#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ37
সকাল 8:15
ড্রইংরুমে বসে আহির, মিহির, অভিসহ ওদের সমস্ত কাজিনরা আড্ডা দিচ্ছিলো। আর গতকাল মেহেন্দি অনুষ্ঠানে তোলা পিকগুলো দেখছিলো। মেঘ সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে ড্রইংরুমের সবার দিকে একপলক তাকিয়ে কিচেনে চলে গেলো। কিচেনে গিয়ে সকালের নাস্তা বানাতে মিড়া রহমানকে হেল্প করতে লাগলো। কিছুক্ষন পর মিড়া রহমান মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে উঠলো
“কালকে অতো রাত পযর্ন্ত তুমি A.k. এর সাথে কোথায় ছিলে মেঘ?”
মিড়া রহমানের প্রশ্ন শুনে মেঘ খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললো
“প্রজেক্ট নিয়ে একটু ঝামেলা হয়ে গিয়েছিলো তাই আমাদের দুজনকে এমারজেন্সি একটু অফিসে যেতে হয়েছে।”
মেঘের কথা শুনে মিড়া রহমান শান্ত দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকালেন। তারপর শীতল কন্ঠে বললেন
“যেখানেই যাও আর যাই করো সব সময় একটা কথা মাথায় রেখো, তুমি কিন্তু এখনো আহানের ওয়াইফ।”
মিড়া রহমানের কথা শুনে মেঘের মাথা টা হুট করেই গরম হয়ে গেলো। ‘ও’ খানিকটা রাগি কন্ঠে বললো
“মাম্মাম প্লিজ আমাকে অন্তত ওই লোকটার ওয়াইফ বলে সম্মোধন করো না। ওই লোকটার আমার হাসবেন্ট হওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই। ওই লোকটা ঠকিয়েছে আমাকে। ‘ও’ একটা বিশ্বাসঘাতক।”
মিড়া রহমান ভ্রু কুচকে বললো
“কীসব বলছো মেঘ? তোমার মাথা ঠিক আছে? আগে তো কখনো আহানের ব্যাপারে এসব বলোনি তুমি। তাহলে আজকে হঠাৎ করে এসব কথা কেনো বলছো?”
মেঘ দাতে দাত চেপে বললো
“আগে তো জানতাম না যে ওই লোকটা একটা প্রতারক তাই কখনো বলিনি।”
মিড়া রহমান খানিকটা কড়া গলায় বললেন
“আগে জানতে না তো এখন কিভাবে জানলে? আহান এসে তোমার কানে কানে বলে গেছে যে ‘ও’ তোমাকে ঠকিয়েছে?”
“এখানে জানা জানির কি আছে মাম্মাম? যে লোক বিয়ের প্রথম দিন একটা নির্জন রাস্তায় নিজের বউকে একা ফেলে রেখে চলে যায় সে প্রতারক নয় তো কি?”
মেঘের কথা শুনে মিড়া রহমান মেঘের দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে ওর মাথায় হাত রেখে নরম স্বরে বললেন
“আহান নিশ্চয়ই কোনো ঝামেলার মধ্যে পড়েছিলো তাই সেদিন তোমাকে ওখানে একা রেখে যেতে বাধ্য হয়েছে। নাহলে ‘ও’ কখনো তোমাকে ওখানে একা ফেলে রেখে যেতো না। ছোট্ট বেলা থেকে আমি নিজের হাতে ওকে মানুষ করেছি। আমি খুব ভালো করে চিনি ওকে। আমি জানি, আমার আহান আর যাই করুক না কেনো কখনো কোনো মেয়েকে ঠকাতে পারে না।”
মিড়া রহমানের কথা শেষ হতেই মেঘের ঠোটের কোনে বিদ্রুপের হাসি ফুটে উঠলো। আজ অবদি মেঘ আহানের দেওয়া লাষ্ট মেসেজটা কাউকে দেখায়নি। কারন ‘ও’ কখনো চায়নি সবাই আহানকে খারাপ ভাবুক। ‘ও’ তো সব সময় আহানের ফিরে আসার জন্যে অপেক্ষা করেছে। অথচ সেই অপেক্ষার ফলাফল এখন জিরো। মিড়া রহমান মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন
“অধৈর্য্য হয়ো না মেঘ। অপেক্ষা করতে থাকো দেখবে আহান একদিন ঠিকই ফিরে আসবে। হয়তো ‘ও’ খুব বড় প্রভলেমের মধ্যে আছে। তাই এখন আমাদের কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। কিন্তু দেখে নিও একদিন ‘ও’ ওর সব প্রবলেমের সমাধান করে আমাদের কাছে ফিরে আসবে।”
মিড়া রহমানের কথার প্রতি উওরে মেঘ কিছুই বললো না। শুধুমাত্র একটু তাচ্ছিল্য হেসে ট্রে তে চায়ের কাপ সাজাতে লাগলো। মেঘকে চুপচাপ কাজ করতে দেখে মিড়া রহমান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের কাজে মনোযোগ দিলেন। মেঘ একে একে সব কাপের মধ্যে চা ঢেলে ট্রে টা হাতে নিয়ে ড্রইংরুমের দিকে চলে গেলো। এখানে এসে দেখলো মিহিরদের সাথে আহানও বসে বসে ফোন স্ক্রল করছে। আহানকে দেখে রাগে মেঘের চোখ, মুখ শক্ত হয়ে গেলো। ‘ও’ যথা সম্ভব নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে একবার হাতে থাকা চায়ের কাপ গুলোর দিকে তাকালো। তারপর আর চোখে একবার আহানের দিকে তাকিয়ে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে মিহিরের সামনে দাড়ালো। মিহির হালকা হেসে মেঘের হাত থেকে চায়ের ট্রে টা নেওয়ার জন্যে হাত বাড়াতেই মেঘ হোচট খাওয়ার ভান করে পুরো ট্রে টা উল্টে আহানের গায়ে ফেলে দিলো। ঘটনার আকষ্মিকতায় ড্রইংরুমে উপস্থিত সব মানুষ চমকে গেলো। হঠাৎ করে এতোখানি গরম চা গায়ে এসে পড়ায় আহান ধরফরিয়ে বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো। মিহির মেঘের দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বললো
“এটা কি করলি মেঘ? চোখে দেখতে পাস না নাকি?”
মেঘ দুঃখি দুঃখি ফেইস করে বললো
“সরি ভাইয়া আমি একদমই খেয়াল করিনি। ইটস যাষ্ট এ্যান অ্যাক্সিডেন্ট।”
কথাটা বলে মেঘ ঘাড় ঘুড়িয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে শয়তানি একটা হাসি দিলো। তারপর ফেইসটাকে আবারও দুঃখি দুঃখি বানিয়ে আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আই অ্যাম সো সরি মি. A.k.। আমি বুঝতে পারিনি যে এমনটা হবে। প্লিজ আপনি কিছু মনে করবেন না।”
মেঘের কথা শুনে আহান মেঘের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর চিবিয়ে চিবিয়ে বললো
“ইটস ওকে ম্যাম এতোটা অনুতপ্ত হওয়ার কিছু নেই। আমি কিছু মনে করিনি।”
কথাটা বলে আহান হনহন করে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। আহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মেঘ একটা প্রশান্তির হাসি হাসলো।
________________________
সন্ধ্যা 7:00 টা
দিশা আর অভির গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান চলছে। সবাই একে একে স্টেজে উঠে অভি আর দিশার গায়ে হলুদ ছুইয়ে বিভিন্ন এঙ্গেলে পিক তুলছে। মেঘ আর সাজিদ একপাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মিহিরের কান্ড দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। মিহির যখন থেকে শুনেছে সাঈফা আর সাজিদ আজকে সন্ধ্যায় ডান্স পারফরমেন্স করবে তখন থেকে সাঈফার হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে ওকে নিজের পাশে বসিয়ে রেখেছে। সাঈফা বারবার চেষ্টা করেও ওখান থেকে উঠে আসতে পারছে না। কারন মিহির সাঈফার এক হাত শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে।
সাজিদ ঠোট চেপে হেসে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“যাক ফাইনাললি আমাদের প্লানটা কাজে দিয়েছে তাহলে। এইবার তোর ওই খারুচ ভাই নিজের মুখে সবটা স্বীকার করলেই কাজ হয়ে যাবে।”
মেঘ চিন্তিত মুখে বললো
“স্বীকার করলে তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু যদি সিনক্রিয়েট করে তাহলে কী হবে?”
সাজিদ দাত বের করে হেসে বললো
“সিনক্রিয়েট করলে আমাদের কী? আমরা যেটা করবো বলে ঠিক করেছি সেটা না করা অবদি তো আর আমরা কিছুতেই থামছি না। আমিও দেখি তোর ভাই কি করতে পারে। তোর ওই ত্যাড়া ভাইকে যদি আমি সোজা না বানিয়েছি তাহলে আমার নামও সাজিদ না।”
কথাটা বলে সাজিদ পুরো অ্যাটিটিউট নিয়ে মিহিরদের দিকে এগিয়ে গেলো। মেঘ জোড় পূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো
“এই ছেলের কপালে কি যে আছে একমাএ আল্লাহই জানে।”
সাজিদ মিহিরের সামনে এসে দাড়িয়ে সাঈফাকে উদ্দ্যেশ্য করে একদম স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো
“সাঈফু তুমি এখানে বসে বসে কি করছো? চলো আমাদের পারফরমেন্সের সময় হয়ে গেছে।”
সাজিদের কথা শুনে মিহির আরো শক্ত করে সাঈফার হাতটা চেপে ধরলো। তারপর চোখ মুখ শক্ত করে কঠিন গলায় বললো
“সাঈফা কোথাও যাবে না।”
সাজিদ অবাক হওয়ার ভান করে বললো
“যাবে না মানে? ‘ও’ না গেলে পারফরমেন্সটা হবে কিভাবে? এই লাষ্ট মুহূর্তে আমি অন্য পার্টনার পাবো কোথায়?”
“জাহান্নাম থেকে পার্টনার খুজে নিয়ে আসো। আমি যখন একবার বলেছি সাঈফা কোথাও যাবে তারমানে ব্যাস সাঈফা এখান থেকে কোথাও যাবে না।”
সাজিদ খানিকটা বিরক্ত হওয়ার ভান করে বললো
“আজব তো ‘ও’ আমার সাথে যাবে কী যাবে না সেটা বলার আপনি কে? আপনি ওর উপর এতো জোড় খাটাচ্ছেন কোন সাহসে? হাতটা ছাড়ুন বলছি ওর। সাঈফা উঠে এসো!”
কথাটা বলে সাজিদ সাঈফার হাত ধরে টান দিয়ে ওকে বসা থেকে দাড় করালো। সাজিদের এমন কান্ডে মিহির আর নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। ‘ও’ সাঈফার হাত ছেড়ে দিয়ে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে সাজিদের মুখে জোড়ে একটা ঘুশি দিলো। অচমকা এতো জোড়ে ঘুশি মারায় সাজিদ নিজেকে সামলাতে না পেরে উপুর হয়ে মাটিতে পড়ে গেলো। ঘটনার আকষ্মিকতায় ওখানে উপস্থিত সব মানুষ স্তব্দ হয়ে গেলো। মেঘ মুখ চেপে ধরে হতবম্ভ হয়ে দাড়িয়ে আছে। ‘ও’ আগেই বুঝতে পেরেছিলো এমন কিছু একটাই এখানে ঘটতে চলেছে। মিহির এগিয়ে গিয়ে সাজিদের পাঞ্জাবির কলার ধরে টেনে ওকে মাটি থেকে উঠিয়ে দাড় করালো। তারপর মিহির পরপর ওর মুখের উপর তিন/চারটা ঘুশি মেরে চেচিয়ে বলতে লাগলো
“তোর সাহস হলো কিভাবে আমার সামনে দাড়িয়ে সাঈফাকে স্পর্শ করার? তোকে তো আজকে আমি মেরেই ফেলবো।”
মিহির কথাটা বলার সাথে সাথে কেউ ওর কলার ধরে টেনে ওকে পিছনে ঘুড়িয়ে ওর গালে কশিয়ে একটা চড় মারলো। ওখানে উপস্থিত সবাই শুধু হতোবম্ভ হয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে তামাশা দেখছে। অ্যাকচুলি ঘটনা গুলো এতো দ্রুত ঘটছে যে ওরা কী বলবে নিজেরাও বুঝতে পারছে না। মিহির গালে হাত দিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো ওর সামনে সাঈফা দাড়িয়ে আছে। সাঈফার চোখে মুখে স্পষ্ট রাগ এবং ঘৃনার ছাপ। মিহির দাতে দাত চেপে রাগি কন্ঠে বললো
“হাউ ডেয়ার ইউ! তোর সাহস হলো কীভাবে আমাকে চড় মারার?”
সাঈফা চেচিয়ে বললো
“তোমার সাহস হলো কীভাবে সাজিদের গায়ে হাত তোলার? আর আমার উপরে এতো অধিকার দেখানোর স্পর্ধাই বা তোমাকে কে দিলো? কী মনো করো তুমি নিজেকে? তোমার যখন ইচ্ছে হবে তুমি মানুষকে অপমান করবে, তাদের গায়ে হাত তুলবে, তাদের উপর জোড় খাটাবে আর সবাই চুপচাপ সেটা মেনে নিবে?”
সাঈফার কথাটা শেষ হতেই সাঈফার মা দ্রুত পায়ে ছুটে এসে ওদের সামনে দাড়ালো। তারপর চাপা স্বরে বললো
“কী সমস্যা তোমাদের তিন জনের? বাড়ি ভর্তি আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে তোমরা একটার পর একটা সিনক্রিয়েট করে যাচ্ছো কেনো? কাউকে কিছু বলি না বলে কী তোমাদের যা ইচ্ছে হবে তোমরা তাই করবে?”
সাঈফা মিহিরের দিকে আঙুল উঠিয়ে ইশারা করে ওর মাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আমাদের কোনো সমস্যা নেই আম্মু। সমস্যা এই লোকটার মধ্যে আছে। উনি কারো ভালো থাকা দেখলে সহ্যই করতে পারেন না। মানুষকে অকারনে আঘাত করার জন্যে উঠে পড়ে লাগেন। চিপ, ক্লাসলেস মাইন্ডের লোক একটা!”
সাঈফার কথা শুনে মিহির রেগে ক্রুদ্ধ স্বরে বললো
“মুখ সামলে কথা বল সাঈফা। নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
সাঈফা চেচিয়ে বললো
“ওহ যাষ্ট শাটআপ ওকে? তোমার মতো ফালতু একটা লোকের বিষয়ে কথা বলার কোনো ইন্টারেষ্টই আমার নেই। তুমি আমার ব্যাপারে নাক গলাতে এসেছো তাই বাধ্য হয়ে আমাকে এই কথা গুলো বলতে হচ্ছে।”
সাঈফার মা দাতে দাত চেপে বললো
“যাষ্ট শাটআপ! দুজনের একজনও আর কোনো কথা বলবে না। অনেক তামাশা করে ফেলেছো। এইবার চুপচাপ মুখ বন্ধ করে এখান থেকে বের হয়ে যাও। তোমাদের মতো অসভ্যদের এই পার্টিতে থাকার কোনো দরকার নেই। যাদের জন্যে আমাদের মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি হবে তাদেরকে কিছুতেই আমরা এখানে এলাউ করবো না।”
সাঈফার মায়ের শুনে মিহির আর এক মুহূর্তও এখানে দাড়ালো না গটগট করে কোথাও একটা চলে গেলো। মিহির চলে যেতেই সাঈফাও যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালো কিন্তু মেঘ এসে ওর হাত টেনে ধরে ওকে বসিয়ে দিলো। সাঈফার মা আর কিছু না বলে ওখান থেকে চলে গেলো। আস্তে আস্তে সব রিচুয়াল আবার আগের মতো স্বাভাবিক ভাবে হতে লাগলো।
_________________________
রাতঃ10:45
মেঘ সারা বাড়ি তন্নতন্ন করে খুজেও মিহিরকে কোথাও পেলো না। মিহির সেই যে সন্ধ্যা বেলা হলুদের অনুষ্ঠান থেকে বেড়িয়ে গেছে তারপর আর কেউ ওকে কোথাও দেখেনি। মেঘ মিহিরকে খুজতে খুজতে ফার্ম হাউজের একদম পিছনের দিকটায় চলে আসলো। এখানে সচারাচর কেউই আসে না। ‘ও’ হাত দিয়ে লেহেঙ্গা উঠিয়ে কিছুটা দূর এগিয়ে যেতেই বাড়ির পিছনে থাকা প্রাচীরের এক কোনে কয়েকজন লোক কে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো। এতো রাতে এখানে এতো গুলো লোককে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মেঘ নিঃশব্দে পা টিপে টিপে লোক গুলোর দিকে আরেকটু এগিয়ে গেলো। এগিয়ে যেতেই মেঘ দেখলো দাড়িয়ে থাকা লোক গুলো হলো আহান, ওর অ্যাসিটেন্ট আর ওর কয়েকজন গার্ড। মেঘ বুঝতে পারছে না যে ওরা এতো রাতে এখানে কেনো দাড়িয়ে আছে। তাই ‘ও’ ব্যাপারটা আরেকটু ভালো করে বোঝার জন্যে আহানদের দিকে আরো খানিকটা এগিয়ে গিয়ে একটা গাছের পিছনে লুকিয়ে পড়লো। তারপর গাছের পিছন থেকে উকি মেরে ভালো করে আহানদের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো ওরা সবাই মিলে দুজন লোককে ঘিরে রেখেছে। লোক দুটো হাত-পা বাধা অবস্থায় হাটু ভেঙে আহানের সামনে মাটিতে বসে আছে। মেঘ কিছু একটা ভেবে হাতের ফোনটা অন করে ভিডিও করা শুরু করলো। আর শুনতে পেলো আহানের অ্যাসিটেন্ট আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে বলছে
“স্যার এদের দুজনকে এখন কী করবো? এদের বাচিয়ে রাখলে তো আপনার জন্যে এরা রিস্ক হয়ে যাবে।”
লোকটার কথা শুনে আহান স্বাভাবিক ভাবেই বললো
“এদের বাচিয়ে রাখার কোনো প্রশ্নই উঠে না। দুটোকেই শেষ করে দাও। আমি আমার লক্ষ্যের অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছি। এখন এদেরকে বাচিয়ে রেখে তীরে এসে তরী ডোবানোর কাজটা একদমই করতে পারি না। So kill them.”
আহান কথাটা শেষ করতে না করতেই আহানের গার্ডরা লোক দুটোর মাথায় শুট করে দিলো। শুট করার সাথে সাথে লোক দুটো মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ছটফট করতে লাগলো। ঘটনার আকষ্মিকতায় ভয় পেয়ে অসাবধানতা বশত মেঘের হাত থেকে ফোনটা গাছের শেকরের উপর পড়ে ঠাস করে আওয়াজ হলো। সেই শব্দে আহান আর ওর লোকেরা ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাকালো। মেঘ কী করবে কিছু বুঝতে না পেরে দ্রুত ফোনটা হাতে নিয়ে জোড়ে দৌড় দিলো। কিন্তু হঠাৎ করে এতো জোড়ে দৌড় দেওয়ায় মেঘ নিজেকে সামলাতে না পেরে লেহেঙ্গার সাথে পেচিয়ে ধরাম করে মাটিতে উপুর হয়ে পড়ে গেলো।
#চলবে……