#মেঘবতী_কন্যা পর্ব ১৮
#সুমাইয়া আক্তার মিম
পৌষের শীত মোষের গায়ে, মাঘের শীত বাঘের গায়ে।অর্থাৎ মাঘের শীত বাঘ মামাকেও কাবু করে।চারিদিকের হিম শীতল পরিবেশের কারণে এই প্রবন্ধটি মনে কড়া নাড়িয়ে যাচ্ছে।মস্ত বড় পুল সাইটের চারিদকটি দেওয়ালে আবদ্ধ,মাথার উপরে বিশাল ছাঁদ।রুফটপের পাশে শিড়ি বেয়ে নিচে নেমে গোলাকার আকৃতি জায়গা জুড়ে পুল সাইটটি তৈরি। চারপাশে হরেক রকমের ছোট বড় গাছ-গাছালি।ফল গাছ আর কিছু বনেদি গাছও রয়েছে।অসাধারণ ধরনের কয়েকটি বিদেশি গাছ রয়েছে যা দেখতে অনেকটা ফুল ঝাড়ের মতো। সিঁড়ির পাশে মিহানো দরজা বেদ করে তিরতির করে ঠান্ডা বাতাস রূপের শরীরে শীতের আভাস ছড়িয়ে দিচ্ছে।রূপ পুলের পাশে রাখা কাঠের সাদা চেয়ারটির উপর কুঁজো হয়ে বসে আছে আর কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বারিশের দিকে।বারিশ নিজের মতো করে সাঁতার কাটছে।রূপ বুঝতে পারে না এই মানুষটি আসলে কি ধারা তৈরি, এমন হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় বরফের ন্যায় ঠান্ডা পানিতে ধপাধপি করছে। অদ্ভুত। বিরক্তিতে রূপের মুখ থেকে ‘চ’ শব্দ বের হয়ে আসলো।না চাইতেও বার বার নির্লজ্জের মতো হা করে বারিশের দিকে তাকাতে বাধ্য হচ্ছে সে যার কারণে অতিরিক্ত রাগ হচ্ছে নিজের উপর।এতো সুদর্শন পুরুষকে এই অবস্থা দেখলে যেকোনো মেয়ে মিনিটে ঘায়েল হয়ে জ্ঞান হারাতো। পানিতে দীর্ঘ সময় কাটানোর ফলে ফর্সা শরীরটা দিগুন ফর্সা হয়ে গিয়েছে বারিশের,খুব আকর্ষণীয় দেখতে লাগছে তাকে।বারিশ সাঁতার কাটার ফাঁকে ফাঁকে রূপকে দেখছে আর তাঁর থমথমে লাজুক চেহারাটি দেখে বাঁকা হাসছে।রূপ চোখোলজ্জার ভয়ে তাকাবেনা বলেও বারবার তাকিয়ে রয়েছে যার দারুন প্রভাব বারিশের অদ্ভুত হাঁসি ও কয়েকটি গা জ্বালানো কথা শুনতে হয়েছে তাকে। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।বারিশ সাঁতার কেটে কিণরায় রূপের নিকটে এসে দুষ্টু দৃষ্টিতে রূপকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।বারিশের এমন লাগামহীন দৃষ্টি দেখে নিজেকে পা থেকে মাথা অবদ্ধি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নিলো কোনো ঘাপলা আছে কিনা!
না সব ঠিক ঠাক আছে।তাকে এমন চমকে গোল গোল চোখে পর্যবেক্ষণ করতে দেখে বারিশ হিসহিসিয়ে বলতে লাগলো,
‘উহুম জান!এতো ফর্মালেটি ম্যান্টেইন্ট করতে হবে না আমি তো। তোমাকে সব রকমে দেখার হক আছে সো ডোন্ট প্যানিক।’
কথাগুলো বলে ফ্লোরে ভর দিয়ে গালে হাত রেখে উপর নিচ পর্যবেক্ষণ করছে, রূপকে বিব্রত বোধ করানোর জন্য।রূপ নিজের গায়ের উরনাটা ঠিক করে লজ্জা মিশ্রিত চেহারায় রাগি দৃষ্টিতে কটমট কন্ঠে বলতে লাগলো,
‘আপনি বলেই তো এতো সচেতন থাকতে হয়। বিশ্বের সেরা নির্লজ্জ,বেশরম কসমের লোক আপনি।’
রূপের এমন কথা শুনে বারিশ মিটমিট করে হেঁসে উঠলো।ডান হাতে চুলগুলো জেরে পুল থেকে উঠে আসলো।বারিশকে উঠে আসতে দেখে রূপ শুকনো ঢোক গিলে সোজা হয়ে বসলো। অচেতন ভাবে হার্টটি ধরাম ধরাম করে বাজছে, মনে হচ্ছে ব্লাস্ট হয়ে যাবে।রূপ হা করে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে বারিশের দিকে বুকে হাত দিয়ে একবার চোখ বুজে আবার তাকালো।বারিশ একটি নীল রঙের হাটু অবদ্ধি প্যান্ট পড়ে আছে,উদুম সম্পূর্ণ শরীর দৃশ্যমান।বারিশের লোমহীন ধবধবে সাদা বুকে বিন্দু বিন্দু পানিগুলো খুব আকর্ষণীয় লাগছে।রূপ কয়েকটি শুকনো ঢোক গিলে তারাতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলো।কী কান্ড!সাধে কী নির্লজ্জ বেশরম বলি।আস্ত এক শয়তান। এইভাবে কেউ আসে অসভ্য,বরবর। রূপের রিতিমত ঘাম ছুটে গিয়েছে মনে মনে ইচ্ছেমত বারিশ কে বকে নিলো। লজ্জায় একদম লাল হয়ে গিয়েছে সে, তাকাতে পর্যন্ত পারছে না।কী যে একটা পরিস্থিতি!রূপের অবস্থা দেখে বরিশের খুব হাসি পাচ্ছে। রূপের এই লজ্জা লতা মুখটি তাকে বরাবরই টানে।এক পা এক পা করে রূপের খুব নিকটে চলে আসলো।চেয়ারে বসা রূপের দুই পাশে নিজের দুই হাতের উপর ভর দিয়ে রূপের মুখ বরাবর ঝুঁকে আসতে ভয়ে গুটিয়ে নিলো রূপ।বারিশ আরো চেপে আসলো, এখন জেনো দম বন্ধ হয়ে আসছে রূপের। ঠিকমতো তাকাতে পারছে না আর না শ্বাস নিতে পারছে।বারিশের ঠান্ডা নাকের সাথে রূপের নাকের ডগা ছুয়াতেই লাফিয়ে উঠলো রূপ।কী ঠান্ডা?রূপকে এমন লাফিয়ে উঠতে দেখে কিটকিটেয়ে হাসলো বারিশ।বারিশকে হাসতে দেখে রূপ ক্ষেপে গিয়ে বারিশের বুকে দুই হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে নিলে পুনরায় বারিশের উন্মুক্ত চওড়া বুক চোখে পরতে চোখ বন্ধ করে ভ্রু কুঁচকে অসহায় গলায় বললো,
‘প্লীজ সরুন না। এমন খাম্বার মতো হেলে পড়েছেন কেনো।’
রূপের কথা শুনে বারিশ বাঁকা হেসে রূপের গালে স্লাইট করে বলে উঠলো,
‘এতো লজ্জা পাচ্ছো কেনো রূপজান। নিজেকে এতো কষ্ট দিতে হবে না। তোমার দেখতে ইচ্ছে করছে সো দেখতে পারো আমি মাইন্ড করবো না।আমি তো তোমারি,যেমন খুশি যেভাবে ইচ্ছা দেখতে পারো।আই নো আই এ্যম হট চকলেট বয়। সারাদিন শুধু দেখতে ইচ্ছে হয়।সো ডোন্ট বি সাই্ বেবি।’
এমন ধরনের লাগামহীন কথা শুনে রূপের অবস্থা আগের থেকে আরো বেশি নাজেহাল হয়ে গিয়েছে।কী বিশ্রি কথা একদম খাপ ছাড়া। ইচ্ছে করছে বারিশের মাথাটা কুড়াল দিয়ে দু ভাগ করে দিতে।একটা মানুষ কতোটা অভদ্র নির্লজ্জ হতে পারে রূপের জানা নেই।সবার সামনে ইনোসেন্ট ইন্টেলিজেন্ট বয় আর তাঁর সাথে যতো বেশরমের মতো কর্ম কান্ড। বেশি রোমান্টিক জামাই হলে যা হয় আরকি। বারিশ রূপের থুতনিতে আলতো করে চেপে আরেকটু মুখ বরাবর আনে।পুরায় দুষ্টু হেসে বলে উঠলো,
‘কী হয়েছে চোখ খুলছো না কেনো রূপজান।জানো আমার এই হট বডি এক পলক দেখার জন্য শত মেয়ে মরিয়া হয়ে থাকে।আর তুমি কিনা এমন চোখে চেপে আছো।এটা কিন্তু ঠিক না বউ!’
এমন কথা শুনে চটজলদি চোখ খুলে চোখ পাকিয়ে তাকালো বারিশের দিকে।রূপের মেজাজ বিগড়ে যায়। মুহূর্তে রূপ অগ্নিমূর্তি রূপ ধারণ করে দাঁত কিরমির করতে লাগলো।রূপের এমন রূপ দেখে বারিশ কিছুটা ভরকে গেলো।বারিশ কিছু বলার জন্য প্রস্তুতি নিলে রূপ ফুসফুস করে বলে উঠলো,
‘আপনার এসব জিম করা বডি বানিয়ে মেয়েদের সামনে ‘সো’অফ করতে ইচ্ছে করে।’
রূপ বড্ড জেলাসি তা দেখে আনমনে হাসলো বারিশ।রূপকে আরেকটু বাজিয়ে দেখার জন্য বাঁকা হেসে বলল,
‘ইউ জেলাস মেরি জান।’
ভ্রু নাচিয়ে।রূপ বারিশের কথা শুনে দিগুন রেগে ক্ষিপ্ত নয়নে এদিক সেদিক তাকিয়ে রেগে বারিশের উন্মুক্ত বুকে ধাক্কা দিয়ে চিৎকার করে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলতে লাগলো,
‘আলবাত আমি জেলাস। বিয়ের পর এটা আপনা আপনি হয়ে যায় এতো উৎসাহ নিয়ে বলার কী আছে।কতো বড় সাহস বিয়ে করা বউয়ের সামনে বাহিরের মেয়েদের কথা বলছেন।আর এমন রং ঢং করে সং সেজে বাহিরে যাবেন না তাহলে খুব খারাপ হবে,বলে দিচ্ছি! অসহ্য লোক একটা।’
রূপ রিতিমত হাঁফাতে লাগলো।সারা মুখ রক্তিম আভা ছড়িয়ে গিয়েছে।বারিশ রূপকে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বললো,
‘এতো বড় সাহস কারোর নেই মেরি জান আমি তো মজা করছিলাম।এতো হাইপার হচ্ছো কেনো।আর এমন হবে না প্লীজ শান্ত হাও। তুমি যেমনটা চাবে তাই হবে।’
রূপ বারিশের খালি বুকে মাথা রেখে ফুসফুস করছে।রাগ এখনো কমেনি।বারিশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে সীমিত হেসে বলে উঠলো,
‘বাহ বুদ্ধির উন্নতি হয়েছে।এতো ভালোবাসা, তবুও মানতে নারাজ।এটা ঠিক না মেরি জান এমন করে আমাকে পুরিয়ে খুব মজা পাচ্ছো, তুমি তাইতো!’
রূপ কিছু বললো না চুপচাপ বারিশের কথা শুনছে।বারিশ রূপের দিকে রহস্য ময় হাঁসি দিয়ে বলল,
‘এখন ভালোবাসি বলবে নাকি আমি অন্য কাউকে…..!
কথাটা সম্পূর্ণ করার আগেই রূপ রেগে বুকে খামচি মেরে দিলো। হুমকি দিয়ে বললো,
‘ঠেং ভেঙে দিবো যদি মাথায় আজগুবি কোনো চিন্তা ঘুরঘুর করেছো তো।’
বারিশ কিছুটা ইনোসেন্ট ফেইস করে বুকে রূপের হাত চেপে বললো
‘আহ্হ্ রূপজান এতো জোরে কেউ নিজের বরকে আঘাত করে।আর এগুলো কেমন ভাষা ঠেং। আরেকবার এমন ফালতু ভাষা ব্যবহার করলে গাল লাল করে দিবো মেরে।’
বারিশ রাগি গলায় বললো কিন্তু রূপ পাত্তা না দিয়ে মুখ ভেংচি কেটে চলে যেতে নিবে বারিশ শক্ত করে কোমড় পেঁচিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।ধীর কন্ঠে বলল,
‘বারিশ শুধু তাঁর রূপজানের।পৃথিবীতে এমন কোন শক্তি নেই আমার থেকে তোমাকে আলাদা করবে।যে করার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করবে আই প্রমিস আমি তাকে নিজের ভাষায় শাস্তি দিবো। এই বিষয়ে তোমার মত পর্যন্ত নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করবো না। খুব ভালোবাসি আমার রূপজানকে আমার শেহেজাদীকে এবং দিন শেষে তোমাকেও তা মানতে হবে এবং প্রকাশ করতে হবে।’
রূপ বারিশের আড়ালে মৃদু হাসলো।বারিশ রূপের মুখটা উঁচু করে কপালে আলতো চুমু খেয়ে বললো,
‘চলো সাঁতার কাটবে!’
বারিশ রূপকে নিয়ে পানির দিকে এগুতে নিলে রূপ হাত ছুটিয়ে পিছিয়ে গিয়ে বললো,
‘উহু কখনো না।যা ঠান্ডা পানি, আমার ইচ্ছে নেই এই শীতের রাতে লাফালাফি করার।’
রূপের কথা শুনে শান্ত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখে রূপকে জোর করে কোলে তুলে নিলো। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।রূপ ছাড়া পাওয়ার জন্য চিৎকার চেঁচামেচি করাতে বারিশ ধমকে উঠলো। ভয়ে রূপ জড়সড় হয়ে কাঁপতে লাগলো। আজকে বড্ভ বেশি বলে ফেলেছে সে,না জানি কী করবে বারিশ তাঁর সাথে।বারিশ রূপকে নিয়ে পানিতে নামতে নিলে শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরলো বারিশের গলা চোখ বন্ধ করে মিনমিনে গলায় বলে উঠলো,
‘আমি সাঁতার জানি না এরোগেন্ট ম্যান প্লীজ পানিতে নামাবেন না।’
বারিশ রূপের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে আশ্বাস দিয়ে বলল,
‘আমি তোমার পাশে আছি মেরি জান সো চিল্। কিছু হবে না।’
রূপ আর কিছু বলেনি।বারিশ রূপকে নিয়ে পানিতে নামতে এক চিৎকার দিলো রূপ।এতো ঠান্ডা পানি মনে হচ্ছে হিমালয়ে এসেছে সে। রিতিমত কাঁপুনি ছুটে গিয়েছে।বারিশ কিটকিট করে হাসতে লাগলো। পুনরায় বলে উঠলো, কিছুক্ষণ থাকার পর সয়ে যাবে।তাই হলো কিছুক্ষণ পর আর ঠান্ডা লাগছে না।বারিশ রূপকে সাঁতার শিখাতে লাগলো রূপও খুব আনন্দের সাথে তা শিখছে। খুব ভালো লাগছে তাঁর। হাঁসি খুনসুটিতে সাঁতার কাটতে লাগলো। ছোট বেলায় একবার রূপ পুকুরে পড়ে গিয়েছিল, সাঁতার না পাড়ায় মরতে মরতে বেঁচেছে সে। রূপের খুব নাজেহাল অবস্থা ছিল যার প্রভাব একদিন জ্ঞান ফিরেনি তার। সেই দিন খুব কেঁদে ছিল বারিশ।
দীর্ঘ পনেরো মিনিট সাঁতার কাটার পর রূপকে পুল থেকে উঠিয়ে গায়ে তাওয়ালে জড়িয়ে দিয়ে বললো রুমে গিয়ে চেন্জ করে নিতে।রূপ আর কোনো কিছু না বলে মৃদু হেসে রুমে চলে যায়। তাঁর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো বারিশ, খুব শীঘ্রই তাঁর মেঘবতীকে সম্পূর্ণ নিজের করে নিবে।রূপ তাকে খুব ভালোবাসে সেটা জানা ছিল কিন্তু এতোটা ভাসে সেটা সে বুঝতে পারেনি।যার প্রমান রূপের জেলাসি। আনমনে হেসে বলল,
‘আমি তোমাকে ফোর্স করবো না রূপজান। তুমি তোমার মতো করে যখন খুশি যেইভাবে খুশি আমাকে আপন করে নিবে।আমি সেই দিনটির অপেক্ষায় দীর্ঘ কাল ধরে রয়েছি।খুব শীঘ্রই সেই অপেক্ষার অবসান ঘটবে।সব কিছু ঠিক তেমনটি হচ্ছে যেমনটি হওয়ার কথা ছিল।’
_
খাবারের টেবিলে বসে সকলে রাতের খাবার খাচ্ছেন।বারিশ নিজের হাতে সুন্দর করে রূপের প্লেটটি সাজিয়ে দিতে রূপ মৃদু হেসে নিজ হাতে খাবার খেতে লাগলো।সে বারিশকে কড়াকড়ি ভাবে বলে দিয়েছে,সে বাচ্চা নয় সে নিজের হাতে খেতে পারবে। প্রথমে বারিশ প্রচন্ড রেগে গেলেও রূপের জিদের কাছে তাকে পরাজিত হতে হয়।রূপকে জোর করে খাবার খাওয়ানো যায় না যদি এমন হয় তো বমি করে ভাসিয়ে দিবে সাথে কয়েকদিন অনশন করবে।তাই খাবার নিয়ে বারিশ রূপকে জোর করতে পারেনি।বারিশকে রূপের কাছে পরাজিত হতে দেখে বিজয়ীর হাসি ফুটে উঠে তাঁর ঠোঁট জুরে।ঠিকভাবে গুছিয়ে খেতে না পারায় বারিশের বিদ্রুপ করা কথা শুনতে হয় সবসময় তাকে।সবসময় বাচ্চাদের মতো মুখের চারিপাশে লাগিয়ে খাবে।যেখানে বারিশ খুব স্টাইল করে নম্র ভদ্র ভাবে খাবার খায় সেখানে রূপ সারা মুখে লাগিয়ে খাবার খাবে।যার কারণে সবসময় তাকে নিয়ে উপহাস করে বারিশ।
.
খাবারের পর্ব চুকিয়ে নিজেদের রুমে চলে আসে।বারিশ রুমে প্রবেশ করেই বিছানায় নিজের ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কাজ করতে শুরু করলো।রূপকে একবার বলেছে বই নিয়ে পড়তে বসতে প্রতি উত্তরে রূপ সাফ সাফ নিষেধ করে দিয়েছে নিউ ইয়ার উপলক্ষে সে ছুটিতে আছে তাই নো পড়াশোনা। রূপের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,
‘এখনি পড়তে বসবে। এখন মানে এখন।’
রূপ ভয় পেলো না।সে নির্দ্বিধায় বলে উঠলো,
‘বললাম তো পড়বো না এখন।আপনার মতো এতো পড়াশোনা আমার দ্বারা সম্ভব নয়।আমার ঘুম পাচ্ছে খুব,আর নিউ ইয়ার ছুটি সো নো পড়াশোনা।’ভাব নিয়ে।
বারিশ কিছুটা রেগে গিয়ে বলল,
‘একদম অতিরিক্ত সাহস দেখাবে না। চুপচাপ পড়তে এসে বসো।নাও ফাস্ট।’
কিছুটা ধমকে বললো।রূপ চোখ মুখ কুঁচকে গাল ফুলিয়ে বই নিয়ে বিছানায় বারিশের থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে ধরাম করে বসে পরলো। কোনো দিকে না তাকিয়ে বই দেখতে লাগলো সে।দীর্ঘ সময় দেখার পরও কিছুই মাথায় আসছে না তাঁর।বারিশ মনোযোগ দিয়ে রূপকে দেখছে। চোখের চশমাটা খুলে রূপকে ইশারা করলো কাছে আসতে রূপও কোনো বাক্য না করে তাঁর কাছে আসতে বারিশ তাকে পেছন থেকে জাপটে ধরে নিজের হাতে বইটি নিয়ে সোজা করে রূপের সামনে ধরলো।রূপ এতোক্ষণ উল্টো বই পড়ছিল বিষয়টি বুঝতে পেরে ঠোঁট কামড়ে আড়চোখে বারিশের দিকে তাকাতে থমথমে গলায় বললো,
‘একদম আমার সম্পত্তির উপর আঘাত করবে না রূপজান।’
কথাটা বলতে রূপ চট করে ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বইয়ের দিকে নজর দিলো।বারিশ বইয়ের দিকে তাকিয়ে পুনরায় বলে উঠলো,
‘পড়াশোনায় একদম অনিহা চলবে না, বেস্ট মার্ক আনতে হবে।সো বেশি বেশি পড়তে হবে তোমাকে। প্রতিদিন তুমি আমার কাছে পড়তে বসবে এবং টাইম টু টাইম পড়া শেষ করতে হবে। মনে থাকবে!’
রূপ বিরক্তি নিঃশ্বাস ফেলে নাক মুখ কুঁচকে বলে উঠলো,
‘এই জন্য বেশি বিলিয়েন্ট জামাই বিয়ে করতে নেই।জীবনটাই শুধু পড়া পড়া করে দিবে। হিটলার।’
রূপ কথা গুলো রাগের বসে বলে ফেললেও এখন ভয় হচ্ছে তাঁর। কাঁধের কাছে বারিশের ফুসফুস নিঃশ্বাস ভারী খাচ্ছে, না দেখে বুঝতে পারছে কতোটা রেগে আছে বারিশ। শুকনো ঢোক গিলে কিছু বলতে নিলে ধমকে উঠে বারিশ। নিজের ধারালো দাঁত হালকা করে বসিয়ে দিলো রূপের গলায়,কিছুটা ব্যথা পেলো রূপ কিন্তু ভয়ে টু শব্দ পর্যন্ত করেনি।বারিশ কানের কাছে গমগমে গলায় বললো,
‘তোমাকে সারাজীবন এই হিটলার জামাইয়ের সাথেই থাকতে হবে মেরি জান।আর আমার সব অত্যাচার সহ্য করতে হবে।’
রূপ কিছু বললো না।বারিশ পুনরায় দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে অস্থির কন্ঠে বললো,
‘এতো পড়াকে ভয় কেনো পাও রূপজান।পড়াশোনাই এতো অনিহা।কোনো রকমে টেনেটুনে পাস করেছো।’
বারিশের কথার পিঠে রূপ আনমনে মিনমিন করে বলে উঠে,
‘পাস করেছিতো!পাস করা বিরাট ব্যাপার। আমার ফ্রেন্ড ফুল তো ফেইল মেরেছে সেখানে আমি পাশ করেছি হু।’
কিছুটা বিরক্ত হলো বারিশ।এই মেয়ে বদলাবে না বড্ড ফাজিল।রূপকে কিছুটা ধমকে বললো,
‘পাস মার্ক নয়।ভালো মার্ক পেতে হবে গট ইট।’
রূপ ভয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো। ভয়ে আর কোনো কথা বলেনি। বারিশ যেমন যেমন বলছে ঠিক সেইভাবে পড়ে যাচ্ছে সে। একটানা দীর্ঘ এক ঘন্টা পড়ার পর বারিশের বুকে হেলান দিয়ে সুয়ে পরলো। জীবনে আজকে প্রথম টানা এতো পড়েছে কোনো বিরতি ছাড়া। উফ্ কি যে কষ্ট পড়াশোনা করা।রূপ তাদের খুব লাকি ভাবে যাদের পড়াশোনা নেই। তাঁর মতে যে পড়াশোনা আবিষ্কার করেছে তাকে যদি পেতো তাহলে এমন অবস্থা করতো পড়াশোনা সব ভুলিয়ে দিতো। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম। অসভ্য লোক এতো পড়াশোনা তৈরি করার কী প্রয়োজন ছিল। শুধু শুধু আরামের সময়গুলো নষ্ট করা।
বারিশ রূপের দিকে তাকিয়ে বই আর ল্যাপটপটি গুছিয়ে বিছানার পাশের টেবিলে রেখে দিলো। সোজা হয়ে শুয়ে রূপকেও নিজের সাথে ভালো ভাবে জড়িয়ে নিলো। আলতো হাতে রূপের চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে, রূপ বারিশের বুকে মাথা রেখে কিছু ভেবে বলে উঠলো,
‘এই যে শুনছেন!’
বারিশ চোখ বুজে রাখা অবস্থায় ধিরে কন্ঠে বলল,
‘হুম।’
রূপ কোনো ভনিতা না করে বললো,
‘আগামীকাল নিউ ইয়ার তাই আমার গিফট চাই!’
রূপের এমন বাচ্চামো দেখে আনমনে হাসলো বারিশ।ধীরে কন্ঠে পুনরায় বললো,
‘তা তো অবশ্যই।তো কি গিফট চাই আপনার।’
রূপ উৎফুল্ল হয়ে হাঁসি মুখে বারিশের দিকে ফিরে বলে উঠলো,
‘আমার একটা এতো টুকু সাইজের ছোট বিলাই চাই। খুব কিউট দেখতে হবে বিলাই ছানাটা। আনিয়ে দিবেন,কেমন।’
রূপের কথা শুনে বারিশ ভ্রু কুঁচকে বললো,
‘হুয়াট বিলাই রূপজান।বিড়ালকে তুমি বিলাই বলছো।’
রূপ মিনমিনে গলায় বললো,
‘হু আমি বিড়ালকে ভালোবেসে বিলাই বলি। কেনো কী হয়েছে। আপনি শুধু কালকে আমাকে একাটা সুন্দর দেখে বিলাই মানে বিড়াল আনিয়ে দিবেন।’
বারিশ মৃদু হেসে রূপকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘সকালে পেয়ে যাবেন আপনার বিলাইর বাচ্চা।’
কথাটা বলে হেসে দিলো বারিশ রূপও লজ্জা পেয়ে হেসে দিলো। এখানে এতো হাসার কি আছে বিলাই বলাতে হাসার কী আছে আজীব।
বারিশ হাসি থামিয়ে বেঙ্গ্য করে বললো,
‘তো তোমার বিলাই বাবুর কী নাম দিবে ঠিক করলে?’
‘এদম আমাকে পিন্চ মেরে বেঙ্গ্য করবেন না।আর আমি নাম ঠিক করিনি।’
রূপকে গাল ফুলাতে দেখে বারিশ আলতো টেনে দিয়ে বললো,
‘স্মাইলি রাখবে। পছন্দ হয়েছে।’
রূপ খুশি হয়ে বললো,
‘অনেক বেশি সুন্দর। ধন্যবাদ।’
বারিশ মৃদু হাসলো। রূপের মাথায় পুনরায় বিলি কেটে দিতে লাগল।একসময় রূপ বারিশের বুকে ঘুমিয়ে পরলো।বারিশও তার মেঘবতীকে দেখতে দেখতে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।
#চলবে,,❣️
[লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম✵]
❌কার্টেসী ছাড়া গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ❌
(সকলের গঠন মূলক মন্তব্য আশা করছি। গল্প সম্পর্কে সবাই গঠন মূলক মন্তব্য করুন। ধন্যবাদ)