বিষাক্তময় আসক্তি – পর্ব ৩৭

0
1089

#বিষাক্তময়_আসক্তি (The Villain 😈)
#Sumaiya_akter_Mim
#পর্ব_৩৭…………🌼

(এই পর্বটা আগামীকাল পোস্ট করার কথা ছিল কিন্তু আগামী কাল রাতে আমর হাত কেটে গিয়েছে , কিছুটা লিখা ছিল কিন্তু কাঁটা হাতে বাকিটা লিখা সম্ভব নয় তাই আজকে লিখে পোস্ট করেছি এবং বড় করেও দিয়েছি তাই মনে মনে কেউ অসন্তুষ্টি হবে না 🌸)

“ঘন কালো অন্ধকার রাত কোথাও জনমানবের চিহ্নটুকু নেই।।সারা সন্ধ্যায় প্রচুর ঝড় হয়েছে,প্রচুর তুষারপাতের কারণে গাছ-পালা রাস্তা গুলো ডুবে আছে সাদা বরফে।। অন্ধকারে কোনো কিছুই দেখা যাচ্ছে না মানুষজন সব কাজ ফেলে বিকেলে ঝড় উঠার আগেই নিজ গন্তব্যে ফিরে গেছে আর যারা বাকি তাঁরা হয়তো আজ ফিরতে পারবেনা।রাত তখন নয়টার কাঁটা পেরিয়ে দশটার কাছে পৌঁছে গেছে নিস্তব্ধ হয়ে আছে সম্পূর্ণ নিলাম বেলী। বেশিরভাগ মানুষ জন খেয়ে ঘুমিয়ে পরেছে।।ঝড়ের কারনে মেইন কারেন্ট এর পাল্লা পরে গেছে তাই অধিকাংশ ঘরে কারেন্ট নেই কিন্তু বেশিরভাগ ঘরে জেনারেটর থাকায় আলো জ্বলছে কেউ আবার আলো নিভিয়ে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেছে।।
“খান বাড়ির পুরো জায়গায় জুরে আলো জ্বলছে আলোর তিব্রতা বলে দিচ্ছে এখন দিনের বেলা কিন্তু না এটা রাতের বেলা।।বাড়ির গার্ডরা লম্বা জ্যাকেট পরে হুডি দিয়ে নিজেদের কাজ করছে।।এতো ঠান্ডা আর ঝড়ে ও তাদের ছুটি নেই।। হঠাৎ বাড়ির গেইটের কাছে কালো চকচকে গাড়িটা দেখে গার্ড তাড়াতাড়ি করে গেইট খুলে দিলো।।”

“ঝড় শেষ হয়ে এখন ঝিরিঝিরি স্নোফল হচ্ছে, বাতাসের ঝাপটানি এখন আগের চেয়ে একটু কম।।।
গাড়ি থেকে নামতে একজন গার্ড ছাতা নিয়ে দাঁড়ালো।। ইরফান বড়বড় পা ফেলে গটগট করে ভেতরে চলে গেল।।কোনো দিকে না তাকিয়ে উপরে নিজের রুমে চলে গেছে।। রুমের ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পেলো আয়ানা ঘুমে তলিয়ে আছে।। শক্ত করে বালিশ বুকে জড়িয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে ঘুমাচ্ছে সে। সেই বিকেল থেকে ঘুমাচ্ছে একবারও উঠেনি ইরফান একজন মেয়ে র্সাভেন্টকে বেশ কয়বার কল করে জেনে নিয়েছে আয়ানা উঠেছি কিনা কিন্তু না আয়ানা ক্লান্ত থাকায় একবার ও তাঁর ঘুম ভাঙ্গেনি।। ইরফান দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথার হের্টটা খুলে টেবিলের উপর রেখে আয়ানার দিকে এগিয়ে যায়।আয়ানার চেহারা দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে কপালে চুমু খায় হাত দুটো তাঁর আয়ানা থেকে দূরে রেখেছে যাতে স্পর্শ না লাগে, আস্তে করে ঠোঁট ছুঁইয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।।।এই হাত না ধুয়া অব্দি তাঁর জানকে ছুঁয়ে দিবে না কারন এই হাত দিয়ে সে আবারো একটা জান নিয়েছে! পৃথিবীর বুক থেকে আবর্জনা পরিষ্কার করেছে।। তাঁর জানের দিকে বাড়ন্ত হাত উপড়ে দিয়েছে সে, খুব আয়েশ করে একটু একটু করে মেরেছে জীবিত অবস্থায় তিল তিল করে কষ্ট দিয়েছে।। তাঁর পরীকে কষ্ট দিয়েছে তাই ওই নর্দমার বাঁচার অধিকার নেই। ইরফানের খুব শান্তি লাগছে লোকটাকে কষ্ট দিয়ে মেরে। সে ঝর্না ছেড়ে এর নিচে দাঁড়িয়ে পরে ।। নিজের হাতের দিকে তাকালো হাত থেকে রক্ত পরছে সে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে কটমট করে বললো,,,

—-তোমার শরীর থেকে যতোটুকু রক্ত ঝরেছে তাঁর থেকে দিগুন আমার হাত থেকে ঝরিয়েছি। তুমি একা কেনো কষ্ট পাবে তোমার সব কষ্ট আমার তোমার কষ্ট গুলো আমি দুমরে মুচড়ে শেষ করে দিবো বলে জোরে দেওয়ালে বারি মারলো , কাঁটা স্থান থেকে গরগর করে রক্ত বের হচ্ছে ইরফান সেদিকে একবার তাকিয়ে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে গেলো।।।

“কালো ট্রি-শার্ট আর টাওজার পরে তাওয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয় ইরফান।।আয়ানা ঠিক আগের মতো করে ঘুমিয়ে আছে কোনো নরাচড়া নেই। ইরফান তখন পেইন কিলারের সাথে একটা ঘুমের ওষুধ দিয়েছে যাতে আয়ানা তাঁর ফিরে আসার আগ পর্যন্ত না উঠে।অন্যকেউ এটা খেলে দুইঘন্টা পর উঠে যেতো কিন্তু আয়ানা উঠে যাওয়া তো দূরের কথা একটু নড়াচড়া পর্যন্ত করছে না।। ইরফান আয়ানার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ড্রয়ার থেকে ফার্স্ট এইড বক্স বের করে নিজে নিজে হাতের ওয়াশ করে এতে মেডিসিন লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে নিলো।।।ডান হাতে হওয়ায় ভালোভাবে ব্যান্ডেজ করতে পারেনি।। সবসময় ব্যথা পেলে নিজে নিজের চিকিৎসা করে ইরফান। কাউকে ছুঁতেও দেয় না আসফিয়া খান এসে করতে চাইলে বলে, নিজের কাজ আমি নিজে করতে পছন্দ করি আম্মিজান আপনি এতো টেনশন নিবেন না।। নিজের কষ্ট বাহিরে প্রকাশ করা মানে সকলের কাছে সে দূর্বল হয়ে পরবে আর এটা সে কখনো মেনে নিবে না।। কখনো কাউকে নিজের দূর্বলতা দেখাতে সে প্রস্তুত না। কিন্তু এখন সবাই তাঁর দূর্বলতা জেনে গেছে তাই তাকে আরো সাবধান হতে হবে ইরফান আয়ানার দিকে তাকিয়ে টেবিল থেকে মোবাইল নিয়ে র্সাভেন্টকে কল করে বলে দেয় ডিনার নিয়ে উপরে আসতে।।।।

—————————————–

“আহ্হ্হ্হ্হ্হ্হ্ জোরে চিৎকার এর আওয়াজ পেয়ে সকল গার্ড এসে বির জমালো নিশানের রুমের সামনে।।নিশান জোরে চিৎকার করছে আর হাতের বন্দুক দিয়ে সামনে যা আছে সব গুলো উড়িয়ে দিচ্ছে।।নিশানের চিৎকার শুনে সবাই ভয় পেয়ে গেলো।নিশান এবার চোখ ঘুরিয়ে গার্ডদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জোরে চিৎকার করে বললো,,,

—-পারিস্ নি তোরা কেউ ওই মেয়েকে আনতে পারিসনি !আমি ওই মেয়েকে চেয়েছিলাম ইফরান খানের বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় এটাকে শেষ করতে পারলে ইফরান খান ও শেষ কিন্তু তোরা আবার আমাকে নিরাশ করলি আবার আমার লোকের মৃত্যু। আমি আর মানতে পারছি না আমি আর হার মানবো না যেই করে হোক ওই মেয়ের লাশ চাই আর এটাই শেষ বার যদি না পারিস ইরফান খান শেষ করার আগে আমি তোদের শেষ করবো বুঝতে পেরেছিস হাতের বন্দুক সবার দিকে ঘুরিয়ে।।‌

—-জ্বী বস। সবাই এক সাথে বলে উঠলো।।।নিশান সবাইকে যেতে বলে শান্ত হয়ে হুইলচেয়ারে বসে পরলো তারপর মনে মনে ভাবতে লাগলো।

—-একটাও বাঁচবে না।একটাও না। ইরফান সব কটাকে মেরে ফেলবে কপালের ঘাম মুছে। আমাকে ও মেরে ফেলবে এর আগে আমাকে ওই মেয়েকে মারতে হবে ঢোক গিলে নিচে পরে থাকা ছবি গুলো তুলে দেখতে লাগলো।। এগুলো তাঁর লোকদের মৃত্যু ছবি এখানে খুব ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছে কতো হিংস্র ভাবে মেরেছে লোকগুলোকে।। তাঁর নামে পার্সেল করেছে ছবি গুলো তাঁর লোক প্রতিবারের মতো খুব সাবধানে পার্সেল নিয়ে এসেছে যাতে কেউ সন্দেহ না করে সে লন্ডনের কোথায় থাকে।। ইরফান জানে নিশান লন্ডনে কোথাও লুকিয়ে আছে তাই তাঁর নামে লোক দিয়ে সবসময় তাঁর লোকদের মৃত্যু ছবি পার্সেল করে দেয় কিন্তু কখনো তাকে খুঁজার চেষ্টা করে না যদি করতো তাহলে নিশান কে খুঁজা ইরফানের বা হাতের কাজ।।নিশান যা করেছে আজকের পর তাকে ইরফান খুঁজে বের করে মেরে ফেলবে তাঁর আগে তাকে এই জায়গাটা ছাড়তে হবে তারপর আয়ানাকে ও খুব শীঘ্রই শেষ করতে হবে সে জানে তাঁর মৃত্যু খুবই নিকট তাই মরে যাওয়ার আগে নিজের সাথে করে ইরফানের প্রান ভোমরাকে ও নিজের সাথে করে নেওয়ার প্রস্তুতি করতে হবে এবং সেইটা খুবই তাড়াতাড়ি করতে হবে।।।।।।

_____”খানবাড়ি”🌸
একজন র্সাভেন্ট এসে খাবার দিয়ে গেলে ইরফান আয়ানাকে সোজা করে বসিয়ে দিয়ে পিঠের পিছনে বালিশ দিয়ে আধসোয়া অবস্থায় খাইয়ে দেয়।।আয়ানা তখনো ঘুমে কাদা।‌ইরফান আয়ানার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।আর মনে মনে বললো “ঘুমপরী”। ইরফান আয়ানার সাথে বিভিন্ন কথা বলে খাইয়ে দিচ্ছে,আয়ানা ঘুমের মাঝে হুম হা করে খেয়ে যাচ্ছে। ইরফান কথা বলার মাঝে আয়ানাকে খাইয়ে দিচ্ছে যাতে করে আয়ানা খেতে অনিহা করছে না।। ইরফান প্রায় সময় আয়ানা ঘুমিয়ে থাকলে এই ভাবে খাইয়ে দেয় আয়ানার ঘুমের মাঝে খাওয়ার অভ্যাস আছে তাই ইরফান কে ও বিরক্ত না করে ঠিক ভাবে খেয়ে নেয়।। ইরফান আয়ানাকে খাইয়ে দিয়ে নিজে ও খেয়ে নেয়।।তারপর আয়ানাকে জরিয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে ঘুমিয়ে পরে।। আজকে অনেক ক্লান্ত থাকায় চোখের মাঝে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম পরীরা চলে আসে আর সে তাঁর জানকে জড়িয়ে আরেকটা সুখের রাত পার করে।।লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।।

“খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পরে আয়ানা কালকে সারা রাত পরে পরে ঘুমিয়েছে সে।তাই ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে পরেছে।।আয়ানা ঘুম থেকে উঠে এক হাত ইরফানের বুকে ভড় দিয়ে উঠতে যাবে তখন তাঁর মনে পরলো সে এটা কি করছে যদি ইরফান উঠে পরে তাহলে তাঁর মাথা ফাটাবে।।আয়ানা আস্তে করে মাথাটা ইরফানের বুক থেকে তুলতে ইরফান নড়েচড়ে ওঠে আয়ানার মাথাটা আরো শক্ত করে চেপে ধরলো।।আয়ানা এবার ইরফানের হাতের মাঝে আটকা পড়েছে।।আয়ানা কোনো উপায় না পেয়ে ইরফান এর বুকে হাত রেখে ধীরে ধীরে ধাক্কা দিয়ে ডাকতে লাগলো।। ইরফান ঘুম ঘুম চোখে আয়ানার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,,,,

—-কী হয়েছে?এমন কৈই মাছের মতো লাফাচ্ছো কেনো, বলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।।।
—–ইস্ আমার হাড্ডি সব গুরো হয়ে গেল। কিছুটা জোরে বললো আয়ানা।।।।
—-তোমার যে তুলতুলে নরম সফ্ট শরীর আর তাঁর সাথে নরম হাড্ডি একটু ধরলে মনে হয় ভেঙ্গে যাবে।।।
—-আমি নামাজ পরবো। ঠোঁট উল্টিয়ে।।
—-ঠিক আছে চলো বলে কপালে চুমু খেয়ে আয়ানাকে কুলে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।।।
দুজন একসাথে ফ্রেশ হয়ে উযু করে দুজনে ফজরের নামাজ পরে তারপর আয়ানাকে পুনরায় কুলে করে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজেও আয়ানার মাথা বুকে জড়িয়ে তাঁর পাশে শুয়ে পড়লো ।।আয়ানা বিরক্তির সাথে বললো,,,,

—-আমি আর ঘুমাবো না।কাল বিকেল থেকে ঘুমিয়েছি এখন চোখে বিন্দুমাত্রও ঘুম নেই।। আমাকে ছাড়োন ঠোঁট উল্টিয়ে।।।
—-ওহু আমার ঘুম কমপ্লিট হয়নি এখন আমি ঘুমাবো। ঘুমের মাঝে একদম বিরক্ত করবে না তাহলে শাস্তি পেতে হবে চোখ বন্ধ করে আয়ানাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো।।।
—-আমি এখন কী করবো 🥺
—-যা খুশি। ইচ্ছে হলে আমাকে আদর করতে পারো আমি মাইন্ড করবো না।।‌চোখ বন্ধ অবস্থায় মৃদু হাসলো।।।
—😳।।
আয়ানা আর কিছু বললো না ইরফানের বুকে চুপটি করে শুয়ে রইলো। নিজের মোবাইলটা চার্জে দেওয়া ওইটা থাকলে গেইমস খেলা যেতো।।আয়ানা বিরক্ত হয়ে শুয়ে আছে আর ইরফান ঘুমিয়ে আছে।।আয়ানা একবার চোখ তুলে ইরফানের দিকে তাকালো।। ঘুমন্ত ইরফানকে তাঁর কাছে বরাবরই ভালো লাগে এতো কিউট যে সে বুঝাতে পারবে না।। ঘুমিয়ে থাকলে নিষ্পাপ বাচ্চাদের মতো লাগে আর জেগে থাকলে রাগি এরোগেন্টের মতো লাগে।। ইরফানের সিল্কি সিল্কি চুল গুলো চোখের সামনে এলোমেলো হয়ে পরে আছে আয়ানার খুব ইচ্ছে করছে ওই চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে দিতে ।।কতো সফ্ট চুল গুলো।। ইরফানের খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো বেশ মানিয়েছে তাকে একদম প্রিন্স চার্মিং এর মতো দেখতে। ইচ্ছে করছে ওই খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো নিয়ে খেলতে।।।

—-আমার ঘুমের সুযোগ নিচ্ছো আয়ু।।এটা ঠিক না এই ভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে না দেখে আমাকে সরাসরি দেখলে ও তো পারো আর এতোই যদি আদর করতে ইচ্ছে হচ্ছে তাহলে করে নাও আমি তো এটাই চাই বাঁকা হেসে।।‌
ইরফানের কথা শুনে আয়ানা ভরকে গেলো তাড়াহুড়ো করে আবার বুকে মাথা রেখে শক্ত করে চোখ চেপে বন্ধ করে নিলো।।।ভিষন লজ্জা পেয়েছে সে।।‌ইরফান আয়ানার মাথায় চুমু খেয়ে ছোট টেবিল থেকে নিজের মোবাইলটা নিয়ে আয়ানার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,,,

—-আর লজ্জা পেতে হবে না ।।‌এইটা দিয়ে গেইমস খেলো।।।
ইরফানের কথা শুনে আয়ানা মোবাইলটা নিয়ে নিচু হয়ে মৃদু হেসে মোবাইল দিয়ে মাথায় চাপড় মারলো মোবাইল অন করতে নিজের ছবি দেখে মুচকি হাসলো নিজের বার্থডে ডেইট দিতে মোবাইল আনলক হয়ে গেল।।আয়ানা প্রোফাইলে নিজের আর ইরফানের একটা ছবি দেখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল।।এটা এনগেজমেন্ট এর ছবি খুব কিউট লাগছে দুজনকে।।আয়ানা আড়চোখে ইরফানের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে ওয়াইফাই কানেক্ট করে টেম্পল রান গেইমটি ডাউনলোড করে ইরফানের বুকে সুন্দর ভাবে শুয়ে খেলতে লাগল।এটা তাঁর প্রিয় গেইম ‌‌।। তাঁর সবচেয়ে প্রিয় গেইম হলো টকিং এনজেল তাঁর মোবাইলে আছে সে সবসময় এটা খেলে তাঁর খুব পছন্দের গেইম।এটার সাথে কথা বলতে খুব ভালো লাগে তাঁর এনজেলের নাম হার্ট দিয়েছিল কিন্তু এটা যদি ইরফান শুনতে পারে মোবাইলের ভেতর ঢুকে এনজেলকে মারবে সাথে তাকে ও শাস্তি দিবে তাই নাম পরিবর্তন করে শুধু এনজেল রেখেছে।।আয়ানা শুয়ে শুয়ে গেইমস খেলছে তাঁর গেইমস জমে গেছে তাই কোনো দিকে তাঁর হুঁশ নেই।। ইরফান ঘুমের মাঝে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে আয়ানাকে।‌।।

“ঘড়িতে সকাল 8:30 বাজে ইরফান ঘুম থেকে উঠে আয়ানার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে এখনো গেইমস খেলছে।। খেলছে বললে ভুল হবে মোবাইল হাতে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে।। তাঁর গেইমস ভালো জমে গেছে ইরফান ভ্রু কুঁচকে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখলো আয়ানা খুব ভালো স্কোর করেছে।।তা দেখে ইরফান মুচকি হাসলো তারপর দুষ্টুমি করে আয়ানার হাতে হালকা ভাবে ধাক্কা মারলো ।।ব্যস এতোটুকুই আয়ানার এতোক্ষনের সব পরিশ্রম পানি ছাড়াই ধুয়ে গেল ইরফান হা করে তাকিয়ে আছে সে ভাবতে পারেনি এমন কিছু হবে সে তো খেলায় ডিস্টাব করতে চেয়েছিল, কিন্তু আয়ানা যে এইভাবে হাত থেকে মোবাইল ফেলে দেবে আর গেইমের চপাট বাঁচিয়ে দেবে ইরফান তা ভাবেনি।।। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।
আয়ানা চোখ গুলো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে এটা কি হলো তাঁর এতো কষ্ট সব শেষ তাঁর গেইমস কেউ ভন্ড করে দিলে খুব রাগ লাগে তাঁর।।।আয়ানা ইরফানের বুকে ধাক্কা দিয়ে উল্টো দিকে হয়ে কটমট করে ইরফানের দিকে তাকিয়ে দাঁতের সাথে দাঁত ঘসতে লাগলো তাঁর কি যে করতে ইচ্ছে হচ্ছে সে নিজেও জানে না।। ফুসফুস করছে তাঁর এমন ফুসফুসানি দেখে ইরফান ঢোক গিলে হেসে বলতে লাগলো,,,,,,

—-গুড র্মনিং মেরি জান! আমি ইচ্ছে করে করিনি।।
আয়ানা ঠোঁট উল্টিয়ে কিছু না বলে উঠে চলে যেতে নিলে ইরফান টান দিয়ে নিজের উপরে ফেলে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে বললো,,,
“কী হয়েছে পিচ্চি রাগ লাগছে, আমাকে কামড়াতে ইচ্ছে করছে।‌। তাহলে কামড়িয়ে দাও বাঁকা হেসে।।।

—-আপনি ইচ্ছে করে এমন করেছেন আমি জানি। দাঁতে দাঁত চেপে।।‌
ইরফান আয়ানাকে আরেকটু চেপে ধরে বলল,,,
—-তো কী করবো বউ তো আমার দিকে তাকাই না।একটু ও ভালোবাসেনা। বাচ্চাদের মতো ফেইস বানিয়ে।।।
ইরফানের কথা শুনে আয়ানার ভিষন হাসি পেলো।।সে নিজের হাসি আটকে রাখলো।। তারপর মাথা নিচু করে বললো,,,,
—-আমি ফ্রেশ হবো। আমার ক্ষুধা পেয়েছে।।।
আয়ানার কথা শুনে ইরফান উত্তেজিত কন্ঠে বললো।।
—-তুমিতো অনেকক্ষণ হলো উঠেছো নিশ্চয়ই খুব ক্ষুধা পেয়েছে আমাকে এতোক্ষণ ডাকোনি কেনো রাগি চোখে তাকিয়ে।।।‌
—–না-না আমার মাত্রই ক্ষুধা পেয়েছে ঠোঁট উল্টিয়ে।।।
—-ওকে পাঁচ মিনিট এর মধ্যে ফ্রেশ হয়ে আসো।।।আয়ানা মাথা নাড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।।।।
আয়ানা ফ্রেশ হওয়ার পর ইরফানও ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে নাস্তা করে নিলো আজকে খাবার খেয়ে আয়ানা খুব খুশি । আজকে সব তাঁর পছন্দের খাবার ।।।।

“দুপুরে দিকে——-🌸
“ইলিশ মাছ আর মাংশ কষার গন্ধে মৌ মৌ করছে চারিপাশ।। আজকে সব তাঁর পছন্দের খাবার রান্না হচ্ছে। বিরিয়ানি, কষা মাংস ইলিশ মাছ,কাবাব, চিকেন ফ্রাই,পায়েস,ক্ষির আরো অনেক কিছু সবই আয়ানার প্রিয়।।‌ আয়ানা ড্রয়িং রুমে বসে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে আসফিয়া খানের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,,,,

—-আম্মিজান আজকে সব ভিন্ন ধরনের রান্না কেনো হচ্ছে।।‌
আয়ানার কথা শুনে আসফিয়া খান , সাফিয়া হেসে দিলো।। আসফিয়া হেসে জবাব দিলো,,,
—আজকে সব তোমার পছন্দের খাবার তৈরি হচ্ছে।। ইরফানের র্নিদেশ ।। বলে উনি হেসে রান্না ঘরে চলে গেলেন।।।আয়ানা মৃদু হাসলো।।।

“আজকে শুক্রবার তাই ইরফান শাওয়ার নিয়ে কিছুক্ষণ আগে মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়তে গিয়েছে।।।। সকালের খাবার খাওয়ানোর সময় ইরফানের হাতে ব্যান্ডেজ দেখে আয়ানা জিজ্ঞাসা করেছিল কী করে হাত কেটেছে, বিনিময়ে ইরফান শুধু বলেছে ।।। তুমি যতটুকু কষ্ট পাবে আমি তার থেকে নিজেকে বেশি কষ্ট দিব।।আর কিছু বলেনি আয়ানা। শুধু খেয়েছে আর আড়চোখে ইরফানকে দেখেছে।। খাওয়া শেষে ইরফান তাকে মেডিসিন খাইয়ে দিলো তারপর গলার ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করে মলম লাগিয়ে নতুন করে ব্যান্ডেজ করে দিলো।।‌ নামাজের আযান দিতে শাওয়ার নিয়ে আয়ানাকে ফ্রেশ হতে বলে।আয়ানা ফ্রেশ হলে ইরফান রেডি হয়ে আয়ানাকে নিয়ে নিচে চলে আসে আয়ানাকে আসফিয়ার কাছে দিয়ে নামাজ পড়তে চলে যায়।।।। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।

“আয়ানা হা করো আসফিয়া এক বাটি নুডুলস এনে চপস্টিক দিয়ে আয়ানার মুখের সামনে ধরল।।।

—-আম্মিজান আমি এখন খাবো না। কিছুক্ষণ আগেই তো খেলাম।।।মুখ কুঁচকে ।।।।।।

—-হুম হা করো অনেকক্ষন হয়েছে খেয়েছো।। তখন 9:30 আর এখন এগারোটা বাজে হালকা খেয়ে নাও তো দেখি বলে নুডলস্ খাইয়ে দেয়।।আয়ানা ও ইচ্ছে না থাকার শর্তে খেয়ে নেয়।এই বাড়ির সবাই তাকে খাইয়ে খাইয়ে একদিন মেরে ফেলবে।।।। নুডলস্ টা খুব মজার ছিল তাই কোনো বাহানা ছাড়া খেতে লাগলো।। আসফিয়া খানকে প্রথম দেখে তাঁর কথা শুনে যেমন মনে হয়েছিল তিনি ঠিক তেমন না। সবাই কে খুব বকাঝকা করলে ও তাঁর বকাঝকায় ভালোবাসা আছে আর তাকে এই পর্যন্ত কখনো বকেনি তাকে খুব ভালোবাসে মনে হয় তাকে চোখে হারায় কিন্তু ইরফানের জন্য কেউ আয়ানার ধারের কাছেও যেতে পারে না।।।সবার মতো আয়ানা ও আসফিয়াকে ভয় পায় অনেক কিন্তু তাঁর ব্যবহারে একটা মা মা ভাব আছে তাই সে ধীরে ধীরে আসফিয়া খানের সাথে অনেকটা ফ্রি হয়ে গেছে।।এই বাড়ির প্রত্যেক সদস্যদের আয়ানা ভয় পায় কিন্তু প্রত্যেকেই তাকে যথেষ্ট ভালোবাসে তা সবার কাজে প্রমাণ হয়।।।

🌸 ইরফান নামাজ শেষ করে বাড়িতে ঢুকতে দেখতে পায় আয়ানা বসে গালে হাত দিয়ে সবার কাজ দেখছে তা দেখে মুচকি হেসে আয়ানার দিকে এগিয়ে গেল।। ইরফান কে আসতে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরে আয়ানা।। ইরফান আজকে লাল কালারের পাঞ্জাবি পরেছে তাঁর হলুদ ফর্সা শরীরে বেশ মানিয়েছে।আয়ানা কিছুক্ষণ ইরফানের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। ইরফান আয়ানার কোমর জড়িয়ে কপালে চুমু খেয়ে জিজ্ঞাসা করল,,

—-কী করছিলে এতোক্ষণ? নামাজ পরেছো।
—–জ্বী।
—–গুড।।চলো আয়ানার হাত ধরে।।।
—–আরে ইরফান আয়ানার জন্য আমি পায়েস আনিয়েছি অকে একটু খাইয়েনি তারপর ওপরে যেও।।।আসফিয়া হাতে এক বাটি পায়েস নিয়ে এসে বললো।।
—-টেবিলে রেখে দিন আম্মিজান আয়ু এখন খাবে না বলে আয়ানাকে নিয়ে উপরে চলে যায়।।।আসফিয়া আর কিছু বলে না।।আয়ানার খুব খারাপ লাগলো বিষয়টা ইরফান নাকি ছোট বেলায় থেকে এমন সবসময় রাগ নাকের ডগায় থাকে কারোর সাথে কখনো মিশে না একা থাকতে পছন্দ করে।পরিবারের বিশেষ দিন গুলো ছাড়া কখনো সময় দেয়না।।। এখন আয়ানাকে ও নিজের মতো সবার থেকে আলাদা আলাদা রাখে।। নিজের একলা রাজ্যের রানী করে।।

“রুমের ভেতরে প্রবেশ করতে আয়ানা ইরফানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,
—-আপনি ওখান থেকে চলে কেনো আসলেন।আম্মিজান কষ্ট পেয়েছে হয়তো মাথা নিচু করে।।‌‌
—–কে কষ্ট পেলো সেটা দেখতে হবে না আমাকে শুধু দেখবে।।ঠিক আছে। শান্ত গলায়।।
—–হুম। ছোট করে বললো।আর মনে মনে বললো,রাগী এরোগেন্ট ম্যান ।।
—-আমাকে বকা হয়ে গেলে এখানে চুপটি করে বসো আমি ড্রেসটা চেঞ্জ করে আসছি।দুই গালে চুমু খেয়ে।।।
—আচ্ছা ঠিক আছে।।।আয়ানা কে বসিয়ে ইরফান চেন্জ করতে চলে যায়।। চেঞ্জ করে এসে লাঞ্চ করতে নিচে যায়।।।।‌আয়ানা নিচে নামার সময় কাচুমাচু করে নিচু স্বরে বলল,,,,

—-একটা কথা বললার ছিল।।‌
ইরফান আয়ানার দিকে তাকিয়ে সুইট স্মাইল দিয়ে বললো,,,
—-হুম জান বলো আমি শুনছি।।।
—–আ-আসলে আমরা যখন বাংলাদেশে যাবো আসার সময় ইনো পিনো কে নিয়ে আসবো বলে চোখ চেপে বন্ধ করে নিলো সে জানে এখন ইরফান হুংকার দিয়ে না বলবে।‌‌ কিন্তু না ইরফান আয়ানার কোমরে হাত রেখে নিজের সাথে মিশিয়ে মুখে ফু দিয়ে বললো,,,,

—-আনতে পারি কিন্তু আমার কিছু শর্ত আছে।।।।
—-কী -কী শর্ত? ভয়ে ভয়ে বললো।
—-ইনো পিনো কে ছুয়া যাবে না ।আদর করা যাবে না।।দূর থেকে ওদের সাথে কথা বলতে হবে এককথায় ওঁরা তোমার আশেপাশে থাকবে কিন্তু তুমি ওদেরকে দূর থেকে দেখতে হবে আরো কিছু শর্ত তা সময়মতো জেনে যাবে।।।।
আয়ানা ছোট করে আচ্ছা বললো।।এইসব কথা বলবে এটা নতুন নয় তাঁর কাছে।ইনো পিনো কে এখানে আনতে পারবে এটাই অনেক।।

“খাবার খাওয়ার সময় ইরফান কাঁটা ছাড়িয়ে মাছ খাইয়ে দিচ্ছে আয়ানাকে।।।। সবসময় চামচ দিয়ে খায় ইরফান কিন্তু তাঁর জন্য আজকে নিজ হাতে কাঁটা বেছে খাওয়াচ্ছে তাকে ।।বিনা চামচে হাত দিয়ে খাওয়াতে একদমই সমস্যা হচ্ছে না তাঁর। হাত কাঁটা থাকায় হাতে ওয়ান টাইম গ্লাফ্স লাগিয়ে খাইয়ে দিচ্ছে।।মাছ খাওয়া শেষ হলে হাত ধুয়ে গ্লাফ্স খুলে চামচ দিয়ে বিরিয়ানি খাইয়ে দিচ্ছে।।কতো সুন্দর করে খাইয়ে দিচ্ছে এমন কোনো কাজ নেই সে পারে না।।সব কাজ অনায়াসে করে ফেলে এক কথায় মি-পারফেক্ট সে ।।।‌

“এইভাবে হাসি মজায় কেটে যায় তিনটি দিন।এই তিন দিন আয়ানার কাছে সবচেয়ে ভালো সময় ছিল।‌তাঁর এটা মনে হয়নি সে এখানে খারাপ আছে বন্দী জীবন যাপন করছে আগের মতো আর খারাপ লাগছে না আস্তে আস্তে অনেক বেশি ভালো লাগছে এবং সব কিছুর সাথে মানিয়ে নিতে পারছে।।। নিজের স্বাভাবিক জীবনে আছে এমন মনে হচ্ছে।।। এখানে সব কথা ইরফানের মতো হলেও তাঁর ভালো লাগা তাকে খুশি রাখা টা বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়।।। ইরফানের তৈরি করা কঠিন নিয়ম গুলো আসতে আসতে সে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে এবং অনেকটা মানিয়ে ও নিয়েছে।।‌ইরফান আর তাঁর মধ্যে কিছুটা বন্ধুসুলভ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।।যেটা তাদের আগামী জীবনের জন্য খুবই সুখময় জীবন ভয়ে নিয়ে আসবে।। ইরফানের ভালোবাসা তাকে বাধ্য করছে একটু একটু করে ইরফানের ভালোবাসার মায়াজালে ধরা দিতে, ইরফানের প্রতি দুর্বল হতে।। অতিরিক্ত ভালোবাসা পারে অন্য একটা মনে ভালোবাসার জম্ম দিতে।ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসাকে বেঁধে রাখতে।। ঠিক তেমনি তাদের সম্পর্কটাও ধীরে ধীরে ভালোবাসা ময় হওয়ার আগাম বার্তা দিচ্ছে।।।।

“আজকে সোমবার!রাতের ফ্লাইটে আয়ানা ইরফান বাংলাদেশ যাবে তুতুলের বিয়ে উপলক্ষে।। আজকে আয়ানা অনেক খুশি। কিছুক্ষণ আগে ইরফান বেশ কিছু শপিং নিয়ে রুমে ঢুকে।।গার্ডদের দিয়ে আয়ানার বাড়ির সবার জন্য অনেক কিছু কিনে নিয়ে আসে। নতুন জামাই বলে কথা🌸🌸।।।।।।।।।

#To_be_continued …………..🌼
(সকালের গঠন মূলক মন্তব্য আশা করছি ধন্যবাদ ❤️)
#হ্যাপি_রিডিং

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here