মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤ #উপসংহার . ( শেষ ) #ফাবিয়াহ্_মমো .

0
1790

#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#উপসংহার . ( শেষ )
#ফাবিয়াহ্_মমো .

দেখতেই-দেখতে পুরো আটচল্লিশ ঘন্টা পেরিয়ে গেলো। দুই দিন ও দুই রাত শেষে গ্রামের ফেরার উদ্যোগ চললো। সুজলা এবার গ্রামে ফিরবেন, আগামীকাল বিকেল চারটার দিকে রওনা দিবেন। একটু-একটু সব পাট গুছিয়ে নিচ্ছেন তিনি। সাবা ও সুরাইয়াও নিজ-নিজ জিনিসপত্র গোছ-গাছ করে নিচ্ছে। মারজা শত বাধা দিয়ে থাকার জন্য মিনতি করলেন। সুজলা রাজী হলেন না। মারজা অনেক জোরাজুরি করে বললেন,

– আর কটা দিন থেকে যান ভাবী। গ্রামে তো কেউ নেই। একা-একা সময় কাটবে? থাকুন ভাবী। পরে যান।

সুজলা পুরোপুরি নারাজ। নাছোড়বান্দার মতো বললেন,

– আবার আসবো আপা। এবার তো অনেকদিন থেকে গেলাম। বাড়িটার কথা খুব মনে পরছে। এভাবে তো বেশিদিন বাইরে কাটাইনি। গেরস্থবাড়ি ফেলে আসাটা চিন্তার বিষয়। এখানে এসেও রাতভর ওখানকার চিন্তায় থাকতাম। এভাবে থাকা যায় বলুন? এবার যাই। ইনশাআল্লাহ্ আবার আসবো। মেয়ে তো আপনার কাছেই রেখে গেলাম। আবার আসবো আপা।

মারজার কোনো কথাই শেষমেশ টিকলো না। সকালে নাস্তার টেবিলে উপস্থিত হলো সবাই। সবাই যার যার আসন নিয়ে খেতে বসে পরলো। কেবল আসলো না শুধু মাহতিম। মেহনূর বিষয়টা লক্ষ করার পর প্রীতির কাছে আড়ালে জিজ্ঞেস করলো,

– তোমার ভাই কি খেতে আসবেন না? উনার খাবার কি রুমে পাঠিয়ে দেবো?

প্রীতি চটপট গলায় বললো,

– ভাইয়া তো এখনো ঘুম থেকে উঠেনি ভাবী। সেতো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। সারারাত কম্পিউটারের সামনে বসে-বসে কি যেনো করেছে। রাতে একফোঁটা ঘুমায়নি।

প্রীতির কথায় উদ্বিগ্ন হলো মেহনূর। কথাটা কৌশলের সাথে জিজ্ঞেস করলো,

– সারারাত গেমস্ খেললে ওই কি মানুষ তাড়াতাড়ি উঠবে? ঘুমাক। আমি তাহলে যাচ্ছি না।

পানির গ্লাসে চুমুক দিতে গিয়ে থেমে গেলো প্রীতি। মেহনূরের দিকে তাকিয়ে বললো,

– উহু, ভাইয়া গেমস্ খেলেনি। নিজের চোখে দেখেছি অফিশিয়াল কিছু নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। আমিতো আড্ডা দিতে গিয়ে ফেরত এসেছি। ভাইয়া তো দুই দিন ধরে ঘুমায় না ভাবী। মাহদির রুমে বসে-বসে পিসি চালায়।

বিগত দুই রাত ধরে মাহতিম রুমে আসে না। বিয়ের রাতে সবাইকে যখন শক্ত কথা বলে এলো, তখন রুমে ফিরেছিলো মেহনূর। রাত তখন দশটা বাজছিলো। খাবার না খেয়ে অপেক্ষা করতে-করতে কখন ঘুমিয়ে পরে টের পায়নি। যখন ঘুম ভাঙে, তখন দেখে মাহতিম রুমে নেই। নিচে গিয়ে জানতে পারে মাহতিম গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য নোমানকে নিয়ে বাইরে গেছে। নাস্তা খেয়ে বেরিয়েছে ঠিকই, কিন্তু কখন আসবে বলে যায়নি। প্রীতির সম্পূর্ণ কথা শোনার পর নাস্তার প্লেট সাজালো মেহনূর। যেহেতু এখনো সে ঘুমে আছে, তাই নিজেই এই ফাঁকে প্লেট নিয়ে চলে গেলো। খুব সকালে ঘুম উঠে যায় মাহতিম, আজই প্রথম ব্যতিক্রম দেখলো। মাহতিম যেনো আগের মাহতিমটার মতো নেই। ভাবলেই বড্ড হাসি পায়। সম্পর্ক বুঝি ধীরে-ধীরে ঠান্ডা হয়ে যায়। আগের মতো সময় থাকে না, না-থাকে মূহুর্ত। মেহনূরের মাঝে-মাঝে মনেহয়, সে বুঝি পুরোনো হয়ে গেছে। দৈনন্দিন জীবনের অভ্যস্ত পোশাকের মতো ময়লা হয়ে শেষ। তার গুরুত্ব এখন কোথাও নেই। ব্যাপারটা এমন, ব্যবহার শেষ, এবার ডাস্টবিনে থাকো। নাস্তার প্লেট নিয়ে দরজার কাছে আসলো। ডানহাতে প্লেট ধরে বাঁহাত দিয়ে নব্ মোচড়ে ঢুকলো। রুমে ঢুকেই দরজাটা বন্ধ করে করলো মেহনূর। প্লেট-সহ সামনে তাকাতেই বিছানার দিকে নজর পরলো। লম্বা হয়ে ঘুমিয়ে আছে মাহতিম আনসারী। দেখেই বুঝা যাচ্ছে গণমান্য ব্যক্তিটা গভীর ঘুমে বিভোর। এই ঘুমে আপাতত হুঁশ-জ্ঞান থাকা একদম ভুল চিন্তা। মেহনূর নাস্তার প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে রুমের জানালার কাছে গেলো। দুহাতে পর্দাটা দুদিকে সরিয়ে দিতেই একফালি সোনালি আলো বিছানার উপর পরলো। সাদা বিছানার উপর আলোর তীর্যক রেখাটা তেরছা হয়ে পরেছে। মেহনূর জানালা থেকে সরে এসে বিছানায় বসে পরলো। হাতদুটো বুকের উপর আড়াআড়ি ভঙ্গিতে রেখেছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। গায়ে কোনো শার্ট বা টিশার্ট নেই। পড়নে স্রেফ ব্রাউন ট্রাউজার।উন্মুক্ত বুকটা নিশ্বাসের জন্য ফুলে-ফুলে উঠছে। বুকের খাপে-খাপে ছয়টি ভাঁজ দেখা যাচ্ছে। যখন ওই বুকটার ভেতর মাথা লুকিয়ে ঘুমাতো, চর্তুদিকে বাউন্ডারি দেয়ালের মতো অদৃশ্য নিরাপত্তা অনুভব হতো। আজও ইচ্ছে করছে ঘুমন্ত মানুষটার বুকে মাথা রাখতে দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে। সকালের মিষ্টি রোদকে সাঙ্গ করে কপালে চুমু এঁকে দিতে। মাহতিমকে দেখতে-দেখতে মুখ নিচু করলো মেহনূর, ডানহাতটা বালিশের উপর ভর ফেলে মাহতিমের দিকে ঝুঁকলো। বাঁহাত এগিয়ে শেভড গালটা স্পর্শ করলো। নরম হাতের নরম চামড়ায় ধারালো শেভের খোঁচা লাগছে। অদ্ভুত ভালোলাগায় শিউরে উঠলো মেহনূর। ঘুমন্তাবস্থার সুযোগ লুফার জন্য মনটা আনচান করছিলো। একটু ছুঁয়ে দিলে কি জেগে যাবে? ঘুম-ঘুম চোখ মেলে আধো-আধো চাহনিতে তাকিয়ে থাকবে? চোখটা বন্ধ করলো মেহনূর। কপালের ঠিক মধ্যখানটা সবটুকু ভর ছেড়ে দিয়ে প্রগাঢ়ভাবে চুমু খেলো। মাহতিম ঘুমের ভেতর নড়েচড়ে চোখ খুলতে চাইলো, কিন্তু ঘুমের চোটে চোখের পাতা টেনেও যেনো খুলতে পারছে না। মেহনূর চোখ বন্ধ করে কপালের মধ্যখানটায় চুমু খেলো। ব্যকুলরূপে পাগলের মতোই হোক, বা উন্মাদের মতো মাহতিমের মুখটা দুহাতে ধরলো। একটা-দুটো অসংখ্য চুমু সারা মুখ জুড়ে খেলো। চোখের পাতায়, নাকের ডগায়, দুটো গাল ভরিয়ে আদর করলো। মাহতিম ভ্রুঁ কুঁচকে ছোট-ছোট চোখে তাকালো, আধো-আধো গলায় ঘুম জড়িয়ে বললো,

– ঘুমাবো..

ছোট্ট শিশুর মতো নাদান লাগলো। যার ঘুমটা ভাঙিয়ে দেওয়ার জন্য প্রচুর বিরক্ত হয়ে গেছে সে। ঘুমন্ত মাহতিমের মুখটা যেনো সবটুকু শুদ্ধ জড়িয়ে রেখেছে। মিশ্র অনুভূতির স্বীকার হয়ে মেহনূর হাসি-হাসি চোখে তাকালো। গালদুটো শক্ত করে ধরে ঘাড়টা কিন্ঞ্চিৎ কাত করলো মেহনূর। দুটো সুআকৃতির ঠোঁটদুটোর মাঝে নিজের কোমল ঠোঁটজোড়া গভীর থেকে গভীরতম পর্যায়ে মিলিয়ে দিলো। আধো-আধো ঘুমের ভেতর কিছু আঁকড়ে ধরার মতো অধরদুটো নিজের করে নিলো। নিশ্বাস আঁটকে আসার মতো বুক ফুলালো মাহতিম। নিশ্বাসটা তৎক্ষণাৎ স্বাভাবিক হতেই আস্তে-আস্তে শান্ত হয়ে গেলো। চিকন পিঠের উপর দুহাত রেখে সুকোমল দেহটা বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। জানালা দিয়ে স্নিগ্ধ সকালের হাওয়া ঢুকছে। মেহনূরের আলগোছে পাকানো খোপা থেকে ছোট-ছোট চুল কানের পাশ বেয়ে মাহতিমের গালে লাগছে। পিঠ থেকে দুহাত সরিয়ে মেহনূরের মুখটা ধরলো মাহতিম। ধরেই আলতো করে ওষ্ঠজোড়া মুক্ত করে দিলো। চোখদুটো খুললো মেহনূর, সরাসরি মাহতিমের দিকে নরম দৃষ্টি পরলো। ঘুম-ঘুম চোখে জড়ানো গলায় বললো মাহতিম,

– আমার উপর রেগে আছো কেন?

মেহনূর ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে চুপ করে থাকলো। তা দেখতে পেয়ে বালিশ থেকে মাথা তুললো মাহতিম, সোজা মেহনূরের ডানগালে, বাম গালে পরপর চুমু খেলো। ফের বালিশে মাথা রেখে ভ্রুঁ নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

– বলো না? রেগে আছো কেন?

মেহনূর স্থিরদৃষ্টিতে শুধু ঢোক গিললো। কোনো জবাবদিহি করলো না। মাহতিমের বাঁ-গালের ক্ষতটা নিবিড়ভাবে দেখতে লাগলো। গালটা চোয়ালটার কাছে অনেকখানি কেটে গিয়েছে। জায়গাটা শুকিয়ে গেলেও এখনো চতুর্দিকের চামড়াটা লাল। মেহনূরের চুপটি দেখে আবার বললো মাহতিম,

– কাল বিকেলেই চলে যাব। সব ছুটি কেটে দিয়েছি। আমার মুখ দেখলে তোমার বিরক্ত লাগে, এবার স্বস্তি দিলাম মেহনূর আফরিন।

এক ধাক্কায় বুক থেকে উঠলো মেহনূর। বিছানার পাশে থাকা গ্লাস ও জগটা দেখে এক আছাড় মারলো! বিকট গর্জনে চুরমার হলো ফ্লোরে! মাহতিম বালিশ থেকে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো, চরম বিরক্ত নিয়ে ভ্রুঁদুটো কুঁচকে ফেললো সে। ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে দেখলো চূর্ণবিচূর্ণ টুকরো পরে আছে। ভ্রুঁ কুঁচকানো অবস্থায় মেহনূরের দিকে তাকালো, পাদুটো বিছানা থেকে ফ্লোরে রেখে বললো,

– সমস্যা কি? রুমের জিনিসগুলো বেহুদা কেন ভাঙ্গছো? কিছু বলিনা দেখে খুব উড়ছো, তাই না?বুকে ভয় বলতে ভয় নেই?

মেহনূর গর্জনের সাথে চেঁচাতে গিয়েও নিজেকে সংবরণ করলো। ডানহাতের উলটোপিঠে ঠোঁটজোড়া এমন ভাবে ডলতে লাগলো, যেনো সে অপরাধজনক কিছু করে ফেলেছে। রাগ দেখিয়ে চিবিয়ে-চিবিয়ে বললো মেহনূর,

– প্রত্যেকটাবার আমি আপনার কাছে ফিরবো? কেন, আপনি কি আমার কাছে আসতে জানেন না? একবারও আমাকে ডেকেছেন? কাউকে বলে পাঠিয়েছেন, যা মেহনূরকে আসতে বল? বলেছেন এমন? এখন আপনি মধু মিশিয়ে বলছেন, কাল বিকেলেই বিদায় হবেন! কেন, কি বুঝাচ্ছেন আপনি? আমি আপনাকে খুব অমূল্য করেছি? মানে এটা বোঝাতে চাচ্ছেন, আমার জন্য আপনি এ বাড়িতেও শান্তি পাচ্ছেন না? এজন্যই ছুটি বাতিল করে চলে যাচ্ছেন? ঠিক আছে। বেশ। আমি খুশি হলাম। আমি প্রচণ্ড খুশি হয়েছি বিশেষ মাননীয় জনাব মাহতিম আনসারী, আমি আসলেই খুশি হয়েছি। আপনি এবার বিদায় হোন। আপনার এইসব নাটক না আমার সহ্য হচ্ছে না। আসেন, আবার ঢঙ দেখিয়ে চলে যান। আবার তামাশা করে আসেন, আবার কাজের তালবাহানা দেখিয়ে বিদায় হোন। এগুলাই তো চলছে ঠিকনা? চমৎকার নাটকটা এবার শেষ হোক, কি বলেন?

মাহতিম বড্ড উগ্র মেজাজে গম্ভীর হলো। মেহনূরকে ভয়ংকর কিছু বলতে যাবে, তখনই দরজার নব্ মোচড়ানোর শব্দ এলো। দরজাটা খুলে যেতেই সবাই বিষ্ময় নিয়ে রুমে ঢুকলো। মাহতিম কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছিলো না। কিন্তু সেই অবস্থা থেকে নিজেকে চ্ছিন্ন করে বেরিয়ে গেলো মেহনূর। ছেলের দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকালেন মারজা। এরপর পিছু-পিছু চলে গেলেন মেহনূরের দিকে। সুজলা মূর্তির মতো অবাক হয়ে আছে। যাদের নিয়ে এতোদিন যাবৎ বুক ফুলিয়ে গর্ব করতো, তাদের একি নমুনা? মারজা পিছু-পিছু গিয়ে ছাদের রুমে উপস্থিত হলে মেহনূর কাঁদতে-কাঁদতে বলে উঠে,

– আমি এ বাড়িতে থাকবো না। এক মূহুর্ত্তের জন্যও থাকবো না। আপনার ছেলেকে নিয়ে পক্ষ গাইতে আসবেন না মা। আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না। কিচ্ছু শুনবো না। আমি চলে যাবো। আমি আম্মার সাথে চলে যাবো।

মারজা ছুটে এসে দুহাতে মেহনূরকে ধরে ঠান্ডা হতে বললেন। টেনে এনে বিছানায় বসালেন। মিনিটের ভেতর মাহমুদা এসে হাজির। তিনি এসেই সোজা মেয়ের গালে চড় বসাতে নিচ্ছিলেন, তড়িঘড়ি করে হাত আঁটকায় মারজা। নিষেধের সুরে বলেন,

– আসতাগফিরুল্লাহ্ ভাবী, এতো বড় মেয়ের গায়ে হাত তুলবেন না। এটা পাপ। ওর কথা শুনুন, মাথা ঠান্ডা করুন। রাগারাগী করলে লাভ নেই ভাবী। বসুন, এদিকে বসুন।

মাহমুদা ভয়ংকর চাহনিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। কোনোদিন এই শান্ত-শিষ্ট মেয়ের কাছ থেকে অভদ্র আচরণ দেখবেন, মোটেই আশা করেননি তিনি। দুই গাল লাল করে মারতে মন চাইছে। কতো বড় বেয়াদব! স্বামীর রাগ দেখায়! জিনিস ভাঙচুর করে। মাহমুদা নিজের শান্ত রূপ ছেড়ে জোর গলায় বলেন,

– তুই হলি মেয়ে মানুষ! তোর মেজাজ থাকবে পানির মতো। তুই কোন্ সাহসে জামাইর সাথে অভদ্রতা করবি? তোর এতো বড় সাহস কবে জন্মালো? কার উপর বাড়াবাড়ি দেখাস তুই? তোর শিয়ানীগিরি দেখে থাপ্পরে সোজা করতে ইচ্ছে হচ্ছে। ফাজিল! শয়তান! তুই আবার ভাবীর উপর গলাবাজি করছিস! তোকে তো…

তীব্র ক্ষোভে আবার এগুতে নেন মাহমুদা, ওমনেই মারজা জাপটে ধরে দূরে সরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য মাথা ঠান্ডা করতে বলেন। আকস্মিকভাবে এমন ঘটনা দেখে বাকরুদ্ধ সবাই! সবার অবস্থা স্তব্ধ হয়ে গেছে। কেউ কোনো কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছে না। অন্ধকার হাতড়ে অবলম্বন খোঁজার মতো অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট-ছোট ভুল বোঝাবুঝি থেকে আজ বিশাল সমস্যায় পা বাড়িয়েছে। মাহতিম মুখ ধুতে নাস্তা না খেয়েই বেরিয়ে পরলো, জিপ ছুটিয়ে কাউকে না বলে চলে গেলো। সারাদিনের মধ্যে আর ফিরলো না সে। মেহনূর ততক্ষণে শান্ত হলেও জেদের জন্য দাউদাউ করে জ্বলছিলো। দোষ কি মাহতিমের না? প্রথমে বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে জোরেসোরে ধাপ্পা মারলো! ভুল বোঝাবুঝি বাড়লো, এরপর সোজাসাপ্টা বুঝিয়ে দিলো ছুটি কেটে দিচ্ছে! কেনো কাটছে? মেহনূরের জন্যই না? মেহনূরই তো অশান্তির গোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার এখান থেকে চলে যাবে। মুখ ফিরিয়ে জীবনেও তাকাবে না।

.

চোখ মুছে স্লাইডিং ডোরের লক খুলে বাইরে বেরুলো মেহনূর। একদৌঁড়ে ছুটে গিয়ে সুজলার রূমে ঢুকলো। সুজলা ঘুমাননি। হাতে তসবী নিয়ে একমনে জপছিলেন। মেহনূরকে ঢুকতে দেখে তিনি চোখ খুলে তাকালেন। অবাক হয়ে শুধালেন,

– এতো রাতে আসলি? জামাই ফিরেছে?

মেহনূর সেগুলো উপেক্ষা করে নিজের কথা পাড়লো,

– আমাকে সঙ্গে নিয়ে চলুন বড়মা। আমি এখান থেকে যেতে চাই। আপনি কি আমার খরচটা বহন করতে পারবেন?

সুজলা বিষ্ময়সূচকে বললেন,

– খরচ মানে? তুই এদিকে থাকবি না? এগুলো বলিস না মেহনূর। তোর মা শুনলে…

মেহনূর বাধা দিয়ে ফেললো,

– আপনি বলুন, আপনি কি আমার আবদার শুনবেন না? আমাকে রেখে যাবেন? আমাকে নিয়ে চলুন বড়মা। আমি থাকবো না।

.

গোটা রাত পেরিয়ে দিনের আলো ফুটলো। মাহতিম ফিরলো না। বাড়ির সবাই ঘুম থেকে উঠলেও নাস্তাটা গলা দিয়ে নামলো না। মেহনূরের সাথে কেউই কথা বলতে পারছেনা, মেহনূর নিজেকে রুমবন্দি করে আলাদা রেখেছে। নীতি সেই রাত থেকে কিছু বলার জন্য হাঁশফাঁশ করছে। সুজলা একটু আগে মাহমুদাকে বুঝিয়ে দিয়েছে। মেহনূরও তাদের সঙ্গে মহিমপুর গ্রামে যাচ্ছে। ব্যাগপত্র গুছিয়ে সবকিছু বন্দোবস্ত করতেই আসরের আযান দিলো। সিয়াম মারজার আদেশে মাইক্রো নিয়ে হাজির হয়েছে। লাগেজ সিস্টেমে সব ব্যাগপত্র তুলে দিচ্ছে তৌফ ও সামিক। চোখের সামনে যেনো দুঃস্বপ্নের মূহুর্ত চলছে, এইতো ঘুম ভাঙলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না, এমনটা হলো না। সকাল থেকে পাগলের মতো মাহতিমের খোঁজ করে যাচ্ছে। ওর সঙ্গী নোমানকেও রীতিমতো কল দিয়েছে। নোমানও কিছু জানেনা। তৌফ বিমর্ষ মুখ তুলে বললো,

– কি থেকে কি হইলো দোস্ত? ভাবী যে চইলা যাইতাছে, ওই শা:লা তো এখনো জানে না। ক্যামনে খবরটা পাঠাই? ফোনটাও সাথে না নিয়া রুমে ফালায় গেছে।

সিয়াম শান্ত করে বললো,
– থাম, চেঁচিয়ে লাভ নেই। আজকে যদি ভাবী বিদায় হয়, শুধু বুঝে রাখ, মাহতিম এখনই শেষ। ওর দোষের জন্য ভাবী চেতছে। এমনে-এমনেই একটা মানুষ এতো চেতবো না।

হাতে ছোট্ট একটা সাইড ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসলো মেহনূর। সবার আগে মেহনূর চলে এসেছে। বাকিরা আস্তে-ধীরে নামছে। সিয়াম ডোর টেনে দিতেই মেহনূর চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলো। জানালার ধারের সীটটা দখল করতেই মেইন গেইট দিয়ে শব্দ হলো। সিয়াম আর তৌফ মেইন গেটের দিকে তাকাতেই কালোজীপটার আগমন দেখতে পেলো। মেহনূর তখন কোলের উপর বই খুলে রাখছিলো, যেনো কিছুই শোনেনি এমন একটা ভাব ধরে শান্ত রইলো। জীপটা গ্যারেজে ঢুকিয়ে মাইক্রোর দিকে বেখেয়ালে তাকালো মাহতিম। মাইক্রোতে কে বসে আছে সেটা ভালোভাবে লক্ষ করেনি। বাড়ির দিকে যেতে নিলে তৌফ চেঁচিয়ে ডাকলো,

– মাহতিম! এ্যাই মাহতিম?

মাহতিম পা থামিয়ে কপালের ঘাম ঝেড়ে বললো,
– বল,

তৌফ সাথে-সাথে উত্তর দিলো,
– ভাবী চলে যাচ্ছে।

ক্লান্ত-নির্ঘুম-অন্যমনষ্ক ছিলো মাহতিম। তাই কথা শুনতে না পেয়ে বিরক্ত হয়ে ফের যেতে নিলো। বড়-বড় পা ফেলে এগুতে নিলে তাড়াহুড়ো কন্ঠে তৌফ চেঁচিয়ে উঠলো,

– ওই শা:লা! তোর বউ চলে যাচ্ছে!

বজ্রাহতের মতো চোখ বড় করে থামলো। সিঁড়ির ধাপে পা ফেলার জন্য পা উঁচিয়েছিলো, সেটা নামিয়ে পিছু তাকালো মাহতিম। এবার তার তীক্ষ্মদৃষ্টি সরাসরি গাড়ির দিকে। মাহতিম রোবটের মতো প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে তাকিয়ে আছে। কানে কি স্পষ্ট শুনেছে? ‘ বউ চলে যাচ্ছে ‘ ? মাহতিমকে আসতে দেখে সিয়াম ও তৌফ সেখান থেকে কেটে পরলো। মাহতিম ধীরপায়ে এগুতে-এগুতে মাইক্রোর কাছে এসে পৌঁছলো। মাইক্রোর ভেতরে খুব মনোযোগের সহিত ‘ শেষ বিকেলের মেয়ে ‘ পড়ছে। বইটা কোলের উপর নমনীয় ভঙ্গিতে রাখা। মাহতিম শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেই ছোট্ট গলায় বললো,

– কোথায় যাচ্ছো?

পুরো একপাতা পড়ার পর বইটা বন্ধ করলো মেহনূর। না পড়া পযর্ন্ত ততক্ষণ চুপ ছিলো সে। বইটার ফাঁকে বুকমার্ক ঢুকিয়ে সেটা পাশে রেখে দিলো। জানালার বাইরে দৃষ্টি দিয়ে বললো,

– আপনার মুখটা একটু ভেতরে আনুন।

রোবটের মতো কমান্ড মেনে মাথাটা নিচু করলো মাহতিম। জানালার কাছে মুখটা আনলে মেহনূর জানালার গা ঘেঁষে বসলো। মাহতিমের মুখটার দিকে তাকিয়ে থেকে ম্লান হেসে বললো,

– দোষটা কি আমার ছিলো? কেনো আমাকে বুঝতে পারলেন না আনসারী সাহেব? আপনাকে তো নিজের সবটুকুই দিয়েছিলাম। যে আদর-যত্ন-ভালোবাসা আমাকে শিখিয়েছিলেন, আমিতো সবই আপনার কাছে সপে দিয়েছি। নিজের কাছে কিচ্ছু জমা রাখিনি। তবুও দিনশেষে এই দিন দেখতে হলো? ছেড়ে যাওয়াই যদি কপালে লিখা থাকতো, তাহলে কেনো আপনার সাথে দেখা হলো? আমি কোনোদিন ভাবতেও পারিনি আমার কপাল যে এতো খারাপ! বাবা না থাকলে বুঝি কোনো মেয়ের মূল্য নেই। আপনি ভালো করে জানতেন, আজও আপনার যাওয়াটা আমি মেনে নিতে পারিনা। সে-ই আপনি আমাকে কাল সকালে যাওয়ার কথা শোনালেন? একসময় দুটো দিন থাকার জন্য প্রচণ্ড আফসোস করতেন, আজ আপনি ছুটি বাতিল করে দিলেন? কার জন্য করলেন? আমার জন্য? আমার জন্য না ছুটি বাড়িয়ে ফেলতেন? কই গেলো ওইদিন? আর কোনোদিন অভিযোগ করবো না। আপনি ডাকলেও ফিরবো না। যেখান থেকে এই নোংরাকে টুকিয়ে এনেছিলেন, আজ সেই নোংরা আসল জায়গায় ফিরে যাচ্ছে। এখানে অনামিকার মতো স্মার্ট মেয়ে আর আনসারীর মতো ব্যস্ত মানুষের বড্ড হাহাকার। নোংরা গেঁয়ো জন্ঞ্জালদের কোনো জায়গা নেই। একদম নেই।

ম্লান হাসিতে অশ্রু ভরা চোখে তাকিয়ে আছে মেহনূর। বিষাদের হাসিতে ভেতরের সমস্ত যন্ত্রণা-উৎকন্ঠা শক্তভাবে চেপে রেখেছে। গালের উপর মোটা প্রস্থের অশ্রু পরছে। বাধ ভাঙার মতো চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। কোলের উপর টপটপ অশ্রু বর্ষণ হতেই ভাঙচুর গলায় বললো,

– আপনি চাইলে কাগজ পাঠিয়ে দিয়েন। আমি সই…

দাঁত শক্ত করে চোখ কুঁচকালো মেহনূর। বীভৎস শব্দগুলো ঠোঁট বেরিয়ে আসছে না। কেউ গলাটা যেনো চেপে ধরেছে। ঢোক গিলেও শুষ্ক গলাটা ভিজছে না, কন্ঠনালী রুক্ষ হয়ে গেছে। মাথা নিচু করে নাক টানলো মেহনূর, দুচোখের উপর তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুল চেপে অশ্রু নিংড়ে ফেললো। কয়েক মিনিট পর নিজেকে ধাতস্থ করে মাথা তুললো। জানালার কাছে মাহতিমের মুখটা এখনো শান্ত-স্বাভাবিক। পুরোপুরি প্রতিক্রিয়াশূন্য, নির্বিকার। মেহনূর হালকা একটা ঢোক গিলে মাহতিমের মুখটা আদর করে ধরলো, মুখটা দুহাতে টেনে আর্দ্র চোখে বললো,

– এই শেষবার হ্যাঁ? আর আপনাকে চুমু খাব না।

শেষ বাক্যটা বলতে গিয়ে ডানে-বামে মাথা নাড়ালো মেহনূর। মুখ এগিয়ে ঘনিষ্ঠ হতেই মাহতিম চোখ বন্ধ করলো। উষ্ণ জোড়ায় তীব্র আকুলের ছোঁয়া পেতেই সবটুকু আদর মিলিয়ে দিলো মেহনূর। উন্মত্তের মতো ওষ্ঠযুগলের উপর অধিকার ফলালো সে। শেষবারের মতো মাহতিমের মায়াটুকু কাঙ্গালের মতো টেনে নিলো। শুষ্ক খরার মাঠ যখন অশ্রান্ত বারিধারায় সতেজ হয়ে উঠে, মাটি তখন বৃষ্টির পানি শুষে-শুষে সরস নবীনে পৌঁছায়। তেমনি ব্যকুল আকাঙ্ক্ষায় মাহতিমের অতলস্পর্শী ছোঁয়ায় অধীর হলো মেহনূর। ওষ্ঠজোড়া মুক্ত করে মাহতিমের দিকে চোখ খুলে তাকালো। লাল হওয়া টকটকে ঠোঁটদুটোর দিকে একঝলক তাকালো মেহনূর। মাহতিম চোখ খুলে বোবাদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মেহনূর আবার একটুখানি হেসে দিলো। হাসতেই দু’চোখের কোণা থেকে টপ করে অশ্রু পরলো। মাহতিমের কাটা গালটার দিকে দৃষ্টি রাখলো সে। নরম চোখে তাকিয়ে থাকতেই বৃদ্ধাঙ্গুলে ক্ষতটা আলতো ছুঁয়ে দিলো। মাঝের দূরত্বটুকু ঘুচিয়ে শেভহীন গালটায় নিজের গাল রাখলো মেহনূর। ধারালো বাঁ-গালটায় নিজের গাল মিলিয়ে চোখ বন্ধ করলো। পারফিউমের ঘ্রাণটা নিশ্বাসের তালে-তালে পাচ্ছে। পরিচিত ঘ্রাণ, গায়ের মিঠে সুভাসটা মেহনূর শেষবারের মতো অনুভব করছে। ঠোঁট এগিয়ে গালটায় চুমু খেলো মেহনূর। খোঁচা-খোঁচা ধারযুক্ত দাড়িগুলো সূচের মতো মেহনূরের ঠোঁটে ঢুকে গেলো। ঠোঁট নামিয়ে সেই ক্ষতটার কাছে মুখ আনলো মেহনূর। কাঁটা জায়গাটার উপর নিঃসঙ্কোচে ঠোঁট চেপে গাঢ় চুমু খেলো। ক্ষতটায় আকস্মিক ব্যথা লাগতেই মাহতিম চোখ খিঁচুনি দিলো। চোয়াল শক্ত করে ব্যথাটা ভেতরেই চেপে রাখলো। তখনই কানের কানে ফিসফিস সুরে শুনতে পেলো,

– একদিন আপনার জন্য আমার কোমরে ক্ষ’ত হয়েছিলো। আপনি সেই জায়গায় ঠোঁট ছুঁয়ে প্রথম চুমু খেয়েছিলেন। আজ আমার ভুলের জন্য আপনার গালে ক্ষত হলো। আমিও সেই জায়গাটা ছুঁয়ে দিলাম আনসারী সাহেব। আপনার চুমুটা ফিরিয়ে দিলাম। পারলে সবকিছু আপনার কাছে ছুঁড়ে দিয়ে যেতাম। আমি পারলাম না। আপনি ভালো থাকবেন। অনেক বেশি ভালো থাকবেন। আপনাকে আমি শান্তি দিলাম। আজ থেকে শান্তি দিলাম। আপনার যাত্রা শুভ হোক।

গাল ছেড়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরালো মেহনূর। অঝোরে চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পরছে। নিঃশব্দে অন্তঃস্থলের দহন বেড়ে যাচ্ছে। মাহতিম ভালো থাকুক। হাতের তেলোয় চোখ চাপতেই মারজা গলাটা শোনা গেলো। মায়ের কন্ঠ শুনেই বোধহয় মাহতিম জানালা থেকে সরলো। চুপচাপ সবাইকে অগ্রাহ্য করে বাড়িতে ঢুকে গেলো। সুজলা কিছু বলতে যেয়ে মাহতিমের অবস্থা দেখে বললেন না। সুরাইয়া, সুজলা, শেফালি, সাবা, মাহমুদা সবাই মাইক্রোতে বসলো। মেহনূর সবার কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্য মাথা নুইয়ে রাখলো। সিয়াম স্লাইডিং ডোরটা এক টান দিয়ে বন্ধ করে দিলো। ড্রাইভিং সিটে উঠে মাইক্রো স্টার্ট দিলো সে। মাইক্রোটা যখন মৃদ্যু ঝাঁকুনি খেয়ে চলতে শুরু করলো, তখন দূর থেকে একাকী ছাদে দাঁড়িয়ে দেখছিলো মাহতিম। মুখটা গম্ভীর আকারে শক্ত হয়ে আছে। গাড়িটা যখন মেইন গেইট পেরিয়ে চলে যাচ্ছিলো, তখন বুকের ভেতর মোচড়ে উঠার মতো অসহ্য ব্যথা লাগলো। তৎক্ষণাৎ চোখ বন্ধ করলো মাহতিম। তার পাপড়ি চুয়ে-চুয়ে দু’চোখ থেকে অশ্রু ঝরে পরলো। বিকেলের হাওয়াটা সবটুকু নিরবতাকে চ্ছিন্নভিন্ন করে দিলো। মাহতিম ধীরগতিতে মাথা নুইয়ে ফেললো। তীব্র হাহাকারের সাথে ভেতরটা এফোঁড়-ওফোঁড় হলো তার। ডান পকেট থেকে সাদা কাগজের খামটা কাঁপা-কাঁপা হাতে বের করলো, দূর্বল হাতে সাদা খামটা রেলিংয়ের উপর রাখলো। খামটার দিকে একপলক তাকাতেই ভেতরটা যেনো দুমড়ে-মুচড়ে নিংড়ে এলো তার। আর পারলো না মাহতিম, তৎক্ষণাৎ চোখদুটো কুঁচকে ফেললো। দুচোখ থেকে অবাধ্য অশ্রু টপটপ করে সাদা খামটার উপর পরছিলো। খামের উপর নীল রঙের লেখাটা নোনাজলের জন্য নষ্ট হয়ে গেলো। মাহতিম চূর্ণবিচূর্ণ কাঁচের মতো বিধ্বস্ত হয়ে থেমে-থেমে বলতে লাগলো,

– যতটা যত্ন দিয়ে তাকে ভালোবাসলাম…। ততটা অযত্ন করে আমাকে ফেলে গেলো।

.

সমাপ্তি .

#পাঠ_সংক্ষেপ : গ্রামীণ পরিবেশে ছুটি কাটাতে দলবল নিয়ে হাজির হয় মাহতিম। মায়ের ইচ্ছার কাছে নতজানু হয়ে তারই আত্মীয়ের বাড়িতে উপস্থিত হয়। বাইরে থেকে যতটা স্বাভাবিক ছিলো এই পরিবার, ততটা যেন সুবিধার নয়। পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতায় দেখা হয় মেহনূরের সাথে। যার চালচলন ছিলো অদ্ভুত, হাবভাব ছিলো প্রশ্নমালায় ঘেরা। এই অদ্ভুত মেয়েটির প্রতি ভাগ্য যেনো চক্রান্ত শুরু করে। ধীরে-ধীরে মিলে যায় দুটো অদৃশ্য মনের সংযোগ। দেখা দেয় নানা দূর্ভোগ। জানা যায় বহু ধরনের রহস্যলীলা। সেই ধোয়ার আড়ালে মাহতিমের মূল উদ্দেশ্য যেন ঢাকা পরে ছিলো। আস্তে-আস্তে বেরিয়ে আসে নানা লোমহর্ষক ঘটনা। প্রতিটি পর্বে ধরা পরে চাঞ্চল্যকর কিছু সত্য। পুরো স্বাভাবিক চেহারাকে বদলে দিয়ে অশনি ঝড়ের রূপ নেয়। ঝড়ের দামাল ঝাপটাকে উল্লাসের সাথে মোকাবিলা করে পরিস্থিতি। দিনশেষে ভাগ্য যাদের মিলিয়ে ছিলো, কেনো হলো তাদের অবিচ্ছেদ্য ইতি? নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে দ্বিতীয় সূচনার ইতিহাস? ষড়যন্ত্রের খেল-তামাশা কি এখানেই শেষ? নাকি এখান থেকে নতুন দিগন্তের ভূমিকা? মাহতিম আনসারীর পরবর্তী চাল কি হবে, তা জানার জন্য অপেক্ষা।

#ফাবিয়াহ্_মমো
#FABIYAH_MOMO .
#২৬মে_২০২২ .
#প্রথম_অধ্যায় .

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here