#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ১৩+14+15+16
.
তুর্বীকে ছেড়ে দিয়ে সৌহার্দ্য সোজা নিজের বাড়িতে গেল। শফিক রায়হান বসে ল্যাপটপে নিজের কাজ করছিলেন। আমিনুর সাহেব ওনার পাশে বসে আছেন আর টিভি দেখছেন। মিসেস নাহার আর মিসেস আসমা কিচেনে রান্না করছেন। এরমধ্যেই সৌহার্দ্য এসে বাড়িতে ঢুকলো। ও কিছু না বলে ওপরে চলে যেতেই নিচ্ছিল। কিন্তু শফিক রায়হান থামিয়ে দিয়ে বললেন,
” কোথায় ছিলে কালকে?”
সৌহার্দ্য দাঁড়িয়ে গিয়ে সহজভাবে বলল,
” কিছু কাজ ছিল বাবা।”
শফিক রায়হান গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
” তা কাজটা কী ওই লোফারটার কাছে ছিল নাকি?”
সৌহার্দ্যর এমনিতেই মন ভাল নেই। বিহানকে এরকম কথা বলায় ওর আরও রাগ হল। ও শক্ত কন্ঠে বলল,
” দেখ বাবা। সবসময় সব কথায় ওকে টেনে আনা বন্ধ করো। যদি ওর সম্পর্কে ভালো কিছু বলতে না পারো তো খারাপ কিছু বলোনা।”
আমিনুর খান বললেন,
” বাবা তুমি খুব ভালো ছেলে। তোমার ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল। কেন ঐ লাগামছাড়া একটা অসভ্য ছেলের সাথে থেকে নিজের মাথা খারাপ করছ? জাহান্নামে যাক ও। তাতে তোমার কী?”
সৌহার্দ্য তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বলল,
” ফুপা, যাকে তুমি জাহান্নামে যেতে বলছ। সে তোমার নিজের ছেলে হয়। তোমার সন্তান।”
” ওরকম সন্তান না থাকাই ভালো।”
কথাটা বলতে বলতে রান্নাঘর থেকে মিসেস আসমা এগিয়ে এলেন। সৌহার্দ্য এবার বিরক্ত হয়ে বলল,
” তোমরা কী চাও বলোতো? ও মরে যাক? তোমরা ওর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার পর একমাত্র আমিই ছিলাম ওর পাশে। যদি ঐ মুহূর্তে আমি ওর পাশে না থাকতাম, ও সুইসাইড করত। এতটাই ভেঙ্গে গেছিল ও। যদিও আজ আমি ওকে ছেড়ে গেলে ও সুইসাইড করবে না ঠিকই, কিন্তু জ্যান্ত লাশ হয়ে যাবে।”
মিসেস আসম বললেন,
” ওর দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার কী উপযুক্ত কারণ ছিলনা?”
সৌহার্দ্য কঠোর স্বরে বলল,
” তোমাদের মনে হয়না তোমরা একটা বাইরের মেয়েকে নিজের ছেলের চেয়ে বেশি প্রায়োরিটি দিয়ে ফেলেছিলে?”
আমিনুল খান বললেন,
” অন্যায় টা অন্যায়ই সৌহার্দ্য। সেটা ঘরের লোক হোক বা বাইরের। ও যে চরিত্রহীন। তার প্রমাণ তো ও এখন রোজ দিচ্ছে। ওকে জন্ম দিয়ে পাপ করে ফেলেছি।”
সৌহার্দ্য এবার কেন জানি ভীষণ রেগে গেল। রাগে চেঁচিয়ে বলল,
” ফুপা স্টপ অল দিস ননসেন্স।”
সবাই চমকে উঠল। সৌহার্দ্য নিজেও অবাক হল। ও কখনই বড় কারো সাথে এভাবে কথা বলেনা। অাজ অবধি বড়দের সাথে গলা উঠিয়ে কথা বলেনি ও। চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিয়ে ফুপাকে ‘সরি’ বলতে নেবে তখনই সপাটে একটা চড় পরল সৌহার্দ্যর গালে। সৌহার্দ্য গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকাল নিজের বাবার দিকে। শফিক রায়হান রেগে বললেন,
” ওই ছেলের কাছ থেকে বেয়াদবিটাও শিখে ফেলেছ তাহলে? এবার বুঝেছ কেন বারণ করি ওর কাছে যেতে?”
সৌহার্দ্য মাথা নিচু করে শুনলো কথাগুলো এরপর কিছু না বলে বাড়ি থেকেই বেড়িয়ে গেল। মিসেস নাহার এবার রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এসে কান্নামাখা কন্ঠে বলল,
” তোমরা কী শুরু করলে বলবে? এক ছেলেকে তো অনেক আগেই বাড়িছাড়া করেছ। এবার আমার এই ছেলেটাও চলে যাবে। তখন থেকো তোমরা সুখে।”
আমিনুল খান গম্ভীর স্বরে বলল,
” বিহান যা করেছিল তাতে কী বাড়ি থেকে বের করে ভুল করেছি আমরা ভাবি? আপনার মেয়ে, আমাদের নুসরাতের সাথে যদি কোন ছেলে একই কাজ করত? তুমি পারতে তাকে ক্ষমা করতে? ওই মেয়েটা আমাদের কেউ নয় বলে তার প্রতি অন্যায় আমরা সহ্য করব?”
মিসেস নাহার চুপ হয়ে গেলন। শফিক রায়হান বললেন,
” তবুও যদি দেখতাম শুধরে গেছে। নিজে গিয়ে ফিরিয়ে আনতাম ওকে। দুনিয়ার কোথায় জায়গা না হলেও আমার বুকে জায়গা হত ওর। কিন্তু শোধরালো তো নাই। আগে যা গোপনে করত, ঐ ঘটনার পর সেসব প্রকাশ্যে করা শুরু করেছে।”
এবার আর সত্যিই কিছুই বলার নেই। সবার মনে এক ই ধারণা। যদি বিহানটা শুধরে যেত। তাহলে হয়ত ওকে এভাবে দূরে সরিয়ে রাখতে হতো না। কিন্তু বিহান যেরকম ছেলে তৈরী হয়েছে, সৌহার্দ্যর মত ভালো ছেলের ওর সাথে থাকা উচিত না।
_______________
রিখিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তুর্বীর দিকে, তুর্বীর সেদিকে খেয়াল নেই। ও আরামে মোবাইলে গেমস খেলে যাচ্ছে। রিখিয়া বোকার মত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
” তোমাকে S.R. কিডন্যাপ করেছিল?”
তুর্বী খুব মনোযোগ গেমস খেলতে খেলতেই বলল,
” এই নিয়ে পাঁচবার একই প্রশ্ন করলি। নেক্স কোয়েশচন কর।”
রিখিয়া চোখ সরিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ কিছু একটা ভাবল। তারপর আবার ঠিকভাবে তুর্বীর দিকে ঘুরে বসে বলল,
” তুমি শিওর উনিই তোমাকে কিডন্যাপ করেছে?”
” আরে হ্যাঁ রে বাবা।”
” তুর সবটা খুলে বলবে? আমার কেমন সব গুলিয়ে যাচ্ছে।”
তুর্বী বুঝল সবটা না শুনে না এই মেয়ে নিজে শান্তি পাবে না ওকে শান্তি দেবে। তাই ফোনটা রাখল। তারপর রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে সবটা বলল। সব শুনে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল তুর্বীর দিকে। তারপর বলল,
” তুমি ওনার মুখ দেখেছ?”
তুর্বী আফসোসের স্বরে বলল,
” আরে না। দেখালোই না ব্যাটা কালা মাস্ক।”
” কালা মাস্ক?
তুর্বী ঠোঁট বাঁকিয়ে মুখটা ফুলিয়ে বলল,
” সারাক্ষণ কালো রঙের মাস্ক পরে ছিল মুখে। চেহারাটা দেখতে পাই নি। তাইতো কালা মাস্ক বলি।”
রিখিয়া হেসে দিল। হাসতে হাসতে বলল,
” পারোও তুমি। তোমার জায়গায় অন্যকেউ হলে এতক্ষণে অসুস্থ হয়ে যেত ভয়ে।”
তুর্বী ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,
” স্পেশিয়ালি তুই।”
রিখিয়ার সম্মতি জানিয়ে শব্দ করে হাসল। হাসি থামিয়ে তুর্বী বলল,
” এবার তোর কেসটা বল তো। সারারাত কোথায় ছিলি?”
রিখিয়ার হাসি থামিয়ে কিছুক্ষণ চুপ রইল। বিহানের কথা ও ভুলেই গেছিল। প্রথমদিন থেকে কত রুড বিহেভ করেছির ও বিহানের সাথে। পাবলিক প্লেসে মিডিয়ার সামনে থাপ্পড় মেরেছে, যা-তা বলে অপমান করেছে, এমনকি পুলিশে দিয়েছিল, ওর জন্যে কোন দোষ ছাড়াই বিহানকে লকাপে রাত কাটাতে হয়েছে। এতকিছুর পর অন্যকেউ হলে তো ওর মুখও দেখত না। অথচ ছেলেটা কাল ওকে এত বড় বিপদ থেকে বাঁচালো। তারপর সারারাত তুর্বীকে খুঁজতে সাহায্য করল। এমনকি সারারাত ওর কাছে থাকল যাতে ওর বিপদ না হয়। ছেলেটাকে বাইরে দিয়ে যেমনই মনে হোক। মনটা যে একদম খাঁটি সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই ওর। ও এসব ভাবতে ভাবতেই তুর্বী বলল,
” কীরে বল? কোথায় ছিলি?”
তুর্বীর কথায় রিখিয়ার ও হুস এল। ও নিজেকে সামলে নিয়ে নিচু গলায় বলল,
” বিহানের কাছে।”
তুর্বী ‘ওহ’ বলে নিজের কাজে মনোযোগ দিচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই রিখিয়ার কথা মাথায় ঢুকতেই চোখ বড়বড় করে তাকাল রিখিয়ার দিকে। এরপর বলল,
” আমি যেটা শুনলাম। তুইও কী সেটাই বললি?”
রিখিয়া হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ল। তুর্বী ফোন রেখে রিখিয়ার দিকে ঘুরে বসে বলল,
” মানে কী? তুই তো ওই ছেলেকে সহ্য অবধি করতে পারিস না। তার কাছে গোটা একটা রাত থেকে এলি?”
রিখিয়া একটু ইতস্তত করে বলল,
” আসলে ছেলেটা ততোটাও খারাপ না যতটা ভাবতাম আরকি।”
তুর্বী অবাক হল। কিছুক্ষণ চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থেকে বলল,
” তোর ভালো লেগেছে? সত্যি বলছিস।”
রিখিয়া ভ্রু কুচকে নিয়ে বলল,
” আজব! আমি কখন বললাম ভালো লেগেছে। আমি জাস্ট বলেছি খারাপ না।”
” আরে এটাই তো ভালোলাগার প্রথম ধাপ।”
” এই থামোতো!”
” আচ্ছা থামলাম, এবার বল না কাল রাতে কী হয়েছিল।”
রিখিয়া তুর্বীকে ওই বখাটেদের ঝামেলা থেকে শুরু করে সকাল পর্যন্ত সব খুলে বলল। সবটা শুনে তুর্বী চুপ করে কিছুক্ষণ বসে রইল। সেদিনের ওরকম অপমানের পরেও ছেলেটা এতো স্বাভাবিক ব্যবহার করল? এটাকি স্বাভাবিক? পরে ভাবল যে একটু বেশিই ভাবছে ও। একেকজনের দৃষ্টিভঙ্গি একেকরকম। হয়ত বিহান ব্যপারটা তেমন মনে নেয়নি। রিখিয়া বলল,
” কীরে? চুপ হয়ে গেলি কেন?”
তুর্বী রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে বলল,
” যাবি কফি খেতে?”
” ভেবে দেখছি।”
” আরে এত ভাবাভাবির কী হল? এভাবে বলল ছেলেটা।”
দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। কিছুক্ষণ পর রিখিয়া বলল,
” যাক, অন্তত তোমার মাথা থেকে এই রিলেশনশীপের এক্সপিরিয়েন্স নেওয়ার শখ তো মিটল।”
তুর্বী অবাক হয়ে বলল,
” কে বলল? প্রেম তো আমি একটা করবই। আমার এই ব্যাপারটার এক্সপিরিয়েন্স করতেই হবে। এট এনি কস্ট। মানে মাস্ট! মাস্ট! মাস্ট!”
রিখিয়া হতাশ চোখে তাকিয়ে রইল তুর্বীর দিকে। SR কে বিরক্ত করার ভুত ওর মাথা থেকে তো SR নিজে নামিয়েছে। কিন্তু এই প্রেম নিয়ে এক্সপিরিমেন্টের ভুত ওর মাথা থেকে কে নামাবে?
#চলবে…
( বাস জার্নি করতে করতে এটুকু লিখে দিলাম। সারাদিন জার্নি করে শরীরের অবস্থা ভীষন খারাপ। গোটা গল্পটা বাসে বসেই কষ্ট করে লিখেছি। তাই ছোট বলে লজ্জা দেবেন না 😑।)
#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ১৪
.
বিহান রিখিয়াকে বাড়ি পৌছে দিয়ে ফ্লাটে এসে সবে ঘুমিয়েছিল। এমন সময় কলিং বেল বাজাল। একরাশ বিরক্তি নিয়ে ঘুম মাখা চোখে হেলতেদুলতে গিয়ে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলে তাকিয়ে দেখে সৌহার্দ্য দাঁড়িয়ে আছে, মুখমন্ডলে রাগ স্পষ্ট। বিহান চোখ পিটপিট করে ভ্রু কুচকে বলল,
” ব্রো, আমার ঘুমের সাথে তোর কীসের শত্রুটা বলবি? তোর কাছে তো ডুপ্লিকেট চাবি আছেই, ঢুকে যেতি।”
সৌহার্দ্য মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বলল,
” আপনাকে তো বিশ্বাস নেই। ভেতরে আপনার সাথে আপনার গার্লফ্রেন্ডদের মধ্যে কেউ আছে কি-না কীকরে জানবো? আপনার রঙলীলা সাক্ষাৎ দর্শন করার শখ নেই আমার।”
বিহান ঘুম চোখেই হেসে সরে দাঁড়াল। সৌহার্দ্য ভেতরে ঢুকে সোজা সোফায় গিয়ে বসল। সৌহার্দ্য কিছু না বলে চুপচাপ বসে আছে। বিহান বুঝতে পারল ঐ বাড়িতে কিছু একটা হয়েছে, আর সেটা ওকে কেন্দ্র করেই হয়েছে। একটা জিনিস ও বুঝতে পারেনা। ও তো চলে এসছে। ওর ছায়ায় তো ওনাদের মারাতে হয়না। তবুও কেন করে এরকম করে ওনারা? শুধু সৌহার্দ্য এখানে আসে বলে? বিহান সৌহার্দ্যর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
” ঐ বাড়িতে কিছু হয়েছে তাইনা? তুই কেন ওদের কথা কানে নিস বলবি? বলতে দে না ওরা যেটা বলে। যা ইচ্ছে হয় ভাবতে দে।”
সৌহার্দ্য ঝারি মেরে বলল,
” তাই বলে যা ইচ্ছা হবে তাই বলবে নাকি?”
” আরে কী হয়েছে কী তাতে? মরে গেছি আমি?”
” এমনি চুপ করবি? না-কি থাপ্পড় খেয়ে চুপ করবি?”
বিহান খানিক হাসল। এরপর পরিবেশ স্বাভাবিক করতে বলল,
” ওসব কথা বাদ দে। এবার বল কাজ হল? ঐ মেয়েটাকে যেকারণে কিডন্যাপ করেছিস সেটা হয়েছে?'”
সৌহার্দ্য একপলক বিহানের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল,
” আমার কাজ হয়ে গেছে।”
” বাহ ব্রো! কী এম করলে যে একরাতেই সোজা হয়ে গেল?”
সৌহার্দ্য বিরক্তি নিয়ে বিহানের দিকে তাকাতি বিহান চোখ মার। সৌহার্দ্য বলল,
” এই চুপ করতো তুই, সবসময় উল্টোপাল্টা কথা বলবে।”
” ওকে, বলবি তো যে কী করেছিস?”
সৌহার্দ্য বিহানকে সারারাতে ঘটা কাহিনী খুলে বলল। বিহান সব শুনে একদফা মন খুলে হাসল। বিহানের হাসি দেখে সৌহার্দ্যও হাসল। বিহান হাসতে হাসতে বলল,
” সত্যিই ঐ মেয়ে একটা জিনিসই। মানতে হচ্ছে ভাই!”
সৌহার্দ্য এবারেও হাসল। বিহান কিছু একটা চিন্তা করে বলল,
” আমার মনে হয়না ঐ মেয়ের মাথা থেকে প্রেম করার ভুত আদোও নেমেছে।”
সৌহার্দ্য কপাল কুঁচকে বলল,
” বলছিস?”
” হুম বলছি তো।”
সৌহার্দ্যর হঠাৎ কিছু একটা মনে পরতেই ও বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” তুই বল তুই রিখিয়ার সাথে কী করেছিস? সেদিনের জন্যে মেয়েটার সাথে মিসবিহেভ করিস নি তো?”
বিহান হু কেয়ারস্ একটা ভাব নিয়ে বলল,
” আমার কী খেয়েদেয়ে কাজের অভাব পরে গেছে না কী?”
” তাহলে? সারারাত কী করলি?”
” কী আর করব? সারারাত নিয়ে নিয়ে ঘুরলাম। পাহারা দিলাম। রাতের ডিনার, সকালের ব্রেকফাস্ট দুটোই করালাম। বাড়ি পৌছেও দিলাম।”
সৌহার্দ্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
” আমি তোকে ফোন করে বলতাম রিখিয়া কোথায় আছে দেখতে আর ওর খেয়াল রাখতে। কিন্তু তুই তার আগেই তুই ওর কাছে গিয়ে পৌছে গেলি কীকরে?”
বিহান কিছু বলল না শুধু হাসল। সৌহার্দ্য সন্দিহান চোখে বিহানের দিকে তাকিয়ে ভাবল,
সেদিনের ঘটনাটা বিহান এত সহজে ভুলে গেল? ঐ ঘটনাটা পরেও রিখিয়ার সাথে এত নরমাল হওয়া সবার পক্ষে সম্ভব হলেও তো বিহানের পক্ষে সম্ভব না। বরং অন্য স্বাভাবিক মানুষের চেয়েও বিহানের মনে এই ঘটনার খারাপ এফেক্ট বেশি পরার কথা। এসব ভাবতে ভাবতে সৌহার্দ্য বলল,
” দেখ মেয়েটার ওপর কোনভাবে রাগ করিস না। ওর কিন্তু কোন দোষ নেই।”
বিহান ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ঝুলিয়ে রেখে বলল,
” হ্যাঁ। ঠিকই বলেছিস। ওর কোন দোষ নেই। দোষটা আমার ছিল। আমিই বোকার মত ওকে হেল্প করতে যাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণের জন্যে ভুলে গেছিলাম যে ও সেই মেয়ে জাত।”
” কীহ?”
” নাহ। মানে একটা মেয়ের গায়ে হাত দেওয়া ঠিক হয়নি সেটাই বললাম।”
সৌহার্দ্য লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলল,
” দেখ বিহান। আমি আগেও তোকে অনেকবার বলেছি এখনও বলছি। একজনের জন্যে সবাইকে দোষী ভাবাটা উচিত নয়। জীবনকে দ্বিতীয় সুযোগ দিতে হয়।”
বিহান একই ভঙ্গিতে হেসে বলল,
” টক হওয়া তেঁতুলের বৈশিষ্ট্য। সেটা যেই জাতের তেঁতুলই হোক।”
সৌহার্দ্য এই কথার উত্তরে কিছু বলবে তার আগেই বিহান বলল,
” ঘুম পাচ্ছে, রাতে ঠিক করে ঘুম হয় নি। চল ঘুমাবো।”
বলে বিহান উঠে বেডরুমে চলে গেল। আর সৌহার্দ্যও ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বিহানের সাথে রুমে গেল। এরপর দুজনেই বেডের দুপাশে এলোমেলো হয়ে যে যেভাবে শান্তি পেল শুয়ে পরল। সবাই রাতে ঘুমায় কিন্তু দুই ভাই মিলে সকালবেলাতেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেল।
______________
অফিস থেকে ফেরার পর থেকেই তুর্বীর মেজাজটা খুব বেশি পরিমাণ খারাপ হয়ে আছে। কিছু খেয়ে মুখ ফুলিয়ে খাটে শুয়ে আছে সে। কিছুই ভালোলাগছে না। আর ভালো না লাগার মূল কারণ হল তার কাজ। তাকে যেই কাজ দেওয়া হয় সেটা নিয়ে ও মোটেও সন্তুষ্ট নয়। মানছে ও নতুন জয়েন করেছে, এখনও তেমন বিশেষ কোন এক্সপিরিয়েন্স নেই ওর। তাই বলে ওকে যদি নতুন বা ভালো মানের প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ না দেয় তাহলে ও কী করে নিজের এবিলিটি বুঝবে? এক্সপিরিয়েন্স কীকরে হবে? এরমধ্যেই রিখিয়া এসে ওর পাশে শুয়ে পরল। তুর্বীকে চুপ থাকতে দেখে রিখিয়া বলল,
” কী ব্যপার? আজ এত চুপ যে?”
তুর্বী কিছু একটা ভাবতে ভাবতে বলল,
” আমার ভবিষ্যত অন্ধকার।”
রিখিয়া ভ্রু কুচকে তুর্বীর দিকে মাথা ঘুরিয়ে বলল,
” কী বলছ? তোমার ভবিষ্যতে কেন অন্ধকার হতে যাবে?”
” হোয়াট এম আই ডুয়িং ইয়ার? আমার জব টা আমার কাছে জাস্ট ইরিটেটিং হয়ে যাচ্ছে। ভালো বা বড় কোন প্রজেক্টই দিচ্ছেনা।”
” আরে তুমিতো কয়েক মাস হল জয়েন করলে। অপেক্ষা কর আরও কিছুদিন?”
তুর্বী বিরক্ত হয়ে বলল,
” কয়েক মাস যাবত কাজ করছি মানছি। তাই বলে ভালো একটা প্রজেক্ট দেবেনা? আমি কিছু না করলে বুঝব কীকরে আমি কতটা যোগ্য?”
রিখিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
” তোমার বসের সাথে কথা বলে দেখ এ ব্যপারে?”
তুর্বী উঠে আসাম করে বসে বলল,
” মানে এখন আমি কাজ ভিক্ষা চাইব?”
রিখিয়া উঠে বসে বিরক্তি নিয়ে বলল,
” আরে কাজ ভিক্ষা কেন চাইতে যাবে? তুমি জাস্ট গিয়ে বলবে তোমাকে যাতে একটা ভালো প্রজেক্টে কাজের একটা অপুরচুনিটি দেয়, ব্যাস। আর কিছু না।”
তুর্বী ভ্রু উঁচু করে বলল,
” বস শুনবে?”
” আরে তুমি বলেতো দেখো একবার? কাজ হলেও তো হতে পারে।”
তুর্বী মাথা নাড়াতে নাড়াতে ভাবল যে রিখিয়া ঠিকই বলছে। একবার বসের সাথে কথা বলেই দেখা যাক। বিষয় বদলে তুর্বী রিখিয়াকে বলল,
” এবার তুই বল বিহানের সাথে কফি খেতে কবে যাচ্ছিস?”
রিখিয়া আঙ্গুলে ওড়না পেঁচাতে পেঁচাতে বলল,
” ভাবছি কী করা যায়।”
” আরে এত ভাবার কী আছে? কফিই তো খাবি নাকি।”
রিখিয়া কিছু না বলে শুয়ে পরল। তুর্বীও আর ঈথা না বাড়িয়ে শুয়ে পরল ওর পাশে।
_____________
সন্ধ্যা হয়ে গেছে অনেক্ষণ। বিহান মনোযোগ দিয়ে গেমস খেলছে। আর সৌহার্দ্য টিভির দেখছে। দেখছে বলতে শুধু চ্যানেল ঘোরাচ্ছে স্হির হয়ে বসে কিছু দেখছে না। সৌহার্দ্য চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে বলল,
” রাতে কী খাওয়া যায় বল তো?”
বিহান গেম থেকে মনোযোগ না সরিয়ে বলল,
” আজ রান্নার মুড নেই। অর্ডার করাই ভালো।”
” এখন করব না পরে?”
” সবেতো সন্ধ্যা হল। রাত হতে দে আগে।”
” আচ্ছা।”
আবার যে যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল। ঘন্টাখানেক কেটে যাওয়ার পর হঠাৎ করেই কলিং বেল বেজে উঠল। বিহান বলল,
” ব্রো, তুই যা। ইন্টারেস্টিং লেবেলে আছি।”
সৌহার্দ্য ছোট চোখে বিহানের দিকে একপলক তাকিয়ে দরজা খুলতে চলে গেল। দরজা খুলে সৌহার্দ্য অবাক হয়ে গেল। অবাক চোখে তাকিয়ে থেকেই বলল,
” আপু?”
নুসরাত মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দিল। সৌহার্দ্যও হেসে দিয়ে জড়িয়ে ধরল নিজের বড় বোনকে। সৌহার্দ্য বলল,
” কেমন আছো?”
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তোর কী খবর?”
” এইতো। তুমি এখানে এলে যে হঠাৎ?”
” গেছিলাম ঐ বাড়িতে। তুই ওখানে নেই শুনে এখানে চলে এলাম। তা সে কোথায়?”
সৌহার্দ্য ইশারায় দেখাল ভেতরে আছে। নুসরাত মুচকি হেসে পা টিপে টিপে ভেতরে এসে দেখে বিহান মনোযোগ দিয়ে গেমস খেলছে। নুসরাতের বুক ভার হয়ে এল। কাঁপাকঁপা গলায় বলল,
” পিচ্চু?”
বিহান চমকে তাকাল। নুসরাতকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেল বিহান। কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখে আদ্রতা এসে ভর করল। তারসাথে মনে এসে ভর করল একরাশ অভিমান।
#চলবে…
[ রাতে “বর্ষণের সেই রাতে” যথাসময়ে দিয়ে দেব। ]
#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ১৫
.
বিহান কিছুক্ষণ নুসরাতের দিকে তাকিয়ে নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে গেমস খেলায় মনোযোগ দিল। নুসরাত বুঝল তার ভাইটার মনে এখনও অনেক অভিমান জমে আছে। নুসরাত গুটিগুটি পায়ে ধীরগতিতে বিহানের পাশে গিয়ে বসল। বিহান অনেক কষ্টে ফোনের দিকে নিজের দৃষ্টি আটকে রেখেছে। ভুল করেও তাকাচ্ছে না নুসরাতের দিকে। চোখ টলমল করে উঠছে, কিন্তু জোর করে সেই জল চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরতে দিচ্ছে না। সৌহার্দ্য এসে সিঙ্গেল সোফার হ্যান্ডেলের ওপর এসে বসল। নুসরাত সৌহার্দ্যর দিকে তাকাতেই সৌহার্দ্য কাঁধ ঝাকালো, অর্থাৎ ‘এবার তুমিই সামলাও’। নুসরাত বিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” পিচ্চু! কথা বলবি না?”
বিহান দাঁতে দাঁত চেপে ফোনের স্ক্রিন দেখছে। নুসরাত আস্তে করে বিহানের কাঁধে হাত রাখতেই বিহান হাত সরিয়ে দিল। নুসরাত ঘাড় বাঁকা করে বিহানের দিকে আরও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
” এখনও রেগে আছিস আমার ওপর?”
বিহান ফোনে স্ক্রিনে চোখজোড়া আবদ্ধ রেখেই বলল,
” রাগ কেন করতে যাব। যারতার ওপর রাগ করা যায়না?”
” আমি যে সে?”
” আমার কাছেতো তাই।”
নুসরাত এবার করুন স্বরে বলল,
” আচ্ছা সরি বলেছিতো কতবার। আমিতো কতবার বলেছি আমি ভুল করেছি। একবছর যাবত সরি বলছি। সেটা যথেষ্ট না?”
বিহান কঠোর স্বরে বলল,
” সরি বলার দরকার নেই আমি রেগে নেই।”
” তাহলে ঠিককরে কথা বল?”
বিহান কিছু বলল না। নুসরাত মুচকি হেসে বলল,
” একটা ভালো খবর দেওয়ার আছে তোকে।”
বিহান ভ্রু কুচকে তাকাল নুসরাতের দিকে। নুসরাত মুচকি হেসে বলল,
” তুই মামা হতে চলেছিস।”
বিহান অবাক চোখে তাকিয়ে রইল নুসরাতের দিকে। সৌহার্দ্যও অবাক হয়ে গেল। খুশি হয়ে প্রায় দৌড়ে এসে নুসরাতের পাশে বসে বলল,
” সিরিয়াসলি?”
নুসরাত মাথা নাড়ল। বিহান এখনও অবাক দৃষ্টিতে দেখছে নুসরাতকে। আস্তে আস্তে ওর মুখেও হাসি ফুটে উঠল। ও খুশি হয়ে কিছু বলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিল। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইল। নুসরাত বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” যেটা পারিস না সেটা করার চেষ্টা না করলে হয়না?”
বিহান এবার আস্তে আস্তে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে হুটি করেই জড়িয়ে ধরল নুসরাতকে। নুসরাতও মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরল ওকে। সৌহার্দ্য বুক থেকে পাথর নামল একপ্রকার। যাক দুজনের মান অভিমান ভাঙলো তাহলে। সৌহার্দ্য হাতভাজ করে দেখছে এদের। বিহান একদম বাচ্চাদের মত করে বলল,
” আমার আগে আর কাউকে জানাস নি তো?”
নুসরাত হেসে বলল
” উমহুম! শুধু তোর ভাইয়াকে বলেছি।”
” তাহলে ঠিকাছে।”
” এখনও আগের মতই হিংসুটে আছিস।”
বিহান নুসরাতকে আরেকটু ভালোভাবে জড়িয়ে ধরে বলল,
” আপুটা তো আমারই।”
সৌহার্দ্য ভ্রু কুচকে বলল,
” ও হ্যালো? এটা আমারও আপু।”
বিহান নুসরাতকে ছেড়ে একটু হিংসুটে স্টাইলে বলল,
” হ্যাঁ হ্যাঁ জানি সেটা এতবার বলার কী আছে?”
সৌহার্দ্য হাসল কিন্তু কিছু বলল না। বিহান নুসরাতের দিকে তাকিয়ে অবুঝদের মত বলল,
” আচ্ছা বেবিটা কবে আসবে?”
নুসরাত অবাক হয়ে বলল,
” তুই কী সত্যি বাচ্চা হয়ে গেছিস পিচ্চু!”
সৌহার্দ্য হেসে দিয়ে বলল,
” ও আবার বড় ছিল কবে?”
বিহান বলল,
” আচ্ছা শোন আপু আজ কিন্তু এখানেই থাকবি। আমি তিনজনের জন্যেই খাবার অর্ডার করছি।”
নুসরাত বলল,
” বসতো।অর্ডার করতে হবেনা। আজ আমি রান্না করছি।”
সৌহার্দ্য উচ্ছসিত কন্ঠে বলল,
” ওয়াও! মাংস ভুনা প্লিজ!”
বিহানও তাল মিলিয়ে বলল,
” হ্যাঁ মাংস ভুনা।”
নুসরাত বিরক্তি প্রকাশ করে বলল,
” আচ্ছা ঠিকাছে কানের মাথা খাস না তো।”
তিনজনই এই ব্যাপারে একদফা মন খুলে হেসে নিল। এরপর শুরু করল তাদের খুনশুটিময় আড্ডা।
______________
তুর্বী বিরক্তি নিয়ে হাত ভাজ করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। আজ বসের সাথে কথা বলেছিল ওকে ভালো কোন নতুন প্রজেক্টে কাজ করতে দেওয়ার ব্যাপারে কিন্তু ওর বস সেই কমন কিছু ডায়লগ দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। ও এখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রিখিয়ার জন্যে ওয়েট করছে। রিখিয়া বলেছে সিএনজি নিয়ে এই রোড দিয়েই আসবে। এসব ভাবতে ভাবতেই একটা সিএনজি ওর সামনে এসে থামল। ভেতরে থেকে রিখিয়া বলে উঠল,
” উঠে এসো?”
তুর্বী মুখ ফুলিয়ে উঠে বসল। সিএনজি আবার চলতে শুরু করল। তুর্বীকে এমন বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিখিয়া বলল,
” কী ব্যপার? মেজাজ এত খারাপ হয়ে আছে কেন?”
তুর্বী বিরক্তি ঝেড়ে বলল,
” আর বলিস না ইয়ার। বসকে বললাম সবটা। কিন্তু সে কী বলল জানিস?”
” কী বলল?”
” তুমি এখনও নতুন। এখনও বড় প্রজেক্টের জন্যে রেডি নও। আরেকটু একপিরিয়েন্স চাই। ব্লা ব্লা ব্লা।”
” হ্যাঁ তো কিছুদিন ওয়েট করো। ঠিক দেবে।”
” আরে তুই বুঝতে পারছিস না আমি বুড়ো হয়ে যাবো সিনিয়র আর্কিটেক্ট হতে হতে।”
রিখিয়া হাসল। মেয়েটা এত ছটফটে কেন? তুর্বী অাবার বলল,
” তারওপর বস আবার ব্যাংকক যাবে কয়েক মাসের জন্যে।”
রিখিয়া অবাক হয়ে বলল,
” তাহলে ওপার জায়গায় কে বসবেন?”
” কী জানি? হয়ত ওনার ছেলে।”
” তাহলেতো ভালোই! ওনার ছেলেকেই বলবে। ইয়াং তো। হয়ত তোমার প্রবলেম টা বুঝবে।”
তুর্বী একটু হেলান দিয়ে বলল,
” আমার প্রবলেম আমি মরার আগে শেষ হবেনা।”
রিখিয়া কিছু বলবে তার আগেই তুর্বীর ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে ওর মা ফোন করেছে। তুর্বী বিরক্ত হয়ে বলল,
” এমনিতেই মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। এখন এই মহিলার ফ্যাচফ্যাচানি শুনতে হবে।”
তুর্বী ফোন রিসিভ করে বলল,
” হ্যাঁ বলো।”
ওপাশ থেকে ওর মা বলল,
” টাকা লাগবে। কালকে হাজার পারেন পাঁচ টাকা পাঠিয়ে দিস।”
তুর্বী দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” হ্যাঁ সেই। আমি তো টাকার ফ্যাক্টরি।”
” ওই এসব ত্যাড়া কথা বলছিহ কেন? টাকা লাগবে তাইতো চাইছি।”
তুর্বী অধৈর্য হয়ে বলল,
” আচ্ছা এত টাকা দিয়ে কী কর বলোতো? মাত্র দুজন মানুষ তোমরা। ভাইয়ের পড়ার খরচ আর তোমাদের দুজনের খেতে এত টাকা লাগে?”
” এখন তুই কী আমার কাছে হিসেব চাইবি নাকি? কটা টাকা দিস বলে এখন খোটাও শুনতে হবে?”
তুর্বী চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলল,
” খোটা কখন দিলাম আজব! আচ্ছা পাঁচ হাজার তো? পাঠিয়ে দেব শান্তি?”
” হ্যাঁ একটু তাড়াতাড়ি।”
বলে ফোনটা রেখে দিল। তুর্বী বিরক্তি নিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। নাকের ডগা লাল হয়ে উঠেছে ওর। রিখিয়া বুঝতে পারছে যে তুর্বী কান্না আটকানোর চেষ্টায় আছে। রিখিয়া তুর্বীর কাঁধে হাত রেখে বলল,
” তুমি তো জানো উনি এমনই কষ্ট কেন পাচ্ছো?”
তুর্বী নাকটা একটু টেনে হেসে দিয়ে বলল,
” ছাড়তো! ওই মহিলার কথা কে শোনে।”
রিখিয়াও আর কিছু বলল না। দুজনেই চুপচাপ রইল। ফ্লাটে পৌছে তুর্বী আগে ওয়াসরুমে গেল। রিখিয়া দুজনের ব্যাগই গুছিয়ে রাখতে গিয়ে ওর ব্যাগের চেইন খোলা থাকায় কিছু জিনিস নিচে পরে গেল। রিখিয়া ওগুলো ওঠাতে গিয়ে বিহানের সেই কার্ডটা চোখে পরল। আর মনে পরল বিহানের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো। বিহানের বলা শেষ কথাটা। আচ্ছা লোকটা ওকে এত সাহায্য করল, তারওপর ওর জন্যে লোকটার অপমানও হয়েছে। তাই ও যদি বিহানের সাথে একটা দিন একটু কফি খেতে গেলে কী এমন হবে? শুধু যাবে, কফি খাবে, কিছক্ষণ থাকবে এরপর চলে আসবে। এটুকুই তো। এটুকুর জন্যে যাওয়াই যায়।
______________
বিহানের ফ্লাট থেকে ওর সাথে ব্রেকফাস্ট করে একবারেই নিজেদের বাড়িতে এল সৌহার্দ্য আর নুসরাত। ওদের দুজনকে একসঙ্গে বাড়িতে ঢুকতে দেখে মিসেস নাহার এগিয়ে এসে বললেন,
” কীরে নুসু? কাল বাড়িতে এসে একটু পরেই বেড়িয়ে গেলি? এমন করে কেউ? কত চিন্তা হচ্ছিল জানিস?”
নুসরাত হেসে বলল,
” ঠিক আছিতো মা। আর তোমার জামাইও চলে আসবে দুপুরে।”
সোফায় বসে থাকা শফিক রায়হান বললেন,
” কাল সারারাত বিহানের বাড়িতে ছিলে দুজন?”
নুসরাত কিছু বলার আগেই সৌহার্দ্য বলল,
” হ্যাঁ ছিলাম। ভাই হয় ও আমাদের। তাই একরাত ওর কাছে থেকে আসাটা অন্যায় নাকি?”
নুসরাত ওর বাবার পাশে বসে বলল,
” বাবা পিচ্চুটার কথা খুব ভালো মনে পরছিল। তাই ওর কাছে একটু থেকে এলাম।”
শফিক রায়হান কঠিন কন্ঠে বললেন,
” তোমরা কী বুঝতে পারছ না ওকে এভাবে সাপোর্ট করে, তোমরা ওকে আরও বিগড়ে দিচ্ছো? তোমাদের এসব আল্লাদে ও বুঝতেই পারেনা যে ও ভুল করছে।”
সৌহার্দ্য বলল,
” এখন কী করছে জানিনা। কিন্তু আগে ও কোন ভুল করেনি।”
” আচ্ছা? এত নিশ্চিত কীকরে তুমি?”
” আমার নিজের ভাইয়ের ওপর বিশ্বাস ছিল। আর এখনও আছে। আর তাছাড়াও তোমরা কেউই নিজের চোখে দেখনি কিছু।”
শফিক রায়হান হাত ভাজ করে বলল,
” আচ্ছা? এত বড় বড় কথা বলছ? তাহলে সত্যি যদি কোনদিন তুমি নিজেই ওকে কোন অন্যায় করতে দেখ? যদি সত্যি ভবিষ্যতে যদি প্রমাণসহ ওর কোন অপরাধ তোমার চোখে পরে তাহলে?”
সৌহার্দ্য শক্ত কন্ঠে বলল,
” সেদিন আমি নিজে ওকে ত্যাগ করব।”
#চলবে…
#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ১৬
.
সৌহার্দ্যর কথা শুনে উপস্থিত সবাই চমকে উঠল। কেউ ভাবতেও পারেনি সৌহার্দ্য এতটা আত্মবিশ্বাসের সাথে এরকম একটা কথা বলে ফেলবে। সৌহার্দ্যর কথা শুনে নুসরাত অবাক হয়ে গেল। অবাক কন্ঠে বলল,
” তুই এসব কী বলছিস ভাই?”
” ঠিকই বলছি। আর আমি জানি বিহান এমন কিছুই করবে না।”
বলে ওপরে যেতে নিলেই শফিক রায়হান বলে উঠলেন,
” দাঁড়াও! কথা আছে তোমার সাথে।”
সৌহার্দ্য দাঁড়িয়ে গেল। তারপর সোফায় গিয়ে বসল। কারণ ও ওর বাবাকে যথেষ্ট সম্মান করে। বিহানের ব্যপারটা সাইডে রাখলে শফিক রায়হানের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক সৌহার্দ্যর। সৌহার্দ্য বসতেই শফিক রায়হান বললেন,
” তোমাকে আগেও বলেছিলাম আমার অফিসে বসতে কিন্তু তুমি বসোনি। কী কর সেটাও জানিনা। আপাতত কী খুব ব্যস্ত?”
সৌহার্দ্য ব্যপারটা বুঝতে না পেরে বলল,
” নাহ তেমন না। কেন?”
” আমাকে কয়েক মাসের জন্যে ব্যাংকক যেতে হবে। কদিন পর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কালকেই যেতে হচ্ছে। তাই তোমাকে ততদিন অফিসটা সামলাতে হবে। পারবেতো?”
সৌহার্দ্য চুপ করে কিছুক্ষণ বসে রইল। বাবা যদি চেয়ারে না বসে তাহলেতো ওকেই বসতে হবে কিছু করার নেই। ইচ্ছে না থাকলেও মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলল,
” হুম পারব। তুমি নিশ্চিন্তে যেতে পারো।”
শফিক রায়হান বললে,
” ভালো করে ভেবে বল। সবটা সামলাতে পারবে তো?”
” চিন্তা করোনা আমি সবটা সামলে নেব। তুমি শুধু রাতে আমাকে একবার সবটা বুঝিয়ে দিও তাহলেই হবে।”
” সন্ধ্যায় রুমে চলে এসো।”
বলে শফিক রায়হান রুমে চলে গেলেন। নিজের বাবার যাওয়ার দিকে কিছুদিন তাকিয়ে থেকে নুসরাত সৌহার্দ্যকে বলল,
” একটা কথা কিন্তু বাবা ঠিকই বলেছে ভাই। তুই অফিসে কেন বসিস না? বাবার কাছে টাকাও চাস না। তাহলে টাকাগুলো কোথায় পাস?”
মিসেস নাহারও চিন্তিত কন্ঠে বলল,
” সত্যিই তো, করিস টা কী তুই?”
সৌহার্দ্য কিছু না বলে হাসল। নুসরাত বা মিসেস নাহারও কিছুই বুঝলনা। এমন কী বলল সৌহার্দ্য যার কারণে ওরা হাসল? কিন্তু সৌহার্দ্যর কাছে কিছু জানতেও চাইল না কারণ ওনারা জানেন সৌহার্দ্য কিছু বলবে না। তাই আপাতত আর কিছুই জিজ্ঞেস করলোনা।
_____________
রাতে ডিনার করতে রিখিয়া কিছু একটা ভেবে চলেছে। তুর্বী প্রথমে খেয়াল না করলেও এখান খেয়াল করছে। তাই খাবার চিবুতে চিবুতে বলল,
” কীরে? কী ভাবছিস?”
রিখিয়া আনমনেই খেতে খেতে বলল,
” বিহানের কথা।”
তুর্বী পুরো বিষম খেয়ে গেল। কোনরকমে কাশি থামিয়ে বলল,
” বাপড়ে! খেতে বসেও ওর কথাই ভাবছিস? কেস এতদূর এগিয়ে গেছে?”
রিখিয়া ভ্রু কুচকে তুর্বীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” সবসময় উল্টোপাল্টা কথা। আসলে কফি খেতে যাব কী-না ভাবছিলাম।”
” চলে যা না। কফিই তো খাবি সমস্যা কোথায়?”
রিখিয়া বিভ্রান্তি নিয়ে বলল,
” বলছ?”
তুর্বী মুখে খাবার পুরতে পুরতে বলল,
” হ্যাঁ বলছিতো চলে যা।”
তুর্বীর কথায় রিখিয়াও এবার একটু ভরসা পেল। ঠিক করল যে খেয়েই বিহানকে একটা ফোন করবে। তুর্বী বিরক্তি নিয়ে খাচ্ছে, সেটা দেখে রিখিয়া বলল,
” তুমি আবার কী নিয়ে বিরক্ত?”
তুর্বী বিরক্তি নিয়ে বলল,
” আর বলিস না। কদিন পর থেকে অফিসে বসের ছেলে বসবে। এমনিতেই এত প্যারায় আছি। এখন আবার এই নতুন বস কেমন হবে কে জানে?”
” এত চিন্তা করোনা তো। এমনও তো হতে পারে ওনার ছেলে খুব ফ্রেন্ডলি হল। আর তোমারও কাজে সুবিধা হল।”
তুর্বী হতাশার একটা শ্বাস ফেলে বলল,
” আমার কপাল কোনদিন এত ভালো হয় না রে।”
রিখিয়া হেসে দিয়ে বলল,
” তোমার ভাগ্য কী তুমি দেখে বসে আছ?”
” আরে বুঝি, বুঝি।”
” কচু বোঝ।”
_____________
বিহান ব্যালকনির ফ্লোরে বসে বিয়ারের বোতলে চুমুক দিচ্ছে আর খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। সৌহার্দ্য থাকলে ভালোই হত। কিন্তু ওর মামু পছন্দ করে না তাই ও কখনও সৌহার্দ্যকে নিজে থেকে ডাকেনা ওর কাছে, সৌহার্দ্য নিজে থেকেই আসে। কিন্তু এই সময়গুলো বিহানের একা লাগে, খুব বেশি একা লাগে। বারবার নিজের মনকে জিজ্ঞেস করে ওর সাথেই কেন হল এরকম? ওরও তো একটা সুন্দর পরিবার আছে, সেই পরিবারে সবার সাথে হেসেখেলে কত সুখী ছিল ও, কত আনন্দের ছিল দিনগুলো। কিন্তু এখন ও নিঃস্ব, একেবারেই নিঃস্ব। একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবারও বিয়ারের বোতলে লম্বা করে একটা চুমুক দিল। এরমধ্যেই বিহানের ফোন বেজে উঠল। ফোনের আওয়াজে চমকে উঠল বিহান। এইসময়ে কে ওকে ফোন করবে? সৌহার্দ্য? ও স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল আননোন নম্বর। ও নম্বরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রিসিভ করে বলল,
” কে?”
” আমি রিখিয়া।”
রিখিয়া নামটা শুনে অবাক হল বিহান। এরপরেই মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। ও মুখে হাসি রেখেই বলল,
” যাক, অবশেষে ফোন এল তাহলে? কেমন আছো?”
রিখিয়ার বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
” জি আলহামদুলিল্লাহ্। আপনি ভালো আছেন?”
” এতক্ষণ ছিলাম না। এখন আছি। তো কী ভাবলে? আসবে?”
রিখিয়া নিজের সব সংকোচ কাটিয়ে উঠে বলল,
” হ্যাঁ আসব। কবে আর কোথায় আসতে হবে?”
বিহান নিঃশব্দে হাসল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
” কালকেই করছি। আমি এড্রেস তোমাকে পাঠিয়ে টেক্সট করে দেব? নাকি ফ্লাটের সামনে থেকে পিক করব?-
রিখিয়া দ্রুত বলল,
” ন্ না। আমায় এড্রেস দিয়ে দিলেঈ আমি পৌছে যেতে পারব সমস্যা নেই।”
বিহান ভ্রু কুচকে বলল,
” আর ইউ শিউর?”
” ইয়া।”
” আচ্ছা রাখছি তাহলে?”
” হুম বাই।”
ফোনটা রেখে বিহান রিখিয়ার ফোনে এড্রেস পাঠিয়ে দিয়ে আবারও বাঁকা হাসি দিল। ও জানতো রিখিয়া ফোন করবেই। আর হলোও সেটাই। দেয়ালে হেলান দিয়ে বোতলে চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইল।
এদিকে রিখিয়ার ফোনটা রেখে নিজেই লজ্জা পাচ্ছে। এর আগে কোন ছেলের সাথে এভাবে একা দেখা করতে বা সময় কাটাতে যায় নি। কিন্তু কাল যাবে ভাবলেই কেমন যেন লাগছে ওর। আচ্ছা এমন কেন লাগছে? শুধু তো কফি খেতেই যাবে এত টেনশন আর উত্তেজনার কী আছে? এটা কেমন অস্বস্তি?
হঠাৎ করেই তুর্বীর চিৎকারে চমকে উঠল রিখিয়া। বুকে থু থু দিয়ে হাফানো কন্ঠে বলল,
” তুর! এভাবে চেঁচায় কেউ?”
তুর্বী খুশিতে রিখিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
” রিখু! আ’ম সো হ্যাপি।”
রিখিয়া তুর্বীকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
” কী হয়েছে সেটা বলবে?”
তুর্বী উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
” আমি আমার টোটাল ডিজাইন প্লান বলে বসকে একটা মেইল পাঠিয়েছিলাম মনে আছে?”
” হ্যাঁ তারপর?”
” সেটা এপ্রুভ হয়েছে এন্ড কাল আমার সাথে কথা বলতে চাইছেন উনি।”
রিখিয়া অবাক হয়ে বলল,
” কিন্তু তুমিতো বলেছিলে তোমার বস তোমাকে আরও একটু সময় নিয়ে আরও অভিজ্ঞ হতে বলেছে?”
” হ্যাঁ কিন্তু হয়তো ওনার এই মেইলটা পরে ভালো লেখেছে?”
” হুম। যাক, যাওয়ার আগে একটা ভালো কাজ করে দিয়ে যাবে তাহলে।”
তুর্বী খুশিতে ছটফট করে যাচ্ছে। রিখিয়া গালে হাত দিয়ে বলল,
” শান্ত হও। আর নিজের প্লানটা রি-চেক করে নাও। ভালো হবে।”
তুর্বী একটু জোরে চেঁচিয়ে বলল,
” কারেক্ট আছে!”
বলে দৌড়ে গিয়ে ল্যাপটপ আনতে গেল। রিখিয়া তুর্বীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে দিল।
_____________
তুর্বী আর রিখিয়া দুজনেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে। তুর্বী তো অফিস যাচ্ছে তাই সাজবেনা। ও নিজে রেডি হয়ে রিখিয়াকে রেডি হতে হেল্প করল। রিখিয়া বিরক্তি নিয়ে বলল,
” আরে এত সাজানোর কী ছিল?”
” চুপ কর তো। নে চল! লেট হয়ে যাবে।”
বলে তুর্বী রিখিয়াকে নিয়ে বেড়িয়ে গেল। রিখিয়া ওর গন্তব্যে পৌছে গেল। তুর্বী নিজের অফিসে ঢুকে একপ্রকার দৌড়ে যাচ্ছে বসে কেবিনে প্রচন্ড এক্সাইটেড ও। যেতে যেতে অনেকের সাথে ধাক্কাও লাগে। বসের কেবিনের দরজার কাছে গিয়ে বলে,
” মে আই কাম ইন স্যার?”
” কাম ইন।”
ভেতরে থেকে আওয়াজ আসতেই তুর্বী দ্রুতপদে ভেতরে ঢুকে এগুতে গিয়ে কার্পেটে আটকে পরে গেল। ব্যাথা পেয়ে চোখ মুখ খিচে বসে আছে ও। নিজেই নিজেকে মনে মনে বকাও দিল। হঠাৎ কেউ ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। লোকটার দিকে তাকিয়ে তুর্বী অবাক হয়ে গেল।
#চলবে…