#চারুলতা পর্ব৬
#শারমিন আঁচল নিপা
আচমকা টানটা প্রখর হলো আর দুজনেই তলিয়ে পড়লাম পঁচা রক্তের স্রোতে। চোখটা বন্ধ করে ছিলাম। কিছু দেখতে না পারলেও অনুভব করতে পারছিলাম গভীরের দিকে তলিয়ে গেছি আমি। দম ভারী হয়ে যাচ্ছে। দুর্গন্ধে যেন পেট ফুলে ফেঁপে যাচ্ছে। আর মুখ তো দাঁত কামড়ি দিয়ে রেখেছিলাম।
একটা পর্যায়ে দুজনেই অজানা একটা জায়গায় পতিত হলাম। হালকা হিমেল বাতাস আমার শরীরে লাগতেই আমার চোখটা খুলে গেল। এ জায়গাটা বেশ শীতল। চারপাশটায় শুধু কাটা মাথার কঙ্কাল আর হাড়গুড়ের স্তূপ। সামনেই একটা সুন্দর বাড়ি। জরাশীর্ণ এ পরিবেশে বাড়িটা যেন সৌন্দর্যতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার শরীরের দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করলাম কোনো রকম রক্ত বা ক্ষতের দাগ নেই। এ কী করে সম্ভব তা বোধগম্য হচ্ছে না।
অপরদিকে মৃধার দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করলাম তার চেহারায় বেশ পরিবির্তন এসেছে। বিশেষ করে তার চোখের লেন্স দুটো আংশিক নীল কালো বাদামী বর্ণের ছোপাকার হয়ে গেছে। চুলগুলো যেন আগের চেয়ে কালো আর কুঁকড়া হয়ে গেছে। তার এ পরিবর্তন তার সৌন্দর্য আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সে উপর দিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবছিল। তার আনমনা হয়ে উপরের দিকে তাকানো লক্ষ্য করে আমিও তাকালাম। উপরের দিকে তাকাতেই আমার বুকটা কেমন জানি কেঁপে উঠল। আকাশটা কেমন কালো আস্তরণে ছেয়ে আছে। চারপাশে তাকালে বুঝা যায় না আকাশে এত কালো মেঘ করেছে। কোথায় এসে ঠেঁকেছি বুঝতে পারছি না। সংশয় নিয়ে মৃধাকে বললাম
– কোথায় আসলাম বুঝতে পারছি না। আবার কী হতে চলল কে জানে।
মৃধা আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকাল কতক্ষণ। তারপর ক্ষীণ গলায় বলল
– মাঝখান দিয়ে ২ মাস আমরা এ টুকু পথ আসতেই পার করে ফেলেছি। আমি এর মধ্যে অভিশাপমুক্তও হয়েছি। এখন আমি নাগিন রূপ নিতে পারব নির্দ্বিধায়।
মৃধার কথা শুনে আমি বেশ অবাক হলাম। কুয়োর গভীরে তলিয়ে গিয়ে আমরা কীভাবে ২ মাস পার করলাম বুঝতে পারছি না। শরীরটা কেমন জানি লাগছে। মনে হচ্ছে এই তো একটু আগে কুয়োর মধ্যে তলিয়ে গিয়েছিলাম। মৃধার কথা যেন মাথা ভেদ কে মস্তিষ্কে প্রবেশ করছে না। আমি বিস্মিত গলায় বললাম
– দু মাস পার করলাম অথচ টের পেলাম না। এটা কী করে সম্ভব! সবকিছু অসম্ভব লাগছে। আর এটা কোন জায়গায় এসে পড়লাম। এখানে কী করব আমরা? মামাকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলাম। এখন নিজেই লক্ষ্যচ্যুত হয়ে কোথায় থেকে কোথায় যাচ্ছি বুঝতে পারছি না।
মৃধার হালকা গলা কানে আসলো
– জানি না এটা কোন জায়গা। তোমার কাছে সব এলোমেলো লাগছে বুঝতে পারছি। এলোমেলো লাগাটায় বরং স্বাভাবিক। তবে এখন আরও কিছু কথা বলব যেটা তোমার কাছে আরও অবাস্তব লাগতে পারে।
অবাক সুরে জিজ্ঞেস করলাম
– কী?
মৃধা এরপর যা বলল তা শুনে আমি নিজেই চমকে যাচ্ছিলাম।
– তোমাকে বলেছিলাম না তোমার মাঝে কোনো শক্তি লুকায়িত আছে? তোমার সে শক্তিগুলো আস্তে আস্তে প্রস্ফুটিত হবে। আর খুব শিঘ্রই এ সুরঙ্গ থেকে বের হয়ে আমরা একটা গন্তব্যে পৌঁছাব। এর মধ্যে তোমার গর্ভে আসবে এক কদাকার সন্তান। ভয়ংকর রূপের হবে সে। সে সন্তানকে দিয়েই এরিককে খুন করতে হবে।
আমি চমকাচ্ছিলাম মৃধার কথা শুনে। পুরুষবিহীন মা হওয়া কী আদৌ যায়! কিছুটা চমকে গিয়ে সেটাকে সাথে সাথে নিবারণ করে বললাম
– এটা কী করে সম্ভব। আমি তো বিবাহিত না মৃধা। আর মামার সাথে বিয়ে তো শয়তান করিয়েছে সেটা বৈধ নয়। মামার সঙ্গে আমার কোনো শারিরীক মিলন ঘটেনি তাহলে বাচ্চা হবে কী করে?
মৃধা সংশয় কাটিয়ে বলল
– দেখো চারুলতা তোমার জীবনে একটা পরিবর্তন আসবে। তোমার গর্ভে যে বাচ্চাটা আসবে সেটাই মূলত তোমার মামা এরিককে ধ্বংস করতে সাহায্য করবে। তুমি আট দশটা সাধারণ মেয়ের মতো না। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর তোমার মধ্যে এমন কিছু শক্তির সূচণা ঘটবে যার মাধ্যমে তুমি খুব সহজে এরিককে বিনাশ করতে পারবে। তবে এ সন্তান জন্মদানের সময়, সময়ের ব্যবধান এদিক সেদিক হলে হিতে বিপরীত ঘটবে।
মৃধার শেষ কথাটা আমার বোধগম্য হলো না। কথাটাকে এপিঠ ওপিঠ করে পাল্টা প্রশ্ন করে বললাম
– সময়ের ব্যবধান মানে?
– তোমার গর্ভের বাচ্চা কদাকার হলেও সে হবে শুভ শক্তির আধার। তুমি যখন বাচ্চা প্রসব করবে তখন রাহু সূর্যকে গ্রাস করবে। এ গ্রাসকৃত সময়ের মধ্যে বাচ্চা হলে তোমার বাচ্চা হবে শুভ শক্তির প্রতীক। কিন্তু এ সময় অতিক্রম করলে তোমার বাচ্চা হবে অশুভ শক্তির প্রতীক।
মৃধার কথার তাৎপর্য বুঝতে পারছিলাম না আমি। চুপ হয়ে বসে আছি পাশাপাশি দুজন। নীরবতা কাটিয়ে মৃধাকে হালকা গলায় বললাম
– এখানেই বসে থাকবে নাকি সামনের দিকে এগুবে।
মৃধা আমার হাতটা ধরে টেনে তুলল। তারপর জোর গলায় বলল
– বাড়িটার ভেতরে আগে প্রবেশ করো। তারপর ভাবা যাবে কী করব। এই বাড়িতে কোনো না কোনো রহস্য তো আছেই।
কথাটা শেষ করে কেউ এই অপেক্ষা করলাম না। দ্রূত চলে গেলাম বাড়ির ভেতরে। বাড়ির ভেতরে গিয়ে দুজনে দাঁড়াতেই একটা উষ্ণ শীতল বাতাস এসে আমার গায়ে লেপ্টে গেল। বাতাসটা গায়ে লাগতেই অনাকাঙ্ক্ষিত একটা ঘটনার সম্মুখীন হলাম।
কপি করা নিষেধ।ঔ