– তুই নুলা হইছোস? সাবারে ছাড়া হাঁটতে পারোস না?
শেফালী গ্রামের নিচুঘর থেকে এসেছেন এবং এবাড়ির মেজো বউ হওয়ার মতো সৌভাগ্য পেয়েছেন। মেহনূরের মেজো চাচার সাথে প্রেমের নামে নানা ছলচাতুরি করে বিয়ের করেছেন। কিন্তু শেফালী নিতান্তই হিংসুটে, অহংকারী, লোভী এবং তিরিক্ষি মেজাজের মহিলা। বাড়ির তিন বউয়ের মধ্যে যদি সবচেয়ে খারাপ বউয়ের কথা কেউ জিজ্ঞেস করে, তাহলে মানুষ দেদারসে শেফালীর দিকে আঙ্গুল তাক করে দেখিয়ে দিবে। শেফালী কিছুদিন যাবৎ দূর-সম্পর্কের আত্মীয়কে দেখতে গিয়েছিলেন, আজ দুপুরের দিকে ঠিক ঘন্টা খানেক আগে মোল্লাবাড়িতে ফিরেছেন। এসেই তিনি মারজাকে দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে উঠেন। খুশীর কারণ একটাই, মারজা বিরাট পয়সাওয়ালা মানুষ। এমন পরিবারে নিজের মেয়েটাকে যদি ইনিয়ে-বিনিয়ে গছিয়ে দিতে পারেন, তাহলে মেয়ে যে রাণীর মতোই পায়ের উপর পা তুলে থাকবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বরন্ঞ্চ নিজেও এতে ভালোই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। মেহনূরকে তিনি দুচোখে সহ্য করতে পারেন না। আড়ালে থাকলে চটাশ-চটাশ করে থাপ্পর মারতেও পিছপা হন না। আজ মেহনূরের প্রতি বিশেষ যত্ন দেখে তিনি রাগ সামলাতে পারলেন না। আঙিনার একপাশে শুকনো মরিচের ডালা রেখে ওর সামনে এসে দাড়ালেন। বিরক্ত মুখে কপাল কুঁচকে বললেন,
– তুইযে নুলা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস লজ্জা করেনা? বাড়িতে অতিথি দেইখা ঢঙ মারাচ্ছিস? পুলাগুলার সামনে খাতির চাচ্ছিস? চড়িয়ে গাল ফাটিয়ে দেবো বজ্জাত ছেড়ি! যা, একলা যাবি। ওই সাবা ওরে ছাড়।
মেহনূর বিষণ্ন মুখে সাবার দিকে তাকালো। মুখের অবস্থা এমন যেকোনো মূহুর্তে কেদেঁ দিবে ও। মেজো মার কোনো কথাই সহ্য করতে পারেনা মেহনূর। আজ পর্যন্ত বাড়িতে একটা মানুষও ওকে ছোট করে কথা বলেনি, কিন্তু মেজো মা একদিনও তাচ্ছিল্য করে খোঁটা দিতে ভুলেননি। ওরা চারবোনই শেফালীকে বাঘের মতো ভয় পায়। শেফালী সবার সামনে ভালো আচরণ করলেও আড়ালে যেভাবে মারেন সেই খবর আজও চারবোন ভয়ের কারনে ফাঁস করেনি। সাবা ভীতশঙ্কিত চোখে মাথা নিচু করে ফেললে মেহনূর নিজেই সাবার হাতটা সরিয়ে দেয়। সাবা যদি ওর কারনে মার খায়, সেটা সহ্য করতে পারবেনা মেহনূর। ছোট্ট একটা ঢোক গিলে সাবার উদ্দেশ্য বললো,
– সাবা বুবু, তুমি যাও। আমি যাচ্ছি। তুমি চিন্তা করো না। আমি শুধু হাত-মুখ ধুয়েই চলে আসবো।
মন খারাপ করে সাবা প্রশ্ন করলো,
– একা পারবি? ব্যথা করবেনা?
এমন কথা শুনে শেফালী বজ্রকন্ঠের মতো চেঁচিয়ে উঠলেন,
– পারবো না ক্যান? এই ছেড়ি কি আঙ্গুল চুষা বাবু? সাবা তুই যাবি! যাবি তুই!
শেফালীর উত্তেজিত কন্ঠে ভয়ে কাঁচুমাচু করে চলে গেলো সাবা। মেহনূর নতমুখে কোমরে হাত চেপে ধীরে-ধীরে পা ফেলে এগুতে থাকলে শেফালী ওর পথ আঁটকে দাঁড়ান। কোমর থেকে হাত সরিয়ে শাড়ি উঠিয়ে সাদা ব্যান্ডেজটা দেখেন। এদিকে মাহতিম ও নীতি কথা বলতে-বলতে বারান্দা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো, তখন নিচের দিকে নজর পরলে প্রথমে নীতির দৃষ্টি সেদিকে স্থির হলো। মাহতিম ট্রাউজারে দুইপকেটে হাত ঢুকিয়ে গম্ভীর মুখে হাটঁছিলো, কিন্তু পাশে আর নীতি দেখতে না পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো। নীতি বারান্দা থেকে কেমন থমকানো দৃষ্টিতে কিছু একটা দেখছিলো। মাহতিম কৌতুহল মনে ওর দৃষ্টি ধরে নিচে তাকাতেই মেহনূর ও শেফালীর কীর্তিকান্ড স্পষ্ট দেখতে পেলো। কৌতুহলটা ক্রমান্বয়ে বাড়তে-বাড়তে এমন পর্যায়ে গেলো মাহতিম কপাল কুঁচকে বারান্দার রেলিংয়ের কাছে দ্রুত এগিয়ে গেলো। ট্রাউজারের দুই পকেট থেকে হাত বের করে রেলিংয়ের উপর রাখলো। শেফালী কোমরটা দেখতেই হঠাৎ ব্যান্ডেজের উপর দুআঙ্গুলে এতো জোরে টোকা মারলেন, মেহনূর চোখ খিঁচুনি মেরে অস্ফুট শব্দে মাথা নিচু করে ফেললো। দোতলা থেকে এমন দৃশ্য দেখে নীতি ও মাহতিম চরম মাত্রায় অবাক হয়ে গেলো! নীতি আশ্চর্য কন্ঠে চমকিত চাহনিতে বললো,
– ওকে কিভাবে ব্যথা দিলো ভাইয়া? কি খারাপ! ও এমনেই হাঁটতে —
বাক্যটা শেষ হওয়ার আগেই মাহতিম এক হুঙ্কার দিয়ে উঠলো!দোতলা থেকে গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে বললো,
– আপনি ওর সাথে এটা কি করলেন! ওকে ব্যথা দিলেন কেনো! কি হলো? এ্যাই! আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি না? ওর ব্যান্ডেজের উপর ব্যথা দিলেন কেনো?
মাহতিমের চেঁচানো গলা শুনে শেফালী যখন উপরে তাকালো আতঙ্কিত হয়ে গেলেন তিনি। মাহতিম গর্জে উঠেছে যেনো, এখুনি সব লন্ডভন্ড করে তান্ডব করে দিবে ও। শেফালী অনবরত ঢোক গিলতে থাকলে বারবার রান্নাঘরের দিকে তাকাতে লাগলো। সুজলা আর মাহমুদা সব শুনলো কিনা আল্লাহ-ই জানে! মাহতিম ততক্ষণে ধুপাধুপ নিচে এসে দাড়িয়েছে। নীতিও একদৌড়ে ভাইয়ের পাশে এসে উপস্থিত। এক-এক করে সবাই যে-যার রুম থেকে ঘটনাস্থলে এসে জড়ো হতে থাকে। শানাজের সাথে সুজলা, মাহমুদাও এসে হাজির হলো। সবাই যখন প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে মাহতিম ও শেফালীর দিকে তাকিয়ে থাকে, তখন হঠাৎ করে নিরবতা চ্ছিন্ন করে মারজা এসে প্রশ্ন করলো,
– মাহতিম, তুই চেঁচালে কেন? তুই মেজো ভাবির সাথে জোর গলায় কথা বলছিস? মাহতিম! তোকে কি বলেছি শুনছিস না?
মায়ের চেঁচামেচি শুনে বুক ফুলিয়ে লম্বা নিশ্বাস নেয় মাহতিম। চোখের দৃষ্টি ভয়াবহ, মুখের অবস্থাও কঠোর। এমনভাবে নিশ্বাস নিলো, যেনো হিংস্রভাবে হামলে পরার জন্য পূর্ব-প্রস্তুতি সারলো। মারজা উত্তর না পেয়ে এবার মেহনূরের দিকে তাকালো। এতোক্ষন মেহনূর সিক্তচোখে নতমুখে দাড়িয়েছিলো, এরই মধ্যে মারজাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মাহতিম আরেকদফা চেঁচিয়ে উঠলো,
– আপনাকে আমি কি বলেছি শোনেননি? ওর ব্যান্ডেজে ব্যথা দিলেন কেনো? কোন্ সাহসে এই কাজ করলেন? আপনার মেয়ের আঙ্গুল কেটে যদি মোচড়ে দেই, তখন কেমন লাগবে?
শেফালী একবার মাহতিমের ক্রুদ্ধদৃষ্টিতে তাকালেন, আরেকবার সুজলা ও মাহমুদার দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকালেন। কিন্তু পরিস্থিতি কোনোভাবেই ঠান্ডা অবস্থায় ফিরে আসলোনা। শানাজ ব্যাপারটা সামলানোর জন্য নিজের মা সুজলার কানে গিয়ে ঘটনাটা বললো। সুজলা সবটা শুনে কথা বলাই যেনো ভুলে গেছেন। তিনি শানাজের দিকে চোয়াল ঝুলিয়ে তাকালে শানাজ অসহায় ভঙ্গিতে ‘ হ্যাঁ ‘ সূচকে মাথা নাড়লো। এবার সুজলা দৃষ্টি ফিরিয়ে শেফালীর দিকে রাগান্বিত চাহনিতে তাকালেন। শানাজকে ইশারা দিয়ে মেহনূরকে হাত-মুখ ধোয়াতে নিয়ে যেতে বললেন। এরপর মাহতিমের পাশে এসে শেফালীর সামনে দাড়িয়ে শক্ত গলায় বললেন,
– তুই মেহনূরকে মেরেছিস?
প্রশ্ন শুনেই তোতলাতে থাকে শেফালী। নিজেকে সত্য প্রমাণ করার জন্য বৃথা চালাতে গিয়ে সুজলা ওকে বলিষ্ঠ ভঙ্গিতে থামিয়ে বলে,
– চুপ কর। আর কোনো মিথ্যা কথা বলতে যাবিনা। তুই সাবাকে তাড়িয়ে দিয়েছিস এই কথা অস্বীকার করবিনা। আজ আব্বা আসুক। তুই যে কতো বড় পাপ করছিস আব্বা আজকে বিচার করুক। আমি তোকে বাঁচাবোনা। মাহমুদা? তুই যদি ওকে বাঁচাতে আসিস, তোর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক থাকবোনা। তোর মেয়ের সাথে এমন ব্যবহার শুনে আমার গায়ের চামড়া জ্বলে যাচ্ছে। এ বাড়ির সবাই জানে আমি মেহনূরকে নিজের মেয়ের তুলনায় বেশি আদর করি। অথচ তুই আজকে কি অঘটনটা করছিস খেয়াল আছে? তোর কোনো খেয়ালই নাই। আজ আব্বা আসুক খালি! আজকে তোর বিচার হোক!
সুজলা হামেশার মতোই ন্যায়পরায়ণ এবং নীতিনিষ্ঠ মহিলা। কোনো অন্যায় যেমন সহ্য করেন না, তেমনি কেউ অপরাধ করলে খুব সহজে মাফ করেন না। তিনি মেহনূরকে সবচেয়ে বেশি আদর করেন এটা মেহনূরের মা মাহমুদাও ভালো করে জানে। এদিকে শেফালী কোনোভাবেই আজ পার পাবেনা, এটাও সবাই ভালোমতোই বুঝে গেছে।
হান্নান শেখকে ডাকার জন্য খবর পাঠালে তিনি বলে দেন রাতে একটু দেরি করে ফিরবেন। পাশের গ্রামে বিরাট গন্ডগোল লেগেছে, সেটা দেখার জন্য নালিশে বসেছেন। সুজলা আঁটি গেড়ে উঠোনের চৌকিতে বসে আছেন। যেপযর্ন্ত শেফালীর বিচার না হবে সেইপর্যন্ত বাড়ির ভেতরে পা দিবেন না তিনি। সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে বের হওয়াটা অশুভ হলেও আজ সকলেই সুজলাকে ঘিরে দাড়িয়ে বা বসে আছেন। মারজা ও মাহমুদা সুজলার পাশেই চৌকিতে উঠে বসে আছে। আজ এই ঘটনার জেরে বাড়িতে কেমন এলাহীকান্ড ঘটবে কে জানে? নীতি, প্রীতি, সামিক, সাবির ও মাহদি তীব্র উৎকন্ঠায় আঙিনার চৌকিতে বসে আছে। নীতি বাদে চারজন বিষণ্ণ ভাব কাটানোর জন্য মোবাইলে ‘ লুডুকিং ‘ খেলছে। সৌভিক, তৌফ ও সিয়াম রুক্ষ মুখে বেতের চেয়ারে গোল করে বসে আছে। সবার মধ্যেই থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
নীতি ওদের লুডু খেলা দেখতেই হঠাৎ ওর নিজের ফোনটা ভাইব্রেট হয়ে উঠে। চমকে গিয়ে মোবাইলের দিকে তাকাতেই মাহতিমের ম্যাসেজ দেখে। ম্যাসেজের লিখা দেখে নীতি এবার সত্যি-সত্যিই ঘাবড়ে যায় ,
‘ রাস্তা ক্লিয়ার? ক্যান আই গো? তাড়াতাড়ি চেক কর! ‘
– ‘ চলবে ‘
#FABIYAH_MOMO
( নোটবার্তা : বিলম্বের জন্য অসংখ্য পরিমাণে দুঃখিত )
( আপডেট বার্তা : কিছু ভুল-ত্রুটি সংশোধন করার চেষ্টা করেছি। এরপরও যদি ভুলভ্রান্তি থেকে যায় আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি❤)