প্রেমালয় ২ পর্বঃ_২

0
869

প্রেমালয় ২ পর্বঃ_২
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

– না, এখন আর আপনাকে আমি ভালোবাসি না। আমি সুশান্তকে ভালোবাসি। He is a lucky person in my life,,,,
প্রতি উত্তরে কিছু বললো না মুগ্ধ। কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে শান্ত গলায় বললো,
– তোমরা কিভাবে পারো, একটা মানুষকে হাজারও স্বপ্ন দেখিয়ে দিন শেষে অন্য কারো হাত ধরে চলে যেতে?
আজ যেনো শিশিরেরও চিৎকার করে মুগ্ধকে বলতে ইচ্ছে করছে,
‘সেম প্রশ্নটা তো আমিও আপনাকে করতে পারি? আমার আর আপনার মাঝে না হয় একটু দুরুত্ব সৃষ্টি হয়েছিলো, তখন আপনি কিভাবে পারলেন আমাকে রেখে মাহিমার সাথে জড়িয়ে যেতে?
কিন্তু এই ব্যাপারে কিছু না বলে শিশির বললো,
– হ্যা আমি পারি। কারণ আমি যানি আমি খুব খারাপ, খুব সার্থপর। তো এখন বলেন, আমার মতো খারাপ মানুষকে নিয়ে আপনি কি করবেন? আপনি আপনার মতো ভালো থাকুন না। আমি না হয় সুশান্তকে নিয়েই থাকবো।
মুগ্ধ উঠে দাড়ালো, শিশিরের দিকে তাকিয়ে বললো,
– কিছুই করবো না। আবার মুক্তিও দেবো না। না অন্য কারো হতে দিবো, আর না শান্তিতে থাকতে দিবো। আমাকে দেওয়া প্রতিটা কষ্ট তুমি দ্বিগুন করে পাবে শিশির।
বলেই রুমের বাইরের দিকে হাটা ধরে মুগ্ধ।
– প্লিজ আমায় যেতে দিন,,, আর কতো পোড়াবেন আমাকে? একবারও কি জানতে চেয়েছেন, আমি কতোটা ভালো ছিলাম? আপনি নিজেই তো সব এলোমেলো করে দিলেন।
বলেই কেঁদে ফেললো শিশির। কিন্তু সেগুলো মুগ্ধর কান অব্দি গেলো না। ততোক্ষনে দরজা বন্ধ করে সেখান থেকে চলে গেলো মুগ্ধ।
,
,
চিরেকুট টা দুই হাতের মাঝখানে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেললো সুশান্ত। চোখ দুটু লাল হয়ে আছে খুব। আশে পাশে সব কিছু যেনো টুকরো টুকরো করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে আজ। তীসার কথা মনে উঠতেই রাগটা আরো চরে বসে। নির্ঘাত এই মেয়েটা শিশিরকে পালাতে সাহাজ্য করেছে। যাতে শিশিরের সাথে বিয়েটা না হয়।
সুশান্ত টুকরো টুকরে চিরেকুট টা মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে, দুই হাত রাগন্মিত ভাবে বলে উঠে,
– তীসার বাচ্চা,,,, তোর ভালোবাসা,,,,, মাই পুট,,,

নিচে সোফায় বসে আছে সবাই। সুশান্ত নিচে এসে শান্ত ভাবে বললো,
– এতো অতিথি নিয়ে বিয়ে করতে এসেছি, বৌ নিয়েই বাড়ি ফিরবো।
তৌফিক আহমের একটু আশার আলো দেখতে পেয়ে উঠে দাড়িয়ে বললো,
– তার মানে শিশির কোথায় জানতে পেরেছো?
– না আঙ্কেল, সে আর আসবে না। সে চলে গেছে তার প্রাক্তন প্রেমিকের কাছে। যাওয়ার আগে আবার একটা চিরেকুটও রেখে গেছে।
আবার ধপাস করে সোফায় বসে গেলো তিনি। পাশ থেকে বাবাকে ধরলো তীসা।
সুশান্ত তীসার দিকে তাকিয়ে বলে,
– আর বিয়ে আমি তীসাকেই করবো। এতো আত্মিয় স্বজনের কাছে আমি ও আমার ফ্যামিলিকে ছোট হতে দিবো না আমি।

কথাটা শুনেই যেনো আকাশ থেকে পরলো তীসা। এক মুহুর্তের জন্য হলেও যেন সারা শরির কাপুনি দিয়ে উঠলো তার। সুশান্ত ভাইয়া হটাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেন নিল, তা ভেবেই পাচ্ছে না সে। শিশিরকে তো খুব ভালোবাসতো ভাইয়া, তাহলে হুট করে এমন সিদ্ধান্ত কেন নিলো? তাও আবার সবার সামনে এভাবে এক নিশ্বাসে কোনো সঙ্কোচ ছারাই বলে দিলো? রাগের মাথায় সুশান্তের হুট হাট এই সিদ্ধান্ত, আমার ভবিষ্যৎ টা কোথায় নিয়ে দাড় করাবে?
এর মাঝে শিশিরের বাবা তৌফিক আহমেদ দাড়িয়ে সোজাসুজি একটা কথা বলে দেয়, আজ থেকে তার মেয়ে একটা। আর ছোট মেয়ে মারা গেছে কিছুক্ষন আগে। শিশিরের জন্য এই বাড়ির দরজা চিরতরে বন্ধ। তীসার দিকে চেয়ে বললো,
– আশা করি আমার মান ইজ্জত টা তুমি ক্ষুন্ন করবে না। বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নাও।
ছোট বেলা থেকেই মা বাবার মুখের উপর কথা বলার সাহস নেই তীসার। অধিকাংশ ফ্যামিলিতেই বাড়ির বড় মেয়ে গুলো একটু বোকা টাইপের হয়। তীসাও ঠিক তেমন।
তবে আজ কিছুই ভেবে পাচ্ছে না তীসা। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে,
“তোমরা তোমাদের ইজ্জত বাচাতে আমাকে এভাবে বলি দিতে পারো না।

ওদিকে মুগ্ধ চলে যাওয়ার পর কয়েকবার চিৎকার করে মুগ্ধকে ডেকে উঠে শিশির। কোনো সারা না পেয়ে নিরবে কান্নায় ভেঙে পরে সে। আজ তার বিয়ে। হয়তো এই মুহুর্তে বৌ সেজে সুশান্তের পাশে বসে থাকতো সে। অথচ বিয়ের আসর ছেরে অন্যের ঘরে এভাবে বন্ধি হয়ে পরে আছে। সুশান্তের জন্যও খুব কষ্ট হচ্ছে আজ। শিশিরে জন্য ছোট থেকেই বাবা মায়ের পর একজন সাপোর্টার ছিলো সুশান্ত।
কিন্তু মাঝ পথে মুগ্ধর সাথে সম্পর্কে জড়ানো এর পর আবার কতোকিছুই ঘটে গেলো। সুশান্ত ভাইয়া চাইলে তো সেদিনও আমার থেকে দুরে চলে যেতে পারতো। কিন্তু যায় নি। আমার দুঃসময়েও আমার পাশে থেকে সাপোর্ট দিয়েছে আমায়। নতুন করে বাচার অনুপ্রেরনা জুগিয়েছে। আমার প্রতি তার ভালোবাসা টুকু একটুও কমেনি। অথচ আজ আমি তাকে এভাবে ঠকাচ্ছি?
মুগ্ধ একটা ঝড় হয়ে আমার জীবনে এসেছিলো। আবার ঝড় হয়েই সব এলোমেলো করে দিয়ে গেলো। সেই এলোমেলো চলার পথ গুলো সুশান্ত খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছিলো। আর আজ মুগ্ধ নামক ঝড়টা এসে আবার সব এলোমেলো করে দিলো। যতই আমি সুখ কে কাছ থেকে ছুতে যাই, ততই সেই সুখ দুরে সরে গিয়ে আমার জীবনে দুঃখ হয়ে ফিরে আসে।

ওদিকে হালকা সাজে বো বেশে সুশান্তের পাশে বসে আছে তীসা। নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে আজ। কেন সে সবার কাছে মুখ ফুটিয়ে নিজের ইচ্ছে গুলো বলতে পারে না? কেন শুরু থেকেই তার জীবন পরিবারের সিদ্ধান্তের উপরই নির্ভর করে?

স্বাভাবিক ভাবেই বিয়েটা শেষ হলো তাদের। কাপা হাতে সাইন করে দিলো তীসাও। সাইন করেই প্রথমে আড় চোখে সুশান্তের দিকে তাকালো। এই লোক টা এখন তার সাদ্য বিয়ে করা স্বামি। এতোদিন বাবার পরিচয় থাকলেও এই মুহুর্তে তিন বার কবুল ও একটা সাইনে অন্য একজনের সম্পত্বি হয়ে গেছে সে। যেই মানুষটার পরিচয়ে বাকি জীবনটা কাটাতে হবে তার। তবে সে এটাও বুঝতে পারছে না, এই মানুষটার সাথে তার বাকি জীবনটা কতটুকু যাবে? কোথায় গিয়ে দাড়াবো তার এই পথ চলা।
সুশান্তের চোখ দুটু রক্তিম বর্ণ ধারন করে আছে সেই শুরু থেকে। টলমলে অশ্রু কনা বার বার চোখের বাধ ভেঙে গড়িয়ে পড়তে চাইছে। কিন্তু ওই যে, কোনো এক অলিখিত সংবিধানে ছেলেদের প্রকাশ্যে কান্না নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সব কিছু কমপ্লিট করতে প্রায় রাত ১০ টা বেজে গেছে। একে একে সবাই চলে যেতে শুরু করেছে। বরপক্ষও এখন বৌ নিয়ে রওনা দিবে বাড়ির উদ্দেশ্যে।
তীসার ভাবতেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠছে যে, বাবা মাকে ছেরে সে আজ চলে যাচ্ছে অন্যের ঘরে। তাও আবার এভাবে। যেই বাড়িতে গত ২০ টা বছর কাটিয়েছে সেই বাড়িতেই আজকের পর থেকে অতিথি হয়ে আসবে সে। ইশ, আমরাও যদি ছেলেদের মতো সারা জীবন বাবা মায়ের পাশে থাকতে পারতাম?

বিদায় দেওয়ার মুহুর্তে তার মা তার পাশে ছিলো। কিছু বলছে না সে। শুধু অস্রুশিক্ত চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। তার এই অস্রু শিক্ত চোখও যেনো আজ বলতে চাইছে,
‘আমাদের মেয়েদের লাইফ নিয়ে কি আমরা কখনোই সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না মা? বার বার কেন তোমাদের সিদ্ধান্তের কাছে হার মানতে হবে আমাদের?
তবে কিছু বলছে না সে। তারা দুই বোন এমনই, দুঃখ কষ্ট টা যতই গারো হোক, বুকটা ফেটে গেলেও মুখ ফুটে না কখনো।
শিরিনা বেগম মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
– ভাগ্যের লিখন কখনো মুছে ফেলা যায় না রে মা। হয়তো এর পেছনেও রয়েছে আল্লাহ্ উত্তম পরিকল্পনা। খুব সুখি হবি তুই। এহ দোয়াই করি। সুশান্ত খুব ভালো ছেলে, নিজের সংসার টা ঘুচিয়ে নিস মা।

To be continue……

~ আগের তুলনায়,এখন আমার লেখালেখির হাত এখন এলোমেলো হয়ে গেছে। জানিনা আর কখনো আগের মতো সব ঘুচিয়ে তুলতে পারবো কি না? ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরুধ রইলো।💖

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here