তুমি হাতটা শুধু ধরো – পর্ব ১৩

0
810

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ১৩( বোনাস পর্ব)
#Jhorna_Islam

দায়ান রান্না ঘরে এসে আপন মনে ভাবতে লাগলো কি রান্না করা যায়।সোহা কি খেতে পছন্দ করে সেতো জানেই না।সোহার সম্পর্কে কোনো কিছুই ভালো ভাবে জানা নেই তার।অনেক ভেবে চিন্তে বিরিয়ানি রান্না করার সি’দ্ধান্ত নিলো। বিরিয়ানি রান্না টা মায়ের কাছ থেকে শিখে ছিলো।

দায়ানের মা খুব ভালো বিরিয়ানি রান্না করতো।সকল বন্ধু-বান্ধব রা ছুটির দিনে ছুটে আসতো দায়ানের মায়ের হাতের বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য। দায়ান শখের বসে মায়ের কাছ থেকে শিখে ছিলো রান্না টা।কখনো করা হয়নি।আজ করবে, সোহা কে দিয়েই নাহয় নিজের হাতে প্রথম রান্না করে টেস্ট করাবে।

এদিক ওদিক তাকিয়ে বিরিয়ানি রান্না করার সকল উপকরণ বের করে রাখলো।ফ্রিজ থেকে মাংস বের করে পানিতে ভিজিয়ে রাখলো।তারপর একে একে সব কিছু নিয়ে রান্না করা শুরু করে দিলো।

——————————————-

আস্তে আস্তে চোখ খুলে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে থাকে সোহা।শরীরে একদম শক্তি পাচ্ছে না উঠার।এদিকে খুদায় পেটে ইঁদুর দৌড়ে বেড়াচ্ছে।

অনেক কষ্টে উঠে বসে। শরীরের দূর্বলতায় মাথা ঝি’ম ঝি’ম করছে।অনেক সময় নিয়ে বিছানায় বসে থাকে।ঘুম থেকে উঠলে সোহার পা’ক্কা দশ মিনিট কোনো হু’শ জ্ঞা’নই থাকেনা। নিজেকেই তখন নিজে চিনতে পারে না।

অনেকক্ষন পর নিজের হুঁ’শে আসে। সকালের সব ঘটনা আস্তে আস্তে মানস পটে ভেসে ওঠে। চোখ দিয়ে আপনা আপনিই পানি পরতে থাকে।ঠিক করে নেয়,,দায়ান যতই সরি বলুক না কেনো।উনার কাছে সহজে ঘেঁষবেই না।যার উপকার করতে গেলো তার কাছ থেকে কতো কথাই না শুনতে হলো।

খিদের জ্বা’লা সহ্য না করতে পেরে উঠে দাঁড়ায়। কিছু রান্না করে আগে খেয়ে নিতে হবে।নয়তে চলা ফেরা করার এক রত্তি শক্তি ও অবশিষ্ট নেই।

————————————–

দায়ানের রান্না শেষ। এখন শুধু ডাইনিং টেবিলে গিয়ে রাখবে। রেখে তারপর সোহাকে ডাকতে যাবে।এতো বেলা হয়ে গেছে না খেয়ে থাকলে আরো অসুস্থ হয়ে পরবে।

সোহা রান্না ঘরের পাশে আসতেই রান্না ঘর থেকে টুংটাং আওয়াজ শুনতে পায়।তাই পুরোপুরি রান্না ঘরে না ঢুকেই দেখার চেষ্টা করে রান্না ঘরে কে।

সোহা যেই টাইমে উঁকি দেয় ঠিক সেই টাইমেই দায়ান পিছনে ফিরে দরজার দিকে তাকায়। দু’জনের ই চোখে চোখ পরে যায়।সোহা তড়িৎ গতিতে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। দায়ান বোঝতে পারে সোহা অস্বস্তিতে তে পরে গেছে।এভাবে চোখে চোখ পরায়। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বলে ওঠে,,,,,
উঠে গেছো? আমার রান্না ও দেখা যায় ঠিক সময়েই শেষ হয়েছে। আমি এখোনি তোমায় ডাকতে যেতাম।টেবিলে গিয়ে বসো আমি খাবার নিয়ে আসছি।

আর কোনো সংকোচ বোধ করতে হবে না। এতোদিন তো তুমিই রান্না করে খাওয়াও। আজ না হয় আমিই খাওয়ালাম।

সোহা কথা বাড়ায় না খিদে পেয়েছে প্রচুর। খাওয়ার উপর রাগ করে লাভ নাই।তাই চুপচাপ ডাইনিং টেবিলে এগিয়ে যায় বসার জন্য। আর মনে মনে ভাবতে থাকে এই লোক রান্না ও করতে পারে? আর কতো গুন আছে কে জানে।

দায়ান টেবিলে খাবার নিয়ে এসে রাখে।নিজেও একটা চেয়ার টেনে বসে পরে। তারপর নিজ হাতে সোহাকে খাবার সার্ভ করে দিতে থাকে।

সোহা অবাক হয়ে দায়ানের কাজ দেখছে।কি হলো হঠাৎ লোকটার?

দায়ান সোহাকে খাবার সার্ভ করে দিয়ে,নিজের প্লেটে ও নেয়।খাবার নিতে নিতে বলে,,,খেয়ে অবশ্যই বলবা কি রকম হয়েছে।মায়ের কাছ থেকে অনেক আগে শিখেছিলাম।বাট করিনি কখনো আজই প্রথম।

সোহা দায়ানের দিক থেকে চোখ সরিয়ে খাবার খেতে থাকে।সত্যি বলতে খাবারটা আসলেই অনেক মজা হয়েছে। অন্য রকম একটা টেস্ট পাচ্ছে খাবার থেকে।হয়তো প্রিয় মানুষের হাতের রান্না তাই জন্য। আর এমনিতেও সোহার বিরিয়ানি অনেক প্রিয়।

দায়ান নিজের খাবার রেখে সোহার দিকে তাকিয়ে আছে। খাবার কেমন হয়েছে তা জানার আসায়।

সোহা কিছু না বলে আপন মনে তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে।

দায়ান সোহার কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে প্রসঙ্গ পাল্টে বললল,,,,আমার ডাক্তারের সাথে কথা হয়েছে।পরশু দিন আমরা ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি।

সোহা তাও কোনো কথা বলল না।

দায়ান হতাশার শ্বাস ফেলল আর কথা বাড়ালোনা।

দুইজনেই চুপচাপ খেতে থাকলো।

সোহা খাওয়া শেষ করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়াবে এমন সময়,,,,, দায়ান আবার করুন সুরে বলে উঠে “সরি”। আসলে ঐই সময় মাথা ঠিক ছিলোনা।অফিসের একটা ঝামেলা নিয়ে রে’গে ছিলাম। আর রেগে গেলে আমার মাথা ঠিক থাকেনা।কখন কি করে ফেলি বলে ফেলি নিজেও বুঝতে পারি না।

দায়ানের করুণ কন্ঠ শুনে সোহা পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় দায়ানের দিকে।মুখ দেখেই বুঝতে পারছে বে’চারা প্রচুর অনু’ত’প্ত।
সোহাতো দায়ানের রান্না খেয়েই গ/লে গেছিলো।এখন দায়ানের মুখ দেখে রা’গ অভিমান সব শে/ষ।মুখে আপনা আপনিই হাসি ফোটে উঠে।

ইট’স ওকে। আমি আর রেগে নেই বুঝতে পারছি বিষয়টা। আর রান্নাটা দারুনননন হয়েছে।ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।মায়ের রান্না আর আপুর রান্নার পর এই প্রথম কারো হাতের রান্না তৃপ্তি নিয়ে খেলাম।বলেই সোহা নিজের রুমে চলে যায়।

দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে থাকে। নিজের অজান্তেই ঠোটে হাসি খেলা করে।

——————————————
যেহেতু দুজনেরই প্রায় দুপুরেই খেয়েছে।তাই পরে আর কারো খাওয়া হয়নি।

বিকেলে সোহা বাগানে চলে যায়। কতোক্ষন বাগানে হাটাহাটি করবে।ফুল ও গাছদের সাথে কথা বলবে।পরে গাছে একেবারে পানি দিয়ে তারপর রুমে আসবে ঠিক করে,,বাগানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

দায়ান ঐই সময় বসে ল্যাপটপে কাজ করতেছিলো।সোহা বেরিয়ে গেলে দায়ান ও ল্যাপটপ নিয়ে উঠে দাঁড়ায়।

সোহা বাগানে এসে ফুল গাছ নাড়িয়ে নাড়িয়ে দেখছে।আর আপন মনে বিরবির করছে।

হঠাৎই দোলনার দিকে চোখ যায়। দোলনার দিকে তাকিয়ে চোখ চ’র’ক গাছ। এ কি দেখছি আমি? ভুল ভেবে নিজের চোখ হাত দিয়ে ক’চ’লিয়ে আবার দোলনার দিকে দৃষ্টি দেই নাহ।ঠিকইতো দেখছি।উনি বাগানে এসেছে? তাও দোলনায় বসে আছে?

দায়ান ল্যাপটপ নিয়ে তখন সোহার পিছু পিছু নিজেও বাগানে এসে দোলনায় বসে। ল্যাপটপে কাজ করতেছিলো আর আড়’চোখে সোহা কে লক্ষ করতেছিলো।দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে দেখে তার দিকে সোহা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এভাবে সোহাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে,, এক ব্রু উচিয়ে জানতে চায় কি?

সোহা নিজেকে স্বাভাবিক করে মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয় কিছুনা।দায়ানের দিকে আর না তাকিয়ে নিজের কাজে মন দেয় সোহা।

মাগরিবের আজান দিলে দুজনেই বাড়িতে ঢুকে যে যার রুমে চলে যায়।

রাতে যথাসময়ে সোহা রান্না করে দায়ান কে ডাক দেয়।

দু’জনই একসাথে বসে চুপচাপ খাবার শেষ করে যে যার মতো রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরে।

—————————————–

সব কিছু আগের মতোই আবার চলতে থাকে। সোহা দায়ানের উপর রে’গে থাকতে পারেনি। খুব নরম মনের মানুষ কি না।একটুতেই গ/লে জল।

পরের দিন খুব ভোরে উঠেই দায়ান অফিসের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরে। যাওয়ার আগে অবশ্য সোহাকে এবার বলে গেছে।সোহা বলেছিলো সকালের খাবার খেয়ে যেতে দায়ান শুনেনি।
এতো সকালে কে অফিসে যায় ভেবে পায় না সোহা।
—————————————–
দায়ান আজ অফিসে এসেছে অন্য উদ্দেশ্য। আজ মুখোশের আড়ালের শ’ত্রু কে সামনে আনার দিন এসে গেছে।অনেক পিটপিছে ছু/ড়ি মেরেছে আর না।এবার বুঝতে পারবে দায়ান কি জিনিস।বিশ্বাসঘা’ত’কতার ফল যে কি হতে পারে তা আজ খুব ভালো করে বুঝিয়ে দিবে।

অফিসে ঢুকেই নিজের ক্যাবিনে যাওয়ার সময়,,,সিক্রেট রুম থেকে কারো গলার স্বর শুনতে পায়।

দায়ান বাঁ’কা হেসে রুমের দরজার কাছে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুঁজে দাড়ায়।

দায়ানের সামনে থাকা ব্যক্তিটি ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত।

—- হ্যা হ্যা চিন্তা করো না।এই ফাইল ও তোমার কাছে পৌঁছে যাবে।আর ডি’ল টা তুমিই পাবে এবার ও।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

— নাহ, আমি এতো কাঁচা কাজ করিনা।তুমি নিশ্চিন্তে থাকো
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

— আরে না এমন চা’ল চেলে ছিনা আমাকে ধরাতো দূর আমাকে স’ন্দেহ ও করতে পারবে না।

তাই নাকি? দায়ান জি’জ্ঞেস করে।

হ্যা বলেই সামনে থাকা ব্যক্তিটি পিছনে ঘুরে দাঁড়ায়।দায়ান কে দেখে আঁতকে উঠে। পা কাঁপতে থাকে।মুখ দিয়ে কথা বের হয় না।

দায়ান ডে/ভি/ল স্মাইল দিয়ে তাকিয়ে রয়।

#চলবে

বিঃদ্রঃ বোনাস পর্ব পেয়ে এবার সবাই খুশিতো?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here