কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব৪৬

0
713

#কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব৪৬
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন

“সতেরো বছর পযর্ন্ত খান পরিবারের ছেলেরা শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থাকে। তাদেরকে মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটা শিক্ষা দেওয়া হয়। যাতে পরবর্তীকালে কোনো অসুবিধা না হয়। আমি তৈমুর খান, বাবা মায়ের সর্ব কনিষ্ঠ পুত্র।যদিও আমার বাবা মা আলাদা থাকতেন।জন্ম থেকেই আমি মায়ের সঙ্গে থাকতাম। বাবার সঙ্গে মায়ের সম্পর্কটা ততটা খারাপ ছিল না আবার ভালোও ছিল না। নরমালি যেমন হয় আর কি তেমন না। মা প্রচণ্ড ভয় পেতেন বাবাকে। বছরের একটা সময় আমরা আমাদের বাবাকে সঙ্গে পেতাম। আমার বাকী ভাইয়েরা বাবার সঙ্গে থাকতো আমি একা মায়ের সঙ্গে থাকতাম কারণ আমার বয়স তখনও আঠারো হয়নি। মা আমাকে সব সময় নিজের সঙ্গে রাখতেন। বাকী ছেলেদের সঙ্গে উনার দেখা হলেও কেমন খাপছাড়া সম্পর্ক ছিল। ওরা মায়ের কষ্ট অনুভব করতে পারতো না। একজন স্ত্রী কিভাবে স্বামী সন্তানের মায়া ত্যাগ করে বছরের পর বছর পিতার গৃহে অবস্থান করবে? মা চাইতেন আমি যেনো উনার সঙ্গেই থাকি। কাছেকাছে রাখতেন। ভালো একজন শিক্ষকের কাছে আমাকে পড়ানো শুরু করলেন। আমার মায়ের পরিবার ছিল মুসলমান সেই অনুযায়ী আমি মায়ের থেকে ইসলামধর্মের শিক্ষাই পেয়েছিলাম। সেই পরিবারে আছে আরেক ভয়ঙ্কর কাহিনী সেটা এখন বলবো না। আমরা থাকতাম জার্মানির নর্ডলিঞ্জেন নামের একটা ছোট্ট শহরে। যদিও এটা ঠিক তেমন শহর নয়। একে কিছুটা মফস্‌সল বলা যায়। ইতিহাসের খনি লুকিয়ে আছে এই শহরে। ইতিহাসই শহরটিকে বিখ্যাত করে তুলেছে। হীরার খনি আছে এখানে। আমার নানাজানের বেশ প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল। হেসে খেলে আমার দিনগুলো ভালো কাটছিলো। তবে মায়ের চিন্তার শেষ ছিল না। আমার বয়স নিয়ে উনি খুবই আতঙ্কে থাকতেন। আমি তখন এটা বুঝতাম না। এখন বুঝি আমার মায়ের শঙ্কার কারণ। খান পরিবারের ছেলেদের উপরে থাকা অভিশাপ কিছুদিনের মধ্যেই আমাকে গ্রাস করে নিতে চলেছিলো। সেদিন ছিল শনিবার। আমি শিক্ষালয় থেকে বাড়িতে ফিরছিলাম। হেলেদুলে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে ফাঁকা রাস্তা দিয়ে আসার সময় একজন লোকের সঙ্গে আমার দেখা হলো। উনি গাছ তলায় বসে ছিলেন চোখ বন্ধ করে। আমি কৌতূহলী হয়ে উনার সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। জানিনা কতক্ষণ সেটা তবে এক সময় লোকটা নিজে থেকে আমার সঙ্গে কথা বলে উঠলেন। আমি চমকে উঠেছিলাম তবে ভয় পাইনি। উনি গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
> সামনে বসো।
আমি কোনো প্রতিক্রিয়া করলাম না। মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় উনার চোখের দিকে তাঁকিয়ে বসলাম। উনি বক্র হেসে বললেন,
> সে আসবে, তার আসার জন্য একটা মাধ্যমের প্রয়োজন। তাঁকে ছাড়া যে আরেকজন অসম্পূর্ণ। দুজনের আসার জন্য তোমাকে আমি বেছে নিয়েছি। আজ থেকে জাদু লিপির মালিক তুমি। এটাকে ভাগ্য লিপিও বলতে পারো যেটা কেউ জানেনা। এর একটা পৃষ্টতে তুমি তোমার ইচ্ছের কথা লিখতে পারো তবে নিজের জন্য না অন্যর জন্য।
ভদ্রলোকের এইটুকু কথার মানে আমি বিন্দু পরিণাম বুঝিনি বিশ্বাস করো। কার আসার কথা বলা হয়েছে মাথায় ঢুকলো না। আমি হয়তো তখন লোকটার বশে ছিলাম। উনি আমার হাতের কব্জিতে একটা মাদুলি বেঁধে দিলেন। আমি হাত নেড়ে দেখলাম। উনি বলে দিলেন এটা লুকিয়ে রাখতে। বিশেষ করে আমার বাবাকে না দেখাতে। আমি মাথা নাড়িয়ে সাড়া দিলাম। উনি কি সব উচ্চারণ করে একটা বই আমার সামনে হাজির করলেন। সেটা আমাকে দিয়ে শিখিয়ে দিলেন কিভাবে এটাকে অদৃশ্য থেকে দৃশ্যমান করবো।সেদিন এইটুকু কথা হয়েছিলো আমাদের। তারপর বাড়িতে ফিরে আসলাম। সেদিন গভীর রাতে যখন দুচোখের পাতায় আমার তন্দ্রা এসে ভর করেছিলো। ঘুমের মধ্যে আমি এক মানবিকে দেখলাম। তার চনচল আঁখি যুগলে আমি হারিয়ে গেলাম। রেশমের মতো কোমল সোনালী কেশপল্লবে আমার হৃদয়ে ঝড় তুললো। এক রাশি সুখ এসে ভর করলো আমার শরীর মন দেহে। জানিনা ওইটুকু বয়সে আমি কিভাবে এরকম অনুভব করলাম। তাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাতে আমার মনে তীব্র দহন শুরু হলো।। তবে মজার বিষয় হলো রাতের স্বপ্নটা আমি দিনে ভুলে যেতাম। প্রায় রাতে চললো সেই অচেনা রমণীর আগমন। এভাবে মাস খানিকটা পেরিয়ে গেলো। একদিন হুটকরে এক চমৎকার ঘটলো আমার সঙ্গে। পড়ন্ত বিকেলে আমি জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে যখন উদাসীন হয়ে ঘুরছিলাম দেখা হলো সেই মানবীর সঙ্গে। হুবহু মিল আমার স্বপ্ন কন্যার সঙ্গে। আমি তন্ময় হয়ে শুধুই দেখলাম। মেয়েটা বিব্রত বোধ করছিলো তবে সে আমি পরোয়া করলাম না। লজ্জা শরম ভুলে গিয়ে মেয়েটার চোখে চোখ রাখলাম। কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ পেছনে থেকে চিৎকার আসলো,
> ক্যামেলিয়া চলে এসো। ওখানে যেও না।

আমি উঁকি দিয়ে দেখলাম মেয়েটার পেছনে আরও একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্যামেলিয়া অপেক্ষা করলো না। দৌড়ে প্রস্থান করলো আমার সামনে থেকে। আমি অস্থির হয়ে উঠলাম। ওর পিছু নিলাম। নিকটবর্তী এক প্রতিবেশীর আত্মীয় হয়ে এসেছে ক্যামেলিয়া। সে এসেছে গ্রীষ্মকালের ছুটিতে। বড় ঘরের মেয়ে ক্যামেলীয়া। কখনও গ্রাম দেখেনি তাই বায়না পূরণের জন্য ওর পিতা এখানে ওকে রেখে গিয়েছিলো। যদিও তথ্যটা আমি পরে পেয়েছিলাম। তবে খুশি হলাম। প্রতিদিন বিকালে চললো আমাদের চোখে চোখে কথা। মেয়েটা আমাকে পছন্দ করতে শুরু করেছিলো। না করে যাবে কোথায় নিয়তি যে ওকে আমার কাছে টেনে এনেছিলো। নয়তো ওর প্রতি আমার এতোটা টান কেনো তৈরি হলো? কয়েকদিনের মধ্যেই আমার মতো ও ব্যাকুল হয়ে উঠলো। আমাদের দেখা হলো গির্জার পেছনের রাস্তায়। সেখানে লোকজনের চলাচল খুব একটা হয়না। ততদিনে বুঝেছিলাম ভালোবাসা কি। দুজন চুটিয়ে প্রেম করলাম। বিকেলে ছাড়া দেখা হতো না। তাই অপেক্ষা করতাম কখন বিকেল হবে। একটা মাস কখন যে পেরিয়ে গেলো বুঝতেই পারিনি। ঝামেলা বাঁধলো তখন যখন বুঝলাম ওকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ওর বাবা আসবেন। মেয়েটার একটাই কথা ছিল,” প্লিজ কিছু একটা করো। নয়তো তোমাকে পাওয়া আমার ভাগ্যে হবে না।” কি করতাম বলো? নিজের ভালোবাসাকে এভাবে পায়ের কাছে পড়ে থাকতে দেখতে কার ভালো লাগে? আমি উদাসীন হয়ে পড়লাম। আমার বয়স আঠারো হতে কিছুদিন বাকী ছিল। ভাগ্য গুণে আবার সেই ধ্যানমগ্ন লোকটার সঙ্গে আমার দেখা হলো। লোকটা আমাদের দুজনকে বিকেলে দেখা করতে বললেন। আমি ওকে নিয়ে দেখা করলাম। সেদিন লোকটা একা ছিল না। সাদা দাড়ি মুখে উজ্জল বর্ণের এক হুজুরকে দেখতে পেলাম। নির্জন সেই জঙ্গলে আমাদের বিয়ে হলো। একদিকে ভয় অন্যদিকে প্রেয়সীকে নিজের করে পাওয়ার সুখ আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলো। খুব ভালোবাসি তো তাই কাছে পাওয়ার আনন্দটা বেশিই ছিল। কাউকে বলতে পারলাম না এহেন কর্ম করে বসেছি। তবে বেপরোয়া ভাবটা আমার মধ্যে ততদিনে আরও তীক্ষ্ণভাবে ফুঁটে উঠেছে। মেয়েটাকে কাছে টেনে নিতে দুবার ভাবলাম না। আমি স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম। যদি একবার পরিণাম জানতাম তবে কখনও ওকে নিজের এতটা কাছে আনতাম না। বড় প্রেম কাছে না দূরেও নিয়ে যায়। কি করলাম আমি এখন শুধুই আফসোস হয়। একটা রাতের মধ্যে আমার জীবনটা তছনছ হয়ে গেলো। সেদিন ভোররাতে ওর সঙ্গে দেখা করে গৃহে ফিরে এসে আমার বাবাকে দেখলাম। উনি প্রচণ্ড রেগে আছেন আমার উপরে। কারণ জানতে পারলাম না। কৌশলে আমাকে সেদিন এখানে নিয়ে আসা হলো। ফিরে যেতে চেয়েছিলাম। কতবার পালিয়ে যেতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি। তার মধ্যেই আমার শারীরিক পরিবর্তন ঘটতে শুরু করলো। ভয়ে গুটিয়ে গেলাম। খারাপ শক্তি আমার মধ্যে জেগে বসেছে। রূপান্তরিত হলাম মানুষ থেকে অধমানবে। কি ভ/য়ঙ্কর দৃশ্য বলে বোঝাতে পারবো না। মনে হলো এর চাইলে মর/ণ ভালো ছিল। তবে ততদিনে ক্যামেলিয়ার ভালোবাসা আমার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বসবাস গড়ে তুলেছিলো। যেখানে খান পরিবারের প্রতিটা ছেলে নারীতে আসক্ত হয়ে বাইরে ছুটে যায় সেখানে আমি নিজ কক্ষে গুমড়ে গুমড়ে মর/ণ যন্ত্রণা উপভোগ করেছি। মেয়েটার খোঁজ নিতে এক রাতে আবারও বেরিয়ে গেলাম। সারা শহর তন্ন তন্ন করে অবশেষে খুজেঁ পেলাম তাঁকে। বেচারী আমার বিরহে মরতে বসেছে। দুহাতে আগলে নিলাম ওকে। মেয়েটা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনি আমি কিভাবে ওর শহরে রাতের আধারে ওর কক্ষে পৌঁছে গেলাম। এটাতো আমার জন্য কঠিন কিছু ছিল না। ওর থেকে কিছু লুকিয়ে রাখতে চাইনি তাই সবটা বলে দিলাম। মেয়েটা আমাকে ভুল বুঝলো না সামান্য অভিমান করলো মাত্র। আমি নিজের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে ওকে রাঙিয়ে দিলাম। অভিমান মুছে দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ করে দিলাম। ভাবলাম এভাবেই বুঝি আমাদের সময়টা কেটে যাবে। কিন্তু আমরা যা চাই সেটাতো সহজে পাইনা। হুটকরে বাবা আমাকে আটকে দিলেন কক্ষের চা দেয়ালের মধ্যে। হাতে পায়ে অজস্র সিঁকল পরিয়ে আমাকে মৃ/ত বানিয়ে দিলেন। তারপর থেকে এখানেই বন্দী হয়ে আছি। বছর খানিকটা পরে বাবা বলেছিলেন ক্যামেলিয়া বেঁ /চে নেই। আমি ভেঙে পড়লাম গ/র্জে উঠে প্রতি/শোধ নিতে চাইলাম সব ব্যার্থ হলো। তবে কিছুদিন পূর্বে বাবার কথা শুনে আমি ভরসা পেলাম। ভাবলাম আমার পুত্র ঠিক আসবে তাঁর বাবাকে উদ্ধার করতে। খান পরিবারের এই জা/লিমদের ধ্বং/স করতে কিন্তু ভুল ভাঙলো তখন যখন বুঝলাম আমার জাদুলিপিটা অন্য একটা মেয়ে হস্তগত করলো তখন। এই পরিবারের ধ্বং/স আমার পুত্রের হাতে না বরং পুত্রবধূর হাতে হবে। মেয়েদের ভয়ে গুটিয়ে থাকে অন্যদিকে মেয়েদের ছাড়া অচল খান পরিবারের এবার পাপের ঘড়া পূর্ণ হবে। যাইহোক এবার বলো আমার দোষ কোথায়? ভালোবাসা কি অপরাধ ছিল? তোমার মাকে ভালোবেসে আমি কি তবে ভূল করেছিলাম?

ভদ্রলোক প্রথম থেকে শেষটা বেশ গুছিয়ে বলে দিলো। পাথর চোখ বন্ধ করে আছে। বাবা মায়ের ভালোবাসার করুণ কাহিনী শুনে ওর বুকের মধ্যে যন্ত্রণা হচ্ছে। নিয়তি এমন নিষ্ঠুর কেনো কে জানে।পাথর ভ্রু কুচকে বলল,
> খান পরিবারের ছেলেরা যদি কোনো সাধারণ মেয়েকে আলিঙ্গন করে তবুও মেয়েটার ক্ষ/তি হয়ে যায়। একটা রাতে ব্যবধানে সেই মেয়েটার শরী/র ছিন্ন/ভিন্ন হয়ে যায় সেখানে মায়ের কিছু হলো না কেনো?
ভদ্রলোক হাসলেন। তারপর বলে উঠলেন,
> জাদুলিপি আমাকে সাহায্য করেছিলো। আমি ওই সাধুর প্ররোচনাতে জাদুলিপির একটা পৃষ্টতে একটা পুত্র সন্তান চেয়েছিলাম। তোমার মা এই জন্যই তোমার জন্মানো পযর্ন্ত বেঁচে ছিলেন। আমি কতটা বেকুব ছিলাম ভাবো? যদি লিখতাম ক্যামেলিয়াকে আমার দরকার। বড্ড বেশিই দরকার কিন্তু পারিনি এখন আফসোস হয়।

পাথর দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল। যা হয়েছে সেটাতো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার ভাগ্য ওর নেই। সেসব ভেবে ও মিনমিনে কণ্ঠ বলল,
> আপনি জানেন খানদের এই শক্তি কিভাবে ধ্বংস হবে? অর্ধমানবের কাহিনী খ/তম হয়ে নতুন সূর্য উদয় হবে?
> এটা আমার চাইতে কহিনুর ভালো জানে। আমি তোমাদের সাহায্য করতে চাই। যেকোনো প্রয়োজনে আমাকে স্মরণ করবে। আর কহিনুরের থেকে দূরে থেকো তোমার মঙ্গল হবে।
পাথর ভ্রু কুচকে বলল,
> আমার মৃ/ত্যু ছাড়া এটা সম্ভব না। আত্মা ছাড়া শরীর কি বাঁচে বলেন? ও আমার আত্মা। এখন আসছি।
পাথর আর অপেক্ষা করলো না। হাতের মুঠো শক্ত করে চোখ বন্ধ করলো। তারপর যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই ফিরে এলো।
************
পাথর হঠাৎ গায়েব অন্যদিকে জামসেদ একটা দরকারি কাজে বাইরে এসেছে সেই সুযোগে কহিনুর সাঈদকে নিয়ে বেরিয়ে আসলো। যদিও সাঈদ ওকে নিষেধ করেছে কিন্তু ও সেসব পাত্তা দেয়নি। বসে থাকলে বিপদ কমবে না। তাছাড়া বেশ কিছু তথ্য ওর জানা দরকার। আঁধরের সঙ্গে ওর অবয়বে থাকা মেয়েটাকে ওর পুরোপুরি চিনতে হবে। এসবের পেছনে চন্দ্রের হাত আছে কিন্তু ওই মেয়েটা চন্দ্র হতেই পারে না। বিষয়টা বুঝতে ওর খানিকটা দেরী হয়েছে।কারণ অভিশাপ অনুযায়ী খান বংশের ছেলেরা কোনো পিশাচ বা আত্মার সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক তৈরী করতে পারেনা। কহিনুর হন্যে হয়ে বেশ কিছু ক্লাব খুঁজে অবশেষে পাথরের সন্ধান পেলো। তবে নাইট ক্লাবে না সমুদ্রের তীরে রঙিন পেয়ালা হাতে বসে আছে। মাঝেমাঝে গলাই ঢেলে নিচ্ছে অমৃত সুধা। বেশ বিরহে আছে বলে মনে হচ্ছে। কহিনুর সোজা ওর সামনে গিয়ে উপস্থিত হলো। কারো আগমনী শব্দ পেয়ে ছেলেটা মাথা তুলে সামনে দৃষ্টি রেখে খুশিতে নেচে উঠলো। ওর চোখমুখ জ্বলজ্বল করছে। ওষ্ঠে হাসির রেখা। কহিনুর এসেছে ভাবতেই দ্রুত দাঁড়িয়ে পড়লো। নিজের হাতটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
> তুমি এসেছো? দুদিন কোথায় ছিলে? আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি তোমার টেনশনে। চলো আমার সঙ্গে।
কহিনুর পিছিয়ে গেলো। বুঝতে পারলো এই ছেলেটার সঙ্গেও গেম খেলা হয়েছে তাই ভুল ভাঙিয়ে দিতে উত্তর দিলো,
> ভ্রাতৃবধূর দিকে লালসার নজরে তাকানো পাপ যদিও কথাটা আপনাকে বলা অনর্থক। পাপ যাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে সে এসবের মর্ম বুঝবে কিভাবে। একটা কথা বলতে এসেছি আপনার সঙ্গে আমার রূপে যেই থাকুক ওকে বলে দিবেন কহিনুরের রূপ নিলেই কহিনুর হওয়া যায়না। সামনে আসতে বলবেন দেখে নিবো তার ক্ষমতা।

কহিনুরের কথা শুনে পাথর হতবম্ভ হলো। কিছুতেই মানতে পারছে না ওটা কহিনুর ছিল না। এই মেয়েটা এখন মিথ্যা বলছে। কথাটা ভেবে ও হু/ঙ্কার দিয়ে বলল,
> আসল নকল বুঝিনা। তোমাকে আমার চাই যেকোনো মূল্যে। আর আমার দুনিয়ার পা/প বলে কিছু নেই। তোমাকে আমার দরকার এটাই শেষ কথা।
আঁধারের কথা শুনে কহিনুর হাসলো। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ রেখে উত্তর দিলো,
> ছুঁয়ে দেখান আমাকে। দেখাতে পারলেই আমি আপনার,প্রমিজ। আকাশ বাতাস আর এই সমুদ্র তাঁর সাক্ষী। আসুন দেখি আপনার হিম্মোত।

কহিনুরের চাপা হুমকিতে আঁধার তাচ্ছিল্যপূর্ণ হাসলো। নাক টেনে ডান হাতটা দিয়ে নিজের চুলগুলো মুঠোবন্দী করে উত্তর দিলো,
> এ আর এমন কি অপেক্ষা করছি তো তোমার উষ্ণতা দিয়ে রাতটুকু স্বপ্নময় করে তুলতে। আসো।

আঁধার হাত উঁচু করে সামনে এগিয়ে গেলো ঠিক তখনই একটা উড়ন্ত খ/ঞ্জর এসে ওর হাতটা ছুঁয়ে দিয়ে গেলো। কব্জির উপর থেকে সামান্য কে/টেছে তবে ফিনকি দিয়ে র/ক্ত ঝরছে। কহিনুর আবারও হাসলো কারণ কাজটা ওর। আঁধার বাম হাত দিয়ে সেটা মিলিয়ে নিয়ে ওর হাসির পরিবর্তে নিজেই হেসে ফেলল। মিষ্টি করে উত্তর দিল,
> বাচ্চাদের মতো দুষ্টুমি করো না নূর। এসব করে আমাকে চমকে দিয়ে পারবে না। বরং স্বীকার করো আমার ভালোবাসা।
আঁধারের বলতে দেরী হলো কিন্তু কহিনুরের খ/ঞ্জর ছুড়তে দেরী হলো না। অসংখ্য খঞ্জ/র এসে ঘীরে ধরলো আঁধারের চারপাশ। কিছু কিছু ওর গায়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে। আঁধার চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করে হুঙ্কার দিলো,
> এসব কি হচ্ছে? ছেলেমানুষি করোনা আমি ব্যাথা পাচ্ছি।
কহিনুর হাসলো। মজা লাগলো ওর মুখের আকৃতি দেখে। হাতের আঙ্গুল উঁচু করে কিছু বলতে গেলো তাঁর আগেই পাথর এসে হাজির হলো। সাঈদ ভয় পেয়ে আছে এসব দেখে। পাথর গিয়ে কহিনুরকে নিজের সঙ্গে ঝাপটা ধরে ওর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিতে নিলো। ওর ভালো করে জানা আছে এই উঁচু হাতের মানে কি। তাই উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো,
> ফিরিয়ে নাও তোমার খ/ঞ্জর। এভাবে হুটহাট কাউকে আঘাত করোনা। হিতের বিপরীত হবে। মাথা ঠাণ্ডা করো প্লিজ।
কহিনুর ভ্রু কুচকে বলল,
> ভাইয়ের জন্য দরদ হচ্ছে? যখন ও আমাকে খারাপ নজর দেয় তখন কোথায় থাকে আপনার দরদ?
পাথর গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দিলো,
> ওকে মারলে সমস্যা বাড়বে বৈকি কমবে না। আমি কথা দিচ্ছি সবটা সামলে নিবো। প্লিজ খ/ঞ্জর ফিরিয়ে নাও।
কহিনুর ফুলতে ফুলতে খ/ঞ্জর ফিরিয়ে নিয়ে পাথরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে হাঁটা ধরলো। পাথর একবার আঁধারকে দেখে দৌড়ে গেলো কহিনুরের পেছনে। খান বংশের প্রতিটা লোককে হ/ত্যা করলেই হবে না। তাঁর সঙ্গে কালো যাদুকেও ধ্বং /স করতে হবে। নয়তো ওই শক্তি আবারও কোনো সাধারণ মানুষকে অসাধারণ করে তুলবে। অভি/শপ্ত করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিবে। পাথর এটা চাইনা। মূল থেকে সমস্যা নিরাময় করতে চাইছে। কথাগুলো ভেবে ও কহিনুরের হাতটা টেনে ধরলো। হাপাতে হাপাতে বলল,
> তোমার রূপে যে ছিল সে কিন্তু অভিশপ্ত কোনো মানবী। যার কাছে শক্তি আছে। খোঁজ করো এমন কে আছে তোমার আশেপাশে?
কহিনুর থমকে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুচকে ফেলল। কে হতে পারে সেই নারী?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here