#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৮
কপালে পড়ে থাকা ঘন চুলের ফাঁকে একটা ছোট লম্বা দাগে হাত বুলিয়ে তার হাতে থাকা ফাইলের দিকে একমনে চেয়ে রয়েছে নির্জন। তার হলুদ ফর্সা চেহারায় হালকা গাঢ় দাগটা সর্বদা চুলে নিচে ঢাকা থাকে। চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে ফাইলটা ঠেলে দিয়ে চেয়ারে ঠেস দিয়ে নির্জন বলল,
“অনেক ভাবলাম। মাথায় তেমন কিছুই আসছে না। যা আসছে সব কনফিউশানের ভেতরে। রাগিনী কেন দুটো টিকিট কাটবে? তাও নিজের নামে? আই উইকনেসের কথা অনুযায়ী রাগিনী একা ট্রেনে আসছিল। তাও ‘ছ’ কোচের আশেপাশে। তাহলে ‘গ’ কোচে কেন আরেকটা টিকিট কাটলো? এক্ষেত্রে দেখতে গেলে রাগিনীকেই ভিক্টিম মনে হচ্ছে। কারণ কোনো চালাক ক্রি’মিনাল নিজের নামে টিকিট কেটে ফাঁসতে চাইবে না। হতে পারে রাগিনীকেই উল্টো ফাঁসানো হচ্ছে? কিন্তু রাগিনীকে কেন ফাঁসানো হবে? এটা কোনো শত্রুতার খেলা নয়। এটা আ’তঙ্ক ছড়ানোর খেলা! আবার অন্যদিকে দেখতে গেলে এটাও হতে পারে যে রাগিনী আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করছে। আমাদেরকে ভুল বোঝানোর চিন্তা করছে। আই ডোন্ট নো, এর মধ্যে কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল! দুটোরই পসিবিলিটি আছে। আই রিয়েলি ডোন্ট নো। এই প্রথম কোনো কেসের ঘটনা আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।”
“স্যার, সবে আপনার মাথা কাজ করা বন্ধ করল? আমার জানামতে আপনি যেদিন রাগিনী তাজরীনকে দেখেছিলেন সেদিনই মস্তিষ্কের কাজ থেমে যাওয়ার কথা! যাক, তাও যে এতোদিন পর হলেও মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। নয়ত আপনাকে রোবটই ভেবে ফেলতাম।”
গভীর ভাবনায় মত্ত নির্জনের কানে মেহরাজের বলা কথাগুলো পৌঁছালেও বুঝতে পারল না। ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কিছু বললে?”
মেহরাজ মনে মনে খুশি হলো। সে খুব মুক ফস্কে কথা বলতে ভালোবাসে। মুখে কোনো ব্রেক ট্রেক নেই বোধহয়। এটা তার কোনো জন্মেই ছিল না। ফলে অদ্ভুত সব কথাগুলো বলার সাথেই তার উপর দিয়ে ছোটখাটো ঝড় বর্ষিত হয়। মেহরাজ মাথা নাড়িয়ে বলে,
“না স্যার! কিছু না। বলছিলাম যে আপনার হাতে কী হয়েছে স্যার? এমন লাল দেখাচ্ছে কেন?”
হাতের দিকে তাকায় নির্জন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
“আজকাল কারোর চিন্তায় পড়ে তার ভালো চাইতে নেই মেহরাজ। ফলাফল আমার মতো হতে পারে।”
মেহরাজ কিছুটা বুঝতে পারলো। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসিটা আঁটকে বলল,
“স্যার আপনার কি মনে হয় না? আপনি যাকে পরাজিত করতে চাইছেন সে নিজেই আপনাকে ঘায়েল করে উল্টো পরাজিত করে দিচ্ছে?”
চোখজোড়া সরু হয়ে আসে নির্জনের। ঘাড় কাঁত করে জিজ্ঞেস করে,
“মানে?”
“অফিসার নির্জন আহমেদের সাথে আমি অনেকদিন কাজ করেছি। সে এমন কখনোই ছিল না স্যার। তার চোখে আমি কখনো কারোর প্রতি ব্যাকুলতা দেখতে পাইনি। সেই চোখে কখনো কোনো নারীর জন্য অস্থিরতার চিহ্ন ছিল না।”
নির্জন তখন স্তব্ধ। হয়তবা মেহরাজের বলা কথাগুলোই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে। মেহরাজ আবারও বলে,
“কখনো দেখিনি, আপনি যাকে দৃঢ় সন্দেহ করছেন তাকেই রক্ষা করে নিজে আঘা’ত পেতে। সবকিছু কেমন যেন বদলে গেল না স্যার?”
থম মেরে বসে রইল নির্জন। চোখ জুড়ে রয়েছে বিস্ময়। নিজের প্রতি হয়তবা নিজেই অবাক। পরক্ষণেই নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,
“অযথা কথার বলার সময় নেই মেহরাজ। লেট ইট গো! যেই টপিকটার কোনোরকম লজিক নেই সেটা নিয়ে এখানে কথা হবে না। তুমি এক কাজ করো! চট্টগ্রামের রেলওয়ে স্টেশনের সব সিসিটিভি ফুটেজ কালেক্ট করো। আই ওয়ান্ট দিস!”
মেহরাজের উত্তর শুনতে পেলো না এবার নির্জন। দৃষ্টিটা তার দিকে নিয়ে যেতেই তার হাসি হাসি মুখটা নির্জনের চোখে পড়ল। মেহরাজের চোখ নির্জনের দিকে পড়তেই নির্জন ভ্রু উঁচিয়ে তার হাসির কারণ জানতে চাইলে মেহরাজ আরেক দফা মুচকি হেঁসে বলল,
“স্যার, আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন? আমার সামনে লজ্জা না পেলেও চলবে স্যার। আমি তো আপনার…”
কথাটুকু অসম্পূর্ণ রয়ে গেল। নির্জন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই মেহরাজের গলা শুঁকিয়ে এলো। আর অন্যকোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা দরজার দিকে ছুট লাগালো। যত তাড়াতাড়ি পালানো যায় ততই ভালো। মেহরাজের কাছে নির্জন আহমেদ স্বয়ং একটা বো’ম! যেটা যেকোনো সময় ফে’টে যায়। তাই তার উপরে ফেটে যাওয়ার আগে কেটে পড়াই উত্তম।
মেহরাজ যাওয়ার পরপরই চোখ বুঁজে ধপ করে বসে পড়ল নির্জন। চোখে রাজ্যের ঘুম। সারারাত ঘুমোতে পারেনি। দুচোখের পাতা এক হয়নি। বিরবির করে বলে,
“এখন না ঘুমোতে পারলে আমি সত্যিই পাগল হয়ে যাব। আই নিড টু স্লিপ!”
চোখ মেলে তাকায় নির্জন। ইতিমধ্যে ঘুমের অভাবে লাল হয়েছে চোখ। চোখ উপর ঘষে উঠে দাঁড়ায় সে। হাতে তার লং কালো কোট নিয়ে ঘাড়ের উপর তুলতেই কোটের পকেট থেকে পড়ে যায় একটা কাগজ। একটু ঝুঁকে কাগজটা তুলে ভাবতে থাকে এটা আসলে কীসের কাগজ? স্মরণে আসে না তার। কাগজের ভাঁজ খুলতেই বেরিয়ে আসে এক মানবীর স্কেচ। তৎক্ষনাৎ নির্জনের চোখমুখের রঙটাই যেন পরিবর্তন হয়ে যায়। ঝলকে ওঠে তার নেত্র। নেত্রপল্লবে দৃশ্যমান হতে থাকে বাস্তব নারীটির মুখশ্রী। সেই দৃঢ় দৃষ্টির কথা মনে পড়লেই গলা শুঁকিয়ে আসে নির্জনের। ঢক গিলে দেয় সে। না চাইতেও বলে ফেলে,
“যুদ্ধ ময়দানে যদি অ’স্ত্রের বদলে সেই ধারালো এবং দৃঢ় দৃষ্টি থাকে তবে যে কেউ পরাজিত হতে বাধ্য। আমিও তার ব্যতিক্রম নই।”
নির্জন দ্রুত গুটিয়ে নেয় সেই কাগজ। বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। অতঃপর শক্ত কন্ঠে বলে,
“কিন্তু আমিও দেখতে চাই তুমি কতক্ষণ আমাকে পরাস্ত করতে পারো। আমি পরাস্ত হয়েই জিতে যেতে চাই এবার।”
তখন রাত ঘনিয়ে এসেছে। দিনশেষে ঘনিয়ে এসেছে কালো মেঘ এবং তার মাঝখানে একটা চিকন চাঁদ। অমাবস্যার পরের রাত আজ। চাঁদকে বেশিই চিকন দেখা যাচ্ছে। বাহিরের বাতাসে নড়ছে গাছের পাতা গুলো। শোনা যাচ্ছে ঝিঁঝি পোকার দৈনন্দিনের কন্ঠ। রাশেদ সাহেব বাড়ি ফিরেছেন। খাবার টেবিলে খেতে বসে রাগিনীর জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু মেয়েটা আজ এখনো নিচে নামলো না। রাগিনীর জানা রয়েছে রাশেদ সাহেব নিয়ম করে রাত নয়টার দিকেই খেতে বসেন। আর রাগিনী বাড়িতে থাকলে তাকে নিয়েই বসেন খেতে। আজ নয়টা বেজে পনেরো মিনিট। তবুও রাগিনী আসছে না। সৈয়দ এবার রান্নাঘর থেকে এসে জুসের একটা জগ রেখে দিল। আর বলল,
“স্যার, রাগিনী মাকে ডেকে দিই?”
“আর পাঁচ মিনিট যাক। হয়তবা কোনো কাজে ব্যস্ত আছে। তখন না এলে ডেকে দিও।”
“ঠিক আছে।”
কথাটুকু বলেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল সৈয়দ। মুখে নেই কোনো কথা। তবে তার দাঁড়িয়ে থাকা দেখে রাশেদ সাহেব গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন,
“আরো কিছু বলতে চাও সৈয়দ? এনি প্রবলেম?”
“একটা কথা বলার ছিল স্যার।”
“হ্যাঁ বলো।”
সৈয়দ উশখুশ করতে থাকলো। যেন বলতে চেয়েও তা বলতে পারছে না। কোনো অস্বস্তি তার উপর ভর করেছে। রাশেদ সাহেব এসব খুব সহজেই ধরতে পারেন। সৈয়দকে আশ্বস্ত করে বলেন,
“কোনো সমস্যা হলে সংকোচবোধ করতে নেই সৈয়দ।”
“বিষয়টা আমার সমস্যার না স্যার। আসলে কথা হইতেছে, আজকে আবার এখানে ওই পাগলটা আসছিল।”
এবার টনক নড়ে রাশেদ সাহেবের। গাম্ভীর্যের সাথেই সৈয়দের দিকে তাকান এবং জিজ্ঞেস করেন,
“মানে? কোন পাগল?”
“ওইতো! কোহিনূর না কি যেন নাম। রাগিনীর সাথে লুকিয়ে দেখা করতে এসেছিল। রাগিনী আমাদের বিষয়টা জানায় নি। কিন্তু আমি দেখে ফেলেছিলাম।”
“রাগিনী জানায় নি?”
সৈয়দ মাথায় ঝাঁকান। এবার রাশেদ সাহেবের চোখেমুখে দেখা যায় চিন্তার ছাপ। সৈয়দ একটু কেশে সংকোচবোধ করেই বলে,
“ছোটমুখে হয়ত বড় কথা হয়ে যায় স্যার। কিন্তু রাগিনীকে তো ছোট থেকে আমিও দেখে আসছি। আমার মেয়ের মতোই মনে করি। সেখান থেকেই বলতেছি রাগিনী হয়ত ওই পাগলটার উপর একটু বেশিই মনোযোগ দিয়ে ফেলতেছে। আর এই বয়সটা ভালো না। আর একটা সামান্য পাগলের জন্য এতো চিন্তাভাবনা আমার চোখে ঠিক লাগল না।”
রাশেদ সাহেব মাথা দুলিয়ে সায় দিয়ে বলেন,
“আমি বুঝতে পারছি। হয়ত রাগিনী তাকে অতিরিক্তই মনোযোগ দিচ্ছে এই ভেবে যে সে তার প্রথম পেশেন্ট এবং সে ভাবে কোহিনূরকে তার যেকোনোভাবেই ঠিক করে তুলতে হবে! হয়ত এজন্যই তার এতো চিন্তা। তুমি যাও জগে পানি নেই। পানি নিয়ে এসো।”
সৈয়দ মাথায় নুইয়ে চলে গেল রান্নাঘরে হাতে জগ নিয়ে। রাশেদ সাহেবের মস্তিষ্কে ঝেঁকে বসল সৈয়দের বলা কথাগুলো। নিজেকে শান্তনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে কথাগুলো সৈয়দকে বললেন ঠিকই তবে মাথা থেকে চিন্তা গেল না। হঠাৎ করেই সিঁড়ির কাছ থেকে রাগিনীর কন্ঠস্বর পাওয়ায় চোখ তুলে তাকালেন রাশেদ সাহেব। রাগিনী কোলে ছোট্ট রিওকে নিয়ে নামছে। বেশ আদুরে ভঙ্গিতে বলছে,
“তুমি তো দেখছি বেশ দুষ্টু রিও! আজ সারাদিন কিন্তু দুষ্টুমি করেছো।”
রিও যেন রাগিনীর কথা বুঝে মিউ করে ডেকে ওঠে। রাশেদ সাহেবের বুঝতে বাকি থাকে না আজ ছোট্ট বিড়াল ছানাকে নিয়েই রাগিনীর ব্যস্ত দিন কেটেছে। উনি মনে মনে খুশি হন। মেয়েটা সারাদিন একা বাড়িতে থাকে। বিড়াল ছানা থাকায় সময় কাটানো সুবিধা হবে। রাগিনী রিওকে সোফার উপর ছেড়ে দিয়ে খাবার টেবিলের সামনে রাশেদ সাহেবের সামনের চেয়ারে বসে নম্র সুরে বলে উঠল,
“বাবা, অনেকক্ষণ ধরে ওয়েট করছিলে না? আসলে রিও কে খাওয়াতে গিয়ে লেট হয়ে গিয়েছে।”
“সমস্যা নেই। আমিও কেবলই এসে বসেছি।”
রাগিনী সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে রাশেদ সাহেবকে আগে খাবার বেড়ে দিয়ে নিজের প্লেটে খাবার বেড়ে খেতে আরম্ভ করে। রাশেদ সাহেবও একবার খাবার মুখে নিয়ে বলেন,
“একটা কথা জানার ছিল তোমার থেকে। কাল তুমি অসুস্থ ছিলে তাই আর কথা বলা হয়নি। হঠাৎ করে তোমার জ্বর এলো আর কোহিনূরের আ’ঘাত লাগলো কী করে? তুমি কি কোনো বিষয়ে ভয় পেয়েছিলে?”
রাগিনীর খাওয়া বন্ধ হলো। গতকালকের ঘটনা মনে পড়তেই চোখে ভেসে উঠল গো’লাগু’লির দৃশ্য। রাশেদ সাহেব লক্ষ্য করলেন রাগিনীর হাত কাঁপছে। রাগিনী নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলে,
“গতকাল একটু গ্রামের দিকে গিয়েছিলাম। ছোটখাটো এক্সিডেন্ট ছিল। তেমন কিছুই না।”
“ছোটখাটো এক্সিডেন্ট? তোমার হাত কাঁপছে! আমি তোমার বাবা হওয়ার সাথে সাথে একজন সাইকোলজিস্ট। আমি বুঝি কার মনে কী চলে। কি হয়েছিল গতকাল?”
“বাবা তেমন কিছুই না। গাছের ডাল লেগে উনার কাঁধে আ’ঘাত পায় আর তুমি তো জানো যে আমি র’ক্ত দেখতে পারি না। সেকারণেই প্যানিক এট্যা’ক করে।”
বলেই মাথা নিচু করে জোরে জোরে খাওয়া শুরু করে রাগিনী। সে কখনোই চায় না তার বাবা তার জন্য চিন্তিত হয়ে পড়ুক। কোনোরকম হার্টে কোনো গুরুতর সমস্যা হক। তাই তো এতো মিথ্যে বলা। রাশেদ সাহেব আর কিছু বলেন না রাগিনীর অস্থির হওয়া দেখে। নিজেও খেতে শুরু করেন।
খাওয়া তখন শেষদিকে। রাগিনী উঠে যেতে লাগে। রাশেদ সাহেব ডেকে শান্ত গলায় বলেন,
“আরো একটা কথা ছিল রাগিনী! তুমি যেহেতু আমার মেয়ে তাই এই বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলা উচিত। তাই সোজাসুজি বলছি কোহিনূর বা ওর সম্পর্কে এতো স্ট্রেস বা চিন্তা নেওয়ার দরকার নেই। তোমার হাতে আর দেড় মাসের মতো সময় আছে। তারপর আবার চট্টগ্রাম যেতে হবে। আশা করছি তোমাকে আমি কোহিনূরের সুস্থতার দায়িত্ব দিয়ে কোনো ভুল করিনি।”
রাগিনী বুঝে উঠতে পারল না তার বাবা হঠাৎ করে এমন কথা কেন বলল। শুধু বুঝল তার বাবা অনেক কিছুই ভেবে নিয়েছে। তবে তা জানতে চেয়ে আর কথা বাড়াল না সে। মাথা দুলিয়ে বলল,
“জি বাবা।”
ঘরে এসে দরজা লাগালো রাগিনী। মাথায় একদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে বাবার বলা কথাগুলো। অন্যদিকে কোহিনূরের কিছু অদ্ভুত ব্যবহার যা রাগিনীর চোখে লেগেছে। রাশেদ সাহেবের মুখে এমন ধরনের কথা শুনে অভ্যস্ত নয় রাগিনী। তাই তার অস্বস্তি লাগছে। আর কোহিনূর আজ যেভাবে গাড়ির দিকটা সামলে নিল তাতে রাগিনী সবথেকে বেশি অবাক হয়েছে। আর তার রাগটা ছিল একেবারেই অন্যরকম। যেন সেই মানুষকে চিনতোই না রাগিনী। আর কোহিনূরের গাড়ির দরজা খোলার ব্যাপারটাও রাগিনীর চোখে পড়েছে। যেন সে গাড়ির দরজা খুলতে মেলতে বেশ অভ্যস্ত। খুব সহজেই এক টানে গাড়ির দরজা খোলার দৃশ্য রাগিনীর মস্তিষ্ক থেকে বের হচ্ছে না। মাথায় আসছে আজেবাজে চিন্তা। মাথায় হাত রেখে চুপ থাকে কিছুক্ষণ রাগিনী। সে কি বিশ্বাস হারাচ্ছে তবে? মানুষটার প্রতি থেকে বিশ্বাস উঠিয়ে নিতে মন চায় না একদম। কেন মানুষটা তার বিশ্বাস ভাঙবে? একদমই ভাঙতে পারে না।
তবুও অনেক ভেবে বালিশের নিচ থেকে নিজের ফোনটা বের করে রাগিনী। ফোন অন করে তার কললিস্টে গিয়ে একটা নম্বর ডায়াল করে কল করে ফোনটা কানে ধরে সে। ঘড়ির দিকে তাকায় অতঃপর। ঘড়িতে দশটা বাজতে চলেছে। ফোনটা ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই রাগিনী তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে,
“হ্যালো! আমি রাগিনী তাজরীন বলছি।”
ওপর পাশ থেকে বিনয়ের সাথে একটা মেয়েলি সুর ভেসে আসে,
“ইয়েস ম্যাম, আমরা কীভাবে আপনাকে হেল্প করতে পারি?”
“হসপিটালের এক পেশেন্ট। যার দায়িত্বে আমি নিজে রয়েছি। কোহিনূর! টাইটেল আমি জানি না। উনার সমস্ত ডিটেইলস আমার চাই। উনাকে কে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দিয়ে গিয়েছেন তার ফোন নম্বর বা তারও কোনো ডিটেইলস হলে ভালো হয়। এক কথায় যত ইনফরমেশন আছে কোহিনূরের ব্যাপারে সব আমার লাগবে।”
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]