ভালোবাসার অনুভূতি – পর্ব ৫১

0
1176

:
#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকা‌ঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ51

কথাটা বলে মেঘ আর এক মুহুর্তও দাড়ালো না।রুমের দরজা খুলে হনহন করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।বাইরে এসে দ্রুত পায়ে হাটতে হাটতে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেলো।মেঘ মাথা উঠিয়ে সামনে তাকাতেই ওর ভয়ে হাত পা কাপতে লাগলো।এতোক্ষন যে ভয়টা পাচ্ছিলো সেটাই হলো।এখন কি হবে?ওর সামনে আহির দাড়িয়ে আছে।আহিরের চোখে মুখে স্পষ্ট রাগের ছাপ।মেঘ একটা শুকনো ঢোক গিলে কাপাকাপা স্বরে আহিরকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“ভ-ভাইয়া ত-তুই এইসময় এ-এখানে কি করছিস?”

আহির মেঘের প্রশ্নের অ‍্যান্সার না দিয়ে আদেশের স্বরে মেঘকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“মেঘ তুই এখান থেকে যা।আমি একটু পর আসছি।”

“এ-একটু প-পর আসবি মানে?এক্ষুনি চ-চল আমার স-সাথে।সবাই হয়তো আমাদের জ-জন‍্য অপেক্ষা করছে।”

আহির আবারও একই ভঙ্গিতে বললো

“মেঘ আমি তোকে এখান থেকে যেতে বলেছি।”

এই মুহূর্তে আহিরকে দেখে মেঘের ভিষন ভয় লাগছে।’ও’ ভালো করেই বুঝতে পারছে ওর সামনে বসে আহির নিজের রাগটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।’ও’ এখান থেকে চলে গেলে হয়তো আজকে আবিরের আর রক্ষা থাকবে না।মেঘ মনে একটু সাহস যুগিয়ে আহিরের কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর হাত ধরে বললো

“আমি তো যাবোই,তুইও আমার সাথে চল প্লিজ।”

মেঘের কথা শেষ হতেই আহির মেঘের হাতটা ওর হাতের উপর থেকে সরিয়ে দিলো।তারপর রক্ত চক্ষু নিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে রাগি কন্ঠে বললো

“তোকে আমি এখান থেকে যেতে বলেছি মেঘ।কথা কানে যাচ্ছে না?তুই এক্ষুনি এখান থেকে চলে যাবি।যা বাইরে সবাই তোর জন‍্য অপেক্ষা করছে।”

আহির এর আগে কক্ষনো মেঘের সাথে এভাবে কথা বলেনি।আহিরের এই রূপ দেখে কেনো যেনো ওর ভিষন ভয় লাগছে।কিন্তু যতোই ভয় লাগুক মেঘ মনে মনে ঠিক করে নিলো ‘ও’ আহির কে সাথে না নিয়ে এখান থেকে একপাও নড়বে না।’ও’আহিরের রাগ ঠান্ডা করার কোনো উপায় না পেয়ে সোজা গিয়ে আহির কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।তারপর আহিরের বুকে মুখ গুজে অসহায় কন্ঠে বললো

“প্লিজ ভাইয়া একটু শান্ত হ।এখন উল্টাপাল্টা কিছু করিস না।দেখ বাড়ি ভর্তি মেহমান আছে এর মধ‍্যে ঝামেলা হলে আমাদের মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে।”

মেঘ আহিরকে জড়িয়ে ধরলেও আহির ওকে জড়িয়ে না ধরে একদম সোজা হয়ে দাড়িয়ে আছে।ওর হাত দুটো মুঠো বন্ধি করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।আহির শক্ত কন্ঠে বললো

“মেঘ আমি তোকে এখান থেকে যেতে বলেছি।তুই জানিস এক কথা বারবার বলতে আমার ভালো লাগে না।”

আহিরের কথা শুনে এইবার মেঘের রাগ উঠে গেলো।’ও’ আহিরকে ওভাবে জড়িয়ে রেখেই ওর বুক থেকে মাথা তুলে রাগি চোখে ওর চেহারার দিকে তাকালো।তারপর ঝাড়ি মেরে বললো

“ওই তুই ভালোয় ভালোয় এখান থেকে আমার সাথে যাবি নাকি তোর সব চুল টেনে ছিড়ে দিবো?আরেহ হিয়ান ভাইয়া আর আলিশা আপুর এতো বছরের সম্পর্ক টা সবেমাএ পূর্নতা পেতে চলেছে।তুই কি চাস এখন একটা ঝামেলা করে সবকিছু শেষ করে দিতে?ওদের এতো দিনের স্বপ্ন ভেঙে গুড়িয়ে দিতে চাস?”

মেঘের কথা শুনে আহির জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো।তারপর একহাত মেঘের পিঠে রেখে অন‍্য হাত দিয়ে ওর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললো

“ওকে আমি এখন কোনো ঝামেলা করবো না।তোর সাথে অনুষ্ঠানে যাবো।তবে আমার একটা শর্ত আছে।”

আহিরের কথা শেষ হতেই মেঘ প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে আহিরের দিকে তাকালো।মেঘকে এভাবে তাকাতে দেখে আহির বেশ শান্ত স্বরে বললো

“এতোক্ষন কি কি হয়েছে সবটা শুরু থেকে আমাকে খুলে বল।ওই আবির তোকে এমন কি বলেছে যার জন‍্য তুই এভাবে রিয়‍্যাক্ট করেছিস?”

কথাটা শেষ হতেই মেঘ চোখ বড় করে করে আহিরের দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বললো

“তারমানে তুই কিছুই শুনিস নি?তাহলে এতো রেগে আছিস কেনো?”

” সবটা শুনিনি।তবে তোর শেষের কথা গুলো শুনেছি।সেগুলো শুনে যা বুঝলাম তাতে আবির নিশ্চয়ই তোকে খুব খারাপ কিছু বলেছে তাই তুই ওই ভাবে রিয়েক্ট করেছিস।আর নাহলে যেই মেয়ে কারো সাথে উচু গলায় কথা বলে না,সে একটা ছেলের ওভাব কলার ধরলো?এইবার কথা না পেচিয়ে সোজা ভাবে বল কি হয়েছিলো।”

মেঘ আহিরকে ছেড়ে দিয়ে এতোক্ষন যা যা ঘটেছে শুরু থেকে সবটা বললো।মেঘ ভেবে ছিলো সবটা শুনে আহির আরো রেগে যাবে।কিন্তু আহির মেঘের ভাবনাকে ভূল প্রমান করে হো হো করে উচ্চস্বরে হেসে দিলো।আহির কে এভাবে হাসতে দেখে মেঘ ভিষন অবাক হলো।আহির রকম হাসি থামিয়ে বিদ্রুপের স্বরে বললো

“বুঝলি বনু বাংলায় একটা প্রবাদ বাক‍্য আছে।পিপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে।যেমন আবির আজকে নিজের জিবনের শেষ্ঠ ভুলটা করে ফেললো।আর ওর সাথে আমি কি ঝামেলা করবো?এটা শোনার পর ওর জন‍্য আমার ভিষন কষ্ট হচ্ছে।আহারে বেচারার জন‍্য যে কি অপেক্ষা করছে সেটা হয়তো আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।”

আহিরের কথা শুনে মেঘ ভ্রু কুচক বললো

“মানে?ওর জন‍্য তোর কষ্ট হচ্ছে কেনো?”

মেঘের কথা শুনে আহির এক হাত মেঘের কাধে রেখে বললো

“এসব তুই বুঝবি না।চল আমরা এখন ফাংশনের ওখানে যাই।আর যেতে যেতে আমরা দুই ভাই বোন মিলে আবিরের জন‍্য একটু দোয়া করি।”

কথাটা বলতে বলতে আহির মেঘকে নিয়ে বাইরে চলে গেলো।আর কেউ একজন আড়াল থেকে আহির আর মেঘের জড়িয়ে ধরার পিক তুলে রাখলো।শুধু এটাই না,,তখন যে আবির মেঘের অনেক টা কাছে এসেছিলো সেই পিকও তুলেছে।আর সবচেয়ে বড় কথা আহানের সাথে মেঘ যখন ক্লোজ হয়েছিলো তখন ওদের শুধু অভিই দেখেনি।ওখানে আরো একজন ব‍্যাক্তি ছিলো যে ওদের স্পেশাল মোমেন্ট টা ক‍্যামেরা বন্ধি করে নিয়েছে।
_____________________________

মেঘ আর আহির ফাংশনের ওখানে আসার পর আহির গিয়ে মিহিরের পাশে বসে পড়লো।তবে এতোক্ষন যা যা ঘটেছে সেই বিষয়ে কিছুই বললো না।কারন আহির নিজেও চায়না এখন কোনো বাজে ঘটনা ঘটুক।’ও’ চায় বিয়েটা ভালোয় ভালোয় মিটে গেলে সবটা আহান আর মিহির কে বলবে।তবে ও বাইরে থেকে নিজেকে যথা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলেও,ভিতরে ভিতরে রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।ইচ্ছে করছে এক কোপে আবিরের শরীর থেকে ওর মাথাটা আলাদা করে দিতে।আহির নিজেকে শান্ত রাখতে পকেট থেকে ফোন আর ব্লুটুথ বের করে তাতে কানেক্ট দিয়ে গান শুনতে লাগলো।

এদিকে মেঘ এসে দেখলো পার্লারের লোকেরা সাড়িকা,সাঈফা,আলিশা কে মেহেন্দি পড়াচ্ছে।দিশা শুধুমাত্র এক হাতের উপরের পিঠে দিয়ে বসে আছে।মেঘ আলিশার কাছে এগিয়ে গেলো ওর হাতের ডিজাইন দেখার জন‍্য।কিন্তু গিয়ে যা দেখলো তাতে ওর পেট ফেটে হাসি আসলো।আলিশা আর হিয়ানের বাম হাত এবং ডান হাতের তালু একসাথে মিশিয়ে দুজনের হাতে একটা ডিজাইন আকছে।আর হিয়ান রাগি চোখে আলিশার দিকে তাকিয়ে আছে।হিয়ানের এসব হাতে মেহেদি টেহেদি আকা একদম পছন্দ নয়।কিন্তু আলিশার ন‍্যাক‍্যা কান্না শুনে নিজের হাতেও মেহেদি দিতে বাধ‍্য হচ্ছে।তবে সব দোষ যে মেয়েটা মেহেদি আকছে ওই মেয়েটার।ওই মেয়েটাই আলিশাকে এই ডিজাইন টা আকানোর বুদ্ধি দিয়েছে।হিয়ান দাতে দাত চেপে বললো

“শালা বিয়ে করতে এসে এখন কি সব সহ‍্য করতে হচ্ছে।শেষ পযর্ন্ত কিনা মেয়েদের মতো হাতে মেহেদি দিচ্ছি?এর থেকে তো ভালো ছিলো পাএীকে তুলে নিয়ে গিয়ে কাজি অফিসে গিয়ে বিয়েটা সেরে ফেলে সোজা হানিমুনে চলে যেতাম।তাহলে আর সং সেজে আমাকে এখানে বসে থাকতে হতো না।”

মেঘ এতোক্ষন হাসি টা চেপে রেখে ছিলো।কিন্তু হিয়ানের কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো।মেঘকে হাসতে দেখে হিয়ান মৃদ‍্যু ধমক দিয়ে বললো

“আমাকে এখানে এরা দুজন মিলে টর্চার করছে আর তুই আমার বোন হয়ে এভাবে চুন্নির মতো হাসছিস?লজ্জা করে না তোর ভাইয়ের কষ্ট দেখে এভাবে ভুতের মতো হাসতে?”

হিয়ানের কথা শুনে মেঘ হা হা করে হেসে দিয়ে বললো

“নাহ একদমই লজ্জা করে না।”

হিয়ান রেগে মেঘকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পার্লারের মেয়েটা অনুরোধের কন্ঠে বললো

“স‍্যার কথা বলবেন না প্লিজ।আপনি কথা বলছেন আর আপনার হাতটা নড়ছে।এভাবে নড়লে আমি ডিজাইন টা ঠিক ভাবে আকতে পারবো না।”

হিয়ান রাগি কন্ঠে বললো

“প্রথমে আপনি আমার নড়াচড়া বন্ধ করেছেন।তারপর এখন আবার কথা বলাও বন্ধ করতে বলছেন?আপনাকে তো আমি মেরে বস্তায় ঢুকিয়ে নদীতে ফেলে দিয়ে আসবো।”

হিয়ানের কথা শুনে মেয়েটি বিরক্তির কন্ঠে বললো

“স‍্যার আমাকে আপনার বস্তায় ভরে পানিতে ফেলতে হবে না।আপনি বললে আমি নেজেই গিয়ে ব্রিজ থেকে নদীতে ঝাপ দিবো।কিন্তু তার আগে আপনি আমাকে মেহেদি আকাটা শেষ করতে দিন।আপনার এই বকবকের জন‍্য আমি ডিজাইন ভুলে যাচ্ছি।”

মেয়েটার কথা শুনে মেঘ আরো জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগলো।আলিশা ঠোট চেপে হাসছে।চারপাশে লোক থাকার কারনে জোড়ে হাসতেও পারছে না।আর হিয়ান নাক ফুলিয়ে একবার মেঘের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার আলিশার দিকে তাকাচ্ছে।
_____________________________

অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে।হাসি মজায় সন্ধ‍্যাটা যে কখন কেটে গেলো কেউ টেরই পেলো না।মেঘ চেয়ারের উপর বসে নিজের হাতের তালুর দিকে এক ধ‍্যানে তাকিয়ে আছে।ওর ঠোটের কোনে মুচকি হাসি।ওর বাম হাতের তালুর ঠিক মাঝখানে মেহেদীর ডিজাইনের মধ‍্যে আহান লেখা।এটা মেঘ লিখতে বলেনি,আহান লিখতে বলেছে।মেয়েটা যখন ওকে মেহেদি পড়াচ্ছিলো তখন আহান এসে মৃদুৎ স্বরে মেয়েটা কে মেঘের হাতে নিজের নাম লিখতে বলে গেছে।মেঘ যখন আহানের নামটা দেখায় ব‍্যাস্ত ছিলো ঠিক তখনই অভি ষ্টেজে উঠে গিয়ে গান গাওয়ার জন‍্য আহানের নাম এনাউন্স করলো।অভির এনাউন্সমেন্ট কানে আসতেই মেঘ চমকে অভির দিকে তাকালো।দেখলো অভি আহানের দিকে তাকিয়ে একটা চোখ মারলো।আর আহান রাগি চোখে অভির দিকে তাকিয়ে আছে।চার পাশ থেকে ইয়ং জেনারেশন যারা আছে তারা সবাই এক প্রকার চিল্লাচিল্লি শুধু করে দিয়েছে আহানের গান শোনার জন‍্য।মেঘ মুখটা বাংলার পাচের মতো করে বসে আছে।কারন যেই ছেলেকে কখনো গুনগুন করতেও শোনেনি সে নাকি আবার গান গাইবে।এতো গম্ভীর আর সিরিয়াস টাইপের ছেলে কোনো গানের সুর তুলতে পারবে কিনা সেটা নিয়েও মেঘের যঠেষ্ট ডাউট আছে।

এদিকে অভি,হিয়ান,রিয়ান এসে আহানকে জোড় করে টেনে হিচরে ষ্টেজে উঠালো।আহান রাগি চোখে সবার দিকে তাকিয়ে রইলো।কিন্তু ওরা আহানের রাগটাকে পাএা না দিয়ে ওর হাতে গিটার ধরিয়ে দিয়ে গেলো।আহান গিটার টা হাতে নিয়ে এলোমেলো ভাবে টুং টাং শব্দ বাজালো।

আহানকে এভাবে গিটার বাজাতে দেখে মেঘ মাথাটা নিচু করে বিরবির করে বললো

“আজকে মনে হচ্ছে মান সম্মান সব শেষ।এই ছেলেকে দেখে তো মনে হচ্ছে ইনি গান তো দূরে থাক গিটারও বাজাতে পারে না।”

মেঘের কথাটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ষ্টেজের লাইট টা অফ হয়ে গেলো।আর একটা স্পট লাইট এসে আহানের উপরে পড়লো।তখনই মেঘের কানে ভেষে এলো

Subhan allah, subhan allah
Subhan allah, subhan allah
Subhan allah, subhan allah
Subhan allah, subhan allah

Chand sifarish jo karta hamari
Deta woh tumko bata
Sharm-o-haya ke parde gira ke
Karni hain humko khata

এইটুকু শুনে মেঘ মাথা তুলে সামনে তাকালো।অবাকে ওর চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেছে।আহান মেঘের দিকে তাকিয়ে গাইলো……

Zid hain ab to hai khud ko mitana
Hona hain tujhmein fanaa
Chand sifarish jo karta hamari
Deta woh tumko bata
Sharm-o-haya ke parde gira ke
Karni hain humko khata

Teri adaa bhi hain jhonke wali
Chhu ke ghuzar jaane de
Teri lachak hai ke jaise daali
Dil mein utar jaane de
Aaja baahon mein karke bahana
Hona hai tujhmein fanaa

Chand sifarish jo karta hamari
Deta woh tumko bata
Sharm-o-haya ke parde gira ke
Karni hain humko khata

Subhan allah, subhan allah
Subhan allah, subhan allah
Subhan allah, subhan allah
Subhan allah, subhan allah

মেঘ চোখ বন্ধ করে গানটা ফিল করছে।ও যেনো এখন নিজের মধ‍্যে নেই একটা ঘোড়ে চলে গেছে।আহান আবারও গাইলো

Hain jo iraade bata doon tumko
Sharma hi jaaogi tum
Dhadkanein jo suna doon tumko
Ghabra hi jaaogi tum
Humko aata nahi hai chhupana
Hona hai tujhmein fanaa

Chand sifarish jo karta hamari
Deta woh tumko bata
Sharm-o-haya ke parde gira ke
Karni hain humko khata
Zid hain ab to hai khud ko mitana
Hona hain tujhmein fanaa,….

আহানের গান গাওয়া শেষ হলে সবাই ক্লাপ দিতে লাগলো।মেঘ এখনো চোখ বন্ধ করেই আছে।চারা পাশের এতো চিল্লাচিল্লির শব্দও যেনো মেঘের কানের মধ‍্যে ঢুকছে না।আহান ষ্টেজ থেকে নামতে নামতে মেঘের অবস্থা দেখে মুচকি একটা হাসি দিলো।
_____________________________

সাড়িকা সাঈফা নিজেদের রুমে এসেছে হাতে লাগানো মেহেদি ধোয়ার জন‍্য।ওরা একটু পরই ডিনার করে বেড়িয়ে পড়বে অভিদের বাড়ির উদ্দ‍্যেশে।অলরেডি অনেকেই ডিনার করে চলে গেছে।ওরা যাষ্ট কয়েক জনই এখানে আছে।সাড়িকা হাত ধোয়ার জন‍্য ওয়াশরুমে ঢুকছিলো ঠিক তখনই আহির হনহন করে রুমে ঢুকে এসে খপ করে সাড়িকার হাত চেপে ধরলো।তারপর সাঈফার দিকে তাকিয়ে বললো

“ওই হবু শ্বশুরের মেজ কন‍্যা যাহ রুম থেকে বের হ।”

আহিরে এমন হঠাৎ করে আসায় সাঈফা আর সাড়িক দুজনের মুখই হা হয়ে গেলো।সাঈফা ভ্রু কুচকে বললো

“একে তো পারমিশন না নিয়ে রুমে ঢুকে পড়েছো।তার উপর আবার আমাকে আমার রুম থেকেই বের হতে বলছো?”

আহির ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে জবাব দিলো

“হ‍্যা বলছি!যাহ এক্ষুনি রুম থেকে বের হ।আমার কাজ আছে।”

সাঈফা মুখ বাকিয়ে বললো

“আমি কোথাও যাবো না।কাজ থাকলে সেটা আমার সামনে বসে করো আর না করলে যেতে পারো।দরজাটা ওই দিকে আছে।”

সাঈফার কথা শুনে আহির এক হাত নিজের পকেটে ঢুকিয়ে ওয়ালেট বের করলো।তারপর সেখান থেকে এক হাজার টাকার একটা নোট বের করে সাঈফার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো

“দেখ যদি এক্ষুনি দশ মিনিটের জন‍্য রুমটা ছেড়ে বেড়িয়ে যাস তাহলে এই হাজার টাকার নোট টা তোর।আর যদি না বেরোস তাহলে তোর দুই গালে গুনে গুনে দশটা থাপ্পর দিবো।এইবার দেখ কোন অফারটা চুজ করবি?”

সাঈফা ছো মেরে আহিরের হাত থেকে টাকাটা নিয়ে খুশীতে গদগদ হয়ে বললো

“অবশ‍্যই টাকা টাই নিবো।একহাজার টাকার জন‍্য রুম থেকে বের হওয়া তো অনেক সহজ কাজ,এর জন‍্য তো আমি রুমের বাইরের দারোয়ান হওয়ার জন‍্যও রাজি আছি।”

কথাটা বলেই সাঈফা বাইরে চলে গেলো।সাঈফা যেতেই সাড়িকা পিছনে থেকে চিল্লিয়ে বললো

“সাঈফুর বাচ্চা তুই বোন নামের কলঙ্ক।”

আহির সাড়িকার হাত চেপে ধরে রেখে দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা মধ‍্যে থেকে লক করে দিলো।তারপর সাড়িকার দিকে ঘুড়ে ওর এক হাত পিছনে মুচড়ে ধরে বললো

“তোর সাহস হয় কিভাবে আমার অবাধ‍্য হওয়ার?মেঘের কাজিনের বিয়ের দিন যে থাপ্পর গুলো গালে পড়েছিলো ওইগুলোর টেষ্ট কি ভুলে গেছিস?”

আহির সাড়িকার হাত মুচরে ধরায় সাড়িকার হাতে থাকা সব মেহেদি লেপ্টে যাচ্ছে।সাড়িকা আহিরকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে ঝাড়ি দিয়ে বললো

“আমি কখন তোমার কথার অবাধ‍্য হয়েছি?আজকে তো কোনো পিকও আপলোড দেইনি এফবি তে।তাহলে?”

আহির সাড়িকার হাত আরো জোড়ে মুচরে ধরে দাত কিড়মির করে বললো

“তোর হাতে যখন মেহেদি পড়াচ্ছিলো ওই সময় আমি ওই মেয়েটাকে বলেছিলাম তোর হাতে আহির লিখে দেওয়ার জন‍্য। কিন্তু তুই ওই মেয়েটা কে লিখতে মানা করেছিস।বলেছিস আমি তোর কেউ হইনা তাই তুই আমার নাম কিছুতেই হাতে লেখবি না।কেনো বলেছিস এই কথা?সবার সামনে আমাকে অপমান করতে খুব ভালো লাগে তোর তাইনা?”

এতো জোড়ে হাত মুচরে ধরায় সাঈফার চোখের কোনে পানি এসে পড়েছে।ও ছটফছ করতে করতে বললো

“অপমানের তো কিছু নেই।যেটা বলেছি একদম সত‍্যি বলেছি।তুমি শুধু আমার কাজিন হও এর বাইরে কিছু না।তাহলে আমি তোমার নাম আমার হাতে কেনো লিখবো?কখনো শুনেছো কেউ হাতে মেহেদি দিয়ে কাজিনের নাম লিখে?”

আহির সাড়িকার হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের ঘুড়িয়ে ওর বাহু শক্ত করে চেপে ধরে নিজের একদম কাছাকাছি নিয়ে আসলো।তারপর সাড়িকার চোখে চোখ রেখে বললো

“তুই আমার নাম হাতে লিখবি কারন আমি তোকে ভালোবাসি।খুব ভালোবাসি তোকে।আর সেটা আজকে থেকে না যখন থেকে ভালোবাসার মানেই বুঝতাম না তখন থেকে।সেই ছোট্ট বেলা থেকে তুই অন‍্য কাউকে ফ্রেন্ড বানালে আমার সহ‍্য হতো না।অন‍্য ছেলেদের সাথে কথা বললে আমার রাগ হতো।আর সেই রাগ আমি তোর উপরে ঝারতাম।তোকে ধরে মাইর দিতাম।”

সাড়িকা আহিরের কথা শুনে একটুও অবাক হলো না।’ও’ আহিরের হাব ভাব দেখে আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলো আহির ওকে পছন্দ করে।আহির নিজের মুখটা আরেকটু সাঈফার দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বললো

“তুই সব সময় আমার রাগটাই দেখেছিস।কখনো আমার ভালোবাসা টা বুঝতে চাস নেই।হ‍্যা মানছি আমি রাগের মাথায় এসে তোকে হার্ট করি কিন্তু রাগ কমে গেলে আবার সরিও তো বলি।তুই তো জানিস বল রেগে গেলে আমার মাথা ঠিক থাকে না।”

সাড়িকা চোখ বন্ধ করে আহিরের বুকের ঢিবঢিব শব্দ শুনছে।ওর হাত পা জমে গেছে।আহির সাড়িকার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে অসহায় কন্ঠে বললো

“তুই আমাকে কেনো বুঝিস না সাঈফা?কেনো সব সময় আমি যেটা বলি তার উল্টোটা করিস?জানিস তোর এই অবাধ‍্যতা আমাকে কতোটা পোড়ায়?কতোটা কষ্ট পাই তোর এমন ব‍্যাবহারে।আমার সেই কষ্ট গুলো রাগ হয়ে তোর উপরে আঘাত হানে।তোর অবহেলা গুলো আমাকে নির্দয় বানিয়ে দেয়।তাই আমি না চাইতেও আমি তোকে কষ্ট দিয়ে ফেলি।তুই কবে আমাকে বুঝতে পারবি সাড়িকা?”

শেষের কথাটা বলার সময় আহিরের গলাটা ধরে এলো।সাড়িকা অনুভব করলো ওর গালের উপরে তরল কিছু পড়েছে।’ও’ চট করে চোখ টা খেলে ফেললো।দেখলো আহির ওর কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।আর ওর চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পড়ছে।আহিরের এতক্ষনের বলা কথা শুনে সাড়িকা অবাক না হলেও ওকে কাদতে দেখে অবাক না হয়ে পারলো না।আহির কে এই প্রথম ‘ও’ কাদতে দেখছে।আচ্ছা আজকে কি ও একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে?হ‍্যা হয়তো ওই মেয়েটার সামনে বসে আহিরকে এভাবে বলাটা ওর ঠিক হয়নি।আহির ওকে ভালোবাসে জেনেও কেনো ওর দূর্বল জায়গায় এভাবে আঘাত করতে গেলো?সাড়িকা আলতো হাতে আহিরের চোখের পানি মুছে দিয়ে ওর ঠোটের সাথে নিজের ঠোট মিলিয়ে দিলো।হঠাৎ সাড়িকার এমন কান্ডে আহির জট করে চোখ খুলে সামনে তাকালো।’ও’ ভাবতেই পারেনি সাড়িকা এমন কিছু একটা করে ফেলবে।আহির কিছুক্ষণ ষ্টাচু হয়ে দাড়িয়ে থেকে সাড়িকার কোমরে হাত দিয়ে শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরে রেসপন্স করতে লাগলো।

#চলবে,,,,,,,

বিঃদ্রঃ একটু ঝামেলায় আছি তাই রি-চেইক করতে পারিনি,,ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here