কৃষ্ণময়ীর_অলংকার #রাহনুমা_রাহা #পর্বঃ২০

0
1030

#কৃষ্ণময়ীর_অলংকার
#রাহনুমা_রাহা
#পর্বঃ২০

বিছানার উপর মেলে রাখা ল্যাভেন্ডার রঙের শাড়ির দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে তপা। কিয়ৎকাল আগে পলক নিজ হাতে বিছানার উপর রেখে গেছে শাড়িটা। সাথে কড়া গলায় বলে গেছে তিনটার মধ্যে রেডি থাকতে। ভুলেও যেন সাড়ে তিনটা না বাজে। তিনটা মানে তিনটাই। শাড়িটা ব্যাগে মোড়ানো ছিল। কৌতূহল বশত তপা মোড়ক উন্মোচন করে বের করল শাড়িটা। ল্যাভেন্ডার কালারে হালকা গর্জিয়াছ শাড়ি। মুখে মুখে বিরক্ত প্রকাশ করলেও বেশ পছন্দ হয়েছে তপার। কিন্তু উল্টে পাল্টে দেখার সময় ভ্রু কুঁচকে ফেলল। শাড়ি দিয়েছে, অর্নামেন্টস দিয়েছে। কিন্তু সাথে ব্লাউজ পেটিকোট কিচ্ছু নেই। তখন থেকেই বিরক্ত হয়ে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছে করছে কিছু কথা শুনিয়ে দিতে। নয়তো ব্লাউজ পেটিকোট ছাড়াই পরে নিতে। পরক্ষণেই ওভাবে পলকের সামনে যাওয়ার কথা ভাবতেই কান গরম হয়ে উঠল।

পলক তিনবার তপা কে কল দিয়েও যখন পেল না তখন বাধ্য হয়ে সিঁড়ি ভেঙে চিলেকোঠায় চলে এলো। তপা শাড়ি পরে আঁচলে সেফটিপিন লাগাচ্ছিল। ঠিক সেই মূহুর্তেই দরজায় কড়া নাড়লো পলক। তপা আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়াল। ভীষণ লজ্জা করছে যে। গুটি গুটি পায়ে দরজার কাছে গিয়েও মিনিট খানেক সময় নিল খুলতে। দরজা খুলতে দেরি হওয়ায় বেশ বিরক্ত হলো পলক । বিরক্তিতে স্বেচ্ছায় দুটো ভাজ পড়ল ভ্রু যুগলের মাঝ বরাবর । তপা দরজা খুলতেই ভাজ গুলো কর্পূরের মতো উবে গেল। বক্ষস্থলে বয়ে গেল শীতকালীন উত্তুরে হাওয়া। যা মূহুর্তেই শরীরে কম্পন তুলে দিতে বাধ্য।
কিয়দংশ সময় পর পলক মসৃণ কণ্ঠে শুধালো,
“আমার কি প্রশংসা করা উচিৎ কৃষ্ণময়ী?”
তপা মৃদু হেসে বলল,
“প্রশংসার যোগ্য মনে হচ্ছে?”
পলক ঠোঁট কামড়ে হাসল। বুকের বাঁপাশে হাত রেখে বলল,
“এখানে ছুঁয়ে দেখ একবার। ঘন্টায় ১৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইছে।”
তপা ভ্রু কুঁচকাল। পর মূহুর্তেই ফিক করে হেসে ফেলল।

“আমরা কোথায় যাচ্ছি এত সেজেগুজে?”
পলক বাইকে বসে হেলমেট লাগানো বাদ দিয়ে তপার দিকে তাকিয়ে বলল,
“সেজেগুজে মানে? সাজলে কোথায় তুমি? এটাকে সাজা বলে? শুধু শাড়ি আর একটু গহনা। চুলগুলোও খোঁপা করে আঁটকে ফেলেছো। এটাকে সাজগোজ বলে?”
“আপনি তো এর থেকেও কম দিয়েছিলেন।”
পলক ভ্রু কুঁচকে বলল,
“মানে?”
“শুধু শাড়ি এনেই বললেন রেডি হয়ে নিতে। কিন্তু শাড়ির সাথে যে গহনা বাদেও আরও কিছু লাগে। সেটা জানতেন না? সময় ছিল বলে আমি কিনে নিতে পেরেছি। যদি সময় না থাকত তাহলে?”
পলক মাথা চুলকে হেসে ফেলল। চোখে দুষ্টুমি ফুটিয়ে তুলে বলল,
“ওভাবেই পড়তে। চোখের বালি সিনেমার মত। ঐশ্বরিয়া রায় যেভাবে পড়েছিল সেভাবে।”
তপা চোখ বড় বড় করে বলল,
“আপনি যে ভীষণ নির্লজ্জ সেটা জানেন?”
পলক ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিৎ হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,
“পৃথিবীর সব পুরুষই একজনের কাছে নির্লজ্জ হয়।”

কাজী অফিসের সামনে এসে বাইক থামাল পলক। তপা আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
“আমরা এখানে কেন এলাম মিস্টার তাজওয়ার?”
পলক তপাকে তাড়া দিয়ে বলল,
“আগে নামো। তারপর বলছি।”

তপার হাত ধরে নিয়ে যাওয়ার সময়ও বারবার জিজ্ঞেস করল কেন এসেছে এখানে। কিন্তু পলক সরাসরি কিছু বলল না। কেবল বলল,
“আগে ভেতরে চলো। তারপর বুঝতে পারবে।”

ভেতরে গিয়ে তপার নজর পরল সিজান, প্রান্ত, পৃথা ও অচেনা তিন জন মানুষের উপর। পলক কিছু বলার আগেই পৃথা কে জড়িয়ে ধরল তপা। ভাইদের সাথেও আলাপচারিতা শেষে পলকের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এখন তো বলুন কেন নিয়ে এলেন এখানে?”
পলক বিনা সংকোচে বলল,
“বিয়ে করব।”
তপা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
“কাকে?”
“যাকে ভালবাসি।”
তপা চমকে উঠল। খানিকটা সময় নিল নিজেকে ধাতস্থ করতে । প্রান্ত আর সিজান তপার পাশে এসে দাঁড়াল। প্রান্ত মৃদু স্বরে বলল,
“বিয়ে তো একদিন করতেই হবে। পলক চাইছে আজই বিয়েটা সেরে নিতে। তুই আর অমত করিস না বোন।”
তপা কঠিন গলায় বলল,
“উনি চাইলো আর তোমরা চলে এলে? একবার আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলে না?এভাবে বিয়ে হয় না ভাইয়া।”
“ও তোকে খুব ভাল রাখবে বোন। এজন্যই আমরাও চাইছি তোরা বিয়ে করে আমাদের একটু নিশ্চিন্তে নিশ্বাস নিতে দে। তোর মামার কথাও ভাব। সেও তো কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার মত হয়ে গেছে। তার কত চিন্তা তোকে নিয়ে। সেটা কি তুই বুঝিস না? তাকেও তো তার দায়িত্ব থেকে মুক্তি দিতে হবে তাই না? পাত্র যদি পলক না হতো তাহলে হয়তো আমি এভাবে বলতাম না। যেহেতু পলক নিজেও চাইছে, তুইও নিশ্চয়ই ওকে পছন্দ করিস। তাই বলছি বিয়েটা করে নে বোন। বাকিটা তোর ইচ্ছা। আমরা চাইতে পারি কিন্তু জোর করতে পারি না। কারণ জীবনটা তোর।”

সিজান কিছু বলতে চাইলে তপা পলকের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার আপনাকে কিছু বলার আছে। আলাদা কথা বলার ব্যবস্থা করুন।”

“আপনি যা করছেন ভেবে করছেন ? পরে এটা নিয়ে আফসোস করবেন না তো? সময় আছে এখনো ভাবুন।”
পলক ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটিয়ে বলল,
“পলক তাজওয়ার না ভেবে কোনো কাজ করে না। এটা তো জীবনের প্রশ্ন। সারারাত ভেবেছি। নিজের মনকে জিজ্ঞেস করেছি বারবার। প্রতিবার একটাই উত্তর এসেছে। এই মেয়েটা কে যে কোনো মূল্যে আমার বক্ষ পিঞ্জিরায় আবদ্ধ করতেই হবে। নয়তো আমার মরণ নিশ্চিত।”
তপা একটু সময় ভাবল।
“কিন্তু মামা? যে মানুষটার জন্য আমি বেঁচে আছি এখনো। তাকে ছাড়া কিভাবে বিয়ে করব আমি? তাছাড়া আপনার তো বাবা মা আছে। তারাই বা কিভাবে নেবেন ব্যাপারটা? আপনি তাদের জানিয়েছেন?”
“মামার থেকে অনুমতি নিয়েছি আমি। বাবা মা কে আমি ঠিক সামলে নেব। আগে তোমাকে আমার নামে দলিল করে নেই। তারপর সবদিক ঠিক করে ফেলব।”
তপা মাথা নিচু করে মৃদুস্বরে বলল,
“আমার আরও কিছু বলার আছে।”
পলক ভ্রু উঁচিয়ে বোঝালো আর কি বলার আছে।
তপা হাতে শাড়ির আঁচল পেঁচাতে পেঁচাতে বলল,
“আপনি তো কাল শুনলেন সবকিছু। আমাকে বিয়ের পর স্বাভাবিক হওয়ার পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। আপনাকে আমার ভাললাগে। বিশ্বাস, ভরসা দুটোই করি। অবচেতনে হয়তো ভালোও বাসি। কিন্তু মিস্টার তাজওয়ার আমি বিয়ের পরের স্বামী স্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত সম্পর্কের জন্য প্রিপেয়ার্ড নই। জানিনা সবটা মেনে নিতে কতদিন লাগবে। ছোট বেলার সেই ট্রমা থেকে এখনো বের হতে পারি নি আমি।সেটা আপনি খুব ভালো করেই জানেন।”
এতটুকু বলে সামান্য থেমে দম নিল তপা।
“এককথায় আপনার ছোঁয়া সহ্য করার জন্য যথেষ্ট সময় দিতে হবে আমাকে।”
শেষের কথাগুলো চোখ বন্ধ করে এক নিশ্বাসে গড়গড় করে বলল।
পলক মৃদু হেসে বলল,
“আমার তোমাকে চাই তিয়াশা। দিনশেষে যেন বলতে পারি এই মেয়েটা আমার বউ। আমার অর্ধাঙ্গিনী। ছোঁয়াছুঁয়ির ব্যাপারটা আমার উপর ছেড়ে দাও।”
তপা চোখ তুলে পলকের দিকে তাকাল। লোকটার ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি এখনো তাদের আভিজাত্য ছড়িয়ে যাচ্ছে।

মামার সাথে কথা বলে তিন কবুল বলার মাধ্যমে তপা সারাজীবনের জন্য পলকের সাথে বাঁধা পরে গেল। কবুল বলার সময় তপা যখন কেঁপে কেঁপে উঠছিল তখন পলক টেবিলের নিচ দিয়ে একহাত চেপে ধরে আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছিল অনবরত।
শুধুমাত্র তিনবার বলা কবুল আর একটা সিগনেচার। মূহুর্তেই নিজের থেকে অন্যের সম্পদ বানিয়ে দিল তপা কে। নতুন ব্যাপার নয় সেটা। এটাই চলে এসেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে।

রাতের প্রথম প্রহরের শেষাংশ।
তপা বিছানায় শুয়ে সারা দিনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মুখস্থ পড়ার মত রিভাইস দিচ্ছিল। হঠাৎ আসা মেসেজের জানান দিতে টুংটাং শব্দে বেজে উঠল অদূরে অযত্নে ফেলে রাখা ফোনটা। তপা হাত বাড়িয়ে নিজের কাছে টেনে আনল যন্ত্রটা। মোবাইল স্কিনে চোখ পড়তেই বক্ষস্থলে কাঁপন ধরল।
গোটা গোটা অক্ষরে লেখা তার সদ্য হওয়া স্বামীর বার্তা।
“আজ আমাদের বাসর রাত কৃষ্ণময়ী।”
তপা কিছুক্ষণ নীরবে ভাবল। তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে টাইপ করে চোখ বন্ধ করে সেন্ড অপশনে স্পর্শ করল।
“আমি কি আসব?”
পলক শুয়ে ছিল। তপার মেসেজ দেখে লাফ দিয়ে উঠে বসল। কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে লিখল,
“উঁহু। আমি আসছি পাঁচ মিনিটে।”
অতিদ্রুত ওঠে বসল তপা। বিয়ের শাড়িটা এখনো গায়ে জড়ানো। তাড়াহুড়ো করে শাড়ি বদলে একটা থ্রি পিস পরে নিল। চুলগুলো হাত খোঁপা করে ঘাপটি মেরে বসে রইল বিছানায়। মনে মনে হাজারো প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে।
“তবে কি সে ভুলে গেল আমার দূর্বলতা? ভুলে গেল বিয়ের আগমুহূর্তে বলা কিছু কথা? ভুলে গেল ভরসা করে বলা কিছু স্বীকারোক্তি?”

পলকের আসার আভাস পেয়ে দরজা খুলে আবার বিছানায় গিয়ে বসল তপা। পলক তপার নীরবতা দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। তার সদ্য হওয়া বউটা কেমন রোবটের মত আচরণ করছে। তার দিকে তাকাল পর্যন্ত না।
পলক নিজেই পিরিচে মিষ্টি সাজিয়ে এনে তপার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“নাও বউ আমার বিয়ের মিষ্টি খাও।”
তপা চোখ তুলে পলকের দিকে তাকাল। পলকের চোখে মুখে দুষ্টুমি খেলা করছে। তপা অবাক হয়ে বলল,
“এত মিষ্টি আমি খাব?”
“না খেতে পারলে আমাকে খাওয়াও। পুরো অ্যাপার্টমেন্টের সবাই কে মিষ্টি খাওয়ানো হয়ে গেছে। অথচ আমার বিয়ের মিষ্টি এখনো আমার বউই খেলো না। বউ খেলো না বলে আমিও খেতে পারলাম না।”
তপার অবাক হওয়ার মাত্রা যেন দ্বিগুণ হলো।
“পুরো অ্যাপার্টমেন্টের মানুষের মিষ্টি খাওয়া শেষ মানে কি? আপনি সবার ফ্ল্যাটে মিষ্টি বিলিয়েছেন?”
পলক ঠোঁট কামড়ে হেসে মাথা নাড়াল।
তপা চোখ বড় বড় করে বলল,
“তার মানে সবাই কে বলেছেন আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে?”
পলক আবারও মাথা নাড়াল। তপা বিরক্ত হয়ে বলল,
“কি মাথা নাড়াচ্ছেন? মুখ নেই? কথা বলুন।”
পলক শব্দ করে হেসে ফেলল।তপা বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে অন্য দিকে তাকাল।
পলক মোলায়েম কণ্ঠে বলল,
“বিয়ে তো হয়ে গেছে। তাই এখন থেকে যখন তখন তোমার ডাক পরবে আমার ফ্ল্যাটে। কেউ যাতে তোমার দিকে আঙুল তুলতে না পারে তাই বলে দিয়েছি। শুকনো মুখে তো আর বলা যায় না তাই না?”
তপা মৃদু স্বরে বলল,
“কিন্তু মিস্টার তাজওয়ার কেউ আপনার বাড়িতে যদি বলে দেয়?”
“বললে বলুক। একদিন তো আমিই জানাবো।”
“আপনার থেকে জানা আর বাইরের কারো কাছ থেকে জানা আলাদা ব্যাপার। তাই না?”
পলক তপার মুখের সামনে মিষ্টি তুলে বলল,
” আগে মিষ্টিমুখ । তারপর কথা। নাও হা করো এখন।”
তপা মুচকি হেসে একটু খেয়ে পলকের দিকে বাড়িয়ে দিল। তা দেখে পলক মুচকি হেসে বলল,
“বাহ! বউতো আমার বেশ রোমান্টিক।”
তপা মাথা নিচু করে লাজুক হাসল।

“মিস্টার তাজওয়ার আমার কিছু বলার ছিল…”
পলক তপার ঠোঁটে আঙুল ছুঁয়ে আটকে দিল। হঠাৎ এহেন ছোঁয়ায় তপার গোটা শরীর কেঁপে উঠল। শুকনো মুখে ঢোক গিলে আবার কিছু বলার চেষ্টা করতেই পলক ফিসফিস করে বলল,
“এবার কি অন্য ভাবে আঁটকাতে হবে?”
তপা ভ্রু কুঁচকে প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকাতেই পলক ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল,
“এভাবে তাকিয়ে না বউ। বুকে বড্ড লাগে।”
তপা ঈষৎ রেগে বলল,
“আপনি বড্ড নাটুকে হয়ে যাচ্ছেন দিন দিন।”
“যাই হই দিনশেষে তোমারই। এভাবেই সহ্য করে নাও।”

তপা মাথা নিচু করে ফেলল। মুখে কিছু বলতে পারল না। অথচ বুকের ভেতর তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। অনূভুতিরা উচ্চ স্বরে বলছে,” এভাবেই চাই আপনাকে। এই মূহুর্তে, প্রতি মূহুর্তে, আজন্মকাল।”

পকেট হাতড়ে ছোট্ট একটা লাল রঙের বক্স বের করে তপার দিকে বাড়িয়ে দিল পলক। তপা বক্সের দিকে ইশারা করে বলল, “কি আছে ভেতরে?”
পলক মসৃণ কণ্ঠে বলল,
“নোসপিন।”
তপা অবাক হলো। ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল সুক্ষ্ম হাসির রেখা।
পলক মন খারাপ করে বলল,
“আমি তো তেমন কিছুই দিতে পারলাম না আজ। আপাতত এটুকুই নাও। যেদিন পুরো পৃথিবীকে জানিয়ে বউ বানিয়ে নিয়ে যাব সেদিন তোমায় অলংকারে মুড়িয়ে দেব।”
তপার ঠোঁটের কোণের সুক্ষ্ম রেখাটা রূপ পেল প্রশস্ত হাসিতে।
অমলিন হেসে পলকের চোখে চোখ রেখে বলল,
“মেয়েদের সবচেয়ে বড় অলংকার তার স্বামী। স্বামীর ভালবাসা। আমার তো সবটাই আছে। আর কিছু লাগবে না। যে টুকুনি আছে এটুকু দিয়েই আমি সর্বোচ্চ সুখীর কাতারে নিজের নাম লেখাতে পারব। এটা আমার বিশ্বাস।”

পলকের হৃদ মাঝারের তপ্ত মরুভূমিতে এক পশলা বৃষ্টির ছোঁয়া পেল যেন। কণ্ঠ নিঃসৃত কয়েকটা শব্দ এতটা প্রশান্তি এনে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে? নাকি তার কৃষ্ণময়ীর কণ্ঠনালী থেকে নিঃসৃত হয়েছে বলেই এত প্রশান্তি।
বক্স থেকে শুভ্র পাথরে ঝিকঝিক করতে থাকা নাকফুলটা বের করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখল তপা। কিঞ্চিৎ সময় পর পলকের দিকে তাকাল।
এতক্ষণ সময় নিয়ে দেখার জন্য পলকের মনে হলো তপার বুঝি পছন্দ হয় নি। তাই কিছু বলতে চাইল। কিন্তু তার আগেই তপা পলকের সব ভাবনাকে মাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“আপনি পরিয়ে দিন।”
পলক আকষ্মিক ঝটকা খাওয়ার মত চমকে উঠল। কয়েক প্রহর তাকিয়েই রইল।
তপা মুচকি হেসে বলল,
“কি হলো পরিয়ে দিন।”

পলক কাঁপা কাঁপা হাতে ফুলটা নিয়ে পরিয়ে দিল। পুরোটা সময় তপা পলকের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখল। চোখ দুটোতে কিছু একটা দেখতে পাচ্ছিল সে। খুশি? আনন্দ? নাকি হঠাৎ কিছু পাওয়ার উচ্ছ্বাস?

দু’হাতে কপোল স্পর্শ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল পলক। ওষ্ঠাধর স্পর্শ করল তপার ললাটে। স্বামী থেকে পাওয়া প্রথম স্পর্শে তপা চোখ বন্ধ করে ফেলল। শরীরটাও বোধহয় কেঁপে উঠল খানিকটা।
কিয়ৎক্ষণ পর পলক মসৃণ কণ্ঠে বলল,
“বউ, তোমাকে তো বউ বউ লাগছে।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here