#অভিশপ্ত_জীবন
পর্ব ৮,০৯
লেখিকা #Fabiha_Bushra_Borno
০৮
কাল রাতে হয়তো এতোক্ষণ এই বুকে অন্য কেউ মাথা রেখে পরম তৃপ্তিতে নতুন জীবনের সুচনা শুরু করবে। আজ যে কথা গুলো মুহিত আমাকে বলছে কাল এই সময় হতে হতে নতুনত্বের ছোঁয়াতে ভুলে যাবে। পাশের ঘরে কেউ তাদের একান্ত মুহূর্তের জন্য ছটফটিয়ে মরছে তা বুঝার বিন্দুমাত্র আগ্রহও থাকবেনা। সত্যিই কি পারবে মুহিত আমাকে ভুলে যেতে? এমন কিছু ভাবনার মাঝেই মুহিতের স্পর্শ গুলো গভীর থেকে গভীরতর হতে লাগলো। অন্য দিন মুহিতের স্পর্শে যে অনুভূতি জাগতো আমার আজ তেমন কিছুই হচ্ছে না। কেন যেন বারবার মনে হচ্ছে, মুহিতের ছোঁয়া বা স্পর্শে আমি থাকলেও কল্পনা বা অনুভূতিতে অন্য কেউ বিরাজ করছে।
গভীর রাতের ঝিঝি পোকার ডাকের সাথে বদ্ধঘরে স্বামী স্ত্রীর আলিঙ্গনের রেষ কাটিয়ে ঘুমিয়ে পরে মুহিত। আমার চোখে কোন ভাবেই ঘুম আসছে না। ভাবলাম বাকি রাত টুকু আল্লাহর ইবাদতের মধ্য দিয়ে শেষ করি। আজ কেন জানি একা একা কলপাড়ে যেতে ভয় করছে না। গোসল সেরে অযু করে তাহাজ্জুদ নামাজে বসলাম,,,,,,,,। ফজরের নামাজ শেষ করে বাইরে বের হলাম। প্রয়োজনীয় কাজ কর্ম শেষ করে রান্না বসালাম। মুহিত ঘুম থেকে উঠে আমার কাছে আসে আর বলে, এখনো সময় আছে, আবারও ভেবে দেখো তুমি পারবে তো সব কিছু সহ্য করতে? পারবে তো তোমার চোখের সামনে আমাকে অন্য কারো ঘরে যেতে দেখতে,,
কারো ভেজা চুল ভেজা কাপড় দেখে নিজেকে সামলাতে পারবে ??
বুক ফেটে কান্না আসছে আমার,, আমি পারবো না কখনোই পারবো না এইসব দেখতে। কিন্তু এই কথা গুলো প্রকাশ করে বলার সময় শেষ। তাই আমি বললাম,,,
হয়তো কষ্ট পাবো কিন্তু সেই কষ্টগুলো ভুলে যাবো যখন আমাদের বৃদ্ধকালের কোন অবলম্বন আমাদের সামনে আসবে,, তুমি বাবা হবে আর আমি মা। সৎ মা হলেও আমাকে ফেলে দিবে না। নিজের সন্তানকে যে ভালোবাসা দিতাম সেই ভালোবাসা দিবো তোমাদের সন্তানকে। এতো ভালো বাসবো যে, সে বিশ্বাসই করবে না আমি তার সৎ মা। তোমাকে বাবা বলে কেউ ডাকবে এটা ভেবে, এর চেয়ে বেশি কষ্ট সহ্য করতে পারবো। শুধু তুমি আমাকে কখনো ভুলে যেওনা না বা অবহেলা করো না।
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে মুহিত লুঙ্গি গামছা নিয়ে গোসল করতে গেলো। আমি রান্না শেষ করলাম, মুহিত গোসল সেরে খেতে আসলো। দুজনে এক সাথে খেলাম। কাল সকালে চারজন একসাথে খাবো, খাওয়ার সময় কত কি নিয়ে গল্প হবে,, এইসব ভাবছি।মুহিত বাজারে গেছে খাওয়া শেষে আর বাড়িতে আসছে দুপুরে। চুল কেটেছে, ক্লিন সেভ করেছে, দু একটা চুল পাকা ছিলো তাই চুলে কালি ও করেছে। খুব ভালো করে মুহিত কে পর্যাবেক্ষন করলাম। মুহিত নাকি বিয়েতে রাজি নাই অথচ মনে মনে এতো প্রস্তুতি দেখছি আর অবাক হচ্ছি।
আমাদের বাড়ির চারটি ঘর ই এখন আমাদের। শাশুড়ীর ঘর ফাঁকা, বড় ভাসুরের ঘর ফাঁকা, মেজো ভাসুর বাইরে থাকেন,, উনারাও আলাদা বাড়ি করবেন। আমি বড় ভাসুরের রেখে যাওয়া ঘর পরিষ্কার করছি রুনা আর মুহিতের জন্য। বাড়িতে এসেই মুহিত ব্লেড নিয়ে উঠোনের মাঝখানে চেয়ার নিয়ে বসে হাত পা-য়ের নখ কাটছে। মুহিতের এমন প্রস্তুতি দেখেই আমি ঠিক থাকতে পারছি না তাহলে আগামীতে আরো কিছু কিভাবে সহ্য করবো। অন্যদের তো দেখি কি সুন্দর মিলেমিশে থাকে। তাদেরও কি আমার মতো এমন হতো। না না এইসব হিংসাত্মক চিন্তা ভাবনা করা যাবে না। আমার মনকে আরো শক্ত করতে হবে।
ঘরে নতুন বিছানা একটা আলনা আর শাশুড়ীর ঘর থেকে একটা টেবিল দুটো চেয়ার সহ কিছু আসবাবপত্র এ ঘরে রাখলাম। মুহিতকে ঘরে নিয়ে গিয়ে বললাম দেখো কেমন হয়েছে। ফুল দিয়ে ঘর সাজানোর খুব ইচ্ছে করছিলো কিন্তু মানুষে আজেবাজে কথা বলবে তাই করলাম না। মুহিত বললো,, তুমি দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছো, জ্ঞান বুদ্ধি সব লোপ পাচ্ছে তোমার, যা ইচ্ছে করো কিন্তু আমাকে এইসবে জরাবে না।
বুঝলাম না কথা গুলো কতটা মুহিতের মন থেকে বলা। যে মানুষ মনে মনে এতো প্রস্তুতি নিতে পারে তার মুখে এমন কথা গুলো হাস্যকর। নিজের হাতের কাজ গুলো শেষ করে গোসল সেরে নিলাম। দুপুরেও মুহিত আমি এক সাথে খেলাম। কিছুক্ষণ পরে বড় ভাসুর এসে মুহিত কে নিয়ে গেলেন চাচাদের বাড়িতে। আমাকেও ঘর বাড়িতে তালা দিয়ে আসতে বললেন।ওখানে গিয়ে দেখি রুনার শশুর শাশুড়ী সাথে আরো দুই একজন মানুষ এসেছেন। পাড়ার বেশ কিছু গণ্যমান্য মুরব্বিরা চেয়ারে বসে আছেন। রাতে কাজি আসবেন। রুনা হয়তো ঘরে বসে আছে,, আমাকে দেখেই শিহাব ওর দাদির কাছে থেকে দৌড়ে চলে আসে। শিহাবের জন্য আনা নতুন জামা কাপড় বের করে নিজ হাতে পড়িয়ে দিলাম। নতুন জামা পেয়ে বেজায় খুশি ছেলেটা। মায়ের বিয়ে,, কথাটার অর্থ কি তা সে বুঝে না তবে বিয়েতে আনন্দ করতে হয় এটা বুঝে।
রুনার শাশুড়ী আমার উসকোখুসকো চুল দেখে আমার মাথায় তেল দিয়ে চুল আঁচড়িয়ে দিচ্ছেন। বুঝলাম শুধু তেল আমার চুলে না, চরকাতেও দিচ্ছেন। এতো আদর এতো আপ্যায়ন সইবে তো আমার কপালে। আমাদের বংশীয় কিছু বউয়েরা এসে রান্নার কাজে সাহায্য করতে লাগে। তাও তো ১৫/২০ জন মানুষ রাতে খাবে। সন্ধ্যার আগে আমি রুনার জন্য কেনা সব কিছু নিয়ে গেলাম।
রাত ৮/৯ টার দিকে কাজি আসলেন। নিজের চোখের সামনে বরের বিয়ে, বিষয় টা অদ্ভুত তাই-না!!
বুকের ভেতর কেমন যেন হচ্ছে, ধরফর করছে, নিঃশ্বাস ফেলতেও কেমন যেন লাগছে। এই যন্ত্রণার কথা গুলো লিখে বা বলে প্রকাশ করা সম্ভব না। বিয়েটা সম্পুর্ন হলো, আমি রুনাকে কাপড় পড়িয়ে দিতে দিতে বললাম,, তোমাকে আমি কখনো ননদ ভাবিনি, আর এখনো সতিন ভাববো না।আমরা সব সময় দুই বোনের মতো থাকবো। তুমি ভালো করেই জানো আমার আর মুহিতের অতীত জীবন সম্পর্কে তাই দয়া করে আমাকে কখনো নতুন করে কষ্ট দিবে না এই অনুরোধ তোমার কাছে। আমি চাই মুহিত সন্তানের বাবা ডাক শুনুক। শুধুমাত্র মুহিতের জন্য একটা নারীর সবথেকে বড় সম্পদ তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি এই সম্পদের অমর্যাদা করবে না কখনো।
খাওয়া দাওয়া শেষে মুহিত রুনা আর শিহাব কে সাথে নিয়ে আসলাম। বুঝতে পারছি না এখন আমার কি করনীয়। কাকে কি বলবো আর কে-ই বা আমাকে সান্ত্বনা দিবে। আমি তো দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। কান্না করবো তাও পারছি না। এই মুহূর্তে আমার চোখ দিয়ে বিন্দু পরিমাণ পানি বের হওয়াটাও অনুচিত। কিন্তু গলাটা কেমন ধরে গেছে কথা বলতে গেলেই কান্না চলে আসবে। চুপিচুপি কোন রকম রান্না ঘরে গিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিলাম। মুহিত আমাদের ঘরে চলে গেছে,, রুনা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। আমিও চলে এসে রুনাকে ওদের জন্য তৈরি করা ঘরে নিয়ে গেলাম। রুনা বসে আছে বিছানার উপরে। আমাদের ঘরে এসে দেখি শিহাব কে নিয়ে বসে আছে। শিহাব কে নিয়ে রুনার কাছে রেখে এসে মুহিত কে বললাম ও ঘরে যেতে।কিন্তু মুহিত নাছোড়বান্দা,, ও ঘরে কিছুতেই যাবে না। এতোক্ষণের চেপে রাখা কান্না এবার অঝোরে বেড়িয়ে আসছে। আওয়াজ ছাড়া চোখ এবং নাক দিয়ে পানি বের হচ্ছে আমার। হয়তো ও ঘরে রুনার মনের অবস্থাও আমার মতো। কোন মেয়েই এমন মুহূর্তে বরকে তার বড় বউয়ের সাথে দেখতে পারবে না।
মুহিত কে বুঝিয়ে রাজি করালাম ওঘরে যেতে। যদিও জানি মুহিত ওঘরে যাওয়ার জন্য মনে মনে অপেক্ষা করছে কিন্তু তা প্রকাশ করছে না। মুহিতের কিছু লুঙ্গি আর শার্ট বাইরে বারান্দায় রাখছি আগেই। ওঘরে গিয়ে শিহাব কে নিয়ে মুহিত কে বললাম দরজা লাগিয়ে দিতে। আমার বিশ্বাস আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কোন বউ-ই তার বর কে এমন কথা বলে নি। এঘরে এসে দরজা বন্ধ করে আমি টিভি অন করে কার্টুনের চ্যানেলে দিলাম। উদ্দেশ্য ওঘরের কোন কথা বা সাউন্ড যেন আমার কানে না আসে। এই ফাঁকে শিহাব ও ঘুমিয়ে যাবে।
এভাবে কি মন কে ভুলিয়ে রাখা সম্ভব?? ইচ্ছে করলেই কি ওই ঘরে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেই ভাবনা গুলো দূর করা যায়। যতই চাইছি না কান বা মন ওইদিক দিতে ততই আরো বেশি যাচ্ছে। ইদুঁরের শব্দ কেও কেন যেন বিষাক্ত মনে হচ্ছে। আমার ই ভুল হয়েছে, আজ এই মুহূর্তে এ বাড়িতে আসা উচিত হয় নি আমার। এর আগেও মুহিত অন্য কারো সাথে থেকেছে কই তখন তো রাতে এমন কিছু মনে হতো না,, হয়তো দূরে ছিলাম বা অজান্তেই মুহূর্ত গুলো পার হয়ে গেছে তাই এমন তুষের আগুনের যন্ত্রণা বুঝিনি।
শিহাব ঘুমিয়ে গেছে অনেক আগেই। টিভি টা বন্ধ করতে হবে নয়তো পাশের বাড়ির মানুষজন অন্য কিছু ভাব্বে। কোন রকম সাউন্ড কমিয়ে কানের উপর আরেকটা বালিশ চাপা দিলাম। চোখে ঘুম আসার জন্য বিভিন্ন দোয়া পড়তে লাগলাম। একটু ঘুমুতে পারলেই রাত পার হবে, একটু ঘুম চাই শুধু। কিন্তু অতি সামান্য ঘুমটুকুও মনে হয় আমার জন্য বরাদ্দ নেই উপরওয়ালার কাছে।টিভির সাউন্ড,বালিশের চাপের ফাঁকেও মুহিতের ফিসফিসানি কথার সাউন্ড আমার কানে আসছে। কামাড়ের বড় হাতুড়ির আঘাত যেন আমার কলিজায় লাগছে। মনে হচ্ছে কেউ একজন বুকের ভেতর থেকে টেনেহিঁচড়ে কলিজা ফুসফুস সহ সব কিছু বের করে নিয়ে যাচ্ছে,,
চলবে,,,
#অভিশপ্ত_জীবন
পর্ব ৯
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
মনে হচ্ছে কেউ একজন বুকের ভেতর থেকে টেনেহিঁচড়ে কলিজা ফুসফুস সহ সব কিছু বের করে নিয়ে যাচ্ছে। হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে, ছুটে গিয়ে প্রতিবাদ করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সেগুলো কিছুই সম্ভব না। মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে জ্ঞান হারালে খুব ভালো হতো। যেচে কষ্ট নিয়েছি আমি তাই নিথর শরীরটা জীবন্ত লাশ বানিয়ে বালিশে মুখ গুজে কান্না করলাম বেশ কিছুক্ষন। বুঝলাম প্রতিটি মেয়ের ই এমন কষ্ট হয়, নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি যখন চোখের সামনে অন্য কারো সাথে থাকে। মজিবুর চাচার বউদের যেমন হাসিখুশি দেখতাম তাদের ভেতরেও ঠিক আমার মতোই হয়তো হয়।
ও ঘর থেকে আর কোন শব্দ আসছে না। হয়তো সামান্য কিছু সময়ের জন্য চোখ টা লেগে গেছিলো কিন্তু অতি সাবধানে কারো দরজা খোলার শব্দে আবারও জেগে গেলাম। হয়তো ওরা বাইরে বের হয়েছে,, উউফফঃ এই যন্ত্রণা সহ্য করা অসম্ভব। কাল থেকে বিকালেই ঘুমের ঔষধ খাবো। চাপকল হওয়ার জন্য বুঝা যাচ্ছে কল চাপার শব্দ। ইয়া মাবুদ কেন আমি এমন অনলে ঝাপ দিলাম
অনেক ছটফটানির মধ্যে কোন রকম ভোর হলো। আমি অযু করে নামাযে বসে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে আরো ধৈর্য্য চাইলাম এবং ভবিষ্যতে যেন আমাদের সংসার সুখে থাকে তার জন্য দোয়া করলাম। শিহাব ঘুমিয়ে আছে, মুহিত রুনা ও উঠে নি। হালকা অন্ধকার বাইরে,, বাড়ির ভিতর দম বন্ধ হয়ে আসছে,, মুহিত রুনার দরজা খোলার দৃশ্য দেখা সম্ভব না তাই বাইরে হাটতে বের হলাম। পুকুর পাড়ের পাশে দিয়ে মাটির কাঁচা রাস্তা বয়ে গেছে, হাটতে হাটতে অনেক দূর চলে এসেছি, হাঁস মুরগী কিছুই ছাড়া হয় নি, তাছাড়া শিহাব একা ঘরে এইসব মনে হতেই পিছনে পা বাড়ালাম। বাড়ি ফিরে দেখি রুনা হাঁস মুরগীকে খাবার দিয়েছে এবং উঠোন বাড়ি ঝাড়ু দিয়ে রান্না ঘরে পেয়াজ রসুন কাটছে।
হয়তো রাতে স্বামী কে নেওয়ার পরে এখন সংসারটাও নিয়ে নিচ্ছে,,কথা গুলো মনে মনে ভাবছি আর রুনার কাছে গিয়ে বললাম, এতো সকালে কি দরকার ছিল একা একা এতো কাজ করার। তুমি শিহাবের কাছে যাও, আর মুহিত কোথায় গেছে?
রুনা- শিহাব ঘুম থেকে উঠে কান্না করতে লাগছিলো তাই ও দোকানে নিয়ে গেছে
রুনার বলা “ও” কথা তে বুকের ভেতর আবারও মোচড় দিয়ে উঠে, এতোদিন ভাই বলতো কিন্তু আজ “ও”।
দুজনে মিলে রান্না করলাম, শিহাব কে নিয়ে মুহিত ফিরেছে। মুহিত আমার দিকে তাকাতে সংকোচ করছে,,হয়তো আমি কষ্ট পাচ্ছি তা বুঝতে পারছে।
আমার ঘরে সুয়ে আছি, মাথাটা ঝিমঝিম করছে,, মুহিত কিছুক্ষণ পরেই আমার কাছে এসে বসে।কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে বলে,,
আমি জানি তুমি রাতে ঘুমাও নি, আমি পড়েছি দু-টানাতে,, এই মুহূর্তে আমার কি করা উচিত আমি জানি না। তবে তোমার মতো মেয়েকে বউ হিসেবে পেয়ে আমি ধন্য। আগেও তুমি আমার কাছে যেমন ভালোবাসা পেয়েছো এখনো তেমন পাবে এবং আগামী জীবনেও একই রকম পাবে। তোমার যায়গা কখনো কেউ নিতে পারবে না।
মুহিত আমার পাশে বসে আছে,, পরম শান্তিতে দু’চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। গত দুই রাতের ঘুম যেন এখন আমার চোখে হানা দিয়েছে। ঘুম থেকে উঠতে উঠতে দুপুর গড়িয়ে গেছে,, চোখ খুলে আড়মোড়া দিতেই বাইরে থেকে মুহিত রুনার হাসাহাসি আর কথা শুনতে পেলাম। আমি ঘুমানোর পরে মুহিত চলে গেছে, যাওয়াটাই স্বাভাবিক।
মুহিতের বিয়ের ৫ দিন হয়েছে। মুহিত দুই রাতে আমার সাথে ঘুমানোর কথা বলেছিল কিন্তু আমি জোর করে রুনার ঘরে যেতে বলতাম,, প্রতিদিন বিকালে ঘুমের ঔষধ খেলে সন্ধ্যার পরপরই ঘুম এসে যায় চোখে। শান্তিতে ঘুমাতে পারি এভাবে। আজ মুহিত আমার সাথে ঘুমিয়েছে, যদিও নিশেধ করেছিলাম কিন্তু শোনেনি, জোর করে এঘরেই ঘুমিয়েছে। পাশের বালিশ টা পরিপূর্ণতা পেল আজ। কিন্তু মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেলে দেখি সেই পরিপূর্ণ বালিশটা শুন্য। হ্যাঁ মুহিত রুনার কাছে চলে গেছে আমার ঘুমানোর সুযোগে। এখন কষ্টটা আরো বেশিই পাচ্ছি। কি দরকার ছিল আমার কাছে আসার আমি তো আসতে বলিনি,,
কোন ভাবে চুপচাপ জেগে আছি। বেশ কিছুক্ষন পরে মুহিত আবারও চুপিচুপি আমার ঘরে আসছে,,সে ভেবেছে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি তাই দরজা আটকিয়ে বিছানার কাছে আসে। আমি সাথে সাথে বলি,, রুনাকে ছেড়ে যদি থাকতেই না পারো তাহলে কেন আসলে, কই আমি তো তোমাকে বলিনি আমার কাছে আসার জন্য। নিজে থেকেই যদি আসলে তাহলে কেন আবারও গেলে? একটা রাতেরই তো ব্যাবধান ছিলো। নিজের মনকে শক্ত করেছি বলেই তোমাকে বিয়ে দেওয়ার মতো সাহস পেয়েছি,, তোমাকে ছাড়া বাকি জীবন ঠিকই পার করতে পারবো। তাই কাল থেকে আর কখনো তুমি আমার ঘরে আসবে না।
মুহিত কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে চুপচাপ সুয়ে আছে। যেহেতু রেগুলার ঘুমের ঔষধ খায় তাই আমি ও ঘুমিয়ে গেলাম। প্রতিদিনের রান্না বান্না সাংসারিক টুকটাক কাজের মধ্যে দিয়ে দিন পার হতে লাগলো। আমি এখন বেশ অবসর সময় পাই,, মায়ের বাড়ি তে গেলে ১০/১২ দিন থাকি। মায়ের বাড়ি তে রেখে আসতে বা নিয়ে আসতে মুহিত আর আসে না। একাই যাওয়া আসা করি।
মুহিত মাঝে মাঝে আমার সাথে স্বামীর অধিকার খাটানোর চেষ্টা করে কিন্তু আমি বারবার ফিরিয়ে দিয়েছি। ওইরাতের স্মৃতি টা মনে প্রচুর দাগ কেটেছে। নিজের কথা চিন্তা না করে মুহিতের জীবন গুছিয়ে দিলাম অথচ তার সামান্য কিছু সময় আমার কাছে থাকতে হাসফাস লাগে।
রুনার সাথে সম্পর্কটা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। আমি ভালো কিছু বললেও সে রাগ দেখিয়ে বকবক করে। নিজের ইচ্ছে মতো কোন কিছু রান্না করতে পারিনা। মুহিত কে বারবার বলার পরেও আমার প্রয়োজনীয় জিনিস এনে দেয় না। এক সাথে খাওয়ার জন্য খাওয়ার সময় কখনো আমাকে ডাকে না। মাঝে মাঝে শিহাব ওর দাদার বাড়ি গিয়ে অনেক দিন থাকে। আমার জন্য মুহিতের আর সামান্য আফসোস হয় না অথচ বিয়ের পরের দিন বলেছিল আমার যায়গা নাকি কেউ নিতে পারবে না। আসলে আমার যায়গা টা কই জানি না।
টানা সাত মাস পরে রুনা প্রেগন্যান্ট হলো। মুহিতের চোখে রাজ্য জয়ের আনন্দ, রুনার বাবা মা ও ভিষণ খুশি। আমিও খুশি কিন্তু সত্যিই খুশি নাকি বুঝতে পারছি না। আমি তো এইদিনের জন্যই নিজের অধিকার ত্যাগ করলাম, কিন্তু তাও মন থেকে খুশি হতে পারছি না কেন। আল্লাহ আমার এইসব চিন্তাধারার জন্য যেন ওদের বাচ্চার কোন ক্ষতি না হয়।
মুহিত প্রতিদিন রুনার জন্য পুষ্টিকর খাবার ফলমূল নিয়ে আসে। রুনার কাজ গুলো আমি করে দিই এবং স্বার্ধমত চেষ্টা করি বাচ্চার পরিপূর্ণ পুষ্টি প্রদানে। রুনার মা সব সময় এটা সেটা দিয়ে যায়।
শামিমের বিয়ে ঠিক হয়েছে। বারবার ফোন দিয়ে মুহিত কে যেতে বলছে কিন্তু মুহিত বিভিন্ন কাজের অজুহাতে যাচ্ছে না। অথচ পপির বিয়ের সমস্ত দ্বায়িত্ব নিজ হাতে সামলিয়েছিলো। রুনার চার মাস চলছে, সবকিছু স্বাভাবিক আছে। রুনার মায়ের বাড়ি তো কাছেই তাই আমি আর মুহিত বিয়েতে কয়দিন আগে গেলে কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু মুহিত কিছুতেই যাবে না। আর দুইদিন পরে বিয়ে অথচ কোন ভাবেই মুহিত কে রাজি করাতে পারছিনা।
আজ কেন যেন নিজের মনের কথা গুলো চেপে রাখতে পারলাম না। তাই ইচ্ছে মতো মুহিত কে কিছু কথা শুনালাম। মুহিতের হয়তো যাওয়ার ইচ্ছে জেগেছে তাই সে দুপুরের গোসল সেরে রেডি হচ্ছে। কিন্তু রুনা মুহিত কে বলছে,, এভাবে আমাকে রেখে চলে যাবে,, তোমার কাছে সন্তান আগে নাকি ওইসব বিয়ে খাওয়া আগে।তুমি জানো না তোমাকে ছাড়া রাতে আমার কত টেনশন হয়। আর এই অবস্থায় টেনশন করলে বাচ্চার ক্ষতি হবে না? তোমার বড় বউয়ের বুড়াতি বয়সে এতো সখ কেন ভা/তার কে সাথে নিয়ে ভাইয়ের বিয়ে খাওয়ার?
কথা গুলো কানে আসতেই রাগে শরীরের লোম গুলো দাঁড়িয়ে গেছে। আমি ও সাথে সাথে চিল্লাইয়ে বলতে লাগি,, আমার যদি এতোই সখ থাকতো তাহলে তোর সাথে নতুন করে বিয়ে দিতাম না। সখ থাকলে আমি আমার ঘরের দরজা মুহিতের জন্য বন্ধ করে দিতাম না। কই আমি তো তোদের বিয়ের পরে একবারও স্বামীর অধিকার চেয়ে মুহিতের সামনে যায় নি। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো তো আদায় করে নিই না। নিজের সংসার স্বামী সব দিয়েছি তোকে কই আমি তো কখনো এভাবে চুপিচুপি কানমন্ত্র দিইনি।
আমার কথার আওয়াজে পাশের বাড়ির দুইতিন জন মেয়ে আসে,, রুনা ন্যাকা কান্না শুরু করেছে। মুহিত বাইরে রাখা চেয়ারে লাত্থি মেরে চলে গেছে।আশেপাশের সবাই রুনার নামে ছিঃছিঃ করে চলে গেলো। আমি আর কোন কথা না বাড়িয়ে নিজের প্রয়োজনীয় কাপড় জিনিসপত্র নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম। রাস্তার মোড়ে একটা দোকানে মুহিত বসে ছিলো। আমাকে দেখে কাছে এসে কিছু টাকা দিতে লাগে।
ইচ্ছে করছে ঠাসিয়ে একটা থাপ্পড় মারি। দুইদিনের বউয়ের সামনে আমার হাত খরচের টাকা দিতে যার ভয় করে তার থেকে টাকা নিয়ে ভাইয়ের বিয়ে খাবো??রাস্তায় এবং দোকানে মানুষ ছিলো তাই আস্তে করে মুহিত কে বলি,,এই টাকা দিয়ে তোমার আদরের ছোট বউয়ের জন্য কিছু নিয়ে যেও,,তাহলে দিনের রাগ গুলো ভুলে রাতে সোহাগের রাজ্যে নিয়ে যাবে।
এবাড়িতে আসার পরে সবাই জিজ্ঞেস করছে কেন মুহিত আসেনি। কোন রকম কাটিয়ে নিলাম। বিয়ের তিন দিন পরে শামিম আমাকে নিয়ে রেখে আসে। রুনা একবারও শামিমের সাথে কথা বলে নি। শামিম আমাকে বলে,, আপা তুই এতোই দুঃখে পড়িস নি যে তোর আগাছার মতো এখানে পড়ে থাকতে হবে। তুই আমার সাথে চল, থাকতে হবে না এখানে। শামিম কে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিলাম
রুনার আট মাস চলছে,, ইদানীং মুহিত আমার কাছে আসার জন্য ছটফট করে। হয়তো পুরুষালি চাহিদা গুলো মিটানোর তাড়োনায়। আমার প্রয়োজনে যখন কাউকে পায় না তখন অন্যের প্রয়োজনে নিজেকে বিলিয়ে আর দিবো না । আমার হাঁস মুরগী বিক্রি টাকা, দুটো গরুর টাকা সব আমার আলাদা ক্যাশ। আগে ওদের জন্য অনেক কিছু কিনে দিতাম কিন্তু এখন কিছুই দিইনা।
আজ রুনা ওর বাপের বাড়ি আছে। মুহিত খুব জোরে জোরে দরজা খোলার জন্য বলছে কিন্তু আমি খুলছি না। এতে মুহিতের রাগ আরো বেড়ে গেলো। তাই দরজা খুলে দিয়ে বাইরে চলে যায়। মুহিত আমার চুল ধরে টেনে ঘরে নিয়ে আসে আর বলে, মা* তোর অনেক ত্যাজ হয়েছে তাই না। আমার খাস আমার পড়িস আমার বাড়িতে থাকিস আর আমার সাথে ভাব মারাস,,
নিজেকে ছাড়াতে মুহিত কে ধাক্কা দিই কিন্তু বুঝতে পারিনি পাশেই কাঠের চেয়ার ছিলো,, ধাক্কা দেওয়ার সাথে সাথে মুহিতের,,,,,
চলবে,,,,