#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ23
বউ সেজে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আছে মেঘ। ওর থেকে কিছুটা দূরে বেডের উপর বসে হাত দিয়ে নিজের মাথা চেপে ধরে আছে দিশা। টেনশনে দিশার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এই মুহূর্তে ওর ঠিক কি করা উচিৎ সেটা ‘ও’ নিজেও বুঝতে পারছে না। দিশাকে খুব চিন্তিত দেখালেও মেঘের চোখে মুখে কোনো রকম চিন্তের ছিটে ফোটাও নেই। ‘ও’ স্থির দৃস্টিতে দাতে দাত চেপে ড্রেসিং টেবিলের মিরোরের দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে এতোটা চুপচাপ দেখে দিশা বসা থেকে দাড়িয়ে রাগি কন্ঠে বললো
“হোয়াট’স রং উইথ ইউ মেঘ? এভাবে চুপচাপ বসে আছিস কেনো? এক্ষুনি আংকেল কে গিয়ে বল যে তুই এই বিয়েটা করতে চাস না। যাহ গিয়ে বিয়েটা ভেঙে দে।”
দিশার কথা শুনে মেঘ মিরোরের দিক থেকে চোখ সরিয়ে দিশার দিকে তাকালো। তারপর বেশ শান্ত স্বরে বললো
“কেনো?”
দিশা দাতে দাত চেপে বললো
“কেনো মানে? তুই জানিস না, তোর বিয়ে টা কার সাথে হতে যাচ্ছে?”
“হুম জানি তো।”
মেঘের কথা শুনে দিশা অসহায় কন্ঠে বললো
“জানিসই যখন তখন বিয়েটা কেনো ভেঙে দিচ্ছিস না মেঘ? আবীর তোকে শুধুমাত্র চাচ্চুর প্রোপার্টির জন্যে বিয়ে করতে চাইছে। ‘ও’ একদমই ভালো ছেলে নয়, ‘ও’ একটা লোভি ছেলে। ওর সার্থসিদ্ধি হাছিল করা হয়ে গেলে একদিন ‘ও’ তোকে ইউজ করা টিস্যুর মতো রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিবে। সব জেনে শুনে কেনো নিজের পায়ে কুড়াল মারছিস মেঘ?”
দিশার কথা শেষ হতেই মেঘ ওর দিকে তাকিয়ে ম্লানো হাসলো। তারপর শীতল কন্ঠে বললো
“এই বিয়েটা করলে হয়তো ভবিষ্যতে আমাকে অনেক কস্ট পেতে হবে। কিন্তু যদি আজকে বিয়েটা ভেঙে দেই তাহলে আমার বাবাই খুব কস্ট পাবে। আমার উপর থেকে ওনার বিশ্বাস উঠে যাবে। উনাকে সবার সামনে ছোট হতে হবে। তাই আমার যতো কস্টই হোক না কেনো আমি সব চুপচাপ সহ্যে করে নিতে পারবো। কিন্তু আমার বাবাইকে আমার কারনে কখনোই কস্ট পেতে দিবো না।”
মেঘের কথা শুনে দিশা ওর দিকে কিছুক্ষন নিরব দৃস্টিতে তাকিয়ে রইলো। তারপর ভাঙা কন্ঠে বললো
“নিজের বাবাইকে তো কস্ট দিতে পারবি না, তাহলে তোকে যেই মানুষটা এতোটা ভালোবাসে তাকে কিভাবে কস্ট দিবি? একটা বার ভাববি না যে সে তোকে ছাড়া কিভাবে থাকবে?”
দিশার প্রশ্ন শুনে মেঘ শুকনো একটা ঢোক গিললো। এতোক্ষন ধরে অনেক কস্টে ‘ও’ নিজের কান্না চেপে রেখেছে। কিন্তু দিশার কথায় ওর বুক ফেটে আবারও কান্না আসতে চাইছে। মেঘকে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকতে দেখে দিশা আবারও বললো
“কিরে চুপ করে বসে আছি কেনো? আমার প্রশ্নের অ্যান্সার দে? তুই তো বিয়ে করে চলে যাবি। তারপর আহান ভাইয়ার কি হবে?”
মেঘ অনেক কস্টে নিজের কান্নাটাকে চেপে রেখে কাপাকাপা কন্ঠে বললো
“কিছুই হবে না। কারো জন্যে কারো লাইফ থেমে থাকে নাকি? আমার বিয়ে হয়ে গেলে উনিও কিছুদিন পর ওনার মনের মতোন কাউকে একটা বিয়ে করে সুখে শান্তিতে সংসার করবেন।”
মেঘের কথা শেষ হতেই দিশা তাচ্ছিল্য হেসে বললো
“কতো সহজে কথা গুলো বলে দিলি তাইনা? কিন্তু যতোটা সহজে কথা গুলো বলছিস, সবকিছু অতোটাও সহজ না মেঘ। যাই হোক, তোর যা ইচ্ছা তুই তাই কর। আমি আর তোর সাথে এই বিষয়ে কোনো কথা বলবো না।”
কথাটা বলে দিশা হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। দিশা বের হয়ে যেতেই মেঘ গিয়ে রুমের দরজাটা লক করে দিলো। তারপর দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে ফ্লোরে বসে ফুপিয়ে কেদে উঠলো।
মেঘের মনে হচ্ছে কেউ ওর কলিজায় হাতুড়ি দিয়ে ক্রমাগত আঘাত করছে। যন্থনায় ওর শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসছে। মেঘ বুকের উপর হাত রেখে হিচকি দিতে দিতে বললো
“আমি এখন কি করবো আল্লাহ, তুমিই আমাকে বলে দাও। আমার কাছে যে আবীরকে বিয়ে করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। নিজের সার্থের জন্যে কিছুতেই আমি আমার বাবাইকে কস্ট দিতে পারবো না। কারন আমি ছাড়া যে আমার বাবাইয়ের আর কেউ নেই।”
_________________________
আজকে আবীর আর মেঘের বিয়ে। যদিও ওদের বিয়েটা এক সপ্তাহ পরে হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু সেদিন রাতে আহান আজম রহমানকে হুমকি দেওয়ার পর উনি প্রচন্ড রেগে যান। আর রাগের মাথায় দুই দিনের মধ্যেই ঘরোয়া ভাবে মেঘকে আবীরের সাথে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অভি আর দিশা মিলে আজম রহমানকে অনেক ভাবে বোঝানোর চেস্টা করেছে যাতে উনি এতো তাড়াতাড়ি মেঘের বিয়েটা না দেন। কিন্তু উনি ওনার সিদ্ধান্ত থেকে এক পাও নড়ে নি। তাই ওরা বিরক্ত হয়ে আজম রহমানের সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে।
_____
দুপুরঃ 2:25
ড্রইংরুমের সোফার উপর শেরওয়ানি পড়ে হাত-পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে বসে আছে আবীর। ওর সোজাসুজি অপর পাশের সোফায় আজম রহমান আর কাজি বসে আছে। ওনারা ছাড়া আত্মীয় বলতে শুধুমাত্র আবীরের বাবা-মা আর অভির বাবা-মা এখানে এসেছে। এছাড়া আজম রহমান বাইরের কোনো লোককে বিয়েতে ইনভাইট করেনি। বাইরের লোক তো দূরের কথা অন্যান্য আত্মীয় স্বজনদেরও এই বিয়ের ব্যাপারে কিছু জানান নি উনি। কারন উনি চান না, এই ব্যাপারে কোনো ভাবে আহান কিছু জানতে পারুক।
ড্রইংরুমের এক পাশে রাগি মুড নিয়ে দাড়িয়ে আছে দিশা আর অভি। দুজনের দৃস্টিই আবীরের দিকে স্থির। ওরা শুধু ভাবছে মানুষ ঠিক কতোটা আহমোক মার্কা হলে স্বইচ্ছায় লাফাতে লাফাতে এসে আগুনের কুয়োর মধ্যে ঝাপ দিতে চায়। দিশা রাগে ফুশতে ফুশতে অভিকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“দেখেছো, গত পরশুদিন আহান ভাইয়ার হাতে এতো মার খাওয়ার পরেও র্নিলজ্জটার একটুও শিক্ষা হয়নি। আজকে আবার হাত, পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে সেজে গুজে বিয়ে করতে চলে এসেছে। হাভাতে কোথাকার! ইচ্ছে তো করছে ওর মু*ন্ডু কে*টে ওকে গরম তৈলে ফ্রাই ক*রতে।”
দিশার কথা শেষ হতেই অভি হাতের ঘড়িতে টাইম দেখতে দেখতে বললো
“কুল ডাউন! চুপচাপ দাড়িয়ে শুধুমাত্র দেখতে থাকো এখানে আজকে ঠিক কী কী হয়।”
দিশা ঝাঝালো স্বরে বললো
“তোমার ইচ্ছে হলে তুমি দেখতে পারো। আমার এসব ফালতু ড্রামা দেখার কোনো ইচ্ছে নেই।”
কথাটা বলে দিশা সিড়ি বেয়ে উপরের দিকে যেতে নিলেই আজম রহমান গলা ছেড়ে দিশাকে ডেকে বললো
“দিশা মামনি, যাও মেঘকে নিচে নিয়ে আসো।”
কথাটা শুনে দিশা দাড়িয়ে গেলো। তারপর পিছনে ঘুড়ে অভির দিকে রাগি দৃস্টিতে তাকাতেই অভি ওকে চোখ দিয়ে ঈশারা করে মেঘকে নিয়ে আসতে বললো। এতে যেনো দিশার রাগ আরো কয়েকশো গুন বেড়ে গেলো। ‘ও’ রেগে বোম হয়ে হনহন করে উপরে চলে গেলো।
_______________________
বিয়ের জন্যে যে কাগজ পএ গুলো দরকার সেগুলো সব রেডি হয়ে গেছে। এখন শুধুমাত্র মেঘকে নিয়ে আসলেই কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করবেন। অভি চিন্তিত মুখ করে বারবার নিজের ঘড়িতে থাকা সময়ের কাটা দেখে যাচ্ছে। টেনশনে ওর কপালের রগ ফুলে উঠেছে। ‘ও’ বারবার দ্রুত পায়ে সিড়ির এপাশ থেকে ওপাশ পায়চারি করে যাচ্ছে। এর মধ্যেই দিশা মেঘকে নিয়ে নিচে নেমে এলো। অভি তাকিয়ে দেখলো মেঘকে কেমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। অভি মেঘকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আজম রহমান দিশাকে ডেকে বললো,
মেঘকে নিয়ে গিয়ে আবীরের পাশে বসিয়ে দিতে। আজম রহমানের কথা শুনে দিশা অনিচ্ছা সর্তেও মেঘকে নিয়ে ধীর পায়ে ড্রইংরুমের সোফার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। কিন্তু হঠাৎ করে দরজার কলিংবেল বাজার শব্দে মেঘ আর দিশা দুজনেই চমকে উঠে দাড়িয়ে পড়লো। বাকিরাও সবাই ভ্রু কুচকে দরজার দিকে তাকালো। তাকিয়ে ভাবতে লাগলো এই সময়ে তো কারোরই বাড়ির ভেতরে আসার কথা না। কারন আজম রহমান আগেই ওনার গার্ডদের বারন করে দিয়েছেন, যাতে ওনার অনুমতি ছাড়া আজকে বাইরের কাউকে ভিতরে ঢুকতে না দেওয়া হয়। তাহলে এই সময়ে কে এসে দরজায় এভাবে কলিংবেল
বাজাচ্ছে।
#চলবে