তোমার নেশায় আসক্ত – পর্ব ২০

0
438

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:20
#Suraiya_Aayat

আর দুইদিন পরে আরিশ এর ফাইনাল এক্সাম খুব জোরালো প্রস্তুতি নিচ্ছে যতই হোক সবাই ওর থেকে অনেক বেশি এক্সপেক্ট করে আর সেই অনুযায়ী ফলাফল না হলে নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে না আরিশ ৷ তাছাড়া এ সঙ্গে ওর কলেজের নামও জড়িয়ে আছে ৷

সারাদিন পড়াশোনা তে খুবই ব্যস্ত থাকে আরিস আরুর সাথে ঠিকমত কথা বলার সময়ও পায়না, সকালবেলা উঠে পড়তে বসে যায় , লাঞ্চ , ব্রেকফাস্ট ডিনার করার জন্য সাধারণত রুম থেকে বের হয়৷ আরূ মাঝে মাঝে বাড়িতে টুকটাক কিছু কাজ করে ওর শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে ৷ আরিশের সঙ্গে খুব একটা বেশি কথা হয় না বলে আজকাল নিজেকেও বড্ড বেশি একা একা মনে হয় , তাছাড়াও সানাও এখন বেশিরভাগ সময়ই আরাভের সঙ্গে গল্প করতে থাকে আর এই সবকিছুর মাঝখানে আরিশকে ছেড়ে যাওয়ার ব্যথাটা বড্ড বেশি ঝাঁঝরা করে দেয় ওর হৃদয় টাকে…..

আর কিছুক্ষণ পরেই সানা আর আরু বাইরে যাবে কিছু শপিং করতে, যদিও বা যাওয়ার উদ্দেশ্যটা সানার কারণেই ৷সানা আরাভের সঙ্গে দেখা করবে, দুজনের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছে বেশ , ততবেশি মনোমালিন্য হয় না এখন আর , দিনদিন ক্রমশ মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠছে ওদের মধ্যে তা নিয়ে সকলেই বেশ খুশি, কিন্তু এদিকে আরিশের এই ব্যস্ততা আরিশ আর আরুর মধ্যে সামান্য হলেও দূরত্ব সৃষ্টি করেছে ৷ এখন আর দুজনের আগের মত ঠিকঠাক কথা হয়না , অবশ্য আরুও এতে রাগ করে না কারণ ও জানে এক্সাম হয়ে গেলে আরিশ আবার আগের মতোই হয়ে যাবে কিন্তু হয়তো সেই দিনের সেই ভালো সময়টা ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবে না আরূ ৷ তবে আজকাল অভিমান নামক জিনিসটা জেন বড্ড বেশি সুযোগ পেতে চাই ৷

হাতের পাশে থাকা কফির মগটায় চুমুক দিয়ে আবার টেবিলের উপরে রাখতেই মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটলো আরিশ এর ৷

আরু পাশে এসে দাঁড়াতেই ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে খপ করে হাতটা টেনে ধরে ওর কোলের উপরে বসিয়ে দিল আরিশ, আর শক্ত করে কোমরটাকে জরিয়ে ধরে রেখেছে ও ৷

আরিস: তুমি আমার উপর রাগ করেছো আরূপাখি?

আরুশি অভিমান করে: আমি আপনার উপর কেন রাগ করতে যাব!

আরিশ : আমি বুঝি আরূপাখি তোমার মনের ভাষা গুলোকে, আমার কাছে যে বড্ড স্পষ্ট তুমি আর তোমার চাওয়াপাওয়া গুলো , কখন কি অনুভব করো সবকিছুই আমি বুঝি ৷ আমি খুব প্রেসার এর মধ্যে আছি আরুপাখি আশা করি তুমি বুঝতে পারছো….

আরোশী আবার আগের মতোই চুপ করে রইলো, চোখের কোনে বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে আরুর, আরিশ আর একটা শব্দ বললেই যেন তার বাঁধ ভেঙে গড়িয়ে পড়বে ৷

আরিস : আমার এক্সামটা হতে দাও সবকিছু আবার আগের মত হয়ে যাবে , পৃথিবীর সব ভালোবাসা আমি তোমার কাছে এনে দেবো , ভালবেসে বুকের মাঝে আগলে রাখবো তোমায় যেমনটা এখন রেখেছি ৷

আরিশের কথাগুলো শুনে আরূ আর পারল না নিজেকে আটকে রাখতে, আরিসের শার্টের কলার ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল….

আরিশ শক্ত করে আরুশির মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরল ৷ আরিশের চোখের কোনেও জল জমে এসেছে ,ওর ও যে কষ্ট হচ্ছে না তা নয় বরং আরুশির থেকে হাজার গুন বেশি কষ্ট হচ্ছে….

আরিশ আরুর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে নিজেকে ক্রমশ সংযত করে নিয়ে আরুকে খানিক্ষন নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখলো ৷

রিকশায় একা বসে আছে আরূ, গন্তব্য ওর নিজের বাড়ি….

সানা আর আরাভ দুজনেই একসঙ্গেই আছে আরূ নিজেও এতক্ষণ ওদের সঙ্গেই ছিল তবে দুজনের মাঝখানে থাকতে কেমন একটা অস্বস্তি লাগছিল আরুর, আর তাছাড়া সবে সবে ওদের সম্পর্কের একটা শুভ আরম্ভ হতে চলেছে তাই ওদেরকেও কিছু একান্তে সময় দেওয়া উচিত বলে আরুশি ওখান থেকে চলে এল ৷ সানা আর আরাভ যখন জিজ্ঞাসা করলো যে ও কোথায় যাচ্ছে তখন বলল যে ওর কিছু কেনাকাটা করার আছে ,তাই আরাভ আর সানা না করতে পারল না….

বুকের ভেতর টিপটিপ করছে আরুর ক্রমশ, ভয়ও লাগছে যদি আরিশ কোন ভাবে জানতে পারে তাহলে ওকে ছাড়বে না সেটা ও ভালোই জানে….
তবুও একরাশ সাহস নিয়েই যাচ্ছে ওর বাবার কাছে,এটা বলতে ওর বাবাকে যে ও আরিশকে ছাড়া থাকতে পারবেনা ৷ সিদ্ধান্ত নিতে ওর এক মিনিট ও সময় লাগেনি ৷আর এটা ওর সারা জীবনের ব্যাপার, প্রয়োজন হলে অভ্রকে বোঝানোর জন্য সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেবে আরূ তবে আরিশ কে ছাড়তে চায় না ও ৷ এইকদিন আরিশের থেকে ওর দূরত্বটা ওর ভালোবাসাকে জানান দিয়েছে , বুঝতে পেরেছে ও ওর আরিশের প্রতি ভালোবাসা ৷ এই ভালোবাসা কে ও হারাতে চাইনা ৷

আরুর মা: আরূ মা অনেকক্ষণ হলো তুই এসেছিস চল এবার কিছু খেয়ে নিবি, আমি নিজের হাতে তোকে খাইয়ে দেবো ৷ তোকে বড্ড মিস করেছি এই কদিন এ বলে উনি কেঁদে দিলেন ৷

তখনই আরুর বাবা ধমকে বলে উঠলেন,,,,

আরমান সাহেব:ওসব খাওয়া-দাওয়া পরে হবে ,এখন এই মেয়ে কি বলছে শুনছো না ! এই মেয়ে বলছে যে ওই ছেলেটাকে নাকি ও ছাড়তে পারবে না, এটা কোন কথা হলো ! আমি অভ্রদের ফ্যামিলির সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে যে আবার অভ্রর সাথে আরুর বিয়ে হবে ৷ এবার তো আমাকে ওরা নির্ঘাত জেলে পাঠাবে প্রতারনার দায়ে ৷ ওরা কি আমাকে ছাড়বে ?আর সে ভাবনা কি এই মেয়ের মাথায় আসেনা? জোরে জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন ৷

আরুর বাবা ওকে ধমকা দিতেই আরু বারবার চমকে উঠছে আর বুকের ভিতরটা বারবার কেঁপে উঠছে ৷ শুধু ভাবছে যে এসমস্ত ওর সঙ্গে না ঘটলেও পারতো ৷

আরু কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল:আমি যা চাই আমি তোমাকে তাই বলেছি বাবা !

আরমান সাহেব উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে বললেন: তার মানে তুই আমাকে জেলের ভাত খাওয়াবি তাই তো? এটাই তো তুই চাস তাই না! তাহলে মনে রাখিস আজ থেকে তোর সাথে আমার আর এ বাড়ির কারোর কোন সম্পর্ক নেই….

কথাগুলো যেন আরুর বুকে তীরের মত এসে বিধছে৷ নিজের বাবা তার মেয়েকে এতটা জোর করছে তার মেয়ের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার ৷ এগুলো ভাবতেই বুক ফেটে কান্না আসছে ওর ৷

আরুর মা কাঁদতে কাঁদতে বলল: তা বলে তুমি মেয়েটাকে এইভাবে বলবে? একটা মানুষের একটা মানুষের প্রতি ভালোবাসা হতেই পারে তাই বলে তুমি বুঝবেনা ? ও তো তোমারি মেয়ে….

কথাটা বলতেই আরমান সাহেব থামিয়ে দিলেন আরুর মাকে ৷

আরমান সাহেব: তুমি আমাদের মাঝখানে একটাও কথা বলতে আসবেনা , এখন ও যদি রাজি হয় তো ওর সাথে আমাদের সম্পর্ক থাকবে আর যদি মনে কর একটা বাইরের ছেলের জন্য আমাদের সাথে চিরতরের মত সম্পর্ক হারাবে তাহলে সেটা ওর ব্যাপার ৷

অনেকক্ষণ ধরে নিজেকে কঠোর থেকে কঠোরতম বানানোর চেষ্টা করছে আরূ যেন বাবার মুখের উপর না করে দিতে পারে ৷ কিন্তু এখন ওর বাবা যা বলছেন তা শুনে আরুশী বলল: আমি তোমার কথাতে রাজি বাবা….

আরমান সাহেব মনে মনে নিজেকে সফলতার হুঙ্কার দিচ্ছেন কারণ উনি জানতেন আরুশিকে সামান্য ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করলেই ও গলে যাবে সেই জন্য এত নাটক করলেন সেই থেকে…..

কথাটা বলে আরু আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না, ওখান থেকে দ্রুত পায়ে হাঁটা দিল ৷

আরুর মা: মেয়েটার সর্বনাশ করে তোমার কি লাভ?

আরমান সাহেব : টাকা চাই আমার টাকা , অনেক বেশি টাকা চাই , তুমি তো জানো তাহলে কেন আমার পথে বাধা হয়ে দাড়াও ?

আরুর মা: আমি কখনো অন্যায় কে সমর্থন কখনো করিনি আর আজও করবোনা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন ৷

আরমান সাহেব মনে মনে বিজয়ীর হাসি দিলেন…..

ঘড়ির কাঁটা সন্ধ্যা ছটা ছুঁইছুঁই ৷ আরাভ আর সানা অনেকক্ষণ ধরেই আরুকে ফোন করার চেষ্টা করছে কিন্তু আরু কোনভাবেই ফোন ধরছেনা ৷ ওরা নিজেরাও চিন্তায় পড়ে গেছে যে আরুর কোনো বিপদে পড়ল কিনা….

সানা যখন আরেকবার আরুশিকে ফোন করতে যাবে তখনই দেখল আরুশি ধীরপায়ে মাটির দিকে তাকিয়ে অন্য মনষ্ক হয়ে এগিয়ে আসছে ওদের দিকে ৷ওকে দেখে কেমন উস্কোখুস্কো মনে হচ্ছে, সকালে যেমন প্রাণোচ্ছলতা ওর মুখে ছিল সেই প্রাণোচ্ছলতা ভাব এখন আর ওর মধ্যে নেই , চেহারায় বিসন্নতার ছাপ…

সানা আরুর কাছে ছুটে গিয়ে বলল: কিরে তুই এতক্ষণ কোথায় ছিলি আর চোখ মুখের এমন অবস্থা কেন?

আরূ ক্লান্তিমাখা স্বরে বলল : আমি বাড়ি যাব সানা, তাড়াতাড়ি চল ৷

সানা আর আরাভ আরুর অবস্থাটা বুঝতে পেরে আর বেশি কথা না বাড়িয়ে বাড়িতে চলে গেল…..

আরিশ সারাদিনে এতো ব্যস্ত ছিল যে আরুশিকে একবারও ফোন করে খোঁজ নেওয়ার সময়টুকু পায়নি, নিজেকে মনে মনে অনেক বকা দিচ্ছে যে এত কেয়ারলেস কি করে হয়ে গেল ও ৷ অনেকক্ষণ হয়ে গেল আরোশী রুমে আসলো না দেখে আরিস এবার একটু নড়েচড়ে বসল,,,,

সানার রুমে আরুশিকে খুজতে যেতেই দেখল গেস্ট রুমের দরজাটা খোলা , হঠাৎ দরজাটা খোলা তা দেখতে গিয়ে আরিশ দেখল আরোশী গুটিসুটি হয়ে এক পাশ ফিরে শুয়ে আছে ৷

দ্রুতপায়ে আরুশির কাছে গেল, যেতেই দেখল আরুশি ঘুমিয়ে আছে ৷ আরিশ এবার আরুশির কাছে গিয়ে ওর পাশে বসে মাথায় হাত বোলাতে লাগলো ৷

আরিশ : অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি আরুপাখি তবে আর বেশিদিন নয় , সব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে, শুধু একটু অপেক্ষা করো , হার মেনো না সময়ের কাছে ,বিশ্বাস রাখো নিজের ওপর ৷
এই বলে আরুশিকে কোলে নিয়ে ওর নিজের রুমে চলে গেল ৷ আরুশিকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল আরিশ৷
চোখ-মুখ বড্ড শুকনো লাগছে আরুর তাই ওয়াশরুম থেকে টাওয়েল ভিজিয়ে এনে পরম যত্নে চোখ মুখ মুছিয়ে দিলো এবং অবশেষে ঠোঁট দুটোতে হালকা করে ওর ঠোঁট দুটো ছোঁয়াল ৷ দিনশেষে এটুকু ভালোবাসা আরিশের জন্য খুবই দরকার ৷

চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here