অভিশপ্ত_জীবন সিজন 2 পর্ব ৩

0
321

#অভিশপ্ত_জীবন
সিজন 2
পর্ব ৩
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno

সারাদিন রান্না করে রাতে সবাই এক সাথে খেতে বসেছি। আজ নিশিকে একটু আনন্দিত মনে হচ্ছে। এই আনন্দের সময় নতুন আরেকটা আনন্দের সংবাদ শুনতে পেলাম। আমার সেই ছোট্ট শান্ত মেয়ে রজনী নাকি মা হবে। খুশিতে রজনীকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।

আগে কেন বলিস নি আমাকে ?

ভাবছিলাম সামনাসামনি বলে তোমার এই আনন্দমাখা মুখ দেখবো তাই!

আমার পাগলি মেয়ে। রাতে দুই বোন এক সাথে ঘুমাবে বলে বাইনা করে। তাই ওদেরকে নিশির ঘরে যায়গা করে দিলাম। জামাই রজনীর ঘরে একা থাকে। রাতে নিশি ওর দুলাভাইয়ের ফোন নিয়ে অনেকক্ষন টিপাটিপি করে। তা দেখে রজনী নিশি কে বলে,

তুই যে দিন প্রথম ফোন কেনার কথা বলেছিলি ওই দিন মা মুখে না বললেও মনে মনে ফোন কিনে দেওয়ার জন্য ইচ্ছে করেছিলো। আমাকে ফোন দিয়ে বলেছিলো সব কিছু। আমিও প্রথমে রাজি ছিলাম না। কিন্তু তোর দুলাভাই বারবার বলছিলো ফোনের যেমন নেগেটিভ সাইড আছে ঠিক তেমন পজেটিভ সাইড ও আছে। নিশি যদি এটাকে ভুল দিকে নিয়ে যায় তাহলে ক্ষতি আর সঠিক ব্যবহার করলে উন্নতি।

তোর দুলাভাইয়ের কথাতে আমিও রাজি হই এবং মাকে বলি আমরা আসার সময় তোর জন্য ফোন নিয়ে আসবো। তোকে সারপ্রাইজড দিবো ভেবে তোকে জানাতে নিষেধ করি। কিন্তু দেখ, না বুঝে তুই কত মান সম্মান খোয়ালি গ্রামের সব মানুষের মুখে মুখে তোর এমন উশৃংখল ব্যবহারের কথা। তুই নিজেও বুঝতে পারছিস তোকে সবাই কোন চোখে দেখে এখন।

রাতে দু’বোনের আলোচনাতে নিশি হয়তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে নিশি আমার কাছে ক্ষমা চাই। নিশিকে কিভাবে ক্ষমা করবো আমি,আমার চোখে তো নিশির কোন দোষই নাই। মায়ের কাছে কোন সন্তানের দোষ দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

কোন অভ্যাস খুব তারাতাড়ি বদলানো সম্ভব না। ফোনের প্রতি নিশির যে আকৃষ্টতার জন্ম হয়েছে তা দূর হতে বেশ সময় লাগবে। জামাইয়ের ছুটি শেষ,, সে চলে যাবে। রজনীকে রেখে যাবে এখানে। যতদিন বাচ্চা না হয় ততদিন। আমিও চাইছিলাম মেয়েটা থাকুক। এই অবস্থায় নিজের কাজ নিজের করা সম্ভব হয় না। আমাদের সেবাযত্নে রজনী সুস্থ থাকবে।

জামাই যাওয়ার আগে রজনীকে ওর শশুর বাড়ি রেখে যায়। শাশুড়ী মানুষ টা খুবই ভালো। খুব খেয়াল রাখে রজনীর।

হঠাৎ একদিন গোস্বা করতে গিয়ে রজনী পড়ে গিয়ে ব্যাথা পায়। খবর টা শোনা মাত্রই কলিজা শুকিয়ে গেছে। আমার ভাগ্যে, পেটে বাচ্চা আসা স্বত্বেও চোখে দেখিনি বাচ্চাকে। আমার কুফা কি রজনী কেও লাগলো। আল্লাহ তুমি আমার মেয়ের জীবন আমার মতো নরক করো না।

নিশিকে সাথে নিয়ে সোজা হাসপাতালে গেলাম। আগেই রজনীকে নিয়ে আসছে ওর শশুর শাশুড়ী। আমাদের আসার কিছুক্ষণ পরেই জামাই চলে আসছে। রজনী খুব কান্নাকাটি করছে। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার নাই। কারণ আমি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি এই যন্ত্রণা কতটা ভয়ানক।

ডাক্তার রজনীকে সম্পুর্ন বেড রেস্ট দিয়েছে। রজনীর বাড়ি থেকে নিশির কলেজ টা কাছে হয়। তাই রজনীর শাশুড়ী নিশিকে উনাদের বাড়িতে থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি রজনীর দেখাশোনার জন্য বলেন।

আমরাও কোন অমত না করে নিশিকে রজনীর সাথে পাঠালাম। আমার প্রতিটি দিন কাটে রজনীর চিন্তায়। এতো শান্ত নম্র ভদ্র মেয়েকে যেন আমার মতো অভিশপ্ত জীবন যেন আল্লাহ না দেন। প্রতি মাসে মাসে রজনীকে ডাক্তার দেখানো হয়। আপাতত বাচ্চা ভালোই আছে। কোন রকম নয় মাসে পড়লেই সিজার করে বাচ্চাকে তুলে নেওয়ার ধারণা আছে।

আমি প্রতি ৮/১০ দিন পরপরই যায় এবং রজনী নিশিকে দেখে আসি। যতটুকু সম্ভব পুষ্টিকর খাবার নিয়ে যায়। জামাই টাকা পাঠায় চিকিৎসা এবং অন্যান্য খরচের জন্য। নিশিও বেশ যত্ন নেই রজনীর। পাশাপাশি পড়াশোনাতেও অনেক ভালো করছে। ইয়ার চেঞ্জ পরিক্ষার রেজাল্ট খুব ভালো। আমরা অনেক খুশি নিশির এমন পরিবর্তন দেখে। নিশির মা নাকি দুইদিন রজনী কে দেখার জন্য ওর শশুর বাড়ি গেছিলো। কিন্তু রজনী সেই আগের মতোই তাড়িয়ে দিয়েছে।

সময় চলছে তার আপন গতিতে। রজনীর নাকি জমজ বাচ্চা হবে। এমনই একটা সমস্যার মধ্যে আছি তার উপর জমজ বাচ্চা বিষয় টা খুবই চিন্তার। আগের চেয়ে বেশি যত্নার্তী নিতে। নিশিকে তার বুঝিয়ে বললাম যেন সামান্য কোন ভুলত্রুটি না হয়। যেভাবেই হোক আর তিন মাস পার করতে হবে। জামাই নিজেও কোম্পানি থেকে স্পেশাল ভাবে তিন মাসের ছুটি নিয়ে এসেছে।

জামাইকে এই মুহূর্তে কাছে পেয়ে অন্তত মানসিক ভাবে রজনী স্বস্তিতে থাকবে। জামাই বাসায় আসার পরে থেকে রজনীর ফোন নিশির কাছে থাকে সব সময়। সামনে রজনীর ডেলিভারি ডেট আবারও নিশির পরিক্ষা। সব মিলিয়ে নিশির উপর ও ভিষণ চাপ। মেয়েটা প্রায় সারারাত জেগে থেকে পড়াশোনা করে। রজনীর শাশুড়ী নিশির পড়াশোনার খুব প্রসংশা করলেন। খুব ভালো লাগছে এইসব শুনে।

নিশি যখন যা খেতে চাই তাই জামাই কিনে দেয়, হাত খরচের জন্য টাকা দেয়। আর পোশাকের কথা তো বাদ ই দিলাম। এই ক মাসের মধ্যে ৪/৫ রকম পোশাক দিয়েছে। আর আমরা সারা বছরে ৪/৫ রকম দিতাম না। মেয়েটা আগে থেকেই সৌখিন তার উপর না চাইতে সব কিছু পাওয়ার খুশিতে আরো বেশি যত্ন নেই রজনীর।

নিশিকে একটু বেশিই হাসিখুশি দেখা যায় এখন। সব সময় গুনগুন করে গান গায় আর কাজ করে। একা একা বসে হাসে, আয়নার সামনে সময় নিয়ে বসে থেকে নিজেকে দেখে। একটু সময় পেলেই নাকি পাড়ায় ঘুরতে চলে যায়। ঔষধ খাওয়ানোর সময় মনে থাকে না আবারও ভুল করে অন্য ঔষধ খাইয়ে দেয় এমন অনেক রকম অসাবধানতা বেশ কিছু দিন ধরে বিষয় গুলো লক্ষ্য করছে রজনী।

আজও কলেজ থেকে এসেই গুনগুন করে গান গায়ছে আর রজনীর ঘর থেকে রাসেলের (রজনীর জামাই) জামা কাপড় নিয়ে যাচ্ছে ধুয়ে দেওয়ার জন্য। রজনী আজ জিজ্ঞেস করে নিশিকে,,কি রে নিশি,, মনে এতো আনন্দ!! গুনগুন করে গান!! কারো প্রেমে পড়েছিস নাকি??

নিশি হেসে জবাব দেয়,, হাসিখুশি ও কি থাকা যাবে না নাকি রে আপা, মনের সুখে দেখি গান ও গাওয়া যাবে না তোদের দুঃখে,,যা এখন থেকে আর গান গায়বো না হাসবো ও না।

বুঝি বুঝি,,এমন দিন আমিও পার করেছি।যখন তোর দুলাভাইয়ের প্রেমে মজে ছিলাম তখন। যদি তুইও আমার মতো কাহিনি নিয়ে হাসিখুশি থাকিস তাহলে আমাকে বলতে পারিস কে সে, যার জন্য আমার বোন এতো উদাসীন।

আচ্ছা আপা তুই কিভাবে কিভাবে দুলাভাইয়ের সাথে প্রেম করতি রে!! বলনা আমাকে, আমিও একটু শিখি।

মাইর খাবি এখন,, যা ভাগ এখান থেকে।

তারপর দুবোন কিছুক্ষণ হাসাহাসি করে। নিশি চলে গেলে রজনী ভাবতে থাকে,, কি চলছে নিশির মনে জানতেই হবে। আবারও কোন ভুল করার আগে ফেরাতে হবে মেয়েটা কে। কিন্তু কিভাবে জানবো ও কি করে কার সাথে। আমিতো সারাদিন ঘরে থাকি বাইরে যাওয়া সম্ভব না। যেভাবেই হোক কোন একটা উপায় বের করতে হবে।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here