#বিষাক্তময়_আসক্তি(The Villain 😈)
#Sumaiya_Akter_Mim
#পর্ব_৪৯…………🌼
“সকালের খাবার শেষ করে সবাই হলরুমে বসে টিভিতে কালকের প্রোগ্রাম দেখছে।।প্রত্যেকটা টিভি চ্যানেলে ইরফানের জম্মদিনের ভিডিও দেখানো হচ্ছে।আগের বেশ কিছু ভিডিও দেখানো হচ্ছে, কালকে ইরফান আয়ানার বেশ কিছু ছবি টিভিতে দেখাচ্ছে আর সাথে হ্যাডলাইন দিয়েছে ইরফান খান ও তাঁর বিবি আয়ানা খান সুখী দাম্পত্যির কিছু সুন্দর সুখময় মূহুর্ত এমন আরো নানা কথা আলোচনা ছড়াছড়ি প্রত্যেক নিউজ চ্যালেন, ফেইসবুকে।।আয়ানা ইরফানের পাশে বসে গালে হাত দিয়ে টিভি দেখছে টিভিতে নিজের ছবি দেখলে নিজেকে সেলিব্রিটি মনে হয়।সে সেলিব্রিটি না হোক সেলিব্রিটির বউ তো বটে।।কেমন গর্ববোধ গর্ববোধ প্রকাশ করছে মনে মনে।।ইরফানের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো সে ল্যাপটপে কাজ করছে ফাঁকে ফাঁকে তাঁকেও গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।আয়ানা বুঝতে পারে না তাঁর মাঝে এতো দেখার মতো কী আছে যে সারাদিন তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকে মনে হয় এক সেকেন্ড না দেখলে তৃষ্ণা মারা যাবে। সবসময় ওই চোখ দুটোতে নিজের জন্য নেশা দেখতে পায় আয়ানা।কী ভয়ংকর দৃষ্টি তাকালে কারেন্টের শক খাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে পরে তাঁর।।এসব কথা ভেবে মিটমিট করে হাসছে আয়ানা।।তাকে হাসতে দেখে ইরফান এক হাতে কোমর জড়িয়ে আরেকটু চেপে বসে ,কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,,,,,
—-হাসির কারন কী?আয়ু জান।
আয়ানা সমনের দিকে তাকিয়ে বললো,,
—- ব্যস্ হাসি পেলো।।
আয়ানার কথা শুনে ইরফান মৃদু হেসে দিয়ে বললো,,,
—-আচ্ছা।উপরে চলো।
—-উহু। এখানে ভালো লাগছে। বলে পুনরায় টিভিতে মনোযোগ দিল।।।
“মিসেস আসফিয়া খান দুজন র্সাভেন্টকে দুপুরের খাবারের লিস্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে।সাফিয়া একটা সোফায় বসে ইসহাকের হাতের লেখা গুলো কমপ্লিট করছে।।ইসহাকও বাধ্য ছেলের মতো কমপ্লিট করছে।লেখতে অসুবিধা হয়, একটু সময় নেয় কিন্তু এখন লিখতে পারে মোটামুটি।। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম। মিসেস আসফিয়া খানকে খাবারের লিস্ট তৈরি করতে দেখে আয়ানা চিৎকার করে বলে উঠলো,,,,
—-আম্মিজান আমি আজকে বাঙালি খাবার খেতে চাইছি!
আয়ানার কথা শুনে সবাই তাঁর দিকে তাকালো। ইরফান শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তা দেখে আয়ানা মাথা নিচু করে বললো,,,
—-প্রতিদিন আধসিদ্ধ খাবার খেতে আমার মোটেও ভালো লাগে না,সব ইংলিশ খাবার।আমি আজ বাঙালি খাবার খেতে চাই। ঠোঁট উল্টিয়ে।।
ইরফান কিছুক্ষণ আয়ানার দিকে তাকিয়ে থেকে আসফিয়া খানকে ইশারা করে বলে তা করতে আসফিয়া খান মুচকি হেসে বলল,,,,
—-আচ্ছা ঠিক আছে। আজকে তোমার জন্য সব বাঙালি রান্নার ব্যবস্থা করতে বলছি কেমন।হেসে।
আয়ানা খুশি হয়ে একবার ইরফানের দিকে তাকিয়ে আবার আসফিয়া খানের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।।
“নিয়ে যাবি কোনো এক অচীন পাখির দেশে,
যেই দেশে নেই ঘৃণা নেই অভাব আছে কেবল
একচিলতে গোধূলি………
সেই গোধূলির লালচে আভায় রাঙিয়ে দিব
আমার স্বপ্ন গুলো।।🌸🌸
“গোধূলি বেলায় নিজেদের রুমের ছোট মিনি ছাদে দাঁড়িয়ে সুন্দর সন্ধ্যা উপভোগ করছে ইরফান আর আয়ানা। কখনো এই গোধূলি বেলায় এইভাবে প্রকৃতি উপভোগ করেনি সে কিন্তু আজকে বউয়ের মন রাখতে গিয়ে এখানে এসে প্রকৃতি উপভোগ করছে।আয়ানাকে পেছন থেকে জড়িয়ে রেখেছে, দু’জনের দৃষ্টি আকাশের দিকে। চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছে কুয়াশা ঢেকে যাচ্ছে সব কিছু। ইরফানের আজকে প্রকৃতি উপভোগ করতে খুব ভালো লাগছে, কখনো এমন আলাদা প্রশান্তি অনুভব হয়নি।প্রিয় মানুষের সাথে সব কিছুই বুঝি এমনই হয় সব কিছুতেই আলাদা ভালো লাগা কাজ করে। কেউ ঠিক বলেছে গোধূলি বেলা এমন একটি সময় যখন অন্ধকার আর আলো দুটো একই রকম মনে হয়। গোধূলি লগ্নে না রাত না দিন দুটো সমান মনে হয়। গোধূলি লগ্নে আলো হারিয়ে যায় আঁধারের বুকে আবার সকাল হতে আঁধার নিজেকে মিলিয়ে দিবে আলোর মাঝে তাহলে আয়ানা ইরফানের আঁধারের মাঝে হারিয়ে গিয়ে ভুল করেনি আলো তো আঁধারে হারিয়ে যাবে এটাই নিতি আবার আঁধার হারাবে আলোর মাঝে যেমন ইরফান হারিয়েছে তাঁর মাঝে।(এখানে আয়ানাকে আলো আর ইরফানকে আঁধার বুঝানো হয়েছে। দু’জন দুজনায় পরিপূর্ণ)
—–আজকে রাত বারোটার পর সারা নিলাম বেলীতে হেঁটে সফর করতে চাই। মনে আছে তো!
আয়ানার ঘারে মুখ গুজে ইরফান আস্তে করে বললো,,
—-হুম!
—-কোনো গার্ড গাড়ি নেওয়া যাবে।ঠিক আছে।
ইরফান আয়ানাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল।আয়ানা ইরফানের বুকে নিজের হাত রেখে বললো,,,,
—-গার্ড কিন্তু নেওয়া যাবে না আর পায়ে হেঁটে সম্পূর্ণ গ্ৰাম ঘুরতে হবে। মৃদু হেসে।
ইরফান আয়ানার নাকে নাক ঘষে বললো,,
—- সম্পূর্ণ গ্ৰামে আমার লোক রয়েছে।আর আমার গার্ডের প্রয়োজন হয় না শুধুমাত্র কাজের সূত্রে প্রয়োজন হয়। আলতো কামড় দিয়ে নাকে।।।
—-জানি তো কী কাজে প্রয়োজন হয়।নাক ফুলিয়ে।
—-তাই!গাল টেনে।।
—-হুম।একদম গার্ড নিবেন না।আমি আজকে মুক্তভাবে সব উপভোগ করে চাই। আপনি বলেছেন আমাকে আজকে যা ইচ্ছে করতে পারি।এটা আমার স্বপ্ন এখানে একদম গার্ড এলাউ না।গাল ফুলিয়ে।
ইরফান হেসে দিয়ে আয়ানার গাল টেনে দেয়।।
—-আর কী কী করতে ইচ্ছে করছে।।।
আয়ানা ইরফানের দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে বললো,,
—সারা রাস্তায় আমি আপনি পায়ে হেঁটে সফর করবো আর প্রাকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করবো। কোনো জনমানবের চিহ্ন থাকবে না। হালকা কুয়াশা ঢাকা প্রকৃতি অসাধারণ সুন্দর মূহুর্ত।। রাস্তায় হেঁটে হেঁটে বিভিন্ন স্ট্রি ফুড খেতে চাই।
—-বারোটার পর স্ট্রি ফুড।ভ্রু নাচিয়ে।
আয়ানা মুখ ছোট করে বললো,,
—কেনো পাওয়া যাবে না 🙄।
ইরফান হেসে দিয়ে বললো,,
—-আমার আয়ু জান কিছু চেয়েছে তা যাই হোক স্মরন করার সাথে সাথে পেয়ে যাবে।।
ইরফানের কথা শুনে আয়ানা খুশি হয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ইরফান মৃদু হেসে নিজের বাহু ডোরে জড়িয়ে নিলো প্রিয়তমাকে।।।
“রাতে খাবার খাওয়ার পর সবাই সবার রুমে চলে গিয়েছে।আয়ানা রুমে এসে কখন থেকে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে কখন বারোটা বাজবে।।ইরফান গার্ডদের সব কিছু ব্যবস্থা করতে বলে রুমে প্রবেশ করলো। রুমে প্রবেশ করে দেখলো আয়ানা এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করছে তা দেখে ইরফান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো,,,,
—–এই ভাবে ছুটোছুটি কেনো করছো আয়ু যদি লেগে যায়।আস্তে হাটো। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।।
—-দেখুননা এখনো সময় যাচ্ছেই না।মাত্র ১০:৩৫ বাজে।গাল ফুলিয়ে।।
ইরফান আয়ানার কথা শুনে মৃদু হেসে বলল,,,,
—তো কী হয়েছে আমরা আগে বের হবো যাও রেডি হয়ে আসো।।।
—-না। বারোটায় বের হবো।স্বপ্ন তো স্বপ্নের মতো হতে হবে তাই না।নাক ফুলিয়ে।।
ইরফান আয়ানার নাক টেনে বললো,,,
—-কথায় কথায় নাক ফুলালে তোমাকে অনেক বেশী কিউট দেখতে লাগে ইচ্ছে করে,,,,, বাঁকা হেসে।
ইরফানের কথা শুনে আয়ানা ইরফানের মুখ চেপে ধরে বলল,,,,
—–ছিহহ সবসময় বাজে কথা।এরোগেন্ট ম্যান একটা।
আয়ানার হাতের তালুতে হাল্কা ঠোঁট ছুয়ালো ইরফান আয়ানা হাত নামাতেই বললো,,,
—-কী করবো।আমার পিচ্চি পরী এতো কিউট সারাদিন আদর করতে ইচ্ছে করে।ইনোসেন্ট ফেইস করে। ইরফানের কথায় আয়ানা লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে মাথা নিচু করে বললো,,,,
—-আমি রেডি হবো।।আমার ফ্লাওয়ার ব্যান্ট কোথায়। ইরফান আয়ানাকে মিররের সামনে দাঁড় করিয়ে বললো।
—-এখানে আছে। তুমি ড্রেস চেঞ্জ করে আসো আমি তৈরি করে দিব।
আয়ানা মৃদু হেসে মাথা নাড়িয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে একটা সাদা গ্ৰাউন পরে আসে।অনেক সুন্দর গ্ৰাউনটা ঠিক প্রিন্সেসরা যেমন পড়ে। আজকে সে নিজের ছোট স্বপ্ন গুলো পূরণ করবে যা সে ছোটবেলা থেকেই দেখতো।। নিজের পছন্দের মানুষের সাথে সারা রাত ঘুরবে। নিজের স্বপ্নের একটি অংশ পূরণ করবে।।আয়ানা ড্রেস পরে আসতে দেখে ইরফান তাঁর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বুকে হাত দিয়ে ইশারায় বুঝায়,,,মারডালা। ইরফানের ইশারা বুঝতে পেরে আয়ানা মৃদু হেসে ইরফানের সামনে গিয়ে দাড়ায় ইরফান বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আয়ানার কোমর জড়িয়ে কপালে চুমু খেয়ে বললো,,,,,
—-একদম পরী লাগছে।আমার পরী।
আয়ানাকে টুলে বসিয়ে দিয়ে আয়ানাকে রেডি করতে লাগলো।আয়ানা মনে মনে ভাবে মি.ইরফান খান যার প্রত্যেক কাজ গার্ড করে দেয় সে তাঁর বিবিকে সবসময় এতো যন্ত করে সাজিয়ে গুছিয়ে এবং প্রত্যেকটা কাজ কতোটা ভালাবেসে করে দেয়।এতোটা ভালোবাসতে কী করে পারে এই লোকটা।। মাঝে মাঝে মনে হয় সত্যি স্বপ্নের রাজ্যে আছি।।।
“সাদা রঙ্গের গ্ৰাউনের সাথে মেচ করে হিরের হালকা নেকলেস, কানের দুল, আর দুই হাতে মোটা দুটো চুড়ি,চুল গুলো সুন্দর করে আঁচড়িয়ে এতে সাদা রঙের গোলাপ দিয়ে বানানো ফ্লাওয়ার ব্যান্ট মাথায় লাগিয়ে দিলো কিছু চুল কপালের দুপাশ রেখে দিয়েছে। পায়ে একজোড়া নূপুর পরেছে।পা থেকে মাথা অব্দী সাদা রঙে সাজিয়েছে।। অনেক সুন্দর লাগছে একদম সত্যিকারের পরী শুধুমাত্র ডানা দুটো নেই ডানা থাকলে যে কেউ পরী ভেবে ভুল করতো।।। ইরফান হা করে তাকিয়ে আছে জেনো চোখই সরছে না।এতোটা মোহনীয় লাগছে যে সে চোখের পলক ফেলছে না।ইরফানকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়ানা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল।।বেশ কিছুক্ষণ ধরে এইভাবে তাকিয়ে থাকার পর হঠাৎ করে আয়ানার সারা মুখে অসংখ্য চুমু খেয়ে জলদি জলদি ফ্রেস হতে চলে যায় সে।এই মেয়ে সারাদিন তাকে পাগল করার ধান্দায় থাকে। ইরফানের কান্ডে হেসে দিল আয়ানা।।।
“সাদা রঙের শার্টের উপরে কালো রঙের কোর্ট পরেছে ইরফান আয়ানা ইরফানের শার্টের কলার ঠিক করে দিয়ে কোর্টের মধ্যকারের একটা বোতাম লাগিয়ে দিলো কোর্টের হাতা গুলো কনুই পর্যন্ত সুন্দর করে গুটিয়ে দিল আলতো হাতে কপালে পরে থাকা চুল গুলো গুছিয়ে দিল।। ইরফান আয়ানার কোমর জড়িয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইল তাঁর দিকে,আয়ানার ছোট ছোট স্পর্শ গুলো মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করে অনুভব
করছে ।আয়ানা নিজের কাজ সেরে মৃদু হেসে বলল,
—-একদম প্রিন্স চার্মিং লাগছে।মি.পারফেক্ট।
আয়ানার কথা শুনে ইরফান হেসে দিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বললো,,,
—-তাহলে যাওয়া যাক হাত বাড়িয়ে।
আয়ানা হাত জড়িয়ে ধরে বললো,
—ইয়াহ সিউর। মৃদু হেসে।
তারপর দুজনে বের হয়ে যায় নিলাম বেলী ভ্রমনের উদ্দেশে,রাতের আকাশ সুন্দর প্রকৃতি বিলাস করতে।। তাঁরা বের হওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর গার্ডরা গাড়ি নিয়ে বের হয় যাতে আয়ানা না দেখতে পায় তাই দূরে দূরে থাকার আদেশ দিয়েছে ইরফান।।
“সাদা কুয়াশায় ঢাকা সারা নিলাম বেলী শহর।দূরের ঘর গুলো ছোট ছোট কুটির মনে হচ্ছে। কুয়াশায় স্পষ্ট নয় কিছু।খালি রাস্তায় ধরে হাঁটছে আয়ানা ইরফান।আয়ানা আজ ভীষণ খুশি তাঁর স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।আয়ানার স্বপ্ন ছিল এমনি এক রাতে প্রিয়জনের হাত ধরে সারা শহর ঘুরে বেড়াবে আর তাই হচ্ছে।আয়ানা চারিদিকের সৌন্দর্য উপভোগ করছে আর ইরফান মুগ্ধ চোখে তাঁর জানকে দেখছে, ল্যাম্প পোস্টের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে আয়ানার হাস্যজ্জল মুখখানি। বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পর একটা আইসক্রিম এর বাক্স ঠেলতে ঠেলতে একটি লোক ওদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল তা দেখে আয়ানা কিছুটা অবাক হয় কারন রাত ১২:৩০ বাজে এখন আইসক্রিম। ইরফানের দিকে তাকাতে সে হেসে ইশারায করলো যেতে তা দেখে আয়ানা বুঝতে পারে ইরফান ব্যবস্থা করেছে । আয়ানা হেসে দিয়ে দুই হাতে জামা ধরে আইসক্রিমের বাক্সের দিকে এগিয়ে গিয়ে গুনে গুনে পাঁচটা ফ্লেভারের আইসক্রিম নিল। ইরফান আয়ানার দিকে এগিয়ে এসে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো,,,
—-এতো গুলো আইসক্রিম খেতে হবে না গলা বসে যাবে। আইসক্রিম ধরতে নিলে আয়ানা হাত সরিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে বললো,,,
—-উহু কিছু হবে না। আজকে আপনি আমাকে কোনো কিছুতে বাধা দিবেন না বলেছেন।
ইরফান শ্বাস ফেলে শান্ত গলায় বললো,,,
—-ওকে।
আয়ানা মৃদু হেসে আইসক্রিম গুলো নিয়ে পুনরায় হাঁটা শুরু করলো। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।দুই হাতে দুটো কোন আইসক্রিম নিয়ে চেটেপুটে খাচ্ছে আয়ানা, মাঝে মাঝে ইরফানকে ও খাইয়ে দিচ্ছে।দুটো আইসক্রিম সাভার করে হাত এগিয়ে দিলো ইরফানের দিকে আরো দুটো দেওয়ার জন্য।সারা মুখ লাগিয়ে ফেলেছে আইসক্রিম। ইরফান শব্দ করে হেসে দিলো আয়ানাকে দেখে।আয়ানা নাক ফুলিয়ে বললো,,,
—-আমার আইসক্রিম দিন।
ইরফান অসহায় ভাবে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,,,
—-অনেক ঠান্ডা পরেছে আয়ু আর তোমার ঠান্ডায় সমস্যা হয়।আর না খেলে হয় না,অন্য দিন আবার খাবে।।।
—–আজকে একদম ঠান্ডা নেই আর কতো ভারি জামা আমার তো ঠান্ডা লাগছেই না।আমি খেতে পারবো কোনো সমস্যা হবে না আগে খেয়েছি সমস্যা হয়েছে কী। দিন তো।রাগি গলায়।।
আয়ানার জিদের কাছে ইরফানকে হার মানতে হলো। পুনরায় আরো দুটো আইসক্রিমের খোসা ছাড়িয়ে আয়ানার হাতে দিতেই আয়ানা ইরফানের হাত থেকে চট করে আইসক্রিম নিয়ে ফটাফট খেতে লাগলো। ঠান্ডা আবহাওয়ার মাঝে আইসক্রিম খাওয়ার মজাই আলাদা।।এক এক করে পাঁচটি আইসক্রিম শেষ করলো আয়ানা । ইরফান পকেট থেকে রুমাল বের করে আয়ানার মুখ মুছে দিলো তারপর আবার হাঁটা শুরু করলো দুজনে। হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরে পৌঁছে গেলো দুজনে রাস্তায় অনেক স্ট্রি ফুড খেয়েছে আয়ানা এখন আপাতত একটা ভুট্টা খেতে খেতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, মুখে তো কথা রয়েছেই। ইরফান বুঝতে পারছে না এক দিনে এই মেয়ে এতো বাঁচাল কি করে হয়ে গেলো হয়তো বাঁচাল ছিল কিন্তু পরিস্থিতি তাকে দমিয়ে দিয়েছে ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো সে।আয়ানা তাঁর মনের সব কথা ইরফানকে শুনাছে আর ইরফান তা মুগ্ধ হয়ে শুনছে বেশ কিছু পথ হাঁটার পর তাঁরা দুজন বিশাল বড় একটা ব্রিজে এসে থামলো।।। বিশাল বড় ব্রিজ আর এর নিচে বয়ে যাচ্ছে নদী।বড় উঁচু পাহাড় থেকে ঝর্ণার পানি বয়ে চলছে নদীর সাথে তাল মিলিয়ে ব্রিজের নিচ দিয়ে।। চারিদিকে কুয়াশায় ঢাকা দূরে ছোট ছোট ঘর যার বাহিরে আলো জ্বালানো যা এখান থেকে স্পষ্ট। বেশ অনেক কিছু দেখা যাচ্ছে এখান থেকে কুয়াশায় ভালো বুঝা না গেলোও দূরের ঝিকিমিকি আলো গুলো বেশ সুন্দর করে বুঝা যাচ্ছে।এমনি একটি সুন্দর রাতে প্রকৃতি উপভোগ করার ইচ্ছে ছিল যা আজ পূর্ন হয়েছে।এমন সৌন্দর্য মনোরম দৃশ্য দেখে আয়ানা মনে মনে বললো,তাই বুঝি সর্গ বলা হয় এই সুন্দর কাশ্মীর কে।।পানির রিনিঝিনি আওয়াজে মুখরিত হচ্ছে চারিপাশ।আয়ানা এক ছুটে এগিয়ে যায় একদম ব্রিজের মাঝবরাবর দুই হাত প্রশারিত করে ঘুর খাচ্ছে।দূর থেকে ইরফান চিৎকার করে বলছে,,,,
—আয়ু আস্তে লেগে যাবে। বলে ছুটে আসে আয়ানার কাছে।আয়ানা এখনো ঘুর খাচ্ছে আর বলছে,,,,
—-কিচ্ছু হবে না এরোগেন্ট ম্যান আপনিও আসুন খুব ভালো লাগবে।।
ইরফান আয়ানার পাশে দাঁড়িয়ে আয়ানার হাত ধরে সোজা করে দাঁড় করালো ।আয়ানা হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে এতো আনন্দ কখনো হয়নি তাঁর। অনেকক্ষণ ঘুরার ফলে মথা চক্কর খাচ্ছে তাই শান্ত হয়ে স্থির হয়ে দাঁড়ালো। ইরফান মুখে ফু দিয়ে বলছে,,,,
—-রিলেক্স ! এইবার ঠিক আছে।।
আয়ানা মুচকি হেসে বলল, হুম।
হঠাৎ আচমকা ইরফানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আয়ানা ইরফান কিছুটা অবাক হয় পরে হেসে দিয়ে নিজেও জড়িয়ে ধরে।আয়ানা ইরফানের বুকে মাথা রেখে ধিরে গলায় বলল,,,
—-ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটা উপহারের জন্য। আমার অনেক দিনের ইচ্ছে আমার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য।
ইরফান আয়ানার গালে হাত রেখে কপালে চুমু খেয়ে বললো,,,,
—-ধন্যবাদ আমার জীবনে এসে আমার জীবনটাকে সুন্দর করে দেওয়ার জন্য। ধন্যবাদ আমাকে জীবনটা উপভোগ করা শিখানোর জন্য। শান্ত গলায়।।
আয়ানা হেসে দিয়ে চট করে ইরফানের গালে কিস করে দেয়। ইরফান অবাক হয়ে আয়ানার গাল থেকে হাত সরিয়ে নিজের গালে হাত রাখলো হা করে তাকিয়ে আছে কোনো নরাচড়া নেই তা দেখে আয়ানা হেসে দিয়ে বললো,,,,
—- সুদবুদ।
ইরফান এখনো হা করে তাকিয়ে আছে।।
“ব্রিজের রেলিংয়ের ওপর দাঁড়িয়ে দুই হাত প্রশারিত করে চোখ বন্ধ করে ঠান্ডা হাওয়া উপভোগ করছে আয়ানা পুনরায় রেলিংয়ে শক্ত করে হাত রেখে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিচে বয়ে যাওয়া পানির দিকে। ইরফান পেছন থেকে কোমর জড়িয়ে ধরে রেখেছে যাতে নিচে পরে না যায়।।।
—-আয়ু জান নিচে নামাও পরে যাবে তো। গম্ভীর গলায়।।
—-উহু পরবো না। অনেক ভালো লাগছে এখানে আপনিও আসুন।
—না।নামো বলছি।।
—না আরেকটু থাকবো। বলে আগের মত নিজের কাজে মনোযোগ দিল।বেশ অনেক সময় কাটিয়ে আয়ানা ক্লান্ত হয়ে পরে।
“ইরফানের কাঁধে চড়ে বাড়ির পথে রওনা দিল ।শান্ত জনমানবহীন রাস্তায় শুধু তাঁরা দুজন।।রাত তিনটে বাজে আয়ানা বেশ কিছু সময় বকবক করলেও এখন আর শক্তি নেই কথা বলার খুব ক্লান্ত সে। আজকে সারাদিন বেশ ভালো কেটেছে তাঁর আর রাতটা তো স্বপ্নের মতো ছিল আজকে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে ভীষণ খুশি কিন্তু এখন আর শক্তি নেই ঘুমে ঢুলুমুলু করছে সে। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম। ইরফান এক হাতে পকেট থেকে মোবাইল বের করে গার্ডকে মেসেজ করে আসতে বলে।।আয়ানার হাত আলগা হয়ে আসছে, বুঝতে পারলো আয়ানা ঘুমিয়ে গিয়েছে ইরফান মোবাইল পকেটে রেখে আস্তে করে কাঁধ থেকে নামিয়ে কোলে তুলে নিলো আয়ানাকে কপালে আলতো চুমু খেয়ে হাঁটতে লাগলো কিছু পথ যেতে গার্ড গাড়ি নিয়ে আসে।আয়ানাকে গাড়িতে তোলা নিজেও তাঁর পাশে বসে পরলো গাড়ি ছুটতে লাগলো নিজ গন্তব্যে।। আজকে রাতটুকু কেটে গেলো তাদের দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটিতে।।।
(গল্পটা কেমন হয়েছে সবাই গঠন মূলক মন্তব্য করবেন ধন্যবাদ সবাইকে ❤️)
#To_be_continue…………….🌼
#Happy_Reading
লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম✵