#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৬
রাশেদ সাহেব ফোনটা রিসিভ করতেই ফোনের ওপাশ থেকে একটা বয়স্ক কন্ঠ ভেসে আসে। রাশেদ সাহেব বিস্ময়ের সাথে জবাব দেন,
“ও মাই গড! ইটস্ রিয়েলি ইউ। এতোদিন পর তাহলে এই পুরোনো বন্ধুকে মনে পড়ল? এতোদিন পর খবর নেওয়ার কারণ কী?”
ওপাশে এবার বয়ে যায় হাসির শব্দ। হাসতে হাসতেই সেই বয়স্ক কন্ঠস্বর জবাব দেয়,
“আমি না হয় স্বার্থপর মানুষ। তুই তো খুব উদার। তাহলে তুই কোনো খবর নিসনি কেন? শেষমেশ আমাকেই তো বাধ্য হয়ে কল করতে হলো।”
“তুই যেমন ব্যস্ত। আমি জানি তুই এই বয়সেও ঠিকঠাক নিশ্বাসও ফেলার সময় পাস না। তোর অর্ধেক ব্যস্ততা আমার থাকলেও আমিও তো সেই হিসেবে ব্যস্ত মানুষ! আমি বলছি কি! এখন রেস্ট নে। তোর ছেলে তো অলরেডি অর্জন করা শুরু করেছে। এতো টাকা দিয়ে করবি? যদি বৃদ্ধবয়সে ইনজয়ই না করতে পারিস তো! এই সাইকোলজিস্টের কথা শোন। মন আর শরীর দুটোই ফ্রেশ থাকবে।”
“হাজার ব্রেক নিলেও আমার এই ছেলেটা আমাকে জীবনেও ফ্রেশ থাকতে দেবে না বুঝলি? সারাদিন আমাকে প্রেশারের উপর না রাখলে তার চলেই না।”
“ছেলেমানুষ। সবে যুবক! একটু চঞ্চল তো হবেই।”
হাফ ছাড়ে ওপাশের মানুষটি। ক্লান্তির সাথে বলে,
“তাই বলে এতো চঞ্চল? কখন কোথায় ম্যাজিকের মতো গায়েব হয়ে যায় সেটা তুই ভাবতেও পারবি না। তার একেকটা আবদার শুনলে মাথা হ্যাং হয়ে যাবে।”
এবার রাশেদ সাহেব হাসেন। হাসিমুখে জবাব দেন,
“তুই যেটাই বল না কেন! অভিরূপ ছেলেটাকে আমার বেশ পছন্দ। কথায় কথায় হাসাতে পারে ছেলেটা। তাকে সেই ছোটবেলায় দেখেছিলাম। তখন থেকেই ছেলেটা গানে ছন্দে ছন্দে কথা বলতো! আমার বেশ ভালো লাগতো।”
আরো এমন বেশ কথাবার্তা মজা ঠাট্টা চলল রাশেদ সাহেব এবং ফোনের ওপ্রান্তে থাকা মি. নাদিম চৌধুরীর মাঝে। নাদিম চৌধুরীও পেশায় একজন ডক্টর। আর এই ডক্টর হওয়ার খাতিরেই উনার পরিচয় রাশেদ সাহেবের সাথে হয়। রাশেদ সাহেবের স্ত্রী মিসেস. নীলিমা যখন ভয়াবহ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তখন তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ছুটে যান ইন্ডিয়ায়। তখন উনার পরিচয় হয় নাদিম সাহেবের সাথে। নীলিমার চিকিৎসা যখন দীর্ঘকাল ধরে চলে তখন রাশেদ সাহেবেট পাশে ছিলেন নাদিম সাহেব। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। মিসেস. নীলিমা পরপারে চলে যান। ছোট্ট রাগিনী তখন কিছুই না বুঝলেও ছোট মেয়েটার চিন্তা এবং নিজের স্ত্রী হারানোর শোকে রাশেদ সাহেব ভেঙে পড়লে তার পাশে ছিলেন নাদিম সাহেব। এভাবেই হয় উনাদের বন্ধুত্ব। তবে দেশে আসার সাথে সাথে ব্যস্ততা, বাস্তব জীবনে জড়িয়ে কোথাও একটা হারিয়ে যান দুজনই। মাঝে মাঝে দুই বন্ধুর কথা হলেও কয়েক বছর ধরে যেন সেটাও হয়নি। আজ অনেকদিন পর দুই বন্ধুর আলাপ জমে উঠেছে। কথার মাঝে হঠাৎই নাদিম সাহেব বলে উঠলেন,
“শোন, তোদের ওখানে কি কোনো টেরো’রিস্ট হা’মলা হয়েছে বা এর প্রকোপ রয়েছে?”
“তা আছেই। জানি না পুলিশ টিম ওদের কবে ধরতে পারবে! কবে দেশে একটু শান্তি মিলবে!”
চিন্তিত সুর রাশেদ সাহেবের। তা দেখে নাদিম সাহেবও নিরব রইলেন। কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে বললেন,
“আর এতো ডেঞ্জারাস টাইমে আমার ছেলের সাধ জেগেছে তোদের দেশে যাওয়ার। এখন তাকে কি করে আঁটকায় বল তো? গিভ মি অ্যা সাজেশন!”
“ওহ হ্যাঁ। দেখলাম আমি। নিউজপেপারে বেরিয়ে গেছে অলরেডি। আটকাতে চেয়েও লাভ নেই রে। কিন্তু এর জন্য আবদার তোর কাছে আছে। যখন ছেলেটা আমার দেশেই আসছে আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দে।”
বেশ সোজাভাবে প্রস্তাব রাখলেন রাশেদ সাহেব। তবে নাদিম সাহেব ধীর গলায় বললেন,
“আমি বললেই তোর বাড়ি যাবে সে? অলরেডি হোটেল বুক করা শেষ তার। ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাওয়াই যায় না। কি যে এক ছেলে হয়েছে!”
“তাহলে দেশে আসতে দে। দরকার পড়লে আমি নিজে ওর কাছে গিয়ে সাথে করে নিয়ে আসব। ফ্লাইট কখন অভিরূপের?”
“কালকের পরের দিন। ভোরে সে যাচ্ছে।”
আরো বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা চলল তাদের মধ্যে। দুজনই অনেকদিন পর যেন নতুন আলাপ জুড়ে বসেছেন। ব্রেক শেষ হয়ে আসতে আসতে কলটা কাটলেন রাশেদ সাহেব।
বিড়াল ছানাকে খাবার খাওয়াতে ব্যস্ত রাগিনী। অন্যহাত দিয়ে কাঁধের কাছ থেকে ভেজা চুলগুলো ঠেলে পিঠের দিকে দিচ্ছে সে। ছোট চুলগুলো চোখের সামনে পড়ায় বিরক্তিতে ছেয়ে আসছে তার চেহারা। চুলগুলো তাড়াহুড়ো এবং ব্যস্ততায় পুরোপুরি মুছতেও ভুলে গিয়েছে সে। কোনোরকমে যে টাওয়াল বেঁধে রাখবে তার আগেই উপস্থিত হয়েছিল কোহিনূর। ফলে সেটাও হয়নি। চুল থেকে এখন টুপটুপ করে পানি পড়ে কিছুটা ভিজে গিয়েছে জামা। সামনে থাকায় সিঙ্গেল সোফায় বসে থেকে স্যান্ডউইচ খেতে খেতে আঁড়চোখে রাগিনীর বিরক্তি মাখা মুখটা প্রদর্শন করছে কোহিনূর। রাগিনীর চোখে বিড়াল ছানার প্রতি মায়া এবং যত্ন দুটোই ধরা দিয়েছে কোহিনূরের চোখে। স্যান্ডউইচ মুখ দিয়ে চিবুতেও ভুলে গিয়েছে সে। এতো অপূর্ব দৃশ্য যেন তার জীবনে প্রথমবারই দেখা। হয়ত তাই-ই। মেয়েটির মনে কি আসলেই মায়ার সেই মায়াময় রাজ্য উপস্থিত রয়েছে? যেখানে সকলের প্রতি মায়াদয়া এবং ভালোবাসা বরাদ্দ রয়েছে?
“মুখে একগাদা খাবার নিয়ে এভাবে স্ট্যাচুর মতো বসে থাকলে তো সারাদিনেও খাওয়া হবে না আপনার মি. কোহিনূর। তাড়াতাড়ি খান আর চলে যান এখান থেকে।”
বিড়াল ছানাকে খাওয়াতে খাওয়াতে ব্যস্ত কন্ঠে কোহিনূরের উদ্দেশ্যে কথাগুলো ঝাড়লো রাগিনী। কোহিনূরের ভ্রু দুটো কুঁচকে গেল সঙ্গে সঙ্গেই। আশ্চর্য হয়ে বলল,
“এতো বড় বাড়ি আমার একটা মানুষের জায়গা দিতে অসুবিধে হচ্ছে তোমার? বড়লোকের মন বড় হওয়া উচিত। কিপ্টেমি করছো কেন? তাড়িয়ে দেওয়া কি ঠিক হচ্ছে?”
“আর আপনি না জানিয়ে এভাবে চলে এসেছেন সেটা কি ঠিক করেছেন? আর কোনদিক থেকে নিজেকে সামান্য মানুষ মনে হয় আপনার নিজেকে? নিজের হাতের দিকেই তাকান তো একবার। মনে হচ্ছে দৈত্যের দুটো হাত বেরিয়ে এসেছে। ঠিক একারণেই আমার লিটল ফেইরি আপনাকে ভয় পেয়ে রুড বিহেভিয়ার করে।”
পাহাড়সম বিস্ময় নিয়ে তাকালো নিজের হাতের দিকে কোহিনূর। দুটো হাত নাড়িয়ে দেখল। আসলেই কি? মিনমিন করে বলল,
“এগেইন জায়ান্ট?”
মুখটা থমথমে করে এবার নিজের হাতের স্যান্ডউইচ রেখে দিল কোহিনূর প্লেটে। তা নজরে আসায় রাগিনী ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে উঠল,
“কি হলো রাখলেন কেন খাবার? একটু আগেই তো খাবারের জন্য সামান্য বিড়ালটাকেও হিংসে করছিলেন।”
“ইউ নো হোয়াট? তোমার ছোট মনটার জন্য আমি খাচ্ছি না আর। আর খাবও না। সামান্য খাবার খাচ্ছিলাম বলে দৈত্য নিকনেম শুনিয়ে দিলে। আমি আর কোনো ভয়ানক নিকনেম নিতে পারব না।”
ঠোঁট একদিকে বাঁকিয়ে ভেংচি দিল রাগিনী। কোহিনূরকে পাত্তা না দিয়ে আপনমনে বলল,
“না খেলে না খাবেন। তাতে আমার কি?”
কোহিনূর থমথমে মুখে বসেই রইল। অতঃপর বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকল। মেয়েটা আসলেই আর তাকে খেতে বলছে না? আজব! কেন বলবে না? বাঁকা চোখে স্যান্ডউইচের দিকে তাকালো কোহিনূর। রাত থেকে কিছু খাওয়া হয়নি তার। ফলে পেটে খিদেটা রয়েই গেছে। ঢক গিলে আস্তে আস্তে করে স্যান্ডউইচে হাত রাখল কোহিনূর। তৎক্ষনাৎ রাগিনী জোরে জোরে বলে উঠল,
“এখন আবার হাত বাড়াচ্ছেন কেন স্যান্ডউইচের দিকে?”
ধরা পড়ে যেন চোরের মতো তাকালো কোহিনূর। হালকা নড়েচড়ে উড়ে জ্ঞানীদের মতো বলে উঠল,
“তুমি জানো না? খাবার নষ্ট করতে নেই? পাপ হয়। তোমার কথার জন্য তো আমি আর পাপ করতে পারি না। সো আমি খাচ্ছি। নয়ত আমার একদমই খাওয়ার মুড নেই। তবুও খাচ্ছি।”
রাগিনীর হাসি পায়। কোনোরকমে হাসিটা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে আঁটকে রাখে। এই মূহুর্তে হেঁসে দিলে লোকটা খাবেই না। সেও জানে কোহিনূর গত রাত থেকে না খাওয়া। ফলে তার খাওয়াতে আর ব্যাঘাত ঘটাতে চায় না রাগিনী। নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“তো পুচকি ছানার কোনো নাম ঠিক করলেন?”
“হ্যাঁ করেছি তো।”
“কি নাম?”
“রাগ।”
কোহিনূরের মুখ থেকে কথা বের হতেই মুখ তুলে অবাক পানে চাইলো রাগিনী। কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ পড়ল তার। চোখজোড়া হয়ে এলো সরু। কোহিনূর খেতেই ব্যস্ত। অন্যদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই। রাগিনী চরম বিস্মিত হয়ে বলল,
“রাগ? এটা কেমন নাম? কি আজেবাজে নাম বললেন?”
“পারফেক্ট ফর দ্যাট লিটল ডাইনোসর। তোমার নামের সাথে মিলও থাকছে। তোমার আমাকে থ্যাংক দেওয়া উচিত। কারণ এতো ইউনিক নাম তো তোমার মাথায় আসতো না।”
রাগিনী রেগেমেগে গিয়ে চিৎকার দেওয়ার জন্য তৈরি হলো। লোকটার কথা আর নেওয়া যায় না। তবুও চিৎকারটা মুখ থেকে বের করতে পারল না সে। বড় বড় নিশ্বাস ছাড়ল সে। মাথায় কিছু একটা ব্যাপার আসতেই ফট করে বলে উঠল,
“ইয়েস, রিও! রাগিনী, রিও। লিটল ফেইরির নাম হবে রিও।”
কোহিনূর তা শুনে মিনমিন করে বলল,
“আই থিংক রাগ নামটাই বেটার ছিল। রাগিনী, রাগ!”
রাগিনী এবার চোখ রাঙাতেই নিরব হলো কোহিনূর। শেষবারের মতো খাবার মুখে নিতেই হাতের কাছে থাকা গ্লাসটা ধরে চোখের সামনে নিয়ে আসতেই গ্লাসে দুধ ভর্তি দেখে নাক শিটকে এলো তার।
“দুধ! এখন দুধ কে খায়? রাগিনী, আই এম অ্যা জেন্টেলম্যান।”
রাগিনীর দৃষ্টি আবারও কড়া হতে থাকলো। কোহিনূর সেদিকে খেয়াল না করেই বলে উঠল,
“কোথায় বিয়ার থাকবে তা না…”
রাগিনীর দিকে নিজের দৃষ্টি যেতেই মুখের জবান আপনাআপনি বন্ধ হলো কোহিনূরের। দৃষ্টি নিচে নামিয়ে গ্লাসটা মুখে ধরতেই তড়িঘড়ি করে নেমে এসে রাগিনী ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“আগে বলুন তো! আগে কি ছিলেন আপনি? কোনো চোর? ডাকাত? নাকি মদখোর লোক?”
জিহ্বা বের করে মাথা ঝাঁকায় কোহিনূর। চোখ গোল গোল করে বলে,
“ছিঃ ছিঃ! কি বলছো?”
“তো আর কি বলব? বিয়ার চাইছেন এখন। কাল হুইস্কি চাইবেন। পরের দিন ইংলিশ ড্রিংকস্। তারপরের দিন…”
রাগিনীর উত্তেজিত কন্ঠ একেবারেই থেমে গেল কোহিনূরের স্পর্শে। এক নিশ্বাসে বলা কথাগুলো একমুহূর্তে মিইয়ে গেল। কোহিনূর তার ঠোঁটে আলতো করে হাত রেখে চেপে ধরেছে। স্থির হয়ে গেছে যেন এক মূহুর্তের জন্য হৃদকম্পনও। আস্তে করে নিজের পাশে সোফার হ্যান্ডেলে থাকা টাওয়ালটা রাগিনীর মাথায় রেখে এবার দুহাত দিয়ে পেচিয়ে টাওয়াল আঁটকে দেয় কোহিনূর। মনের মাঝে সেই অদ্ভুত অনুভূতির সুর যেন বেজে চলেছে। রাগিনীর সেই দৃঢ় দৃষ্টি উপেক্ষা করার সাধ্য নেই কোহিনূরের। ফলে তার দৃষ্টিও নিবদ্ধ, স্থির! চোখে চোখ রেখেই সে ধীর গলায় বলল,
“কথা বলার মাঝে তো শ্বাসও নিতে পারো নাকি? দম আঁটকে যাবে তো।”
রাগিনীর উত্তর নেই। হাত দুটো ঠকঠক করে কাঁপছে। কন্ঠস্বর যেন হারিয়েছে অদূরে। কোহিনূর আবারও বলে,
“চুলের পানিতে ভিজে গেছে পিঠের পেছনে। একটু তো খেয়াল রাখা উচিত মিস. রাগিনী।”
বহু কষ্টে দুই কদম সরে এলো রাগিনী। পা দুটোও যেন চলতে ব্যর্থ হচ্ছে। ঢক গিলে বেশ গম্ভীর হয়ে কথা কাটানোর চেষ্টা করে বলল,
“আমরা বের হবো। তাড়াতাড়ি বাকিটা খেয়ে নিন।”
কোহিনূর স্মিত হাসলো। ধপ করে পুনরায় সোফায় বসে পড়ল। সে রাগিনীর চোখেমুখে স্পষ্ট এক গোলাপি আভার আস্তরণ দেখতে পেয়েছে। দেখা পেয়েছে তার লাজুক চোখের। যার প্রতি কোহিনূরের ঝোঁকটা একটু বেশিই।
চেয়ারের উপর ক্লান্ত ভঙ্গিতে মাথা পেছন দিকে রেখে চোখ বুঁজে রয়েছে রায়ান। কিছুক্ষণ আগেই দুটো ছেলেকে রিমান্ডে ইচ্ছেমতো উত্তমমধ্যম দিয়ে ক্লান্ত সে। কেসটা ধর্ষ’ণের। খুবই সেনসিটিভ। প্রায় একঘন্টা মা’রধর করার পর অবশেষে দুটো ছেলে স্বীকার করেছে। যখন তারা তাদের মুখে কথাগুলো স্বীকার করেছিল তখনই রায়ানের তীব্র ইচ্ছে জেগে উঠেছিল দুটোকে সেখানেই মে’রে পুঁতে দেওয়ার। কিন্তু তা করা যাবে না। মেজাজ খারাপ নিয়ে বিরস মুখে সব বন্ধ করে রাখা তার। চোয়ালের দু দিক এখনো ওঠানামা করছে। কপালের রগ দপদপ করছে। উজ্জ্বল শ্যামলা চেহারাটায় লাল আভা দেখা যাচ্ছে। ল্যান্ডলাইন থেকে ফোন এলো। বেজে উঠল টেলিফোন। রায়ান চোখ মেলে তাকালো। সোজা হয়ে বসে ল্যান্ডলাইন থেকে কল রিসিভ করে বলল,
“হ্যালো, ইন্সপেক্টর রায়ান বলছি!”
“ইন্সপেক্টর রায়ান, আমি তোমার এসপি স্যার।”
এবার অত্যাধিক মনোযোগ দিয়ে কলে কন্সেন্ট্রেট করে রায়ান। শক্ত গলায় বলে,
“ইয়েস স্যার!”
“তুমি কি ব্যস্ত আছো?”
“না স্যার। কোনো সমস্যা হয়েছে কি?”
ওপাশ থেকে ক্ষীণ সুরে ভেসে এলো এসপি অফিসারের গলা।
“তা তেমনটা নয়। তুমি হয়ত জানো যে ইন্ডিয়া থেকে অভিরূপ চৌধুরী আসছেন। আর তোমার তো জানাই আছে এখন তার মতো কোনো সুপরিচিত কেউ আসা মানে আমাদের ক্ষেত্রে বিপদজনক। আর ঢাকায় যে সেই টেরো’রিস্ট টিম এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই ভাবছিলাম বিষয়টা যদি তুমি দেখতে। অন্যদিকে অফিসার নির্জন ব্যস্ত সেকারণে ওকে আর ডিস্টার্ব করলাম না। তুমি কি ওইদিকে সময় দিতে পারবে?”
রায়ান বাধ্য কন্ঠে বলে উঠল,
“জি স্যার। সিউর। অভিরূপ চৌধুরীর প্রটেকশনের দায়িত্ব আমি নিচ্ছি।”
“যাক ভরসা পেলাম।”
আশ্বস্ত হন এসপি অফিসার। তারপর বলেন,
“সো, বি রেডি! পরশুদিন সকাল সাতটায়।”
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। আর গল্পে অনেক চরিত্রই রয়েছে। যাদের এক পর্বেই একসঙ্গে দেখা সম্ভব নয়। অনেকে রাগিনীর রহস্য নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু এখনি সব ক্লিয়ার করলে থিমটা ঘেঁটে যেতে পারে। তাই আমার চিন্তা অনুযায়ী এগোতে দিলে ভালো হয়। আমি তো আর রহস্য রেখেই গল্পটা শেষ করব না। অবশ্যই সব ক্লিয়ার করেই শেষ করব।]