#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#অন্তিম_পর্ব
মেঘ গুটি গুটি পায়ে কড়িডোর দিয়ে হেটে icu এর দরজার সামনে এসে দাড়ালো। চারপাশ থেকে সবার কান্নার শব্দ মেঘের কানে এসে বারি খেয়ে ওর হৃদয় কম্পিত করে তুলছে। মেঘের হাত-পা অসম্ভব কাপছে। ‘ও’ icu এর দরজা ঠেলে ভিতরে যাওয়ার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না। আহান এগিয়ে এসে মেঘের পাশে দাড়িয়ে icu এর দরজা খুলে মেঘকে ভিতরে যেতে বললো। মেঘ এক পলক আহানের দিকে তাকিয়ে ধীর পায়ে দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকলো। ভিতরে ঢুকেই মেঘের চোখ গেলো রুমের মাঝ বরাবর রাখা শুভ্র রঙের চাদর বেছানো ছোট্ট সেই বেডটার উপর। যেটার উপরে সাজিদকে শুইয়ে রাখা হয়েছে। বেডটার পাশেই বিমর্ষ মুখে দাড়িয়ে আছে একজন নার্স। সাজিদের মুখটাও রক্ত শূন্য হয়ে একদম নীলচে রঙ ধারন করেছে। ওর দুই নাকের মধ্যে দুটো অক্সিজেন পাইপ ঢুকানো। মাথার পুরো অংশটা ব্যান্ডেজ করা। মুখে-নাকে লেগে আছে রক্তের দাগ। ওর কোমড় থেকে পা পযর্ন্ত একটা সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা। বুকের উপর কতোগুলো চিকন চিকন তাড় লাগানো। যেগুলো সব গিয়ে পার্লস রেট মনিটরের সাথে যুক্ত হয়ে মনিটরের স্কিনে সাজিদের হৃদস্পন্দনের গতি দেখাচ্ছে।
মেঘ কাপা কাপা পায়ে এগিয়ে গিয়ে সাজিদের পাশে দাড়ালো। তারপর নিজের কম্পিত হাতটা সাজিদের হাতের উপর রাখলো। হাতে কারো স্পর্শ অনুভব করতেই সাজিদ চোখ খুলে পাশে তাকালো। পাশে তাকাতেই মেঘকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ‘ও’ স্মিত হাসলো। তারপর কম্পিত স্বরে আস্তে করে বলে উঠলো
“যাক তুই ঠিক আছিস তাহলে। এখন আমি মরেও শান্তি পাবো।”
সাজিদের কথা শুনে মেঘের চোখ থেকে টুপ করে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। ‘ও’ অশ্রুসিক্ত চোখে সাজিদের দিকে তাকিয়ে কান্নারতো কন্ঠে বলে উঠলো
“এ-এই সব ক-কিছু আমার জ-জন্যে হ-হয়েছে। আ-আমার জেদের জ-জন্যেই তোর আজকে এই অবস্থা।”
কথাটা বলেই মেঘ শব্দ করে কেদে দিলো। সাজিদ কিছুটা রাগি কন্ঠে বললো
“এইজন্যেই আমি তোর সাথে দেখা করতে চেয়েছি। আমি জানি তো, তুই যেই পরিমানের গাধা তাতে এসবের জন্যে নিজেকেই দোষারোপ করবি। আচ্ছা একটা কথা বলতো, জন্ম-মৃত্যু এসব কি মানুষের হাতে থাকে? এগুলো তো আল্লাহর মর্জিতে হয়। আমার সময় যখন শেষ হয়ে এসেছে তখন আমাকে তো চলে যেতে হবেই। ওই অ্যাক্সিডেন্ট টা তো শুধুমাত্র একটা উছিলা ছিলো। এরজন্যে তুই নিজেকে দায়ী করছিস কেনো?”
মেঘ সাজিদের হাত শক্ত করে আকড়ে ধরে কাদতে কাদতে বললো
–“আমার জিদের জন্যেই তো সবকিছু হয়েছে। আমি যদি কালকে রাতে রেগে ওভাবে বাসা থেকে বের না হতাম তাহলে তো এতো কিছু হতোই না।”
সাজিদ ম্লানো হেসে বললো
“এভাবে বলিস না ইয়ার। তোর এখানে কোনো দোষ নেই। আমার ভাগ্যে যেটা ছিলো সেটাই হয়েছে। আমার এতো দিনের ইচ্ছে পূরন হতে চলেছে। এইবার ফাইনাললি আমি আমার ভালোবাসার মানুষটার কাছে যেতে পারবো।”
মেঘ বললো
“কিছু হবে না তোর। তুই একদম ঠিক হয়ে যাবি। এখানের ডাক্তারেরা হাল ছেড়ে দিয়েছে তো কি হয়েছে? তোকে বাহিরের কোনো ভালো কান্ট্রিতে নিয়ে গিয়ে আমরা ভালো করে ট্রিটমেন্ট করবো। তারপর দেখবি তুই একদম ঠিক হয়ে যাবি।”
মেঘের কথাটা শেষ হতেই সাজিদ বলে উঠলো
“শেষ সময়ে শান্তনা দিচ্ছিস? দিতে হবে না। আমি জানি আমার হাতে আর বেশি সময় নেই। আমার নিশ্বাস ফুরিয়ে এসেছে। হয়তো কিছু সময়ের মধ্যেই আমার হৃদপিণ্ড টা একদম শান্ত হয়ে যাবে। জানিস মেঘ, আমার ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে আমি পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। উন্মাদের মতো বারবার ওর কবরের কাছে ছুটে যেতাম। ওর কবরের মাটি আকড়ে ধরে হাউমাউ করে কাদতাম আর আল্লাহ কে বলতাম আমাকেও যাতে ওর কাছে নিয়ে যায়। ওকে ছাড়া এই পৃথিবীতে একেক টা সেকেন্ড নিঃশাস নেওয়াও আমার জন্যে মৃত্যুর সমান ছিলো। এতোগুলো বছর ধরে আমি যন্ত্রণায় ছটফট করেছি। প্রতিটা সেকেন্ড আল্লাহর কাছে নিজের মৃত্যু কামনা করেছি। তাই আল্লাহ বোধহয় এইবার আমার দিকে মুখ তুলে চাইলেন।”
কথা গুলো বলতে বলতে সাজিদের গলা ধরে এলো। মেঘ কাদতে কাদতে হাটু ভেঙে ফ্লোরে বসে পড়লো। সাজিদ কিছুক্ষন চুপ থেকে সিলিংয়ের দিকে দৃষ্টি রেখে আটকে আসা গলায় বললো
–“তবে একটা কথা কী জানিস? আজকে যখন আল্লাহ আমার এতোদিনের ইচ্ছে পূরন করছে তখন কেনো যেনো মনে হচ্ছে এই ইচ্ছেটা পূরন না হলেই বেশি ভালো হতো। আমরা সবাই আবার আগের মতো হৈ হুল্লোর করে একসাথে থাকতে পারতাম। আবারও একসাথে বসে আড্ডা দিতে পারতাম। আজকে কেনো যেনো বেচে থাকার জন্যে মনে তীব্র ইচ্ছে জেগেছে।”
মেঘ হাটু ভাঙা অবস্থায়ই মাথা তুলে সাজিদের মুখের দিকে তাকালো। দেখলো সাজিদের চোখের কোন দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। মেঘ খানিকটা রাগি কন্ঠে বললো
–“তোর সাথে আমার দেখা করতে আসাই ভুল হয়েছে। আমি এখানে না আসলেই তুই আর এসব ফালতু কথা বলতে পারতি না। আমি তোকে বলেছি না, তোর কিছু হবে না? তুই একদম সুস্থ হয়ে যাবি। সবকিছু আবারও আগের মতো হয়ে যাবে। আমরা সবাই আবার আগের মতো আড্ডা দিবো। তাহলে কেনো এসব উল্টাপাল্টা কথা বলছিস?”
–“এসব বলে আমাকে লোভ দেখাস না মেঘ। আমার এমনিতেই বেচে থাকার জন্যে খুব লোভ হচ্ছে। জীবনের প্রতি মায়া টা আমার আরো দৃঢ় হচ্ছে। মৃত্যুর ভয়টা আমার মনের মধ্যে জেকে বসেছে।”
কথাটা বলতে বলতে সাজিদের নিশ্বাস ঘন হয়ে আসলো। ‘ও’ জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলো। সাজিদের এমন অবস্থা দেখে নার্স মেয়েটা মেঘকে বাইরে যেতে বলে নিজেও দৌড়ে icu থেকে বের হয়ে গেলো। মেঘ নার্সের কথায় পাএা না দিয়ে উদগ্রিব হয়ে সাজিদকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
–“সাজিদ কী হয়েছে তোর?কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমাকে বল? দেখ তুই চিন্তা করিস না। এখনি ডাক্তার এসে তোকে একদম ঠিক করে দিবে। তুই একটু শান্ত হ।”
কথাটা বলে মেঘ ডাক্তারকে ডাকতে ডাকতে দরজার কাছে এগিয়ে যেতেই সাজিদ আঙুলের ইশারায় মেঘকে কাছে আসতে বললো। মেঘ দরজার কাছ থেকে দৌড়ে আবারও সাজিদের কাছে গেলো। সাজিদ দ্রুত নিশ্বাস নিতে নিতে বলে উঠলো
“এতোদিন তো মরতে চেয়েছি। অথচ আজকে আমার বাচতে ইচ্ছে করছে মেঘ। কিন্তু এখন যে আর কিছুই করার নেই। আমি বুঝতে পারছি আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে। আমি তোদের থেকে দূরে যাওয়ার পর তোরা কেউ আমাকে ভুলে যাস না প্লিজ। সময়ের সাথে সাথে তোদের স্মৃতি থেকে আমাকে মুছে ফেলিস না। আমাকে তোদের মনের কোথাও একটা বন্ধি করে রেখে দিস মেঘ। আমি অনেক দূরে চলে যাওয়ার পরেও তোদের সবার মনের ছোট্ট একটা অংশ জুড়ে স্মৃতি হয়ে থাকতে চাই।”
সাজিদ কথাটা শেষ করতে না করতেই নার্সটার সাথে একজন ডাক্তার এসে ভিতরে ঢুকলো। মেঘ হাউমাউ করে কেদে উঠলো। সাজিদ নিশ্বাস নিতে নিতে বিরবির করে দোয়া পড়তে লাগলো। নার্সটা এসে মেঘকে জোড় করে বাইরে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। মেঘ চিল্লিয়ে কেদে যাচ্ছে। নার্সটা কোনো রকম মেঘকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে বের করে icu এর দরজাটা লাগিয়ে দিলো। আহান দ্রুত দৌড়ে এসে মেঘকে আগলে ধরলো। মেঘ এখনও হাউমাউ করে কেদে যাচ্ছে। আহান ওকে বুকের সাথে চেপে ধরে শান্ত করার চেষ্টা করছে। সাজিদের বাবা-মাও অনবরত কেদে যাচ্ছে। বাকিরা সবাই কান্নাভেজা চোখে icu এর দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রায় মিনিট দশেক পর মিহির ফোনে কথা বলতে বলতে আহানের কাছে এসে বললো
“ব্রো সব ব্যাবস্থা হয়ে গেছে। আমি লন্ডলের ভালো একটা হসপিটালে সাজিদের ট্রিটমেন্টের জন্যে কথা বলেছি। ওকে ডিসচার্জ করিয়ে একটু পরেই আমরা বেরিয়ে পড়বো।”
মিহির কথাটা বলতে না বলতেই icu এর দরজা খুলে একজন ডাঃ বের হয়ে এসে মিড়া রহমানের সামনে দাড়ালো। তারপর মুখের মাস্ক টা খুলে আশাহত কন্ঠে বলে উঠলো
“সরি ডাঃ মিড়া আমরা আমাদের বেষ্ট টা দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু পেশেন্টের অবস্থা এতোই খারাপ ছিলো যে আমরা শেষ রক্ষা করতে পারিনি। হি ইজ নো মোর!”
ডাক্তারের শেষের কথাটা কানে আসার সাথে সাথে সবাই চিল্লিয়ে উঠলো। সাজিদের মা একটা চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে গেলেন। মিহির স্তব্দ হয়ে দু-কদম পিছিয়ে গেলো। ওর হাত থেকে ঠাস করে ফোনটা মাটিতে পড়ে গেলো। আহির থম মেরে বেঞ্চের উপর বসে আছে। ওর গাল গড়িয়ে নিঃশব্দে পানি পড়ছে। আহান মেঘকে সামলাতে সামলাতে ওর চোখ থেকে টুপ করে দু-ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। ‘ও’ হাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে সবার অগোচরে খুব সাবধানে সেই পানিটুকু মুছে ফেললো। সবাইকে তো আর ভেঙে পড়লে চলবে না। কাউকে একজনকে তো স্ট্রং থাকতে হবে সবাইকে সামলানোর জন্যে।
_________________________
সাজিদ মারা গেছে আজকে প্রায় চার দিন হতে চললো। ওকে হিয়ানদের পারিবারিক কবরস্থানে কবর দেওয়া হয়েছে। মেঘদের পরিবারের সবার উপর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। না চাইতেও সবার চোখের সামনে বারবার সাজিদের দুষ্টুমি মাখা মুখটা ভেষে উঠছে। মাএ কয়েক দিনেই ছেলেটা সবাইকে পাগল বানিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছে। কেউ এখনো মেনেই নিতে পারছে না যে সাজিদ আর ওদের মাঝে নেই। সাজিদের করা অদ্ভুত কর্মকাণ্ড গুলো সবার স্মৃতিতে এসে বারবার সবাইকে কাদিয়ে দিচ্ছে। কেউ চেষ্টা করেও নিজেদের সামলাতে পারছে না।
অন্ধকার একটা রুমের মধ্যে আধশোয়া হয়ে বেডের উপর হেলান দিয়ে মুখের উপর বালিশ চাপা দিয়ে রেখেছে মেঘ। সাজিদের দাফনের পর এসে ‘ও’ সেই যে রুমের মধ্যে ঢুকেছে তারপর আর এখান থেকে বেরই হয়নি। প্রতি বেলায় কেউ না কেউ এসে মেঘের রুমে খাবার রেখে যায়। কিন্তু ঘন্টা খানেক পর যেভাবে খাবারটা রেখে যায় সেভাবেই আবার ফেরত নিয়ে যায়। এই চারদিনে শুধুমাত্র পানি ছাড়া মেঘ আর কিছুই খায়নি। আহানও এই কয়দিন সবকিছু সামলাতে এতোটাই ব্যাস্ত ছিলো যে মেঘের খবর নেওয়ারও সুযোগ ওর হয়ে উঠেনি।
কেউ রুমের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতেই বন্ধ রাখা অবস্থায় চোখ জোড়া কুচকে ফেললো মেঘ। ব্যাক্তিটি এগিয়ে এসে বেডের উপর বসে মেঘের মাথায় হাত রাখতেই মেঘ আরো একটু গুটিশুটি মেরে নিজেকে গুটিয়ে নিলো। মেঘের এমন কান্ডে আহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এক টান দিয়ে মেঘের মুখের উপর থেকে বালিশটা সরিয়ে ফেললো। মেঘ বিরক্তিতে কপাল কুচকে মৃদ্যু স্বরে বললো
“কী চাই এখানে?”
মেঘের প্রশ্নের প্রতিউওরে আহান স্বাভাবিক স্বরেই বললো
–“আপাততো তোমাকে খাবার খাওয়াতে চাই।”
আহানের কথা কানে আসতেই মেঘ পিটপিট করে চোখ খুলে সামনে তাকালো। তাকিয়ে দেখলো আহান হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে বসে আছে। এটা দেখে মেঘ আবারও চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো
–“আমি কিছু খাবো না। আমার খিদে নেই।”
মেঘের কথা শুনে আহান কিছুটা রাগি কন্ঠে বললো
–“চারদিন ধরে না খেয়ে থাকার পরেও বলছো খিদে নেই? কেনো পেটের মধ্যে কী এমন ঢুকেছে যে খিদে লাগছে না?”
মেঘ চোখ বন্ধ রেখেই নির্বিকার কন্ঠে বললো
–“জানিনা। আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।”
–“ইচ্ছে করছে না বললে তো হবে না মেঘ। নিজের জন্যে না হলেও তোমাকে বেবীটার জন্যে তো খেতে হবে। তুমি এইভাবে দিনের পর দিন না খেয়ে থাকলে বেবীটার ক্ষতি হতে পারে। তুমি জেনে শুনে নিজের সন্তানের কেনো এতো বড় ক্ষতি করতে চাইছো বলো তো?”
আহানের কথা শুনে মেঘ ফট করে চোখ জোড়া খুলে ফেললো। ‘ও’ এটাই বুঝে উঠতে পারছে না যে আহান বেবীর কথা কীভাবে জানলো। এই ব্যাপারে এখন পযর্ন্ত ‘ও’ তো কাউকেই কিছু বলেনি। তাহলে? মেঘের এসব ভাবনার মধ্যেই আহান ভাত মাখতে মাখতে বলে উঠলো
–“আমি কীভাবে জানলাম সেটা এই মুহূর্তে তোমার না জানলেও চলবে। তুমি বরং খাবারটা খেয়ে নেও।”
মেঘ আর কথা বাড়ালো না। অনিচ্ছা সর্তেও খাবারটা খেতে লাগলো। এই মুহূর্তে ওর বেবীর জন্যে হলেও ওকে সুস্থ থাকতে হবে। নাহলে ওর শরীর খারাপের প্রভাব ওর বেবীর উপরেও পড়বে। খেতে খেতে মেঘ আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
–“আমি যদি সেদিন রাতে ওভাবে বাসা থেকে বের না হয়ে যেতাম তাহলে এতো কিছু হতোই না, তাইনা? আর সাজিদও আজকে আমাদের মধ্যে থাকতো। এই সবকিছু আমার জন্যেই হয়েছে। আমি সাজিদের মৃত্যুর জন্যে দায়ি।”
আহান একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে বলে উঠলো
–“জন্ম-মিত্যু কারো হাতে থাকে না। এসব তো আল্লাহর মর্জিতে হয়। যার আয়ু যেই দিন পযর্ন্ত থাকবে সে সেদিনই কোনো একটা উছিলায় পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে। এর জন্যে নিজেকে দায়ি করে অযথা কষ্ট পেও না মেঘ। আমরা মানুষ হয়ে যখন জন্ম নিয়েছি তখন কোনো একদিন আমাদের সবাইকেই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমরা সবাই কোনো না কোনো একটা উছিলায় একদিন এভাবেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিবো। এর জন্যে নিজেকে দ্বায়ি করে কী লাভ বলো? আল্লাহ একবার কাউকে নিজের কাছে ডেকে নিলে আমরা হাজার চেষ্টা করেও কী কাউকে ধরে রাখতে পারবো বলো?”
আহানের কথার প্রতিউওরে মেঘ কিছু বললো না। আহানও কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে হঠাৎ করেই বলে উঠলো
“মেঘ তোমার হোয়াটস আপে একটা ভিডিও পাঠিয়েছি দেখেছো?”
মেঘ ডানে-বামে ঘাড় নাড়িয়ে না সূচক জবাব দিলো। আহান প্লেট টা রেখে ওয়াশরুমে ঢুকে হাত ধুয়ে এসে মেঘের মুখ মুছিয়ে দিতে দিতে বললো
–“ওমা এখনো দেখোনি? তাড়াতাড়ি দেখো। ভিষন ইন্টারেষ্টিং একটা জিনিস। এখনই না দেখলে এই দারুন জিনিসটা একেবারে মিস করে ফেলবে।”
আহানকে এতোটা এক্সাইটেড হয়ে কথাটা বলতে দেখে মেঘ বেডের সাইডে থাকা ছোট্ট টেবিলটার উপর থেকে নিজের ফোনটা হাতে নিলো। তারপর ফোনটা অন করে হোয়াটস আপে ঢুকে একটা ভিডিও প্লে করতেই মেঘের চোখ জোড়া ছানাবড়া হয়ে গেলো। ‘ও’ হতবম্ভ হয়ে ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো
–“এটা কীভাবে হলো?”
আহান একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো
–“জানিনা। আজকে সকাল বেলা নিউজে দেখলাম কারা নাকি আবীরকে মেরে অজ্ঞান করে রাস্তার মাঝখানে ফেলে রেখে গিয়েছিলো। আর তারপর চলতি একটা ট্রাক এসে বেচারাকে একদম থেতরে দিয়ে চলে গেছে। আহারে!”
কথাটা বলে আহান নিজের ফেইসটাকে একদম দুঃখী দুঃখী বানিয়ে ফেললো। মেঘ খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে এসব আহানেরই কাজ। আহান মেঘকে এইভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটা ইনোসেন্ট ফেইস করে বললো
–“কি ব্যাপার এইভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেনো?”
মেঘ সন্দীহান কন্ঠে বললো
–“এটা তোমার কাজ তাইনা? সেদিন আবীর যেই গাড়িটায় উঠে পালিয়ে গিয়েছিলো ওটাতে তোমার গার্ড রা ছিলো। আমি দেখেছি! তাই আবীর পালানোর পরেও তুমি ওইভাবে নির্বিকার হয়ে দাড়িয়ে ছিলে কোনো রিয়্যাক্ট করোনি।”
মেঘের কথা শুনে আহান আকাশ থেকে পড়ার ভান করে বললো
“ছিহ ছিহ কি বলছো এসব? আমার মতো ইনোসেন্ট, ভদ্র, সভ্য একটা ছেলে কখনো এমন নির্দয়ের মতো কাজ করতে পারে বলো? তুমি জানো, ট্রাকের নিচে চাপা পরে আবীরের বডিটা একদম চ্যাপ্টা হয়ে রাস্তার সাথে মিশে গেছে। এমন ভয়ানক কাজ করা তো দূরে থাক আমি এইগুলা করার কথা ভাবতেও পারি না।”
কথাটা বলে আহান একদম বাচ্চাদের মতো ফেইস করে বসে রইলো। আহানের এমন নাটক দেখে মেঘ ফিক করে হেসে দিলো।
_________________________
সময় বহমান! সে সব সময় তার নিজস্ব গতিতে ছুটে চলে। ভালোবাসা, খুনশুনি, ঝগরার মধ্যে দিয়ে মাঝখানে কেটে গেছে আরো চারটা বছর। এই চার বছরে পাল্টে গেছে অনেক কিছু। হিয়ান আর আলিশার আরো একটা মেয়ে বেবী হয়েছে হয়েছে। যার নাম ইরানা। ইরানার বয়স মাএ এক বছর। আলিশা আর হিয়ানের বড় ছেলে ইহানের বয়স এখন ছয় বছর। সে এখন ক্লাস ওয়ানে পড়ে।
অভি আর দিশা এখন ইউরোপে সেটেল্ড হয়ে গেছে। সেখানেই আজম রহমানের পুরো বিজনেসটাই অভি আর দিশা মিলেই সামলায়। ওদের দু বছরের একটা ছেলেও আছে। যার নাম অর্ক। অর্ক নামটা মূলত অভির সাথেই মিলিয়ে রাখা হয়েছে। মেঘের টুইনজ বেবী হয়েছে একজনের নাম সারা আরেক জনের নাম সানা। দুজনেই মা-বাবার থেকে মামাদের বেশি ভালোবাসে। আহির আর মিহিরের সাথে ওদের এ্যাটাচমেন্ট টা বরাবরই একটু বেশি।
রাত 10:30
আজকে আহির আর মিহিরের বিয়ে ছিলো। তাই সারাদিনের কাজের ব্যাস্ততায় মেঘ দু দন্ডও বসার সময় পায়নি। আর সারাদিনে তেমন কিছু খেতেও পারেনি। সেইজন্যে আহান ঘর ভর্তি মানুষের সামনে বসে মেঘকে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে আর বকা দিয়ে যাচ্ছে। বিয়ে বাড়ি ভর্তি সব মানুষ জন আহান আর মেঘের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে টিপে হাসছে। মেঘের ইচ্ছে করছে নিজের চুল গুলো টেনে ছিড়ে ফেলতে। ‘ও’ ভালো করেই জানে যে ‘ও’ অনিয়ম করলে আহান ভয়ানক রেগে যায়। তারপরেও কেনো না খেয়ে থাকতে গেলো সেটা ভেবেই মেঘের মেজাজ খারাপ হচ্ছে। মেঘ খাবার খেতে খেতে আহানের দিকে ভিতু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চাপা স্বরে বলে উঠলো
–“কী করছো আহান? এভাবে সবার সামনে খাইয়ে দেওয়ার কী দরকার ছিলো বলো তো?দেখো তো সবাই কীভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।”
আহান ধমক দিয়ে বললো
–“শাটআপ। একদম মুখ বন্ধ করে বসে থাকবে। তোমার মুখ থেকে আর একটা শব্দ বের হলে আমি তোমাকে একটা আছাড়া মেরে একদম মাটির ভিতরে ঢুকিয়ে রাখবো।”
আহানের কথা শুনে মেঘ ভয়ে চুপশে গেলো। পাশ থেকে সারা আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে উঠলো
–“আছাড় মেরে তো মাম্মামকে মাটির মধ্যে ঢুকিয়ে রাখতে পারবে না পাপা। মাম্মামকে মাটির মধ্যে ঢুকাতে হলে মাটি খুরে তারপর ঢুকাতে হবে।”
সারার কথা শুনে আহান ঘাড় ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকালো। মেয়েটার বয়স মাএ সাড়ে তিন বছর। এর মধ্যেই মেয়েটা মারাত্মক পেকে গেছে। শুধু সারা না, সানাও সারার মতোই এচোড়ে পাকা। এক বোন যদি বুনো ওল হয়, তাহলে আরেক বোন হচ্ছে বাঘা তেতুল। তবে দুই বোনের মধ্যেই ভিষন ভালো বন্ডিং।দুনিয়া উল্টে গেলেও একজন আরেক জনের সাথে কখনো ঝগরা করে না। তবে সুযোগ পেলেই দুজন ইহান কে নাকানি চুবানি খাওয়ানোর জন্যে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। অথচ ইহান কখনো সারা, সানাকে কিছু বলে না। সে এই বয়সেই বোনদের প্রতি নিজের দ্বায়ীত্বটা খুব ভালো ভাবে বুঝে গেছে। আর তাছাড়া ইহান সারা, সানার মতো এতো চটপটেও না। ‘ও’ ভিষন শান্ত স্বভাবের।
এই মুহূর্তে সারা আর সানা দুজনেই আহানের সামনে দুটো টেডিবিয়ার কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আহান নিজের রাগটাকে যথা সম্ভব কন্ট্রোল করে শান্ত স্বরে সারা, সানাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
–“তোমরা এখনো ঘুমাও নি? এতো রাত জেগে তোমরা এখানে কী করছো?”
বাবার প্রশ্নের প্রতি উওরে সানা মুখ ফুলিয়ে বললো
–“ঘুমাতে গেছিলাম তো মামাদের কাছে। কিন্তু নানু মনি (মিড়া রহমান)বললো মামাদের সাথে আজকে আমাদের বাসায় যে নিউ গেষ্টরা আছে তারা ঘুমাবে। তাই আবার চলে এসেছি।”
মেঘ বললো
–“ওকে আজকে তাহলে সারা আর সানা গিয়ে মামনী পাপার রুমে ঘুমাবে।”
কথাটা বলে মেঘ বসা থেকে দাড়িয়ে সারা আর সানার দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই আহান আবারও মেঘকে ধমক দিয়ে বললো
–“খাবার শেষ না করে যদি এখান থেকে এক ইঞ্চিও নড়েছো তাহলে তোমার ঠ্যাং ভেঙে গলায় ঝুলিয়ে দিবো। চুপচাপ চেয়ারে বসো।”
আহানের ধমক খেয়ে মেঘ কাদো কাদো ফেইস করে চেয়ারের উপর বসে পড়লো। আহান সারা, সানার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো
–“তোমরা ড্রইংরুমে গিয়ে দশ মিনিট বসো। আমি তোমাদের মাম্মামকে খাবারটা খাইয়ে দেই। তারপর তোমাদের ঘুমোতে নিয়ে যাবো। ওকে?”
আহানের কথা শেষ হতেই সারা ভেংচি কেটে বললো
–“নো! আমরা তোমাদের কাছে ঘুমাবো না। আমরা নানাভাই আর নানু মনির রুমে ঘুমাবো।”
আহান চোখ গরম করে সারার দিকে তাকিয়ে বললো
–“আমি একটা কথা বারবার বলতে পছন্দ করি না সারা। আমি যখন বলেছি তোমরা আমাদের সাথে ঘুমাবে তখন তোমাদের আমাদের সাথেই ঘুমোতে হবে। এই নিয়ে আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না।”
আহানের কথা শেষ হতেই সারাও আহানের মতো করে বললো
–“আমিও একটা কথা বারাবার বলতে পছন্দ করি না পাপা। আমি যখন একবার ঠিক করেছি যে আমি নানুমনির রুমে ঘুমাবো। তখন আমি সেখানেই ঘুমাবো। সানা কী করবে সেটা ওর ব্যাপার।”
কথাটা বলে সারা হনহন করে আজম রহমানের রুমের দিকে চলে গেলো। সানাও ওর পিছনে পিছনে হাটা দিলো। আহান ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
–“এইটুকু বয়সেই এই মেয়ের এতো অ্যাটিটিউট কোথা থেকে এসেছে আমি তো সেটাই বুঝতে পারছি না। ঘাড় ত্যাড়া মেয়ে একটা।”
আহানের কথা শুনে মেঘ কিটকিটিয়ে হেসে বললো
“একদম তোমার মতো হয়েছে।”
আহান মেঘের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো
–“খুব হাসি পাচ্ছে তাইনা? একটা থাপ্পর মে*রে মুখে যতোগুলো দাত আছে সব ফেলে দিবো বেয়াদব মেয়ে।”
_________________________
সকাল বেলা ব্রেকফাস্ট করে সবাই মিলে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো হিয়ানদের পারিবারিক কবরস্থানে যাওয়ার উদ্দ্যেশে। সেখানে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আহির-সাড়িকা, মিহির-সাঈফা, দিশা-অভি, হিয়ান-আলিশা এগিয়ে গেলো সাজিদের কবরের দিকে। ওদের সাথে সারা, সানা আর ইহানও গেলো। ইরানা আর অর্ককে ওরা মিড়া রহমানের কাছে রেখে এসেছে। মেঘ আর আহান গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে দূর থেকেই সাজিদের কবর দেখতে লাগলো। ওরা প্রায়ই এখানে আসে। সাজিদের কবরের পাশে দাড়িয়ে সাজিদের সাথে কথা বলে। সারা আর সানাকেও নিয়ে আসে। সারা আর সানাও সাজিদের কবরের পাশের মাটিতে বসে বসে ওদের সাজিদ মামার জন্যে প্রে করে। তাকে ফিরে আসার জন্যে বলে। কিন্তু ওই অবুঝ বাচ্চা দুটো তো আর জানে না যে যারা একবার আল্লাহর কাছে চলে যায়। তারা আর কখনো ফিরে আসে না। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
কিছুক্ষন পর হিয়ান, আলিশা, অভি, দিশা গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো বাড়িতে যাওয়ার উদ্দ্যেশে। আহির, মিহির, সাড়িকা, সাঈফা এগিয়ে এসে আহান আর মেঘকে বলে লং ড্রাইভে যাওয়ার জন্যে বেড়িয়ে পড়লো। ওদের সাথে ইহানকেও নিয়ে গেলো। সারা আর সানাকেও নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু ওরা সাফসাফ জানিয়ে দিলো ওরা এখন ওদের সাজিদ মামাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।
মেঘ আর আহান দূরে দাড়িয়ে এক ধ্যানে সারা, সানার দিকে তাকিয়ে আছে। দুজনেই সাজিদের কবরের দিকে তাকিয়ে ননস্টপ কথা বলে যাচ্ছে। মেঘ আর আহান এগিয়ে গিয়ে সারা, সানার পিছনে দাড়ালো। তারপর মেঘ শান্ত স্বরে বলে উঠলো
–“সাজিদ মামার সাথে তোমাদের কথা বলা শেষ হয়েছে? শেষ হলে চলো এখন আমাদের বাড়িতে যেতে হবে।”
মেঘের কথা শুনে সানা ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাকিয়ে বললো
–“না এখনো শেষ হয়নি।”
মেঘ অবাক কন্ঠে বললো
–“এতোক্ষন ধরে কথা বলার পরেও বলছো এখনো শেষ হয়নি? কী এতো কথা বলছো শুনি?”
সানা ঠোট ফুলিয়ে বললো
–“সাজিদ মামাকে জিজ্ঞেস করছি উনি কবে আমাদের কাছে ফিরে আসবেন। ওনাকে আমরা খুব মিস করি। আচ্ছা মাম্মাহ সাজিদ মামা আমাদের সাথে না থেকে এই ছোট্ট ঘরটায় থাকে কেনো?”
মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
–“তোমার সাজিদ মামা তো খুব বেশিই ভালো মনের মানুষ ছিলো তাই আল্লাহ খুশী হয়ে তাকে নিজের কাছে ডেকে নিয়েছে। আর গিফট হিসেবে এই সুন্দর মাটির ঘরটা উপহার দিয়েছে। এখন আল্লাহর দেওয়া উপহারকে তো আর তোমার মামা অস্বীকার করতে পারে না, তাইনা? তাই সে এখানে থাকে।”
মেঘের কথা শেষ হতেই সারা মুখ কালো করে বলে উঠলো
–“তাহলে সাজিদ মামা কী আর কখনো আমাদের কাছে আসবে না? সারা জীবন এখানেই থাকবেন?”
মেঘ জোর পূর্বক হেসে বললো
–“কেনো আসবে না? অবশ্যই আসবে। আল্লাহ যেদিন তোমাদের প্রার্থনা শুনতে পাবে সেদিন আবার তোমাদের সাজিদ মামাকে তোমাদের কাছে ফিরিয়ে দিবেন।”
মেঘের কথা শুনে সারা আর সানা ঠোট প্রশারিত করে একটা হাসি দিয়ে আবারও সাজিদের কবরের সাথে কথা বলায় ব্যাস্ত হয়ে গেলো। হুট করেই মেঘের চোখ থেকে টুপ করে এক ফোটা পানি গরিয়ে পড়লো। আহান শান্ত স্বরে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে উঠলো
–“এসব বলে শুধু শুধু ওদের মনে মিথ্যা আশা কেনো জাগাচ্ছো বলো তো? সত্যিটা ওদের কেনো বলে দিচ্ছো না? তুমি যদি বলতে না পারো তাহলে আমি ওদের বুঝিয়ে বলছি।”
মেঘ ম্লানো হেসে বললো
–“কী বুঝাবে বলো তো? আর কী’ই বা বলবে, তোমাদের সাজিদ মামা আর বেচে নেই? সে মারা গেছে! এটা বলবে? কিন্তু মারা যাওয়ার অর্থই তো ওদের জানা নেই। তাহলে ওদের কীভাবে বুঝাবে?”
মেঘের কথার প্রতি উওরে আহান কিছু বললো না। সত্যিই তো এই ছোট ছোট বাচ্চা দুটো তো এখনো জন্ম-মৃত্যুর মানেই জানে না। তাদেরকে এসব বলেই বা কী হবে? কিন্তু যখন ওরা বড় হয়ে জানতে পারবে যাকে ওরা এতোটা ভালোবাসে সে আসলে বেচেই নেই। আর কখনো ওদের কাছে ফিরেও আসবে না। তখন ওদের কি রিয়্যাকশন হবে? নিশ্চয়ই ব্যাপারটা ওদের মনের মধ্যে ভিষন ভাবে দাগ কাটবে! আহানের এসব ভাবনার মধ্যেই মেঘ বলে উঠলো
–“জানো আহান, যখন সারা, সানা সাজিদের সাথে কথা বলে তখন আমার মনে হয় সাজিদ এখনো বেচে আছে। আমাদের মধ্যেই আছে। ‘ও’ হয়তো আমাদের থেকে অনেকটা দূরে চলে গেছে ঠিকই । কিন্তু আমাদের সবার মনের কোথাও না কোথাও ওর দুষ্টুমি মাখা চেহারার প্রতিচ্ছবি টা এখনো রয়ে গেছে। দিন কেটে মাস পেরিয়ে বছরও পেরিয়ে গেছে, কিন্তু আমরা কেউই ওকে এখনো ভুলতে পারিনি। আর হয়তো কখনো পারবোও না। ‘ও’ সব সময় আমাদের মনের কোথাও একটা থেকে যাবে। সারা জীবন থাকবে!”
#সমাপ্ত …..
(বিঃদ্রঃ শেষ পর্বে এসে সবার থেকে গঠন মূলক মন্তব্যের আশা করছি।😍)