তুমি হাতটা শুধু ধরো – পর্ব ৩৯

0
730

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৩৯
#Jhorna_Islam

আজ সকালটা অন্য রকম। কোলাহলহীন শুনশান নীরবতায় ঘেরা।নাকে এসে বারি খাচ্ছে ধানের মিষ্টি সুবাস।শরীর ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে সকালের স্নিগ্ধ বাতাস।

রুশ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বাইরে বেরিয়ে আসে। গ্রামে তার এই প্রথম আসা।এর আগে কখনো আসা হয়নি।তাই যখন সুযোগ পেয়েছে গ্রাম টা ঘুরে দেখার হাত ছাড়া করেনি।বেরিয়ে পরেছে আশেপাশে ঘুরে দেখার জন্য। গ্রামীন জীবনের আলাদা একটা ছন্দ আছে।রুশের খুব ভালো লাগছে গ্রাম টা দেখতে।এতোটাও সেকেলে নয়।গ্রামে ও এখন শহরের ছোঁয়া লেগেছে। সব কিছু উন্নতি হচ্ছে।
এসবই ঘুরে ঘুরে দেখছে রুশ।

সোহা ও সকাল সকালই উঠে পরেছে ঘুম থেকে।রান্না ঘরে গিয়ে রুশ ও দায়ানের জন্য কফি বানিয়ে বের হতেই দেখতে পায় রুশ বাড়িতে ঢুকছে।সোহা অবাক হয়ে বলে,,,

— রুশ ভাইয়া তুমি বাইরে গেলে কখন? আর এতো সকালে তোমার ঘুম ভেঙে গেলো?

— আজ অনেক সকালে ঘুম ভেঙে গেছে বোন।আর গ্রামে আমার এই প্রথম আসা।ভাবলাম ঘুরে দেখি। আবার ভাগ্য হয় কিনা দেখার কে জানে?

— সে বেশ করেছো ঘুরে দেখেছো।ভাগ্য হবে না কেনো দেখার? আমরা যতোবার আসবো তোমাকে সাথে করে নিয়ে আসবো।

— সে দেখা যাবে।

— আমি তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম কফি নিয়ে।

— ওহ দে আমার কাছে আমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিবো।

— আচ্ছা নাও।বলেই কফিটা রুশের হাতে দেয়।

— দায়ান উঠে নি।

–নাহ এখন গিয়ে ডেকে তুলবো।

–আচ্ছা। আমি রুমে যাই।বায় দা ওয়ে তোদের গ্রামটা অনেক সুন্দর। আমার ভালো লেগেছে।

বিনিময়ে সোহা মুচকি হেসে রুমে ঢুকে যায়।

দায়ান এখনো মনের সুখে ঘুমে বিভোর। সোহা আস্তে করে কফির কাপটা রেখে দায়ানের পাশে গিয়ে বসে। মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসে,ওড়নার কোন পেচিয়ে দায়ানের কানে শু’ড়’শু’ড়ি দেয়।দায়ান নরেচরে কানে হাত দেয় কয়েকবার। সোহা বেশ মজা পায়।আবার দিতে যায়।তার আগেই দায়ান সোহার হাতটা খপ করে ধরে ফেলে।একটানে বিছানায় সোহাকে শুইয়ে দেয়। তারপর সোহার উপরে উঠে সোহার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে শুয়ে থাকে।

সোহা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে,,, কি শুরু করেছেন সকাল সকাল? আপনি কিন্তু দিন দিন লু’চু হয়ে যাচ্ছেন।

ছাড়ুন আমায়।রান্না করতে হবে।খাবেন না? রুশ ভাইয়া ও কিন্তু বাড়িতে।

তো? এখনতো আমি অন্য কিছুর মুডে আছি।
এই সরেন বলছি। কফি এনেছি খেয়ে নিন ঠান্ডা হয়ে যাবে।

আর হাসপাতালে যাবো তো উঠে তৈরি হয়ে নিন।তারাতাড়ি যেতে হবে।

যাচ্ছি বলেই দায়ান সোহার ঘাড়ে কা’মড় বসিয়ে দেয়।

ও আল্লাহ রা/ক্ষস একটা।

———————————————

সকালের খাওয়া দাওয়া শেষ করে সকলে হাসপাতালে যাবার জন্য বেরিয়ে পরে। হাসপাতালের সামনে গাড়ি আসতেই দায়ান আর সোহা নেমে পরে।
রুশ গাড়ি নিয়ে ঢাকা ফিরে যাবে এখন। অফিসটা কয়দিন রুশই সামলাবে।

দায়ান কিছুদিন এখানেই থাকবে সোহার সাথে।রুশকে বলে দিয়েছে ঐদিকটা সামলে নিতে।

রুশ বিদায় নিয়ে চলে গেলে দায়ান আর সোহা হাসপাতালে চলে যায়। তারপর সোহা তার বাবা মাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।ওনাদের খেয়ে দেয়ে,বিশ্রাম প্রয়োজন। কাল থেকে অনেক ধ’কল গিয়েছে উপর দিয়ে।নয়তো অসুস্থ হয়ে পরবে।

ওনারা ও সোহা আর দায়ানকে সব বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে।

দায়ান সোহা কে বলে ডাক্তারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায় নোহার ব্যাপারে কথা বলার জন্য । আর সোহা খাবার নিয়ে ক্যাবিনে ঢুকে যায়। খাইয়ে ঔষধ খাওয়াতে হবে।

— গুড মনিং আপু।ভালো আছিস?

— গুড মনিং সোহা সো’না। ভালো আছি।

— এই দেখ আমি নিজ হাতে রান্না করে তর জন্য নিয়ে এসেছি।খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিবি তাহলে আরো ভালো হয়ে যাবি।

তারপর বোন কে খাবার খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দেয় সোহা।এর মধ্যে হ’ন্ত দ’ন্ত হয়ে ক্যাবিনে প্রবেশ করে নোহার শ্বশুর।

এসব আমি কি শুনছি নোহা? তুমি তোমার শ্বাশুড়ি আর ওমিকে জেলে দিয়েছো? তাদের নামে খু/নের আর নারী নির্যা’ত’নের কেস দিয়েছো? পা’গল হয়ে গেছো তুমি?

আমি বাড়িতে ছিলাম না আমায় জানাতে পারতে।তাই বলে তুমি এসব করবে? ওদের ছাড়াতে গিয়েছিলাম।পুলিশ তো আমার কোনো কথাই শুনছে না।কে’স নাকি কোর্টে উঠবে।নিজের পরিবারের লোকের সাথে কেউ এসব করে?

ওরা না হয় একটা ভুল করেই ফেলেছে তাই বলে তুমি?

সোহার শরীর রাগে জ্বলে উঠে। কিছু বলতে নিবে তার আগেই নোহা হাত দিয়ে ইশারা করে সোহা কে থামিয়ে দেয়।

“বাহ্ বাবা বাহ্ নিজের স্বার্থ ছাড়া আপনি কিছুই বুঝলেন না।আমার এই অবস্থা আর আপনি এসে আমাকে ঝাড়ছেন? একবার আমার কি অবস্থা জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন ও মনে করেন নি। আর ভুল একটা মেয়েকে নি’র্যা’তন করে তার পেটেই তার অনা’গত সন্তান কে মে’রে ফেলা ভুল? দিনের পর দিন একটা মেয়ের উপর মা’নসিক,শা’রী’রিক নি’র্যা’তন করা ভুল?এগুলা যদি ভুল হয়ে থাকে তাহলে ভুলের শাস্তি ও পেতে হবে।

দায়ান ও তখন ক্যাবিনে এসে ঢুকে।

আপনারা অনেক ব্যবহার করেছেন আমায় আর না। আপনি ব্যবহার করেছেন রা’জ’নৈতিক কারনে। আপনার বউ ব্যবহার করেছে কাজের মেয়ে হিসাবে।আর আপনার ছেলে ব্যবহার করেছে নিজের চা’হিদা মিটাতে।বলেই নোহা চোখ বন্ধ করে ফেলে।এই কথা গুলো বলতেও নিজের রু’চি তে বাঁধছে। কিন্ত এই লোক গুলো বারবার বাধ্য করে।

বাহ্ কথা ফুটেছে মুখে দেখতে পাচ্ছি।

কথা মুখে আগেই ছিলো।এতোদিন সম্মানের খা’তিরে কিছু বলিনি। এখন আমার আফসোস হচ্ছে যাদের আমি সম্মান দিতে গিয়েছি ষোল আনার,,তারা এক আনা সম্মানের যোগ্য ও না।

নোহা তুমি ভাবতে পারছো না এর ফল কি হবে।এতো বাড়াবাড়ি করে লাভ আছে? সেইতো আমাদের দুয়ারেই তোমাকে ফিরতে হবে।

কে বলেছে আপনাদের দুয়ারে ফিরবো? আপনার ছেলেকে আমি ডি’ভো’র্স দিবো।অমন কা/পুরুষ স্বামী থাকার চেয়ে না থাকা ঢের ভালো। আর কে’স তো কোর্টে উঠবেই আপনার ছেলেকে ভেবেছেন দয়া দেখিয়ে ছেড়ে দিবো?

অতি বাড় বেড়োনা।এর ফল কিন্তু ভালো হবে না।ওদের তো আমি ছাড়িয়ে আনবো। আমার পাওয়ার সম্পর্কে তোমার কোনো ধারনা নেই।এর ফল ভোগ করতে হবে।

এবার দায়ানেট মাথায় রা’গ চড়ে যায়।তাই নাকি? আপনার ছেলে কি করে ছাড়ান আমিও দেখে নিবো।ভেবেছিলাম সবটা নোহার উপর ছেড়ে দেব ও যা করতে চায় তাই হবে।বাট,,,এখন আমিও দেখে নেবো আপনার মতো একটা মে’ম্বা’র কি করে আপনার ছেলেকে ছাড়ান।কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করাবো।ঐরকম জা/নো’য়ারদের বাইরের পরিবেশে মানায় না।ওরা চৌদ্দ শি’কের ভিতরেই ঠিক আছে। পারলে নিজের ছেলেকে ছাড়িয়ে দেখাবেন।

এবার ওমির বাবা একটু দ’মে যায়।ভেবেছিলো হু’মকি ধা’মকি দিলে ভয়ে ওদের ছাড়িয়ে আনবে।কিন্তু এরা দেখি এবার দ’মার পাত্র নন।তাই কিছু না বলে,, রাগে হনহন করে বেরিয়ে যান।

নোহা শ্বশুরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।সোহা একপাশ দিয়ে সাবধানে বোনকে জড়িয়ে ধরে রাখে।

দায়ান নোহার দিকে তাকায়,,, তুমি কোনো চিন্তা করো না নোহা।এরা কিছুই করতে পারবে না।আমি এদের যতাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করবো।আর আমি উকিলের সাথে কথা বলেছি।ডি’ভো’র্স টা খুব শিঘ্রই হচ্ছে। তুমি নিশ্চিত থাকো।ওমি তার পা’পে’র যথাযথ শাস্তি পাবে।

—————————————————-

দেখতে দেখতে আরো পাঁচ ছয়দিন কেটে যায়। নোহাকে তিনদিন পরই বাড়িতে আনা হয়েছে।

এখন অনেকটাই সুস্থ নোহা।হাটা চলা সব কিছুই করতে পারে।শরীরে মারের দা’গ গুলো আস্তে আস্তে মিশে যাচ্ছে।
তবে পেটে সেলাই করা জায়গাটা শুকাতে একটু টাইম লাগবে।

আজ সকলে এক সাথে দুপুরে খেতে বসেছে। সোহা নোহা,ওদের বাবা আর দায়ান।সোহার মা বেড়ে দিচ্ছে। সবাই অনেকবার বলেছিলো বসে পরার জন্য উনি এখন খাবেন না।পরে খাবেন বলে জানিয়েছে। তাই কেউ আর জোর করেনি।

সোহার মা দায়ানকে নিয়ে ব্যস্ত।এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে। নিজে প্লেটে তুলে দিচ্ছে। দায়ান না করার পর ও। দায়ান সোহার দিকে তাকায় অসহায়ের মতো।সোহা মিটমিট করে হেসে বলে আরে খেয়ে নিন।

জামাই আদর।শ্বাশুড়ির এমন আদর আর কই পাবেন?
সোহার হাসি দেখে দায়ান চোখ গরম করে তাকায়।

সোহার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,, আন্টি প্লিজ আর দিয়েন না।

সোহার মা দায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,, আমরা কি তোমার এতোই পর বাবা? যে আন্টি ডাকছো।মা কি ডাকা যায় না?

আমিতো তোমার মায়ের মতোই।দায়ান ছলছল চোখে তাকায় সোহার মায়ের দিকে।

হ্যা রমিলা ছোটো আব্বা মনে হয় আমাদের আপন ভাবতে পারেনি।তাইতো আংকেল আন্টি বলে।

সোহা দায়ানের মনের অবস্থাটা বুঝতে পারে।দায়ানের বাম হাতটা নিজের হাতের মঠোয় নেওয়ার চেষ্টা করে। দায়ান আবার সোহার দিকে তাকায়। সোহা দায়ানকে চোখের ইশারায় ভরসা দেয়।

দায়ান নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,,, আজ থেকে আমি তোমাদের বাবা-মা বলেই ডাকবো।তোমাদের ও আমাকে নিজের ছেলের মতো ভাবতে হবে।

সোহার মা দায়ানকে এক পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে মাতায় হাত বুলিয়ে দেয়। কখনো নিজেকে একা ভেবো না।
এই যে আমরা আছি।এখন থেকে আমাদের উপর তোমার সোহার থেকেও বেশি অধিকার।

তুমিতো কিছুই খাওনি বাবা।আসো আমি তোমায় খাইয়ে দেই।বলেই প্লেট টা হাতে নিয়ে নেয়।খুব স্নেহের সাথে খাইয়ে দিতে থাকে।

সোহা ঠোঁট উল্টে বলে,,হ্যা এখনতো উনিই তোমার সব।আমি আর আপুতো তোমার কেউ না।তাই আমাদের খাইয়ে দেয়না,কেউ।নোহা সোহার দিকে তাকিয়ে মাথায় টোকা দিয়ে বলে,,নে’কি কা’হিকা।

সোহার বাবা বলে,,কে বলেছে আমার আম্মাদের কেউ ভালোবাসে না।আমি আছি না? আমি আমার দুই আম্মা কে খাইয়ে দিবো।এসো এসো আমার পাশে এসে বসো।

নোহা আর সোহা দু’জন বাবার দুপাশে বসে পরে। দুইবোন বাবার হাতে আর দায়ান সোহার মার হাতে খাচ্ছে।

দায়ান মনে মনে বলে,,, কে বলেছে আমার কেউ নেই,,এই যে বাবা মা পেলাম।হাসি খুশি একটা পরিবার পেলাম।এতো ভালোবাসা পেলাম।নিজেকে কেমন সুখী লাগছে,,এই পরিবারের একটা সদস্য হয়ে উঠতে পেরে।কতো হাসি খুশি, আনন্দ। এই আনন্দ কখনো যেনো ফুরিয়ে না যায়।সবাই যেনো এমন হাসি খুশি হয়ে থাকে।দায়ান নিজের সবটুকু দিয়ে আগলে রাখবে এই পরিবারটাকে।

————————————————–
খাওয়া দাওয়া শেষ করে দুপুরে সবাই বিশ্রাম নিচ্ছে যে যার রুমে। দায়ান আর সোহা ও শুয়ে ছিলো। এমন সময় দায়ানের ফোনটা বেজে উঠে। সোহা টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে দায়ানের কাছে দেয়।

তারপর দায়ান কল টা রিসিভ করে কথা বলতে থাকে।সোহা এই ফাঁকে রুম থেকে বের হয়ে বাড়ির পিছনের পুকুর পাড়ের দিকে চলে আসে ।

হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে সামনে কাউকে এসে দাঁড়াতে দেখে সোহা থেমে যায়। সামনের ব্যক্তিটার দিকে কপাল কুঁচকে তাকায়।

#চলবে,,,,,,

এটি আমার সকল পাঠকদের আমার গল্প সম্পর্কে আলাপ আলোচনা ও আড্ডা দেওয়ার জন্য গ্রুপ এ জয়েন হওয়ার জন্য আমন্ত্রন রইলো।😊
https://facebook.com/groups/1786020595103522/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here